0

প্রবন্ধঃ অরূপ জ্যোতি ভট্টাচার্য

Posted in


প্রবন্ধ




পর্ন বনাম ইরোটিকা -সঙ্গে হ্যাকটিভিজম (hactivism)
অরূপ জ্যোতি ভট্টাচার্য



কিছুদিন ধরে ফেইসবুক খুললেই বেশ কিছু জোক চোখে পড়ছে। প্রসঙ্গ, পর্ন সাইট নিষিদ্ধিকরণ। পর্ন সাইট বন্ধ হয়ে যেতে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছেলেরা নাকি ম্যাগি খেয়ে সুইসাইড করেছে! এরকম অনেক জোকই স্থান পাচ্ছে সোশ্যাল নেটওয়র্কিং সাইটটিতে। আমাদের দেশে দুটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় চলছে। উত্তরপ্রদেশে অনাবৃষ্টি আর বাকি সর্বত্র অতিবৃষ্টি। বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশুর আনমনে খেলে চলার মাঝে ভারত সরকারের পর্ন সাইট ব্যান। এ যেন আগুনে ঘৃতাহুতি। বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে নামকরাসোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্টরা পক্ষে বিপক্ষে মত দিচ্ছেন। ৮ই আগস্টটাইমস অফ ইন্ডিয়াতে এডিটোরিয়াল পেজে বেশ ভালো দুটি আর্টিকল পড়লাম। সাথে চোখে পড়ল বেশ কিছু স্ট্যাটিসটিক্স। তার মধ্যে বেশ কিছু তথ্য চমকপ্রদ।আমেরিকা বা ইউরোপের মত এত সেক্স ফ্রি দেশেও পুরুষ কি মহিলা, আট থেকে আশি, পর্ন সাইট অ্যাক্সেস করে। পার্লামেন্ট মেম্বার, ভারত-ব্রিটেন নির্বিশেষে, পর্ন সাইট দেখে। পার্লামেন্ট‌-এর ভেতরে কি বাইরে। পর্ন সাইট নিষিদ্ধ হলে শুধু ইঞ্জিনিয়ার-ডাক্তার নয় –সাইন্স, আর্টস, কমার্স কোনো ছাত্রই খুশি নয়। সেই সাথে আর একটা বিতর্ক উঠে আসছে পর্ন নয়, ইরোটিকা চাই। সাথে প্রশ্ন উঠছে ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রাথমিক অধিকার কি না, তাই নিয়ে। বিষয়টা একটু আলোচনার অবকাশ রাখে।

ভারতীয় সংবিধানের একুশ নং ধারায় বলা আছে সমস্ত মানুষেরই একটা ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে। যেটাকে তার মৌলিক অধিকারও বলা যায়। তাই সুপ্রিম কোর্টএই পর্ন সাইট নিষিদ্ধিকরণ সমর্থন করে না। ভারত সরকারকেও ভাবতে হয়েছে। শুধু অপ্রাপ্তবয়স্ক পর্ন সাইটই ব্যান করা হবে। এটা নিঃসন্দেহে সমর্থনযোগ্য। সংবিধান সিদ্ধ।ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক দায়িত্ব এগুলি বর্জন করা। অপ্রাপ্তবয়স্ক পর্ন সাইট নিষিদ্ধ হওয়া আবশ্যক। তবে অ্যাডাল্ট সাইট গ্রহণযোগ্য। ভারতীয় সংস্কৃতি, কাম তথা সেক্স কে অসমর্থন করে না।ঋক বেদের দশম অধ্যায়ে বলা আছে, কাম বা সেক্স ইউনিভার্স এর অন্তরঙ্গ অংশ। কামদেবের পঞ্চশরের পীড়ায় স্বয়ং মহাদেবও পার্বতীর যৌবন রসের জারণে কামতাড়িত হন। তাই মহাদেবের তৃতীয় নেত্র কামদেবকে ভস্ম করে দিলেও পরে প্রাণ ফিরিয়ে দেন। কাম আর রতি স্বামী স্ত্রী। বাস্তবে কাম আর রতি যেন সহধর্মাবলম্বী।

কাম আর শিল্প দীর্ঘকালের বন্ধু। বেসিক ইনস্টিনক্ট সিনেমাতে শ্যারন স্টোনের ইন্টারভিউ সারা বিশ্বকে অলোড়িত করেছিল। ক্রস লেগ দৃষ্টি টেনেছিল সবার। সাথে সেই "ইট ইজ নাইস" যুগান্তকারী ডায়লগ! ক্যামেরাতে ধরা না দিয়েও কামনার গোপন ত্রিভুজের পরিমিতি। শিল্পে যৌনতা, সেক্স, কাম এগুলো একটা গ্রিক শব্দকে নির্দেশ করে।যাকে পরিভাষায় বলে ইরোটিকা। যেখানে সেক্স শিল্পের ছন্দ পায়।তা সে স্থাপত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, নাটক, সিনেমা যাই হোক। যেখানে আছে ভাবের সাথে রসের পর্যায়ক্রমিক রূপান্তর। তাই ইরোটিকা শিল্পের পরিভাষায় সংস্কৃতি সম্পন্ন। গ্রহণযোগ্য। এর সাথে আর এক শ্রেনীর সিনেমা হয়। যেগুলো তিনটি X লেটার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।যেখানে শিল্প নয়, যৌনতাটাই গুরুত্ব পায়। চার দেওয়ালের মধ্যে ঘটা অন্তরঙ্গ ব্যাপারগুলি বেরিয়ে আসে দেয়ালের বাইরে। আর সেখানেই বিতর্ক। যাকে বলা হয় পর্নোগ্রাফি, সংক্ষেপে পর্ন। সমর্থন, অসমর্থন, আইনি বৈধতা, অবৈধতা সব উপেক্ষা করে তৈরী হয় মিলিয়ন মিলিয়ন পর্নমুভি। বিতর্ক ওঠে পর্নস্টারের সামাজিক স্বীকৃতি নিয়ে। 

এই তর্ক বিতর্কের মাঝে ২২শে শ্রাবণ। ইংলিশ সাল তারিখকে স্বমহিমায় উপেক্ষা করে যে হাতে গোণা ক’টি বাংলা তিথি, তার মধ্যে অন্যতম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মনে পড়ে যায় ক্লাস টেন-এর ভাব সম্প্রসারণ- দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি, সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি? প্রসঙ্গ পর্ন মুভি। এটা ঠিক, যে ক্রমবর্ধমান পর্ন মুভির চাহিদা জন্ম দিয়েছে MMS লিকের মত ক্রাইম এর। বাড়িয়ে দিয়েছে হ্যাকিং। যেটা একপ্রকার সাইবার ক্রাইম। আর সেই ক্রাইম নিয়ে সচেতন করতে এসেছে হ্যাকটিভিস্ট। হ্যাকটিভিজম নামটা চমকপ্রদ। শব্দটা জন্ম নিয়েছে 1994 সালে। অক্সফোর্ড ডিক্শনারী তে সপ্তম এডিশনে শব্দটা দেখতে পেলাম না। নতুন এডিশনে নিশ্চয়ই স্থান পেয়ে গেছে। হ্যাকটিভিজম একটা পলিটিকাল চেতনা, যেটা হ্যাকিং এর সম্ভাবনা বিষয়ে সাবধানতা জানায়। কোড, ওয়েবসাইট মিররিং, জিও বম্বিং, এগুলো সবই ওই হ্যাকটিভিজম এর আওতায় পড়ে। তাই ভ্রম আর সত্য যখন একই দরজা দিয়ে আসে তখন পর্ন মুভি ব্যান করলে হয়ত কোনো সত্যের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাবে চিরতরে। যেটা হয়ত আজ চোখে পড়ছে না, কিন্তু পড়বে ভবিষ্যতে।

0 comments: