1

প্রবন্ধ - মনোজিৎকুমার দাস

Posted in

প্রবন্ধ


বৈদিক যুগের নারী ঋষিরা
মনোজিৎকুমার দাস


পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্মগুলোর মধ্যে হিন্দুধর্ম অন্যতম। হিন্দুধর্মের বৈদিক যুগের (প্রায় খৃষ্টপূবার্ব্দ ১১০০- ৫০০) জ্ঞানবান পুরুষ সাধকদেরকে বলা হত ঋষি। অন্যদিকে, জ্ঞানঋদ্ধা নারী সাধিকাদের বলা হত ঋষিকা (নারী ঋষি)। বৈদিকযুগের নারী ঋষিদের বৈদিক দর্শন, ভাবনাচিন্তা,জ্ঞানগরিমা, প্রজ্ঞার পরিচয় উপস্থাপনের আগে বেদ সম্পর্কে আলোচনা করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করি।

বেদ প্রাচীন ভারতের হিন্দুধর্মালম্বীদের একাধিক ধর্মগ্রন্থের একটি সমষ্টি। বেদের অর্থ জ্ঞান। বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত বেদ সংস্কৃত সাহিত্যের প্রাচীনতম হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। বেদকে “অপৌরুষেয়” (মানুষের দ্বারা রচিত নয়) বলা হয়। বেদ প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বর কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। তাই বেদের অপর নাম “শ্রুতি”(যা শোনা হয়েছে)। বেদ বা শ্রুতি চারটি প্রধান সংকলন সংহিতা নামে এক সময় লিপিবদ্ধ হয়। বেদের নির্দেশিত বিধিবিধানের দ্বারা প্রাচীন ভারতে বৈদিক যুগ পরিচালিত হত।

বেদ চার ভাগে বিভক্ত ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব। ঋগ্বেদ ১০টি মণ্ডলে বিভক্ত, যা ১০২৮টি বৈদিক সংস্কৃত সূক্তের সমন্বয়। ঋগ্বেদ মোট ১০,৫৫২টি ঋক বা মন্ত্র বা স্তুতি রয়েছে। ঋক বা স্তুতির সংকলন হল ঋগ্বেদ সংহিতা। ঋগ্বেদ ঈশ্বর, দেবতা ও প্রকৃতির স্তুতি করা হয়েছে। বেদের চারটি অংশ মন্ত্র বা সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। মন্ত্রাংশ প্রধানত পদ্যে রচিত, কেবল যজুঃসংহিতার কিছ অংশ গদ্যে রচিত। এটাই বেদের প্রধান অংশ। এতে আছে দেবস্তুতি, প্রার্থনা ইত্যাদি। ঋক মন্ত্রের দ্বারা যজ্ঞে দেবতাদের আহ্বান করা হয়, যজুর্মন্ত্রের দ্বারা তাঁদের উদ্দেশে আহুতি প্রদান করা হয় এবং সামমন্ত্রের দ্বারা তাঁদের স্তুতি করা হয়। ঋগ্বেদে প্রায় ৩০ জন নারী ঋষি বা ঋষিকা’র নাম পাওয়া যায়।(১)

বৈদিকযুগে নারী ঋষিদের কালপর্বের কথা বলতে গিয়ে উপনিষদ সম্পর্কে আলোচনা করা একান্তই প্রাসঙ্গিক। উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত। উপনিষদগুলোতে সত্য ব্রহ্মের প্রকৃতি এবং মানুষের মোক্ষ বা আধ্যাত্মিক মুক্তিলাভের উপায় বর্ণিত হয়েছে। উপনিষদগুলো মূলত বেদের ব্রাহ্মণ ও আরণ্যক অংশের শেষ ভাগে পাওয়া যায়। "ব্রহ্ম" ও "আত্মা" শব্দ দুটি উপনিষদে উল্লিখিত হয়েছে। ব্রহ্ম হলেন বিশ্বের সত্ত্বা আর আত্মা হলেন ব্যক্তিগত সত্ত্বা। ব্রহ্ম শব্দটি "ব্র" শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ "বৃহত্তম"। ব্রহ্ম হলেন "স্থান, কাল ও কার্য-কারণের অতীত এক অখণ্ড সত্ত্বা। তিনি অব্যয়, অনন্ত. চিরমুক্ত, শ্বাশত, অতীন্দ্রিয়।" আত্মা বলতে বোঝায়, জীবের অন্তর্নিহিত অমর সত্ত্বাটিকে। উপনিষদের মন্ত্রদ্রষ্টাদের মতে, আত্মা ও ব্রহ্ম এক এবং অভিন্ন। এটিই উপনিষদের সর্বশ্রেষ্ঠ মতবাদ। বৃহদারণ্যক ও ছান্দোগ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপনিষদ, এই দুটি উপনিষদ দর্শনের দুটি প্রধান শাখার প্রতিনিধিত্ব করে। বৃহদারণ্যকে "নিষ্প্রপঞ্চ" বা জগতের অতীত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ছান্দোগ্যতে "সপ্রপঞ্চ" বা জাগতিক বিষয়গুলি আলোচিত হয়েছে। এদুটির মধ্যে বৃহদারণ্যক প্রাচীনতর। তবে কিছু কিছু অংশ ছান্দোগ্যের পরেও রচিত হয়। উপনিষদের রচয়িতা হিসাবে একাধিক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। প্রাচীন উপনিষদগুলোতে যাজ্ঞবল্ক্য ও উদ্দালক আরুণির কথা পাওয়া যায়। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লেখকরা হলেন শ্বেতকেতু, শাণ্ডিল্য, ঐতরেয়, পিপ্পলাদ ও সনৎকুমার। মহিলাদের মধ্যে উপনিষদে কয়েকজন মহিলা ঋষির নাম আছে। তাঁদের মধ্যে গার্গী এবং যাজ্ঞবল্ক্যের পত্নী মৈত্রেয়ীর নাম বিশেষভাবে উল্লেযোগ্য।

ব্রাহ্মণ মূলত বেদমন্ত্রের ব্যাখ্যা। এটি গদ্যে রচিত এবং প্রধানত কর্মাশ্রয়ী। আরণ্যক কর্ম-জ্ঞান উভয়াশ্রয়ী এবং উপনিষদ বা বেদান্ত সম্পূর্ণরূপে জ্ঞানাশ্রয়ী। বেদের বিষয়বস্তু সাধারণভাবে দুই ভাগে বিভক্ত কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড। কর্মকাণ্ডে আছে বিভিন্ন দেবদেবী ও যাগযজ্ঞের বর্ণনা এবং জ্ঞানকাণ্ডে আছে ব্রহ্মের কথা। কোন দেবতার যজ্ঞ কখন কিভাবে করণীয়, কোন দেবতার কাছে কি কাম্য, কোন যজ্ঞের কি ফল, ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের আলোচ্য বিষয়। আর ব্রহ্মের স্বরূপ কি, জগতের সৃষ্টি কিভাবে হয়েছে, ব্রহ্মের সঙ্গে জীবের সম্পর্ক কি, এসব আলোচিত হয়েছে জ্ঞানকাণ্ডে। জ্ঞানকাণ্ড বেদের সারাংশ। এখানে বলা হয়েছে যে, ব্রহ্ম বা ঈশ্বর এক, তিনি সর্বত্র বিরাজমান, তাঁরই বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ বিভিন্ন দেবতা। জ্ঞানকাণ্ডের এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে ভারতীয় দর্শনচিন্তার চরম রূপ উপনিষদের বিকাশ ঘটেছে।

এসব ছাড়া বেদে অনেক সামাজিক বিধিবিধান, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, শিল্প, কৃষি, চিকিৎসা ইত্যাদির কথাও আছে। এমনকি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথাও আছে। বেদের এই সামাজিক বিধান অনুযায়ী সনাতন হিন্দু সমাজ ও হিন্দুধর্ম রূপ লাভ করেছে। হিন্দুদের বিবাহ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনও বৈদিক রীতিনীতি যথাসম্ভব অনুসরণ করা হয়।

ঋগ্বেদ থেকে তৎকালীন নারীশিক্ষা তথা সমাজের একটি পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়। অথর্ববেদ থেকে পাওয়া যায় তৎকালীন চিকিৎসাবিদ্যার একটি বিন্তারিত বিবরণ। এসব কারণে বেদকে শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই নয়, প্রাচীন ভারতের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও ইতিহাসের একটি দলিল হিসেবেও গণ্য করা হয়।

বৈদিকযুগের মহিলাদের বুদ্ধিবৃত্তি এবং আধ্যাত্মিক সাফল্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। প্রথমেই বৈদিকযুগের প্রথম দিকের নারীদের বিদ্যালাভ ও ধর্মাচরণের যে ইতিবৃত্ত জানা যায় সে সম্বন্ধে আভাস দেওয়া যেতে পারে। নারীদের মধ্যে দুই শ্রেণির বিদ্যার্থিনী ছিলেন। এক শ্রেণি ব্রহ্মবাদিনী, আর এক শ্রেণি সন্ন্যাসিনী।

নারীদের যে পুরুষদের সাহায্যকারী ও সম্পূরক হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে, তা বৈদিক যুগের স্তোত্রাদির মধ্যে প্রকাশ পায়। বৈদিক যুগের যে সব নারী ঋষিদের প্রজ্ঞা, জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক ও আধ্যাত্মিকতার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে নাম করতে হয় লোপামুদ্রা, মৈত্রেয়ী, গার্গী,ঘোষা, অদিতি, ব্রহ্মজায়া, পৌলমী, অপালা, বাক, অপত্ত, কত্রু, বিশ্বম্ভরা, জুহ, রোমাশা, মেধা, নিষৎ, সবিতা, শিক্তা, ভগস্ত্রীনি, যরিতা, শ্রদ্ধা,উর্বশী, স্বর্লগা, ইন্দ্রানী, দেবায়নী, কক্ষিবতী, দক্ষিণা, ইত্যাদি। এদের মধ্যে কয়েকজন নারী বৈদিক ঋষি ঈশ্বরের স্তুতিস্তোত্র রচনা করে তাঁদের প্রজ্ঞার প্রমাণ রাখেন। তাদের মধ্যে ঘোষা, লোপমূদ্রা, মৈত্রেয়ী, গার্গী, প্রমুখ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্যা।(২)

নারী ঋষিদের রচিত স্তোত্রগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রথম ভাগে স্তোত্রগুচ্ছের নারী ঋষিদের মধ্যে বিশ্বম্ভরা ও অপালা নারী ঋষির কথা বলতে হয়। বিশ্বম্ভরা তাঁর স্তোত্রগুলো অগ্নি দেবতাকে উৎসর্গ করেন। অন্যদিকে অপালা তাঁর স্তোত্রগুলোকে ইন্দিরাকে উৎসর্গ করেন। দ্বিতীয় গুচ্ছের স্তুতি ও স্তোত্র বিশেষ করে লোপামুদ্রা, শশীয়সি ও অন্যান্য নারী ঋষির রচনা। লোপামুদ্রার স্তোত্রে ছয়টা সূক্ত রাত্রি দেবীকে উৎসর্গীকৃত। নারী ঋষি বিশ্বম্ভরার একটি লেখায় উল্লেখ আছে কিছু কিছু বৈদিক স্ত্রোত্র অত্রি কন্যা অপালা, কাক্ষিবানের কন্যা ঘোষা এবং ইন্দ্র ঋষির পত্নী ইন্দিরার নামে উৎসর্গীকৃত। এ থেকে উপলব্ধি করা যায় বৈদিক যুগের ঊষালগ্নে নারীরা বেদ অধ্যায়ন ও বেদের বিধিবিধান পালনে নিবেদিতা ছিলেন। বৈদিকযুগে যে সমস্ত নারী সারাজীবন কুমারীত্ব গ্রহণ করে বেদ অধ্যায়ন, বেদচর্চা এবং বৈদিক ধর্ম পালনে ব্রতী থাকতেন, তাঁদের ব্রহ্মবাদিনী বলা হত। পাণিনি আচার্য্য ও আচার্য্যানী এবং উপাধ্যায় ও উপাধায়িনী সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দান করেন। আচার্য্যের পত্নী আচার্য্যানী এবং উপাধ্যয়ের পত্নী শিক্ষার্থীদের বেদের পাঠদান করতেন। তাঁর মতে কাথি, কলাপী, বাহভিচি ইত্যাদি নামে বেশ কয়েকজন জ্ঞানবতী নারী পণ্ডিত ছিলেন।।

ঋগ্বেদে অগস্ত্য ঋষির সঙ্গে তাঁর পত্নী লোপামুদ্রার দীর্ঘ আলাপআলেচনার কথা লিপিবব্ধ আছে। তা থেকে উপলব্ধি করা যায়, লোপামুদ্রা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ও জ্ঞানঋদ্ধা ছিলেন। তিনি এক সময় স্বামীর কাছ থেকে অনেক অনেক জ্ঞানের অধিকারিনী হন। কথিত আছে, লোপামুদ্র ঋষি অগস্ত্যর বরে রাজা বিদর্ভের এক কন্যা হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। রাজদম্পতি তাঁদের কন্যাকে বিলাসব্যাসনের মধ্যে রেখে লেখাপড়ায় সুশিক্ষিত গড়ে তোলেন। তারপর এক সময় লোপামুদ্রা বিয়ের বয়সী হলে ঋষি অগস্ত্য কৌমার্য ব্রত ভঙ্গের জন্য দারিদ্র সত্ত্বেও লোপামুদ্রাকে বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। লোপা ঋষি অগস্ত্যকে বিবাহ করতে রাজি হন। বিবাহের পর তিনি অগস্ত্যের আশ্রমে গমন করেন। দীর্ঘদিন যাবত আনুগত্যের সঙ্গে স্বামী সেবা করার পর লোপা স্বামীর কঠোর তপস্যার সঙ্গী হয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ড. রমেশচন্দ্র মুখোপাধায়েরর মতে, লোপামুদ্রার স্তোত্রে বলা হয়েছে, পুরুষের নারীর সান্নিধ্য লাভ প্রয়োজন। এমনকি অতীতের ঋষিরা দেবতাদের তপস্যা করা সত্ত্বেও জায়াদের প্রতি অনীহা দেখাননি। কিন্তু লোপামুদ্রার স্বামী ঋষি অগস্ত্য তাঁর পত্নীর প্রতি যৌন নিস্পৃহতা প্রদর্শন করায় লোপামুদ্রা এ বিষয়ে দুটো সংস্কৃত ভাষার কবিতাগুচ্ছে তাঁর মনের হতাশা ব্যক্ত করেন যার ইংরেজি ভাষান্তর: Lopamudra: For many autumns have I been laboring, evening an morning, through the aging dawns. / Old Age diminishes the beauty of bodies. Bullish men should now come to their wives.

Lopamudra: For even those ancients who served truth and at one with the gods spoke truths, /even they got out of harness for they did not reach the end. Wives should now unite with their bullish (husbands) (৩)

অবন্তী সান্যালের লেখা ‘হাজার বছরের প্রেমের কবিতা’ গ্রন্থের সুশীলকুমার দে অনূদিত লোপামুদ্রার লেখা স্বামীর মনোযোগ ও ভালবাসা না পাওয়ায় তাঁর আবেগ, অনুভূতি ও আক্ষেপ প্রকাশ করেন তারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে হয় নিচের দুটো স্তবককে।

আক্ষেপ
দিবস রজনী শ্রান্ত আমারে দীর্ঘ বরষ র্জীর্ণ করে,
প্রতি ঊষা হয়ে কায়ার কান্তি,
---- আসুক পুরুষ নারীর তরে।

দেব -- সম্ভাষী সত্যপালক পূর্ব ঋষিরা, তাদের ঘরে
ছিল জায়া, তবু ছিল তপস্যা
--- যাক নারী আজ পুরুষ তরে।(৪)

এক সময় ঋষি অগস্ত্য তাঁর স্ত্রীর প্রতি দায়দায়িত্বের কথা উপলব্ধি করে গার্হস্থ্য ও তপস্যী জীবন সমান ভাবে পালন করতে থাকেন। ফলে তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিক ও শারিরীক ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে। তাঁদের একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তার নাম রাখা হয় দ্রিধাস্যু, তিনি পরে একজন বিখ্যাত কবি হন।

ঋগ্বেদে লোপামুদ্রার ১৭৯ সংখ্যক স্তোত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। রাত্রি দেবীকে নিবেদিত লোপামুদ্রার রচিত ছয়টি ছন্দোবদ্ধ স্ত্রোত্রেরও সন্ধান পাওয়া যায়। ঋগ্বেদে অগস্ত্য এবং লোপামুদ্রা মন্ত্রদ্রষ্টা হিসাবে বিবেচিত হন। লোপমুদ্রা ঋগ্বেদ, যর্জুবেদ ও অন্যান্য গ্রন্থে ‘মন্ত্রদ্রিকা’ নামে পরিচিত।(৫) অন্যদিকে, বৈদিক জ্ঞানের প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত এক ডজন মহিলার মধ্যে ছিলেন বিশ্বম্ভরা, শাশ্বতী, গার্গী, মৈত্রেয়ী, অপালা, ঘোষা,অদিতি প্রমুখ। তাঁরা ব্রহ্মাবাদিনী, বক্তা ও বেদের প্রত্যাদেশপ্রাপ্তা বলে জানা যায়।

মৈত্রেয়ী বৈদিক যুগের একজন ভারতীয় নারী হিন্দু দার্শনিক। তিনি ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের (খৃষ্টপূর্বাব্দ ৮ম থেকে ৭ম শতক) পত্নী ঋগ্বেদে প্রায় এক হাজর স্তোস্ত্র স্তুতি আছে তার মধ্যে মৈত্রেয়ী সম্পাদিত ১০ টি স্তোত্র রয়েছে। মৈত্রেয়ী একজন নারী ভবিষৎ দ্রষ্ট্রা ও দার্শনিক। ঋগ্বেদে উল্লিখিত আত্মা সম্পর্কে মৈত্রেয়ী বৃহদারণ্যক উপনিষদে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। ভালবাসা একজনের আত্মা থেকেই আসে। তিনি তাঁর স্বামী ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনা এবং সাধনার একান্ত সহযোগিনী ছিলেন। মৈত্রেয়ী ও যাজ্ঞবল্ক্যের কথোপকথনে আধ্যাত্ম বিষয়ে উঠে এসেছে, যা বৃহদারণ্যক উপনিষদে বিশেষ ভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে।(৬)

মৈত্রেয়ী ও কাত্যায়নী ছিলেন যাজ্ঞবল্ক্যের দুই পত্নী। মৈত্রেয়ী ছিলেন হিন্দু ধর্মশাস্ত্র সম্পর্কীয় কাব্য ও ছন্দোবদ্ধ কাব্য গুণের অধিকারিনী। তিনি ছিলেন ব্রহ্মবাদিনী। অন্যদিকে কাত্যায়নী ছিলেন সাধারণ মহিলা। একদিন যাজ্ঞবল্ক্য তাঁর পার্থিব সম্পত্তি ও সম্পদ দুই পত্নীর মধ্যে ভাগ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিলেন তপস্যায় নিয়ত মগ্ন হবার উদ্দেশে। তিনি তাঁর পত্নীদ্বয়কে তাঁর ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করলেন।(৭)

বুদ্ধিদীপ্তা মৈত্রেয়ী তাঁর স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ কি অবিনশ্বর?’ ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘সম্পদ শুধুমাত্র একজন ভোগ করতে পারে, তাছাড়া কিছুই করতে পারে না। সম্পদ অমরত্ব দান করতে পারে না।’ মৈয়েত্রীঁর তাঁর স্বামী ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের কাছে অর্থ, প্রাচুর্য্য, ধনসম্পত্তি, কিছুই না চেয়ে শুধু বললেন ‘যেনাহম্ অমৃতস্যাম, কিমহম্ তেন কুর্যাম?’ অর্থাৎ ‘যা আমাকে অমৃত দান করতে পারে না, তা লাভ করে আমি কি করবো?’ যাজ্ঞবল্ক্য তাঁর কথা শুনে খুশি হলেন। মৈত্রেয়ী ও যাজ্ঞবল্ক্যের কথোপকথনের কিয়দংশ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। মৈত্রেয়ী তাঁর স্বামী ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মহাশয়, পুরো পৃথিবী সম্পদেই পরিপূর্ণ। আমি কি তা থেকে অমরত্ম লাভ করতে পরব?’ ‘না।’ যাজ্ঞবল্ক্য বললেন। ‘এমনকি ধনীর জীবনও অমরত্ম লাভ করতে পারে না। ধন সম্পদের মধ্যে অমরত্ম লাভের কোন আশা নেই।’ মৈত্রেয়ী বললেন, ‘তাহলে ধনসম্পদ দিয়ে আমি কী করব, যা আমাকে অমরত্ম দান করবে না, মহাশয় আমাকে বলুন তাহলে আমার কী প্রয়োজন?’ যাজ্ঞবল্ক্য প্রত্যুত্তরে মৈত্রেয়ীকে বললেন, ‘অহ! প্রিয়া, তুমি কী বলছ! বসো, আমি তোমাকে সব খুলে বলছি।’

মৈত্রেয়ী যাজ্ঞবল্ককে ব্যাখ্যা করে বলার জন্য অনুরোধ করলেন। মৈত্রেয়ী ও যাজ্ঞবল্ক্য এর সংলাপের উপসংহারে ভালবাসার আলোচনায় ভালবাসার নির্যাস ব্যক্ত হল, যাতে ভালবাসা আত্মা এবং পরমাত্মার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ‘দেখ, স্বামীকে ভালবাসলেই একজন প্রিয় স্বামী পাওয়া যায় না, স্বামীর আত্মার প্রতি ভালবাসা থেকেই একজন প্রিয় স্বামী লাভ করা যায়। পত্নীকে ভালবাসলেই একজন প্রিয়া পত্নী পাওয়া যায় না, পত্নীরর আত্মার প্রতি ভালবাসা থেকেই একজন প্রিয়া পত্নী লাভ করা যায়। একজনের প্রয়োজন হয় দর্শন, শ্রবণ, ধ্যানের সাহায্যে আত্মাকে উপলব্ধি করা। এ বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তাভাবনা করছো?’

মৈত্রেয়ী: ‘একজন দর্শন, শ্রবণ, ধ্যানের সাহায্যে আত্মাকে উপলব্ধি করতে পারে। তার কাছেই একমাত্র সারা পৃখিবী জ্ঞান অর্জন করা যায়।’ (৮)

যাজ্ঞবল্ক্য পূর্বাশ্রম ত্যাগ করার পর মৈত্রেয়ীও সন্ন্যাসজীবন গ্রহণ করেন। তিনি লোকজনকে আধ্যত্মিক জ্ঞানদানে ব্রতী হন। ‘মৈত্রেয়ী উপনিষদ’উদ্গাতা হিসাবে তিনি প্রশংসিতও হন। মৈত্রেয়ী বৈদিক ভারতে নারীদের শিক্ষালাভের সুযোগ এবং নারীদের দার্শনিক জ্ঞান লাভ সম্বন্ধেও অভিমত ব্যক্ত করেন। একজন বুদ্ধিদীপ্তা নারী হিসাবে তাঁর সম্মানার্থে ভারতে তাঁর নামে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়,নারী ঋষি মৈত্রেয়ীর নামে নতুন দিল্লিতে একটি কলেজ স্থাপিত হয়েছে। তামিলনাড়ুতে গড়ে উঠেছে মৈত্রেয়ী বৈদিক গ্রাম।(৯)

বৈদিক যুগের অন্যতমা নারী ঋষি গার্গী (জন্ম খৃষ্টপূর্বাব্দ ৭০০)। তিনি ঋষি বাচাক্নুর কন্যা। তাঁর পুরো নাম গার্গী বাচাক্নাবি। তিনি প্রাচীন ভারতের একজন দার্শনিক। বৈদিক সাহিত্যে তিনি প্রকৃতবাদী দার্র্শনিক সম্মানীয়া ও ব্রহ্মবাদিনী হিসাবে পরিচিতা। বৃহদারণ্যক উপনিষদে দেখা যায়, বিদেহের রাজা জনক আয়োজিত ‘ব্রহ্মজ্ঞান’ নামে দার্শনিক বিতর্কে গার্গী ছিলেন অন্যতমা অংশগ্রহণকারিনী। এই বিতর্কে যোগদান করে তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেন। প্রখ্যাত প্রখ্যাত পণ্ডিতরা নীরব থাকলেও গার্গী যাজ্ঞবল্ক্যকে নানা প্রশ্নে জর্জরিত করেন। তিনি যাজ্ঞবল্ক্যকে আত্মা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, ‘একটা স্তর, উপরে আকাশ নিচে জমিন। স্তরটা জমিন ও আকাশের মাঝে অবস্থিত, যা নির্দেশ করে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতীক হিসাবে, সেই স্তর কোথায় অবস্থিত?’

প্রত্যুত্তরে যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, ‘শূন্যে’। গার্গী তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি তাঁকে আরো আরো প্রশ্ন করলে একসময় যাজ্ঞবল্ক্য রেগে গিয়ে বলে উঠেন, ‘হে গার্গী, আর বেশি প্রশ্ন করো না, তাহলে তোমার মাথা খসে পড়ে যাবে!’ যাজ্ঞ্যবল্ক্যের কথায় গার্গী পরবর্তীতে স্বীকার করেন,ব্রহ্মবিদ্যায় যাজ্ঞবল্ক্যকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না।(১০)

নারী ঋষি ঘোষার কথা বলতে গিয়ে বলতে হয় তিনি ছিলেন ঋঝি দীর্ঘতামসের প্রপৌত্রী আর কাক্ষিবানের কন্যা। তারা দু’জনেই অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের উদ্দেশ্যে স্তুতি জ্ঞাপন করে গান ও স্তোত্র রচনা করেন। ঘোষা দুটো স্তোত্রসম্মিলিত দশটা পুস্তকে স্তুতি স্তোত্র রচনা করেন। প্রত্যেকটি স্তোত্রে ১৪টি করে সূক্ত তিনি রচনা করেন। অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের উদ্দেশ্যে স্তুতি জ্ঞাপন করে গান ও স্তোত্র রচনা করেন। দ্বিতীয়টিতে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি আর আশার কথা এবং তাঁর বিবাহিত জীবনের আকাঙ্খার কথাও তুলে ধরেছেন।(১১)

বৈদিক যুগে আরো অনেক বুদ্ধিমতি ও আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারিনী নারীর সন্ধান পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে অনসূয়া এমন একজন সত্যবতী নারী, যিনি তাঁর ভক্তিশ্রদ্ধার বলে একজন ঋষির অভিশাপে মৃতপ্রায় কৌশিকা ব্রহ্মাণকে পুনর্জীবিত করতে সক্ষম হন। তিনি একজন খ্যাতিমান ঋষিকে তাঁর আধ্যত্মিক শক্তির সাহায্যে পুনর্জীবিত করেছিলেন। অনসূয়া ঋষি অত্রীর পত্নী ছিলেন। অনসূয়ার মাতা ছিলেন স্বয়ম্ভুবা, আর পিতা কর্দম মুনি। অনসূয়ার খ্যাতি বৈদিক যুগের একজন ভক্তিমতী সাধিকা হিসাবে। বৈদিক যুগের প্রাথমিক অবস্থায় মেয়েদের শিক্ষালাভের বিষয়ে বিধিনিষেধ ছিল না। ছাত্রজীবন ব্রহ্মচর্য নামে অবহিত হতো। সেই যুগে অনেক মন্ত্রদ্রষ্টা নারী ঋষির সন্ধান পাওয়া যায়, যাঁদের কথা আগেও বলা হয়েছে। জুহ, শাশ্বতী, মেধা, নিষৎ, অদিতি, সবিতা, শিক্তা প্রমুখ মন্ত্রদ্রষ্টা নারী ঋষি।

এসব নারী ঋষির নাম উল্লেখের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, তৎকালীন বৈদিক ভারতের নারী শিক্ষার ব্যবস্থা ও বিদ্যানিকেতন ছিল। সে সময় মেয়েরা ব্রহ্মচর্যাবস্থা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হত না।(১২) বিবাহকালে মেয়েরা তাদের পছন্দমত স্বামী নির্বাচন করার স্বাধীনতা ভোগ করত। এই স্বাধীনতা কেবল যে রাজকন্যাগণই ভোগ করতে পারতো তা নয়, সমাজের যে কোন শ্রেণির শিক্ষিত নারীমাত্রই এই সুবিধা ভোগ করতো। ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলে বলা হয়েছে, ‘হে বলবান ইন্দ্র! যেমন আকাঙ্খাবতী পত্মী আকাঙ্খাবান পতিকে প্রাপ্ত হয়, তেমনি মেধাবীগণের স্তুতি তোমাকে স্পর্শ করে।’ (১৩) এবং ‘যে স্ত্রীলোক ভদ্র, যার শরীর সুগঠন, সে অনেক লোকের মধ্য হতে নিজের মনের মত প্রিয় পাত্র কে পতীত্বে বরণ করে।’ (১৪)

ধর্মীয় কার্যাবলীতে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। নারী ও পুরুষ একসঙ্গে যজ্ঞকার্য সম্পাদন করত, এ বিষয়ে ঋগ্বেদে প্রমাণ রয়েছে, ‘হব্যপ্রদায়ী যজমান, হব্যপ্রদায়ী অধ্বর্যু প্রভৃতির সাথে ইন্দ্রকে স্বপ্রদত্ত হব্য দ্বারা অর্চনা করেন, ইন্দ্র তৃষিত মৃগের ন্যায় দ্রুতবেগে যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হবেন। হে উগ্র ইন্দ্র! মর্তহোতা, স্ত্রোত্রাভিলাসী দেবতাগণকে স্তব করে স্ত্রী-পুরুষে যজ্ঞ নিষ্পন্ন করেছেন।’ (১৫)

নারী সেযুগে পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে বেদচর্চা করতেন। অপালা, ঘোষা, বিশ্বম্ভরা, লোপামুদ্রা, বিশাখা, প্রভৃতি নারীরা বৈদিকযুগের আদি পর্বে বৈদিক শাস্ত্রে বিদূষী হিসাবে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। বিবাহের ক্ষেত্রে নারীর স্বামী নির্বাচনের এবং মতামত প্রকাশের অধিকার ছিল। শস্ত্র বিদ্যাতেও নারীরা পারদর্শিতা লাভ করতেন, যুদ্ধেও যোগদান করতেন। উদাহরণস্বরূপ, বৈদিক কালের এক যুদ্ধে একজন খ্যাতনাম্নী নারী সেনাপ্রধান ছিলেন মুদ্গলনি। নারীরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁদের স্বামীর সঙ্গিনী হতেন। ভারতীয় নারী শুধুমাত্র আর্থিক নয়, বরং পারমার্ধিক প্রগতির দিকেই অগ্রসর হতে চেয়েছেন বৈদিক যুগ থেকে। ঋদ্বেদে নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা ব্যক্ত হয়েছে: ‘পত্নী ও স্বামী এক এর সমান সমান অর্ধাংশ সব কাজ, ধর্ম ও নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে।’ (১৬) ফলে বৈদিক যুগের ঋষির পত্নীরা সহ প্রজ্ঞাবতী, তাপসী, ব্রহ্মবাদিনী নারীরা ঋষিকা হওয়ার অধিকারিণী হন। @


তথ্যসূত্র:
(১) বেদ: Wikipedia, the free encyclopedia
(২) The equals of Men by Nandita Krishnan
(৩) In the translation of the Sanskrit text of the Rigveda by Ralph T.H.Griddith(1896),
(৪) ঋগ্বেদ: লোপামুদ্রা।। আক্ষেপ: অনুবাদ: সুশীলকুমার দে: হাজার বছরের প্রেমের কবিতা--- অবন্তী সান্যাল, পৃষ্ঠা---৪১, প্রকাশক: বিশ্ববাণী, কলকাতা--৯)
(৫) Wikipedia, the free encyclopedia
(৬)বৃহদারণ্যক উপনিষদ 
(৭) The equals of Men by Nandita Krishnan 
(৮) মৈত্রেয়ী ও যাজ্ঞবল্ক্যের সংলাপ: বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২.৪.২-৪ (৯) Wikipedia, the free encyclopedia 
(১০) The equals of Men by Nandita Krishnan 
(১১) The equals of Men by Nandita Krishnan 
(১২) অথর্ববেদ ১১/৫) 
(১৩)ঋগ্বেদ, ১/৬২/১১ 
(১৪)ঋগ্বেদ, ১০/২৭/১২) 
(১৫)ঋগ্বেদ, ১/১৭৩/২) 
(১৬) ঋদ্বেদ ৫.৬১.৮

1 comment:

  1. ভালো লেখা। আমার কৈশোরে পড়া 'হাজার বছরের প্রেমের কবিতা' আজ হারিয়ে গেছে। আপনার লেখায় প্রকাশকের নাম দেখে ফোন করলাম। বললেন--আউট অফ প্রিন্ট!
    আহা! তাতে ওল্ড টেস্টামেন্ট, বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে ধর্মকীর্তির চৌপদী, পঞ্চশিখ গন্ধর্বের গান, গ্রীক কবিতা থেকে অনুবাদ--কত কি ছিল।

    ReplyDelete