2

গল্প - দ্যুতি মুস্তাফি

Posted in

গল্প


শালিখ পাখির গপ্প 
দ্যুতি মুস্তাফি 


এবার গরম একটু বাড়তে না বাড়তেই মা শালিখ আর বাবা শালিখ তাতাইদের বাড়ির জানলার কারনিশে বাসা বাঁধবে ঠিক করলো। আগের বাসাটা এক খিটখিটে বুড়ি ভেঙে দিল। তাই মা শালিখের সে কি দুঃখ! সবে ডিমগুলো দিয়েছে। কত কষ্ট করে খড়কুটো জোগাড় করে বাসা বাঁধতে হয়। ওই বুড়ি বাড়িতে একাই থাকতো। তাই ভেবেছিল এই বেশ নিরাপদ আশ্রয়,কিন্তু ও বাবা! যমের অরুচিবুড়ি, ছেলে বৌ কেউ দেখতেও আসে না, একটা শালিখের বাসাও সহ্য হলো না। কোথায় ঘর বাঁধবে এসব বাবা শালিখই ঠিক করে। মা শালিখের খুব ভরসা বাবা শালিখের উপর। হবে নাই বা কেন। সেই যখন প্রথম আলাপ,সেই ছোট্টটি ছিল দুটিতে। ভয়ে ভয়ে এখান ওখান থেকে খুঁটে খেয়ে বড় হয়েছে। সেই দুজন দুজনের ভালো বন্ধু হয়েছিল। একবার খুব জল ঝড়ে ওদের উপরইলেক্ট্রিকের তার এসে পড়তো আরেকটু হলে, দুজনে হঠাৎ ঘুম ভেঙে বুঝতেই উড়ে গেছিল। সেদিন ওই ছোট্ট বুকে কি ধুকপুকুনিটাই না হয়েছিল! কালীপুজোর দিন সারা রাত দুজন দুজনকে জড়িয়ে শুয়ে থাকে, এত আওয়াজে ভীষণ ভয় করে ওদের। এভাবেই মা শালিখ আর বাবা শালিখের বন্ধুতা বাড়ে। একটা কাক কদিন ওদের বড় জ্বালাচ্ছিল। এসব অশান্তি লেগেই থাকে। আর ওই যে এক শালিখ দেখার ভয়, মানুষের এসব ন্যাকামো যে কবে ঘুচবে। একটু কোথাও একা গিয়ে রক্ষে নেই। মানুষের ছানারা হুশ হুশ করে। তাই যেখানে যায় দুজনেই যাবার চেষ্টা করে। 

বুড়ি বাসা ভেঙে দিতে ওরা ঠিক করে এবার একটু দেখে বুঝে বাসা বাঁধবে। তাতাই বুড়ির বাড়ির সামনে খেলতে আসে। বেশ মিষ্টি ছেলে। শালিখ দুটোকে সেও দেখে রোজ। কিন্তু তাড়া করে না কোনোদিন। তাই এবার তাতাইদের জানলার কারনিশটাই বেছে নিয়েছে ওরা। বেশ কিছুদিন লাগলো আবার বাসা বাঁধতে। এই খড়কুটো বয়ে আনতে বেশ ধকল যায়।তাই কদিন খুব ক্লান্তি শালিখ দম্পতির শরীর জুড়ে। একদিন এর মাঝে খুব ঝড় বৃষ্টি,বাহ, এবারের জায়গাটা সত্যি খুব ভালো। ঝড় জলে কিছুটি হবে না। কারণ জানলার রডের উপর কারনিশ।এই দুইয়ের মাঝে বাসা। ওখানে কিচ্ছু হবার উপায় নেই। সেই ঝড়ের ভোর রাতেই মা শালিখ আবার ডিম দিল। ডিম দেবার দিন খুব কষ্ট হয়। বাবা শালিখের বুক ধুক ধুক করে। নিজেদের খুব অসহায় লাগে ওদের। এই তো ছোট্ট শরীর, ছোট্ট প্রাণ। যতদিন না ডিম ফুটে ছানা বেরোচ্ছে, ততদিন ওদের চিন্তার শেষ নেই। মা শালিখ এখন কদিন কোথাও যাবে না। কে জানে ওই কাক আবার এদিকে আসে না কি। সব সময় দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। কাকগুলো একদম তাক করে থাকে। তবে কাকেদের দুষ্টুমিটা তাতাই বুঝেছে। তাই তাতাই স্কুলে গেলেও মাকে বলে যায়,শালিখগুলোকে কেউ যেন বিরক্ত না করে। জানলার নীচেই রাস্তা। পাড়ার কুকুরগুলোও একবারে ওঁত পেতে বসে থাকে। ওরাও গন্ধে ঠিক বোঝে,তাই এদিক সেদিক ঘুর ঘুর করে। তবে এবারে তাতাইদের জন্যই শালিখের ডিম ফুটে ছানা বেড়িয়েছে। এবার ওদের আনন্দের শেষ নেই। একটু একটু করে শালিখছানাদের খাবার এনে ঠোঁটে করে খাওয়ায় মা শালিখ। বাবা শালিখ অপেক্ষা করে ওরা কবে ডানা ঝাপ্টাবে তার জন্য, কবে ওদের ওড়াতে শেখাবে, সেদিনের জন্য। এখন একদম নরম তুলতুলে শরীর। রাতে মা শালিখ ওদের জড়িয়ে রাখে। সব সময় বুকে ভয়। হঠাৎ এক সকালে মা শালিখ চোখ খুলে দেখে বাসা খালি। বুকের ভিতরটা খুব মোচড় দিয়ে উঠলো। আজই একটু চোখ জুড়িয়েছিল, আর আজই ওরা নেই!ওদের বাবাই বা গেলো কোথায়। মা শালিখের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।একটু খোঁজ করতে তাতাইদের বাড়ির ছাদের পাঁচিলে গিয়ে বসলো মা শালিখ। ও মা, নিজেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।ছাদে ওর তিনটি ছানা আর বাবা শালিখ তাতাইয়ের দেওয়া মুড়ি খুঁটে খাচ্ছে। কিচ কিচ করতে করতে মা শালিখ তাদের মাঝে এসে হাজির হলো।ওরা পাঁচজনেই তাতাইদের ছাদে মুড়ি খেতে লাগলো।

2 comments:

  1. বাচ্চাদের জন্য আর কেউ কলম ধরে না। তাই খুব পড়ে ভালো লাগলো।

    ReplyDelete