0

বিশেষ প্রতিবেদন : পিয়ালী বসু

Posted in


বিশেষ প্রতিবেদন 



প্রবাসের ডায়েরী থেকে 
পিয়ালী বসু 



ইতিহাসের পাতা ওলটালে জানা যায়, সম্ভবত পঞ্চদশ শতাব্দী তে প্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয়, এও জানা যায় দিনাজপুর এবং মালদা জেলার জমিদার সম্প্রদায়ই প্রথম এই পূজার সূত্রপাত করেন, আবার কারোর কারোর মতে নদীয়া জেলার ভবানন্দ মজুমদারের উদ্যোগেই প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয় ১৬০৬ বঙ্গাব্দে। 

আমাদের বাঙালীদের প্রধান এই উৎসবের সঠিক উৎস নিয়ে নানাবিধ মতান্তর থাকলেও এটুকু আমরা সবাই জানি যে ১০৮ টি নীল পদ্ম এবং ১০৮ টি দীপ জ্বালিয়ে প্রথম এই পূজার সূচনা করেন বহুলকথিত রামচন্দ্র, দেবীর অকালবোধন এর মাধ্যমেই সম্ববত দুর্গা আমাদের জানান দিয়ে দেন যে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে ধরাধামে আবির্ভূতা  হয়েছেন তিনি, আর আমরা মেরুদণ্ডহীন (ধর্মভীরু ) মানুষ তাঁকে আশ্রয় করেই বেঁচে আছি এই বিশ্বাস নিয়ে যে একদিন সব অন্যায়ের, সব অবিচারের প্রতিশোধ নেবেন তিনি। 

আসলে ১৭৯০ সালে সেই যে হুগলীর গুপ্তি পাড়ায় বারোয়ারী পূজার সূচনা হল, সেই থেকেই তো আমরা তাঁকে মানে দেবী দুর্গাকে আমাদের সবার মনে করে আমাদের যাবতীয় অন্যায় অবিচারের দায় তাঁর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুম দিচ্ছি, আসলে দুর্গা আমাদের চোখে একটা Cult, একটা ধারণা, যিনি অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতেই ধরাধামে এসেছেন, তাই আমরা, মানে গড়পড়তা হিন্দু বাঙালীরা দুর্গা পূজার Rational দিকটা নিয়ে কোনদিনই তেমন ভাবে ভাবিনি, যতক্ষণ না শ্রীযুক্ত সমেন্দ্রচন্দ্র নন্দী Statesman পত্রিকায় তাঁর “Durgapuja: A Rational Approach” প্রবন্ধটি প্রকাশ করলেন। 

আমাদের মধ্যে যারা ইতিহাস নিয়ে একটু আধটু চর্চা করি, তাঁরা নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গিয়েছি যে, যেসময়ে দুর্গাপূজার প্রবল উদ্দীপনায় সারা বাঙলা উদ্দীপিত ঠিক সেইসময়ে কিন্তু দেশ জুড়ে ব্রিটিশ রাজত্ব, এবং বিদেশীয় ব্রিটিশরা কিন্তু বেশ আনন্দের সঙ্গেই দুর্গাপূজার ঐ ১০ দিন ব্যাপী আনন্দ উৎসবে অংশগ্রহণ করতেন। 

চার ছেলেমেয়ে নিয়ে এই যে দুর্গার মর্ত ভ্রমণ এই ছবিটা কিন্তু বেশ টানে আমায়, আসলে আমাদের বাঙালীদের সেই একান্নবর্তী পরিবারের ছবিটা ভীষণ ভাবে স্পষ্ট হয় দুর্গার এই বাপের বাড়ি ভ্রমণ চিত্রে এবং সেই ছোটবেলা থেকে যখন বাবা মা র সঙ্গে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরতাম তখনও কিন্তু শোলার সাজের চেয়ে ডাকের সাজে সজ্জিত প্রতিমা ছিল আমার বেশী প্রিয়। 

আজ ১৫ বছর ধরে আমি আয়ারল্যান্ড নিবাসিনী এবং দীর্ঘ এই ১৫ বছর কলকাতার পূজার সাথে আমি সম্পর্কহীন, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসের মন খারাপ গুলি কিছুটা হলেও অন্তত কাটে এই ডাবলিনে আয়োজিত দুর্গাপূজা দেখে। 

আয়ারল্যান্ড দেশটি বেশ ছোট আর তার রাজধানী ডাবলিন শহরেই বাস আমার, এখানে বাঙালীর সংখ্যা হাতেগোনা রকমের কম, তাই পূজাটাও হয় মাত্র এক দিনেই, সবাই যেহেতু কর্মরত(রতা) এবং ধরেই নেওয়া যেতে পারে যে আইরিশরা বুঝতে পারবে না দুর্গাপূজা নিয়ে আমাদের এই উত্তেজনা, এবং কোনভাবেই কর্ম জগত থেকে ছুটি মিলবে না, কাজেই এখানকার বাঙালী সংগঠন “সুজন” (সেই যদি হও সুজন তেঁতুল পাতায় নজন এর অনুসঙ্গ) রবিবার দেখেই আয়োজন করেন একদিনের এই দুর্গাপূজার । মূল ডাবলিন শহর থেকে ৩০ মিনিট দুরত্বে Portmarnock এ প্রতিবছর ডাবলিনের দুর্গোৎসব আয়োজিত হয়। 
           
আমরা যারা কর্মসূত্রে দেশচ্যুত, এই একদিনের দুর্গাপূজা তাদের বছরআন্তের একমাত্র স্বস্তি এবং স্বান্তনার কারণ! এবারও তার ব্যতিক্রম নয়... দিন গুনছি প্রতি মুহূর্তে। 

0 comments: