বইপোকার বইঘর - অনিন্দিতা মণ্ডল
Posted in বইপোকার বইঘরঅনিন্দিতা মণ্ডল
আদিপর্ব (অমৃতা পাতিল)
আদিপর্ব নামটির সঙ্গে আমাদের ভারতবর্ষের সেই প্রাচীন ও বিখ্যাত মহাকাব্যের নামটি জড়িয়ে আছে। আদিতে, মহাকাব্য মহাভারত শুরুরও আগে কেমন করে আমাদের ভূখণ্ডে সভ্যতা জন্ম নিয়েছিল তারই রূপক আধারিত কাহিনী এটি। কিন্তু একে কাহিনী বলা ভুল। গ্রাফিক নভেলের বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে তেল রঙে আঁকা অসাধারণ সব চিত্রের মধ্যে অল্প একটি দুটি বাক্যে কাহিনী তৈরি করা হয়েছে।তফাত একটাই। প্রতিটি ছবি কথা বলে।পড়বার সময় বাক্যের সঙ্গে চিত্রকে মিলিয়ে নিয়ে ভাবতে হবে। একবার সেই ভাবনার পথ ধরে নিজের মনোজগতে প্রবেশ করতে পারলে চিরন্তন সেই মহাকাব্যের নতুন এক ভাষ্য উপলব্ধি করতে পারা যায়। অমৃতা পাতিল একই সঙ্গে চিত্র এঁকেছেন এবং রূপকার্থ বাক্যগুলি লিখেছেন।
বইটির প্রচ্ছদ ধরেই আলোচনা করি। দেখা যাচ্ছে, মৃত্যুর হিমনীল সাগরে অনন্ত নাগের একটি ফণার ছত্রতলে অনন্ত শয়ানে বিষ্ণু। আমরা ভাবতে শুরু করি, ব্রহ্মাণ্ড জন্ম নিলে বিষ্ণু অবতরণ করবেন। পালন করবেন। কোন ব্রহ্মাণ্ড? যা মহাভারতে লিপিবদ্ধ আছে সেই ব্রহ্মাণ্ড। এরকম ভাবতে গিয়ে যখন চিন্তা সীমায়িত হচ্ছে তখনই চিত্রের মধ্যে একে একে ভাসছে অনন্ত নাগের অনন্ত সংখ্যক ফণার নীচে অসংখ্য বিষ্ণু শয়ান।অর্থাৎ অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড। এ বড় কম নয়। অমৃতা একটি মাত্র চিত্রের মধ্যে আমাদের ভূমার অনুভূতি দিয়েছেন। সান্ত ছেড়ে আমরা অনন্তে পৌঁছেছি।ন্যাভিগেশন অফ মাল্টিভার্স অধ্যায়টিই ধরা যাক। সৃষ্টি সূত্রের এমন অভিনব এবং প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা আমি আগে পড়িনি। ছবির কথা না বললে এ বইয়ের কিছুই বলা হলো না। উক্ত অধ্যায়টি এমন সুন্দর অনুভব করতে পারা গেছে শুধু ছবির জন্যেই।
আধুনিক কালে অনেকেই মহাকাব্যের নতুন নতুন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। অমৃতার আদি পর্ব সেদিক দিয়ে একেবারেই অনন্য। অল্প অথচ অর্থপূর্ণ বাক্যে এবং ছবিতে তিনি একটি দিশা দিয়েছেন। পাঠক বা দ্রষ্টা যাতে নিজের মনোজগতে একটি ছবি আঁকতে পারে।
বইটির প্রকাশক হার্পার কলিন্স
মূল্য ৭৯৯/-
0 comments: