0

গল্প - হরিপদ দত্ত

Posted in




পাগলাচণ্ডীপুর। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমের গ্রাম। চাষি আর স্মাগলারদের বাস। জনসংখ্যার ত্রিশভাগ স্থানীয় মুসলমান। অবশিষ্ট সত্তরভাগ পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তু হিন্দু। সাতচল্লিশ থেকে একাত্তরের উদ্বাস্তু ওরা। উনসত্তর বৎসর বয়সের ফরিদপুরের সরলা বিশ্বাস একসময় বলে দিতে পারত, পূর্ববঙ্গের কোন জেলা থেকে কোন পাড়ায় এসে কে নতুন বসতি গড়েছে। আজ সে স্মৃতিহারা মানুষ। কারও নাম স্মরণে থাকে না। মানসিক ভারসাম্যহীন। মাঝেমধ্যে মাঝরাতে অন্ধকার টালির ঘরের বারান্দা অর্থাৎ তার রাত্রিনিবাস থেকে আচমকা চিৎকার করে ওঠে, ‘ওরে মঙ্গলা, গেলি কই, বাড়ি আইবি না?’

মঙ্গলাচরণ বিশ্বাস তার মৃত স্বামীর নাম। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সম্পর্ক শেষ জীবনে এসে তুইতোকারিতে ঠেকে। বছর চারেক আগে মঙ্গলার রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। তাকে মৃত অবস্থায় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায় ঠেস দেয়া অবস্থায় উদ্ধার করে সীমান্তরক্ষীরা। পোস্টমর্টেমে জানা যায়, হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটেছে। সীমান্তে মৃত্যু বলে কথা। থানা পুলিশ, কত কী। হত্যা নয়, আত্মহত্যা নয়, স্বাভাবিক মৃত্যু। কিন্তু সীমান্তে কেন? এই রহস্য আজও অজানা।

পাড়াপড়শির কানাঘুষোয় যতটুকু জানা যায় যাতে স্পষ্ট হয়, ঘটনার আগের দিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আর একমাত্র নেশাখোর রগচটা, সীমান্ত পাচারকারী পুত্রের তুমুল ঝগড়া হয়। সুপুত্র পিতার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছিল। হুমকি দিয়েছিল, খুন করে লাশ বাংলাদেশে ফেলে দেবে। পাড়াপড়শি গা করেনি। এ তো নিত্যদিনের ঘটনা। মঙ্গলাচরণ রাগে বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে মাটি ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিল স্ত্রী-পুত্রের মুখ দেখবে না সে, বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে ভিক্ষে করে খাবে।

মানসিক ভারসাম্যহারা বৃদ্ধা সরলাবালা স্মৃতি হারালেও মাঝেমধ্যে স্বামীকে খোঁজে। ক্ষণমুহূর্তের জন্য হলেও তার মনে হয়— ক্ষুধা, দারিদ্র, সংসারে অশান্তির হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষটা বাংলাদেশে ফরিদপুরে ফেলে আসা তার জন্মভিটায় পালিয়ে গেছে। পাসপোর্ট-ভিসা করে সেও যাবে স্বামীকে খুঁজতে। ফরিদপুরের কাছের জেলা বরিশাল তো তারও জন্মের ঠিকানা। তার পরেই মনে হয়, মানুষটা তো মৃত। বোধকরি কাঁটাতারের বেড়া ডিঙাতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে দম আটকে মরে গেছে। কিন্তু মানুষটাকে ক্ষমা করতে পারবে না সরলাবালা। সংসারে ওকে একা ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। পরমুহূর্তেই সে মৃত স্বামীকে ভুলে যায়। তার মনেই হয় না, একটা পুরুষ তার সঙ্গী ছিল পঞ্চাশটি বছর। দুই কন্যা আর এক পুত্রসন্তান জন্ম দিয়েছিল তার গর্ভে।

মঙ্গলাচরণ মরে গিয়ে ফ্যাসাদে ফেলে দিয়ে গেছে ছেলে প্রাণেশকে। বৃদ্ধা আধপাগলি মাকেও খাওয়াতে হয়। বাপ থাকতে বৌ নিয়ে আলাদা খেত প্রাণেশ। বাপকে চাপ দিয়েছিল এক বিঘে দুই কাঠার বাড়িভিটের তার প্রাপ্য তিন ভাগের এক ভাগ লিখে দিতে। ব্যাংক লোন নিতে সুবিধে হয়। ইচ্ছে ছিল আধপাকা ঘর তোলার। বাপ রাজি হয়নি। বাপ গত হলে পর ভিটের আইনি মালিক হয় মা সরলাবালা। মাকেও চাপ দেয় প্রাণেশ। মা রাজি নয়, পেছনে কলকাঠি নাড়ে বিয়ে হয়ে যাওয়া দুই বোন। ওরা যে ভাইয়ের সমান পৈতৃক ভিটার হকদার। মেয়েদের যুক্তি, জমি লিখে দিলে আর কখনও মায়ের দায়িত্ব নেবে না ছেলে।

মেয়ে দুটোও মায়ের মৃত্যুর অপেক্ষায় আছে। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পৈতৃক ভিটের পাওনা অংশ বিক্রি করে কেটে পড়বে। কিন্তু আর কত অপেক্ষা করা যায় মায়ের মৃত্যুর? কবে হবে তার পাকা ঘর? প্রাণেশ পথ খুঁজে পায় না। সন্তানের বাপ হয়েছে সে। কী ভবিষ্যৎ সন্তানের? বৌয়ের নিত্য গঞ্জনা— কবে হবে পাকা ঘর? বাঁশের বেড়ার টালির চালের আদ্যিকালের ঘর তো নয়, গরুর গোয়াল। কী করবে প্রাণেশ? সে তো আর রাঘব বোয়াল স্মাগলার নয়, রাতের আঁধারে মাল পাচারের মজুর। ক’টাকাই বা মেলে। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।

সে দিন ছেলের বৌ সরলাবালাকে ডেকে কয়, আর পারছে না তার স্বামী শাশুড়ির দায়িত্ব নিতে। তাই তিন বেলা নয়, দু’বেলা খেতে পাবে। এক বেলা রুটি, অন্য বেলা আলুসেদ্ধ-ভাত। শুনেই পেতনির কান্না জুড়ে দেয় সরলাবালা, ‘প্রাণেশ আমার পোলা, পোলার ভাতে মায়ের হক। তুই হইলি পরের মাইয়া, বড় কথা কস ক্যান?’

‘প্রাণেশ আমার স্বামী, আমার সন্তানের বাবা, আমার অধিকার তোমার চেয়ে শক্ত, বুঝলে বুড়ি?’ বৌটা আগুনের মতো জ্বলে ওঠে।

‘সোয়ামি সোয়ামি করস ক্যান, সোয়ামি তোর প্যাটের ভিতর থাইক্যা বাইর হইছে না আমার প্যাট থাইক্যা?’ রাগ আর কান্না মেশানো গলায় উত্তর দেয় সরলাবালা।

‘খিস্তি দিচ্ছ যে বড়! বাঙাল বুলি ছাড়ো, ঘটির দেশে ভদ্রভাবে কথা বলো, যত্তসব ছোটলোকে দেশটা ভরে গেছে,’ বৌ কেবলই গজরায়।

রাতে মা আর বৌয়ের ঝগড়ার কথা শোনে প্রাণেশ। বৌ নয়, বরং মায়ের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। মাকে বোঝাতে চায়, ‘এত কথা কও কেন মা? বোবা বনে থাকতে পার না? বাংলাদেশ ভাবছ? দেশটা যে ইন্ডিয়া।’

‘কী কস তুই পানু? মারে কস বোবা হইতে? তর বৌ যে বাংলাদ্যাশের খোটা দেয়, তার বেলা? বিপদে না পড়লে ক্যাডা আসত এ্যাই ঘটিগর দ্যাশে?’ সরলাবালা এবার লম্বা সুরে কাঁদতে থাকে। কান্না থামিয়ে বলে, ‘তর বাপ মইরা গিয়া আমারে বিপদে ফালাইসে। তরে দোষ দেই না রে বাপ, বৌয়ের কথা না শুনলে বৌ তরে ভাত রাইন্ধা দিব না, ক্যান যে ঘটির দ্যাশের মাইয়া বিয়া করলি! অভাব আছিল বাঙাল মাইয়ার?’

আর কথা বাড়ায় না সরলাবালা। খোলা বারান্দার মেঝেয় শুয়ে পড়ে। বুড়োর কথা মনে পড়ে। একাত্তরের যুদ্ধের সময় স্বামীর হাত ধরে চলে এসেছিল এ দেশে। শরণার্থী ক্যাম্পে ছিল। ওখানেই গর্ভবতী হয় সে। দেশ স্বাধীন হলেও আসন্নপ্রসবা ছিল বলে সাহস হয়নি দেশে ফেরার। রেলসড়কের পাশে লতাপাতার ঘর বানায় স্বামী-স্ত্রী মিলে। ওখানেই প্রসব করে প্রথম কন্যাসন্তান। মজুর খেটে আরও অনেকের মতো সরকারি পতিত জমিতে ঘর বেঁধে উঠে আসে সেখানে। স্বাধীন দেশটায় আর ফেরা হয়নি। যুদ্ধ শেষে দেশে দুর্ভিক্ষ আর শেখ মুজিব হত্যার খবর শুনে এতটাই ভয় পায় যে, দেশে আর না-ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। কপাল পোড়ে ওখানেই।

সরলাবালার চোখে আজও স্পষ্ট ভাসে সেই দিনের কথা। মজুর-খাটা মানুষটা সন্ধ্যার অন্ধকারে বৃষ্টিতে ভিজে এক কিলো চাল নিয়ে ঘরে ফেরে। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিভেজা চালে ভাত হয়। জ্বরে কাতর মানুষটা খালি পেটে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকে। প্রাণেশ তখনও জন্মায়নি। দুই মেয়েকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে স্বামীকে ডাকে। জ্বরে কাতর মানুষটা কিছু খেল না বলে সে রাতে সরলাও উপোস। এমনি যে মানুষ, ছিন্নমূল উদ্বাস্তু মানুষ, নিজে না-খেয়ে বৌ-ছেলে-মেয়েদের খাইয়েছে, সে-ই কিনা ঝগড়া করে বর্ডারে গিয়ে মরে পড়ে রইল। হয়তো পালাতে চেয়েছিল বাংলাদেশে। পারেনি। সরলাবালার বিশ্বাস, এমন একটা মানুষ কখনও স্ত্রী-সন্তান ফেলে পালাতে পারে না। মরে যাওয়া যত সহজ, পালিয়ে যাওয়া তার চেয়ে হাজার গুণ কঠিন। স্বামীর লাশ বাড়িতে এলে অভিমানে সরলাবালা বলেছিল, ‘কই, পারলা নি পলাইতে? পারলা না তো?’

সরলাবালাকে একলা ফেলে আপন গর্ভে ধরা পুত্র নামক শত্রুর সামনে ঠেলে দিয়ে চলে যায় মঙ্গলাচরণ। উদ্বাস্তু জীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় সে। কিন্তু সরলাবালা? ছেলে আর ছেলের বৌকে তার মনে হয় যেন মৃত্যুর দূত যমরাজা। অজানা আতঙ্ক তাকে দিনের পর দিন ঘুমোতে দেয় না। ছেলে আর ছেলের বৌয়ের চোখে সে কেবল হিংস্র জন্তুর চোখ জ্বলতে দেখে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে। দু’দিন ভাল তো তিনদিন কেমন হয়ে থাকে। নিশ্চুপ, বোবা। নয়তো ইনিয়ে-বিনিয়ে কেঁদেই চলে। ভুলে যায় পুরনো স্মৃতি। মনে পড়ে না মৃত স্বামীর কথাও। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা দুটি কন্যার কথাও ভুলে যায়। আবার একসময় সব ঠিকঠাক হয়ে যায়। নিত্যদিনের বঞ্চনা, কষ্ট আর পুরনো স্মৃতির জীবনে ফিরে আসে সরলাবালা। এ ছাড়া তার যে আশ্রয়ের অন্য দুনিয়া নেই।

সরলাবালা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি, কী গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে তার পুত্র আর পুত্রবধূ। কেবল তাকেই নয়, মানুষের ঈশ্বরকে বিস্মিত করে এক রাতে পুত্র প্রাণেশ জাল দলিলে টিপসই করিয়ে নেয়। সরলা বিস্মিত হলেও স্মৃতিশূন্য। বুঝতেই পারল না, কত বড় প্রতারণা ঘটে গেল মুহূর্তে। কেবল শুনল ছেলে বলছে, ‘মাগো, তীর্থে যাবে? ওই গঙ্গাসাগর, কপিলমুনির আশ্রম, বড় পুণ্যস্থান। মরে গেলে স্বর্গ পাবে, বাবাকেও দেখতে পাবে। যাবে মা?’

সরলাবালা নিরুত্তর। অশিক্ষিত, গ্রাম্য, বৃদ্ধ, স্মৃতিশূন্য বিধবা একজন অতি ক্ষুদ্র হীনজন মানুষ কি আর বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাস পড়েছে? তীর্থযাত্রা শেষে কী করে নবকুমার গভীর অরণ্যে পথ হারিয়ে ফেলে, সে সংবাদ সরলাবালার জানার কথা নয়। এটাও জানার কথা নয়— পুণ্যার্জনের জন্য নবকুমার যে গঙ্গাসাগরে গিয়েছিল, ছেলে প্রাণেশও সেখানেই তাকে নিয়ে যেতে চায়। ক’টা ছেলে পারে মায়ের জন্য এত বড় কাজ করতে?

তা হলে স্মৃতিভ্রষ্টা বৃদ্ধ বিধবার স্বর্গলাভের উদ্দেশ্যে পুণ্যার্থে পুত্রের হাত ধরে গঙ্গাসাগর যাত্রা হোক শুরু। দীর্ঘ ট্রেনযাত্রা। দিন কি রাত তা বোঝার কথা নয় সরলাবালার। এইটুকু সে বুঝতে পারে, গর্ভের পুত্র তার মায়ের গর্ভঋণ, স্তনের দুধের ঋণ শোধের জন্য নিয়ে চলেছে অচেনা এক সমুদ্রের তীরে। সাগরে পুণ্যস্নান করবে সে। মৃত্যুর পর চলে যাবে স্বর্গে, যেখানে মৃত স্বামী মৃতদের জগৎ থেকে পুনরুত্থিত হয়ে বিগত পৃথিবীর স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে। পুত্র তার মাতৃঋণ শোধ করবে।

হাজার হাজার তীর্থযাত্রী ছুটছে উন্মাদের মতো। স্বর্গলাভের মহাসুখের সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে রাজি নয়। প্রাণেশ তার বৃদ্ধ স্মৃতিহারা পূর্ববঙ্গের ছিন্নমূল উদ্বাস্তু জননীকে রাস্তায় বসিয়ে দেয়। সামনে ভিক্ষের চাদর পাতা। পুণ্যার্থীরা ছুড়ে দিচ্ছে কাগজ আর ধাতব মুদ্রা। আড়াল থেকে দেখছে সে। ভিড় একটু ফাঁকা হলেই সুযোগমতো পটাপট মুদ্রা তুলে নিচ্ছে পকেটে। পুনরায় মুদ্রায় ভরে ওঠে ভিক্ষাপাত্র বা চাদর। 

রাত নামলে সরলাবালাকে তুলে আনে সরকারি তাঁবুতে। মন্দিরের প্রসাদ খেতে দেয়। রাত পোহালে পুনরায় শুরু হয় মাতৃঋণ শোধ, মাকে ভিক্ষুক বানিয়ে। এ ভাবে ফুরিয়ে আসে পনেরো দিন, পনেরো রাত। এ বার নিশ্চয়ই প্রাণেশের পাকা বাড়ি উঠবে। স্বপ্ন পূর্ণ হবে বৌয়ের। গঙ্গাসাগরের পুণ্যস্নানের তিথিও ফুরিয়ে যাবে। পুণ্যার্থীরা ফিরে যাবে যে যার স্থানে। সাগরে স্নান করে সবাই শরীর ও আত্মা থেকে দূর করবে পাপ। এই পাপমুক্ত শরীর মৃত্যুর ভেতর দিয়ে হেঁটে যাবে অনন্ত সুখের ঠিকানা ওই স্বর্গে।

পুণ্যতিথি ফুরিয়ে যায়। পুণ্যস্নানের ঘটে সমাপ্তি। পুণ্যার্থীরা এবার ঘরমুখো। গৃহে ফেরার বড় তাড়া। ক্রমে শূন্য হতে থাকে পুণ্যস্থানের বিশাল প্রান্তর। নিস্তব্ধ হতে থাকে বঙ্গোপাসাগরের তীর গঙ্গাসাগর। প্রায় জনশূন্য প্রান্তরে লক্ষ মানবের নোংরা বর্জ্যের ভেতর একাকী বসে আছে মাত্র একজন বৃদ্ধা। স্মৃতিহারা, বাক্‌রুদ্ধ। স্বেচ্ছাসেবকেরা ছুটে আসে। হাজার প্রশ্ন। আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলা বৃদ্ধা সরলাবালা নির্বাক। তার চোখের অসীম দৃষ্টি শূন্য আকাশে। 

তীর্থভূমিতে হারিয়ে যাওয়া, সন্তান কর্তৃক পরিত্যক্তা, আত্মপরিচয় ভুলে যাওয়া সরলাবালা মাত্র একবারই অস্ফুট উচ্চারণ করে পুত্রের নাম, ‘পানু...।’ তার পর নির্বাক তার কণ্ঠ। নিথর দৃষ্টি। স্মৃতিশূন্য, বাক্‌রুদ্ধ এই বৃদ্ধার ঠিকানা খুঁজে পাওয়া পৃথিবীর কারও পক্ষেই কোনও দিন সম্ভব নয়। নিশ্চয়ই তার শেষ ঠিকানা হবে সরকারি কোনও আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানেই মৃত্যুর অপেক্ষায় পড়ে থাকবে একাত্তরের এক নিরুদ্দিষ্ট উদ্বাস্তু। 

0 comments: