প্রচ্ছদ নিবন্ধ
বাংলা নবজাগরণের এক অনালোচিত ইতিহাস
স্বপন দেব
বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে, বিশেষ করে উনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে, এক স্মরণীয় ও গৌরবোজ্বল অধ্যায় হলো আমাদের নবজাগরণ বারেনেঁসা। এই সময় থেকেই আমাদের জাতীয়তা বোধের উন্মেষ শুরু হয় ও বিদেশি শাসকের থেকে স্বাধীনতা লাভের স্পৃহা জেগে ওঠে। ফলত, ভারতীয় উপমহাদেশে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কম্পানি এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শাসনের অবসানের জন্য ভারতবাসীর জাতীয় আন্দোলন এবং স্বাধীনতা লাভের লড়াই শুরু হয়। এই স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা অহিংস আন্দোলন ও প্রতিবাদ দিয়ে শুরু হলেও পরে হিংসাত্মক লড়াই শুরু হয়। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কম্পানীর বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালের মীরাটের সিপাহী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত নব্বই বছরের এই স্বাধীনতা সংগ্রামে সব থেকে সংগঠিত ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল বাঙালিদের এবং বাংলায়। কারণ নবজাগরণ বা রেনেসাঁর সুত্রপাতও ঘটেছিল এই বাংলায়। একটা কথা গোড়াতেই পরিষ্কার হয়ে যাওয়া ভালো। একটি দেশ বা জাতির প্রকৃত জাগরণ কখনওই সম্ভব নয় যদি তা সর্বমুখী না হয়। সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা সর্বস্তরে যদি এই জাগরণ না ঘটে, সে জাতির প্রকৃত সর্বাঙ্গীন জাগরণ ও সম্ভব নয় কিছুতেই। আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, ইংরেজ তথা শ্বেতাঙ্গদের দম্ভ ও ঔদ্ধত্য, বর্ণবিদ্বেষ, তাদের অমানবিক শোষণের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাই বলে আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা, যে এই ইংরেজদের মধ্যে, শেতাঙ্গদের মধ্যে, এমন গুটিকয় মানুষ ছিলেন, যাঁদের বিশেষ অবদান ছিল, যাঁরা সবকিছুর উর্দ্ধে উঠে ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষের মানুষ, বিশেষ করে বাংলার মানুষের সুখে দুঃখে বেদনায় আনন্দে সমভাগীদার হয়েছিলেন। যে সর্বাঙ্গীন বা ব্যাপক জাগরণের কথা আমি আগেই বলেছি, সেই জাতীয় জাগরণে এঁদের অসামান্য অবদানের কথা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। পৃথিবীর যে কোনও দেশে, আমাদের দেশে তো বটেই, ছোটো মনের ছোটো মাপের লোকের সংখ্যা বেশি, বড়ো মনের, বড়ো মাপের মানুষের সংখ্যা কম। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ছোটো ইংরেজ, বড়ো ইংরেজের কথা। আজ আমি এমন একজনের কথা শোনাতে যাচ্ছি, যিনি ছিলেন শুধু বড়ো মনের নয়, বিরাট মাপের এক ইংরেজ, যিনি জাতিতে বিদেশি হলেও, গায়ের রঙ সাদা হলেও, অন্য সবদিক দিয়ে ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষের মানুষ, বিশেষ করে বাংলার মানুষের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও শুভার্থী।
সেই মানুষটি হলেন রেভারেন্ড জেমস লঙ। ওঁর সাথে সাথেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম অ্যাডামস-এর কথাও। শেষোক্ত ব্যক্তিটির নামই হয়তো শোনেননি অনেকেই। জেমস লঙ-এর মতো এমন বিশাল মনের ইংরেজ, অন্তত সেই যুগে আর কেউ এসেছিলেন বলে আমার জানা নেই। বাংলার সমাজ কল্যাণ, বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি, সর্বক্ষেত্রেই এই মানুষটি সোৎসাহে এগিয়ে এসেছেন সক্রিয় ভাবে। সমাজ সংস্কারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্যারিচাঁদ মিত্রের “আলালের ঘরের দুলাল” ও তাঁর সমাজসংস্কারমূলক সচেতন লেখা পড়ে, তাঁকে আখ্যা দিয়েছেন, “ডিকেন্স অফ বেঙ্গল”, বাংলার চার্লস ডিকেন্স। ১৮৫১ সালে ‘বেথুন সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠার কাজে, এই মানুষটিই হাত মিলিয়েছেন, দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাম গোপাল ঘোষ, প্যারিচাঁদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মজুমদার, রাধানাথ শিকদারের সঙ্গে। বাংলার নবজাগরণের ক্ষেত্রে এই বেথুন সোসাইটির অবদান, সর্বজনস্বীকৃত। এই একই বছরে, বাংলা তথা মাতৃভাষার বিকাশ তথা সাহিত্য চর্চার জন্য ‘ভার্নাকুলার লিটারেচার সোসাইটি’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলার জন্য আবার এগিয়ে এসেছেন, জেমস লঙ। বিদ্যাসাগর ও রাধাকান্ত দেব এর মতো দুই বিপরীত চরিত্রের মানুষকে নিয়ে এসেছেন, একই ছাতার তলায়। এই ভার্নাকুলার লিটারেচার সোসাইটির মুখপত্র হিসেবে, বিলিতি পেনি ম্যাগাজিনের অনুকরণে প্রকাশ করেছেন বাংলা ভাষায় প্রথম সচিত্র বাংলা মাসিক পত্রিকা, ‘সচিত্র বিবিধার্থ সংগ্রহ মাসিক পত্রিকা’। এই পত্রিকাটির অবদান বাংলার মনিষীদের প্রভাবিত করেছে, এমন কি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও এটি পড়ে প্রভবিত হয়েছেন। এই পত্রিকাটির রচনার মান যাতে উন্নত হয়, বিভিন্ন বিষয়ে যাতে লেখা প্রকাশিত হয়, তার উদ্যোগ নিতে এগিয়ে আসতে দেখি, সেই জেমস লঙ সাহেবকে। ১৮৫৭সালে জানুয়ারি মাসে তখনকার আইন সচিব বার্ণস পীকক একটি প্রস্তাব পেশ করে জানালেন যে, এদেশের যাঁরা শ্বেতাঙ্গ অধিবাসী আছেন, তাঁরা এদেশের আইন, এদেশের আদালতের অধীনে না থাকার ফলে, আইন শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে, আইনের দৃষ্টিতে সমতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেনা। তিনি আরও জানালেন যে, ভারতীয়রা, বিশেষত শিক্ষিত, রাজনৈতিক ভাবে সচেতন ভারতীয়রা তাঁকে সমর্থন জানাচ্ছেন। তাই তিনি একটি বিল এনে, শ্বেতাঙ্গ অশ্বেতাঙ্গ, এদেশের সমস্ত অধিবাসীদের, একই আইন ও একই আদালতের অধীনে আনতে চান। কিন্তু, উনবিংশ শতাব্দীর সূচনা থেকেই এদেশে আসা এবং থেকে যাওয়া উদ্ধত বর্ণবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গরা কোনও রকমেই আইনের সমতা চায়না কালা আদমিদের সঙ্গে। তাঁরা বিরাট প্রতিবাদ জানালো প্রস্তাবিত এই বিলএর বিরুদ্ধে। বিক্ষোভ জানাতে শুরু করলো এই বলে যে, এতে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে, এটা আমরা কিছুতেই বরদাস্ত করবোনা। তাদের বাধা বুলি ছিলো, এটা কালা কানুন, এই Black Act চালু করা যাবেনা।
বাংলার নবজাগরণের যুগে, আজ আমরা যাঁদের মনিষী বলে জানি, তাঁদের অনেকেই ছিলেন তখনকার ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। সেই সময়কার রাজনৈতিক সংস্থা ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন রাজা রাধাকান্ত দেব। এই ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এক সভা ডাকা হয়, শোভাবাজার রাজবাড়ির নাটমন্দিরে। অসুস্থতার জন্য রাজা রাধাকান্ত দেব সভায় আসতে পারলেন না, সভাপতিত্ব করলেন রাজা কালীকৃষ্ণ দেব। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন, এই বিল খুবই যুক্তিযুক্ত এবং ন্যায়সঙ্গত। কেন শ্বেতাঙ্গরা সমস্ত আইনের উর্ধে থাকবে? মনে রাখতে হবে যে, ১৮৫৭ সালের জানুয়ারি মাসে, সভা ডেকে, ভারতীয় এবং শ্বেতাঙ্গদের একই আইনের অন্তর্ভুক্ত করে সমান অধিকার দাবী করা, আইনের চোখে ভারতীয় ও শ্বেতাঙ্গদের সমদৃষ্টিতে দেখার দাবী করার সাহস খুব কম ভারতীয় এবং বাঙালিদের ছিল। যাঁরা রাধাকান্ত দেবকে এক রক্ষণশীল, সতীদাহ প্রথা রদের বিরোধী মানুষ বলে জানেন, তাঁদের কেন এই সত্যটি জানতে দেওয়া হয়না যে, অসুস্থতার কারণে (তখন রাধাকান্ত দেবের বয়েস ৭৩ বছর) রাধাকান্ত দেব এই সভায় উপস্থিত থাকতে না পারলেও, তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়ে ছিলেন, রাজকৃষ্ণের পুত্র কালীকৃষ্ণ দেবকে এবং শোভাবাজার রাজবাড়ির নাটমন্দিরে অনুষ্ঠিত হওয়া এই সভার সিদ্ধান্তকে সর্বান্তকরণে পুর্নসম্মতি জানিয়েছিলেন? এই ব্যাপারে, রাজা রাধাকান্ত দেবের কথা পরে আবার বলতে হবে, কিন্তু, যে মুষ্টিমেয় শ্বেতাঙ্গ বা ইংরেজ সেদিন এই আইনটি সমর্থন করে ভারতীয়দের সঙ্গে সোচ্চারে গলা মিলিয়ে ছিলেন, তাঁদের মুখপাত্র ছিলেন, জেমস লঙ। শোভাবাজার রাজবাড়িতে ডাকা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন জেমস লঙ আর জর্জ টমসন নামে মাত্র দু’জন শ্বেতাঙ্গ। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, মানবিকতা আর মানবাধিকারের প্রশ্নে ভারতীয়দের হয়ে এবং ঐ বিলের স্বপক্ষে বলার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। লঙ বলেছিলেন, কালাকানুন, Black Act! কে বলল ও কালাকানুন? কে বললে Black Act? নাম যদি দিতেই হয়, তবে এর নাম দেওয়া উচিত, সাদা কানুন, White Act!
১৮৫৯ সাল। তখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে, মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষায় প্রচুর সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। আমাদের একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটা বড়ো ভূমিকা নিয়েছিলো সেই সময়কার নাম করা ইংরেজি খবরের কাগজগুলো। এটি মোটেও ঠিক নয়। ইংরেজি কাগজের থেকে অনেক অনেক বেশি বড়ো এবং মুখ্য ভূমিকা নিয়ে ছিলো মাতৃভাষায় প্রকাশিত সেই সময়ের ছোটো ছোটো পত্র-পত্রিকাগুলো।
তখন ঠিক হলো, যে সমস্ত মাতৃভাষায় প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা আছে, তার একটা তালিকা বানানো দরকার। কে তার সম্পাদক, কি ধরণের কাগজ, কত দিন প্রকাশিত হচ্ছে, কত জন পড়ে, কি তার প্রভাব? কিন্তু, কাকে এই দায়িত্বভার দেওয়া যায়? ইংরেজদের মধ্যে কে বাংলা পত্রিকা পড়তে পারে? কে এত পরিশ্রম করবে? এসব করার জন্য তো তখন একজন, কেবলমাত্র একজনই ইংরেজ ছিলেন, রেভারেন্ড জেমস লঙ! তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হলো, বাংলা ভাষায় প্রকাশিত যে সব ছোটো খাটো পত্র-পত্রিকা সারা বাংলা জুড়ে রোজ বেরোচ্ছে, তার একটি তালিকা তৈরি করে রিপোর্ট দিতে। মাত্র দু’মাস সময় নিয়ে ছিলেন লঙসাহেব এই রিপোর্টটি পেশ করতে এবং আজ পর্যন্ত, যাঁরা জনমানসে সংবাদপত্রের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন বা করবেন, তাঁদের এই জেমস লঙএর রিপোর্ট পড়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। জেমস লঙ সাহেব, তাঁর রিপোর্টে সাহস করে কি লিখেছিলেন, জানেন? রিপোর্টে তিনি লিখেছিলেন, “এই দেশের বেশিরভাগ ইংরাজি ভাষায় প্রকাশিত কাগজগুলি জাতি বিদ্বেষে ভোগে আর ভারতীয়দের যথেচ্ছ ভাষায় গালিগালাজ করে। আর সেই কারণেই বেশিরভাগ বাঙালি এখন বাংলা কাগজ পড়ে”। এই রিপোর্ট পড়ে, তখনকার দিনের হোমরাচোমরা সাহেব আমলারা, আর নীলকরেরা হাড়ে হাড়ে চটে গেলেন লঙ সাহেবের ওপর এবং কিভাবে এঁকে শায়েস্তা করা যায়, তার ফন্দি-ফিকির আঁটতে লাগলেন।
পরের বছর, জুন মাস, ১৮৬০ সাল। সিপাহী বিদ্রোহ ঘটে গেছে। তখনকার দিনের শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায় আর নীলকরেরা যথেচ্ছভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারতো। এর জন্য কোনও লাইসেন্স বা অনুমতির দরকার হতো না। এবং এই আগ্নেয়াস্ত্র তারা এবং নীলকরেরা ব্যবহার করতো নিজেদের খেয়াল খুশি মর্জি মাফিক কালোদের বিরুদ্ধে। সিপাহি বিদ্রোহের পর একটা কথা উঠেছিল, যে আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে গেলে সকলেরই একটা লাইসেন্স থাকা প্রয়োজন। শুরু হয়ে গেল শ্বেতাঙ্গ আর নীলকরদের আপত্তি আর আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তখন এই আইন পাশ করা যায়নি, কারণ সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি মর্ডান্ট ওয়েলস এই আইন বাতিল করে দেওয়ার রায় দেন। কিন্তু, জেমস লঙ এর মতো মানুষের পূর্ণ সমর্থন ছিল শ্বেতাঙ্গ ও নীলকরদের এই আইনের আওতায় আনার।
ইতিমধ্যেই আমি ১৩০০টি শব্দ খরচ করে বসে আছি জেমস লঙ এর কার্যকলাপ নিয়ে, কেন জানেন? কারণ আমাদের প্রজন্ম, আমাদের পরের প্রজন্মও জেমস লঙ বলতে জানি এবং বুঝি, নীলদর্পন অনুবাদ করা এবং ১৮৬১ সালে এই অপরাধে তাঁকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করে শুধু জরিমানা নয়, জেলেও পাঠানো হয়। নীলদর্পনের অনুবাদ ও তার জন্য সাজা পাওয়াটাকে যদি আমরা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখি, তাহলে বোঝাই যাবেনা যে, কি এমন একটা ব্যাপার ঘটলো, যে নীল দর্পন অনুবাদ করার জন্য তখনকার একজন পাদ্রী রেভারেন্ড উইলিয়াম জেমস লঙ—যাঁর বিশাল প্রতিপত্তি খ্রিস্টান মিশনারি মহলে, হাজার হাজার মানুষ যাঁকে শ্রদ্ধা করে, বাংলার ছোটোলাট লেফট্যেনান্ট গভর্নর যাঁকে বিশ্বাস ও সন্মান করেন, ভারতসচিব এর সংগে যাঁর বেশ দহরম মহরম, এমন কি, আজকের দিনেও এইরকম একটি মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে তাঁকে আদালতে দোষী প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব। তাহলে? কি করে আজ থেকে ১৫৭ বছর আগে, এই রকম একজন মানুষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে শুধু জরিমানাই নয়, কারাগারে পাঠানো হলো? লঙএর ১৮৫১ থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত কার্যকলাপ, বাংলার নবজাগরণের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর ঐতিহাসিক ভূমিকাটি জানা না থাকলে এবং তাঁর প্রতি শ্বেতাঙ্গ সাহেবদের ভয় ও ঘৃণার কারণগুলো জানা না থাকলে জেমস লঙের নীল দর্পন অনুবাদের শাস্তি হিসেবে জেল ও জরিমানার শাস্তিটা বুঝতে আমাদের অসুবিধে হবে। আসলে, লঙ সাহেবকে যেনতেনপ্রকারেণ একটা মোক্ষম শিক্ষা দেওয়ার জন্য সুবিধেভোগী দলে ভারি শ্বেতাঙ্গরা তখন বদ্ধপরিকর। রাগটা কিন্তু শুধুমাত্র নীলদর্পন অনবাদের জন্য নয়। ঐতিহাসিক নীল বিদ্রোহের অবসান হচ্ছে। ইন্ডিগো কমিশন, নীল কমিশন বসছে। কমিশনের রিপোর্ট কার্যকরি করা হবে বলে সরকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, আর এই কমিশনেও লঙ সাহেবের বেশ বড়সড় ভূমিকা রয়েছে। শ্বেতাঙ্গরা তো ক্ষুদ্ধ ছিলোই, তার সঙ্গে যোগ দিল নীলকরেরা। তাই, নীলদর্পন অনুবাদের জন্য যেই মামলা শুরু হলো, ওঁরা ভেবে নিলেন, এইবারে ব্যাটাকে বাগে পাওয়া গেছে! এই লোকটা এতদিন আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে, এইবারে একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে এই সাদা চামড়ার ভারতীয়টাকে!
যদি কেউ ভেবে থাকেন, এর পরের ঘটনাবলী তো আমাদের জানা, তিনি ভুল ভেবেছেন। পরবর্তী ঘটনা, মানে এই নীল দর্পন অনুবাদ সম্পর্কিত মামলা এবং সেটি চলাকালীন লঙ সাহেবের ভূমিকাটি সঠিক জানা না থাকলে, এই মহান লোকটির সম্পর্কে ধারণা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আর তারপরেও জানতে হবে, লঙ সাহেবের সাজা ঘোষণার পরে জনমানসের প্রতিক্রিয়া। লেখাটি একটু দীর্ঘ হলেও, আগ্রহীরা পড়বেন বলে আশা রাখি।
নীল দর্পনের লেখক, দীনবন্ধু মিত্র একজন সরকারি চাকুরীজীবী। নীল দর্পনের কাহিনী আপনাদের জানা। তিনি দু’টি কাল্পনিক চরিত্র এঁকেছিলেন। নীলকর উড আর নীলকর রোগ সাহেব। যত রকমের অপকর্ম, কুকর্ম হতে পারে, সবকিছু নির্দ্বিধায় করতে পারেন এরা। কোন বাধা, সঙ্কোচ, লজ্জা ভয়, বিবেকের পরোয়া করতেন না এরা। এই বীভৎস চরিত্র দুটি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন দীনবন্ধু। লেখক চান, সরকার এবং ইংরেজদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাঁর বইটির প্রতি। দীনবন্ধুর প্রথমেই মনে হলো লঙ সাহেবের কথা। পাঠিয়ে দিলেন। লঙ বেশ ভালো বাংলা জানতেন, পড়ে দেখলেন অদ্ভুত বাস্তবের ছবি তুলে ধরা হয়েছে, এত জীবন্ত, সত্যের এত সুন্দর প্রকাশ সচরাচর দেখা যায়না। সরকারের এটা জানা উচিত, ভেবে লঙ সাহেব চিফ সেক্রেটারি অফ বেঙ্গল এবং ইন্ডিগো কমিশনের চেয়ারম্যান, সেটান কার’কে বললেন, একটা অসাধারণ নাটক লিখেছেন এক ভদ্রলোক। সেটান কার লঙ সাহেবের কথায়, জানতে চাইলেন মূল বিষয়ের কথা এবং আকৃষ্ট হলেন। সেটান কার লঙ এর মতো অতটা না হলেও, ভারতীয়দের প্রতি সহানুভূতি ছিল। সেটান এবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন বাংলার ছোটোলাট গ্রান্ট সাহেবের। গ্রান্ট সাহেবের মধ্যেও একটা উষ্ণ দিক ছিল। তিনি বললেন, এটা আমি পড়তে চাই, ইংরাজি অনুবাদ করাতে হবে এবং অনুবাদের পরে কতকগুলো কপি ছাপা হোক...এগুলো আমাদের সরকারি মহলের জানা দরকার, পড়া দরকার। গ্রান্ট সাহেব, ছাপানোর কথা বললেও, কত কপি ছাপা হবে, সে নির্দেশ দেননি। সম্ভবত প্রথমে বঙ্কিমচন্দ্র অনুবাদের কাজ শুরু করেন (আমি নিশ্চিত নই), পরে মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরো বইটি অনুবাদ করে তুলে দিলেন লঙ সাহেবের হাতে। লঙ অনুবাদটির লাইনের পর লাইন পড়েছিলেন, কিছু কিছু জায়গায় সামান্য সংশোধন ও পরিমার্জন করলেও, প্রকৃত অনুবাদক ছিলেন, মধুসূদন দত্ত, লঙ নন। যেমন আমার এই লেখাটি মনোনীত হলে ব্লগের জন্য, নিশ্চিত ভাবেই এর কিছু পরিমার্জন এবং সংশোধন করবেন, সম্পাদিকা। কিন্তু, লঙ এই বই এ একটি ছোট্টো ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন, ছোট্টো একটি মন্তব্য, যার জন্যই লঙ সাহেব বিপদে পড়ে গেলেন। কথাটি ছিল, “Pointed out in language plain but true”। সহজ ভাষায় সত্যি বলা হয়েছে এই নাটকে। আদালতে মামলা চলাকালীন লঙের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বড়ো অভিযোগ ছিল এটাই যে, তিনি ভূমিকায় লিখেছিলেন...যা কিছু বলা হয়েছে, তা সত্যি। গ্রান্টসাহেব কত কপি ছাপা হবে, না বললেও, সেটান কার কিন্তু বইটির একেবারে পাঁচশো কপি ছাপার সরকারি আদেশ দিয়েদিলেন (এ পর্যন্ত পড়েই, ঋতবাক প্রকাশনার কর্ণধার ভাবছেন, তখনকার দিনে ৫০০? তাহলে তো এখন অন্তত ৫লাখ কপি ছাপার সরকারি আদেশ হতো! আহা!, স্বপনদা যদি এইরকম একটা বই লেখে, আর আমি সরকারি আদেশে ছাপার বরাতটা পাই!)! সরকারি বই, সরকারি শীলমোহর দেওয়া। ছেপে বেরোতে না বেরোতেই হৈচৈ পড়ে গেলো। ওদিকে মৌচাকে ঢিল, নীলকর সাহেবরা, অন্যান্য ইংরেজরা ক্ষেপে লাল। কী কাণ্ড! এই লেখা সরকার ছেপেছে, লঙ সাহেব অনুবাদ করেছেন, আবার ভূমিকায় বলছেন, যা লেখা হয়েছে, তা নির্ভেজাল সত্যি! কিছুতেই বরদাস্ত করা যায় না এসব। এ ব্যাটাকে শায়েস্তা করতেই হবে। তারা দিলো একটা মামলা ঠুকে আদালতে। আদালতে মামলা হলে, সরকার ইচ্ছে করলেও তাকে ঠেকাতে পারেনা। শুরু হলো নীলদর্পন অনুবাদের মামলা। এই সব ক্ষেত্রে মামলা হলে, প্রথম অভিযুক্ত হন, যিনি প্রকাশক বা যিনি বইটি ছেপেছেন তিনি। ছেপেছেন, মিঃ এইচ ম্যানুয়েল। তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি ছেপেছি। তাহলে অনুবাদ কে করেছেন? নাম দেওয়া আছে লঙ সাহেবের। নীলকর সাহেবদের লক্ষ্য কিন্তু ম্যানুয়েল সাহেব নন, তাই তাঁর অল্পস্বল্প জরিমানা হোল। এবার সমস্ত রাগটা গিয়ে পড়লো লঙের বিরুদ্ধে। মানহানির মামলার অভিযোগ, নীলকর সাহেব এবং সামগ্রিকভাবে সব ইংরেজদের মানহানি হয়েছে এই বইটির অনুবাদ করে। মানহানির মামলা চলাকালীন, লঙ একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন আদালতে। “It is folly to shut our eyes to the warning the native state may give”–লঙ আরো বলেছিলেন, এই অনুবাদ আমি করেছি অন্য কোনও কারণে নয়, কারও মানহানি করার উদ্দেশ্যে নয়, সরকারের যাতে চোখে পড়ে, এই বইয়ে যা বর্ণনা করা হয়েছে, সেই অভিযোগের যাতে প্রতিকার হয়, সেইজন্য।
লঙের বাঁচবার কিন্তু খুব একটা সহজ উপায় ছিল। লঙ সাহেব যদি আদালতে দাঁড়িয়ে বলতেন, এটা আমাকে অনুবাদ করার আদেশ দিয়েছেন সেক্রেটারি জেন্যারেল সেটান কার, ছাপার কথা বলেছেন গ্র্যান্ট সাহেব নিজে… তাহলে কিন্তু মামলা টিঁকতো না, সমস্ত দায়িত্ব গিয়ে পড়তো সেটান কার আর গ্র্যান্টের ওপর আর বেকসুর খালাস পেতেন লঙ সাহেব! কিন্তু, একটি বারের জন্যও সেটানের নাম করেননি, গ্র্যান্টের নাম করেননি, মাইকেলের নাম করেননি। দুর্জয় সাহসে বলেছেন, যা করার আমিই করেছি, সব দায় আমার। উনবিংশ শতাব্দীর প্রজন্ম তোমার মূল্যবোধকে প্রণাম জানাচ্ছে লঙ সাহেব!!
বিচারের রায় দানের দিন, ১৯শে জুলাই, ১৮৬১। শত শত লোক আদালতে গেছেন লঙের বিচারের রায় শুনতে। বিচার করছেন, সব শ্বেতাঙ্গ জুরী এবং বিচারক মর্ডান্ট ওয়ালেস শুধু এক বর্ণবিদ্বেষী সাহেবই নন, এদেশের মানুষের প্রতি তার তীব্র ঘৃণা। ফলে যা হওয়ার, তাই হলো। বিচারক ওয়ালেস লঙকে শুধু শাস্তির আদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হলেন না, জঘন্য ভাষায় ভারতীয়দের চরিত্র নিয়েও মন্তব্য করলেন। ওয়ালেসের এই রায় ও মন্তব্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ভারতীয়রা। কলকাতায়, তৎকালীন সুতানুটিতে শোভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেব ও কালীকৃষ্ণ দেবের নেতৃত্বে সভা সমিতি করে এর প্রতিবাদ ও আদালতে আপিল করে এই রায় কার্যকরী করা বন্ধ রেখে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানোর আদেশ চাওয়া হলো। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন, স্যার বার্ণস পীকক। পীকক স্টে অর্ডার দিতে রাজি হলেন না। চারদিনের মধ্যেই মামলা আবার ফিরে এলো মর্ডান্ট ওয়ালেসের কাছে। তিনি রায়দানে লঙের ১০০০ টাকা জরিমানা ও এক মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিলেন। পরবর্তীকালে আমরা সবাই জানি যে এটা প্রহসন হয়েছিল। সেটান কার পরে স্বীকার করেছিলেন, নীল দর্পনের অনুবাদ ছাপানোর আদেশ তিনিই দিয়েছিলেন, গ্র্যান্টও স্বীকার করেছিলেন। ইংল্যান্ডের কাগজে পর্যন্ত ছাপা হয়েছিলো এটা, “Miscarriage of Justice” হয়েছে। কিন্তু, লঙের এই আত্মত্যাগের একটা সুফলও হয়েছিলো আর সম্ভবত লঙ সাহেব এটাই চেয়েছিলেন। নীলকর সাহেবদের যে অন্যায়, যে লোভ, যে বাড়াবাড়ি, যে জুলুম সেটা এই নীলদর্পন মামলার ফলে খোদ ইংল্যান্ডের সরকারের কাছেও পৌঁছে গিয়েছিল। এই বিচারের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবাদ এসেছিলো। কলকাতায়, মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা লঙকে চিঠি লিখে শ্রদ্ধা জানিয়েছিল। সন্মান জানিয়েছিল প্রেসিডেন্সির ছাত্ররাও। ভারতবর্ষের বিভিন্নপত্র-পত্রিকা সোমপ্রকাশ ইত্যাদি কাগজে লেখা হয়েছিল, আর ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, হুগলী, এলাহাবাদ, মাদ্রাজ, বোম্বের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সভা হয়েছে, আলোড়ন তৈরি হয়েছিলো।
তবে, ব্রিটিশ বিচার ব্যবস্থার এই বৈষম্যমূলক অন্যায়ের প্রতিবাদে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে ছিলো, রাজা রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে তদানীন্ত নসুতানুটির মানুষ। ১৮৬১ এর ২৬ শে আগষ্ট, শোভাবাজার রাজবাড়ীতে, আমার পূর্বপুরুষরা মিলিত হয়েছিলেন। তীব্র ভাষায় গর্জে উঠেছিলেন, মর্ডান্ট ওয়ালেসের অবিচার আর বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদে। সভাপতিত্ব করেছিলেন রাজা রাধাকান্ত দেব। বক্তৃতা করেছিলেন, রাজা কালীকৃষ্ণ দেব, প্রতাপচন্দ্র সিংহ, রামনাথ ঠাকুর, সত্যানন্দ ঘোষাল, যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, রামগোপাল ঘোষ, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সেতাব সিং। নবাব আসগর আলি খান এবং আরও অনেকে। হিন্দু, ব্রাহ্ম, খ্রীষ্টান, মুসলমান সবাই মিলে সই করে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে ছিলেন তদানীন্তন ভারত সচীব চার্লস উডের কাছে। কতজন লোক এই প্রতিবাদ পত্রে সই করেছিলেন, কল্পনা করতে পারেন? ২০ হাজার মানুষ! ১৮৬১ সালের ৩১ শে আগষ্ট এই শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে রাজা রাধাকান্ত দেব পাঠিয়েছিলেন এই প্রতিবাদ পত্র চার্লস উডের কাছে। এই শোভাবাজার রাজবাড়ী থেকেই যে ঢেউ উঠেছিলো, সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে ইংল্যান্ডের বুকে ভারত সচিবের কাছে এমন ভাবে আছড়ে পড়ে ছিলো যে, চার্লস উডকে শেষ পর্যন্ত ভৎর্সনা করতে হয়েছিলো, মর্ডান্ট ওয়েলসকে, তুমি যা করেছো, অন্যায় করেছো।
তবু কিছু আফশোষ থেকে যায়, ইতিহাস কেন শুধু কিছু মানুষের অন্ধকার দিকগুলোতেই আলোকপাত করে? কেন কিছু ঐতিহাসিক, স্রেফ প্রকাশকের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য আর নিজের য়্যালিটি পাওয়ার জন্য প্রচলিত মিথগুলিকেই সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করেন? রাধাকান্ত দেবের সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার বিরোধীতার কথা এঁদের কল্যাণে আমরা সবাই জেনেছি। সীমাবদ্ধতা আর দ্বিচারিতা, নবজাগরণের যুগে কোন মনিষীর ছিলোনা বলতে পারেন? কিন্তু, এই রাধাকান্ত দেবই সেই যুগে, সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করেছিলেন, মরণোত্তর দেহদানের কথা, ডক্তারি পড়ুয়াদের কাজে লাগবে বলে। তার উল্লেখ পাইনা কেন এই শখের ঐতিহাসিকদের লেখায়? এই যে, একটা Public cause, common cause এ ইংরেজদের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিয়ে গর্জে উঠেছিলেন, সেকথা এর আগে জানা ছিলো ক’জনে?
এবার আসি, লঙ সাহেবের কথায়। র থেকে র, অর্থাৎ রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ…এটাই নাকি নবজাগরণের কালসীমা। যেকোন প্রৌঢ়, যুবক, বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করুন, নবজাগরণের মনিষীদের নাম…, শুনবেন, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বংকিমচন্দ্র, মাইকেল মধুসূদন, কেশবচন্দ্র সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এঁদের মধ্যে কেন ঠাঁই পেলেননা নবজাগরণের এই উপেক্ষিত নায়ক, জেমস লঙ?
লঙ জেল খেটেছিলেন একমাস। কিন্তু আমাদের যে জাতীয় আন্দোলন, রাজনৈতিক চেতনা, প্রতিবাদ আন্দোলন তাকে অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন রেভারেন্ড জেমসলঙ। তখনো কিন্তু ভারতীয়দের মধ্যে বিভেদ ছিল, ছিল হিন্দু, ব্রাহ্ম, ছিল খ্রীষ্টান, ছিল মুসলমান, ছিল প্রগতিশীল, ছিল রক্ষণশীল, ছিল চরমপন্থী, ছিল নরমপন্থী। কিন্তু, তা সত্ত্বেও তাঁরা সবাই এসেছিলেন শোভাবাজার রাজবাড়িতে লঙের প্রতি অবিচারের প্রতিবাদ জানাতে। অবিচার, অন্যায়, বৈষম্যমূলক আচরণ কি বন্ধ হয়ে গেছে, আমাদের সমাজে এখন? তাহলে কেন বহু...বহুদিন দেখিনা, ধর্ম, জাতপাত, রাজনৈতিক মতবাদকে ভুলে গিয়ে সবাই এক সংগে, ভারতবাসী হিসেবে কোন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, গর্জে উঠতে?
1 comments: