0

ছোটগল্পঃ সুজয় চক্রবর্তী

Posted in


ছোটগল্প




জাতশিল্পী
সুজয় চক্রবর্তী



"মসলমানের ব্যাটা কালীপূজা করলু! মার হারামজাদারে...।"

গ্রামের মৌলবির কথায় উত্তেজিত হয়ে জনা চারেক যুবক মারতে লাগলো মফিজুরকে। ছাড়লো না ওর দুই সঙ্গী সাইনুর আর সাকিলকেও। টানতে টানতে ওদের নিয়ে গেল মসজিদ সংলগ্ন একটা ফাঁকা মাঠে। ওরা নাকি 'কাফেরের' মতো কাজ করেছে। ওদের কপালে আরও কি আছে, ওরা জানে না।

গ্রামেরই জুনিয়ার হাইস্কুলে পড়ে মফিজুররা। সহপাঠী ভগীরথদের গ্রাম থেকে কালীপুজো দেখে ফিরছিল সবাই। রাস্তাতেই পরিকল্পনাটামাথায় আসে সাইনুরের----তারাও কালীপুজো করবে। সাইনুরের কথায় রাজি হয়ে যায় মফিজ, সাকিলও।

সাকিল ভালো আঁকতে পারে। যে কোনও কিছু দেখেই ও অবিকল এঁকে ফেলতে পারে। শেখেনি কারও কাছে। মাটি দিয়ে পুতুলও গড়ে বেশ। মফিজুর বললো,"সাকিলরে, তুই কালী ঠাকুর গড়া, মুই পূজা করিম্।"

সাকিল কালীমূর্তি ভালো করে দেখেইনি কোনও দিন। স্কুলে গোবিন্দর ইংরাজি গ্রামার বইটা কালীমূর্তির ক্যালেন্ডার দিয়ে মলাট দেওয়া। বেশ কয়েকবার দেখেছে; তবে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে দেখা হয়ে ওঠেনি। কেনই বা দেখবে সে! তাদের ধর্মে তো আর মূর্তি পুজোর ব্যাপার নেই।

সেদিনই বিকেলবেলা হারান ঘোষের চায়ের দোকান থেকে কালীমূর্তির পুরনো একটা ক্যালেন্ডার জোগাড় করে ফেললো সাইনুর। ক্যালেন্ডারটা দেওয়ার আগে গোয়েন্দার ভঙ্গিতে কারণ জেনে নিয়েছিল হারান। অবাক হয়েছিল। মনে মনে ফতেপুরের মৌলবির মতোই বলেছিল,"মসলমানের ব্যাটা কালীপুজো করবা?"

ক্যালেন্ডারটা সযত্নে গুটিয়ে দোকানের বাইরে পা রাখতেই পেছন থেকে সাইনুরকে ডাকলো হারান। বললো,"দেখো বাপু, কালী কিন্তু জাগ্রত দেব্তা। হ্যালাফ্যালা না। মূর্তি গড়লি, পুজো না দিয়ে রক্ষে নেই। মনে থাকে যেন।"

সাইনুর সে ব্যাপারে হারানকে নিশ্চিন্তে থাকতে বলে চলে এসেছিল গ্রামে। হারানের কথাগুলো খুলে বলেছিল সাকিল, মফিজকে।

প্রতিমা তৈরিতে কি কি লাগে তা বলতে পারে একমাত্র ওদেরই সহপাঠি চঞ্চল। কেননা ওর দাদু ঠাকুর বানায়। বিকেলবেলা ওকে ওরা পেয়ে গেল সত্যদের পুকুরপাড়ে।
লিস্ট করে নিল মফিজ। আর কাউকে কথাটা বলতে মানা করলো তাকে। মাথা নেড়ে সায় দিল চঞ্চল।

এবার সাকিলের পালা। ক্যালেন্ডারের কালীমূর্তিটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো সাকিল। চোখ বুজে কালীমূর্তিটার একটা অবয়ব এঁকে নিল মনে। নিজে থেকেই বলে উঠলো,"মুই পারবি।" গায়ে হাত দিয়ে মফিজ বললো,"জানি রে সাকিল, তুই পারবু।"

মূর্তি গড়তে যা যা প্রয়োজন ---- মাটি, খড়, কাপড়,রঙ, জরি, নথ, মালা, আঠা, একে একে সবই জোগাড় করে ফেললো মফিজুর। পাশের গ্রাম সরাইহাট থেকেই পেয়ে গেল জিনিসগুলো। ঈদের আগে ওর আব্বা অনেক খুচরো পয়সার সাথে একটা কড়কড়ে একশো টাকার নোটও দিয়েছিল মফিজকে। সেটাই এখন কাজে লাগলো। তবে সাইনুরও দিয়েছিল কিছু। হাটের দশকর্মা ভাণ্ডার থেকে যখন সে জিনিসগুলো লিস্ট দেখে মিলিয়ে নিচ্ছিল, তাকে একটু হলেই দেখে ফেলতো নামিজ চাচা; যদি না মাথাটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিত মফিজ। কেউ দেখেনি।



গ্রামের দক্ষিণ দিকে ঝকুদের বাঁশ বাগান। এদিকটা বড়ো একটা কেউ আসে-টাসে না। এমনকি দিনের বেলাতেও। বাগানের একদিকে মন্ডলদের শ্যাওলাধরা ঘাট বাঁধানো পুকুর। আগে নিয়মিত এটা ব্যবহার করতো সবাই। এখন করে না। অন্যদিকটায় বিকাশ বসাকের ঠাকুরদার আমলের ভাঙাচোরা দালানবাড়ি। চারিদিকে বট, অশথ ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ এখন থাকে না। বিকাশ বসাক ফতেপুর বাজারের উপর বিরাট দোতলা বাড়ি হাঁকিয়েছে। বিল্ডার্সের ব্যবসা তার। বাগানের মধ্য দিয়ে রাস্তা আছে ঘোষপাড়া যাওয়ার। তবে খুব একটা দরকার না হলে এ পথ কেউ মাড়ায় না। শোনাযায়, এই বাঁশ বাগানেই নাকি ঝকুর বড়ো পিসি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল।

বাগান থেকে মিনিট পাঁচেক হাঁটাপথেই ঝকুদের বাড়ি। বড়ো করে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। মাঝে-মধ্যে ঝকু বাবার সাথে বাঁশ কাটতে বাগানে ঢোকে। একা ঢোকে না। সে সাহস ওর নেই। গা ছম্ ছম্ করে।

এমন নির্জন স্থানটিকেই মূর্তি গড়ার জন্য বাছলো মফিজুররা। রোজ রোজ একটু একটু করে প্রতিমা গড়তে লাগলো সাকিল। স্কুলের টিফিনের সময়টাই বেছে নেওয়া হল। এরজন্য স্কুল পালানো প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠলো। ঠিক দিন দশেকের মাথায় প্রায় সোয়া দু ফুটের একটা আস্ত কালীমূর্তিই গড়ে ফেললো সাকিল।

সত্যিই কি নিঁখুত সাকিলের হাতের কাজ! পালপাড়ার নামি শিল্পী সেই ভৈরব পালও যদি তার কালীমূর্তি দেখে, নিশ্চিত অবাক হবেই। হয়তো খানিকটা দুশ্চিন্তাতেও থাকবে সাকিলকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে। তার নাতির বয়সী একটা ছেলে.....।

সাকিলের গড়া মূর্তিটার সাথে ক্যালেন্ডারের মূর্তিটা মিলিয়ে নিল সাইনুর। এতটুকুও এদিক ওদিক হয়নি। দলের নেতা মফিজুর বললো,"শুন্ সাকিল, মুই কইছু মুই, তুই বড়ো শিল্পী হবু।" লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো সাকিল।

সাইনুরও সায় দিল,"মফিজ, তুই ঠিক কয়ছি, মুর মনও ইটাই বুলছে।"

লেখাপড়ায় খুব একটা ভালো না সাকিল। হয়তো বেশিদূর পড়া এগোবে না তার। 
ওর বাবা সেদিন বলছিল,"সাকিল, বিষ্টু মাস্টারের সঙ্গে হাটত্ দেখা হইল, পড়াশুনা পাছিস না শুনলু। কইছি মুই মরলি খাবু কেমনে করি?"

বাবার কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলেছিল সাকিল। সে হাতের কাজটাই ভালো পারে। নিজেও জানে তা। আর আজকে বন্ধুদের কাছ থেকে 'শিল্পী'র সার্টিফিকেটটা পেয়ে বেশ খুশি সে। তবে মূর্তি গড়ে কি আর লাভ হবে? তাদের ধর্মে তো....। পালপাড়ার শিল্পীদের মূর্তি বাজারে বিকোয়। তার গড়া মূর্তি কি কেউ নেবে? সে তো মুসলমান!

দুই বন্ধুর দিকে চোখ রেখে সাকিল বললো,"শুন্ তোরা, মোর পুতুল সবাই নিবি। কিন্তুক কালী ঠাকুর নিবি না। ওতো হিঁদুর দেব্তা। মোরা তো মসলমান। মুদের ছুঁয়া-ন্যাপায় উরা....।"

কথা কেড়ে নিল মফিজুর।----"ক্যান্, মুস্তাক যে ধূপকাঠি গড়ায় শায়েস্তাবাদে, তা কি হিন্দুর ঘরে নেয় না? আর উযে মিজানুর, গুড়-বাতাসার গুডাউনে খাতা লিখে, তাতে দোষ না?"

যোগ করলো সাইনুর,"আছা, দেখা যাবি তোর মূর্তিখান কে লেয়।"

মূর্তি তো গড়া হল। সাইনুরের মনে পড়ে গেল হারান ঘোষের কথাটা।মফিজুরকে মনে করিয়ে দিয়ে বললো,"ইবার কি হবু?"

---"মুই তো কইছিই পুজো করিম্।" বেশ দৃঢ়তার সাথেই কথাটা বললো মফিজুর।

এরপর পুরুতঠাকুরের মতো কালীমূর্তির সামনে বসে পড়লো সে। ধূপ-ধুনো ধরানো হল। ফুলও ছড়ানো হল প্রতিমার পায়ে। মায়ের প্রসাদ বাতাসাও কপালে ঠেকিয়ে খেল সবাই। তবে কোনও শনি-মঙ্গল বার নয়, দিনটা ছিল সোমবার। লুকিয়ে চুরিয়েই হচ্ছিল সব কিছু। কিন্তু তাল কাটলো বেলা পড়তেই। বিকেলের দিকে হঠাৎই ঝকুর ঠাকুমা এসে প্রণাম করে গেছেন কালীমূর্তিটাকে। তিনি যে কোথা থেকে জানলেন, বুঝতে পারলো না মফিজরা। মূর্তি গড়ার কারিগর সাকিলকে পিঠ চাপড়ে তিনি বলে গেছেন,"বা ব্যাটা, বাঃ... তুই তো বড়ো শিল্পী হবি একদিন।"

আনন্দ নায়েক। ঝকুর পিসেমশাই। এসেছিলেন ঝকুদের বাড়িতে বিয়ের নেমন্তন্ন করতে। ঝকুর ঠাকুমার মুখ থেকে সব শুনে ঘুরতে ঘুরতে তিনিও চলে এসেছেন বাঁশ বাগানে। সাকিলের কাজ দেখে-শুনে তিনি তো তাজ্জব বনে গেছেন। বলেই ফেললেন,"তুমিই এবার গাঁয়ের বারোয়ারি কালীপুজোর মূর্তি গড়বা, কেমন?"

সাকিল মাথা নিচু করেই উত্তর দিল,"মুরা তো মসলমান!" আনন্দ শিক্ষিত, সজ্জন ব্যক্তি। জোরের সাথেই বললেন,"আরে, তাতে কি? তুমি তো শিল্পী। শিল্পীর আবার জাত আছে নাকি?"

আনন্দ গ্রামের বারোয়ারি পুজো কমিটির সেক্রেটারি। পাল পাড়ার ভৈরব পালই প্রতি বছর মূর্তি গড়ে বারোয়ারি পুজোয়। ইদানীং ভৈরবের খুব নাম-ডাক হয়েছে। ভৈরবের আন্ডারে কাজ করে জনা পাঁচেক কর্মচারী। তার গড়া মূর্তি নাকি 'বিদেশে'ও যাচ্ছে এখন। তাই মূর্তির দামও বাড়িয়েছে ভৈরব। চড়া দামে মূর্তি কিনতে না পেরে গতবারই তো কেউ কেউ ঘটপুজো করার কথা জানিয়েছিল। পরে অবশ্য ভৈরবকে ধরাধরি করে কিছুটা কমতি করেছিলেন আনন্দ। আসলে পুজোর বাজেটটা আহামরি কিছু হয় না। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই তো চাষাভুষো।

খবরটা কি করে যেন পৌঁছে গেল ভৈরবের কানেও। ভৈরব নিজে এসে দেখে গেল সাকিলের তৈরি মূর্তিটা। সামনেই দাঁড়িয়েছিল সাকিল। ভৈরব সোৎসাহে বলে উঠলো,"তুই আমার কাছে কাজ করবি?"

সাকিল 'হ্যাঁ' বা 'না' কিছুই বললো না।

আগ বাড়িয়ে মফিজুর বললো,"অয় তো পড়ে। ওর বাপ্ এখুনও পড়াবি।"

ধমক দেয় ভৈরব--- "চুপ্ কর চ্যাংড়া! ও কি করবে, তুই বলার কে রে?"

সাকিল এবার মুখ খোলে,"মফিজ ঠিকেই কয়ছে কাকা, মুই এখুনও লেখাপড়া করমু। ফাঁকে ফাঁকে মুর্তি গড়াম্।"

যেন জ্বলে উঠলো ভৈরব। জোর গলায় বললো,"মাঝেসাঝে মূর্তি গড়ো, গড়ো। তবে ঠাকুর-দেব্তা বানায়ো না। শুনলাম সব। তুমরা কিন্তু মুসলমান! বারোয়ারি পুজোর মূর্তি পেত্যেকবার আমিই করি, আমিই করবো। ভুলেও আনন্দ নায়েকের কথায় পা বাড়াবা না।"

ইতিমধ্যে ঝকুও এসে হাজির বাঁশ বাগানে। সে সব শুনে বললো,"সাকিল মূর্তি গড়ুক না কাকু, তাতে আপনার কি?" 

কটমট করে তাকালো ভৈরব। ঝকু মাথা নিচু করে ফেললো ভয়ে। ভৈরবের নাতি চঞ্চল ঝকুদেরই সহপাঠী। চঞ্চল ঝকুদের কাছে তার দাদুর 'সাংঘাতিক রাগের' গল্প প্রায়ই করে। তাই ঝকু আর....। 

সাকিল বললো,"উরা যদি মোক কহে, মুই কি করিম্ কয়েক? "

সাইকেলের প্যাডেলে পা রেখে ভৈরব বলে উঠলো,"বুঝলাম, ভালো কথায় কাজ হবে না। দেখে নিস কি করি...।"

কিছুটা ভয়ে, কিছুটা উৎকণ্ঠায় মুখটা শুকিয়ে গেল সাকিলের।

মসজিদের ফাঁকা মাঠে একদল লোক হাজির হয়েছে। চোখটা কোনও মতে খুললো মফিজুর। দেখলো বেশিরভাগই তাদের ধর্মের লোক। তারা মফিজুরদের আরও কঠিন শাস্তি চায়। কারও কারও হাতে পায়ের জুতো, অপেক্ষা মৌলবির ইশারার। ভিড়ের মধ্যে মৌলবির সাথে কথা বলতে দেখা গেল ভৈরব পালকেও।

ভৈরব মৌলবিকে বলছে----"আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি মৌলবি সাহেব, কালীমূর্তি পুজো হয়েছে। এও শুনেছি, সাকিলকে দিয়ে এবার থেকে বারোয়ারি পুজোর মূর্তি গড়ানো হবে।"

ভৈরবের কথা শেষ হতে না হতেই মৌলবির ইশারায় মফিজুরদের জুতোপেটা করতে লাগলো কয়েকজন। মুখ দিয়ে ফেনা উঠে গেছে সাইনুরের। 'পানি''পানি' করছে ছেলেটা। সেদিকে কারও হুঁস নেই। এমন নৃশংস ঘটনার কেউই প্রতিবাদ করলো না। বরং অত্যাচারের মাত্রা তীব্রতর হল গোঁড়া হিন্দুদের সায়ে।

ভিড়ের মধ্যে ভৈরব তার এক কর্মচারীকে নিচুস্বরে বললো,"আমার ভাত মারবে ছোঁড়া? দেখাচ্ছি মজা। মূর্তি গড়ার সাধ একেবারে ঘুচিয়ে দিবো।"

কথাটা কানে গেল আনন্দ নায়েকেরও। তিনি তফাতেই দাঁড়িয়েছিলেন। ঘটনাটা বাজারে শুনেই চলে এসেছিলেন ক্লাবের ছেলেদের নিয়ে। কথাটা সহ্য হল না তারঁ। ভৈরব পালের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে তিনি বলতে শুরু করলেন,"মুস্তাক ধূপকাঠি বানালে দোষ নেই, মিজানুরের ছোঁয়া বাতাসায় লাগলে দোষ নেই, করিমের ছেলে ফুল বিক্রি করলে দোষ নেই, কেবল সাকিল মূর্তি গড়লে দোষের! আমরা এটা মানছি না, মানবো না।" চারদিকটা একবার দেখে নিয়ে আনন্দ বলে চললো,"বিসমিল্লার সানাই ছাড়াই পুজো হবে! নজরুলের শ্যামাসংগীত বাজবে না পুজো প্যান্ডেলে? এ তো দেখছি মৌরসিপাট্টা চালাচ্ছেন কেউ কেউ।এ হতে পারে না। এ অন্যায়।" 

আনন্দ'র কথায় সায় দিয়ে ক্লাবের ছেলেরা একসঙ্গে বলে উঠলো,''এটা অন্যায়। এখানে এসব চলবে না।"

চিৎকার চেঁচামেচিতে অর্ধচেতন সাকিল ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো।

মৌলবি সাহেব আনন্দ নায়েকের কথা থেকে ভৈরব পালের মতলবটা বুঝতে পারলেন। সাকিলদের পরিবারের অভাব-অনটনের কথাও তাঁর অজানা নয়। সাকিলের বাবা অন্যের জমিতে ভাগ-চাষ করে। মা বাড়িতে বসে বিড়ি বাঁধে। একটা পা অসাড় তার। সবকিছু ভেবেচিন্তে মৌলবি সাহেব ফরমান দিলেন,"উদের কারোর যখুন আপত্তি নাই, তখুন সাকিল মূর্তি গড়াবে। তবে পূজা কিন্তুক নাই। মসলমান মূর্তি পূজায় বিশ্বাসেই করে না।"

মৌলবি সাহেবের ফরমান শুনে একটু ভরসা পেলেন আনন্দ। মাটি থেকে সাকিলকে তুলে দাঁড় করালেন তিনি। তারপর বললেন,"শিল্পীর কোনও জাত নেই গো সাকিল, তুমি তো জাতশিল্পী!শুনলে তো মৌলবি সাহেবের কথা, মূর্তি গড়লি তোমার কোনও অন্যায় হবে না।"

দু'হাত দূরে দাঁড়িয়েছিল ভৈরব। কথাটা শোনার পর তার মাথাটা হেঁট হতে মাত্র দু-সেকেন্ড সময় লাগলো।

0 comments: