ছোটগল্প - অভিষেক মুখার্জী
Posted in ছোটগল্প
ছোটগল্প
গল্প হলেও সত্যি
অভিষেক মুখার্জী
(১)
বাড়ি, বাড়ির সামনের রাস্তা, তার ওপারে পার্ক, পার্ক পার হ'তে না হ'তেই ক্যাঁএএচ করে' পিচ রাস্তার উপর ট্যাক্সির চাকার থেমে যাওয়ার আওয়াজ, তারপরেই হুড়মুড়-দড়াম-ধড়াস-প্যাঁ-পোঁ - একছুট্টে পার হয়ে গেল ফোর্ট উইলিয়ামের গেট, গেটের পাশে মাঠ, মাঠের ভেতর কী-সুন্দর কয়েকটা ঘোড়া। তারকাটা বেড়ার জালের মত' পেরিয়ে গেল হাওড়া ব্রিজ, হাল্কা ধোঁয়াশায় নিচে চওড়া নদীটাকে নিজের মত' বইতে দিয়ে। ঝম করে উঠল হাওড়া স্টেশন, একগাদা রেলগাড়ির মধ্যে একটা সুন্দর দেখে রেলগাড়ি বেছেবুছে উঠে বসতে না বসতেই - ভঁঅঅঅ-ঝস-ঝ্যাড়াক করে গড়িয়ে গেল চাকা, তারপর দ্যাখ্ না দ্যাখ্ পাঁইপাঁই দৌড়, সেকী দৌড় বাপ্পস্! এক নিমেষে পার হয়ে গেল লেভেলক্রশিং, হাইরাইজ, ধানের ক্ষেত, লোহার ছোটো ব্রিজ, গ্রামের মেঠো হাট, হাত নাড়া হাফপ্যান্ট কুঁচোদের দল, মাথা নাড়াতে থাকা একটেরে অশ্বত্থ গাছ - ক্লান্ত টোকা মাথার চাষাকে ছায়া বিলোতে বিলোতে। চায়েগ্রম, বাদাম বাদাম, হেয়ারক্লিপ আর মোবাইল কভারের সুরে চোখ বুজে আসতেই রেলগাড়ির চাকা গান জুড়ল - ছুটিইইই ছুটিইই। তারপর একসময় দৌড় শেষ হয়ে ক্লান্ত রেলগাড়ি যখন গরম নিঃশ্বাস ফেলছে, তখন টোটোয় চেপে বুক্কাই চলল দাদুর বাড়িতে।
গ্রামটায় ঢোকার ঠিক মুখে কতবছর পুরনো একটা শিবমন্দির আছে, ভাঙাচোরা, ইঁট বেরুনো, সারা গায়ে অজগর সাপের মত' পাক দিয়ে উঠেছে বটের ঝুরি। এক সিঁড়ি বেয়ে ওঠা টুকরো ভাঙা চাতালটা আর পেছনের বিগ্রহ রাখার বেদী ঘিরে বেড়ে উঠেছে কত না নাম না জানা আগাছা, শুধু ভগবানই নেই এই-ই যা, তবুও শিব মন্দির বোঝা যায় মাথার উপর টিংটিঙে ত্রিশূলটাকে দেখলে। এইসময়ে সাপের উপদ্রব, নইলে বুক্কাই একবার না একবার ঠিক ঢুকত মন্দিরটার ভেতরে - এইসব মন্দিরেই গুপ্তধন থাকে, বুক্কাই জানে, গল্পের বইয়ের পোকা যে! মন্দির পার হয়েই ছলাৎ করে ওঠা বড়পুকুর, টলটলে জলে একদল ছোঁড়া দাপাদাপি করছে, ও পাশের ঘাটে ঘোষপাড়ার বড়মাইমা কাপড় কাচতে কাচতে বুক্কাইদের দেখে একগলা হেসে হাত নাড়লেন, বুক্কাই জানে আজ বিকেলে বড়মাইমার নাড়ুতেই পেট ভরে' যাবে। বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে রোজরোজ একঘেয়ে ম্যাগি কিম্বা নিদেনপক্ষে গোলারুটি - দাঁড়াতেই পারবেনা বড়মাইমার নাড়ু আর মুড়কির কাছে। শুধু কী তাই! বিকেলে যখন পেল্লাই মাঠটায় ফুটবল নিয়ে দৌড়ুতে দৌড়ুতে হাঁফ ধরে যাবে, যখন ঝুপসি হয়ে আসা আলো-আঁধারে গোলপোস্টটা দাঁড়িয়ে থাকবে তিনঠেঙো কাকতাড়ুয়ার মত', যখন মাঠের ওপাশ থেকে ভেসে আসা আজানের সুর হঠাতই বন্ধ হয়ে যাবে - তখনই লোডশেডিং এর সাথে সাথে ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসবে গোটা গ্রাম জুড়ে। তখন উত্তর দিক থেকে একটা ভারি মিঠে অথচ ঝাঁঝালো ধোঁয়ার গন্ধ পাক খেতে থাকবে মাঠের উপর দিয়ে, দিদানের প্রাণকাড়া ডাক কানে আসবে বুক্কাই এর - "পাগোলাআআআ, বাড়ি এসো গোপাল, সন্ধ্যে নামল যে.."। শহরের একঘেয়ে ট্রাফিকের আওয়াজে কোনও আওয়াজই আর আলাদা করে কান পর্যন্ত পৌঁছায়না। এমনি এমনিই কী আর পুজোর ছুটি পড়ল আর বুক্কাই নাচল দাদুর বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার জন্য?
বম্মার পানের নেশা, ফি হপ্তায় ভগবানগোলা বাজার থেকে দাদু এনে রাখে এক গোছা। তারপরে সেই পান - ভেজা কাপড়ে মুড়ে, চুন-খয়ের-জর্দা আর বড় এলাচের ছোটো ছোটো বাটিসমেত পানবাটাটা নিয়ে, যাঁতা হাতে কুটকুট করে সুপুরি কাটতে কাটতে বম্মা খুলে বসে গপ্পের ঝাঁপি। ইঁট দিয়ে উঁচু করা সম্বৎসরের আলু-নারকোল-বাসন-কোসন ঠাসা পেট নিয়ে থুম হয়ে বসে থাকা খাটটা কেমন ঝাঁ করে ম্যাজিক কার্পেট হয়ে যায়, লোডশেডিং এর আলোয় জিভ বের করা মা-কালীর ক্যালেন্ডার আর ছোটো হয়ে আসতে থাকা দেওয়াল পেরিয়ে হুশ করে উড়ান লাগায় আমবাগানের মাথার উপর দিয়ে, পুকুর পেরিয়ে, রেললাইন পেরিয়ে, আলাকাকুদের কালু নেড়ির ভৌ ভৌ উপেক্ষা করে ওই যেখানে নদীর মাথার উপর একথালা চাঁদ খিলখিল করে হাসি ছড়াচ্ছে - সেই দিকে। আর সেইসময়ে কোথা থেকে জানি বুক্কাই এর হাতে চলে আসে লম্বা এক লাঠি, মাথায় কাপড়ের ফেট্টি বেঁধে, ম্যাজিক কার্পেটে চড়ে, নকল গোঁফে তা দিয়ে যেই-না পা ঠুকে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় - অমনি আকাশ বাতাস জল জঙ্গল কাঁপিয়ে বাতাস ধেয়ে আসে - "মহারাজা, তোমারে সেলাম..", চাঁদের আলোয় শামিয়ানা টাঙিয়ে রাজ্যশাসনে বসেন মহারাজা বুক্কাই চন্দ্র, অনবরত গোঁফে পাক লাগান আর ভাবেন একটা অ্যাডভেঞ্চার করলে কেমন হয়!
(২)
বাড়িতে থাকলে সকালে ঘুম ভাঙাটাই এক হুড়ুদ্দুমে ব্যাপার - এই মা ডেকে গেল, তো আবার বাবা পাশে এসে কানে সুড়সুড়ি, তারপরেই মায়ের ঘনঘন বোমাবর্ষণ। তারপর আধখোলা চোখে ব্রাশটাকে কোনওমতে চিবিয়ে কোঁৎ করে একঢোকে কমপ্ল্যানের গেলাসটা সাবাড় করেই বই খুলে বসো। অথচ, দাদুনের বাড়ি বেড়াতে এলেই বুক্কাই এর ঘুম ভাঙে কোন সকালে, নিজে থেকেই। ও যখন বিছানা ছাড়ে তখন দিদান ফুল তুলছে উঠোনের টগর গাছটার থেকে। এরমধ্যেই চান করে ভেজা শাড়িটা দড়িতে শুকোচ্ছে। কোনওদিন খিড়কিপুকুরের পাশের জঙ্গলের বেজিটা এক দৌড়ে পেরিয়ে যায় উঠোনটা। প্রতিদিনই একইসময়ে একটা কাঠ-ঠোকরা এসে বসে মেহগনি গাছটার তলার দিকের ডালটায়, ভুলু কুকুরটা ঝপাঝপ ডন মেরে নেয় কয়েকটা - প্রজাপতি তাড়া করার সময় হয়েছে তো। ঘোষমামু ইয়াব্বড় দুধের ক্যানসমেত সাইকেলটা নিয়ে এসে দাঁড়ায় সদর দরজায়, হাঁক পাড়ে - "ঠাউরুউউন, দুউউধ..", আর ঠিক সেই সময়েই খিড়কির দরজার পাশ দিয়ে, হাতে বেতের কঞ্চিটাকে তলোয়ারর মত' বাগিয়ে ধরে, মুখ দিয়ে অদ্ভুত 'বং বং বুবুং বাম্' আওয়াজ করতে করতে ঢোকে - ভোলা, বুক্কাইয়ের সবচে' ভালো বন্ধু, দাদু বলে মানিকজোড়। কীভাবে যে প্রতিদিন ঠিক একইসময়ে ঘোষমামু আর ভোলা উঠোনে এসে দাঁড়ায়, অনেক ভেবেও সেই রহস্য উদ্ধার করতে পারেনি বুক্কাই।
ছোটোমাসির ঘরে সার দিয়ে রাখা টিনের তলোয়ার আর খড়ের লেজ, রাম-রাবণের যুদ্ধ হবে দশমীর দিন। ভোলা হয়েছে বানর সেনা, ওই গালবাদ্য আসলে যুদ্ধের মহড়া, একচুলও ভুল করেছ কী আর রক্ষে নেই, পটাং করে কানে মোচড়। ছোটোমাসি এ'সব ব্যাপারে বড্ড কড়া। বুক্কাইয়েরও ইচ্ছে ছিল - আর কিছু না হ'ক, নিদেনপক্ষে একটা বানর সেনার চরিত্রও জুটত যদি, কতই বা প্র্যাক্টিস লাগে ওই স্টেজে উঠে খানিক বুং বুবুং করে চেঁচাতে আর খানিক হুড়ুমদুড়ুম লাফালাফি করতে! এমনিতে যদিও ছোটোমাসির সাথে বুক্কাইয়ের অহি-নকুল সম্পর্ক, তবুও মিষ্টি করে বললে কি আর না করতে পারবে। পারবেনা, ঠিক জানে বুক্কাই। কাজেই নিশ্চিন্ত মনে ভোলার সাথে শুরু হয়ে যায় গ্রাম পরিক্রমা, পেছনে দিদানের ডাক ফেলে রেখে - "পাগোওওলা দুধটুকু খেয়ে যাও মানিক আমার.."
দুধ! দুধ কে খায়! বুক্কাই কী আর সেই ছোটোটি আছে নাকি দুধ খাওয়ার মত। দিদানের সব ভালো, কিন্তু এই যে জোর করে দুধ খাওয়াতে আসে সাতসকালে..আর তা-ছাড়া সে তো এখন বেড়াতে এসেছে, অতএব সারাবছরের অদৃশ্য লেজটা এখন দৃশ্যমান হয়েছে ইঞ্চিখানেক, অতএব দুধ না খেলেও চলে, অতএব - দৌড় দৌড় দৌড়, একছুট্টে গনেশ মুদীর দোকান পার হয়ে, শ্যামলী পিসিদের উঠোন মারিয়ে, চণ্ডীমণ্ডপ ঘিরে একপাক খেয়ে সোজ্জা বরকৎ চাচার পেয়ারা বাগান। সেখানে এখনও দু'একটা গাছে পেয়ারা ধরে' আছে, ভোলা জানে, তাই বুক্কাইও জানে।
গ্রামে এবারে পুজোয় আনন্দ নেই, করতে হয় তাই করা, কোনওরকমে নিয়মরক্ষার জন্য। পুজো তো হয় ভোলাদের বাড়িতেই, পারিবারিক পুজো। সেইটাই এখন গ্রামের সার্বজনীন পুজো হয়ে গেছে। সবাই মিলে আনন্দ হইহই করে পুজোটা করে প্রতিবছরেই। কিন্তু মাস-ছয়েক আগে ভোলার ঠাকুমা মারা গেছেন, বয়স হয়েছিল, অসুস্থও ছিলেন, মারা যাওয়াটা সময়ের অপেক্ষা ছিল। কিন্তু বাড়ির বড়-মা না থাকায় এবারের পুজোর আবহে চেপে বসে আছে মনখারাপের সুর - এ'সব কথাই হচ্ছিল পেয়ারাগাছের তলায় বসে, ভোলা বল্ল - "জানিস আমি এখনও ঠাকুমাকে দেখতে পাই.."
বাবা বলেছে, মা বলেছে, দাদু বলেছে, এমনকি বম্মা যে বম্মা - যতরাজ্যের অদ্ভুতুড়ে গল্পের খনি সেই বম্মাও বলেছে ভূত বলে' কিছু হয়না। কিন্তু ভোলা যে অন্য কথা বলে! ঠাকুমা, ঠাকুমাকে দেখা যায় কেমন করে, ঠাকুমা না ছ'মাস আগে..
মনে মনে রাগই হয়ে যায় খানিক, দিনদুপুরে এইরকম আজেবাজে কথা বলার কোনও মানে আছে, তাও আবার ঠাকুমার নাম করে। ভোলার ঠাকুমাকে খুব চিনত বুক্কাই, দিদানের গায়ে যেমন সেদ্ধ ভাতে আর রসোগোল্লা একসাথে মিশিয়ে দেওয়া ভালোবাসার গন্ধ - ঠাকুমার গায়েও সেইরকম ছিল। ভোলা আর বুক্কাইকে দু'হাঁটুতে শুইয়ে দু'হাতে মাথায় বিলি কেটে দিয়েছে কত। খুব ভালো ছিল ভোলার ঠাকুমা। সেই ঠাকুমাকে নিয়ে কিনা এমন বেয়াড়া কথাবার্তা - বেশ খানিকটা রেগেই বুক্কাই বলে ফেলে - "মিথ্যে কথা বলিস না ভোলা, আমি জানি ভূত বলে' কিছু হয়না.."
(৩)
রাজপ্রাসাদের মত' তোরণটা পার হলেই একফালি ছোট্টো উঠোনের ওপারে ইস্কুলবাড়ি যেমন, তেমন টানা দো'তলা বাড়ি। সামনে থেকে বোঝা যায়না, ছোট্ট গেটটা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই ঝম করে ওঠে একটা ম-অ-স্ত উঠোন। একপাশে ইয়াব্বড় একটা কুয়ো, মাথার উপর টিনের টুপি পরে' মোটাসোটা ভারিক্কী চালে দাঁড়িয়ে থাকে বছরভর। উঠোন ঘিরে চারধারে কত ঘর সারিসারি, ঘর - বারান্দার এককোণায় সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলে ঘরের উপর ঘর, চিলেকোঠায় রাধামাধবের মন্দির, খিড়কির দরজা দিয়ে নেমে গেলে পেছনে একটা মজে যাওয়া পুকুর আর ল-অ-অ-ম্বা একটা আমের বাগান, অন্ধকার মত', এখন আম নেই বলে' ভিনভিনে পোকার অত্যচার কম, যদিও তাতে বুক্কাইদের থোড়াই কেয়ার।
তবে বাগানে আসতে গেলে ভোলার বাবা নারাণ কাকুর অনুমতির প্রয়োজন হয়। ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর নারাণকাকু স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে এখন বাড়িতেই থাকেন, জমিজমা যা আছে দেখাশোনা করেন। কাজেই ভোলা বাবার কাছে অনুমতি চাইতে গেলে না করেন নি। কাকুকে দেখে চমকে উঠেছিল বুক্কাই, হাসিখুশী লোকটা কেমন যেন বিষণ্ণ-রুগ্ন হয়ে গেছেন, কণ্ঠার হাড় বেরিয়ে পড়েছে - আর তাই কাকুকে দেখতে লাগছে অবিকল ঠাকুমার মত'। ঠাকুমা যখন অসুস্থ ছিল - এমনই যে লাগত, বুক্কাই দেখেছে গত বছরও। আরও অবাক ব্যাপার, এক বছর বাদে বুক্কাইকে দেখছেন কাকু, অথচ কাছে ডেকে কোনও কথা বলা তো দূরস্থান, যেন চিনতেই পারলেন না। মনটা খারাপ হয়ে গেল বুক্কাইয়ের।
মনখারাপটা যেন কাটবেনা বলেই ঠিক করেছে আজকে। আমবাগানে এসে বসার পর থেকে ভোলা যতক্ষণ কথা বলেছে, ততক্ষণ একটা আলগা মনখারাপ লেগে ছিল বুক্কাইয়ের বুকের ভেতরটায়। ভোলা বলছিল - ঠাকুমা অসুস্থ হ'লেও নিয়ম করে ওকে পাশে বসিয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় কত গল্প করত, হাতের মুঠোটা ধরে চুপ করে' শুয়ে থাকত। স্কুল থেকে ফিরে অনেকটা সময় কাটত ঠাকুমার সাথে। তাই ঠাকুমা মারা গেলে ও অনেকটাই একা হয়ে যায়। বাবা-ঠাকুমা-কয়েকজন চাকরবাকর আর স্কুলের কিছু বন্ধুবান্ধব, মা তো সেই কোন ছোটোবেলায়..ঠাকুমাই ছিল সবচেয়ে ভালো বন্ধু, সেই ঠাকুমা মারা যাওয়ার পরে একটা ভীষণ মনখারাপের সময় কাটাচ্ছিল।
সেইসময়ই একদিন সন্ধ্যের পরে ঠাকুমা এসে দাঁড়ায় ভোলার পড়ার টেবিলের পেছনের দরজার পাশ ঘেঁষে। দরজায় খুটখাট আওয়াজ পেয়ে পেছনে ফিরে তাকাতেই চমকে গেছিল ও, ভয়ে দারুণ একটা চিৎকার বেরিয়ে এসেছিল গলা দিয়ে। তারপরেই আর কিছু দেখতে পায়নি। চিৎকারের আওয়াজে বাবা ছুটে আসেন মিনিটখানেক পর। সব শুনে গম্ভীর হয়ে গেছিলেন। তারপর থেকে এই ক'মাসে বেশ কয়েকবার এসেছে ঠাকুমা, এমনকী দিনের বেলাতেও! দিনের বেলা কাছে আসে না, এই আমবাগান থেকেই দেখেছে ভোলা - ছাদের আলসেতে দাঁড়িয়ে থাকতে। রাতের বেলায় কখনও শোয়ার সময় পাশে এসে বসে, মাথায় বিলি কেটে দেয়। সেই একই রকম সরু কালোপাড় সাদা শাড়ি, সেই একই ভালোবাসার গন্ধ গায়ে। কথা বলেনা, তবে হাসে - আধো অন্ধকারে দেখতে পায় ভোলা। ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসে।
দুপুরবেলা পৃথিবীটা এইখানে কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে যায়। মাঠের পেছনে কাদের জেঠুর খড় চেরাইয়ের মেশিন থেকে খড়ড় খড়ড় আওয়াজটাও স্পষ্ট শোনা যায়। কাছারিঘরে ছোটোমাসির হারমোনিয়ামের প্যাঁ-পোঁ ছাপিয়ে কখনও কখনও তারস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে একটা কাক, কিম্বা খাবারের ভাগ নিয়ে ভুলু বকাবকি করতে থাকে সাঙ্গোপাঙ্গ দের। এইসময়েই বাবাকে কেমন যেন নরম মানুষ বলে' মনে হয়। দাদু আর বম্মাকে লুকিয়ে পুড়ুক পুড়ুক করে' দু'টান সিগারেট টেনে যখন ধপাস করে' এসে বিছানায় পড়ে, তখন ওই মিঠেকড়া তামাকের গন্ধটা সহ্য করেও দিব্যি একটা ঠ্যাং তুলে দেওয়া যায় ভুঁড়ির উপরে, বলে ফেলা যায় মনের সব কথা। বলেও ফেলল বুক্কাই, সকাল থেকে ভোলার কাছে যা যা শুনেছে সমস্তটাই। সাথে অবশ্য নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাটাও জুড়ে দিতে ভুলল না - "বাবা, তুমি যে বলেছিলে ভূত বলে কিছু নেই। মানুষ মারা যাওয়ার পরে তাদের শরীরের সমস্ত উপাদান ফের প্রকৃতিতে মিশে যায়, একইরকম ভাবে আর কখনও ফেরত আসতে পারেনা। তাহলে কি ভোলা মিথ্যা কথা বলছে? কিন্তু শুধু শুধু কেনই বা মিথ্যে কথা বলবে বলোতো?"
(৪)
অষ্টমীপুজোর অঞ্জলি দিয়ে আর বাড়ি আসেনি বুক্কাই, ভোলাদের বাড়িতেই থেকে গেছে। ভোলার কাছে টিনটিনের 'ফ্লাইট -৭১৪' টা আছে, বুক্কাইয়ের পড়া নেই, তেমনি ভোলাও 'টোয়েন্টি থাউসান্ড লিগস্ আন্ডা র দ্য সি' পড়েনি - যেটা বুক্কাইয়ের কাছে আছে। কাজেই ঠিক হয়েছিল গল্পের বই পড়ার আসরটা আজ আমবাগানেই বসবে। বসেওছিল - আর তখনই বুক্কাইও প্রথমবার দেখল ঠাকুমাকে, চিলেকোঠার রাধামাধবের মন্দিরের পাশে যে একচিলতে জায়গাটা, সেইখানে ছাদের রেলিঙ ধরে দাঁড়াতে। চোখে পড়ত না বুক্কাইয়ের, একটা ছোট্ট আলোর রিঙ আশেপাশে ঘোরাফেরা করায় উৎসুক হয়ে আলোর উৎসটা খুঁজতে গিয়েই দেখতে পেয়ে গেল। আপাদমস্তক সাদা শাড়িতে, ঘোমটা দেওয়া ঠাকুমার রেলিঙ ধরা হাতের আঙুলের আঙটি থেকে আলো ছিটকোচ্ছে। কয়েকসেকেন্ডের জন্য ধড়াস করে উঠেছিল বুকের ভেতরটা, তারপরেই কাকাবাবুর গল্পের সেই লাইনটা মনে পড়ে গেল - "মানুষ আসলে ভয় পায় অন্ধকারকে, ফ্যাটফেটে দিনের আলোয় যদি একটা কঙ্কাল তোমার সামনে এসে হাত-পা ছুঁড়ে নাচ করতে থাকে, তাহলে কি তুমি ভয় পাবে?" ভয় পেলেও সামলে নিতে সময় লাগেনি, ভোলার হাত ধরে একটান মেরেই ছুটেছিল ছাদের সিঁড়ির দিকে। ভূত বলে কিছু হয়না, বাবা সেদিন দুপুরেও বলেছে।
ছাদে যে কিছু দেখতে পাওয়া যাবেনা, সে ব্যাপারে নিঃসন্দেহই ছিল বুক্কাই, হ'লও তাই। একটা চৌকোণা রেলগাড়ির ট্র্যাকের মত' ধুধু ছাদ, ওই কোণার একটা ফিঙে লেজ ঝুলিয়ে বসে ছিল, বুক্কাইরা হুড়মুড়িয়ে উঠে আসায় ফুড়ুৎ করে পালিয়েছে। কিচ্ছু নেই, বেবাক ফাঁকা, শুধু ঝলমলে রোদ চান করিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ছাইরঙা জাফরিকাটা রেলিঙ আর খড়খড়ে মেঝেটাকে। নেমে আসার সময় নারাণকাকুর সাথে দেখা হল লাইব্রেরি ঘরের সামনের দিকটায়, দেখেও যেন দেখতে পেলেন না। ঢুকে গেলেন লাইব্রেরি ঘরে। বইপড়া শিকেয় উঠল, বাগানে বসার সাহসও আর হ'লনা, বুক্কাইরা একদৌড়ে চলে এল ওদের কাছারিঘরে। সেখানে আবার রিহার্সাল বসেছে ছোটোমাসির লঙ্কাকাণ্ডের, এলাহি কারবার। শান্তি করে' দু'টো কথা কইবারও যো নেই। কথা আর হ'লনা, সেদিন তো নয়ই, পরেরদিনও নয়। আসলে পুজো নিয়ে সবাই এত ব্যস্ত হয়ে পড়ল, তারমধ্যে আবার ঢাকি অসুস্থ কাজেই বাবাকে হাল ধরতে হ'ল সেদিকের। অবশেষে হুড়োহুড়ি মিটলে বাবার কাছে বলেকয়ে দশমীর রাত্তিরটা ভোলাদের বাড়িতে কাটানোর সুযোগ মিলে গেল বুক্কাইয়ের।
এক-মানুষ সমান বড় জানালা দিয়ে হুহু বাতাসের সাথে সাথে বিরাট বড় একটা আকাশের টুকরোও ঘরে ঢুকে পড়েছে যেন। আম-কাঁঠাল-নারকেল গাছের মাথার উপর দিয়ে উঁকি মারা সেই আকশে গিজগিজ করছে অসংখ্য তারা আর ধোঁয়াটে ছায়াপথ। ঢাকের বাদ্যি মিলিয়ে গিয়েও বদ্যিপাড়া থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে বাতাসের সাথে - "বোলো দুগ্গা মাঈ কী জয়..", "আসছে বছর আবার হ'বে.."। এতক্ষণ দু'বন্ধুতে গল্প হয়েছে খুব, একটাই কোলবালিশ ভাগাভাগি করে জড়িয়ে মুখোমুখি, ভোলা বলেছে ওর এখানে আর থাকতে ভালো লাগেনা - কোনও বন্ধু নেই, এত একা একা..তাই বুক্কাইয়েরও মন ভালো নেই। কথা শেষ হয়ে গিয়ে গাঢ় হয়ে উঠেছে অন্ধকার, ঝিঁঝিঁপোকা ডাকছিল এতক্ষণ ঠিক জানালার বাইরেটাতেই, নৈশব্দ বুঝিবা তাকেও চুপ করিয়ে দিয়েছে। ঘরের ভেতর ধীরে ধীরে দ্রুত হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের আওয়াজ, ঘুম নামছে চরাচর জুড়ে হাল্কা পায়ে, চোখের পাতায়, শরীর জুড়ে।
এমন সময়েই খুট করে আওয়াজ হয়ে দরজাটা খুলে গেল আচমকাই। খসখসে একটা শব্দ ঢুকে এল ঘরের ভেতর, হাল্কা মচ্ করে খাটে বসল যেন কেউ - তারপরেই খুব মৃদু গুনগুন করে আওয়াজ! কে যেন গান গাইছে - "খোকা ঘুমোল পাড়া জুড়োল.."! ভোলা ঘুমিয়ে পড়লেও বুক্কাই ঘুমায়নি, ঘুম যে আসেনি তা নয়, কিন্তু জোর করে ঠেকিয়ে রেখেছে। দরজার আওয়াজ থেকে শুরু করে ঘুমপাড়ানি গান - সবই কানে এসেছে, কিন্তু অদম্য মনের জোরে কিছুতেই খুলতে দেয়নি চোখের পাতা। বুকের মধ্যে যেন ড্রাম পিটছে কেউ মনের সুখে, বুঝিবা বাইরে থেকেও শোনা যায় সেই আওয়াজ। আর পারল না বুক্কাই, চোখ খুলেই দেখে ভোলার মাথাটা কোলে নিয়ে বসে - হ্যাঁ, ঠাকুমাই তো! অন্ধকারেও দিব্যি বোঝা যাচ্ছে সে সাদা শারী, সেই ন্যাপথলিনের গন্ধ, সেই ঘুমপাড়ানি গান, আঙুলে চমকাচ্ছে মুক্তোর আঙটি। আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে' বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা টেনে নিয়েই টর্চ জ্বেলে দিল বুক্কাই, তারপরেই যেন একটা মিনি সাইক্লোন বয়ে গেল ঘর জুড়ে। হুড়মুড়িয়ে ছিটকে গেল ঠাকুমা, সোজ্জা দৌড় দরজার দিকে, দরজার সামনে গিয়েই কে জানে কেন দুড়ুম আছাড় খেল জোর, হ্যাঁচোড়প্যাচোড় করে উঠেই দরজা ডিঙিয়ে পগার পার। ততক্ষণে অবশ্য ভোলাও হতভম্বের মত' উঠে বসেছে, আর বুক্কাইও ফোন করে ফেলেছে বাবাকে। লোকজন জোগাড় করে বাবা চলে এল মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই।
★★★★★★★
কথা হচ্ছিল বুক্কাইদের ড্রয়িংরুমে বসে', স্কুল খুলে গেছে দিনদু'এক হ'ল, পুজোর ছুটি শেষ। সবাই আবার নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত। ডাক্তার আঙ্কল এসেছিলেন বুক্কাইদের বাড়িতে। ডক্টর রজত স্যান্যাল - কোলকাতার বিখ্যাত সাইকিয়াট্রিস্ট, বাবার ভীষণ ভালো বন্ধু। কথা হচ্ছিল নারাণ কাকুকে নিয়ে। সবে স্কুল খুলেছে, পড়াশোনার চাপ তেমন নেই, তাছাড়াও বুক্কাই না থাকলে একটা বড়সড় রহস্যের সমাধান এত সহজে হ'ত কী না বলা মুশকিল - তাই তারও আজকে প্রবেশাধিকার আছে বড়দের আড্ডায়। নারাণ কাকুর নাকি কিছু মানসিক সমস্যা হয়েছে। আসলে মা-অন্তপ্রাণ ছিলেন, ভোলার মা তো ছোটোবেলাতেই চলে যান, কাজেই নারাণ কাকু আর ভোলাকে বুকে আঁকড়ে রেখেছিলেন ঠাকুমা, বিশেষ করে ভোলাকে। নারাণ কাকু দেখেওছিলেন, কীভাবে ভোলা আর তার ঠাকুমা এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বের বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছে। তাই ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর নারাণ কাকু যতটা না দুঃখ পেয়েছিলেন, তার থেকেও বেশী দিশেহারা হয়েছিলেন ভোলার কথা ভেবে। আর সেইখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। মায়ের শাড়ি জামা স্মৃতি আঁকড়ে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে যেতে থাকেন নারাণ কাকু, এমন সময় একদিন আয়নায় চোখে পড়ে মায়ের সাথে তাঁর মুখের অদ্ভুত মিল। যেটা বুক্কাইওও লক্ষ্য করেছিল প্রথমদিন ভোলাদের বাড়িতে গিয়ে। আর তখন থেকেই নারাণ কাকুই মাঝে মাঝেই নিজেকে ঠাকুমা বলে ভাবতে থাকেন। যে স্নেহরসে তিনি বঞ্চিত হচ্ছিলেন, সেটাই ঠাকুমার রূপ ধরে' বইয়ে দিতে থাকেন নাতির দিকে। ডাক্তারি পরিভাষায় এই অসুখটার নাম নাকি 'স্প্লিট পার্সোনালিটি'। তবে রজত কাকু আশ্বাস দিয়েছেন, সঠিক চিকিৎসায় এই অসুখ সারিয়ে দেওয়া যায়।
"কিন্তু তুমি কী করে বুঝলে নারাণ বাবুই আসলে তাঁর মা সাজছেন.." রজত কাকুর প্রশ্নটাই চোখে নিয়ে বাবার দিকে ঘুরে বসল বুক্কাই। বাবা শুরু করল - "আসলে বুক্কাই যখন প্রথম আমায় বলে ব্যাপারটা, তখন ঠিক বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু খটকা একটা ছিলই, ভোলাকে আমি চিনি, ও সাধারণতঃ মিথ্যে কথা বলেনা। তারপরে গ্রামের লোকেরাও বলাবলি করছিল - নারাণ আজকাল একদমই ঘর থেকে বেরুতে চায় না। কারওর সাথে কথা বলতে চায়না। এদিকে ভোলার ঠাকুমাকে বুক্কাইও দেখল। দিনের বেলায়, বাইরের লোক হুট করে বাড়িতে ঢুকে পড়ে' ওরকম একটা কিছু করবে বিশ্বাস হয়নি। বাড়ির ভেতরেই কেউ করেছে। তখনও পর্যন্ত ভেবেছিলাম বাড়ির চাকর-বাকর কেউ, ভয় দেখিয়ে কিছু স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়। কিন্তু খটকা লাগছিল আঙটিটার কথা শুনে, বুক্কাই যেমন বলেছিল ঠিক ওরকমই একটা আঙটি নারাণকে বহুদিন ধরেই পরতে দেখি। যাই হোক, বুক্কাইকে সেদিন রাতে ও-বাড়িতে শোয়ার অনুমতি দিয়েছিলাম। সাথে মোবাইলটা দিয়ে দিয়েছিলাম, যাতে দরকারে টর্চ জ্বালাতে পারে। আর দরজার কাছে পাউডার ছিটিয়ে রাখতে বলেছিলাম। তারপরের ঘটনা তো তুমি জানোই রজত, ও-বাড়িতে গিয়ে দেখি নারাণ মাথা ফাটিয়ে বসে আছে, ব্যস্ দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে গেল।
"কিন্তু ভোলা ওখানে কী করে থাকবে বাবা? একা একা?" - বুক্কাইয়ের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
'ওখানে থাকবে কেন। ওর বাবার যতদিন চিকিৎসা হবে, ততদিন ভোলা আমাদের বাড়িতে এসে থাকবে, এখানে ওকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব, তোরা একসাথে থাকবি, স্কুলে যাবি। কি খুশী তো?"
এইসময়গুলোতেও বাবাকে কিরকম নরম মনে হয় বুক্কাইয়ের, এত নরম যে তাকালেও চোখে জল চলে' আসে। তাই চোখের জলটা বাবার বুকের মধ্যে লুকোতে লুকোতে বুক্কাই বল্ল - "খুশী"...
ভীষণ ভালো লাগল। মুগ্ধ
ReplyDeleteবাঃ, খুব সুন্দর।
ReplyDeleteবাঃ, খুব সুন্দর।
ReplyDeleteআজ দিন শুরু তোমার গল্প পড়ে--অদ্ভূত ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হলাম। কলকাতা থেকে দাদু বাড়ি যাবার দ্রুত লয়ের বর্ণনা মনকাড়া, মূল প্লটের উপস্থাপনও সুন্দর --ছোটদের ছোটগল্প হিসেবে অনবদ্য,তবে সববয়সীদের কাছেই মনোগ্রাহী হওয়া উচিত এমন গল্প।
ReplyDeleteকি দারুন অভিদা। শেষ অব্দি রহস্য গল্প হলেও প্রথম দিকটা পড়ে আমার মামাবাড়ি মনে এলো। ভীষণ ভালো লাগলো পুজোর মুখে মামাবাড়ির স্মৃতিটা।
ReplyDeleteএই মামাবাড়িটা খুব চেনা
Deleteএই মামাবাড়িটা খুব চেনা
Deleteকিছু কি বলার আছে আর? থাকতে পারে? কি অসাধারণ প্লট, আর কি অসাধারণ গল্প। টাইম মেশিনে চড়ে নিজের ছোটবেলায় ঘুরে এলাম।
ReplyDeleteবলার আছে তো। অন্তত একটা ছোট্ট রিভিউ?
Deleteরহস্যের চেয়ে বেশি মামাবাড়ির স্মৃতি পেলাম। দিদা দাদু গত হয়েছেন অনেক দিন, মামাবাড়ি এখন আক্ষরিক অর্থেই মামার বাড়ি। আমার ছেলেকে এখন চোখের সামনে দিদা-দাদুর আদর কাড়তে দেখি। নিজের ছোটবেলা এমনি করেই ঝলক দিয়ে যায় চোখের সামনে। রহস্যটা বড্ড মন কেমন করা। ভোলার জন্য, ভোলার বাবার জন্য বড় কান্না পাচ্ছে।
ReplyDeleteআসলে এটা মামাবাড়িরই গল্প। সেই ছোটোবেলার সামান্য ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে ওঠার গল্প। আর খুব চেনা।
Delete