মুক্তগদ্যঃ দীপঙ্কর বেরা
Posted in মুক্তগদ্য
মুক্তগদ্য
ভাব অভাব
দীপঙ্কর বেরা
অভাবকে কিছুতেই সঞ্চয় করে রাখব না। যদিও তাকে যত সরাতে চাই সে আমাদের এই ন্যালা ফেলা জীবনে বার বার ফিরে আসে। কত কষ্ট করে ভাবকে জমিয়ে রাখি। সুযোগ বুঝে ঝাঁপি থেকে খুলব আর অনেকটাই এগিয়ে যাব জীবন পথে।
কিন্তু ভাবের ঘরে হয়ে যায় চুরি আর আমি দিশেহারা। আর অভাব লেগেই থাকে। তাকে যতই খরচের খাতায় লিখে রাখি সে ঠিক উঠে চলে আসে জমার ঘরে। যে করেই হোক দিনের শেষে শূন্যমেলাতে হবে। তাই অভাবকে বাদ দিয়ে অঙ্ক হয় না।
আর তখনই বুঝলাম, ওরে বাস! এ যে সেই সমীকরণ। অভাব আছে বলেই আমি এত ভাব খুঁজে পাই। যতই চুরি হোক, এই অভাব আমাকে অন্য, আরও অন্য এক ভাবের ঘরে পৌঁছে দেয় রোজ। আমি এক আকাশ থেকে অন্য আকাশে দৌড়ে যাকে তাকে ধরে ফেলতে পারি। কেননা আমার অভাব আমার সঙ্গে আছে। সে জাগিয়ে রাখে তাই সমীকরণেও এসে যায় সরলতা। ভাবের পর ভাব। আর আমার জীবনী স্বভাব।
তবে হ্যাঁ, এক অভাব ডিঙিয়ে অন্য অভাবে অবাধ বিচরণ করি তাই সঞ্চয় করি না। কিন্তু ভাব সঞ্চয় করি। জমিয়ে রাখি। অভাবকে তাড়াতে মাঝে মাঝে ভাবকে নাড়াচাড়া করার অনন্য ঔষধের জুড়ি মেলা ভার।
তাতে কি হয়... এই খুব কষ্ট আর এই খুব আরাম। যেন এই মেঘ তো এই রোদ্দুর। আর পরক্ষণে বৃষ্টি।তাই আমি তো মাঝে মাঝে অভাবকে আহ্বান করি। পাশ দিয়ে চলে গেলে হবে না। আমার বাড়ি আসতেই হবে। তাই করলাম কি, পেছনে লেগে গেলাম। দিলাম খুনসুটির সঙ্গে একটু ঝালের আরক। বেশ লেগে গেল। পাল্টে গেল মুহূর্ত। শুধু খেয়াল রাখি সীমা যেন না ছাড়িয়ে যায়। মানবতা লঙ্ঘন করে তা যেন কোন সংশয়ের মধ্যে আমাকে না ডুবিয়ে দেয়। কিছুতেই জীবনকেও হাত দিতে দিই না।
আর আমার টেনশন! পালিয়ে গেল আহ্লাদ। জুটবে কি না জানি না। অভব্যের মত তার অন্য আনাগোনা। আর আমার ভাব সঞ্চয়।
কুড়িয়ে বাড়িয়ে তাকে কিছুতেই হাত ছাড়া করি না। দাঁড়াতেই হয় ফুটপাতে। মোড়ে। লোকালয়ে। ঝুপড়িতে। এমন কি ইমারতেও মাঝে মাঝে ঢুঁ মারি। পেয়ে যাই তাদের। সহজেই পেয়ে যাই। আর তারা এত সুন্দর করে আমার ভাবের আগমন ঘটিয়ে দেয় যে আমি একেবারে বিমোহিত হয়ে যাই।
শত অভাবের মধ্যে আমি তাই আজও ভাব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
0 comments: