প্রবন্ধ - পল্লববরন পাল
Posted in প্রবন্ধ
প্রবন্ধ
পদাতিক ৮০
পল্লববরন পাল
মাপ করবেন, কত বয়েস?
সাতাশ।
ও, তাহলে তো ‘পদাতিক’-এরই সমবয়সী!
আপনি মনে মনে ভাবলেন –দেখলে! দেখলে! কেমন কায়দা করে ‘পদাতিক’-কে ছোকরা বানিয়ে দিলাম। তাছাড়া কথাটাও তো মিথ্যে নয়– সাতাশ বছর আগেই তো প্রথম‘পদাতিক’বেরিয়েছিল।
কাজেই তার টেবিলে স্বচ্ছন্দে কিছুক্ষণের জন্য ‘পদাতিক’কে আপনি বসিয়ে রেখে গেলেন। ফিরে এসে দেখলেন টেবিল ফাঁকা। চুলে কলপ না দেওয়ার জন্যে যখন আপনার আপসোস হচ্ছে তখন হঠাৎ একদিকে নজর পড়ল। দেখলেন –কী কাণ্ড!
আঠারো থেকে একুশ বছরের একরত্তি ছোকরাদের সঙ্গে দিব্যি জ’মেব’সেগেছে‘পদাতিক’।আপনিইশারায়ডাকছেন, কিন্তু সে-কথা তার কানেই যাচ্ছে না। কাছে গিয়ে দাঁড়ালে আপনাকে সে এখন চিনতে পারবে কিনা সন্দেহ।
দেখলেন তো, টেবিল বদলে ‘পদাতিক’-এর বয়েস কেমন সাতাশ থেকে একুশে নামিয়ে দিলাম! কেননা তখন আমিও ছিলাম একুশ বছরেরই ছোকরা।
এই সাতাশ বছরে আমার বয়েস বেড়েছে। কিন্তু ‘পদাতিক’ সেই একুশেই আটকে আছে।
‘পদাতিক’কে একমাত্র সেই কারণেই এখন আমি হিংসে করি।
‘পদাতিক’ কাব্যগ্রন্থের ভূমিকা - স্বয়ং কবির লেখা– কবির নাম সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ৬ই মার্চ ১৯৬৭ সালে অদ্ভুত এই ভূমিকাটি চতুর্থ (প্রথম‘ভারবি’) সংস্করণে ছাপা হয়েছিলো। অর্থাৎ, পদাতিক-এর জন্ম ১৯৪০ সালে – আজ্ঞে হ্যাঁ, ফেব্রুয়ারি ১৯৪০-এ –কবিতা ভবন, ২০২ রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, বালিগঞ্জ পি১০৪/১ লেক রোড থেকে গ্রন্থকার-কর্তৃক প্রকাশিত। ৬১ ধর্মতলা স্ট্রিট, রঙমশাল প্রেস থেকে শ্রী কানাই লাল গুপ্ত কর্তৃক মুদ্রিত। উৎসর্গ - বাবা ও মাকে। মূল্য -এক টাকা। পৃষ্ঠা ৩২।
কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?
কুয়াশাকঠিন বাসর যে সম্মুখে।
লাল উল্কিতে পরস্পরকে চেনা –
দলে টানো হতবুদ্ধি ত্রিশঙ্কুকে,
কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?
ভূমিকার পাতা উল্টে সামনে এগোলে একটু হোঁচট খেতে হয় – মানে ‘পদাতিক’ যতোদিন শুধুমাত্র একটা কাব্যগ্রন্থ ছিলো – প্রথম কবিতা ছিলো মে-দিনের কবিতা –যে কবিতার লাইন বিগত প্রায় ষাট বছরের বাংলা কবিতা পাঠকের কন্ঠস্থ- কিন্তু এপ্রিল ১৯৯২ সালে কবিতা সংগ্রহ প্রথম খণ্ডে (প্রকাশক ‘দেজ পাবলিশিং’) মূল বইয়ের দ্বিতীয় কবিতাটিকে টপকে সামনে নিয়ে এলেন কে? – স্বয়ং কবি নাকি এটা নিতান্তই প্রমাদ – জানিনা। কবিতাক্রমে আরও এদিকওদিক আছে –বইয়ের প্রথম সংস্করণে ৫ও ৬ নম্বর কবিতা ছিলো ‘বিরোধ’ ও ‘প্রস্তাব’ – কবিতা সংগ্রহে যথাক্রমে ৬ ও ৫ নম্বর। তেমনি, ১৩ নম্বর আগে ছিলো ‘আলাপ’ – সংগ্রহে সেটি ১৮। আর শেষ দু’টি কবিতা অর্থাৎ ২২ ও ২৩ নম্বরও পরস্পর জায়গাবদল করেছে – ‘কিংবদন্তী’ ও ‘আর্য’ সংগ্রহে যথাক্রমে ‘আর্য’ ও ‘কিংবদন্তী’।অর্থাৎ, এটুকু বোঝা যাচ্ছে, ব্যাপারটা নিতান্তই প্রমাদ নয়। তবে কি কবি নিজেই এই ক্রমে বদল করেছেন? কিন্তু কেন?– শিরোনাম - সকলের গান –
কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?
কুয়াশাকঠিন বাসর যে সম্মুখে।
লাল উল্কিতে পরস্পরকে চেনা –
দলে টানো হতবুদ্ধি ত্রিশঙ্কুকে,
কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?
কোনো ঢাক-ঢাক নেই – সোজাসুজি – সটান – সহজ প্রশ্ন – আজ নবযুগ আনবে না? – এ তো সকলের মনের কথা!অতি অনায়াস ভঙ্গিতে হাঁটতে হাঁটতে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ঢুকে পড়লেন মাত্র একুশ বছরের কলেজ ছাত্র সুভাষ মুখোপাধ্যায়।
১৯৪০ সাল –প্রাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমসাময়িক বাঙলায় তখনও রবীন্দ্রনাথ স্বমহিমায় আলো ছড়াচ্ছেন। ‘পদাতিক’ প্রকাশ পায় ফেব্রুয়ারি মাসে, আর জানুয়ারিতে রবীন্দ্রনাথ লিখে সুর দিচ্ছেন
‘কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা মনে মনে...
সূর্য যখন অস্তে পড়ে ঢলি
মেঘে মেঘে আকাশকুসুম তুলি।
সাত সাগরের ফেনায় ফেনায় মিশে
যাই ভেসে দূর দিশে,
পরীর দেশের বন্ধ দুয়ার দিই হানা
মনে মনে’
১৯৪০ সাল –অর্থাৎ কল্লোল যুগের প্রভাব তখন বাঙলা সাহিত্যের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে। কল্লোল যুগ বলতে বাঙলা সাহিত্যের একটি ক্রান্তিলগ্নকে বোঝায়, যখন বাঙলা কবিতা ও কথাসাহিত্য খোদ রবীন্দ্রনাথকে কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলবার হিম্মত দেখাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথকে সসম্মানে অস্বীকার করে বেপরোয়া এক নতুন ধারার বাংলা সাহিত্য উঠে দাঁড়াচ্ছে। ঐতিহাসিকেরা এটাকে বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণ হিসেবে দেখতে শুরু করছেন। মানব-মনস্তত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে উঠছে। একঝাঁক তরুণ কবি-সাহিত্যিকের হাত ধরে পাশ্চাত্য আধুনিকতা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ছে বাংলা সাহিত্যের অন্দরমহলে।
১৯২১ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে কলকাতায় দীনেশরঞ্জন দাস, মানবেন্দ্রনাথ বসু, গোকুলচন্দ্র নাগ ও সুনীতা সেন মিলে দীনেশচন্দ্রের পটুয়াটোলা লেনের বাড়িতেই ‘ফোরআর্টসক্লাব’ নামে একটা ঘরোয়া আড্ডায় নিয়মিত সাহিত্য, সঙ্গীত, শিল্পকলা ও নাটক নিয়ে আলোচনা ও চর্চা করতেন। ১৯২২-এ ‘ঝড়েরদোলা’ নামে একটি ছোটগল্প সংকলন প্রকাশ করে এই ক্লাব। ১৯২৩-এ এই ক্লাব থেকেই দীনেশ রঞ্জন দাশ ও গোকুল চন্দ্র নাগের যৌথ সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশ ঘটলো নতুন এক সাহিত্য পত্রিকা –নাম কল্লোল। তখন বাঙলা সাহিত্যের দশদিগন্ত রবীন্দ্র-আলোয় উজ্জ্বল। কল্লোল যুগের নাবিকদের মূল লক্ষ্য ছিল রবীন্দ্র-বৃত্তের বাইরে সাহিত্যের এমন একটি জগৎ সৃষ্টি, যার শেকড় মাটির গভীরে নীহিত। খুব শিগিগিরই উত্তরা (১৯২৫), প্রগতি (১৯২৬), কালিকলম (১৯২৬), পূর্বাশা (১৯৩২) ইত্যাদি অন্যান্য সাময়িক ও সাহিত্য পত্রেও কল্লোল প্রবর্তিত এই আধুনিকতার আগুন ছোঁয়া লাগে। কবি বুদ্ধদেব বসু এই নবযুগের অন্যতম কাণ্ডারী। অন্যদিকে ‘কল্লোল’ আধুনিকতার নামে যথেচ্ছাচারিতা ও অশ্লীলতার প্রশ্রয় দিচ্ছে - এই রকম অভিযোগ এনে শনিবারের চিঠি পত্রিকা ভিন্ন এবং সমান্তরাল কন্ঠস্বর গড়ে তুলছে মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, নীরদ চৌধুরী প্রমুখের সক্রিয় ভূমিকায়।
এ কথাও ঠিক যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিছক মানবপ্রেমী সাহিত্যের বৃত্ত থেকে দূরে সরে গিয়ে আধুনিক সাহিত্যের এই দুরন্ত ঝড়কে সাধারণ পাঠকরা খুব সহজে মেনে নেয়নি। ‘শনিবারের চিঠি’র সাথে ‘কল্লোল’ গোষ্ঠীর বেশ কিছু বছর ধরে চলেছিল বিখ্যাত সাহিত্যের তরজা। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এই বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং নিয়মিত কল্লোলে বেশ কিছু রচনা লিখেছিলেন। তিনি নব্য সাহিত্যের এই উদ্যোগের প্রশংসা করলেও এই বাস্তবমুখী সাহিত্যকে মানুষের আদিম ইচ্ছার বশে আনার সারশূন্যতাতেও সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর ‘শেষের কবিতা’য় অমিত রায়ের বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি নিজেকেই অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের লেখাকে যে ভাষায় কঠোর সমালোচনা করেছিলেন, তা মূলত কল্লোল গোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিফলিত। সিগমুন্ড ফ্রয়েড এবং কার্ল মার্ক্স এর প্রভাবে একদিকে দেশেবিদেশে ব্রিটিশ ও জার্মান সাম্রাজ্যবাদের প্রবল হুঙ্কার, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ, রাশিয়ার সাম্যবাদী বিপ্লব, সারাবিশ্বে মার্কসবাদী চিন্তাধারার বিস্তার, অন্যদিকে নিজস্ব শিল্পসাহিত্যে থমকে থাকা ভাব –বাংলা সাহিত্য তখন কল্লোলের মাধ্যমে নতুন এক প্রলেতারিয়েত চরিত্রের সন্ধান করছে। কল্লোল গোষ্ঠীর সাহিত্য আলোচনা সে সময়ের বহু বিখ্যাত প্রগতিশীল সাহিত্যিকদের ভাবনাকে প্রভাবিত করেছিল এ বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।
কল্লোল-এর অর্থ মহাতরঙ্গ বা কলরব। যদিও মাত্র ৭ বছর (১৯২৩-১৯৩০) টিঁকেছিলো পত্রিকাটি, কিন্তু ওই স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাঙলা সাহিত্যের ধারা পরিবর্তনে যুগান্তর এনে দিলো। রোমান্টিক আবেগের বদলে জীবনসংগ্রামের চিত্র, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের আর্থিক দুর্গতির প্রতি সহানুভূতি, নরনারীর সম্পর্ক বিচারে সংস্কারমুক্ত খুল্লামখুল্লা প্রকাশভঙ্গীএবং সাহিত্যে পোয়েটিক জাস্টিসের বিরোধিতাই ছিল মূলত এই যুগের বিশেষ অবদান।
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত লিখছেন - “ভাবতুম, রবীন্দ্রনাথই বাংলা সাহিত্যের শেষ, তাঁর পরে আর পথ নেই, সংকেত নেই। তিনিই সবকিছুর চরম পরিপূর্ণতা। কিন্তু ‘কল্লোল’ এসে আস্তে আস্তে সেভাব কেটে যেতে লাগল। বিদ্রোহের বহ্নিতে সবাই দেখতে পেলুম যেন নতুন পথ, নতুন পৃথিবী। আরো মানুষ আছে, আরো ভাষা আছে, আছে আরো ইতিহাস। সৃষ্টিতে সমাপ্তির রেখা টানেননি রবীন্দ্রনাথ। সাহিত্যে শুধু তাঁরই বহুকৃত লেখনির হীন অনুকৃতি হলে চলবে না। পত্তন করতে হবে জীবনের আরেক পরিচ্ছেদ।”
মূলত বাংলা কবিতায় গদ্যধারার প্রবর্তন শুরু হয় কল্লোল যুগেই। এই ধারাকে সসম্মানে আত্মস্থ করে রবীন্দ্রনাথ পরপর লিখলেন ‘পরিশেষ’, ‘পুনশ্চ’, ‘পত্রপুট’, ‘শ্যামলী’। সমকালীন ইংরেজি ও বিদেশী সাহিত্যের অনুসরণে বাংলা সাহিত্যের পাঠকরা পরিচিত হলেন ন্যাচারালিজম, শারীরিক ভাবনা, জীবনসংগ্রাম, রাজনীতি, সমাজনীতি সহ নানা নতুন নতুন বিষয়ের সঙ্গে। এ যুগের শক্তিমান কথা-সাহিত্যিকরা হলেন জগদীশ গুপ্ত, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশী, মনোজ বসু, গোপাল হালদার, অন্নদাশঙ্কর রায়, প্রবোধকুমার সান্যাল, সুবোধ ঘোষ, গজেন্দ্রকুমার মিত্র সহ আরো অনেকে। কবিতার ক্ষেত্রে যাদের নাম কল্লোল যুগের শ্রেষ্ঠ নায়ক বিবেচনায় প্রচারিত, তাঁরা হলেন - জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, সমর সেন, অমিয় চক্রবর্তী, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সঞ্জয় ভট্টাচার্য সহ আরও অনেকে।
এই সময়ের কালোত্তীর্ণ কবিদের মধ্যে প্রথম দুটি নাম অবশ্যই জীবনানন্দ দাশ ও সমর সেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও এঁদের দুজনকে আলাদা স্বীকৃতি দিয়েছেন। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’ (১৯২৭), দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ (১৯৩৬)।বনলতা সেন কবিতাটি প্রথম ছাপা হয় বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র ও সমর সেন সম্পাদিত কবিতা পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যায় -ডিসেম্বর ১৯৩৪-এ। কাব্যগ্রন্থ হিসেবে বনলতা সেন অবশ্য প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪২-এ।
৭১ বছরের জীবনে সমর সেন কাব্যসাধনা করেন মাত্র ১২ বছর -১৯৩৪ থেকে ১৯৪৬। জীবনানন্দ দাস তখন তাঁর নিজস্ব নির্জন কোণে মহাসমারোহে হৃদয় খুঁড়ে বেদনা-অক্ষরে সাজাচ্ছেন তাঁর কবিতাঘর। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে যথারীতি নিমগ্ন নিজ নিজ নির্জন গোপনীয়তায়। বুদ্ধদেব বসু যুদ্ধে নেমেছেন নতুন কাব্য ভাষা নির্মাণ তাগিদে। আর ঠিক তখনই এই বুদ্ধদেব বসুর পরামর্শেই গদ্যছন্দ তূণে জুড়ে শব্দশর ছুঁড়ছেন সমর সেন। রবীন্দ্রনাথ তার কাছে জোলো, ‘দুধ ও তামাকে সমান আগ্রহী এই কবি’তাঁর বোধ সীমানার বাইরে। সমরের সদর্প উচ্চারণ আহ্বান - ‘তুমি কি আসবে আমাদের মধ্যবিত্ত রক্তে / দিগন্তে দুরন্ত মেঘের মতো।’ রবীন্দ্রনাথের প্রবল বিরোধিতা করলেও বুদ্ধদেব বসু এক পর্যায়ে গিয়ে স্বীকার করেন যে, আধুনিক কবিদের পক্ষে রাবীন্দ্রিক প্রভাবমুক্ত হওয়া প্রায় অসম্ভব। তার পরে আবার এটাও বলেন - সমর এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম। অর্থাৎ সমর তৈরি করছেন বাংলা কবিতার নতুন পথ। সমর সেনের কথা এতটা বলবার কারণ বহুল প্রচলিত যে, সমর যেখানে থেমে গেছেন সেখান থেকে সুভাষের শুরু। এখানে সুভাষের জন্য স্বীকৃতির জায়গাটা হলো তাঁর পথচলার শুরুটা নতুন পথে। আর সমর সেনের অমর মেধার সামনে নত মস্তকে দাঁড়িয়েও বলতে হয় - সুভাষ তাঁর নিজের মতো - সে অর্থে বাংলা কবিতায় তাঁর কোনও পূর্বসূরি নেই। তিনি নিজ পায়ে পথচলা ‘পদাতিক’, যিনি বাংলা কাব্য ভুবনে নির্মাণ করেছেন নিজস্ব নতুন পথ।
এই পটভূমিকায় কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও ‘পদাতিক’এর আত্মপ্রকাশ।আমি প্রথম এ বই পড়ি আমার স্কুল জীবনে–এই নিবন্ধের শুরুতে বলা ঐ অদ্ভুত ভূমিকা সম্বলিত সেই ভারবি সংস্করণ - তখন আমি ক্লাশ সেভেন –সত্তর সাল–ক্লাশরুমের ফর্সা ফর্সা দেয়াল রাতারাতি চীনের চেয়ারম্যানের অসংখ্য হাসি মুখ আর বিভিন্ন শ্লোগানের ভীড়ে অস্থির–‘পার্লামেন্ট শুয়োরের খোঁয়াড়’ বা ‘প্রতিক্রিয়াশীলদের মেরে হাড় ভেঙে দেব’–স্কুলের লাইব্রেরিতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া–কমিউনিস্টদের সম্পর্কে এইরকম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে এক কমিউনিস্ট কবির বই হাতে নিয়ে খুললাম। প্রথম ধাক্কা ওই ভূমিকায়। তারপর একে একে কবিতাগুলো...
নিজের বাল্যকাল সম্পর্কে এক চিঠিতে সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘আমার শৈশব কেটেছে রাজশাহীর নওগাঁয়। বাবা ছিলেন আবগারির দারোগা। নওগাঁ শহর ছিল চাকরি, ব্যবসা, নানা বৃত্তিতে রত বহিরাগতদের উপনিবেশ। হিন্দুমুসলমান ও বাংলার নানা আঞ্চলিক মানুষজনদের মেলানো-মেশানো দিলদরাজ আবহাওয়ায় আমরা একটু অন্যরকমভাবে মানুষ হয়েছিলাম। একদিকে প্রকৃতি, অন্যদিকে যৌথ জীবন। সব সম্প্রদায়েই এমন সব মানুষের কাছে এসেছি যাঁরা স্বধর্মে গোঁড়া, কিন্তু মানুষের সম্বন্ধে উদার। আমার অক্ষরপরিচয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা নওগাঁয়। পড়েছি মাইনর স্কুলে। পাঠ্যবইয়ের চেয়েও বেশি পড়েছি পাঠাগারের বই। সেই সঙ্গে আমাকে শিক্ষা দিয়েছে খেলার মাঠ, গান আবৃত্তি অভিনয়ের মঞ্চ। নওগাঁ শহরের জীবন আমার ব্যক্তিত্বের গোড়া বেঁধে দিয়েছিল।’
১৯৩২-৩৩ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিশোর ছাত্রদল-এর সক্রিয় সদস্যরূপে যোগ দেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। এই সময় কবি সমর সেন তাঁকে দেন হ্যান্ডবুক অব মার্কসিজম নামে একটি বই। এটি পড়ে মার্কসীয় রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন কবি। ১৯৩৯ সালে লেবার পার্টির সঙ্গে সংযোগ হয় তাঁর। আর ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয় ‘পদাতিক’–যখনউনিস্কটিশচার্চকলেজেদর্শনেরছাত্র।
‘পদাতিক' প্রকাশের মধ্য দিয়ে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় আধুনিক বাংলা কবিতার জগতে একদম স্বতন্ত্র এক নতুন স্বর, নতুন সুর, নতুন কথনভঙ্গি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলেন। আমাদের শ্রেণীবিভক্ত সমাজে পীড়িত মানুষের দুর্দশার বিরুদ্ধে দ্রোহ তাঁর কবিতার মূল চরিত্র। দ্বিতীয় কবিতা –মে দিনের কবিতা–শুধুমাত্র শ্রমিক শ্রেণীর বিজয় ঘোষণাতেই শেষ নয়, সাম্রাজ্যবাদের ধ্বংসেরও স্পষ্ট বার্তা রয়েছে এ কবিতায় –‘পদাতিক’ বইয়ের সবচেয়ে –সবচেয়ে জনপ্রিয় এই কবিতা প্রায় আশি বছর পেরিয়ে এখনও বাংলা পাঠকের ঠোঁটস্থ–
প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা
চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য
কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া’।
...
শতাব্দী লাঞ্ছিত আর্তের কান্না
প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা;
মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা, আর না –
পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা।
প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা,
দুর্যোগে পথ হয় হোক দুর্বোধ্য
চিনে নেবে যৌবন-আত্মা।।
এই সহজ সরল এবং ঋজু কথ্যরীতি ও ভঙ্গীই তাঁর কবিতার এই বিপুল পাঠকানুকুল্যের কারণ। মানবিক বোধ ও স্পষ্ট রাজনৈতিক বাণী তাঁর কবিতার অন্যতম প্রধান অভিমুখ। এই রাজনৈতিক স্পষ্টতা এলো কোত্থেকে? আগেই বলেছি –ইতিমধ্যেই সমর সেনের সান্নিধ্যে মার্ক্সীয় রাজনীতিতে দীক্ষা হয়ে গেছে সুভাষের। এবং ‘পদাতিক’ প্রকাশের পরবর্তী কালে ছাত্র নেতা বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্ররোচনায় কলেজ জীবনেই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪২ সালে পান পার্টির সদস্য পদ। এই সময় সদ্য গঠিত ফ্যাসিজম বিরোধী লেখক শিল্পী সংঘের সাংগঠনিক কমিটিতে কবি বিষ্ণু দে-র সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তারপর মাসিক ১৫ টাকা ভাতায় সর্বক্ষণের কর্মীরূপে যোগ দেন পার্টির জনযুদ্ধ পত্রিকায়। ১৯৪৬ সালে দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকায় সাংবাদিক হিসাবে যোগ দেন কবি। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে বহু কমিউনিস্ট বন্দীর সঙ্গে দু-বার কারাবরণ করেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও। এই সময় তিনি সামিল হন দমদম জেলের অনশন ধর্মঘটে। ১৯৫০ সালের নভেম্বর মাসে পান মুক্তি। যখন অগ্নিকোণ (১৯৪৮) প্রকাশ পেলো, ততদিনে সুভাষ মুখোপাধ্যায় কমিউনিস্ট কবি হিসেবে বাংলা সাহিত্য পাঠকের কাছে স্বীকৃত।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘পদাতিক’কে বুঝতে গেলে সবার আগে বিশ্লেষণ করতে হবে তার পটভূমি, সেই সময়টাকে। আমাদের বুঝতে হবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ছারখার ত্রিশের দশকের পৃথিবীতে রাজনৈতিক ব্যারোমিটারের পারদরেখার ঘন ঘন উত্থানপতন, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে হিটলারের আবির্ভাব, প্রতিষ্ঠা ও প্রসার, স্পেনে ফ্যাসিজম-কমিউনিজম দ্বন্দ্ব, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সমাজতন্ত্রের বার্তা –এসব যেমন প্রভাব ফেলেছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতায়–তেমনই দেশের অভ্যন্তরের বিপ্লবী ও সন্ত্রাসবাদী কার্যাবলী, বামপন্থী দল-উপদল, গান্ধিজীর ডাণ্ডি অভিযান, সুভাষ বসুর উত্থান, অর্থনৈতিক মন্দা, হিন্দু-মুসলমান বিরোধ তাঁকে প্রভাবিত করেছে সমান। এসব কিছুরই প্রভাব তাঁর ১৯৪০-৫০ এর মধ্যে পরপর প্রকাশিত পদাতিক, অগ্নিকোণ, চিরকুট তিনটি কাব্য গ্রন্থে।
ব্যতিক্রমী তাঁর ভাষা। তাঁর শব্দেরা তাঁর নিজের, নির্মেদ কবিতার শরীর, প্রকাশ সরাসরি, স্পষ্ট এবং তার শিল্পমান নিয়ে অভিযোগে তাঁর নিন্দুকেরাও মুখে কুলুপ দিয়ে মাথা চুলকেই যাবেন। প্রথম থেকেই তো তিনি মানুষের মিছিলের এক কমরেড। তিনি তো মানুষের কথা বলবেনই। তাঁর ভাষায়, ‘শ্রমিক আন্দোলন করতে করতেই আমার চারপাশের জীবন আমাকে লেখার দিকে ঠেলে দিল।’
‘পদাতিক’ সম্পর্কে অগ্রজ কবি ‘কবিতা’ পত্রিকার সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু লিখলেন, ‘অভিনন্দন তাঁকে আমরা জানাব, কিন্তু তা শুধু এ কারণে নয় যে, তিনি এখন কবিকনিষ্ঠ। কিংবা নিছক এ কারণেও নয় যে তাঁর কবিতা অভিনব। যদিও তাঁর কবিতার অভিনবত্ব পদে পদে চমক লাগায়। প্রথমত তিনি বোধ হয় প্রথম বাঙালী কবি যিনি প্রেমের কবিতা লিখে কাব্য জীবন আরম্ভ করলেন না। কোন অস্পষ্ট মধুর সৌরভ তাঁর রচনায় নেই যা সমর সেনের প্রথম কবিতাগুলোতেও লক্ষ্যণীয় ছিল। দ্বিতীয়ত কলাকৌশলে তাঁর দখল এতই অসামান্য যে কাব্যরচনায় তাঁর চেয়ে ঢের বেশি অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরও এই ক্ষুদ্র বইখানায় শিক্ষণীয় আছে বলে মনে করি।’
পদাতিক যে ভিন্নধর্মী এক কাব্যগ্রন্থ হিসেবে বাংলা কবিতার রাজ্যে উপস্থিত হয়েছিল, এ কথা না মানলে ইতিহাসের অপলাপই করা হবে। প্রশ্ন– পদাতিকের কবি কি কালোত্তীর্ণ হতে পেরেছেন? উত্তরেও প্রশ্ন করা যায়– কেন নয়? পদাতিকের সঙ্গে আজকের প্রজন্মের দূরত্ব প্রায় আট দশকের। তার পরও ভাষা ও প্রকরণগত অনন্যতা নিয়ে পদাতিক আজও পুরোদস্তুর আধুনিক। আটপৌরে বুদ্ধিদীপ্ত সপ্রতিভ কবিতা ভাষা, বিশ্বাস আর বিদ্রুপের তীব্র ঝাঁকুনি, ছন্দের বিস্ময়কর কাজ আজও সমান প্রাসঙ্গিক। তারুণ্যে ভরপুর, চিৎকৃত উচ্ছ্বাসে উদ্বেল পদাতিকের সবগুলো কবিতাই যে কালোত্তীর্ণ, এ দাবি করছি না। পৃথিবীতে কোনো কবির কোনো কাব্যগ্রন্থেরই সব কবিতা কালোত্তীর্ণ হয়নি, হতে পারেনা। মেনে নিচ্ছি, ‘পদাতিক’ কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘সকলের গান’ এর ‘কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?’ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শের আহ্বান। অসুবিধা হলে কমরেড শব্দটাকে পাশে সরিয়ে রাখুন, ‘আজ নবযুগ আনবে না?’–এ প্রশ্ন কি সবার অন্তরের চাহিদা নয় সময়ের কাছে? চতুর্থ কবিতা ‘রোমান্টিক’–একুশ বছরের এক কলেজ ছাত্রের কাছে রোমান্টিকতাটা কী রকম?
আগ্নেয়গিরি পাঠালো যে এই রাত্রি
গলিত ধাতুরা জমাট কখন বাঁধবে?
ব্যবসায়ী মন মাহেন্দ্রক্ষণ খুঁজছে,
টিকটিকি ডাকে, - বধির সে নির্বন্ধ।
...
রাত্রি কিন্তু রাত্রিরই পুনরুক্তি
চাঁদের পাড়ায় মেঘের দুরভিসন্ধি;
হৃদয়-জোয়ারে ভেঙে যায় সংকল্প
ম্লান হয়ে যায় সব-হারাদের বস্তি।।
কিংবা আসুন ‘প্রস্তাব ১৯৪০’ কবিতাটিতে, যেখানে গান্ধিজীর অহিংস আন্দোলনকে তীব্র বিদ্রুপ করে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে দীক্ষিত কবি বলছেন –
...শত্রুপক্ষ যদি আচমকা ছোঁড়ে কামান –
বলব, ‘বৎস! সভ্যতা যেন থাকে বজায়!’
চোখ বুঁজে কোনো কোকিলের দিকে ফেরাবো কান।।
অথবা ‘নারদের ডায়রি’তে–
... হৃদয় সম্পর্কে হবু দম্পতির হিং-টিং-ছট;
ফাল্গুনী সনাক্ত করে শিরোধার্য বৈমানিক পাড়া;
বাহান্ন হাতির শুঁড়ে হাঁচিগ্রস্ত অহিংস শকট।
বাপুজি, দক্ষিণ করে আনো যুক্তরাষ্ট্রের মিঠাই;
সাঙ্গ, প্রভু, সত্যাগ্রহ? একচ্ছত্রে বেজেছে বারোটা? ...
পদাতিক নামের কবিতাটিতে গদ্যছন্দে এক চূড়ান্ত মার্ক্সীয় আশাবাদ শুনিয়েছেন কবি সুভাষ তাঁর অনন্য ভঙ্গিতে – তিনি বলছেন –
অগ্নিবর্ণ সংগ্রামের পথে প্রতীক্ষায়
এক দ্বিতীয় বসন্ত। আর
গলিতনখ পৃথিবীতে আমরা রেখে যাব
সংক্রামক স্বাস্থ্যের উল্লাস।
...
জীবনকে পেয়েছি আমরা, বিদ্যুৎ জীবনকে।
উজ্জ্বল রৌদ্রের দিন কাটুক যৌথ কর্ষণায়
আর ক্ষুরধার প্রত্যঙ্গ তরঙ্গ তুলুক কারখানায়।
...
উদাসীন ঈশ্বর কেঁপে উঠবে না কি
আমাদের পদাতিক পদক্ষেপে?
সেই ‘পদাতিক’ এবার আশি বছরে পড়লো। নিবন্ধের শুরুতে যে ভূমিকার উল্লেখ আছে, সেখানে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন –‘পদাতিক সেই একুশেই আটকে আছে’। আমরা যারা সত্তর দশকে স্কুল ও কলেজের ছাত্র ছিলাম, আমাদের মেরুদণ্ডী করে তুলেছেন এই পদাতিক কবি। আমরা উর্ধশ্বাসে পড়েছি সুভাষের চিরকূট, অগ্নিকোণ, ফুল ফুটুক, দিন আসবে, যত দূরেই যাই, কাল মধুমাস, এই ভাই, ছেলে গেছে বনে... আমাদের ঘাড় ধরে উনি মানুষ করে তুললেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা শেখালেন। আমরা বিশ্বাস করলাম –‘ধনতন্ত্রের বাঁচবার একটাই পথ/ আত্মহত্যা।/ দড়ি আর কলসি মজুত/ এখন শুধু জলে ঝাঁপ দিলেই হয়।/পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে সাজাতে/ ভবিষ্যৎ কথা বলছে, শোনো, ক্রুশ্চভের গলায়/ নির্বিবাদে নয়, বিনা গৃহযুদ্ধে/ এ মাটিতে/ সমাজতন্ত্র দখল নেবে...
একটা আস্ত প্রজন্মের চরিত্র গঠনে পৃথিবীতে অন্য আর কোনও কবি এভাবে প্রভাবিত করতে পেরেছেন কিনা, আমার জানা নেই।
পদাতিক তাই সত্যিই আশি নয়, এখনও একুশেই আটকে আছে, থাকবেও।
খুব ভালো লেগেছে।
ReplyDelete