ধারাবাহিক - সোমঙ্কর লাহিড়ী
Posted in ধারাবাহিক
ধারাবাহিক
পায়ের শব্দ
সোমঙ্কর লাহিড়ী
৮
ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে, চেষ্টা করেও সেখান থেকে আওয়াজ বেরচ্ছে না, একটা ফ্যাসফ্যাসে গলায় অ্যান্ডি যখন বিল্ডিং সিকিয়োরিটির লোকটার সামনে দাঁড়িয়ে উপরে নিজের ফ্ল্যাটের দিকে হাত দেখিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছিল সেই লোকটার ও বোঝার উপায় ছিল না যে অ্যান্ডি কি বলছে। কিন্তু একই বিল্ডিঙের বাসিন্দা আর দারোয়ান, কিছুটা তো তাকে করতেই হবে, তাই সেও হন্তদন্ত ভাবে জিজ্ঞাসা করল,
কি হয়েছে স্যার? কি ব্যাপার? একটু বলুন।
অ্যান্ডিকোনক্রমে গলা দিয়ে আওয়াজ বার করে বলল,
আমার ফ্ল্যাটে একটা লোক।
লোক আপনার ফ্ল্যাটে? কী করে হবে? আমি তো স্যার কাউকে যেতে দেখিনি।
আমায় মেরে ফেলতে চেয়েছিল, প্লীজ আমায় বাঁচাও, কিছু একটা ব্যবস্থা করো।
আপনি স্যার এখানে বসুন, আমি দেখছি।
না, তুমি এখনে থাকো আমার সাথে। কাউকে পাঠাও উপরে।
আপনি কিচ্ছু ভাববেন না স্যার, এখানে কেউ আপনাকে কিছু করতে পারবে না। আমরা এখানে অনেকে রয়েছি স্যার।
সিকিয়োরিটির লোকটা গলা তুলে দুলালদা বলে কাউকে ডাকল। একটা মাঝারি চেহারার লোক এসে দাঁড়াল, চেহারাটা আর যাই করুক ভরসা দেয় না। সামনের লোকটা তাকে বলল,
তুমি একটু স্যারের কাছে থাকো তো আমি স্যারের ফ্ল্যাটটা দেখে আসি। কে নাকি ভেতরে ঢুকেছে স্যার বললেন।
অ্যান্ডি বলল,
যে লোকটা ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল মিনিমাম ছ’ফুট। তাগড়া। আর ক্ষ্যাপাটে। তুমি একা যেওনা। তোমাকে মেরে দিলে কিন্তু কিছু করতে পারবে না।
নেশাখোর বখাটে নচ্ছার একটা লোক, হতে পারে নামজাদাআর বড়ো একটা ফ্ল্যাটের মালিক, তা সে এখন যে নেশার ঝোঁকে কথা বলছে না সেটা সে বুঝবে কি করে? তাই প্রথম সিকিয়োরিটির লোকটা সেই দুলালকে পাহারায় রেখে সরেজমিনে তদন্ত করতে গেল টপফ্লোরে। লিফটে।
বেশ অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পরেও যখন প্রথম লোকটা নীচে এলো না, তখন অ্যান্ডির আতঙ্ক বাড়তে লাগল। দুলালের দিকে তাকিয়ে আতঙ্কিত গলায় বলল, তোমাদের আর কোনো লোক নেই?
না স্যার এখন তো দিনের বেলা। আমরা দুজন খালি গেটটা দেখি যাতে বাইরের অচেনা লোক বা সেলসম্যান ট্যান কেউ না ঢোকে। রাতে স্যার মোট পাঁচজন থাকে, তখন আমরা থাকি না।
এত বড়ো কমপ্লেক্সে তোমরা মাত্র দুজন?
না স্যার, আপনি চিন্তা করবেন না। দরকারে সামনের ফ্ল্যাটের ওদের আমরা ডেকে নিই, ওরাও ডাকে। কিন্তু সেই রকম ঝামেলা তো স্যার আজ অবধি কোনোদিন হয় নি, তাই।
দুলাল, ভাই তুমি গিয়ে সামনের কমপ্লেক্সের লোকেদের একটু খবর দাওনা, তোমার সাথে যে ছিল সে তো অনেকক্ষন গেছে উপরে, তার তো চলে আসার কথা তাই না?
দুলাল ও বোঝে যে কথাটা অ্যান্ডি ভুল কিছু বলেনি।
আপনি তবে একটু এখানে দাঁড়ান।
অ্যান্ডির আতঙ্ক বেড়ে ওঠে সে বলে,
না আমি তোমার সাথেই ওদের ডাকতে যাবো।
কি বলছেন স্যার!! আপনি এই ভাবে.....!!
কিছু হবে না, তুমি চল এখুনি।
দুলাল গেট অবধি যেতে যেতেই কমপ্লেক্সের একজন বাসিন্দাকে দেখতে পেয়ে বলে,
স্যার আপনি একটু এনার সাথে থাকুন না, আমি সামনের কমপ্লেক্স থেকে ওদের সিকিয়োরিটিদের একটা খবর দি।
যে ভদ্রলোকের কাছে দুলাল অ্যান্ডিকে থাকতে অনুরোধ করল, তিনি অ্যান্ডি ও তার কার্য কলাপ সম্পর্কে বিলক্ষন ওয়াকিবহাল তাই ভুরু টুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল,
এক্সজ্যাক্টলি কি হয়েছিল? ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড।
অ্যান্ডি তাকে পুরো ব্যাপারটা বলে। ঘটনার থেকে বেশ খানেকক্ষন হয়ে যাওয়ার পরেও ওর গলার কাঁপন বুঝিয়ে দেয় যে ও শকড।
লোকটা শুধু বলে,
হাউ স্ট্রেঞ্জ! বিশ্বাস করেছে বলে মনে হয় না।
দুলাল ফিরে আসে সাথে আরো একটি সিকিয়োরিটির লোককে সাথে নিয়ে। তারপরে দুজনে উপরে যায়।
প্রথম গার্ডটিকে পাওয়া যায় অ্যান্ডির ফ্ল্যাটের সামনে, ফ্ল্যাটের দরজা থেকে বেরিয়েই যেন লোকটি মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেছে। ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ। লোকটার মাথার চারপাশে মেঝেতে জমে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত। অজ্ঞান ও আহত মোক্ষম রকমে।
খবরটা সারা কমপ্লেক্সে ছড়িয়ে গেল নিমেষে। পুলিস এলো প্রায় একঘণ্টা বাদে।
প্রথম সিকিয়োরিটির গার্ডটির কপাল ভালো যে কমপ্লেক্সের বাসিন্দা চারজন ডাক্তারের তিনজন বিভিন্ন কারনে সেদিন তাদের নিজ নিজ ফ্ল্যাটে ছিলেন। তাঁদেরই একজন তাকে সুস্থ করে তোলার ব্যবস্থা করলেন।
এস আই অলক সানা অ্যান্ডির ব্যাপারটা সম্পর্কে সবই জানত তাই অ্যান্ডিকে তোয়ালে পরা অবস্থায় দেখে একটু মুচকি হেসে বলল,
ফ্ল্যাটে গিয়ে চেঞ্জ করে নিন, না কি এখনো ভয় করছে?
না মানে।
মানে আবার কি? এত লোকের সামনে এই রকম গামছা পরে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি? আপনার এত নাম ডাক সব যে ধুলোয় মিশে যাবে।
ফ্ল্যাটটা ভেতর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। তাই ঢুকতে পারছি না।
তা ডুপ্লিকেট চাবি টাবি কিছু?
না মানে আমার দিদি আর জামাইবাবুর কাছে আছে।
এবারে আশেপাশের বেশ কিছু ফ্ল্যাট ওনার হেসে ফেলে, মুখ টিপে।
তা এক কাজ করুন, দিদিকে আর জামাইবাবুকে জানান ফোন করে যে আপনি আপনার ফ্ল্যাটের সামনে গামছা পরে দাঁড়িয়ে আছেন। আর হ্যাঁ একটা সিকিয়োরিটির লোক মাথায় বাড়ি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে এখানে পড়েছিল সেটাও জানাবেন। ওনাদের সাথেও একটু আমাকে কথা বলতে হতে পারে। এখানে আসতে বলে দিন।
না,
কি না? আপনার কি মশাই না দিয়ে ছাড়া কথা বেরয় না মুখ দিয়ে।
ফোনটা ফ্ল্যাটে।
এই নিন আমার ফোন থেকে ফোন করে দিন।
ন.. এবারে ন শুনেই এস আই চোখ কটমট করে তাকায় অ্যান্ডির দিকে। অ্যান্ডি ঢোঁক গিলে বলে,
নম্বরটা মনে নেই।
হোপলেস, এদের দেয় কে? আপনি মশাই কি করে আপনার দিদির কাছ থেকে চাবি জোগাড় করবেন সেটা আপনি ঠিক করুন। বাই দিস টাইম আমি এই লোকটাকে জেরা করব সুস্থ হয়ে উঠলে। তার মধ্যে যদি ওনারা চাবি নিয়ে আসেন ভালো না হলে আমি কিন্তু দরজা ভেঙ্গে ঢুকে আপনার ফ্ল্যাটের ভেতরটা দেখব। আর আপনারা এলাকা ফাঁকা করুন।
জমা হওয়া বাসিন্দারা বুঝল, ত্যাঁদড় পুলিস, তাই একটু নিরাপদ দুরত্বে সরে গেল।
খানেক বাদে ডাক্তারবাবুর দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করলেন,
একে কিছু প্রশ্ন করতে পারি?
হ্যাঁ তবে বেশী চাপ টাপ দেবেন না।
আপনি থাকুন সামনে।
হ্যাঁ, আছি।
প্রথম সিকিয়োরিটির লোকটাকে অলক সানা প্রশ্ন করল,
নাম?
পল্লব দাস।
বাবার নাম.... জেরা শুরু হয়ে গেল।
অ্যান্ডি ভেবে পেল না কি করে কাঞ্চন দাকে খবরটা দেবে।
কথায় আছে ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়, অ্যান্ডি সেই মুহুর্তে ভাগ্যবান কিনা সেটা প্রশ্নের সামনে পড়তেই পারে। কিন্তু তার বোঝাটা মিডিয়া বয়ে দিল। কোথা থেকে ফোন গেছিল কে জানে তিনটে লোক কিছুক্ষনের মধ্যে আবার অ্যান্ডিদের কমপ্লেক্সের সামনে গাড়ি থেকে নেমে ক্যামেরা ও বুম ফিট করে বকর বকর শুরু করে দিল। শেষ বিকেলে ভারাক্রান্ত মনে চা নিয়ে টিভির খবর শুনতে গিয়ে কাঞ্চন আর অলি দুজনেই আবার দেখল অ্যান্ডিদের কমপ্লেক্স আবার খবরে। মনদিয়ে শুনে বুঝল অ্যান্ডিও খবরে। অগত্যা।
পুরো ঘটনা অলক সানা যখন শুনে বুঝে শেষ করেছে, আর অ্যান্ডির ফ্ল্যাটের দরজা বন্দুকের কুঁদো দিয়ে ভাঙবে কি না ভাবছে সেই সময়ে কাঞ্চন ঘোষদস্তিদারএসে উপস্থিত হল। পুরো ব্যাপারটা দেখে আবার চাবির জন্য বাড়িতে ফোন। এবারে অলির বদলে এলেন কিরন ঘোষ দস্তিদার।
ছোটোখাটো চেহারা, পরিষ্কার গায়ের রং, ব্যাকব্রাশ করা চুলের মধ্যে কালো চুল এখনো পাওয়া যায়। চোখে একটা রিমলেস যার ডাঁটি দুটো আর ব্রীজটা হিংসুটে লোকেরা বলে সোনার জল করা।
লোক চরানো যাদের পেশার অন্যতম দিক তারা লোকদেখেই বুঝতে পারে দম কত। তাই কিরন ঘোষকে দেখে এস আই অলক সানা খুব একটা ঘাঁটানর দিকে গেলনা। ফ্ল্যাটের ভেতরে ঢুকে পুরো ব্যাপারটা আবার করে অ্যান্ডিকে দিয়ে ঘটিয়ে নিয়ে সেটা নিজের মোবাইলে রেকর্ড করে নিল সানা। সারা ঘরের অবস্থা খুব ডিটেলে মোবাইলে তুলে নিল। তারপরে বলল,
আমরা আমাদের দিক থেকে যা যা করনীয় তা করছি। তবে আপনাকে কিন্তু সাবধানে থাকতে হবে। আর কোথাও গেলে, মানে শহরের বাইরে কোথাও গেলে আমাদের জানিয়ে যাবেন। ঠিক আছে?
অ্যান্ডি ততক্ষণে তোয়ালে বদলে একটা কালো টি শার্ট আর একটা স্পোর্টস স্ল্যাক্স পরে নিয়েছে। কিন্তু সে যে ভেতরে ভেতরে ওই ঘটনার অভিঘাত থেকে বেরতে পারেনি সেটা ওর মুখ চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। হাতের কাঁপুনিও হচ্ছে থেকে থেকে। তবে সেটা অনেকটা সময় ড্রাগ না নেওয়ার জন্য কিনা সেটা বলা যাচ্ছে না।
পুলিস তার বাকী কাজ, যেমন ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া। গোটা ফ্ল্যাটের ও তার সিঁড়ি ছাদ ইত্যাদির ছবি নেওয়া, এই সব শেষ করে চলে যাওয়ার পর। কিরন ঘোষ তাঁর ছেলেকে বললেন,
কাঞ্চন তুমি গাড়িটা নিয়ে চলে যাও বাড়িতে আর ড্রাইভারকে এখানে আসতে বলে দাও আমার ফিরতে রাত হতে পারে।
তারপরে অ্যান্ডির দিকে ফিরে বললেন,
ইয়াং ম্যান আজ এর পরের প্রোগ্রাম কি? না কি সারাদিন রাত বসে বসে ভয়ে কাঁপবে?
জেঠু, আমি, মানে আমি ভাবতে পারছি না যে কি করে....
তুমি তো ভাবতে পারো এটাই আমার কাছে নিউজ। ভাবতে পারলে নিজেকে এই ভাবে খাদের ধারে এনে ফেলতে পারতে? কি জানি।
না মানে আমি ইচ্ছে করে....
শোনো অনি, তোমাকে আমি আর তোমার দিদি যখন রাস্তা থেকে তুলে আনি তখন থেকেই আমার কাছে এটা পরিষ্কার যে তুমি নেশাটা ক্যাজুয়ালি কর না। তুমি নেশার দাসত্ব কর। তাই আমি অলিকে আর কাঞ্চনকে বলে তোমায় রিহ্যাবে পাঠিয়েছিলাম সেখানকার সাইক্রিয়াটিস্টের সাথে আমি পার্সোনালি কথা বলেছিলাম। সেখানে তোমার বেশ কিছু ডিসঅর্ডারের কথা উনি আমাকে বলেন। হোমোফবিয়া ইজ ওয়ান অফ দেম।
তিনি একটু থামলেন।
অ্যান্ডি কি জবাব দেবে ভেবে পেলনা।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে তোমার এই ফোবিয়ার কথা বাইরের লোক জানল কি করে? কারণ আজকে তোমার উপর যে অ্যাটাকটা হয়েছে সেটার প্যাটার্নটা ফলো করলে এটাই সামনে আসে। তারমানে আমাদের ধরে নিতে হবে তোমার বিরুদ্ধে যে বা যারা রয়েছে তারা এই খবরটা জানে। তোমার কোনো কমেন্টস আছে এতক্ষন আমি যা ব্ললাম তাঁর উপরে?
অ্যান্ডি মাথা নাড়ল।
এখন তুমি কি ভাবে কোপআপ করতে চাও? হোয়াট উইল বি ইয়োর স্ট্র্যাটেজি হেন্সফোর্থ?
অ্যান্ডি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে।
তুমি জানো তোমার এখন ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ঠিক কত?
না।
তোমার সাথে যে ইমপ্রেসেরিওর এগ্রিমেন্ট ছিল সেটা ক্যান্সেল হয়ে যাওয়ার জন্যে তারা তোমার কাছে থেকে কিছু ড্যামারেজ চার্জ করেছে কি না সেটা জানা আছে?
না।
তুমি কি না ছাড়া অন্য শব্দ বলতে পারো না?
মানে আমি ঠিক ঐ সব ব্যাপার দেখা শোনা করতে পারি না তো, তাই কাঞ্চনদাই ঐ সব সামলায়।
আর তুমি দুটো গান গেয়ে আর নেশা করে সময় কাটাও? ব্যাস! এই তোমার ক্যালিবার? আবার নিজেকে গ্রেট, সুপার এইসব বলে বেড়াও?
অ্যান্ডি মাথা নীচু করে।
শোনো হে সুপারস্টার না রকস্টার হোয়াটএভার। কাল থেকে নো শয়তানি, ঠিক আছে? আর যদি ভেবে থাকো আমি তোমার সাথে মস্করা করছি। রাতে শুধু একবার নিজের ফ্ল্যাটের দরজার বাইরে পা রাখার চেষ্টা করে দেখ। কাল তোমাকে আমি রি হ্যাবে নিয়ে যাবো। নিজে। তারপরের ব্যাপার সেখানে গিয়েই ঠিক করব। বাপে মায়ে খেদিয়ে দিয়েছে বলে সাপের পাঁচ পা দেখা তোমার বার করছি। আমি কাঞ্চন নই। ওর বাবা। খেয়াল থাকে যেন।
কিরন ঘোষদস্তিদারঅ্যান্ডির ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে অ্যান্ডির সাধের বাথরুমটা বাইরে থেকে তালা দিয়ে দিলেন। আর ড্রাইভারকে ডাকিয়ে অ্যান্ডির জন্য একটু রাতের খাবার কিনিয়ে আনিয়ে রাখলেন।
রাতের খাবার বলে যে জিনিসটা ওকে খেতে হয়েছে সেটা আর কিছুই না কোয়ার্টার পাঁউরুটি আর প্যাকেটের দুধ। রান্নাঘর ফ্ল্যাটের কোনদিকে সেটাই জানা নেই ভালো করে তো সেখানে খাবার কি আছে তার খোঁজ করাও বৃথা। নেশা করতে না পেরে অ্যান্ডির এমনিতেই শরীরের ভেতরে কেমন একটা অস্থিরভাব হচ্ছিল। তাঁর উপরে নিদেনপক্ষে একটু সিগারেট খাবে তাও নেই। ভয়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে ফ্ল্যাটের দরজা খুলবে তাও পারছে না।
এমন সময় ফোন বেজে উঠল। ফাঁকা ফ্ল্যাটে একা, তায় গভীর রাত, আর দুপুরে ঐ রকম একটা ঘটনা। এমন অবস্থায় মোবাইলের রিং টোন যত সুন্দরই হোক না কেন পিলে চমকাতে বাধ্য।
অজানা নম্বর, আবার ভয়, ফোন ধরতে অন্যদিকে একটা পুরুষ কন্ঠ,
কুছ চাহিয়ে? ভেজ দুঁ ক্যা?
কিছুক্ষণ আগেই কিরন ঘোষের সব সাবধানবানী মাথায় উঠে গেল, অ্যান্ডি বলল,
মুকেশ? শালা আভী ভেজ।
তারপরেই মনে হল, গলাটা সত্যি মুকেশের তো? আননোন নম্বর থাকে ফোন করল কেন? তারপরেই সেই অমোঘ কথাটা মনে পড়ে গেল। যে কেউ আসলেই অ্যান্ডিকে দরজা খুলতে হবে।
কাঁপতে কাঁপতে কললিস্ট থেকে সেই নম্বরটা বার করে অ্যান্ডি আবার ফোন করল এই জানাতে যে ওর কিছু লাগবে না আজরাতে।
নম্বরটা বেশ কিছুক্ষন বাজার পরে সেই গলাটাই শোনা গেল, পরিষ্কার বাংলায় বলছে,
আমাকে ছেড়ে কতদিন তুমি থাকতে পারবে অ্যান্ডি? তুমি মানতে পারছ না কেন, যে তুমি শুধু আমার? আমাদের মিলন হবেই। তুমি যতোই পালাতে চাও, মনে রেখ তুমি আমার, আর আমি তোমার। এটাই সত্যি।
লাইনটা কেটে গেল।
0 comments: