গল্প - হিমাংশু চৌধুরী
Posted in গল্প
গল্প
টার্গেট
হিমাংশু চৌধুরী
কোলকাতার টেম্পারেচার যদি আজ দশ হয়, তবে এই নিউটাউনে নির্মীয়মাণ হাইরাইজের ষোলতলার ছাদে নির্ঘাত তিন ডিগ্রি কম। একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান থাকার জন্য কয়েকদিন এখানকার সব নির্মানস্থলই জনশূন্য থাকবে, তা জানাই ছিলো। কেয়ারটেকারকে গতকাল রাতেই চুল্লুর ঠেকে মদ খাইয়ে আউট করে দেয়া হয়েছে। লোকটা তার পকেট থেকে ডিজিটাল এনিমোমিটার বের করে দেখলো হাওয়া বইছে ঘন্টায় আঠেরো কিলোমিটার বেগে, উত্তরপশ্চিম থেকে নর্থ এক্সিসের সাথে ৩৫ ডিগ্রি কোণ করে। দ্রুত ক্রাচটা খুলে ভিতর থেকে স্নাইপার রাইফেলের টুকরোগুলো বের করে অভ্যস্ত হাতে এসেম্বল করে নিলো ও। ক্রাচটা বদলে গেলো ট্রাইপডে, তার উপরে রাইফেলটা বসিয়ে টার্গেট সেট করে নিলো ও। অনেক হিসেব আছে- দূরত্ব ঠিক ষোলশ মিটার, লেজার সাইট তাকে জানালো, তার কাছে জলভাত। বাতাসের গতি আর দিক, পৃথিবীর নিজস্ব সামান্য কৌণিক অক্ষ, আহ্নিকগতি, ফ্রিকশন ডেভিয়েশন, পোস্ট হিট ট্রাজেকটরি, সব কম্পিউটারের সূক্ষ্মতায় নিমেষে হিসেব হয়ে গেলো তার মগজে। হাজার হোক, দেশের দ্বিতীয় সেরা স্নাইপার সে!
এবারে অপেক্ষা। সবচেয়ে কঠিন কাজ পুরো অপারেশনটার। শরীরের একটাও পেশী না নড়িয়ে সাইটে চোখ রেখে বসে থাকতে হবে, কতক্ষণ, তা জানা নেই। রাজনৈতিক নেতারা তাদের সভায় কখনো সময়ে আসেন না, সে জানে। অবিচল ধৈর্য নিয়ে সে বসে রইলো মাইক্রোফোনের মাথাটায় লক্ষ্য স্থির করে।
চার ঘন্টা কেটে গেলো।
অবশেষে একসময় চারিদিকে অকাতরে হাসি বিতরণ করে নমস্কার করতে করতে মঞ্চে উঠলেন তিনি। পরণে ট্রেডমার্ক সাদামাটা পোষাক। পূর্বসূরির মতো শো অফ করতে তিনি ভালোবাসেন না। ভাবভঙ্গী অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং কনফিডেন্ট। কে বলবে, প্রতিটি ভোটের পূর্বাভাস বলছে, ল্যান্ডস্লাইড জয় হতে চলেছে বিরোধীপক্ষের! জ্বালাময়ী ভাষণ শুরু করলেন তিনি। বিভিন্ন জায়গায় বসানো লাউড স্পিকারের মাধ্যমে মুহূর্তে সেই ভাষণ ছড়িয়ে পড়লো দিকদিগন্তে।
তার হাতে ঠিক দশমিনিট সময় আছে। পাঁচ মিনিটের মাথায় সে লেজার সাইটে টার্গেট সেট করে ট্রিগারে চাপ দিল। সাইলেন্সার লাগানো ছিলো, কেশোরুগীর কাশির মতো একটা শব্দ হলো শুধু। ম্যাক সেভেন স্পিডে এক দশমিক সাত সেকেন্ড পরে হার্ডনোজড বুলেট টা গিয়ে মাইক্রোফোনটা একটুর জন্য মিস করে হিট করলো টার্গেটে। লুটিয়ে পড়লেন স্পেশাল সিকিউরিটি অফিসার ট্যান্ডন, বক্তার ঠিক পিছনে একটু ডানদিক করে দাঁড়িয়ে ছিলেন যিনি।
আরো আঠাশ সেকেন্ড তার লাগলো রাইফেল খুলে ক্রাচের মধ্যে ভরে, পড়ে থাকা কার্তুজের খোলটা কুড়িয়ে নিয়ে কাপড় বের করে ছাদের যে অংশে তার পা পড়েছে সেই অংশটা কাপড় দিয়ে মুছতে মুছতে সেটা ফের ঝোলায় ভরে আঠেরোতলা থেকে নীচে নেমে আসতে। সব বারবার করে প্র্যাক্টিশ করা আছে, তেল দেওয়া যন্ত্রের মতো হলো সবকিছু।
ক্রাচ বগলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে সে যখন নারকেলবাগান মোড়ে পৌঁছলো, তখন তার ফোনে মেসেজ ঢুকলো। তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পাঁচ কোটি টাকার সমমূল্যের ডলার ঢুকেছে তার কেম্যান আইল্যান্ডের একাউন্টে। সিমটা খুলে মুখে দিয়ে চিবিয়ে গুঁড়ো করে থু করে ফেলে দিয়ে, আর সেকেন্ডহ্যান্ড নোকিয়া এনালগ ফোনটা নর্দমার জালি গলিয়ে নীচে ঢুকিয়ে দিয়ে নির্বিকার হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলো সে। চারিদিক থেকে সাইরেন বাজিয়ে পুলিশের গাড়ি তখন ছুটছে সভাস্থলের দিকে।
ওয়েল, হি ওয়াজ পেইড টু মিস দিস টাইম। কিন্তু তার নিজস্ব একটা নিয়ম আছে। তার রাইফেল থেকে বুলেট বেরলে, টার্গেট একটা হিট হবেই। তাছাড়া ট্যান্ডন পুলিশে চাকরি করলেও, দেশের সেরা শার্প শুটার, ফ্রি ল্যান্সিং সেও করে থাকে। ব্যবসায় প্রতিদ্বন্দ্বীকে উৎখাত করতে কে না পছন্দ করে! আবছা হাসি একটা ফুটে ওঠে তার মুখে।
Day of the jackal মনে করিয়ে দিলেন। বেশ ঝরঝরে লেখা।
ReplyDelete