0

প্রবন্ধ - জিললুর রহমান

Posted in

প্রবন্ধ


আমি যাহা জানি নাই চিনি নাই
জিললুর রহমান


তিনি আমাকে অকস্মাৎ গুরু বলিয়া সম্বোধন করিলেন। জানি না কখন কোন্ মনের ভুলে আমি তাহাকে কোনও কিছু জ্ঞান দিবার অপচেষ্টা করিয়া ব্যর্থ হইয়াছি কিনা। যতটুকু আহমদ ছফা পড়িয়া জানিয়াছি ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বহিতে আব্দুর রাজ্জাক মহাশয় তাঁহাকে জীবনের শিক্ষাই দান করিয়াছিলেন। অথচ আমার ক্ষেত্রে তিনি আবদার করিলেন মৃত্যু বিষয়ে গদ্য লিখিবার জন্য।

হায়! আমি যাহারে জানি নাই, চিনি নাই, তাহারে কী প্রকারে বিবৃত করিব মাননীয় প্রস্তাবক সমীপেষু? তবু তিনি চিন্তাচেতনা বা কাজ হইতে বিরত তো হইবেনই না, বরং চতুর্গুণ বেগে ও আবেগে আপ্লুত হইয়া মৃত্যু পানে ধাবিত হইবেন। বলুন তো, এই বিস্তীর্ণ জগতে এমন কে আছে যে মৃত্যুর পানে ধাবিত হইতেছে না? এযাবৎ জীবজগতে অবিনশ্বর কে হইতে পারিয়াছে নিজের চেষ্টায়? তবে হেমলক বিষ পানে বাধ্য করিয়া তৎকালে সক্রেটিস নাম্নী এক বেয়াদব যুবাকে অমর করিয়া রাখিল সেদিনের গ্রিকসমাজ। ক্রুশে বিদ্ধ করিয়া যিশুকেও অবিনশ্বর করিয়া গিয়াছে। কোপার্নিকাস ব্রুনো গ্যালিলিও-র কথাই বা বাদ যাইবে কেন? তাহা হইলে কী অমর হইবার সঠিক পথ সমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণ করিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া? অবস্থা দৃষ্টে তাহাই প্রতিপাদ্য।

সেই মাহেন্দ্রক্ষণে সক্রেটিস মহাশয় মেঘমন্দ্রস্বরে উচ্চারণ করিয়াছিলেন “I to die, you to live, which is better only God knows।” আজিকার দিনে আর অবিদিত নাই যে সক্রেটিস মরিয়া বাঁচিল। তবু আমি দেখিতে পাই, অশীতিপর রবীন্দ্রনাথ কিছুতেই মরিতে চাহেন নাই। মৃত্যু তাঁহার জীবনটাকে আলুথালু করিয়া দিবার পরেও একের পরে এক মৃত্যুর মিছিলের পশ্চাদ্ধাবন করিতে করিতে তিনি উচ্চারণ করেন – “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।” অথচ যৌবনে একদা তিনিই উচ্চারণ করিয়াছিলেন “ওরে মোর মূঢ় মেয়ে / কে রে তুই, কোথা হতে কি শকতি পেয়ে / কহিলি এমন কথা এত স্পর্ধা ভরে –/ যেতে আমি দিব না তোমায়……” এই চরাচরে হেন গর্ব কথা বলা নিতান্তই মূঢ়তার সামিল বৈকি! তবুও প্রতিদিন আমাদের সম্মুখে আসিয়া যে মৃত্যু আমাদের চারিপাশ শূন্য করিয়া হৃদয়ের সকল বন্ধন ছিন্ন করিয়া লইয়া যায়, তাহারেই আমাদের পরম আরাধ্য মানিতে হইবে। তাই যৌবনে রবীন্দ্রনাথ রোমান্টিকতায় আকীর্ণ হইয়া বলিয়াছিলেন “মরণ রে তুহুঁ মম শ্যাম সমান।” কিন্তু কালক্রমে আমরা দেখিতে পাইলাম রবীন্দ্রনাথ সেই জীবনদেবতাজ্ঞানে মৃত্যুরে শুধাইতেছেন – “আর কত দূরে নিয়ে যাবে মোরে / হে সুন্দরী? / বলো কোন্ পার ভিড়িবে তোমার / সোনার তরী/ …… বলো দেখি মোরে, শুধাই তোমায় / অপরিচিতা - / ওই যেথা জ্বলে সন্ধ্যার কুলে / দিনের চিতা, / ঝলিতেছে জল তরল অনল, / গলিয়া পড়িছে অম্বরতল, / দিক বধূ যেন ছলছল আঁখি / অশ্রুজলে, / হোথায় কি আছে আলয় তোমার…” (নিরুদ্দেশ যাত্রী)

তাই বলিতেছি, এই বাঙ্গালা মুল্লুকের সর্বজন সম্মানিত ঋষিতুল্য কবি যেখানে নানা ছলে মৃত্যুকে ডাকিয়াও কোনও কুলকিনারা করিতে পারিলেন না, সেইখানে আমি কোন দর্পে এমন ঘোষণা দিয়া মৃত্যু লইয়া বাতচিত করিতে ব্যাপৃত হইব? মৃত্যু সে স্বাভাবিকভাবে কিংবা অস্বাভাবিকভাবে যেমত-প্রকারেই আসুক না কেন, জীবন নাটকের দৃশ্যপট হইতে আপনাকে গাত্রোত্থান করিতেই হইবে। ইহার পরেও যদি আপনি অবিনশ্বর হইয়া মানুষের মগজ শাসন করিয়া থাকেন তো বুঝিতে হইবে আপনি জীবৎকালে মহৎকর্ম করিয়া গিয়াছেন। যেমন সক্রেটিস, যিশু, গ্যালিলিও, ইত্যাকার কত কত নাম। তবে মনে রাখিতে হইবে, মৃত্যু আপনার আসিবেই। যদিও জনগোষ্ঠির একাংশ বিশ্বাস করিয়া থাকেন যে যুধিষ্ঠির মৃত্যুর সহিত সাক্ষাৎ না করিয়াই স্বর্গে পদার্পন করিয়াছেন, তবে তাহার স্বপক্ষে কেবল এক কল্পনা-প্রবণ মহাঋষির রচিত কিতাব ভিন্ন আর কোন প্রমাণ মেলে না। জনগোষ্ঠীর আর এক অংশ ইহাও বিশ্বাস করিয়া থাকে যে, ক্রুশে ঝুলানোর কালে অতীন্দ্রিয় উপায়ে যিশুকে জীবিতাবস্থায় স্বর্গে তুলিয়া লইয়া যাওয়া হইয়াছে, এবং পুনরায় তাঁহাকে ধরাধামে ফেরত পাঠানো হইবে। ইহার সপক্ষেও বিশ্বাসীদের কিতাব ভিন্ন আর কোন প্রমাণ কেহ উপস্থিত করিতে পারেন নাই। তাই, আমরা দেখি, পৃথিবীর মানুষ যে প্রকারে স্বর্গে যাইতে ইচ্ছুক, সেই গতিতে মৃত্যুর সম্মুখে হাজির হইতে ইচ্ছুক নহে। আর এমতও দেখি না যে, মৃত্যুভয়ে তাহারা সৎকর্মে প্রবৃত্ত হইয়াছে। তবে কি তাহারা মৃত্যু-পরবর্তী জীবন বিষয়ে সংশয়াকুল? যাহার হাতে নাতে প্রমাণ নাই, তাহাতে সংশয় স্বাভাবিক বৈকি! যে জীবন দোয়েলের শালিকের শামুকের ঝিনুকের মানুষের — সে জীবন চরম সত্য। তাই জীবনের প্রতি মায়া, স্বর্গের শত প্রলোভনেও মানুষ ত্যাগ করিতে পারিল না। আমিও না।

তবু প্রস্তাবক সমীপেষু, দুইচারিখানি কথা সাধারণ সকলের মতো আমার মগজেও উদিত হইতেছে আপনার প্রণোদনা হেতু। কেননা আমিও মরিতে চাহিনা – তাহা ভুবন সুন্দর অথবা অসুন্দর যেমনই হউকনা কেন। শৈশব কাল হইতে পরজগতের স্বর্গ-সৌন্দর্যের বর্ণনা এত শুনিয়া আসিয়াছি যে, তেমন করিয়া যদি এই ভূপৃষ্ঠের বর্ণনা শুনিতে পাইতাম, তবে ভূগোল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইবার জন্য এত হেঁচকাহেঁচকি করিতে হইত না।

তারপর, বর্ণমালা শিখিবার আগেই আমাদের শিশুমনে আত্মা প্রবেশ করিল। অর্থাৎ আমাদের জানানো হইল যে, আমাদের শরীরে আত্মা বলিয়া একটি অপদার্থ অবস্থান করিয়া থাকে, যাহা হইতে-পারে আলো বা নূরের তৈয়ারী। আর রাক্ষসবৎ কোনও স্বর্গীয় দূত একদিন আসিয়া আমাদের শরীর হইতে এই আলো উৎপাটন করিয়া লইয়া গেলে “থাকে শুধু অন্ধকার”। তবে মুখোমুখি বসিবার জন্য কোনও বনলতা সেনের গ্যারান্টি না পাইয়া, কিছুতেই এই নূর উৎপাটনে আগ্রহ জাগে নাই আশৈশব। যদিও তেমন তেমন যৌবনবতী রূপসীর প্রলোভন নিত্য শুনিয়া আসিতেছি, কিন্তু তাহা সৎকর্মের সহিত শর্তসাপেক্ষ। অতএব, আমি বাঁচিতে চাহি যতটুকু পর্যন্ত পারি। আমি চলৎশক্তি রহিত হইয়া পড়িলেও দুইচক্ষু উন্মিলিত করিয়া যেন পৃথিবীর রূপ দেখিতে পাই। আমার পরজন্মে “হয়তো মানুষ নয়, শংখচিল শালিকের বেশে, এই বাংলায়” পুনরায় ফিরিয়া আসিবারও অভিপ্রায় হয় না। কারণ তাহার নিশ্চয়তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি একইরকমভাবে দুর্বল।

পর সমাচার এই যে, অ্যানাটমি ও ফিজিওলজি নামক বিষয়গুলো নানান গবেষণা সম্পন্ন করিয়াও আত্মার জন্য কোনও ফোকর, কুঠুরী বা প্রকোষ্ঠ খুঁজিয়া পায় নাই। অতএব, এইসব কল্প কথায় মজিয়া সবেধন নীলমনি একখানি স্বর্ণালী জীবন আমি বেহুদা বিনষ্ট করিতে চাহি না। কিন্তু কথা হইল, আমি চাহি বা না চাহি, তিনি আসিবেন। অর্থাৎ একদিন ভবলীলা সাঙ্গ হইবে। আমি না চাহিলেও এখানে মৃত্যুর সকল ব্যবস্থাই পাকা হইয়া আছে। বরং মৃত্যুর এত আয়োজন একপাশে ঠেলিয়া রাখিয়া কী প্রকারে জীবনের পঞ্চাশটি বৎসর পার করিয়া দিয়া এখনও টিকিয়া আছি, তাহা এক বিপুল বিস্ময়। কারণ, অস্বাভাবিক মৃত্যু বিশ্বময় প্রাদুর্ভাবের মত ছড়াইয়া আছে। একটি ধর্মগ্রন্থ মতে, পৃথিবীর প্রথম মৃত্যু হত্যাকাণ্ড — কাবিল কর্তৃক হাবিলের। ইহা ছাড়াও রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়াড, ওডেসিসহ সকল প্রাচীন গ্রন্থই যুদ্ধ ও হত্যার স্বাক্ষর রাখিয়া গিয়াছে। আর এখনও বিশ্বময় যুদ্ধ ও হত্যা সর্বত্র জীবন কাড়িয়া লইতেছে। এইখানে প্রেমের জন্য হত্যা, ক্ষমতার জন্য হত্যা, জমির জন্য হত্যা, মর্যাদার জন্য হত্যা — ইত্যাকার নানাবিধ কারণ, অপমৃত্যুর কারণ হইয়া জীবনের সহিত টেক্কা দিয়া টিকিয়া আছে। আবার বিজ্ঞানের উন্নতির কারণ হেতু দুর্ঘটনার কবলে পড়িয়া মৃত্যু ঘটিতেছে — যেমন, উড়োজাহাজ, রেলগাড়ি, বা বাস ট্রাক দুর্ঘটনা নিত্য কাড়িয়া লইতেছে শতশত প্রাণ। আবার রোগ-বালাই — ঝড় — জলোচ্ছ্বাস — টর্নেডো ইত্যাদিও কোন অংশে কম যায় না। ইদানীং বন্যা জলোচ্ছ্বাস হইতে সৎ মানুষদের উদ্ধার কল্পে নূহের নৌকারও সন্ধান মিলিতেছে না। তবু জীবন চলিয়া যাইতেছে জীবনের নিয়মে।

তাহার পরও, একদিন ইহার দর্শন তো মিলিবেই। আমাদিগের মতো অতি নগন্য সাধারণ মানুষদের তো আর জাতিসংঘ গ্রহণ করিবে না, আমাদের শেষ আশ্রয় এই মৃত্যুই। তবু ভয়, এত ভয়, যে তাহার নাম উচ্চারণ করিলেও গায়ের আড়াইখানি কেশ ঝরিয়া পড়িয়া যায়। না জানি এই রচনা শেষ করিতে করিতে কত কেশই না ঝরিয়া পড়িবে। আমি তো অন্ধকারকে বড়ো ভয় করি। আমি জানি, ভূত বলিয়া কিছু নাই। বিশ্বাসও করি, তবু অন্ধকারে যেন গা ছমছম করিয়া উঠে। অন্ধকার পথে হাঁটিয়া যাইবার কালে কিংবা অন্ধকারে বসিয়া থাকিবার কালে মৃত্যু যেন আমাকে আলতো ছুঁইয়া দিয়া যায়। তাহার শীতল হস্ত আমার কন্ঠ রোধ করিয়া ধরে, আমি হাঁসফাঁস করিয়া উঠি। সর্বাংগ ঘর্মাক্ত হইয়া উঠে। বিজ্ঞানের ছাত্র হইয়াও, মার্ক্সবাদের ভক্ত হইয়াও, কুসংস্কার না মানা সত্ত্বেও যতটুকু মনে পড়িয়াছিল দোয়া দরুদ পড়িবার চেষ্টা করিতে থাকি। এমন একটি কাপুরুষ-সদৃশ ব্যক্তি কী করিয়া মৃত্যু বিষয়ে দুই-চারিখানি কথা বলিতে পারিবে তাহা কিছুতেই বোধগম্য নয়।

আমার গ্রামে এক প্রপিতামহের কবর দেখাইয়া আমার বাবা একদিন বলিয়াছিলেন, তাঁহার এই পূর্বপুরুষ জীবদ্দশায় কবর খোঁড়াইয়া তাহাতে রাত্রি বাস করিতেন এবং কুরআন তিলাওয়াত করিতেন। আমি এখনও তাঁহার অমিত সাহসে রোমাঞ্চিত হইয়া উঠি। স্থানীয় জনগন এখনও তাঁহার সেই কর্মের সম্মান দেখাইয়া প্রতিদিন জেয়ারত করিয়া যায়। আমিও সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি তাঁহার সাহস ও সাধনাকে। কিন্তু নিজেকে কখনও সেই কবরে বসাইয়া বা শোয়াইয়া ভাবিতে গেলে হৃদপিণ্ডের দুই-একটি স্পন্দন আপনা হইতে বন্ধ হইয়া পড়ে।

তবু আমি তাহার দেখা পাইয়াছিলাম। একবার অনেক বছর আগে, যখন বগালেক-কেওক্রাডাং পদব্রজে যাত্রা করা ছাড়া ভিন্ন উপায় ছিলো না, তখন সেখানে বর্ষায় ভেঙে যাওয়া পর্বতের খাড়া দেয়ালের খাঁজ দিয়া পুলসেরাত সদৃশ্য এক পথ পাড়ি দিতেছিলাম। মাঝপথে আসিয়া যখন এদিক ওদিক কোনও দিকে যাইতে পারিতেছিলাম না, খাড়া নীচে — বহু নীচে ঝিরির শব্দ পর্যন্ত শোনা যাইতেছিল না, তখন হঠাৎ চক্ষু মুদিয়া আসিল, হস্ত-পদ কম্পিত হইল, কেবল স্ত্রী-কন্যার চেহারা ভাসিয়া উঠিল, আর মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম “হায়, এ আমি কী করিলাম, বউ-বাচ্চাকে একটা গতি না করিয়া এইভাবে তিরোহিত হইব?” আশ্চর্যের বিষয়, এমন ভয় জীবনে এর আগে না পাইলেও, একবারের জন্যও কোনও দোয়াদরুদ মনে আসিল না। না-ফরমানদের হয়তো এমনই ঘটিয়া থাকে।

আর একবার যখন আমার হাঁটুর প্যাটেলা নামের হাড্ডিখানি চুরমার হইয়া গেল, আর তাহার পরে উপর্যুপরি সার্জারির পরে ইনফেকশন হইয়া সেপটিসেমিয়ায় পর্যবসিত হইল, তখন আমি সকলই ঘোলা দেখিতেছিলাম। তখন আমার চোখের পর্দায় যেন এক শীতল অবয়ব আমাকে ইশারায় হাতছানি দিয়া ডাকিতেছিল। সেদিন অবশ্য প্রাণপণে বউবাচ্চার স্বার্থে আরও কদিন হায়াত-বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট দোয়া-দরুদ পড়িয়া নানা ছলে মৃত্যুদূতকে সেবারের মতো ঠেকাইয়া দিবার প্রাণান্ত চেষ্টার ত্রুটি করি নাই। যেবার ডান-বাহুর চামড়ার নীচে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কয়েকটি গোটা’র কোষ পরীক্ষা করিয়া আমার এক অগ্রজ চিকিৎসক কয়েকটি কোষ নিয়া সন্দিহান হইয়া পড়িলেন, তখন মনে হইয়াছিল — এ যাত্রা আর রক্ষা নাই। কর্কট আমাকে পাইয়া বসিয়াছে। ভাবিতে লাগিলাম, প্রতিদিন কত রোগীকে এক কলমের খোঁচায় কর্কটের সঙ্গী করিয়াছি, আর আজ আমিই শুনিতে পাইলাম সেই অমোঘ বাণী! পরে সার্জারি করিয়া অবশ্য নিশ্চিন্ত হইয়াছিলাম যে না, আমার এখনও ছুটির সময় আসে নাই। তবে সেই কয়েকটা দিন এক বিভীষিকাময় সময় কাটাইয়াছিলাম। নিজেকে মৃত্যুর হাতের মুঠার মধ্যে আমি আবিষ্কার করিয়াছিলাম। এই চরম সময়-ক্ষণের সাক্ষী একমাত্র সহধর্মিনী ছাড়া আর কেউ তো নাই।

হায়, জীবন এমনই বিচিত্র যে, এর বিচিত্র ছলনা জালে সে আকীর্ণ করিয়া রাখিয়াছে। তাই আজ আবার মৃত্যুর সকল চিহ্নগুলাকে অস্বীকার করিয়া, অগ্রাহ্য করিয়া, দিবারাত্র জীবনের সাধনায় নিজেকে ব্যাপৃত রাখিয়াছি। যেন সেই বিভীষিকাময় দিবসগুলি আমার জীবনের কোনও অমা-রজনীর দুঃস্বপ্ন। ভোরের আলোক ফুটিবা মাত্র তাহার কৃষ্ণছায়া তিরোহিত হইয়াছে, আর আমার সম্মুখে জীবন জীবন শুধু — অনন্ত জীবন।

অতএব, প্রস্তাবক সমীপেষু, আবারও পুরনো রেকর্ড বাজাইয়া বলিতেছি, আমি যাহারে জানি নাই, চিনি নাই, তাহার গান কী করিয়া গাহিব?

0 comments: