বইপোকার বইঘর - অনিন্দিতা মণ্ডল
Posted in বইপোকার বইঘর
বইপোকার বইঘর
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর 'মন্দকথা'
অনিন্দিতা মণ্ডল
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর লেখার আমি মুগ্ধ পাঠক। তাঁর উচ্চতার কোনও স্রস্টাকে পড়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করা কঠিন কাজ। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মতের মধ্যে মুগ্ধতার অবশ্যম্ভাবী প্রভাব থেকে যায়। মন্দকথা তাঁর চিরাচরিত মহাকাব্য ও পুরাণের বিনির্মাণ জাতীয় লেখা নয়। এ বইতে তিনি হালকা চালে নিজের মনের কথা বলে গেছেন। শুরুতে আমার অন্তত সৈয়দ মুজতবা আলীকে মনে পড়ল। বৈদগ্ধ্যে জারিত আত্মকথা বা আড্ডা গোছের লেখায় তিনি অনুপম। মন্দকথা পড়তে পড়তে আমি আরও এক দার্শনিক ও ইন্টেলেকচুয়াল লেখককে পেলাম। হালকা কথার মধ্যেও কি সুন্দর তিনি বুনে দিয়েছেন জীবনের গূঢ় দর্শন! উদাহরণ দিতে গেলে পুরো বইটাই তুলে দিতে হয়। তবে ওঁকে অনুসরণ করে বোদলেয়ারের সেই অমোঘ উক্তিটি উদ্ধৃত করি। কিছু না করার চেয়ে খারাপ কিছু করে ফেলা ঢের ভালো।
মানুষ চাইলেও তাঁর অধীত বিদ্যা তাঁর কর্মে পরিস্ফুট হবেই। বাইশটি ভিন্ন ভিন্ন রচনায় আদ্যন্ত খোশমেজাজী নৃসিংহপ্রসাদ অবশেষে বুনে দিয়েছেন তাঁর সেই জারিত দর্শন। লেখায় মহাভারত গীতা পুরাণ সংস্কৃত কাব্য, সব কিছু থেকেই চলে এসেছে উপমা। তুলনামূলক বিচারে পাঠক যাতে এই সময়ে দাঁড়িয়েও বুঝে নিতে পারেন ত্রিকালজয়ী সেই সব উচ্চারণ। এখনও কত বেশি প্রযোজ্য সেগুলি।
যারা ভারী লেখা পড়তে ভালোবাসেন না, তারা বইটি পড়ে যেমন আনন্দ পাবেন, তেমন শিক্ষণীয় জীবনবোধও ফিরে পাবেন। নৃসিংহপ্রসাদ কিন্তু এই আড্ডায় চলিত শব্দ ও অপশব্দের বিপুল প্রয়োগ করেছেন। বইটি মাঝে মাঝেই পড়তে হবে আমায়। ঠিক যেমন পঞ্চতন্ত্র পড়ি।
0 comments: