9

প্রবন্ধ - উদয়াদিত্য সোম

Posted in


প্রবন্ধ


এলি-কাহন 
উদয়াদিত্য সোম


পাহাড়-জঙ্গলকে সাক্ষী রেখে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির এক কন্যার সাথে নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ হচ্ছি সমস্ত মধ্যবিত্ত সংস্কার আর নৈতিকতার আগলকে জলাঞ্জলি দিয়ে - অতি বড়ো সুখস্বপ্নেও ভাবিনি এমনটা।

প্রাথমিক কুণ্ঠাবোধ যে খানিকটা ছিলো না, তা নয়। একে তো বিজাতীয়া বান্ধবী, ভাষা বোঝার সম্ভাবনা নেই, তাতে তারও মধ্যবয়স পেরিয়েছে, সব মিলিয়ে অন্ততঃ হাত-পা ভাঙার, বা কোমরে হ্যাঁচকা লাগার ভয় যে ছিলো না এমন কথা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারিনা। আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরে সাহস যোগালেন সঙ্গের ভদ্রলোক। পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে বললেন, থাই ভাষায় ভদ্রমহিলার নাম ফেউং ওআন। নামের আক্ষরিক অর্থ - মৌচাকের মতো মিষ্টি!

নামের মধ্যেই মধুচক্র! হে ঈশ্বর - এ আমি কোথায় এসে পড়লাম? 

মনস্তত্ত্বের পণ্ডিতরা বলেন, হৃদয় যেখানে কথা বলে, মুখের ভাষার ব্যবধান সেখানে কোনো দূরত্বই আনতে পারে না। কথাটা প্রমাণ করে দিলেন মধুচক্রিকা - এক্কেবারে হাতেনাতে।

শুঁড়েনাতেও বলা যায়। আমার সমস্ত দ্বিধা, সঙ্কোচ, ভয় এবং আরও যা যা শহুরে মাঝবয়সী জড়তা আমাদের মধ্যে আগল তুলে দাঁড়িয়ে ছিলো এতক্ষণ - শুঁড়ের একটা গভীর দীর্ঘশ্বাসে তাদের উড়িয়ে দিলেন তিনি।তারপর সেই শুঁড়েরই আলিঙ্গনে আমায় জাপটে ধরে টেনে নিলেন নিজের আরও কাছে। আর আমিও স্থান-কাল-পাত্র বিস্মৃত হয়ে চকাস করে একটা চুমু খেয়ে ফেললাম তেনার শুঁড়ে। বুড়ো বয়সের ভীমরতি যেমন হয় আর কি।

******

ব্যাংকক থেকে একশো কিলোমিটার দক্ষিণে একটি হাতিদের হাসপাতালে এসেছি এক দিনের জন্যে, ভলান্টিয়ার হয়ে। নামেই হাসপাতাল, আসলে বৃদ্ধাশ্রম। পঞ্চাশ থেকে নব্বই, বিভিন্ন বয়সের অসুস্থ, আহত বা পঙ্গু একটি হস্তীযুথ, যাদের প্রায় গোটা জীবনটাই কেটেছে দাসত্বের বেড়ি পায়ে, তাদের শেষ জীবনে দু-দণ্ড জিরিয়ে, কায়িক শ্রমের হাত থেকে মুক্ত হয়ে, সময়ে খাবার আর ওষুধ পেয়ে, শান্তিতে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করার শেষ জংশন স্টেশন।

এই মুহূর্তে এশিয়ায় ষোলো হাজারের ওপর হাতি বন্দী জীবন যাপন করছে। বন্দী, অর্থাৎ তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের বাইরে, তাদের 'মানুষ প্রভু'-দের আজ্ঞাবহ দাস হয়ে - তা সে মহীশূরের রাজপ্রাসাদ হোক, বা আমেরের দুর্গ, জলদাপাড়ার অভয়ারণ্য হোক বা থাইল্যান্ডের কাঠ-চেরাই কল, কিংবা ভিয়েতনামের পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র। দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো স্থলচর প্রাণীটির পায়ে, সবচেয়ে ধূর্ত প্রাণীটির শিকল পরানোর প্রায় চার হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের নিশান। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের 'পোষ মানানো'-র ধরণটা কমবেশি একরকম - সোজা কথায় জোর খাটিয়ে, অকথ্য অত্যাচার করে - শারীরিক ও মানসিক দুই-ই।

এই মানসিক অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিত'টা আরেকটু পরিষ্কার করে বলার প্রয়োজন আছে।

হাতি'র মতো পরিবারবদ্ধ প্রাণী জীবজগতে খুব বেশি নেই। এবং শুধু পরিবারবদ্ধই নয়, মাতৃতান্ত্রিক-ও। হাতি'র যুথ পরিচালিত হয় হাতি-দিদিমা’র ইচ্ছেতে। তার পরে মা-মাসী-ইত্যাদিদের জোর। দাদু-ঠাকুর্দারা তো গুনতিতেই আসেন না, এমন কি বাবা-কাকাদেরও বয়ঃপ্রাপ্তির পরে বুঝিয়ে দেওয়া হয় নিজেদের রাস্তা দেখে নিতে। প্রবীণা দিদিমার সঙ্গে, মা-মাসীদের স্নেহের ছায়ায় বেড়ে ওঠে কচিকাঁচারা।

এই যে ষোলো হাজার বন্দী হাতির কথা বলছি, এদের প্রায় সকলকেই কম-বেশি তিন থেকে ছ'বছর বয়সের মধ্যে চুরি করে - বা অনেক ক্ষেত্রে তাদের চোখের সামনেই তাদের পরিজনকে হত্যা করে - ছিনিয়ে আনা হয় এদের প্রাকৃতিক পারিপার্শ্বিক থেকে। তার পরে চলে তাদের 'crushing the spirit' - দেশীয় ভাষায় 'ফাজান' (Phaazan), অর্থাৎ, তাদের মাথার ওপর থেকে যে দিদিমা-মা-মাসীদের স্নেহ বা ভরসার ছায়া সরে গেছে সারা জীবনের মতো, এর পরের জীবনটা যে তাদের অতিবাহিত করতে হবে শুধুই তাদের দু-পেয়ে মনিবদের আজ্ঞাবহ দাস হয়ে - এই কথাগুলো তাদের ছোট্ট অপরিণত মাথায় আক্ষরিক অর্থেই গজাল মেরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়; এমনভাবে, যাতে অবচেতন মনেও তাদের মধ্যে কখনো স্বাধীনতার স্বপ্ন শিকড় না গাড়তে পারে। শুওরের খোঁয়াড়ের মতো ছোট্ট আস্তানায় রাখা হয় এই চুরি-করে আনা দুধের ছানাগুলোকে – পাঁচ-ছ বছর অবধি যারা নির্ভর করে থাকে মায়ের দুধের ওপর, তাদের আধপেটা খাইয়ে, কখনো বা দীর্ঘ অনাহারে রেখে, শিকলে বেঁধে, অঙ্কুশের বাড়িতে রক্তাক্ত করে তাদের মনের মধ্যে পাকাপাকিভাবে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়; বেঁচে থাকার জন্যও তাদের নির্ভরশীল করে তোলা হয় তাদের দু-পেয়ে মালিকদের দয়ার ওপরে - ঠিক তেমন করে, যেমন করে মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে আনা শিশুটিকে বিকলাঙ্গ করে বসিয়ে দেওয়া হয় রাস্তার মোড়ে ভিক্ষে করতে, বা শেখানো হয় ভীড় বাসে পকেট তাক করে ক্ষুর চালাতে, বা নীলামে চড়ানো হয় তার কৌমার্য। 

আর তাদের ছোট্ট মাথায়, ছোট্ট বুকে সেই ভয় আর ধুকপুকুনি নিয়ে তারা বেড়ে ওঠে, বড়ো হয়, বুড়ো হয়। কেউ কেউ মারাও যায় অল্প বয়সে। প্রতিটি হাতি, যাদের দেখেন পিঠে ট্যুরিস্টদের নিয়ে দুলকি চালে হেঁটে চলেছে পাহাড়ী রাস্তায় বা জঙ্গলে - জানবেন, তাদের প্রত্যেকের বন্দীজীবনের দাম, গড়পড়তা আরো চার থেকে পাঁচটি হাতির প্রাণ।

ইন্টারনেট ঘাঁটলে এ বিষয়ে অনেক প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যাবে - তেমনই এক তথ্যসূত্র থেকে তুলে দিচ্ছি এই 'ফাজান' প্রক্রিয়ার রূপটি।

“Repeatedly beaten with sharp metal and other tools, the helpless baby elephants will be constantly yelled and screamed at. They are stabbed, burned and beaten, as well as starved of food and deprived of water. Bull hooks (a tool used in most forms of elephant control) will be used to stab the animal's head, slash the skin and tug the ears. Asian elephants used in trekking (elephant rides), circuses or any other form of entertainment, often have shredded or torn ears from their tissue being ripped and pulled away during the training process.

They also often have scars on their foreheads from deep lacerations caused by beatings. The Phajaan may last from several days to weeks, most elephants go through it when they are 3-6 years, but they can be younger depending on the age at which they were taken from their mothers. They have no rest from physical torture and mental domination. Gradually, their spirits are broken, as their handlers achieve control.

In the final stage of the Phajaan, the elephant’s mahout will bring the animal its first meal with water, and will be the one to ''release'' the elephant and lead it away from the crate. After weeks of torture, mental and emotional abuse, loneliness, confusion and separation, the elephant sees this human figure as its saviour – the one it trusts. This is just another stage of mental and emotional manipulation, of course, but it is how a particular mahout gains such immense control over its animal.”

স্টকহোম সিন্ড্রোমের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে কি, পাঠক?

এরপর যখন হাতিটি তার মাহুতের পূর্ণ বশ্যতা স্বীকার করে নেয়, তখন শুরু হয় তার ট্রেনিং। তবে তার সঙ্গে মাঝে মাঝেই চলতে থাকে 'ফাজান'-এর পুনরাবৃত্তি - নিয়মিতভাবে তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় তার নিজের জায়গা। তখন থেকে শুরু করে, যতদিন অবধি সে পুরোপুরি অথর্ব না হয়ে পড়ছে ততদিন অবধি সে বেঁচে থাকে কেবল একটা ভারবহনের যন্ত্র হয়ে, তা সে কাঠের গুঁড়ি বা পাথরের ভারই হোক, বা মানুষের। তার কোনো অধিকার থাকে না, তার কোনো ইচ্ছে-অনিচ্ছে থাকে না, কোনো ইউনিয়ন লড়াই করে না তার হয়ে, এমন কি এশিয়ার বহু দেশের বন্যপ্রাণী-সংরক্ষণ আইনের আওতাতেও আসে না সে। অর্থাৎ, জঙ্গলে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানো হাতির দলটি সংরক্ষণের হকদার, কিন্তু সেই দল থেকে যে মুহুর্তে একটি বাচ্চাকে চুরি করে ছিনিয়ে এনে তাকে বশ্যতা স্বীকার করিয়ে ফেলা হয়, কাগজপত্র জাল করে তাকে গৃহপালিতের তকমা দিয়ে দেওয়া হয়, তখনই সে হারিয়ে ফেলে তার সংরক্ষণের সমস্ত অধিকার।

আর এই আমরাই বুক ঠুকে বলি - এই দুনিয়া থেকে দাসপ্রথা নির্মূল হয়ে গেছে! হায় রে ভণ্ডের পৃথিবী!

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, ভারবহনের কাজটা একটা হাতির কাছে আর এমন কি? কথায় বলে, হাতির মতো জোর! কটা মানুষকে পিঠে নিয়ে হেঁটে যাওয়া, বা কিছু মোট বয়ে দেওয়া - একটা হাতির কাছে এটা কি আর এমন কাজ? তার বদলে তো তাকে দেওয়াও হচ্ছে হাতির খোরাক - ঠিক কি না?

ভূল - সর্বৈব ভূল।

হাতির শরীরের গঠন, বিশেষ করে তার পিঠের গঠন, ভারবহনের জন্য তৈরি নয় মোটেও।

হাতির মেরুদণ্ডের কশেরুকার গঠন অনেকটা খাঁজ-কাটা, এবং পর পর দুটি কশেরুকার মধ্যে থাকে বেশ খানিকটা ফাঁক। পিঠের ওপর হাওদা, বা এমনকি কোনো সওয়ারী বওয়ার জন্যও একেবারেই উপযোগী নয় তার শারীরবৃত্তীয় গড়ন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই কাজটিই তাকে করে যেতে হয় নিয়ত, কারণ তাতেই তার প্রভুদের লাভ। দিনের পর দিন এই কাজ করতে করতে পাকাপাকি স্পাইনাল ইঞ্জুরির শিকার হয় অনেক হাতি।

আর হাতির খোরাক?

একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির খাদ্যের পরিমাণ দিনে দেড়শো থেকে আড়াইশো কিলোগ্রাম। ভাগ্যবান/ ভাগ্যবতী বন্দী যারা, তারা হয়তো এর অর্ধেক পায় বড়ো জোর। আমার কথা নয় - এশিয়ার এগারোটি দেশের গৃহপালিত (?) বন্দী হাতিদের নিয়ে বেশ কিছু প্রামাণ্য কাজ হয়েছে। এই পরিসংখ্যান সেখান থেকেই নেওয়া।

এর পর, যখন এদের আর ক্ষমতা থাকে না শক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে মানুষ-প্রভুদের কাজে আসার, তখন তাদের কখনো খেদিয়ে দেওয়া হয় জঙ্গলে। কেউ কেউ মারা যায় অসময়ে। কখনো বা কসাইয়ের ছুরি কিছু দরিদ্রের থালায় অসময়ে পড়ে-পাওয়া মাংসের জোগান দেয়।

আবার স্বপ্নের মতো অন্যরকম কিছুও ঘটে কখনো কখনো। কিছু মানুষ হয়তো উদ্যোগী হয়ে ওঠেন এদের শেষ জীবনটায় একটু আরামের, একটু বিশ্রামের ছোঁয়া দিতে। তখন আবার এদের প্রভুদের হয় পোয়াবারো। 'মরা হাতি লাখ টাকা' এই আপ্তবাক্যটিকে সত্যি প্রমাণ করতে তখন এইসব মরতে-বসা প্রাণগুলো আবারও হাতবদল হয় কিছু টাকার বিনিময়ে। জায়গা পায় এলিফ্যান্ট স্যাংচুয়ারিতে।

থাইল্যান্ড-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে, মানুষের করুণা ভাঙিয়ে, এমনকি এই এলিফ্যান্ট স্যাংচুয়ারির নামেও বৃদ্ধাশ্রমের ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে একাধিক জায়গায়। 

******

এটা যে সেরকম কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, এবং এদের রোজগারের পুরোটাই যে খরচা হয় এদের আশ্রিত হাতিদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, নিজেকে সে ব্যাপারে খানিকটা নিশ্চিত করে, এক শনিবারের সকালেএসে হাজির হলাম এদের ফাউন্ডেশনের দরজায়। উদ্দেশ্য, শ্রমদান। একটি হাতির সঙ্গে খানিকটা সময় কাটানো। ওদের বিষয়ে কিছু জানা। এবং হয়তো কিছু ভূল ধারণা ভাঙা।

ব্রায়ান নামের যে ভদ্রলোক আমার সঙ্গে ছিলেন আমার গাইড হয়ে, তিনি চাকরিজীবনে ছিলেন ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি'র কম্যান্ডো। কাজের সূত্রে হয়তো প্রাণ নিয়েছেন অবলীলায়। কিন্তু এখন নিবেদিতপ্রাণ, এই বৃদ্ধআহত প্রাণীদের রক্ষণাবেক্ষণে। এরা প্রত্যেকেই ভারবাহীর কাজ করে এসেছে সারা জীবন - স্পাইনাল ইঞ্জুরির শিকার এরা সকলেই। তার ওপর কারোর একটা চোখে জ্যোতি নেই, কেউ একটা পা'য়ে পুরোপুরি পঙ্গু, কারোর নানাবিধ অন্য সমস্যা - আমার মধুচক্রিকা যেমন ফোকলা। আমার মনে পড়ে যাচ্ছিলো আমার দিদা'র কথা - শেষ বয়সে সব কটি দাঁত খুইয়ে আরো খোলতাই হয়েছিল ভদ্রমহিলার রূপ!

সারাটা দিন কাটলো বুড়ির পরিচর্যা করে। তাকে জঙ্গলে ঘোরাতে নিয়ে যাওয়া, তার খাবার তৈরি করা, পাহাড়-প্রমাণ ফল কাটা, তাকে ঘড়ি ধরে খাবার এবং ওষুধ খাওয়ানো - এবং সর্বোপরি তাকে স্নান করানো।মনে হলো, আমার সঙ্গ ভালোই লাগলো ভদ্রমহিলার। কিংবা কি জানি, এও হয়তো স্টকহোম সিন্ড্রোম!

স্নান-খাওয়ার পরে তাকে ছেড়ে আসা হলো ফাউন্ডেশনের লাগোয়া জঙ্গলে। ব্রায়ান বেশ লম্বা একটা দড়ির একটা মাথায় ফাঁস লাগিয়ে বেঁধে দিলেন মধুচক্রিকার পায়ে। অন্য মাথাটি বাঁধলেন মোটা একটা আমগাছেরগুঁড়িতে। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টির উত্তরে বললেন,

- Someone of her age and disability, and a broken spirit cannot handle full freedom. If left untied, she might break another of her limbs, or get injured by another elephant. She must live within a limited freedom, so that she can live the last few days of her life at peace. 

ফিরে আসার আগে আরেকবার দেখা করতে গেলাম মধুচক্রিকার সাথে । শুনেছি হাতির ঘ্রাণশক্তি অসম্ভব প্রখর। জানিনা আমার গন্ধে আমাকে চিনতে পারলো কি না। কিন্তু আমি গিয়ে দাঁড়াতেই শুঁড় বাড়িয়ে দিলো, ছোঁয়ালো আমার গায়ে, মাথায়, মুখে।

ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে, ওর খরখরে শুঁড়ের স্পর্শ পেতে পেতে মনে হলো, আমার শরীর থেকে একটা একটা করে খসে যাচ্ছে আমার জন্ম, আমার শিক্ষা, আমার পেশা, আমার সমৃদ্ধির আবরণ। খোলা আকাশের নীচে মুখোমুখি শুধু দুটি প্রাণী। একজন আশিটি বসন্ত পার করে দিয়েছে এই পৃথিবীতে। আরেকজন দাঁড়িয়ে পঞ্চাশের উপকণ্ঠে। একজন প্রতিভূ পৃথিবীর যাবতীয় সারল্যমাখা শক্তির - আরেকজন পৃথিবীরসব শঠতা, নীচতা আর কুটিলতার প্রতীক। দুজনেই নির্বাক - কিন্তু মনে হলো আমার গায়ে মাথায় ওর স্পর্শ বুলিয়ে দিতে দিতে মধুচক্রিকা আমাকে নিরুচ্চারে প্রশ্ন করছে, 

- কেন? 

বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারলাম না ওর সামনে।

এই প্রশ্নের উত্তর তো আমাদের সভ্যতার সিলেবাসে নেই।

9 comments:

  1. উদয়, খুব ভালো লাগল। অনেক কিছু জানলামও। চরৈবেতী চরৈবেতী।।

    ReplyDelete
  2. Bah Uday. Sangbedana ar prakash korte para duto eksange onekeri asena. Tor ase. Onek kichhu shikhlamo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. খুব ভালো লাগলো দোলা, তোর মতামত পেয়ে।

      Delete
  3. সত্যি বলতে কি, আমার লেখাটি বের হওয়ার পর যখন দেখলাম আপনার লেখাও একই সংখ্যায় রয়েছে, নিজের প্রতি একটু গর্ববোধও হল। আপনাকে বেশ একটু শ্রদ্ধাও করি। বিশেষত আপনার লেখায় যে গবেষণা থাকে তার কোয়ালিটি আর কোয়ান্টিটি দুটোকেই। এই লেখাটিও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে ছোট বোন হিসাবে একটু আবদারও আছে আপনার কাছে। আমার লেখাটি পড়ে একটু দোষত্রুটি জানালে খুব খুশি হব।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি নিশ্চয় জানাবো ঋতুপর্ণা। এটা তো পাঠক হিসেবে আমার দায়িত্বও।

      Delete
  4. একদম অন্যরকম। পরম মমতা মাখা উপস্থাপন।

    ReplyDelete
  5. অসামান্য লেখাটা। ওই শেষের প্রশ্নটার সম্মুখীন হবার সাহস নেই।

    ReplyDelete
  6. Nilay Baran Som28 March 2020 at 06:13

    একেবারে অন্যবিষয় নিয়ে লেখা - ধৃতিকান্তি লাহিড়ী চৌধুরীর পর হাতি নিয়ে কাউকে লিখতে দেখলাম Iলেখাটি বহুল পঠিত হোক , এই কাম্য

    ReplyDelete