0

রম্যরচনা : ইন্দ্রাণী সরকার

Posted in


রম্যরচনা



সান্ধ্যসুর 
ইন্দ্রাণী সরকার 



বিকেল বেলা চা পর্ব শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে বাইরে থেকে ভীষণ হাঁক ডাক | 

"ও বাঁড়ুজ্যে বাবু বাড়ি আছেন না কি ?" 

ব্যানার্জি বাবু তাড়াতাড়ি পায়ের চটিটা গলিয়ে বাইরে এসে দেখেন চ্যাটার্জি বাবু উপস্থিত | 

তাড়াতাড়ি দরজা খুলে তাঁকে ভেতরে এনে বসালেন | 

"আরে চাটুজ্যে যে ! বলুন কি খবর ? বেশ অনেকদিন বাদে দেখা হয়ে খুব ভাল লাগছে |" 

চ্যাটার্জি বাবু একটু কেশে গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে বললেন, "আর বলবেন না মশাই, মিউনিসিপালটির জ্বালায় জীবন অস্থির গা ! 

সেই যে কবে থেকে গলির মোড়ে একটা টিউবকল বসানো নিয়ে লেগে পড়েছে, এখনো কাজ শেষ করতে পারলে না ! কি চিত্তির ! 

বাড়ি ঢোকার মুখের গলির পথটা খুঁড়েখাঁড়ে একাক্কার | বলে কি আরও হপ্তা দুই এমনি যাবে | উফ কি যন্তরনা !" 

ব্যানার্জি বাবু একটু সান্ত্বনার সুরে বললেন, "আরে না না, অতো চিন্তা করবেন না | এই ত' দেখতে দেখতে সময় চলে যাবে আর কাজও খতম | তা একটু চা হবে না কি ?" 

চ্যাটার্জি বাবু একগাল হেসে বললেন, "নিশ্চই, তা আর খাবো নি ? তা আপনি আমায় সঙ্গ দেবেন ত' ?" 

ব্যানার্জি বাবু হেসে উত্তর করলেন, "অবিশ্যি অবিশ্যি, ওরে ও কানাই মাকে বল দু কাপ চা করে দিতে | আমার এক বন্ধু এসেছেন | 

আমরা দুজনে একসঙ্গে অনেকদিন পর বসে চা খাব | আর শোন তুই ছুটে হরির দোকান থেকে বেশ গরম গরম সিঙ্গাড়া আর মিষ্টি এনে দে ত' |" 

কানাই দূর থেকে বললে, "যাই বাবু, আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন, দু দন্ড বসে গল্প করেন | মা চা করছেন আর আমি এই গেলাম আর এলাম |" 

চ্যাটার্জি বাবু যেন একটু লজ্জার সুরে বললেন, "আবার খাবার দাবার কেন ? শুধু চাই ত' ভাল     ছিল |" 

ব্যানার্জি বাবু বলে উঠলেন, "আরে থামুন ত' এসব কথা একদম ভাববেন না, তা বলুন আজকাল বিকেলের দিকে বাইরে বেড়াতে যান ত' ?" 

চ্যাটার্জি বাবু বললেন, "এই মাঝে মধ্যে যাই জানেন | সঙ্গী কাউকে পেয়ে গেলে ভালো লাগে | চলুন না আজ বিকেলটা বেশ ভাল | চা টা সেরে বাইরে এক চক্কর দিয়ে আসি |" 

ব্যানার্জি বাবু সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বললেন, "হ্যাঁ হ্যাঁ অবিশ্যি অবিশ্যি |" 

তারপর দুজনে খাওয়া দাওয়া সেরে জুতো গলিয়ে বাইরের দিকে পা বাড়ালেন | 

বেরোবার আগে ব্যানার্জি বাবু কানাইকে ডেকে বাইরের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতে বললেন | 

দুই বন্ধু হাঁটতে হাঁটতে নানা বিষয় গল্পগুজব ও পুরোনো স্মৃতিচারণ করতে লাগলেন | দুজনেরই মনে খুবই আনন্দ মনের মানুষকে কাছে পেয়ে | 

চ্যাটার্জি বাবু বললেন, "হ্যাঁ গো বাঁড়ুজ্যে এখনো কি গান টান চালু রেখেছন ?" 

ব্যানার্জি বাবু বললেন, "ত্যামন না গো চাটুজ্যে, তবে নাতনির সাথে মাঝে মধ্যে একটু গলাটা মিলিয়ে নিই | মেয়েটা বড় ভালোবাসে আমার গান, হারমোনিয়ামে বসলেই আমায় ডাকাডাকি করে | কখনো কখনো এড়িয়ে যাই, আবার কখনো কখনো মন মেজাজ ঠিক থাকলে ওর পাশে বসে যাই |" 

চ্যাটার্জি বাবু ভীষণ খুশি হয়ে বললেন, "এই ত' আর কি চাই! একটা গান ধরুন না বাঁড়ুজ্জ্যে     বাবু |" 

ব্যানার্জি বাবু বললেন, "সে কি এই রাস্তায় ! লোকে কি বলবে ?" 

চ্যাটার্জি বাবু বললেন, "চলুন ওই পার্কটার বেঞ্চে গিয়ে বসি | তারপর নদীর হাওয়া খেতে খেতে সুন্দর গান করতে পারবেন |" 

দুই বন্ধু পার্কের বেঞ্চে গিয়ে বসলেন | 

ব্যানার্জি বাবু চোখ দুটো একটু বন্ধ করে গেয়ে উঠলেন, "পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায় ..... |" 

ওদিকে চ্যাটার্জি বাবু তাঁর মোটা একটু বেসুরো গলায় বন্ধুর সঙ্গে গলা মেলালেন | 

দুই বন্ধু মনের আনন্দে সুরের সাগরে ভেসে গেলেন | আকাশে ডানা ঝাপটিয়ে ঘর ফিরতি উড়ন্ত পাখিরা সেই সুরে সুর মিলিয়ে দেখতে দেখতে অনেক দূর আকাশে মিলিয়ে গেল 

0 comments: