প্রচ্ছদ নিবন্ধ - অভীক চৌধুরী
Posted in প্রচ্ছদ নিবন্ধ
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
ভারতবর্ষে ব্যাঙ্কিং সেক্টর ভবিষ্যৎ
অভীক চৌধুরী
অতি সম্প্রতি আমাদের দেশের জনসাধারণের মধ্যে বিশেষ করে চাকুরীজীবি, অবসরপ্রাপ্ত মধ্যবিত্ত যাদের সারাজীবনের সঞ্চয়ের সিংহভাগ গচ্ছিত থাকে সরকারি ব্যাঙ্কগুলোতে তারা আজ সত্যি প্রচণ্ড দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। সময়মতো তারা তাদের টাকা সুদ সমেত ফেরত পাবেন কিনা এ বিষয়ে আজ শিক্ষিত মানুষ ও সন্দিহান। তাদের মাথাব্যথার কারণগুলো একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক ---
১) ব্যাঙ্কগুলিতে স্থায়ী আমানতের ওপর সুদ পর্যায় ক্রমে কমতে কমতে একদম তলানিতে এসে ঠেকেছে।
২) দেশের বৃহত্তম সরকারি ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক সহ প্রায় সমস্ত সরকারি ব্যাংকে লোকসানের মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়েই চলেছে।
৩) অনাদায়ী ঋণের পরিমান এতো বিশাল মাত্রায় বাড়ছে যে আজ ব্যাঙ্কগুলিতে বিশাল লোকসানের বোঝা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
৪) এছাড়াও বিশেষ করে সরকারি ব্যাঙ্ক গুলিতে এক শ্রেণীর কর্মী - অফিসারদের চূড়ান্ত অসহযোগিতা ও কর্ম বিমুখতা, দায়বদ্ধতার অভাব সাধারণ মানুষকে সরকারি ব্যাঙ্ক সম্বন্ধে বিরূপ মনোভাবে ইন্ধন জুগিয়েছে।
৫) সর্বোপরি সরকারি তরফে নানারকম বিভ্রান্তিমূলক ঘোষণা ও একশ্রেণীর মিডিয়ার নিকৃষ্ট অপপ্রচার মানুষকে সরকারি ব্যাঙ্ক বিরোধী হতে প্রচরিত করেছে।
অতি সম্প্রতি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে নীরবে ইতিহাসের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক জালিয়াতি (যার পরিমান আনুমানিক সতেরো হাজার কোটি টাকা) সমস্ত সরকারি ব্যাঙ্কের মেরুদণ্ডকে দুর্বল করে দিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সত্যি আজ ভারতবর্ষে সমগ্র ব্যাঙ্কিং সেক্টরের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে। এ বিষয়ে দেশে-বিদেশে এত রকম গবেষণা, অন্বেষণ, চুলচেরা বিশ্লেষণ, সরকারি -বেসরকারি স্তরে বিভিন্ন প্রস্তাব, আইন প্রণয়ন প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে যা নিয়ে বেশ কয়েকটি রামায়ণ-মহাভারত রচনা করা যাবে। সবিনয়ে বালি আমার সে যোগ্যতা বা ধৃষ্টতা কোনোটাই নেই I
আমাদের দেশে ব্যাঙ্কিং ব্যবসার আদিপর্ব থেকে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
* ভারতবর্ষের প্রথম ব্যাঙ্ক - ব্যাঙ্ক অফ হিন্দুস্তান ১৭৭০ সালে স্থাপিত হয় আর বিনাশ ঘটে ১৮২৯-৩২ সাল নাগাদ।
* কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন তার সময়ে একজন বিখ্যাত বহুমুখী কর্মযোগী। অনেক কিছুর সাথে তিনি ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক লিমিটেড স্থাপন করেন ১৮২৯ সালে, যার পরমায়ু ছিল মাত্র কুড়ি বছর। এরকম আরো অনেক ব্যাঙ্ক সেই সময় শুধু অকালে পাততাড়ি গুটিয়েছে তা নয়, হাজার হাজার পরিবারকে নিঃস্ব ভিখারীতে পরিণত করেছে।
* পূর্ব স্বাধীনতা পর্বে (১৯০৬-১৯৪৩) ভারতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিবর্তন ঘটে। একথা গর্বের সঙ্গে বলা যায় আরো অনেক কিছুর মতো স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া গোড়াপত্তন হয় আমাদের প্রিয় কলকাতাতেই। ব্যাঙ্ক অফ ক্যালকাটা (১৮০৬), ব্যাঙ্ক অফ বেঙ্গল (১৮০৯), ব্যাঙ্ক অফ বোম্বে (১৮৪০ ), ব্যাঙ্ক অফ মাদ্রাজ (১৮৪৩) মিলেমিশে বর্তমানের স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। ব্যাঙ্কগুলির কাজকর্মের নিয়ন্ত্রক হিসাবে ১৯৩৫ সালে আত্মপ্রকাশ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার।
* স্বাধীনতার পরেই সমগ্র ব্যাঙ্কিং ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তৈরি হয় ১৯৪৯ সালে নতুন আইন, যা এখন পরিবর্তিত ও সংশোধিত আকারে চালু।
*এতসব আইন ও নিয়ন্ত্রক ব্যবসার মধ্যেও অনেক ফাঁকফোকর থাকার জন্য দেশের মধ্যে এক সমান্তরাল নন-ব্যাঙ্কিং ব্যবসা চালু ছিল যাতে দীন-হতদরিদ্র খুইয়েছে তাদের খুদকুঁড়ো সামান্য ঋণের বিশাল পরিমান সুদ গুনতে।
*ব্যাঙ্ক গুলিকে প্রত্যক্ষভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ১৯৬৯ সালে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ হয় ১৪ টি ব্যাঙ্ক অধিগ্রহণ দ্বারা।
একটি যুগান্তকারী ইতিহাসিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তৎকালীন মোট ব্যাঙ্ক আমানতের প্রায় ৭০ শতাংশ এই ১৪ টি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ছিল যা সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে সারা দেশে ব্যাঙ্কের সংখ্যা শাখা নিম্নরূপ ---
***** সরকারি ব্যাঙ্ক -২৭, বেসরকারি ব্যাঙ্ক - ২২, বিদেশি ব্যাঙ্ক - ৪৪, R .R .B (গ্রামীণ ব্যাঙ্ক) - ৫৬, সমবায় ব্যাঙ্ক (শহর - ১৫৮৯), সমবায় ব্যাঙ্ক (গ্রাম) -৯৩৫৫০।
* মোট আমানতের পরিমান - ১০৬ লক্ষ কোটি টাকা প্রায়, মোট ঋণের পরিমাণ - ৭৭ লক্ষ কোটি
প্রথমেই যে কথা দিয়ে শুরু হয়েছে আবার সেখানেই একটু ফিরে তাকানো যাক। আজকাল বহুল প্রচারিত একটা শব্দ আমরা শুনে থাকি যেটা ব্যাঙ্কে N.P.A (NON PERFORMING ASSETS), ব্যাংকের বিপুল পরিমান অনাদায়ী ঋণ যার জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে লোকসানের পথে চলতে বাধ্য করেছে এবং ব্যাঙ্কের ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নচিহ্নের মুখে সেই অনাদায়ী ঋণের সংখ্যামান নিয়ে কিছু তথ্য দেখা যাক ---
**** বর্তমানে অনাদায়ী NPA ঋণের মোট পরিমান ১০.৩ লক্ষ কোটি টাকা যা মোট ঋণের প্রায় ১১.২ শতাংস। এর মধ্যে ২১ টি সরকারি ব্যাঙ্কের অবদান ৮.৯৭ লক্ষ কোটি টাকা আর ১৮ টি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অবদান ১.২৮ লক্ষ কোটি টাকা। দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক SBI এর ২.২৩ লক্ষ কোটি টাকা। নিয়ম অনুসারে ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের লাভের একটি নির্দিষ্ট অংশ অনাদায়ী ঋণ খাতে বরাদ্দ রাখতে হয় আর তাই করতে গিয়ে লাভের গুড় পিঁপড়ে খায়। আন্তর্জাতিক কিছু নিয়ম আরোপের জন্য অনেক কঠিন বেড়াজালের মধ্যে বাধা ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্ক সাধারণ মানুষের থেকে টাকা জমা নেয় বিনিময়ে সুদ দেয়, আবার ঋণ দেবার জন্য যে সুদ ব্যাঙ্ক পেয়ে থাকে তা আমানতে দেয় সুদের থেকে বেশি হলে তবে ব্যবসায়ে লাভ হয়। একটানা তিনমাস কোনো ঋণ (কৃষি ঋণ ছাড়া) সুদ জমা নাহলে তা সাধারণ ভাবে npa হয় ও তাতে আর কোনো সুদ পাওয়া যায়না। সাধারণত এভাবেই লোকসানের সৃষ্টি হয়। আর এভাবেই NPA (অনুৎপাদক সম্পদ) খাতে সংস্থান রাখতে গিয়ে ব্যাঙ্কগুলি লোকসানের পথে চলেছে। ক্রমশ লোকসানের বোঝা বাড়তে বাড়তে ব্যাঙ্কগুলি কি শেষমেষ দেউলিয়া হয়ে যাবে ? সাধারণ মানুষের গচ্ছিত টাকা তবে কি আদৌ সুরক্ষিত নয় ?
তাহলে উপায় ?
সম্ভাব্য কিছু কিছু প্রস্তাব ও আইন নিয়ে একটু দেখা যাক
**** বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী ঋণের ফলে বিশেষ করে সরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে মূলধনের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা পূরণের জন্য সরকার ২০ টি সরকারি ব্যাঙ্কে প্রায় ৮৮০০০ কোটি টাকার মূলধন যোগান দেবার কথা ঘোষণা করেছে যা ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে। ব্যাঙ্কগুলি নতুন ব্যবসা/শিল্প ক্ষেত্রে ঋণ দিতে সক্ষম হবে
*** আমাদের দেশে যেহেতু ব্যাংকের সংখ্যা প্রচুর তাই সরকার ও RBI তরফে বিভিন্ন প্রস্তাব গ্রহণ করার চেষ্টা চলছে যদিও আইন প্রনয়ণ ছাড়া সম্ভব নয়। RBI প্রস্তাব অনুসারে ব্যাঙ্কগুলোকে চারটি স্তরে ভাগ করা হবে -
**প্রথম স্তরে - দেশের ৩/৪ টি বৃহৎ ব্যাঙ্ক, দ্বিতীয় স্তরে - মাঝারি ব্যাঙ্ক, তৃতীয়া স্তরে - কিছু বেসরকারি, গ্রামীণ ও সমবায় ব্যাঙ্ক চতুর্থ স্তরে - ছোট বেসরকারি ও সমবায় ব্যাঙ্ক।
** নতুন ব্যাঙ্ক লাইসেন্স দেওয়া হবে ।
** ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোগত আকার ও আকৃতি পরিবর্তন করা হবে।
** দুই বা ততোধিক ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ, অলাভজনক ব্যাঙ্কের জন্য এটি প্রযোজ্য।
* ব্যাঙ্কগুলিতে সরকারি অংশীদারি ৩৩ শতাংস পর্যন্ত নামিয়ে আনা হবে ।
*** ঠিক এই মুহূর্তে একটি লোকসানে চলা ব্যাঙ্ক IDBI এর ৫১ শতাংস শেয়ার কেনার জন্য আর দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় সংস্থা ভারতীয় জীবন বীমা নিগম কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও এতে অনেক আপত্তির কারণ আছে।
*** কতকগুলি নতুন ব্যাঙ্ক খোলা হয়েছে যেমন পেমেন্ট ব্যাঙ্ক ও স্মল ব্যাঙ্ক। দেশের অগণিত মানুষজন যাদের রোজগার কম, শ্রমিক শ্রেণী, খুব ছোট ছোট ব্যবসায়ী ও কারিগররা এতে উপকৃত হবেন। এর ফলে বৃহৎ ব্যাঙ্কগুলিকে আর দেশের প্রত্যন্ত স্থানে শাখা অফিস খুলতে হবেনা। ইতিমধ্যে এরকম কয়েকটি ব্যাঙ্ক চালু হয়েছে। এভাবে দেশের সর্বত্র ব্যাংকের পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
**গায়ের জোরে সরকারি ব্যাঙ্কগুলোকে বেসরকারি না করে কি করে তা লাভজনক হয়ে ওঠে তার সদর্থক ব্যবস্থা নিতে হবে। **ইচ্ছাকৃত অনাদায়ী (WILLFUL DEFAULTER) ঋণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতাদের কোনো রং না দেখে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ও সমস্ত স্থাবর -অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। যে সব মহান পুরুষদের কালো টাকা বেনামে বিদেশি ব্যাংকে জমা আছে তাদের নাম জানার অধিকার আপামর দেশবাসীর আছে। সরকারের প্রতিশ্রুতির উপর আমাদের ভরসা রাখতে হবে।
****ব্যাঙ্কগুলিকে লাভজনক সংস্থায় পরিণত করতে অন্যতম প্রধান উপায় আধুনিকতম টেকনোলজির ব্যবহার। ব্যাঙ্কের Alternative delivery channel ( ADC ) অর্থাৎ ATM, INTERNET, MOBILE ইত্যাদি আধুনিকতম মাধ্যম যাতে সাধারণ মানুষ অভ্যস্ত হাতে পারে তার জন্য সর্বস্তরে প্রচার ও শিক্ষাদান প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই এ ব্যবস্থা শিক্ষিত সমাজের কাছে খুব জনপ্রিয়। বর্তমানে ব্যাঙ্কে শহরাঞ্চলের ৩০-৪০ % গ্রাহক এই প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত। ব্যাঙ্কে হাজির না হয়েও ঘরে বসে এখন ব্যাঙ্কের অনেক কাজ করা যায়-- একাউন্ট খোলা, বন্ধ করা, অন্য একাউন্টে টাকা পাঠানো, ইলেকট্রিক, ফোন ইত্যাদির বিল মেটানো সব কাজ বাড়িতে বসে কম্পিউটার ও মোবাইল ব্যবহার করে সম্ভব। শুধুমাত্র কিছু প্রাথমিক জ্ঞান ও সচেতনতা থাকলেই এই প্রযুক্তি ব্যবহারকরা খুবই সহজ।
*****এবং ব্যাঙ্কের যেকোনো শাখা অফিসে গেলেই দেখাযায় কর্মী সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অস্বাভাবিক কম কারণ অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের স্থলে নতুন নিয়োগ প্রায় বন্ধ। কাজেই সামান্য কাজ বা পরিষেবা ব্যাঙ্কে বিলম্বিত হয় যা গ্রাহক অসন্তুষ্টির অন্যতম কারণ। আধুনিকতম প্রযুক্তির সফল ব্যবহারে মানুষ অভ্যস্ত হলে ব্যাঙ্কের পরিষেবা লাভজনক হয়ে উঠবে। কোনো গ্রাহক যদি ব্যাঙ্কে উপস্থিত থেকে কোনো কাজ / লেনদেন করেন তবে মাথাপিছু খরচ প্রায় ২০০ টাকা আর তিনি ADC ( Alternative Delivery Channe) র মাধ্যমে এই কাজ / লেনদেন করলে খরচ ২০ টাকা। এভাবে ব্যাঙ্কে খরচ সংকোচন করা সম্ভব।
***** পূর্বে ব্যাঙ্কের যে কোনো শাখা অফিস খুলতে ৪০০০-৫০০০ বর্গফুট স্থানের / ঘরের প্রয়োজন ছিল, বর্তমানে মাত্র ১০০০-১৫০০ বর্গফুট পরিমিত ঘরেই ব্যাঙ্কের কাজ চালানো সম্ভব। এভাবেও অনেক খরচ কমবে I
****** অবশ্যই সরকারের সৎ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা না থাকলে কোনো কাজের সুফল পাওয়া যাবেনা, বেসরকারিকরণ কোনোভাবেই আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলদায়ক নয়।
***** ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নিয়ে যারা ব্যবসা করেন, শিল্প গড়েন তাদের জন্য ঋণ প্রদানের নীতি সহজ ও সফল রূপায়ণ প্রয়োজন, দেশের কৃষিক্ষেত্রে সহানুভূতির সঙ্গে ঋণ প্রকল্প তৈরি করতে হবে। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরে উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে অসাধু লোকেদের হাতে কোটি কোটি টাকা না যেতে পারে। ব্যাঙ্কে নিয়মিত সুদসহ ঋণের কিস্তি জমা পড়লে ব্যাঙ্কগুলিও লাভের মুখ দেখবে I
** একটি প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সমীক্ষা করে দেখেছে ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষ আমেরিকা ও চীনের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে পরিণত হবে I
** আমাদের দেশে বিজয় মালিয়া ও নীরব মোদির মতো আরো অসংখ্য ভদ্রলোক বার বারেই সমাজের উচ্চতম প্রভাবশালী অংশের সাথে হাত মিলিয়ে ব্যাঙ্কগুলি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি করে এখনো পার পেয়ে যাচ্ছে নাহলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ আরো অনেক বেশি পাকাপোক্ত হতো। এত সব আর্থিক জালিয়াতির বোঝা মাথায় নিয়েও আমাদের দেশ যে বিশ্বের অর্থনীতিতে অন্যতম বৃহৎ শক্তি হিসাবে পরিণত হাতে চলেছে এর জন্য দেশের সরকারি ব্যাঙ্কগুলির অবদান অনস্বীকার্য। , এমনকি ২০০৮ সালে আমেরিকার চতুর্থ বৃহত্তম আর্থিক সংস্থা লেহম্যান ব্রাদার্স এর ভরাডুবিতে যখন সারা বিশ্বের ব্যাঙ্কগুলির টালমাটাল অবস্থা তখন ভারতে ব্যাঙ্কগুলির গায়ে কোনো আঁচ লাগেনি। বছর দুয়েক আগে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সময় ব্যাঙ্কগুলিতে যে অপরিসীম ধৈর্য, অতিমানবীয় পরিশ্রম, অতুলনীয় আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে গ্রাহক পরিষেবার নিদর্শন আমরা পেয়েছি তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে।
আমরা আশাবাদী এই ২০১৮ সাল্ থেকেই ব্যাঙ্কগুলি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এবং ২০২৫-২৬ সালের মধ্যেই পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব্যাঙ্কিং শক্তিতে পরিণত হবে। সরকারি ব্যাঙ্ক সম্বন্ধে কোনোরকম বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে কান না দিয়ে নির্ভয়ে টাকা রাখুন, আপনার আমানত সুরক্ষিত থাকবে, অবশ্যই নামি বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিও যথেষ্ট নিরাপদ। শুধুমাত্র আর্থিক প্রলোভনের জন্য ভুঁইফোড় কোনো সংস্থায় বা চিটফাণ্ডে টাকা রেখে বিপদে পড়বেন না। সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ধার নিয়ে আর সেটা শোধ না করে যারা বিদেশি ব্যাঙ্কে টাকা জমা করছে তারা শুধুমাত্র শয়তান নয় তারা দেশদ্রোহী, তাদের আর কোনো সুযোগ দেওয়া যাবেনা। ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলি এখন ভয়াবহ প্রতিযোগিতার মধ্যে দাঁড়িয়ে কেননা ব্যাঙ্ক অফ চায়না-কে ভারতে ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। দেশের আপামর জনসাধারণের হাতে ভারতীয় ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ।
0 comments: