0

নাটক - প্রকল্প ভট্টাচার্য

Posted in


নাটক 


ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ
প্রকল্প ভট্টাচার্য


(একটা ক্লাবঘর। চেয়ার টেবিল গোছাচ্ছে একজন মাঝবয়েসী লোক।)
 
দিলীপ : উফ, আর পারিনা। এই পুজোর আগে যেন দম ফেলতে দেয় না কেউ। খালি মিটিন আর মিটিন! কী যে ছাতার এতো মিটিন হয়, তা কে জানে! খেটে মরতে হয় আমাকে। এই চেয়ার টেবিল গোছাও, ঝাঁটপাট দাও, শুরু হলে মুড়ি তেলেভাজা চায়ের যোগান দাও, আবার শেষে সব গুছিয়ে তোলো... কিছু গণ্ডগোল হলেই দিলীপদা আজ তোমার কী হয়েছে বলতো? 

(উদয়ের প্রবেশ) 

উদয়: দিলীপদা আজ তোমার কী হয়েছে বলতো? 

দিলীপ: ওই শুরু হলো। কিছু না, উদয়ভাই, নিজের মনেই কথা বলছি। 

উদয়: সে তো শুনলাম! তোমায় নাকি খেটে মরতে হচ্ছে। তা মিটিং হলে চা তেলেভাজার ভাগ তো তুমিও পাও, আর এই পুজোর আগেই যা আমাদের বেগড়বাঁই ক্লাবের কাজকম্মো হয়। বাকি দিনগুলো তো তুমি নাক ডাকিয়ে ঘুমোও ! তাতেও যদি এতো অসুবিধে তোমার, তাহলে তুমি ছেড়ে দাও, আমরা বরং অন্য লোক.. 

দিলীপ: আরে, কী মুশকিল.. নিজের মনে দুটো কথা বললেও দোষ! এই যে এতো লোক মনের কথা না বলতে পেরে ফেসফুস, হোসপাইপ সব করে... 

উদয়: আঃ, ঠিক করে বলো, ফেসবুক , হোয়াটস্যাপ।

দিলীপ: ওই হলো। তা আমার তো সে সব বালাই নেই, তাই একা ঘরে দুটো কথা কই নিজের সাথেই...

উদয়: ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি কাজ সারো, সবাই আসছে। (দিলীপ ভিতরে চলে যায়) এত দেরি করছে কেন বাকিরা, দেখি ফোন করে...

(মলয়ের প্রবেশ) 

মলয়: এই তো, আমি ডট অন টাইম! 

উদয়: এই তোমার টাইম! পনেরো মিনিট লেট্ করে এসে... 

মলয়: তো কী হয়েছে, বাকিরা তো কেউ আসেনি! 

উদয়: এই কথাটাই সবাই ভাবলেই হয়েছে আর কি. কবে যে সবাই একটু অর্গানাইজড হবে..

মলয়: উদয়দা, তুমি বড্ডো স্ট্রিক্ট। বাঙালিদের কাছে ক্লাব হলো একটু রিলাক্স করবার জায়গা, সেখানেও যদি ঘড়ি ধরে..

(তরুণের প্রবেশ) 

তরুণ: এসে গেছি! ঘড়ি ধরে সময়মতো!

উদয়: তোমার ওই ঘড়ি ফেলে দাও। আধঘন্টা লেট্ করেছো, আর বলছি সময়মতো! 

তরুণ: মাত্র আধঘন্টা আবার লেট্ হয় নাকি! তুমি না, ওই ইউ-এস এ গিয়েই নিজের বাঙালিয়ানা খুইয়ে বসেছ। বাঙালির সময়জ্ঞান খুব টনটনে। সাতটা বললে আটটা হতে পারে, কিন্তু ন'টা কখনোই নয়. কি বলিস, মলয়? 

মলয়: এই ঠিক এই কথাটাই তো আমিও.. 

উদয়: আচ্ছা হয়েছে হয়েছে। বাকিরা আসছে আশা করি, আমাদের কাজের আলোচনা সেরে ফেলি। পুজো তো এসেই গেলো, আমি গত ছ'মাস দেশে ছিলাম না বলে এই বার একদম সময় দিতে পারিনি। কিন্তু পুজোর আগে ঠিক ছুটে এসেছি। 

মলয়: আরে উদয়দা, তুমি হলে আমাদের বেগড়বাঁই ক্লাবের ইয়ে, যাকে বলে প্রাণপুরুষ। তোমায় ছাড়া কি চলবে? 

তরুণ: তবে চিন্তা কোরো না, আমরা সব কাজ সেরে রেখেছি। (কান্তির প্রবেশ) 

কান্তি: হ্যা দাদা, সারা কাম বিগড়কে রাখা। 

মলয়: ওহ, এই এসেছে ব্যাটা হিন্দীওলা, যত ভুলভাল হিন্দি বলবে! 

কান্তি: ভুলভাল? কান্তি কভি কোই ভুলভাল নহি বোলতা। যো বোলতা, সচ বোলতা !
উদয়: আচ্ছা বাবা ভীমরুল আর বোলতা, ভ্যানভ্যান না করে উত্তরগুলো দাও। পুজোর ফুল, ফল, আর দশকর্ম কেনা হয়েছে? 

কান্তি- সবকুছ কিন্ লিয়া। 

উদয়: বেশ কিয়া। পুরোহিত তৈরী? 

মলয়: তৈরী, তবে আরো দু'জায়গায় উনি পুজো করবেন, তাই... 

উদয়: আমাদের ক্লাবে যেন ঠিক সময়ে পুজোটা হয়, তোর দায়িত্ব. নয়তো তোকেই আরতি করতে হবে বলে দিচ্ছি! 

মলয়: আমি! এই রে... আচ্ছা দাদা, এই বাজারে পুরো ফ্রি পুরোহিত কোথায় পাবো বলো...

উদয়: বাজে কথা। বল, প্রণামীটা শেয়ার করলে তোদের কমিশন কিছু থাকে। এই তো? 

মলয়: হে হে দাদা, কী যে বলো না! 

তরুণ: দাদা, আমার দায়িত্বে ছিল প্যান্ডেল আর ডেকোরেশন. সব প্ল্যান তৈরী। ফ্রেমওয়ার্ক শুরু হয়েও গেছে। 

উদয়: গুড, এই একটা পসিটিভ রেস্পন্স. তাহলে প্রতিমা এলেই... হ্যাঁ, প্রতিমা আনতে কে যাচ্ছে? 

মলয়: প্রতিমা! 

তরুণ: প্রতিমা! 

কান্তি: পরতিমা ! 

উদয়: হ্যা প্রতিমা! পুজো করব, তার প্রতিমা লাগবে না! কী হলো, প্রতিমা জোগাড় হয়নি নাকি! আজ বাদে কাল পুজো, আর তোরা কেউ প্রতিমা অর্ডার দিস্নি! (আলো নিভে যায় ) 

*****************

(আলো জ্বলে, একই ঘরে আগের পাঁচজন বসে) 
মলয়: উদয়দা, কোথাও প্রতিমা পাওয়া গেলো না.. অনেক খুঁজেছি..

উদয়: তোরা জানিস তোরা কোন লেভেলের বুদ্ধুমিটা করেছিস? এত করে বলি অর্গানাইজড হ... নাঃ, উপায় নেই, এবার পুজো ক্যানসেল। 

তরুণ: সেকি ক্যানসেল কেন! অরে একটা উপায় ঠিক বেরিয়ে আসবে। 

উদয়: কখন, বাবা তরুণ? ক্রিসমাসের সময়? 

দিলীপ: আমি বলি কি, মায়ের ফটো এনে..

উদয়: সে আমিও ভেবেছি, কিন্তু নাঃ, রাস্তার উল্টোদিকে ধরপাকড় ক্লাব নাকি ডিস্ক ঠাকুর বানাচ্ছে, ওদের সামনে ফটো পুজো করলে প্রেস্টিজ একেবারে ফুসস 

মলয়: তাছাড়া, ফটোতে কি সেই ফিলিংটা আসে! 

দিলীপ: ফিলিং না কিলিং তা জানিনা, তবে তুমি যে কাগজে ঐশ্বর্যা রাইয়ের ফটো দেখলেই লুকিয়ে চুমু খাও, সে আমি জানি. তাই বললাম আর কি! 

মলয়: এই নিয়ে, এগুলো ঠিক নয়, পার্সোনাল ব্যাপার নিয়ে.. 

কান্তি- এক মিনিট, হামারে মাথামে এক আইডিয়া আয়া। 

তরুণ: থাক বাবা, তোমার আইডিয়া তুমিই রাখো। 

কান্তি- আরে একবার বলতে তো দেগা, নাকি! সবলোগ শুধুশুধু চিন্তা করনেসে ক্যা হোগা? প্রবলেম জব আয়া, তো সল্যুশন ভি তো চাহিয়ে, নাকি! 

উদয়: ওরে, যা বলবি তাড়াতাড়ি বল, কিন্তু প্লিজ হিন্দি বলিস না! 
কান্তি- ইসবার হম এক স্পেশাল থিম বানায়েগা। লাইভ ঠাকুর! ট্যান-ট্যান-ট্যান!! 

মলয়: লাইভ ঠাকুর! তার মানে?

তরুণ: মানে? এক একজন দুর্গা অসুর সব সেজে দাঁড়িয়ে থাকবো? 

দিলীপ: কান্তিদার মাথাটা একেবারে গেছে। একি থ্যাটারের স্টেজ নাকি! 

উদয়: দাঁড়াও দাঁড়াও, একটু ভাবতে দাও.. কান্তি, আর একটু ডিটেইলে বল তো! 

কান্তি- সিম্পল। ক্লাবকা লেডিজলোগোকো দুর্গা লক্ষী সরস্বতী সাজাকর দাঁড় করায়া দেগা, আর হম বাকি কার্তিক গণেশ বনবো ! 

মলয়: সারাদিন তারা সেজে দাড়িয়ে থাকবে? 

তরুণ: তা পারবে. সারাদিন সেজে ঠাকুর দেখতে পারে যখন... 

কান্তি- কিউ সারাদিন? পুজোমে কেউ কি সারাদিন ঠাকুর দেখতা হ্যায়? সকালে এক ঘন্টা, সন্ধেয় দু ঘন্টা, বাস! 

দিলীপ: কী উদ্ভট আইডিয়া রে বাবা! বাপের জন্মে শুনিনি! 

উদয়: সে তো আমিও বাপের জন্মে শুনিনি কোনও ক্লাবের এতগুলো মেম্বার দুর্গাপুজো করবার আগের দিন দেখলো প্রতিমা কেনা হয়নি! কিন্তু যা বুঝছি, এই একটাই রাস্তা খোলা, নইলে এবার পুজো ক্যানসেল করে ওই ধরপাকড় ক্লাবের খোরাক হতে হবে! 

মলয়: কিন্তু দাদা, যদি বেগড়বাঁই কিছু হয়? 

উদয়: আর কী হবে, ক্লাবের নামটাই তো বেগড়বাঁই! না, এবার চটপট ঠিক করে ফেল তো কে কোনটা সাজবে! 

কান্তি- ইয়েস! ফির অডিশন শুরু! 

মলয়: জয়গুরু জয়গুরু! 

*****************

 (আলো নিভে যায়, আবার জ্বলে যখন, ঘরে অডিশন চলছে।)
উদয়- তাহলে এখনো অবধি কী ঠিক হলো... 

মলয়: ওই তো, ষষ্ঠীর দিন লুচি তরকারি, সপ্তমীতে খিচুড়ি, মহাষ্টমীতে ... 

তরুণ: অরে ধুৎ আমরা মরছি ঠাকুরের চিন্তায়, যিনি বসে বসে মেনুকার্ড বানাচ্ছেন! 

মলয়: তো কী করব, আমার দ্বারা তো ঠাকুর সাজা সম্ভব নয়! 

কান্তি- কিঁউ নেহি! তুম হাথমে লাড্ডু লেকর গণপতি বাপ্পা সাজেগা! 

উদয়: নট এ ব্যাড আইডিয়া! মলয়, গনেশ সাজবে। 

মলয়: ব্যাটা কান্তি, আমি গণেশ? তুই কি তাহলে কাত্তিকঠাকুর? 

কান্তি: না না কাত্তিক ইস নাও আউট অফ ফ্যাশন। নায়ক নহি, খলনায়ক হুঁ ম্যায়। মহিষাসুর সাজেগা! বু-হু-হা-হা-হা-হা! 

দিলীপ: আরে না না, শ্যামলকে অসুর সাজাও, রোজ জিম এ যায়। হেব্বি মাসকুল! 

উদয়: হ্যাঁ শ্যামলই ঠিক হবে, অন্তত: মুখটা বন্ধ রাখবে। 

কান্তি: আই অবজেক্ট! এই লাইভ ঠাকুর কা আইডিয়া ভি মেরা হ্যায়, আর এখন মুঝে হি সাইডলাইন! ম্যায় কেয়া বান কা প্যানিমে ভাসকে আয়া? 

তরুণ: আরে রাগিস কেন, কাত্তিক সাজবি না তুই? 

কান্তি: কভি নেহি! 

মলয়: আচ্ছা, তুই জিভ বার করতে পারিস? বড় করে? 

কান্তি: অফ কোর্স! অয়ায়ায়ায়ায়ায়া ... 

মলয়: এই তো, হয়ে গেছে! তুই বরং অসুরের তলায় মোষ সাজবি. আরে, অরিজিনাল মহিষাসুর! শেষে জিভ বার করে নেগেটিভ হিরো! 

কান্তি: আই প্রোটেস্ট! দিস ইস ইনসাল্ট! ম্যায় নহি রহুঙ্গা ক্লাব মে, গুড বাই! (প্রস্থান) 

তরুণ: কেন ফালতু রাগালি ছেলেটাকে! 

মলয়: ফালতু! ব্যাটা আমাকে গণেশ বানালো, তার বেলা? 

উদয়: আচ্ছা হয়েছে, আমাদের আর সময় নেই। দুর্গা কে হবে? বীথিকাদি রাজী হয়েছেন? 

তরুণ: হয়ে যাবেন। ওনার স্বামী অনেক চাঁদা দেন, উনিই এবার আমাদের দুর্গতিনাশিনী। 

উদয়: আর কাত্তিক? দিলীপদা? 

দিলীপ: আমি! কাত্তিক! 

মলয়: হয়ে যাও দাদা! ক্লাবের জন্যে এত কিছু করলে, তার একটা সম্মান হিসেবেই...

তরুণ : হ্যাঁ এতদিন ঝাঁটা হাতে আমাদের পাশে দাঁড়াতে, এবার ধনুক হাতে দাঁড়াও! 

দিলীপ: কিন্তু আমি... 

উদয়: কোনো কিন্তু নয়, তুমিই কাত্তিক, মলয় গণেশ। বীথিকাদি দুর্গা , শ্যামল অসুর। ব্যাস এবার লক্ষ্মী আর সরস্বতী হলেই... 

মলয়: নিয়ে, বলছিলাম কি... মানে ..

উদয়: কী হলো? 

মলয়: ভয়ে বলব না নির্ভয়ে বলব? 

উদয়: এতে ভয়ের কী আছে! বলেই ফ্যাল না! 

মলয়: ওই রোলদুটোর জন্যে রুমকি আর ঝুমকি... মানে, তোমার আপত্তি না থাকলে..

উদয়: এই না, আবার ঝুমকি কে এইসবের মধ্যে কেন... 

তরুণ: মলয় কিন্তু খারাপ বলেনি! দুই বোনকে দেখতে খুবই সুন্দর, আর ঝুমকিকে তানপুরা হাতে একদম মা সরস্বতী লাগবে!

উদয়: ধুর, তোরা না, একবারে... 

দিলীপ: আরে দাদা লজ্জা পাও কেন! তুমি একবার বললে ওরা রাজীও হয়ে যাবে। 

মলয়: আরো একটা সুবিধা আছে। তুমি সারা পুজোটা একসঙ্গে... মানে, নিজের ক্লাবেই, আর নিজের লোকেদের সঙ্গে... 

উদয়: বলছিস? তাহলে ঠিক আছে, এত করে বলছিস যখন... 

তরুণ: এই তো! থ্রি চিয়ার্স ফর বেগড়বাঁই ক্লাব, হিপ হিপ 

সকলে: হুরররে! (আলো নিভে যায় )

***************

(পুজো প্যান্ডেল, সবাই ঠাকুর সেজে দাঁড়িয়ে ) 

উদয়: বা:, এই তো, দিব্যি মানিয়েছে সবাইকে! লাইভ ঠাকুর এবার পুজোয় হিট করে যাবে!

তরুণ: হ্যাঁ, কিন্তু পুরুতমশাই এখন এলে হয়... 

উদয়: সেকি, পুরুতমশাই আসেননি! কে যেন দায়িত্বে ছিল?

তরুণ: ওই যে মলয়, এখন গণেশঠাকুর সেজে মাথা নাড়ছে আর লাড্ডু খাচ্ছে! 

উদয়: সর্বনাশ! দিলীপদা কী হবে! 

দিলীপ: আমি কী করব, আমি তো এখন কাত্তিকঠাকুর! পই পই করে বললুম.. 

উদয়: ওহ, তাও তো বটে, সকলেই এখন এক এক দেবতা.. তাহলে বাকী রইলি তুই, যা বোস আসনে... 

তরুণ: আমি! পুজো! মাইরি বলছি, আমি কিছু মন্ত্র জানিনা! 

উদয়: উপায় নেই, তোকেই বসতে হবে! লোকজন আসতে শুরু করেছে, সব প্যান্ডেলে পুষ্পাঞ্জলি শুরু হয়ে গেছে। এই নে ধুতি, লুঙ্গি করেই পরে বোস না হয়। 

তরুণ: আমি সত্যি বলছি পুজোর কিচ্ছু জানি না.. 

উদয়: আরে অভিনয় করতে পারবি না! এত বছর পুজো দেখছিস কিছু মন্ত্র তো জানবি! রূপং দেহি জয়ং দেহি.. 

তরুণ: হ্যাঁ, ঐটা কিছুটা... 

উদয়: ব্যস ব্যস তাতেই হবে, আগে বোস তুই, লোক আসছে এবার, আমি সামলাই... (পিসিমা ও কান্তির প্রবেশ) 

উদয়: উফ কান্তি এসেছিস? বাঁচালি ভাই! একি পিসিমা তুমি! 

পিসিমা: এই কান্তিই তো আমাকে নে এলো! বলল তোদের কেলাবে নাকি ইস্পেশাল ঠাকুর...

উদয়: হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই তো! পুরোহিত, একটু জোরে মন্ত্র পড়ুন! 

তরুণ: রূপং দেহি, জয়ং দেহি, যশও দেহি, দ্বিষো জয়ী! অশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জিরা! হিমালয় দিলেন সিংহ, বিষ্ণু দিলেন চক্র, মহামায়া, মহাশক্তি, বাজলো তোমার আলোর বেনু...

পিসিমা: ও আবার কেমন মন্তর! 

উদয়: আরে পিসিমা, তুমি কি এখনও সেই পুরোনো দিনে পড়ে থাকবে! এটা হলো রিমিক্স মন্ত্র! চালিয়ে যান, পুরোহিত! আর দেবতারা, আপনার দয়া করে হাসবেন না, নড়ে গেলে বিপদ...

পিসিমা: কী যে কস... আহা সরস্বতীঠাকুরটা বড়ো সুন্দর... এই উদয়, এদিকে আয় তো!

উদয়: এইরে আবার কী হলো? 
পিসিমা: কী সব ছাইপাঁশ ডিগ্রি পেয়েছিস, ঠিকঠাক পড়াশোনা তো আর করলি না, এইবার সরস্বতীর পায়ে প্রণাম করে বর চা দিকি! 

উদয়: মানে! পায়ে! 

পিসিমা: হ্যাঁ ঠাকুরের পায়ে হাত দিয়ে বল, আমাকে বিদ্যা দাও.. 

তরুণ: যা দেবী সর্বভূতেষু বিদ্যারূপেণ সংস্থিতা... নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ! 

কান্তি: ঠিক কহি হ্যায় আপ পিসিমা! দেবী কি পা পকরনেসে বিদ্যা জরুর মিলেগা! 

উদয়: হতভাগা, তাহলে এইসব তোমার প্ল্যান! 

কান্তি: নায়ক নেহি, খলনায়ক হু ম্যায়! 

তরুণ: জয় জয় দেবী চরাচর সারে. ওহ সরি .. রূপং দেহি, জয়ং দেহি... বন্দেমাতরম, সুজলাং সুফলাং... 

উদয়: পিসিমা... 

পিসিমা: কোনো কতা নয়, তুই এদিকে এসে সরস্বতীর পায়ে হাত দিয়ে বর চাইবি কি না... (উদয়কে টেনে সরস্বতীর কাছে আনতেই সরস্বতী লাফিয়ে টুল থেকে নেমে পালিয়ে যায়) 

পিসিমা: একি একি! 

তরুণ: ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ঠাকুর যাবে বিসর্জন... 

(হুলুস্থুলু বেঁধে যায়, তার মধ্যে কান্তি এগিয়ে আসে) 

কান্তি: আমাদের বেগড়বাঁই ক্লাবের পুজো, এবং এই নাটিকা এখানেই শেষ হলো। আপনাদের সকলকে জানাই শারদীয়ার প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আর হ্যাঁ, যদি মায়ের পুজো করতে চান, এইভাবে চালাকি করে নয়, নিষ্ঠাভরে, ভক্তিভরে পুজো করবেন। চালাকির দ্বারা, জানেনই তো, কোনও মহৎ কর্ম হয় না! নমস্কার! 

0 comments: