0

অনুবাদ সাহিত্যঃ ইন্দ্রাণী ঘোষ

Posted in


অনুবাদ সাহিত্য


মেরি ক্রিসমাস
মূল রচনা: The Little Woman(Louisa May)
ভাষান্তর: ইন্দ্রাণী ঘোষ

ধূসর ক্রিসমাসের কাকভোরে ঘুম ভাঙ্গল জো’র। ফায়ারপ্লেসের পাশে কোনও মোজা টাঙানো নেই এ বছর। কিছুক্ষণের জন্য মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল জো’র। সঙ্গে সঙ্গে মায়ের কথা মনে পড়ল। বালিশের নিচে হাত দিতেই বেরিয়ে পড়ল লাল মখমলি মলাটের বইটা। এই বইটা লম্বা পথের পথিকের পথ চলার রসদ, মা বলেছিলেন। মেগকে ঠেলে তুলে দিল জো। ‘‘দেখ তোর বালিশের নিচে কি আছে!’’ সবুজ মখমলি মলাটের একটি বই মেগের প্রাপ্তি। ঠেলাঠেলিতে ঘুম ভাঙল বেথ আর এমি’র। বালিশের নিচে নীল আর ধূসর মখমলি মলাটের দুটি বই তাদের মিলল। ক্রিসমাসের মোজা এবার খালি, বাবা যুদ্ধে গেছেন।

বইগুলোতে মায়ের লেখা কিছু কথা আছে। মা নিজে লিখেছেন সবুজ কালিতে।

চার বোন বইগুলো কোলে করে হারিয়ে গেল কল্পনার আকাশে। পুব আকাশে তখন গোলাপ ফুলের রঙ ধরেছে।

মা কোথায়? হঠাৎ খেয়াল হল দুই বোনের। “ঈশ্বর জানেন!” বেশ চটে গিয়েই উত্তর দিল হানা, ‘‘এমন মানুষ তোমাদের মা, এক ভিখারির ছেলে যেই ভিক্ষা চাইতে এলো, অমনি উনি তার সঙ্গে দেখতে চলে গেলেন তাদের কি প্রয়োজন। এক শতাব্দী ধরে খুঁজলেও এমন মানুষ পাওয়া যাবে না যে এভাবে জামাকাপড়, খাবার, ওয়াইন সব বিলিয়ে দিতে পারে।’’

‘‘মা এসে যাবেন।’’ বলল মেগ, চার বোনের মধ্যে বড় সে, স্থিতধীও বটে। “সসেজগুলো আর কেকগুলো তুমি ভাজতে শুরু কর হানা।’’ হানা এই বাড়ীর পরিচারিকা হয়েও এই পরিবারের সুখদুঃখের সাথে মিশে আছে বহু বছর ধরে। একটু বিরক্ত হয়েই সে পা চালাল রান্নাঘরের দিকে।

মায়ের ক্রিসমাসের উপহার সাজাতে বসল ওরা। বেথের অপটু হাতে ফোড় তোলা রুমাল, এমির জ্যাকেটের ভিতর থেকে বেরল কোলনের ক্যান। পায়ের স্লিপার আর গোলাপ ফুল দিয়ে তৈরি হল মায়ের ক্রিসমাস বাস্কেট। সবই সামান্য হাতখরচ জমিয়ে কেনা। মা এলেন। বাস্কেটের সব জিনিস দেখে খুব খুশী হলেন।

মেয়েদের কোলের কাছে টেনে বললেন “আমি কিছু বলতে চাই তোমাদের। আমাদের বাড়ীর খুব কাছে এক ভিখারিনী তার ছটি শিশু নিয়ে এই শীতে বড় কষ্টে আছে। কোলেরটি তার সদ্যোজাত। কেমন হয় যদি আমরা আজ আমাদের ক্রিসমাস ব্রেকফাস্টের সসেজ, চিজ, কেক, পুডিং ওদের দিয়ে দি?”

একটু দমে গেল দলটা, তবুও মেগের উৎসাহেই রাজি হল তারা। ‘প্রতিবেশীকে ভালোবাসো’ - এই কথাটিও পালন করা হল বাইবেল মেনে।

মার্চ পরিবারের উষ্ণতায় সেদিন ভরে উঠেছিল ভিখারিনীর কুটীর। ক্রিসেন্থিমামের রঙ লেগেছিল ভিখারি শিশুদের গালে। তারা বলেছিল, আমাদের কুটীরে দেবদূতেরা এসেছে। শীতে বেগুনি হয়ে যাওয়া আঙ্গুলগুলো পেয়েছিল আগুনের ওম। বিকেলে নিজেদের হাতে তৈরি স্টেজে চার বোনের নাটক অভিনীত হল। দর্শক হানা ও মিসেস মার্চ। রাতের খাবার সময় হল। খিদেয় নাড়িভুঁড়ি চনচন করছে সকলের। সকালে দুধ, পাউরুটি ছাড়া কিছু জোটে নি এই যুদ্ধের বাজারে। নিচে নেমেই সকলে অবাক। টেবিলে রাশি রাশি খাবার।

সঙ্গে সাদা গোলাপি আইসক্রিম, চকোলেটে মোড়া ফ্রেঞ্চ বনবন। আর টেবিলের ঠিক মাঝখানটায় দুটো ‘হটহাউস’ ফুলের স্তবক। শোনা গেল, আজ সকালে ভিখারিনীর কুটীরে ব্রেকফাস্ট পার্টীর খবর পেয়েছেন পাড়ার খিটকেল লরেন্স বুড়ো। তিনি আজ সান্তাক্লস হয়ে মিসেস মার্চের ক্রিসমাস টেবিল সাজিয়ে দিয়েছেন। মিসেস মার্চ না বলতে পারেন নি, আর হট-হাউসের স্তবকদুটো বেগুনি, গোলাপি রামধনুর রঙের মত জেগে রয়েছে ক্রিসমাস টেবিলের আকাশ জুড়ে। বাবার কথা বড্ড মনে পড়ছিল ওদের। বাবাকে যদি ফুলগুলো দেখান যেত...



0 comments: