মুক্তগদ্যঃ পল্লববরন পাল
Posted in মুক্তগদ্য
মুক্তগদ্য
তিন গুনগুন
পল্লববরন পাল
একা নই বধ্যভূমিতে
একাকিত্বে ছমছম কালো বেড়ালের মতো সবুজ চোখের ভয় – ঠান্ডা শিরদাঁড়া থেকে শব্দহীন পাহাড়সানুতে আতঙ্কিত জলফোঁটা টুপ টুপ ছড়ায় সন্ত্রাস – গুগাবাবা সিনেমায় বাঘার এন্ট্রি মনে আছে? এ বাদাড়-তল্লাট আশৈশব তালু-পরিচিত – গলিপথ চিরকাল কালো বেড়ালের গা, ঘুটঘুটে এবং একাকী, বিদ্যুৎ মোমবাতি নেই, সবুজ শ্বাপদ দৃষ্টি ইতস্তত শুধু থাকে রাত্রি পাহারায় – বুকের ভেতর থেকে এইসব ত্যারাব্যাঁকা গলিঘুঁজি মাথা থেকে পায়ুদ্বার শাসন করছে ক্রমাগত
কী বলি তোমাকে আজ? ভালো কথা শোনানোর সাহস কিনতে গেছি ভুলে – স্বেচ্ছায় – মধ্যমাসে মানিব্যাগ টম্বুর রেস্টুরেন্ট-বিলে – সাহস কি ভাঁজ করে রাখা যায় মুদ্রা-কোলাহলে? কথা তো মশার মতো - শ্রেষ্ঠগতি বংশবিস্তারে – ভালো কথা আকাশকুসুম - ভালো মশা, মানুষের মতো
সকাল সকাল এক মুশকো-কালো বেড়ালের পাঁচিল-শৃঙ্গ জয় নিয়ে হইচই – কামদুনি থেকে কায়রোয় – রাষ্ট্রসঙ্ঘ ক্লাবঘরে টিভি ও ক্যারাম – কালো-সাদা-লাল ঘুঁটি থিকথিকে মাছিভিড় – কেউ কিন্তু একা নেই পৃথিবীর কোনও দেশে – নারী ও পুরুষ – শিশু ও শুয়োর - হরিদ্রাভ চোখওলা কালো বেড়ালের মতো ইথিওপিয়ার সেই কঙ্কালসার বালকেরও গায়ে গায়ে লেগে আছে বিশ্বব্যাপি ক্ষুধা – বিশ্বাসী নাছোড় সঙ্গী ধর্মকুকুর
আমিও তো একা নই আর – আয়না থেকে ডেকে নিই তাকে - সাষ্টাঙ্গে চুমু খাই – হাত ধরে হেঁটে যাই বধ্যভূমি বিছানার দিকে
--------------------------------------------
থার্ড থিয়েটার?
নাটক মানেই নয় উঁচু স্টেজ অডিটোরিয়াম। আলো সেটসেটিঙের হ্যাপা নয়। কুড়ি-বিশ যুগে আর তিন চার মাসব্যাপি রিহার্সাল-টিহার্সাল নয়। ব্রেশ্ট-স্তানিস্লাভস্কি বা শম্ভু-উত্পলময় প্রয়োগকৌশল নয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নয়। শুকনো কাশি মুঠিফোন সাইলেন্সে রাখবার অনুরোধ চিত্কার নয়। টিকিট বিক্রি নয়। দর্শকসংখ্যা নিয়ে আর্থ-গাণিতিক কোনো লাভ-লোকসান নয়। দর্শক হলো কি হলোনা – প্রযোজক গৌরী সেন - না হলে বরং বেশি ভালো।
প্রথাগত স্ক্রিপ্ট নেই। ডায়লগ অন্-স্পট উচ্চারণ অনভিধানিক - মুখস্থের হাঙ্গামাও নেই। ভরপুর অ্যাকশন। স্বতঃষ্ফুর্ত কিছু শীৎকার-আবহের ব্যবহার আছে। আদ্যোপান্ত জীবনমুখিন।
পাঁচ কিম্বা ছ’টি চরিত্র – সন্ধান করেনা কোনো নাট্যকারের, প্রয়োজনও নেই – তত্সহ একটিমাত্র নারী।
মেট্রোস্টেশনে পথে ভীড়বাসে পাঁচিলের ভাঙাকোণে অভিনয়। কখন কোথায় কবে – আগেভাগে বিজ্ঞাপন নেই। চলতি মানুষজন দাঁড়াবে সহসা। নির্বাক। অথবা উর্দ্ধশ্বাস। এ নাটকে হাততালি নেই, ফিরপথে কখনোসখনো অযাচিত মোমবাতি জ্বালানো নিয়ম। সন্ধ্যেবেলা টিভির চ্যানেলে ওঠেনামে টিআরপি-র শেয়ারবাজার। খুশিহাসি গৌরী সেন মোমবাতিব্যবসায়ীর চওড়া চোয়ালে।
দৈনিক নির্ভয়ার আত্মাদের সংখ্যা বাড়ে উর্দ্ধলোকে ঘেরাও মিছিলে - মধ্যমণি মাথা নিচু, চোখ বন্ধ - বাদল সরকার।
-----------------------------------------------
নিরুদ্দিষ্ট একমাত্রা
কাব্যালাপে সহসা সন্ত্রাস - পঞ্চম পংক্তি থেকে একমাত্রা হঠাৎ উধাও – সমস্ত সীমান্তে খিল তুলে সারি বেঁধে তন্নতন্ন – শব্দ বর্ণ কমা রেফ র-য়ের ফুটকি সেমিকোলন – ব্রা থেকে অণ্ডকোষ গোয়েন্দা তল্লাশ – না:, এদিকওদিক ঝোপঝাড় – না:, এক থেকে চতুর্থ লাইন – না:, ইতিউতি শব্দলাশ – না:, সমার্থক বহুতল, কাটাকুটি, খানাখন্দ – না: না না – অগত্যা –
হঠাৎ হোঁচটে হাওয়া কলমের খেই – অট্টভেংচি মুদ্রালাপে হাই তুললো মধ্যরাত – জানলার কালো কাঁচে শহুরে উড়াল বিন্দুরা সারি সারি গুণচিহ্ন – অগত্যা –
বালিশে মাথা রাখতেই বাঁপাশের চিৎদেহ সমকোণ ঘুরে অক্টোপাস হাত-পায়ে সাপটে ধরলো আমাকে – পঁচিশ বছর চেনা রমণীয় প্রিয় ঘ্রাণে ধীরে ধীরে শিথিল স্নায়ুও – ঘুমের চৌকাঠে পা, মুহূর্তে নজরে আসে নিরুদ্দিষ্ট সেই একমাত্রা নরম নারীপাহাড় উপত্যকায় পোষা বেড়ালের মতো গুটিসুটি – বামাল গ্রেপ্তার করে ফিরতে যাবো পঞ্চম লাইনে – হাত-পা সরাতে গেলে হুড়মুড় নিদ্রাপ্রাসাদ, ক্রোধানলে পুড়ে যাবে সভ্যতা ও প্যাপিরাস খাতা - নিরুদ্দিষ্ট একমাত্রা অগত্যা আমার সতর্ক পাশবালিশ – আমি ঘুম
শেষরাতে নারী ডেকে নিয়ে যায় মোহনার স্নানাগারে – চোখের ওপর দিয়ে একমাত্রা ভেসে যায় বেনাগাল বন্দর ছাড়িয়ে
প্রতিবন্ধী চার পংক্তির কঙ্কালহাড় নিয়ে নোংরা ন্যাংটো ছেলে শিকনি-নাকে ডাংগুলি খেলে – ইতস্তত অক্ষরেরা নাগরিক অন্ধকারে সোনাগাছি কালীঘাটে শরীরশিল্পী হয়ে বেঁচেবর্তে থাকে
ইতিমধ্যে আমার শহর মাত্রাছাড়া শিশু-যিশু-হিসুর ত্রিফলা আলোর উত্সবে পঞ্চদশ পংক্তিভোজনে একনিষ্ঠ পোষা চতুষ্পদী
ফাটাফাটি! তিনটেই।
ReplyDeleteপালিয়ে বেড়ানোই বোধহয় মাত্রাদের রীতি আর কবিরা খুঁজে পেতে ধরে বেঁধে তাঁদের বন্দী করেন কবিতার পংক্তিতে, কিন্তু পল্লব তাঁর গদ্যে তাকে মুক্তি দিয়েছেন, মোহনাপাড়ি বেয়ে সে ভেসে গেছে কোন উত্তরণে...... তিনটি লেখা তিনটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ে, তিনটিই ছুঁয়ে যায় আমাদের চেতনার ভিন্ন ভিন্ন স্তর, তিনটিই আমাদের ভাবায়, ঋদ্ধ করে। দিনগত পাপক্ষয়ের অসহায়তার থেকে কিছুক্ষণের এই মুক্তির জন্য ধন্যবাদ পল্লব।
ReplyDelete...শিরোনামটি ভালো, তবে ছবিটির অর্থ বুঝলাম না – লেখাদেরও কি লিঙ্গ থাকে? তাহলে এর মধ্যে কোন সৃষ্টিদুটি পুরুষ আর কোনটি নারী? - শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়