1

প্রচ্ছদ নিবন্ধ - শমিত বিশ্বাস

Posted in

প্রচ্ছদ নিবন্ধ


জাগো সমর্থক, জাগো!
শমিত বিশ্বাস


ফুটবলই হোক আর রাজনীতিই হোক, সমর্থকদেরই হয়েছে ঘোরতর মুস্কিল। অল্পবয়সে যখন কলকাতার ফুটবল লীগ নিয়ে খুব মাতামাতি করতাম, তখন প্রতিবছর লীগ শুরুর ঠিক আগে অসীম আগ্রহে চোখ রাখতাম কোন খেলোয়াড় কোন দলে নাম লেখাচ্ছে, সেদিকে। কাগজে ফলাও করে ছাপতো কোন নামজাদা খেলুড়েকে কোন বড় ক্লাব বিশাল টাকা দিয়ে কিনে নিল, ইত্যাদি। আমাদের, অর্থাৎ সমর্থকদের পছন্দের কোনো ক্লাব, যেমন মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গল, কোনো বড় প্লেয়ারকে কিনতে পারলে উল্লসিত হতাম; আবার কেউ ছেড়ে গেলে আতঙ্কিতও হতাম। অবশ্য সব বড় ক্লাবেরই কিছু না কিছু দুর্ধর্ষ খেলোয়াড় ছিলেন, যাঁরা কোনোদিন দলবদল করতেন না; বছরের পর বছর একই ক্লাবে খেলে যেতেন। সমর্থকদের চোখে এঁরা ছিলেন নমস্য। এঁদের কথা বাদ দিলে, বাকিরা প্রায় সকলেই দল পাল্টাপাল্টি করতেন প্রধানত টাকার অঙ্কের কারণে। তা, এরকমটা হওয়াই তো স্বাভাবিক। তখনও ছিল, আজও একইরকম আছে। এ নিয়ে প্লেয়ারদের বিরুদ্ধে কখনও কোনো অভিযোগ কেউ করেনি, আর করার কথাও নয়। কিন্তু মজার ব্যাপার এই যে, সমর্থকদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম খাটে না। তারা কখনোই এ ক্লাব, ও ক্লাব মানে আজ মোহনবাগান, কাল ইস্টবেঙ্গল, এমনটা করতে পারেন না; করলে সেটা গর্হিত অপরাধ বলেই গন্য হবে। এই অগণতান্ত্রিক বৈষম্যের কারন কি, তার সদুত্তর আমি পাইনি। বন্ধু বান্ধবদের জিজ্ঞেস করলেই তারা ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকায় আর বলে -- 'ওরে আহাম্মক, মোহনবাগান মানে ঘটি, ইস্টবেঙ্গল মানে বাঙাল, আর মহামেডান স্পোর্টিং মানে হলো মুসলিম। এরা এদিক ওদিক করবেটা কি করে ?" কিন্তু এ উত্তর আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাহলে খেলোয়াড়রা কেন এসবের ধার ধারে না ? কোনো ঘটি খেলোয়াড় যদি ইস্টবেঙ্গলে খেলে, তাহলে কেউ কি তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়? আবার, কোনো মুসলিম প্লেয়ার যদি মোহনবাগানে নাম লেখায়, তাতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়? ওসব বাজে কথা। আসলে, এ সমর্থকদের প্রতি এক সুপরিকল্পিত অবিচার।

এবার আসা যাক বাঙ্গালীর আর এক প্রিয় বিষয় - 'দি গ্রেট রাজনীতির' কথায়। রাজনৈতিক নেতারা কিন্তু এই সেদিন পর্যন্তও ফুটবলারদের থেকে ছিলেন আলাদা। যে যার নিজের নিজের ভালোবাসার দলে 'পীরিতি কাঁঠালের আঠার' মতই সেঁটে থাকতেন। গান্ধীবাদী নেতা গান্ধীটুপি পরে সারাজীবন থেকে থেকে অনশন করতেন আর ধর্না দিতেন। বামপন্থী বছরের পর বছর "লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই" বলে চিৎকার করেই চলতেন, আমৃত্যু। কিন্তু অধুনা দিনকাল বদলেছে। চারিদিকে পরিবর্তনের ঘোড়েল হাওয়া। রাজনীতির হোমরা-চোমরারাও যে এর ব্যতিক্রম নন, সেটা টের পেলাম এইভাবে। টিভিতে রোজ সন্ধেবেলা বেশ আয়েশ করে চ্যানেলে চ্যানেলে বিভিন্ন পার্টির নেতাদের তর্জাগান শুনি। বেশ লাগে। এদল ওদলকে মুখ ভ্যাংচায়, তো ওদল এদলের দিকে ঘুঁসি পাকায়। এই নেতা কলা দেখায় তো ঐ নেতা বক দেখায়। সঞ্চালক মশাই দু দলকেই তাতিয়ে দিয়ে মজা পান। সিটি দিতে না পারলেও হাসেন মিটি মিটি। তা কিছুদিন ধরে এই রঙ্গরস দেখতে দেখতে বেশ চেনা হয়ে আসছিল মুখগুলো, মানে কে কোন দলের ওস্তাদ। ওমা, হঠাৎ আবিষ্কার করলুম যে চেনা মুখগুলোর কয়েকটিকে আর দেখতে পাচ্ছি না! শুনলাম, তাঁরা নাকি দল পাল্টেছেন। অর্থাৎ, কদিন আগেও যাদের দেখলেই 'এই মারেন তো সেই মারেন' করতেন, এখন তাদের সঙ্গেই নাকি হলায় গলায় ভাব! তাই, কি করে আর তাদের সঙ্গেই তর্জা লড়েন? মানে মোদ্দাকথা হল, পার্টির কর্তাদের গায়েও ফুটবলারদের হাওয়া লেগেছে। কোনো ঢাক ঢাক গুড় গুড় নেই। সকালে এক পার্টি তো বিকেলে আর এক। পেশাদার ফুটবলার যদি হয়, তবে পেশাদার পলিটিশিয়ানই বা হবেনা কেন ? 'সার্ভিস' পেতে গেলে, ফ্যালো কড়ি মাখো তেল। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার আরো বেশি দূরদর্শী। নিজে এক পার্টিতে থেকে, বৌ কিংবা ছেলেমেয়েকে ভিড়িয়ে দেন অন্য পার্টিতে। তাতে ভারসাম্যও বজায় থাকে, আর দরকার মত দলবদলটাও মসৃন হয়। আমি বলি কি, ব্যাপারটার একটু সরলীকরণ দরকার। প্রতি বছর মরশুমের শুরুতেই একেবারে সই-সাবুদ করে, ফুটবলারদের মত দলবদলের পালাটা চুকিয়ে দিলেই হয়। তাতে ফরোয়ার্ড, ডিফেন্স দুটোই অন্তত এক বছরের জন্য আর নতুন করে গড়াপেটা করতে হয়না।

তা সে যাকগে, মরুকগে, আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হোল সমর্থকদের সমস্যা নিয়ে। তারা কিন্তূ দুঃখের বিষয়, ইচ্ছে করলেই রাতারাতি, এক পার্টি-অফিস থেকে, আর এক পার্টি-অফিসে গিয়ে বসে পড়তে পারেন না। বরং নীলবর্ণ শৃগাল চিহ্নিত হয়ে, মার খেয়ে চামড়া গুটিয়ে যাবার ভয় আছে। তাহলেই দেখুন, কি ফুটবল, কি রাজনীতি, সমর্থকদের সঙ্কটটা একই। কেন রে বাপু? সমর্থকদের কি একটু চেঞ্জের দরকার নেই? সকালবেলা মেঘ করলে কি রাত্রি বেলা চাঁদ উঠতে নেই? না না, এভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে না। এখনি ঠিক সময় এসেছে এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে সমস্বরে গর্জে ওঠার। কর্তারা যদি মুহূর্মুহু দল পাল্টাতে পারেন, তাহলে সমর্থকরাই বা কেন ইচ্ছেমত রঙ বদলাতে পারবেন না ? তাই বলি, এখনো সময় আছে, দুনিয়ার সমর্থক কূল এক হোন। আর চলুন নেচে নেচে গাই -----

বদল বদল বদল চাই। বদল নিয়ে বাঁচতে চাই। রঙবদল আর ভোলবদল। বল হরি হরিবোল।

1 comment:

  1. তখন সমর্থক দের যা অবস্থা যা ছিল " আয় ভোটারাম ভোট দিয়ে যা,
    মাছ কাটলে মুড়ো দেব ,
    ধান ভাংলে কুড়ো দেব ইত্যাদি।
    এখন হয়েছে -- " ওরে ভোটারাম তো্র নামটা হলেই হবে
    তোর পছন্দের নিকুচি করি
    ভোটটা পেলেই হবে ।

    এখন হয়েছে --






































    '

    ReplyDelete