0

ছোটগল্প - অরিন্দম আচার্য

Posted in


ছোটগল্প


পুনর্মিলন
অরিন্দম আচার্য


চল্লিশ বছর! হ্যাঁ? ঠিক বললাম তো?
হুম, সেই সেভেন্টিথ্রিতে কলকাতা ছাড়লাম, তারপর এই এত বছর লেগে গেল। এর মাঝে কত ঝড়ঝাপটাই না গেল, সেই কলেজ ইউনিভার্সিটি তারপর চাকরি। তবে কলকাতায় আসার তাগিদটা ছিল না কিছুই। কারণ, আমার চাকরি পাওয়ার পর মা তো আমার কাছে চলে গেছিল। বাবাও চলে গেলেন, মা আর কি বা করত একা একা!
সে তো বটেই। তবে ভালোই তো ছিলি, আবার এলি কেন এই মরা দেশে? সেই সময় যাও বা কিছু দেখেছিলি, এখন তো সব গেছে। 
সেটাই অদ্ভুত লাগছে। কি সুন্দর পরিষ্কার নির্মল ছিল আমাদের কলকাতা, সবুজে সবুজ ছিল চারদিক। আর এখন? বাপরে, সারা রাস্তা হয় হকার না হয় বাজার। কি ভয়ঙ্কর করে ফেলেছিস! ডবলডেকার বাস নেই, সিনেমা হলগুলোও সব উধাও -হয় মার্কেট না হয় অনুষ্ঠান বাড়ি হিসাবে ভাড়া দিচ্ছে। স্কুলের গেটে পার্টি পতাকা, রাস্তায় গর্ত। বাপ রে বাপ। তবে একটা জিনিস দেখলাম, এখানে লোডশেডিং হয় না। 
নেহাত মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল, না হলে হয়তো কলকাতার এই রূপ দেখতেও পেতাম না কোনও দিন। মায়ের ইচ্ছা ছিল, বাবার মতন শেষ নিশ্বাস কলকাতায় ফেলার, কিন্তু সেটা কোনও ভাবেই হলো না। মা হঠাৎ করেই চলে গেল। ম্যসিভ অ্যাটাক, কোনও সুযোগই দিল না। তাই কলকাতায় এসেছি, মায়ের আত্মাশুদ্ধির জন্য। এখানে পা ফেলেই কত কথা মনে পড়ে গেল। সেই কালো হলুদ ট্যাক্সি এখন আর নেই? অবাক লাগল। 
পুরনোকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া মুস্কিল রে। তুই নিজেই তো আর সেই পুরনো বিনয় নেই। মনে আছে, আমরা অভীক স্যারের ক্লাস থেকে শুরু করেছিলাম? সেটা কোন সাল হবে?
সেভেন্টি টু। 
কারেক্ট। তুই পড়তে চলে গেলি, আর নতুন সরকার এল। রাজনৈতিক বন্দীদের আমাদের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ছেড়ে দেবার সুপারিস করেন আর অভীক স্যারও ছাড়া পেলেন। তুই তো আর দেশে ফিরলি না। জানতেও পারলি না আমাদের কি হলো। 
কে বলল, আমি জানি না? আমি সব খবর রাখতাম, গীতশ্রী আমায় সব জানাত। 
গীতশ্রী?! সে তোকে কি খবর দিত? আর কেন দিত? কোথায়, আমরা তো ব্যাপারটা জানতাম না? তোর সাথে অনেক যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু অনুমতি পাইনি। অভীক স্যারও অনেক খুঁজেছিলেন। তুই যেন পুরো ভ্যানিশ হয়ে গেছিলি। বিলে কোথা থেকে একদিন খবর এনেছিল, তুই পুলিসের গুলিতে মারা গেছিস। আমরা খবরটার সত্যতার জন্য তোর বাড়ির সামনে ফিল্ডিং দিয়েছিলাম এক হপ্তা। পরে বুঝলাম খবরটা ভুল। আর তা ছাড়াও গীতশ্রী কত দিনই বা তোকে খবর জানাতে পেরেছিল? ও তো ধরা পড়েছিল তোর নিরুদ্দেশের বছর খানেক পর। 
উপায় ছিল না, তুই তো জানিস আমি তখন অলরেডি ওয়ান্টেড হয়ে গেছিলাম। 
সে তো আমিও ছিলাম বিনয়, আমি তো পালাবার চিন্তাই করিনি। তুই নিখোঁজ হওয়ার এক মাস পর আমি ধরা পড়লাম। জানিস, আমি কারুর নাম বলিনি। কিন্তু সে যন্ত্রণা সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছিল। 
বাজে কথা, আমি কোথাও পালাইনি। কোইন্সিডেন্টালি আমি তখন ফিলাডেলফিয়া ইউনিভারসিটিতে মাস্টার্সের সুযোগ পেয়েছিলাম। 
মাথায় রাখিস, দু’জনের একই অপরাধ ছিল এবং ধরা পড়লে আমরা রাজনৈতিক বন্দী ছিলাম না। ইনফ্যাক্ট, আমি ছাড়া পাই এইটটি সিক্সে। বাই দ্য ওয়ে, তুই তখন মোটেও আমেরিকা যাসনি, তুই তখন গেছিলি তোর দিদির বাড়ি লখনৌতে। সঞ্জয় আমাদের সে খবর যোগাড় করে দিয়েছিল। ইনফ্যাক্ট, তোকে ধরে আনার একটা প্ল্যানও করা হয়েছিল। আমাদের ভয় ছিল, তুই হয়তো ধরা পড়ে গেলে সব বলে দিবি। কলকাতার ধারে কাছে থাকলে তুই নিশ্চিত খুন হতি। আমরা জানতাম তুই কতদিন লখনৌতে ছিলি আর কবে বাইরে যাস। ইনফ্যাক্ট, তোকে পালানোর জন্য তোর বাবার সহপাঠী বটতলার ওসি হেল্প করেছিল, সে খবরও আমরা জানতাম। কিরে? ভুল বললাম? আর আমেরিকায় নিয়ে গেছিল তোর দিদির ভাশুর। সে তো ওখানে একজন ডাক্তার। তাই না?
কেন? রাজনৈতিক নয় কেন? আমরা কোনও অপরাধ করিনি, অ্যাক্সিডেন্টালি লোকটা মারা গেছিল। আমরা মারিনি। শুধু টাকা আনতে গেছিলাম। 
সেটা কেউ বিশ্বাস করেনি। আইনের চোখে আমরা ছিলাম খুনি। রাজনৈতিক খুন নয়, নির্ভেজাল নিরীহ মানুষ খুন। তবে একটা ব্যাপার ভালোই হয়েছিল। রাজনৈতিক অপরাধী হলে আজ আর তোর সাথে এভাবে চা খাওয়ার সুযোগ হত না। 
হ্যাঁ, সেটাও জানি। রাজ্য পুলিশ প্রায় সবাইকে ময়দানে ছেড়ে পেছন থেকে গুলি করত। বিলে, গোপাল ঐ ভাবেই মারা গেছিল। 
জানিস আমাদের উপাধি কি? আমরা নকশাল। আজ এত বছর পরেও আমাদের উপাধি অটুট আছে। 
আজ জীবন সায়াহ্নে এসে মনে হয়, আমরা কি কোনও ভুল করেছিলাম?
নিশ্চয় ভুল করেছিলাম। সে সময় আমাদের পড়ুয়াদের কি ম্যাচিওরিটি ছিল, হঠাৎ মনে হলো গণতন্ত্র ফনতন্ত্র সব বোগাস। অভীক স্যারের জ্বালাময়ী বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে কেমন যেন স্রোতের উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করে দিলাম। লাভ কি হলো বল? তবে তুই এইকাটা গণ্ডী থেকে বেরতে পেরেছিলি বলে বেঁচে গেছিস। আমার মতন অসাড় নিম্নাঙ্গ নিয়ে জীবনধারণ করতে হলো না। 
তুই তো জানিস গীতশ্রী ধরা পড়েছিল, নাকি সেটাও জানতি না?
গীতশ্রীর খবর আমি পাইনি। আমি খোকনকে ফোনে চেষ্টা করেছিলাম। ওর বাবা আমার কথা শুনে ফোন নামিয়ে রাখে। ভেবেছিলাম, আমার ওপর বোধহয় সবার রাগ ছিল, তাই এমন ব্যবহার। 
তারপর?
সত্যি বলছি, আমি কলকাতায় আমার সব আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে প্রায় রোজ ফোনে খবর নিতাম। যতদিন মা এখানে ছিল, এখানকার পরিস্থিতি আমায় রোজ জানাত। কিন্তু সঠিক খবর কেউ বলেনি। 
ভালোই করেছে। খোকনকে যেবার পাঁচজন পুলিশ ময়দানে ছেড়ে দিয়ে গুলি করে, সেবার আমাদের এক বিখ্যাত অভিনেতা ব্যাপারটা দেখে ফেলেছিল। তবে সংবাদ মাধ্যম ব্যাপারটা ধামা চাপা দিতে বেশীক্ষণ লাগায়নি। কাকিমাও এই সব জানত না। তোর বাবার পরিচিত বটতলা থানার ওসির জন্য তোর বাড়ি খুব একটা উৎপাত হয়নি। 
গীতশ্রীর ওপর অত্যাচারের কথা ও কাউকে বলেনি। মাত্র সাতদিন আটকে রেখেছিল। অপরাধ ছিল, ওর কাছ থেকে নাকি রিভলভার পাওয়া গেছিল। সব বোগাস! তারপর কোনও এক কাউন্সিলারকে ধরে ওর বাবা ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। রবীন গেছিল ওর সাথে দেখা করতে, ও বলেছিল, নিস্পলক চোখে ওর দিকে তাকিয়েছিল আমাদের গীতা। কিন্তু কোনও কথা বলেনি। 
মাত্র আরও সাতদিন ছিল, বাড়িতে বন্দী। নিজেই নিজেকে বন্দী করেছিল। ওর বাবা মা, অনেক চেষ্টা করেছিল, ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে। সেবার সন্ধ্যেবেলা ওর বাবা দার্জিলিং-এর টিকিট কেটে ওর ঘরে গিয়ে দেখে ফ্যানে কামিজের ওড়না লাগিয়ে একমাত্র মেয়ে ঝুলছে। সবই শুনেছিলাম রবীনের কাছ থেকে। ঐ ব্যাটাই একমাত্র এ শহরে থেকেও বেঁচে গেল। কারণটা কেউ জানে না। 
ভাবলে কষ্ট হয়। আমরা নিজে হাতে নিজেদের জীবন নষ্ট করেছি। কোনও দরকার ছিল না ঐ বিপ্লবের। এখন ভাবি, ওটা কিসের বিপ্লব! আমাদের আগের প্রজন্মই তো এই স্বাধীনতা এনেছিল। তবে কিসের রাগে আমরা সব কিছুকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করলাম! আমাদের উদ্দেশ্য কি ছিল! গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, কিন্তু কেন? মাও এর নাম করে আমরা যা করেছি, সেটা তো রাজনীতি নয়, সেটা তো ছেলেমানুষী!
তুই বল অনিল, আমরা কি পেলাম। বিলে, খোকন, গোপাল, পানু, কানাই, সুধীন, রাজেশ, সঞ্জয়, সবাই, কি পেল বলতে পারিস? আমায় না হয় তোরা বলছিস আমি পালিয়ে গেছি, বুর্জোয়া দেশে গিয়ে বুর্জোয়া হয়ে গেছি। বাড়ি গাড়ি সব আছে। তাতে কি? তোদের তো কেউ বাধা দেয়নি ও সব পেতে, ও সব অধিকার করতে?
এখানকার কোনও খবর আমেরিকায় পাওয়া যেত না। কিন্তু দমদম জেল থেকে পনেরো বন্দীর পালিয়ে যাওয়াটা ওখানেও একটা খবর ছিল। শুনেছি, সুধীন, রাজেশ, সঞ্জয়, ওরা ছিল। ওরা পালিয়েছিল?
কে বলল সে কথা?
আমাদের ওখানে একটা বাঙ্গালিদের আখরা ছিল। সেখানে একটা বাংলাদেশি ছেলে বলেছিল। রাজেশ নাকি যশোরে পালিয়েছিল। বাকিদের খবর নেই। যশোরে ঐ ছেলেটির মামাবাড়ি। রাজেশ সেখানেই ছিল কিছুদিন। কথাটা সত্যি?
জানি না। তখন আমি জেলে। এমন কি আমি বাকিদের খবরও জানি না। কারণ আমি ছাড়া পাই এইট্টি সিক্সে। তখন কোথায় কে ছড়িয়ে পড়েছে! শুনেছি, রাজেশ সিঙ্গাপুরে একটা এঞ্জিনিয়ারিং কম্পানিতে চাকরি পেয়ে চলে গেছিল। ওখানেই সেটল্ড। তোর মনীষাকে মনে আছে?
কে মনীষা? সেই রোগা করে মেয়েটা? কলেজে যাকে দেখলেই তুই দূর থেকে ফুঁ দিতিস? উড়ে যাবে কি না দেখার জন্য?
হাহাহাহাহা। কি বর্ণনা। তোর স্মৃতিশক্তির তারিফ না করে পারা যায় না। আজ থেকে চল্লিশ এক চল্লিশ বছরের পুরোনো ঘটনা হুবহু মনে রেখেছিস। হ্যাঁ, সেই মনীষা। অভীক স্যারের দূত হিসাবে আমার কাছে আসত প্রত্যেক সপ্তাহে, খোঁজ খবর নিত আর কিছু থাকলে জানাত। নতুন সরকারের আমলে ও একটা চাকরি পায়, স্কুলে। ভালই কাটে আমাদের। শুধু ওর বাবা মা আর আমার বাবা মা মেনে নেয়নি আমাদের সম্পর্ক। আমার বাবার তো আবার নিজস্ব আশ্রয় কিছু ছিল না। কালীঘাটে ভাড়া থাকতাম, তবে পুরোনো ভাড়াটে তো, গোটা বাড়িটাই আমরা ভোগ করতাম। শুনেছি, খুনির বাবা বলে আমার বাবা মাকেও বাড়িওয়ালা বের করে দেয়। তারপর তারা কোথায় চলে যায় কোনও খবর নেই, মনে হয় মালদায় আমার মামার বাড়িতে আশ্রয় নিতে পারে। আমি আর কোনও খবর নেওয়ার চেষ্টা করিনি। মনীষাকেও বারণ করেছিলাম ঐ ব্যাপারে না জড়াতে। ওর বাবা মায়ের সাথে সাথে ওর দাদারাও ওকে ঠাঁই দেয়নি ওদের বাড়িতে, আমাদের মেনে নেয়নি ওদের পরিবারের অংশ হিসাবে। খুনি মানুষকে কে আর কোনও ভাবে পাত্তা দেয়, তায় আবার পঙ্গু!

আরিব্বাস, তোরা বিয়ে করেছিস? কোথায় থাকিস এখন?
ফুলবাগান। তুই বোধহয় জানিস না, আমাদের এক প্রতিবেশীকে কয়েক বছর আগে ফুলবাগান থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশেরা ধর্ষণ করে। হইচই হলো কিছু দিন। তারপর যে কে সেই। মনে আছে? আমরা পুলিশ মারার প্ল্যান করেছিলাম। সেই পুলিশ!!! হাহাহাহাহা। 
তুই বস্তিতে থাকিস?
হ্যাঁ, কেন, বস্তিতে মানুষ থাকে না? প্রথম প্রথম অকওয়ার্ড লাগত। এখন তো বস্তির ছাপ্পা লেগে গেছে। খারাপ কি? ছেলে মেয়ে তো নেই। বেশ আছি দু’জনে। একখানা ঘর, ছোট জানলা, একটা তক্তপোষ, আলনায় গোছানো কাপড় চোপর, পরিষ্কার ছোট আয়না। ছোট জায়গায় বড় কাছাকাছি, ভীষণ ঘনিষ্ঠ ভাবে থাকা যায়। মনীষা ভীষণ গোছানো আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পছন্দ করে। 
সত্যি সময় কি বিচিত্র। কৃষকদের জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেটা গরিব খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার বিচিত্র প্রচেষ্টা হলো। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য এখনও অজানা। সমাজের সব শ্রেণীর মধ্যে সম্পদের সমবন্টন, সেটা আবার হয় নাকি? এটা তো ইউটোপিয়া। অথচ আমরা ছুটেছিলাম। কোনও লাভ হলো! সমাজের প্রকৃত দুটি শ্রেণী আজ আরও প্রকট হয়েছে। 
সেটা তো তোকে দেখেই বুঝতে পারছি। এই সব জায়গায় আমার মতন কোনও মানুষ কোনওদিন ঢুকতে পেরেছে নাকি?খেতে পাওয়া তো দূরের কথা!
কি যা তা বলছিস! আমার কোনও পরিবর্তন হয়নি। আমি যেমন ছিলাম তেমন আছি। এটা ঠিক, সে সময় আমি তোদের সাথে সমানতালে থেকে যেতে পারিনি। কিন্তু আমিও তোদের সাথে শুরু করেছিলাম। যা যখন দরকার হয়েছে, যুগিয়ে গেছি। এটা তো তোকে মানতেই হবে, ঐ সব ধারাবাহিক ঘটনা আর যাই হোক বিপ্লব নয়। যার কোনও উদ্দেশ্য নেই, সে কাজ করে লাভ কি বল?
সে তো অবশ্যই। একে একে সব নেতাই চলে গেলেন। শেষকালে কানু সান্যাল এই তো কিছুদিন আগে, সুইসাইড করলেন। তৎকালীন সব নেতারই অবসান হলো। 
আমাদের অভীক স্যার?
সে এক মস্ত ঘটনা। সবই শোনা, কারণ আমি তো তখন বন্দী। রাজনৈতিক বন্দীদের অপরাধ মকুব করার পর সরকার একটা টোপ ফেলে। দলের লোক ভারি করার তাগিদ, আর কি! অভীক স্যারও যোগ দেন। সে সময় কলকাতা বাংলাদেশী রিফ্যুজিতে ভরে গেছে। সারা রাস্তায় গিজগিজ করছে মানুষ। নতুন নতুন কলোনি তৈরি হচ্ছে চারদিকে। 
একদল রিফ্যুজিকে দণ্ডকারণ্যে পাঠিয়েছিল, মনে পড়ে সে কথা? দেশ ভাগের পর যারা এসেছিল এখানে, তাদের থেকে কিছু লোক পাঠিয়েছিল নাদণ্ডকারণ্যে? সেই তারা নতুন আশায় ফিরে এসেছিল, বাংলায়। হয়তো সরকার পরিবর্তনে ওদের ধারনা হয় যে ওরা আবার ওদের নিজের ভাষাভাষী মানুষের মাঝে এসে আশ্রয় পাবে। সুন্দরবনের কিছু যায়গা অধিকার করে নেয় তারা। ব্যাস আর যায় কোথায়? সরকার তাদের তাড়ানোর জন্য লোক পাঠায়, যত না পুলিশ তার চেয়ে বেশী পার্টিকর্মী। 
হত্যালীলা চলে সেখানে। কিভাবে কি হলো, জিজ্ঞাসা করিস না। আমি জানি না। শুনেছিলাম, প্রচুর গোলাগুলি চলেছিল। পৃথিবী শান্ত হয়ে যাওয়ার পর, মরীচঝাপির সেই খোলা প্রান্তরে অনেক নিরপরাধ মানুষের সাথে আমাদের অভীক স্যারের নিথর দেহটাও পাওয়া গেছিল। ওটাও নাকি একটা এক্সিডেন্ট, কেউ ওনাকে মারতে চায়নি, ভুল করে হয়ে গেছে। নিজের লোককে আর কে মারতে চায়!
মনীষা শেষ যাত্রায় পা মিলিয়েছিল সবার সাথে। রবীনের সাথে দেখা হয় সেখানে। ও নাকি তখন দক্ষিণ কলকাতার কোনও একটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ওর কাছ থেকেই শুনেছিল, কানাই নাকি উন্মাদ হয়ে গেছে। কলকাতার কোন একটা পাগলা গারদে ছিল। তারপর কি হয়েছে কোনও খবর নেই। অভীক স্যারের জন্য পার্টি কোনও কসুর করেনি। লাল পতাকায় মুড়িয়ে লাল সেলাম জানিয়েছিল। সেটাই বা কম কি?

0 comments: