0

কৈশোরনামা - সোমা মুখার্জী

Posted in



কৈশোরনামা


সাতভাই চম্পা

সোমা মুখার্জী


এক যে ছিলেন রাজা মশাই, সাতটি তাহার রাণী
ধনরতনে শষ্যে ভরা রাজার রাজ্যখানি
কিন্তু মনে সুখ ছিলনা, এ ধন কাদের জন্যে?
ভোগ করবে, তেমন, রাজার নেই যে পুত্র কন্যে।
ছ'টি রাণী দুষ্টু, তাদের দেমাক ভরা মন
ছোটরাণী শান্ত শিষ্ট লক্ষ্মীরই মতন।

অনেক পূজা, দান, ধ্যান আর যাগযজ্ঞের পরে,
একটি মেয়ে হলো রাজার ছোটরাণীর ঘরে।
হিংসুটি ছয়রাণীর মনে বড্ডো জ্বলুনি
ছোট্ট মেয়ে ছাইয়ের গাদায় পুঁতলো তখনি।
এমন করে আরও সাতবার, সাতটি হলো ছেলে
পাঁশতলাতে ফেলে দিল ছয়টি রাণী মিলে।
ছোটরানী কেঁদে বলেন ছেলে দেখা, দিদি,
ছয় রাণীতে রেগে বলেন, "ফের বলেছিস যদি! "
প্রতিবারই রাজা শুধান, "ছেলে কোথায় বলো?"
ছয় রানীতে বলে, "সবই কাঁকড়া, ইঁদুর, ছিল।"
রাক্ষসী নাম দিয়ে, তখন সেই দুঃখী রাজা,
ছোটরাণীকে দিলেন, কঠিন নির্বাসনের সাজা।
শুকিয়ে গেল লক্ষ্মী রাণীর মুখের সব হাসি।
ছিলেন রাণী, এবার হলেন ঘুঁটে কুড়ানি দাসী।
দিনের পরে দিন কেটে যায়, রাজ্যে নেই তো সুখ
নেই আনন্দ, নেই উৎসব, খাঁ খাঁ সবার বুক।
এমনি করে সাত সাতটি বছর হলো পার
ফুল ফোটেনা, ফল ফলে না গাছপালাতে আর।
ছয়রাণীরই পাপে রাজ্যে শূন্য হলো ফুল,
নিত্যপূজা বন্ধ, জমে মন্দিরেতে ধুল।


সাতটি বছর পরে হঠাৎ খবর রাজার কাছে
ফুল ফুটেছে! ছাই গাদাতে, আটটি রঙিন গাছে।
রাজা দেখেন, সাতটি চাঁপা, একটি পারুল চারা
ছাইগাদাতে দাঁড়িয়ে দেয় হাওয়ায় মাথা নাড়া।
তাই দেখে যেই, রাজার মালী ফুল তুলতে গেল
অমনি সেসব ছোট্ট চারা লঅম্বা হয়ে গেল
এলেন যত মন্ত্রী, সান্ত্রী, বদ্যি, সেপাই,পাত্র,
পুরুত, প্রজা, কেউ পেলনা, একখানি ফুল মাত্র
একে একে এলেন এবার, দুষ্টু সে ছয়রাণী
কিছুতে ফুল দেয়না ধরা, কেন, তা কি জানি?
রাজামশাই নিজেই এবার এগিয়ে এলেন যেই
আটফুলেতে দোলায় মাথা, তেমনি উঁচুতেই !
চুলকে মাথা, মন্ত্রী বলেন, ছোটরাণীকে ডাকো।
এ ফুল পাড়তে পারেন কিনা, পরখ করে দ্যাখো।


থাকেন রাণী বনের মাঝে ছোট্ট কুঁড়ে বেঁধে
রাজা সেথায় চতুর্দোলা পাঠিয়ে দিলেন সেধে।
রাণী এসে যেই দাঁড়ালেন, অমনি পারুল বলে,
"মা এসেছেন, ও চাঁপাভাই, এবার এসো চলে।
মায়ের দুঃখ ঘুচাও এবার মোছাও মায়ের চোখ,
রাক্ষসী নন মা আমাদের, জানুক সকল লোক।"
দেখল সবাই অবাক হয়ে, টুপটুপিয়ে ভুঁয়ে
পড়ল ঝরে, সেই আটফুল, রাণীর চরণ ছুঁয়ে।
সাতটি ছেলে, একটি মেয়ে মা মা করে ডেকে,
উঠল এসে ছোটরাণীর কোলে, পিঠে, কাঁখে।

অনেকদিনের পরে আবার রেগে উঠে রাজা
ছয় রাণীকে দিলেন এবার শূলে চড়ার সাজা।
ছোটরাণী শুনে, ধরেন জড়িয়ে রাজার পা
বলেন "ওদের মাফ করে দাও, শাস্তি দিওনা।
মেনে নিলেন রাজামশাই, ছোটরাণীর কথা
দেখে শুনে ছয় দেমাকীর হেঁট হলো যে মাথা।
বলেন রাজা, শোনো সবাই, যা পাপ, যা অন্যায়
চিরটাকাল সেসব কিছু গোপন নাহি রয়।
আসুক বিপদ, তবুও জেনো, নেই সত্যের লয়
মিথ্যার নাশ হবেই হবে, জয়, সত্যের জয়।
তারপরে, সেই সাত চাঁপাভাই একটি পারুল বোন।
সাতটি মা আর বাবার সঙ্গে, কাটায় সুখে জীবন।

0 comments: