0

অণুগল্প - উত্তম বিশ্বাস

Posted in


অণুগল্প


ইনহেলার
উত্তম বিশ্বাস


‘ধুলো নেই তো? তাহলে কিন্তু এতটা শ্বাসকষ্ট নিয়ে একদম পা’ কাড়াব না!’
জালাধানের ওপার থেকে কলসছাপানো হাসি, ‘ধুলো? এসেই দেখুন না,---- ধুয়ে একদম ধুলিস্যাত!’ 
সুস্মিতা ডাকলে আমার কোনও অজুহাতই ধোপে টেকে না; বিশেষত ওর চোখের দিকে একবার তাকালেই আমার এই পঁচাত্তর অতিক্রান্ত জীর্ণ হাপরটাতেও নতুন করে হাওয়া ভরে নিতে পারি!

দু’দিন ধরেই খবর পাচ্ছিলাম ওর স্টলের সামনে এক্কেবারে হাবুডুবু অবস্থা! সেদিন সন্ধ্যায় যখন পৌছলাম;---সবাই রীরিমত বানভাসি! জনপ্লাবনে ভাসছিল ঋতবাক! আমিও কখন যেন ভেসে গেলাম, গানে কবিতাপাঠে, আড্ডায়! আমি উদাত্ত স্বরে শুরু করলাম, ‘তোলপাড় সত্তর; পঞ্চাশ পেরিয়ে ফিরে দেখা!’

পাথরে পাথরে নাচে আগুন। আগুন রাতে
দেখো রে মানুষ নাচে; শীতের পাহাড় নাচে
রাতের পাহাড় নাচে। আগুনের মত লাল
হাজার হাজার লাল পতাকা রাত শেষের
বন্দীর চোখে নাচে; নাচে রে স্বপ্ন নাচে---- 

৩৩৩, ঋতবাকে সজ্জিত একটি স্টল। সুস্মিতার সুচারু হাসি, আর আমার ‘তোলপাড় সত্তরের’ অশান্ত আবেগে তখন দারুণ দাবানল!
--‘ফাল্গুণী’দা! আমার বইয়ের থেকে কয়েকটা লাইন প্লিজ----!!’ 

স্বপন’দার রাজকীয় ধমক থামিয়ে দিল চয়নকে, ‘থাম! ‘পোস্টকার্ড’ নিয়ে রাজা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, দেখছো না!?’ আমি চয়নের পিঠে হাত রেখে বললাম, ‘তোমার বইঘর আমি বগলদাবা করে রেখেছি ভায়া! পড়ব পড়ব! আগে আমার নকশাল প্রিয়ডের কথা শেষ করতে দাও; বুড়ো ভাব, দেখো এখনও কত দম!’ আমি বীরের দৃষ্টিতে সুস্মিতার চোখে চোখ রাখতেই, ও আগুন উসকিয়ে বলল, ‘এই তো দারুণ! ইনহেলারটা আজ থেকে আর লাগবে না; এটা আমার কাছেই থাক!’ 

পাশে দাঁড়ানো সতীনাথ’দা।---দেখলাম, মুচকি মুচকি হাসছেন! সিংহী’ বাবু আসতেই সেলফি আর ফটোশ্যুটের হিড়িক পড়ে গেল! কস্তুরী, শ্রীলেখা, গৌতম--- সবার ফ্রেমেই নানান পোজে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আবদার বলে কথা! শুধুমাত্র সুস্মিতার পাশে দাঁড়ালেই আমার যেন মনে পড়ে, হাজার বছর আগেকার কোনও এক সন্ধ্যায় আমাজনের বৃষ্টি অরণ্যে কাটানো কিছুটা মুহূর্তের সুখ-স্মৃতি!

মেট্রোতে, আমাদের সীটে এক আঠারোর ছোকড়াকে বসতে দেখে, আমি ব্যাগ ভর্তি উপহার-বই নিয়ে একপ্রকার ঝুলে ঝুলেই,--- নন্দিনীর ‘অরণ্যমেঘবন্ধুর দল’ পড়তে পড়তে ভিজতে ভিজতে পরিচিত লোকালয়ের পথে যাত্রা করলাম। 

অনেকগুলো পায়ের শব্দ, সিরিয়ালের সংলাপ, কাপ-প্লেটের ঠুং ঠাং-- আমার কলিং বেলের আওয়াজকে দেখলাম, অনেকক্ষণ ধরেই সমানে অগ্রাহ্য করে চলেছে! দরজা খুলল না কিছুতেই। কিছু কিছু সময় কাছের মানুষকে ডাকতে হলেও চেনা কণ্ঠস্বরের প্রয়োজন হয়! চেষ্টা করলাম,----একবার---দুবার----তিনবার---! নাহ! পারলাম না! দম আটকে এল!

অভ্যাস বশত পকেট হাতড়ালাম।-------নেই!

ইনহেলারটা সুস্মিতার টেবিলেই ফেলে এসেছি যে!



কৃতজ্ঞতা স্বীকার
‘ঋতবাক’ সংকলন, ২০১৭
বইমেলার ডায়েরি, ফেসবুক পোষ্ট; সুস্মিতা বসু সিং



0 comments: