Next
Previous
Showing posts with label সম্পাদকীয়. Show all posts
0

সম্পাদকীয়

Posted in


ভোরবেলায় ঘুম ভেঙে গেলে দেখি চারিদিক অন্ধকার করে অবিশ্রান্ত ধারায় বৃষ্টি পড়ে চলেছে। কখন থেকে, কে জানে! হালদারদের দেড়শো বছরের পুরনো জোড়া শিব মন্দিরের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা মহানিম গাছখানা তার কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একেবারে কাকভেজা ভিজছে চুপটি করে। চেতনালোকে ঝোড়ো হাওয়ার বেগে ঝাপটা দিয়ে গেলো পদাবলি – 

‘এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা 
কেমনে আইলো বাটে। 
আঙ্গিনার মাঝে বঁধূয়া ভিজিছে 
দেখিয়া পরাণ ফাটে’ 

আহা! আহা! আমার বিরহবিলাসী মন মুহূর্তে আন্দোলিত হয়ে ওঠে… 

‘এ সখি হামারি দুখের নাহিকো ওর। 
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর 
শূন্য মন্দির মোর’ 

সেই মুহূর্তেই বুঝেছি, আজ আর কাজ হবে না কোনও… 'রইল পড়ে পসরা মোর পথের পাশে'।  আজ ‘এইখানে বাঁধিয়াছি ঘর/ তোর তরে কবিতা আমার…’ 

তারপরে সারাদিন ধরেই শুধু বর্ষাযাপন… ‘তোমার বাঁশীটি বাজাও’ – ওগো আমার পরাণ বঁধুয়া, আমার গোপন প্রেমিক…আমার সুদূরের মিতা... 

যাবার বেলায় শুধু জানিয়ে যাই, প্রকাশিত হলো ঋতবাক অষ্টম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা। 

ভালো থাকুন সকলে 

শুভেচ্ছা নিরন্তর…
1

সম্পাদকীয়

Posted in


সেদিন এক আড্ডায় (নিতান্তই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপ চ্যাট... খামোকা আমাদের ‘Covidiot’ ভেবে বসবেন না) কথা হচ্ছিলো এই অতিমারীজনিত মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে। তাতে এক রসিক বন্ধু বললেন, করোনা নাকি দুই প্রকার। সেলিব্রিটি আর হাড়হাভাতে। প্রথমটায় অকুন্ঠ আরোগ্য কামনা। দ্বিতীয়টায় স্রেফ সংখ্যা গণনা। প্রতিক্রিয়ায় কেউ হাসলেন, কেউ একটু দুঃখ পেলেন এবং অবধারিতভাবে মানবতাবাদী সংবেদনশীল কয়েকজন শাসনব্যবস্থার পিতৃপুরুষ উদ্ধার করে দিলেন। সেই সব কিছু হয়ে যাওয়ার পর একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করলেন সেই গ্রূপের সাধারণত সব থেকে মিতবাক সদস্যটি – মানুষের জীবনের যে এত দাম, সেটা মানুষ ঠিক কবে থেকে বুঝেছে?

সবাই আমরা virtually চোখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। উত্তরটা কারোরই জানা আছে বলে মনে হলো না। প্রশ্নটা যিনি করেছিলেন, একটু পরে তিনিই উত্তরটা দিলেন – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলস্বরূপ রাষ্ট্রসঙ্ঘ তৈরি হওয়ার পর। Human rights বা amnesty জাতীয় ধারণাগুলি সব তৎপরবর্তী। অর্থাৎ, আজ থেকে মেরেকেটে সত্তর-পঁচাত্তর বছর আগে। আনন্দের কথা, নিঃসন্দেহে। Better late than never, অবশ্যই। রাষ্ট্রসঙ্ঘের জন্য একটা অভিনন্দনসূচক ইমোজি পোস্ট করবো কিনা ভাবছি... ঠিক তখনই এলো একটা রীতিমতন চমকে দেওয়া পরিসংখ্যান, যার সূত্র পৃথিবীর বিশ্বস্ততম তথ্য ও সংবাদ সরবরাহকারী সংস্থাগুলির একাধিক – রাষ্ট্রসঙ্ঘের জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত মহামূল্যবান মানবজাতির প্রাণ রক্ষার্থে উৎসর্গীকৃত হয়েছে এই গ্রহের প্রায় ষাট শতাংশ বন্য প্রাণ! অর্থাৎ, যে কাণ্ডটি মানুষ তার সভ্যতার ইতিহাসের দশ হাজার বছরে (যার মধ্যে তার পেশাদার পশুশিকারীর প্রাচীন ও দীর্ঘ ভূমিকাটি অবশ্যগণ্য) করে উঠতে পারেনি, সেটা প্রায় হেলায় করে ফেলেছে তার নিজের জীবনের দামটি প্রায় অমূল্য হয়ে ওঠার অব্যবহিত পরেই।

কিন্তু যাক গে... এসব অসৈরণ কথাবার্তা বলে আপনাদের এমনিতেই খিঁচিয়ে থাকা lockdown mood আরও খিঁচড়ে দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য আমাদের নেই। আপনারা সপরিবারে, সবান্ধবে ও সপ্রতিবেশী করোনামুক্ত থাকুন, এই আমাদের ঐকান্তিক কাম্য। আমাদের অফিসটি যে ইতিমধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে, সে সংবাদও নিশ্চয়ই অনেকেই পেয়েছেন। সেখানে আপনাদের সবার স-মুখোশ ও স-দস্তানা অমন্ত্রণ রইলো। Sanitizer (Google বলছে sanity-র অর্থ নাকি মানসিক সুস্থতা! কি বিড়ম্বনা বলুন দেখি!) আমাদের তরফ থেকে সরবরাহ করা হবে।

সুস্থ থাকুন শরীরে ও মনে...
শুভেচ্ছা নিরন্তর
0

সম্পাদকীয়

Posted in



চায়না, চায়না, চায়নাকে কেউ চায়না 

তাই চায়নার ভারি দুঃখু 
সে বিদ্বান, তবু মুখ্যু 
তার তির্যক দুটি চক্ষু 
ভালো আয়না দেখতে পায় না 
তাই চায়না, চায়না, চায়নাকে কেউ চায়না 

উত্তর-আধুনিক এক কবি এই সেদিন এটা লিখে পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে সে কি হুলুস্থুলু! পুরস্কার এবারে একটা এক্কেবারে বাঁধা। তবে একটা কথা ঠিক যে, মাথার পোকা নড়ে উঠেছে ওদের। এই ভাইরাস বানাচ্ছে, তার পরেই আবার যুদ্ধুযুদ্ধু খেলতে শুরু করছে… কি যে করবে ঠিক করেই উঠতে পারছে না যেন! 


এদিকে দিন তো মন্দ কাটছে না। তিন মাস পূর্ণ হলো লকডাউনের। মোটামুটি সিস্টেমেই এসে গেছে। রেগুলার-ওয়্যার/ ডিসাইনার / পার্টি-ওয়্যার মাস্ক, স্যানেটাইজার - লাইট স্মেল, সান্দ্র-ফিল... তার ওপরে তেলের দাম বাড়ছে, জীবন বীমা থেকে বিমান সংস্থা – শুরু হয়ে গেছে সব কিছুর প্রাইভেটাইজেশন। এরই মধ্যে বেশ আছি আমরা, কি বলেন? 


লকডাউন দরকার ছিলো কিনা না, সেই নিয়ে প্রশ্নই নেই কোনও। কিন্তু ঠিক যে নিয়ম মেনে প্রথম বিশ্বে লকডাউন জারি হয়েছে, আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে সে নিয়ম মানা সম্ভব কি না, বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন কি? এই পরিকল্পনাহীন বন্দীত্বে করোনাকে কতটা বন্দী করা গেছে, জানা নেই। তবে এই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে আগেই তলনিতে ঠেকা অর্থনীতির যে দুর্দশা করা হলো, তার ফল ভুগবো তো আমরাই, কিন্তু তার দায় কে নেবে? এই পরিস্থিতিতে সাইক্লোন আম্পান প্রবল প্রতাপে ধ্বংসলীলা চালিয়ে মৃত অর্থনীতির কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে গেছে। 


প্রধানমন্ত্রী বললেন – আত্মনির্ভর ভারত! গুড জোক! করোনা-কালীন পরিস্থিতিতে ছোট বাণিজ্য সংস্থাগুলির জন্য স্বল্প হারের সুদে ঋণের ঘোষণা করলেন সেনাপতি; আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও পরিকল্পনার বাস্তবতা নেই ভারতীয় অর্থ-ব্যবস্থায়! ব্যাংকগুলিতে এই সংক্রান্ত নতুন কোনও নির্দেশ আসেনি এখনও পর্যন্ত। SIDBI জানাচ্ছে, ওঁরা নিজেদের তেমন কোনও প্রচার ইচ্ছে করেই করেন না, ঋণ প্রদান পদ্ধতি এতটাই জটিল, যে আসলে তা অবাস্তব প্রায় – অবশ্যই অফ দ্য রেকর্ড। তবে যে দেশের অর্থমন্ত্রীর মতে দেশের গড় মধ্যবিত্ত পরিবারের বার্ষিক আয় ছয় লক্ষ টাকা থেকে পনেরো লক্ষ টাকা, সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর কোন সমাধান আশা করা যায়? 


আর ত্রাণশিবিরগুলোর কথা না উল্লেখ করাই ভালো! কত দলাদলি, কত গোষ্ঠীবাজি! সবাই খালি ঢাকঢোল পিটিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে প্রমাণ করতে ব্যস্ত, কত 'নিঃশব্দে' জনসেবা করছেন তাঁরা! প্রহসন ছাড়া আর কি বলা যায় একে?! 


তবুও আশা মরে না। কিছু তো একটা হবেই। এবং যা হবে, ভালোই হবে। কারণ পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেলে, ফের সামনে এগোনো ছাড়া আর উপায় থাকে না। 


সুস্থ থাকুন মনে ও শরীরে 
শুভেচ্ছা নিরন্তর

3

সম্পাদকীয়

Posted in





সম্পাদকীয়


এই সম্পাদকীয় যখন লিখছি, বাইরে তখন তুমুল ঝঞ্ঝা-বৃষ্টি। বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত হওয়া সাইক্লোন - উম্পান ১৩০ কিমি/ঘন্টা বেগে এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শহরের উপরে। উন্মত্তা পৃথ্বী যেন প্রবল অসন্তোষে মাথা ঝাঁকিয়ে চলেছেন অবিশ্রান্ত। অতিমারীর দাপট কোথাও কমেছে, এমন নিশ্চিত খবর এখনও নেই। তারই মধ্যে গত একমাসে ভারত তথা বাংলা সংস্কৃতি জগতে একের পর এক নক্ষত্র পতন।

২৩ শে এপ্রিল ২০২০, ৭৫ বছর বয়সে চলে গেলেন বিশিষ্ট নাট্যকর্মী ঊষা গাঙ্গুলী। তিনি ১৯৭৬ সালে ‘রঙ্গকর্মী’ থিয়েটার গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর অভিনীত নাটকগুলির মধ্যে মহাভোজ, রুদালি, কোর্ট মার্শাল ইত্যাদি নাটক বিশেষ উল্লেখযোগ্য। একটা যুগের অবসান, নিঃসন্দেহে।

আশ্চর্য সমাপতন! এর ঠিক ক'দিন পরেই, ২৯শে এপ্রিল ২০২০,  ৫৩ বছর বয়সে চলে গেলেন ভারতীয় তথা বিশ্ব সিনেমা জগতের অন্যতম বলিষ্ঠ আর এক অভিনেতা, ইরফান খান। আমাদের আরও অনেক অভিনয় পাওয়ার ছিলো খানসাহেবের কাছ থেকে। অনেক বড়ো বড়ো ভারতীয় অভিনেতা যেখানে পিছিয়ে পড়েছেন, ইরফান খান সেই ভাষার বাধা অতিক্রম করে বিশ্বের দরবারে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। চুটিয়ে অভিনয় করেছেন বলিউড, হলিউড, তেলেগু, ব্রিটিশ ফিল্মে। জাতীয় শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, ৪ বার ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার,
২০১১ সালে পদ্মশ্রী পেয়েছেন ইরফান।

পরের দিন, অর্থাৎ ৩০শে এপ্রিল ২০২০, চলে গেলেন ঋষি কাপুর - বয়স হয়েছিলো ৬৮ বছর। জাতীয় শ্রেষ্ঠ শিশু অভিনেতা ১৯৭০ [মেরা নাম জোকার], জাতীয় শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ১৯৭৪ [ববি]। তিনিই সম্ভবত ছিলেন দি মোস্ট ন্যাচারাল অ্যাকটর অফ কাপুর ফ্যামিলি। ইন্দ্রপতন অবশ্যই। 

ওই দিনই ৮২ বছর বয়সে চলে গেলেন চুনী গোস্বামী। একই সঙ্গে
জাতীয় ফুটবল দলে ও রঞ্জি ট্রফি ক্রিকেটে বাঙলার অধিনায়কত্ব করেছেন। এমন প্রতিভা শতাব্দীতেও আসবে বলে মনে হয় না।

এই চলমান মৃত্যু মিছিলে ১৪ই মে যোগ দিলেন বাংলা সাহিত্য জগতের আরও দুই মহারথী। ১৯৯০ সাহিত্য অকাদেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত [তিস্তাপারের বৃত্তান্ত] ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক দেবেশ রায় এবং ভারতে আনন্দ পুরষ্কার[১৯৯৩,২০১৭], রবীন্দ্রভারতী ডিলিট[২০০৫], কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় – জগত্তারিনী পদক[২০১৮], বাঙলাদেশে - বাঙলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার[১৯৭০], একুশে পদক[১৯৮৫], স্বাধীনতা পুরষ্কার[২০১৫], জাতীয় অধ্যাপক[২০১৮] সম্মানে অভিহিত মহা নক্ষত্র আনিসুজ্জমান।

মৃত্যু মিছিল, তবুও জীবনও তো প্রবাহমান। ঝড়ের দাপটে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে ক্রমাগত। যদিও একথা মানতেই হবে, অতিমারীর কারণে লকডাউন না হলে এই সাইক্লোনে অবশ্যম্ভাবীভাবে আরও অনেক প্রাণ যেতো। যে নেয়, সে কিছু দিয়েও যায়! কোরোনা নিচ্ছে যেমন অনেক, ক'টা প্রাণ বাঁচিয়েও গেলো হয়তো। 

জীবন আছে, তাই মৃত্যুও আছে। নাট্যমঞ্চ তো খালি থাকতে পারে না! আর তাই অভিনয় চলতেই থাকে, আর এই সঙ্গে জীবনও...

সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন, সৃজনে থাকুন

শুভেচ্ছা নিরন্তর...
0

সম্পাদকীয়

Posted in

করোনারূপী অতিমারী মনুষ্যজাতীর ‘একান্ত নিজস্ব’ রাজ্যপাটে আঘাত হেনেছে অতি বিক্রমে, সন্দেহ নেই। আমাদের স্বেচ্ছাচারের নির্বিঘ্ন অধিকারে ব্যাঘাত ঘটিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড়ো শিক্ষাটাই মনে হয় দিয়ে যাচ্ছে করোনা। 

খুব ছোটোবেলায় মনে আছে, একবার ছেলেমানুষী অতিস্পর্ধায় অতি ক্ষীণতোয়া এক পাহাড়ি ঝোরার গতিপথ রোধ করার চেষ্টা করেছিলাম তার চলার পথের উপর বসে পড়ে। আমাকে অবাক করে দিয়ে সে তখন নাচতে নাচতে অপ্রত্যাশিত অতর্কিত বাধাটার পাশ কাটিয়ে আমাকে জীবনের এক চরম শিক্ষা দিয়ে অবলীলায় এগিয়ে গিয়েছিলো নিজের গন্তব্যে। 

আসলে তাইই হয়। জীবনপ্রবাহ থেমে থাকে না। পথ করে নেয়। নতুন পথ। আমরাও নেবো করে নতুন পথ। নিচ্ছিও। শিখছি অনেক কিছু। মনে পড়ে যাচ্ছে অনেক ফেলে আসা পুরনো সুঅভ্যাস। যেমন, আমার অবস্থাপন্ন সুপ্রতিষ্ঠিত বাবার ব্যবস্থাপনায় ছোটোবেলায় আমরা কখনও একসঙ্গে দুটো ডিম খাইনি। বলতেন - খাওয়াই যায়, কিন্তু প্রয়োজন আছে কিনা, সেটাই আসল বিবেচ্য। অনেকের মতোই আমারও মনে পড়ে যাচ্ছে, আধখানা ডিম খাওয়ার সেইসব ভোরের কাঁচা আলোর মতন নরম দিনগুলির গল্পগাথা।  

এত ধান ভানতে শিবের গীত গাইছি একটাই কারণে। বিশ্বের এই দারুণ অসুখের দিনেও ‘খাদ্যরসিক বাঙালি’ নিজের জাতিবৈশিষ্ট অক্ষুণ্ণ রাখার গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে রোজ রোজ কাঁড়ি কাঁড়ি বাজার করে দারুণ দারুণ সব পদ রান্না করে ছবি তুলে রেসিপিসহ সেই ছবি পোস্ট করছেন স্যোশাল মিডিয়ায়… তাতে ৯৮৭ রিঅ্যাকশন্স, ৫৬৪ কমেন্টস আর ৮২ শেয়ার! একাধারে অসাংবিধানিক ও অত্যন্ত অমানবিক। অসাংবিধানিক বলছি, তার কারণ নিজের শখ আহ্লাদ পূরণের জন্য নির্জন বাসের নির্দেশ একটা খেলো ছুতোয় অমান্য করে সামগ্রিকভাবে সমাজের ক্ষতি করার অধিকার সংবিধান আমাদের দেয়নি। আর অমানবিক তো বটেই। যে দেশের কোটি কোটি মানুষ এমনিতেই অর্ধভুক্ত, অভুক্ত থাকে, পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে তো আরও কথাই নেই, সেই দেশের সম্পন্ন মানুষের এই নির্লজ্জ ‘দেখো কত ভালো আছি’ প্রদর্শন শুধু অমানবিকই নয়, অন্যায়ও। অনেকেই বলবেন, আমরা কাউকে বারণ করেছি নাকি? ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে কিছু নেই বুঝি? … বলতেই পারেন। বলুনও। আমি তর্ক করি না। বাস্তবে পরিস্থিতি যে চতুর্থ শ্রেণির সরল অংকের মতো সহজ নয়, মুখে মানতে মানে লাগলেও, সে কথা আপনি আমি সকলেই জানি। মূল প্রশ্নটা ওই - খাওয়াই যায়, কিন্তু প্রয়োজন আছে কিনা, সেটাই আসল বিবেচ্য! 

 বিজ্ঞাপনটি দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৬ জুন, ১৯৪৫।
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে বিপর্যস্ত বৃটিশ ভারত।
আজ আবার প্রসঙ্গিক। [সূত্র - ইন্টারনেট]
মিতব্যয়ী হওয়ার যে অভ্যাস বহুকাল পূর্বে ছিন্ন বস্ত্রের মতো ত্যাগ করেছিলাম আমরা, তাকে আবার রপ্ত করতে হবে অনতিবিলম্বেই। মনে পড়ে যায়, ক্লাসে বসে খাতা ফোল্ড করে লিখলে আমাদের স্কুলের ইংরিজি দিদিমণি প্রতিমাদি যত্ন করে খাতাটা খুলে দিয়ে বলতেন- খাতা ভাঁজ করে লিখো না, ভাঁজ করে লিখলে ডান দিকে অনেকটা জায়গা নষ্ট হয়। ভাবা যায়? মিতব্যয়ীতার এর চেয়ে ভালো উদাহরণ আর কি হতে পারে! অরণ্যের সে পুরনো প্রবাদ তো সেই কবেই ভুলেছি আমরা – ওয়েস্ট নট ওয়ান্ট নট! 

জানি, বিলাসিতা একটি অভ্যাস; বলা সহজ, কিন্তু বর্জন করা অতি শক্ত কাজ। তবুও উপায় নেই। এবারে সত্যিই দুরূহ কাজেই নিজের কঠিন পরিচয় দিতে হবে। সমগ্র বিশ্বের রাজনৈতিক নীতিপ্রকরণে, ব্যবহারবিজ্ঞানের প্রচলন ভাবনায়, অর্থনৈতিক পরিকাঠামো বিন্যাসে, সমাজনৈতিক প্রণালী প্রণয়নে আসতে চলেছে আমূল পরিবর্তন। টোটাল সিস্টেম রিবুট। এই নিভৃতিযাপনের দিনগুলিতে বেসিকগুলো রেখে দিয়ে অপ্রয়োজনীয় স্টোরড মেমারি ডিলিট করে নিজেকে একটা কোর প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে ফেলার মস্ত সুযোগ পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি যাই হোক, অ্যাডাপ্ট করতে বেগ পেতে হবে না হয়তো। আমরা তখন প্রস্তুত পুরোমাত্রায়। 

এবারের ঋতবাক সংখ্যায় নিয়মিত বিভাগগুলি তো রয়েছেই, আরও রয়েছে বিশ্বের ২৯টি শহর থেকে পাঠানো সেখানকার যুদ্ধ পরিস্থিতির বিবরণ। লেখকদের নিজেদের কলমে। প্রায় অসম্পাদিত। [বিভাগ – someপ্রতীক]। এই সংখ্যায় শুরু হলো নতুন বিভাগ ‘ইতিহাসের কথা ইতিহাসের কাহিনি’, লেখনী ধরেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক অভীক মুখোপাধ্যায়। অভিনন্দন, অভীকবাবু। 

এবারে এ পর্যন্তই...

নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন 

শুভেচ্ছা নিরন্তর
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়


প্রকাশিত হলো ঋতবাক ষষ্ঠ বর্ষ, অষ্টম সংখ্যা।

কোনও রকম ভনিতা না করেই সরাসরি চলে যাই দু'একটা জরুরি কথায়। বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাস এই মুহূর্তে একটা বিধ্বংসী মূর্তি ধারণ করেছে, যাকে বলা হচ্ছে অতিমারী। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ট্যুইটার, প্রভৃতি বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় আমরা তথা প্রযুক্তিকে দাসানুদাস বানানো শিক্ষিত মানুষ এই মহাবৈশ্বিক বিপর্যয় নিয়ে যতই 'খিল্লি' করি না কেন, আমি বিশ্বাস করি, প্রাথমিক সাবধানতাগুলো আমরা সকলেই মেনে চলছি। অযথা নিজে আতঙ্কিত হয়ে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সাধারণ সাবধানতাগুলো মেনে চললে আপাতত নিজেকে ও নিজের পরিবারকে, একান্ত আত্মজনকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে, এটুকু খেয়াল রাখলেই যথেষ্ট; বিশ্ববাসীর কথা এখনও আর না হয় নাইবা ভাবলেন!

আর সবিনয় অনুরোধ এই যে, সমস্ত কিছুর মধ্যে রাজনীতি খুঁজতে যাবেন না, দয়া করে। অযথা এখনও এখান ওখান ঘুরঘুর না করে কটা দিন না হয় বাড়িতেই রইলেন! এমন কি হয়নি কোনও দিন, যেদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মনে হয়েছে - উফ্‌, আজ যদি অফিস যেতে না হতো!! তাহলে? 

একটা তথ্য দিই এখানে, এই লেখা যখন লিখছি, অর্থাৎ ২০ মার্চ, ২০২০, আজকের পর বিদেশ থেকে সমস্ত ফ্লাইট আসা সম্ভবত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে ২১ তারিখের পরে আপাতত আর কোনও বিদেশ থেকে আসা মানুষ ভারতবর্ষে প্রবেশ করতে পারছেন না। পরের দিন সারা দেশে ১৪ ঘন্টার কার্ফ্যু। অর্থাৎ অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়ার উপরে সরাসরি সরকারি নিষেধাজ্ঞা।  মনে করা হচ্ছে, এই পদ্ধতি অবলম্বন করার মধ্যে দিয়ে প্রায় লক্ষাধিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যাবে; এটাকে একটা কার্যকরী প্রচেষ্টা বলে স্বাগত জানানোই এই মুহূর্তে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছি। 

প্রসঙ্গত, আমার নিজের কথা বলতে পারি। আমার শরীরে করোনা ভাইরাস আছে কি না জানি না। কিন্তু অতি সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়ে আমি পরীক্ষা করাতেও আগেভাগে ততক্ষণ হাসপাতালে দৌড়বো না, যতক্ষণ না আমার শরীরে কোনও উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। কারণটা সহজ। এতে করে, একদিকে যেমন আমার শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে আমি নিজেই আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারি, সে সম্ভাবনা তো থাকছেই; আবার অন্যদিকে যদি আমার শরীরে আগে থেকেই করোনা ভাইরাস থেকে থাকে, আমার শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে যে কিনা নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে, আমার সংস্পর্শে আসা অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিরক্ষাসম্পন্ন কোনও আধার পেলে সে তড়াং করে লাফিয়ে সেখানেও বাসা বাঁধবে। এটাও মোটেই কাম্য নয় কিন্তু!

একটা কথা মনে রাখা দরকার, যুদ্ধে সে-ই জয়ী হয়, সময় মতো যে পিছিয়ে আসতেও জানে। সুতরাং আসুন, এক পা পিছিয়ে দাঁড়াই। আসুন, শৃঙ্খল ছিন্ন করি। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই বোধহয় প্রথমবার। যদিও ফালাফল সেই একই - মানব কল্যাণ!

সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন

শুভেচ্ছা নিরন্তর 
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়


ওরা চল্লিশজন কিংবা আরও বেশি
যারা প্রাণ দিয়েছে ওখানে—রমনার রৌদ্রদগ্ধ কৃষ্ণচূড়ার গাছের তলায়
ভাষার জন্য, মাতৃভাষার জন্য—বাংলার জন্য।

-মাহবুব উল আলম চৌধুরী

ওঁদের স্মরণ করেই আজ প্রকাশিত হলো ঋতবাক ষষ্ঠ বর্ষ, সপ্তম সংখ্যা। 

মাতৃভাষাকে লালন করার যে আন্দোলন সেই সেদিন শুরু হয়েছিলো, মনে হয় আজও চলছে তা সমান তালে...। মানে বলতে চাই, মাঝে মাঝেই শুনি 'গেল গেল' 'বাঁচাও বাঁচাও' রব। চিন্তিত বা প্রভাবিত হই নিশ্চয়ই; মানে চিন্তিত বা প্রভাবিত হওয়া উচিত অবশ্যই। তবুও পেঁচালো মন চেষ্টা করে একটু অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে বিচার করতে। বিস্তারিতই বলি... 

আসলে, কথা হলো, মাতৃভাষা যদি রাষ্ট্রভাষা না হয়, তাহলে একটু অসুবিধা হয় বৈকি। অভিমান হওয়াটাও বিচিত্র নয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে একটা বিশেষ সুবিধা হলো, আরও একখান ভাষা বেশ ফাউতে শেখার সুযোগও পাওয়া যায় – এবং একাধিক ভাষা জানা থাকাটা যে কোনও পরিস্থিতিতেই মন্দ কথা নয়, সেটা সম্ভবত অনস্বীকার্য।

ভারতবর্ষের ভাষাগত অবস্থানের চাইতে বোধহয় এ বিষয়ের প্রকৃষ্টতর উদাহরণ আর কিছু নেই। যেমন ধরুন আমরা, মানে গড়পড়তা বাঙালিরা, ছোটোবেলা থেকে মাতৃভাষা বাংলা ও পিতৃভাষা ইংরিজি (এর মধ্যে আবার অশ্লীলতা বা লিঙ্গবৈষম্য খুঁজতে যাবেন না দয়া করে) শিখতে শিখতে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের দুস্তর পারাবারগুলি পেরোতে পেরোতে এক সময়ে এসে টের পাই যে দু’টো ভাষার কোনওটাই সেভাবে শেখা হলো না। যদিও এই সমস্যা আমাদের মতন নিতান্তই সাধারণ মানুষের। প্রতিভাবানরা তার মধ্যেই এই দু’টো তো বটেই, সেই সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃভাষা, অর্থাৎ হিন্দিটিও দিব্যি রপ্ত করে ফেলেন। আর তেমন তেমন ক্ষুরধার মস্তিষ্ক হলে তো কথাই নেই। সাত-আটটি ভাষায় গড়গড় করে কথা বলতে, পড়তে এবং লিখতেও পারেন, এমন মানুষ চিরকালই ছিলেন এবং আজকের বিশ্বায়নের যুগে তাঁদের নিয়মিত সংখ্যাবৃদ্ধিও হচ্ছে; এ নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই বিশেষ।

আসল কথা সেটাই। আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান বলছে, একজন সাধারণ  মেধার মানুষ মোটামুটি স্বচ্ছন্দেই চার-পাঁচটা ভাষা শিখতে এবং প্রয়োজন মতন ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আর একটা বাড়তি ভাষা শিখতে অসুবিধা কোথায়? কোন পরিস্থিতিতে এই প্রসঙ্গের অবতারণা, সে কথা বলে দিতে হবে না নিশ্চয়ই। যে ভ্রাতৃভাষাটি আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে এত শোরগোল উঠছে মাতৃভাষাপ্রেমীদের মধ্যে, সেই হিন্দিকে তো আজ আর ফেলে দেওয়া যায় না। ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশে লেখাপড়া বা কর্মসূত্রে থাকতে হলে তো ওই হিন্দিই ভরসা। ইংরিজিটা যে এদেশের রাস্তাঘাটের নিত্য ব্যবহারিক বিনিময়ের ভাষা এখনও হয়ে উঠতে পারেনি বা অদূর ভবিষ্যতেও পারবে বলে মনে হচ্ছে না এবং সম্ভবত তেমনটা হওয়া বাঞ্ছনীয়ও নয়, সে কথা স্বীকার করতে তো কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। এবং এহ বাহ্য যে কাজের প্রয়োজনে আজকাল প্রায় অধিকাংশ মানুষকেই অন্য প্রদেশে যেতে হয়, বসবাসও করতে হয়। তাহলে সরকারি উদ্যোগে যদি হিন্দির মতো বহুল প্রচলিত একটি স্বদেশী ভাষা এই বেলা শিখে ফেলা যায়, তাতে তো অন্তত স্বদেশপ্রেমীদের বিশেষ আপত্তি থাকার কথা নয়!  বাংলার বাইরে কাঁচুমাচু মুখে ‘‘হাম মদ নেহি খাতা হ্যায়’’ বলে হাসির খোরাক হওয়ার চাইতে গম্ভীর মুখে ‘‘হম শরাব নহী পীতে হ্যঁয়’’ বলে সসম্মানে সরে আসাটা বেশি বুদ্ধির কাজ নয় কি?

তবে এত সব যুক্তির পরেও কিন্তু যে কথাটা স্বতঃসিদ্ধ থেকেই যায়, তা হলো মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনও ভাষা শেখা বা না শেখা প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছাধীন বিষয়। কোনও ভাষাই কোনওদিন কোনও জাতির উপর জবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়াটা সুস্থ প্রশাসনের লক্ষণ নয়... এবং আজকের দিনটা সেই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে অস্ত্র ধরার প্রতীক। যদিও সেই সংগ্রামে আমাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিলো না, তবু আমরা বুক ফুলিয়ে বলতেই পারি – আমাদের ভাষা বাংলা ভাষা এবং সেই ভাষার অধিকারের সংগ্রামকেই আজ সারা পৃথিবী সসম্মানে উদযাপন করে।

তাই বাংলা ভাষার প্রত্যেক পাঠককে আজ বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের  অভিনন্দন!

সৃজনে থাকুন, আনন্দে থাকুন...

শুভেচ্ছা নিরন্তর।
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়

কলকাতায় এখন উৎসবের বাতাবরণ। বই প্রেমীদের উৎসব। বই প্রেমীদের দুর্গোৎসব। আর ঠিক আট দিনের মাথায় শুরু ৪৪তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। এবারের থিম কান্ট্রি রাশিয়া। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০ তম জন্মবার্ষিকী পালন করাও এই উৎসবের অঙ্গ। এ এক এমন মেলা, যেখানে নৈতিকতার হিসাবটাই অন্যরকম।

এবারের বইমেলায় ঋতবাকের স্টলনম্বর ৩২২। আসছে ৪০টির ওপর নতুন বই। ব্যস্ততার পারদ এখন চরমে... তারই মাঝে রেখে গেলাম নিয়মিত ই-সংখ্যা। কিছুটা সংক্ষিপ্ত। বাদ পড়লো কিছু রেগুলার আইটেমও। তবুও, প্রেজেন্ট প্লিজ 😀

দেখা হবে ৩২২এ

সুস্থ থাকুন, সৃজনে থাকুন...

শুভেচ্ছা নিরন্তর...
0

সম্পদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



শূন্য এখন ফুলের বাগান
দোয়েল কোকিল গাহে না গান...

হেমন্তের বিষণ্ণতা গ্রাস করে সমস্ত কিছু। কাশ ঝরে যায়, খালি হয়ে যায় ভালোবাসার বারান্দাও... প্রথম যুগের ছাত্রী নবনীতার কথা লেখেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। বইতে থাকে মন্দির মসজিদের বড়ত্বের তর্ক-তুফান... জয় শুধুই ক্ষমতার। অর্থের। আর আত্মদম্ভের। সম্রাট নেবুচাদনেজার সম্রাজ্ঞীর আবদারে নির্মিত হয় ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান... মুক্তো বিন্দুর মতন শিশির নামে মন্দাক্রান্তা লয়ে... জীবনানন্দ লিখে যান...
লিপি কাছে রেখে ধূসর দ্বীপের কাছে আমি
নিস্তব্ধ ছিলাম ব’সে;
শিশির পড়িতেছিল ধীরে-ধীরে খ’সে;
নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি
উড়ে গেলো কুয়াশায়,-কুয়াশার থেকে দূর-কুয়াশায় আরও…

তবুও 'দ্য শো মাস্ট গো অন'...
প্রদর্শনী চলতে থাকে... চলতেই থাকে...
সৃজনে থাকুন, সুস্থ থাকুন,
শুভেচ্ছা নিরন্তর...
0

সম্পাদকীয়

Posted in



সম্পাদকীয়


ক্যালেন্ডার যেই সবেমাত্র বর্ষার বিদায় ঘোষণা করতে আরম্ভ করেছে, ওমনি, এ কি রে বাবা... আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এবং কয়েক ঘন্টায় পুরো শহর টইটম্বুর! বেচারা ক্যালেন্ডারেরই বা কি দোষ? সে না দ্যাখে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল, না পায় আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের খবর। এমনকি সম্প্রতি রাষ্ট্রসঙ্ঘের যে সমীক্ষা বলছে পৃথিবীর পরিমণ্ডলে স্বাভাবিকভাবে শ্বাসগ্রহণযোগ্য বাতাসের মেয়াদ বড়ো জোর আর তিন দশক, সেই সমীক্ষার খবরও বেচারা ক্যালেন্ডার রাখে না।

অবশ্য তাতে আমাদের ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ভারতবর্ষ এগোচ্ছে। ইসরোর চন্দ্রযান চাঁদের মাটিতে নামলো বলে। ভারতবর্ষ ছাড়া আর যে সাতটি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা চন্দ্রাভিযান করেছে, সেই অ্যামেরিকা, রাশিয়া, ইওরোপীয় জাতিসঙ্ঘ, চীন, জাপান এবং ইসরায়েল উন্নত অর্থনীতি হিসেবে পরিগণিত। সুতরাং আমাদের চন্দ্রযানের চন্দ্রাবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই যে দেশের অর্থনীতির ‘দানবিক উল্লম্ফন’ ঘটবে, তাই নিয়ে নিশ্চয়ই আপনাদের কারও কোনও সন্দেহ নেই! থাকলে এই মুহূর্তে সে সব দূর করুন। নিশ্চিন্তে থাকুন এবং মন দিয়ে আদার ব্যাপার করুন।

আরও আনন্দসংবাদ হলো, এবার কাশ্মীরিরাও নিশ্চিন্তে আদার ব্যাপার করতে পারবে। যে অগণতান্ত্রিক ৩৭০ ধারা এতদিন তাদের সেটা করতে দিচ্ছিলো না, তা এবার সমূলে উৎপাটিত। আর কোনও চিন্তা নেই। পাকিস্তানকে কদলী প্রদর্শন করে কাশ্মীর এবার ভারতকে আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে বসাবার জন্য সবেগে ধাবিত হবে। খালি সেদিন যে কার্টূনটা দেখলাম – একটা বাড়িতে আগুন লেগেছে... দাউ দাউ করে বাড়িটা জ্বলছে... তার ভিতরে আটকে পড়া লোকজনের আর্তনাদ ভেসে আসছে... আর বাইরে কারা যেন অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে দেওয়ালের একটা ফাটল সারাচ্ছে – এইরকম কার্টূন-আঁকিয়েদের অবিলম্বে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিলেই আমাদের আশু অগ্রগতির পথ নিষ্কন্টক!

যাই হোক...ঋতবাকের পঞ্চম বর্ষ পূর্ণ হয়ে ষষ্ঠ বর্ষ প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হলো। এখন এসব জাহাজের খবরে আমাদের কাঁচকলা! আমরা মন দিয়ে সাহিত্যচিন্তা-রূপী আদার ব্যাপার এবং বিনিময় করতে থাকবো। সঙ্গে থাকবেন। ভালো থাকবেন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়


বর্ষা আসি আসি করেও আসছে না। গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ভূগর্ভস্থ জল দিন দিন আরও গভীরে সেঁধোচ্ছে। আর ক’বছর পর কি হাল হবে, ভাবতেও ভয় করে। আর এসবের প্রেক্ষাপটে দেশ জুড়ে এই আর্থ‌রাজনৈতিক ক্যারিকেচার! সত্যি, আমাদের সহনশীলতা তুলনাহীন!

এরই মধ্যে ঘামতে ঘামতে গালে হাত দিয়ে ভাবি, এ কিসের ফলশ্রুতি? কল্যাণমূলক অর্থনীতি, যাকে বলে কিনা welfare economics -তারই backfire বা বিপর্যয় নয়তো! সাম্যবাদ চিরকাল যে আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা সাধারণ মানুষের উত্থানের কথা বলে এসেছে, আজ ভারতবর্ষের রাজনীতিতে তো তাদেরই রমরমা। যেটা সাম্যবাদ কখনও বলেনি, বা ভাবেওনি হয়তো, সেটা হলো এই যে, যাদের কিছুই নেই, তাদের কিন্তু শিক্ষা বস্তুটাও নেই। অথচ সাম্যবাদের বিশিষ্ট ভারতীয় প্রবক্তা তথা সেই সব উজ্জ্বল নক্ষত্ররা কিন্তু প্রায় বেশীরভাগই শিক্ষিত, সংস্কৃত, আলোকপ্রাপ্ত পরিবার থেকে এসেছেন। সাম্যবাদের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম... ন্যূনতম রুচিবোধ, ভদ্রতাবোধটুকুও আজ ভারতীয় রাজনীতি থেকে বিলুপ্তপ্রায়, এবং সেই রাজনীতির শীর্ষে যাঁরা এখন বিরাজমান, তাঁদের কথা এখানে বলে বিড়ম্বনা বাড়ানোরও কোনও অর্থ হয়না।

মোদ্দা কথা হলো, সাম্যবাদের স্বপ্ন সার্থক করে যে subaltern মানুষগুলোর ভারতীয় রাজনীতিতে উত্থান ঘটলো গত কয়েক দশক ধরে, আজকের এই অদ্ভুত পরিস্থিতি অধিকাংশেই তার ফলশ্রুতি। শ্রেণীশত্রু Elitist বুর্জোয়ারা তাই এখন শুধু মুচকি মুচকি হাসছেন।

যাক... এসব জাহাজের খোঁজখবর আমাদের মতন আদার ব্যাপারীদের কাজে আসে না। আমরা বরং আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির আপাতসুন্দর  নরম বালিশে মুখ গুঁজে যতটা সম্ভব সময় কাটিয়ে দিই... এবং সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে ও এই গ্রহের যৎপরিমাণ অবশিষ্ট রসটুকু শুষে নিতে নিতে কোনও এক মহান, অতি‘মানবিক’ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, যেন তাড়াতাড়ি বৃষ্টি এসে এই অসহ্য গরমের হাত থেকে রেহাই দেয়।

ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা নিরন্তর...
0

সম্পাদকীয়

Posted in

সম্পাদকীয়


সন্দেহ নেই, খুব একটা অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি। দিন কয়েক আগে, একটা কাজে গিয়েছিলাম ভুবনেশ্বরে। ফনি তার দাপট দেখিয়ে চলে যাওয়ার ঠিক ক'দিন পরেই। শুনলাম, একদিনে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকা। মন্দিরের ঐতিহ্যশালী ধ্বজা ছিঁড়ে গেছে হাওয়ার তোড়ে। গর্ভ মন্দিরের চূড়ার ফাটল দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে জল। খারাপ লাগছিলো ছোটো ব্যবসায়ীদের কথা ভেবে। বাঙালীর সেই চির চেনা পুরোনো পুরী ফিরে পেতে বেশ কিছু দিন লাগবে বলেই স্থানীয় মানুষেরা মনে করছেন।

এদিকে আবার দুদিন আগেই ধুমধাম করে সারা দেশ জুড়ে সু(?)সম্পন্ন হয়ে গেল লোকসভা ভোট পুজো। যতটা অশান্তি ঝঞ্ঝাট হবে বলে আশা করেছিলাম, ততটা হলোনা... সেটাই বিশেষ সন্দেহজনক। মানুষের শুভবুদ্ধির ওপরে আস্থা হারানো অন্যায়, তবুও ইদানীং সবসময় সেই অন্যায় না করতে পারছি কই! 

এই প্রচণ্ড গরমে নিজেকে সুস্থ রাখুন, শীতল রাখুন...

শুভেচ্ছা নিরন্তর...
0

সম্পাদকীয়

Posted in

সম্পাদকীয়



সবে পয়লা বৈশাখ গেলো। ঘরে ঘরে দেওয়ালে দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দ-নেতাজী-লক্ষ্মী-গনেশ-নারায়ণের ছবি সমেত ১৪২৬ বঙ্গাব্দের নতুন ক্যালেন্ডার ১৪২৫কে সরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই। মনটা কেমন সংস্কৃতি-পরায়ণ  হয়ে উঠছে মাঝেমাঝেই। চওড়া পাড় সুতির শাড়ী, বড়ো টিপ, ঘন কাজল, খোঁপায় জুঁইয়ের মালা! আহা আহা!!

কিছুটা আগের প্রজন্মের বয়োবৃদ্ধদের মুখে প্রয়শঃই  শুনি, 'আমাদের সেই সময়টাই ছিলো নক্ষত্রপ্রসবা স্বর্ণযুগ, এখনকার ছেলেপুলেরা...' -বিকৃত মুখভঙ্গীর আক্ষেপসূচক অসমাপ্ত সংলাপ ফলোড বাই চরাচর কাঁপানো গভীর দীর্ঘশ্বাস -  এ অভিজ্ঞতা কমবেশি আমাদের সকলের আছে। না, তুল্যমূল্য করতে চাই না। শুধু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ওঁরা যদি 'নাক্সাত্রা ডায়ামন্ড'-খচিত স্বর্ণযুগের মানুষ হন, তবে আমরা নিঃসন্দেহে শুধু সলিটেয়ার সেটিং প্ল্যাটিনাম এজে বিলং করি। হ্যাঁ, আমরা অনেক ভালো আছি। পঞ্চাশ বছর, এমনকি ত্রিশ বছর আগের তুলনাতেও।

আপনি বলবেন, 'মানেটা কি? যা হচ্ছে, সব ভালো?'

আরে উত্তেজিত হবেন না। যা খারাপ, তা খারাপই। আমি বলছি না, যা হচ্ছে, তা সবই ভালো। আমি বলছি, আমরা অনেকটা এগিয়েছি। সব দিক দিয়ে। আবার পেছিয়ে যাওয়াটা বিশেষ বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সেটা চাই না। আর আমাদের আগের প্রজন্মের এই যে মনোভাব, তাই নিয়েও বিশেষ চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কেননা, তাঁদের বাপ-জ্যাঠাও এমনই বলতেন। কারণ, যুগযুগ ধরে বাপ-জ্যাঠাদের কাজই এটা! তাই বলি কি, শুধু ক্যালেন্ডার নয়, পাল্টাক দিন! আসুন, এগোই সামনের দিকে!!

শুভেচ্ছা নিরন্তর... 
0

সম্পাদকীয়

Posted in



সম্পাদকীয়


হলুদ বরন মেখলায় তার যৌবন উছলায় 
লাল ওড়নার আড়াল দিয়া চক্ষু দুটি চায় 
খোঁপায় টগর ময়না বুঝি আমায় খুঁজে হায় 
বসন্তে এ বিহুর লগন উত্তাল হয়ি যায়...

'হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে, হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি তবুও ফুটেছে জবা, দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে, তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক'               - নির্মলেন্দু গুণ

বসন্ত মানেই অকারণের সুখ, বসন্ত মানেই সাজিয়ে তোলা বিরহ বেদনা!

আজ দোল পূর্ণিমা, বসন্তোৎসব। 
সূর্য-ঘড়ি সাত সকালে, ফাগুন রাঙ্গা শাড়ি পরে দিন গোনে আজ কার? 
বাসন্তিরা সবুজ টিপে, লাল সাদা আর হলুদ পাড়ে হাত ধরেছে তার

খুব ছোটোবেলায় মনে পড়ে, দোলের দিন সকালবেলা আমাদের বড়ো বাড়ীর উঠোনে নাচ গান হতো। বাসন্তী-রঙা লাল-পাড় শাড়ী গাছকোমর করে পরিয়ে দিতো মা। হাতে গলায় পলাশ ফুলের গয়না। দিদিদের পিছু পিছু আমিও নাচতুম... 
ও চাঁপা, ও করবী...তোরে ক্ষণে ক্ষণে চমক লাগে 

আবীর - ফুটকড়াই - মঠ...

যখন সদ্য কিশোরীবেলা, আমার এক নীরব প্রেমিক, ধরুন তারও নাম 'উত্তীয়' , নিউ আলিপুর থেকে একটা পুরনো রঙ-চটা জামা গায়ে চড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে আসতো আমাদের ভবাণীপুরের বাড়ীতে - সবার চোখের আড়ালে গালে কপালে এক ফোঁটা আবীর ছোঁয়াবে বলে!

'অনেক আশ্চর্য কথা বলেছি তার কানে, 
হৃদয়ের কতটুকু মানে
তবু সে-কথায় ধরে!!' - প্রেমেন্দ্র মিত্র

আর একটু বড়ো হয়ে, অনেক বছর এই দিনটা আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কাটিয়েছি শান্তিনিকেতনে। 

তখন সবকিছু ছিলো অন্যরকম। কত রঙ ছিলো, কত উচ্ছ্বলতা, কত উজ্জ্বলতা! 

জীবনের মধ্যাহ্নবেলায় এসে মনে হয় - স্মরণের তুলিতেই কবিত্বের রঙ ফোটে ভালো। 

তাই বলি, এত কথার দরকার কিসের? থাক পড়ে আর সব কথা, শুধু একরাশ বাসন্তী শুভেচ্ছা
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়


দিন দশেক আগেই শেষ হলো বইমেলা... মেলা বই নিয়ে নাড়াচাড়া। মূলত মাতৃভাষাতেই। আজ আবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। 

আমাদের ছোটোবেলায়, মনে আছে বাংলাদেশ দূরদর্শনে এই দিনে বাজতো সেই বিখ্যাত গান - আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি! গায়ে কাঁটা দিতো... এখনও বাজে... কিন্তু শিহরিত হই না আর। ভাষার জন্য যে জাতি একদিন প্রাণ দিয়েছিলো, ধর্মের জন্য প্রাণ নিতে তারাই যখন আজ উদ্যত হয়, বড়ো অবাক লাগে, অসহায় লাগে!  কিন্তু সে অন্য প্রসঙ্গ। 

আপাতত, আমরা এই ভেবে খুশি থাকতে পারি যে, বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চার যে নতুন জোয়ার এসেছে, তাতে শুধু দুই বাংলার নয়, সামিল হয়েছেন সারা বিশ্বের মননশীল বাঙালী। এখানে যে অবশ্যই একটা বিশাল ভূমিকা পালন করেছে সোশ্যাল মিডিয়া, একথা অনস্বীকার্য। আর ঋতবাকের জন্ম এবং সাহিত্যযাত্রাও শুরু এই সোশ্যাল মিডিয়াতেই। 

প্রসঙ্গত, একটা ইন্টারেস্টিং ইনফরমেশন দিই। সমস্ত ভারতীয় ভাষা মিলিয়ে সারা বছরে যত বই প্রকাশিত হয়, শুধু বাংলা ভাষায় হয় তার দ্বিগুণেরও বেশি। 

তাই সাহিত্যপ্রেমী বাঙালী, নিশ্চিন্তে ডুব দিন আরও সৃজনশীলতায়। 

শুভেচ্ছা নিরন্তর
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



কখনো সময় আসে, জীবন মুচকি হাসে
ঠিক যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা...

না না, হিসাব মেলাতেও চাইছি না। একদম দোরগোড়ায় কলকাতা বইমেলা, ২০১৯। এটা ঠিক হিসাব মেলানোর সময় নয়। তবুও হিসাব রাখতেই হয়। এক বইমেলা থেকে আর এক বইমেলা... মাঝের দিনগুলোয় বিস্তর টানাটানি, হাঁকাহাঁকি, দর কষাকষি, মূল্যবিচার... মন দিয়ে নিজের কাজ করা ছাড়া প্রমাণ করার কিচ্ছুটি নেই।

ঋতবাক পাবলিকেশনের কথা বলছি। এই এক বছরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ঋতবাকের একটা বাংলাদেশ যোগাযোগ তৈরী হয়েছে সরাসরি। নিঃসন্দেহে, ভালো খবর। বেশ কিছু বাংলাদেশী কবি-সাহিত্যিকের বই প্রকাশ করা গেলো। সঙ্গে কানাডা - ইউ এস এ - মিডল ইস্টে স্থিতু হওয়া বাঙালি সাহিত্যানুরাগী সুহৃৎজনের উৎসাহে তৈরি হলো আরও কিছু বই... আমরাও উৎসাহী। সবচেয়ে বড়ো কথা, আমরা আশাবাদী, বেশ কিছু প্রথিতযশা সাহিত্যিকের খানকয়ের নির্মাণ নিয়ে। আক্ষরিক অর্থেই দিন গুণছি...সর্বোমোট ৭৫ এর কাছাকাছি টাইটেল নিয়ে, যার মধ্যে ৩২টাই আনকোরা। 

সব দেখাবো। বইমেলার ৩৩০ নম্বর স্টলে। আন্তরিক আমন্ত্রণ রইলো... পুরোনো-নতুন -সব বন্ধুদের। অপেক্ষায় থাকবো অধীর আগ্রহে...

অফুরন্ত উৎসাহ উদ্দীপনা ছুঁয়ে যাক আপনাকেও...

শুভেচ্ছা নিরন্তর...

0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়


সেই কবে বনওয়ারী বলে গেছে, 'বছর পার হয়েছে, তাতে দণ্ডকাল ফুরায় নাই...'

ঠিকই তো! মানুষের তৈরি নিয়মে বছরের শেষ মাস। তাতে কালের কি বা এসে যায়! কাল চলেছে কালের নিয়মে। কান পাতলেই শোনা যায় তার যাত্রা ধ্বনি। 

বহুকাল পরে এই ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কলকাতার তাপমাত্রা নেমেছে ১৫ডিগ্রীর নিচে, তাও একটানা নয়, কখনও সখনও। তাতেই নাকি বাঙালি 'যুবুথুবু'। 

তা ভালো। উপভোগ করুন জয়নগরের মোয়া, নাগপুরের টক কমলালেবু, নলেনগুড়ের সন্দেশ। শাল কিনুন কাশ্মীরি শালওয়ালার কাছ থেকে। একটা উপলক্ষ্য তবু পাওয়া গেছে। 

দেখা হবে আবার নতুন বছরে।

সুস্থ থাকুন, সৃষ্টিতে থাকুন, আনন্দে থাকুন

শুভেচ্ছা নিরন্তর




0

সম্পাদকীয়

Posted in

সম্পাদকীয়



শূন্য করে ভরে দেওয়া যাহার খেলা
তারি লাগি রইনু বসে সকল বেলা...


হেমন্তের মাঠে মাঠে কবিতার পংক্তিগুলি গেয়ে ফেরে নবান্নের গান। আমার সব খোয়াবার সময় বুঝি হলো এবার...

দেখতে দেখতে পাঁচ বছর পেরিয়ে চার মাস। অর্থাৎ ষষ্ঠ বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা বা চৌষট্টিটা সংখ্যা। অনেক লেখা, অনেক লেখক। গুচ্ছ গুচ্ছ লেখা আসে প্রতিনিয়ত। তবে তার চেয়েও বড়ো কথা হলো গুচ্ছ গুচ্ছ লেখা বাদ পড়ে প্রতিনিয়ত। কিন্তু কেন? লেখার মান বা অন্য কারণ বাদ দিলে মূলত যে কারণটা পড়ে থাকে, তা হলো 'বানান'। বলতে খারাপই লাগছে... প্রতি মাসে বেশ কিছু লেখা বাদ পড়ে শুধু ওই কারণেই। আর, সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, এই বাদ-পড়া লেখাগুলোর মধ্যে অনেকগুলো বেশ ভালোই লেখা। আফসোস হয়, কিন্তু নিরুপায়। এত বানান এডিট করা অসম্ভব।   

এমনিতে, বাংলা ভাষায় লেখার হার সর্বাত্মকভাবে যেমন বেড়েছে, তেমনই বাংলা বানানের মান হতাশাজনকভাবে নিম্নগামী হয়েছে, একথা অনস্বীকার্য। কিন্তু তাই বলে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। বাংলা বানানের মানোন্নয়নের দায় গ্রহণ করতে হবে সর্ব্বস্তরেই। এবিষয়ে সামান্য ক'দিনের অভিজ্ঞতার ফলপ্রসূ কিছু সাজেশন রাখতে পারি এখানে, যদি কারোর কাজে লাগে, এই ভেবে --

প্রথমেই বলি, একটা অভিধান হাতের নাগালে রাখুন সবসময়। ণত্ববিধি - ষত্ববিধিটা একবার ঝালিয়ে নিলে বানান ভুল অনেকটা কমে - বাংলা বানানের এটা খুব গোলমেলে একটা অধ্যায়। এছাড়া, আমরা ঋতবাকে কিছু বানান বিধি মেনে চলি, যেগুলো একবার বুঝে নিলে বানান ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায়। যেমন, হল - লাঙ্গল অর্থে, হলো - হইলো অর্থে; হত - নিহত অর্থে, হতো - হইতো অর্থে; ভাল - ললাট অর্থে, ভালো - উত্তম অর্থে। এ তো (এতো নয়) - এই তো অর্থে, এত - অনেক অর্থে। তেমনই ছোটো (ছোট-এর ব্যবহার -  হেঁটে গেলে ধরতে পারবি না, ছোট), বড়ো (বড়ো দাদা, কিন্তু সম্বোধনে - বড়দা), ইত্যাদি প্রভৃতি। আসলে এগুলো আমরা সবাই জানি, লেখার সময় খেয়াল থাকে না কেবল। কিন্তু খেয়ালটা এবার থেকে রাখতে হবে সচেতনভাবেই। 

লেখার সময় আরও একটা বিষয়ে সচেতন হতে হবে, সেটা হলো পাংচুয়েশন বা যতিচিহ্ন। আমরা সবাই জানি, পাংচুয়েশন ছাড়া লেখা অর্থহীন। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে - কোনও পাংচুয়েশনের আগেই স্পেস হয় না। একই নিয়ম খাটে ওপেন ইনভার্টেড কমার পরে এবং ক্লোজ ইনভার্টেড কমার আগে; দু'ক্ষেত্রেই স্পেস হয় না। 

গদ্য এবং পদ্য লেখার ক্ষেত্রেও একই শব্দের ভিন্নরূপে প্রয়োগ প্রচলিত। যেমন,

পদ্যে - সাথে, গদ্যে - সঙ্গে 
পদ্যে - আজি, গদ্যে - আজই
পদ্যে - তেমনি, গদ্যে - তেমনই
ইত্যাদি এবং ইত্যাদি...

এবারের ঋতবাক সংখ্যায় অনেক বানান ভুল। এবার থেকে আমি আর বানান ভুল ঠিক করবো না। এখন থেকে আপনাদের নিজেদের পত্রিকার মান রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের নিজেদেরই। নিজেরাই এডিট করে পাঠান আপনাদের লেখা। একমাত্র সচেতনতাই পারে সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে। 

আমি আশাবাদী।

সুস্থ থাকুন, সৃষ্টিতে থাকুন, আনন্দে থাকুন

শুভেচ্ছা নিরন্তর 
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়



নীল তিমি থেকে বাথটব – গভীর সমুদ্র থেকে সোপওয়াটার – আমরা সেই জলেই আছি এবং মৃত্যু মিছিলের মধ্যে বেশ অদ্ভুতভাবে বেঁচে আছি! কিভাবে, কে জানে!  অবশ্য নিন্দুকের দল বলছে – এটাকে বেঁচে থাকা মোটেই বলেনা; চতুর্দিকের এই অমানুষ অধ্যুষিত সমাজে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কিত বুকে পড়ে থাকাকে কি বেঁচে থাকা বলে? রাজামশাই গাইছেন – হাল্লা চলেছে যুদ্ধে – আর আমরা কোরাসে সবাই তাঁর পোঁ ধরে ‘হাল্লা হাল্লা হাল্লা’ করেই চলেছি, করেই চলেছি... গুঁড়ি মেরে চেরা জিভে হিস হিস করতে করতে এগিয়ে আসছে আগুনে ঋতু...

এরই মধ্যে চুপি চুপি চলে গেলেন স্টিফেন হকিং – পৃথিবীর একমাত্র মানুষ, যিনি প্রতিবন্ধী ছিলেন না কোনওদিন। আস্ত একটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যাঁর কর্মক্ষেত্র, গবেষণার খাতিরেই হয়ত হুইলচেয়ার গড়িয়ে গেছে অন্য কোনও সৌরজগতে – আলোর খোঁজে

অন্ধকার ভালো নয়। আমি অন্ধকারে এতকাল।।
শুধুই আলোর ইচ্ছা লালন করেছি।
শুধুই আলোর ইচ্ছা, আলোর অসীম ইচ্ছা নিয়ে
আমি এই অন্ধকারে জেগে আছি। এই
অব্যয় তরল অন্ধকারে।

[অন্ধকার নয় – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী]

আমাদের জেগে থাকতেই হবে – শুভবোধ নিয়ে – আলোর অপেক্ষায় – আমরা জেগেই আছি

শুভেচ্ছা নিরন্তর
0

সম্পাদকীয়

Posted in


সম্পাদকীয়


ইদানিং গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্বায়িত উষ্ণায়নের কল্যানে শীতকালের সঙ্গে শীতের আর খুব একটা সম্পর্ক নেই, বরং শীতকাল মানে আপাতত শুধুই সাড়ে পাঁচটায় সকুয়াশা সন্ধ্যে, শীতকাল মানে মাফলার-সোয়েটারের নিচে ঘামনদীর কুলকুল, শীতকাল মানে হোয়াটস্‌আপে মেরি ক্রিসমাস আর হ্যাপি নিউইয়ার – কেক আর মদ, শীতকাল মানে পিঠে-পাটিসাপটা, শীতকাল মানে রুটি আর নলেন গুড়, শীতকাল মানে বইমেলায় সেলফি, শীতকাল মানে হাঁউমাঁউ উৎসব, শীতকাল মানে সরস্বতীপুজো আর টোপাকুল, ধুতিপাঞ্জাবি আর বাসন্তিরঙের শাড়ি, শীতকাল মানে ভ্যালেন্টাইন উৎসব – হিহি হাহা ধ্যাৎ কী অসভ্য - এতো সব পেরিয়ে ভাষাদিবসে এসে কোমরে হাত, জিভ বের করে হ্যাহ্‌ হ্যাহ্‌ - টার্মিনাস। হ্যাপি ভাষা দিবস! 

আর ভাষাদিবস মানে?

‘লিসন্‌ বেবি, ডোন্ট ফর্গেট আজ ভাষা ডে, উই মাস্ট টক্‌ ইন বেঙ্গলি টুডে’ 

এই ভণ্ডামিসর্বস্ব আপাতজীবনেই আমরা এখন আত্মমগ্ন সুখী – চারপাশের ঘটনাবহুল সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সন্তর্পনে ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনের জানলার বাইরেই রাখি, ভারি পর্দা টপকে ঘরে ঢুকতে দিইনা – বধূহত্যা ধর্ষণ খুন আত্মহত্যা – দৈনিক এ সব খবরে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি – গরুর মাংস ফ্রিজে রাখার জন্য পিটিয়ে হত্যা – আমরা হাই তুলে পাশ ফিরে শুয়েছি – গৌরী লঙ্কেশ হত্যা – তো? আমার কি? আমি তো মুখপুস্তকে চোখের জল ফেলেছি – সম্প্রতি সিরিয়ায় নির্মম গণহত্যা – আমরা শ্রীদেবী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, স্যরি, কী স্যাড্‌!

মাঝখানে কিছু মোমবাতি মিছিল দেখতাম রাজপথে মাঝে মাঝে, বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে অহিংস ও নরম প্রতিবাদ হিসেবে – এখন আবার সবাইকে জড়ো করো রে, দাদাদিদিদের অনুমতি নাও রে, মোমবাতি কেনো রে, রাস্তায় হাঁটো রে – ধ্যুস্‌, অতো পোষায় না গুরু। 

‘আকাশে তবু রয়েছে রঙ ছড়ানো,
এখনও তার খানিক দিয়ে
হৃদয় যায় ভরানো।
এখনও ক্ষয়ক্ষতির খাতা
ওঠেনি ভরে, ভরিও না তা,
হাওয়ার হাতে এখনও পাতা
ঝরানো
হয়নি শুরু, হৃদয়ে রঙ
এখনও যায় ছড়ানো।
(নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী – ‘রঙছুট’) 

হাতে হাতে রঙ নিয়ে ঋতবাক নেমেছে রাস্তায় – আজ বসন্ত।

শুভেচ্ছা নিরন্তর...