0

ঝরনাতলার নির্জনে - শিবাংশু দে

Posted in

ঝরনাতলার নির্জনে


জোড়াসাঁকো জংশন ও জেনএক্স রকেটপ্যাড - ১১
শিবাংশু দে



আমারে তুমি অশেষ করেছো....

পার্থ দাশগুপ্ত নামে একজন তন্নিষ্ঠ রবীন্দ্রসঙ্গীতপ্রেমী'র লেখায় একটা মন্তব্য পেয়েছিলুম। "....রবীন্দ্রনাথের গানের সর্বকালের সফলতম অনুবাদক হিসেবে আমি যাকে মনে করি, তাঁর নাম সুবিনয় রায়। বুজুর্গরাও বলেন, যদি রবীন্দ্রনাথের গানের শুদ্ধতা আর অন্তর্নিহিত ভাবের হরগৌরী মিলনের সঠিক সুলুকসন্ধান পেতে চাও, তাহলে সুবিনয় রায়ের গান শোনো।" পার্থ নিজেকে একযোগে রবীন্দ্রখ্যাপা, হেমন্তখ্যাপা ও সুবিনয়খ্যাপা হিসেবেও ঘোষণা করেছিলেন। উক্তিটা আমি ভুলিনি কখনও। কারণ তিনি সরাসরি আমার মনের কথাটিই বলেছিলেন। আমার মনে পড়ে গেলো শান্তিনিকেতনে এক নিবিড় আড্ডায় কয়েকজন রবীন্দ্রমগ্ন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা প্রসঙ্গে বলেছিলুম, "আজ যদি কবি নিজে থাকতেন, তবে তিনি সুবিনয়ের মতো করেই তাঁর গান শোনাতেন।" হয়তো আমার এই উক্তিটি একটু পক্ষপাতী মনে হতে পারে। সুবিনয়ের গানের প্রতি আমার ভালোবাসাটা প্রায় ভক্তি আপ্লুত হয়ে পড়ছে এভাবে। যে কোনও শিল্পবিচারকে যদি একটু দূরের পরিপ্রেক্ষিত থেকে না দেখা হয় তবে তার আলো অন্ধকার দুইই ধরা যায়না। একটা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার অলীক প্রয়াস বোধ হতে পারে। কিন্তু আমি নাচার। আমার এরকমই বোধ হয়। কেন হয়, সে কারণটা ব্যক্তি আমার কাছে নিশ্চয় গ্রাহ্য। কিন্তু হয়তো অনেকের কাছে অতিশয়োক্তি বোধ হতে পারে।

ছোটোবেলায় বাড়িতে তাঁর দু'টি গান রেকর্ডে বাজতে শুনতুম। আদ্যিকালে গাওয়া গান। "তুমি ডাক দিয়েছো কোন সকালে" আর "ভেঙেছো দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়"। কিছু কিছু গান যেমন রক্তে এসে যায়, এই গানদুটি আমাদের জন্য সেমত নৈসর্গিক মাত্রা নিয়ে নিয়েছিলো। আমার মনে পড়ছে পাঁচ-ছ বছর বয়সে প্রথম ইশকুল যাত্রা। রামকৃষ্ণ মিশনের ইশকুল আর সেবছর স্বামীজীর জন্মশতবর্ষ। সব ক্লাস থেকে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠান হবে। আমি নেহাৎ শিশুত্বের বেড়া পেরোইনি তখনও। কেন যে মনে হয়েছিলো, কিভাবে, জানিনা। গেয়েছিলুম, "ভেঙেছো দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়..."। তখন আমার কাছে রবীন্দ্রনাথ একটা গৃহস্থালীর চেনা নামমাত্র। প্রায় বালকটির কানে তখন ছিলেন রেকর্ডের সুবিনয়। ব্যক্তিগত সম্পর্কটা অতি পুরাতন। কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীতের দুনিয়ায় সুবিনয়ের স্থান নির্ণয়ের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক অবশ্যই নেই।

মাননীয় সুধীর চক্রবর্তী তাঁকে বলেছিলেন 'শুদ্ধান্তঃপুরের আচার্য'। 'শুদ্ধ' ও 'অন্তঃপুর' শব্দদুটি তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর ঘরানা বোঝাতে গেলে এই শব্দগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁর শিল্পীসত্ত্বার দুটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে। গায়নশিল্পী ও শিক্ষক। তাঁর সমসময়ে যেসব দিকপাল শিল্পী এই দুটি কাজে সিদ্ধ ছিলেন, তাঁদের মধ্যেও তাঁর স্থানটি ছিলো অনন্য। শুধুমাত্র পারফরমার হিসেবে দুজন শিল্পী সেকালে শ্রোতাদের শ্রবণরুচির মধ্যে কিছু অভ্যাস তৈরি করে দিয়েছিলেন। তাঁরা দেবব্রত বিশ্বাস এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তাঁদের সর্বপ্রভাবী চাপের সমান্তরাল অন্যতর একটি গীতধারা প্রস্তাব করা এবং কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তাকে প্রতিষ্ঠা দেবার একটি দুরূহ কাজ সফলভাবে অর্জন করেছিলেন সুবিনয়। জর্জদা বা হেমন্তের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতে তাঁদের নিজস্ব মাত্রা,মুদ্রা বা শক্তির ছাপ ছিলো শেষকথা। লোকপ্রিয়তা, নিয়মিত জনসংযোগ, লোকরুচির প্রতি আগ্রহ তাঁদের 'হিরো' করে তুলেছিলো।


সুবিনয়ের সম্পূর্ণ গীতব্যক্তিত্বটিই ছিলো 'হাটের ধূলার' বাইরে অন্তর্মুখী আরাধনার মতো। সামগ্রিক শ্রোতাসমাজের একটি সীমিত অংশই তাঁর যাত্রার অনুসারী হবার যোগ্যতা অর্জন করতেন। তাঁর সঙ্গীতশিক্ষার প্রধান গুরু শৈলজারঞ্জন। তাঁর কাছ থেকে সুবিনয় রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়ন বিষয়ে যে শিক্ষাটি পেয়েছিলেন, নিজের কথায়, "... আশ্রম-জীবনের সঙ্গে মিশে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের গানকে যেভাবে পাওয়া যায়, এই পরিমণ্ডলের বাইরে থেকে ঐ গান চর্চা করলে তাকে সেভাবে পাওয়া যায়না।" তাঁর নম্র, অনুচ্চ, অনুচ্ছাস, অন্তর্মুখী গীতশৈলীর উৎস পাওয়া যাবে শৈলজারঞ্জন ও শান্তিনিকেতন বিষয়ক তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যায়। তিনি পেশাগতভাবে সম্পূর্ণ সঙ্গীতজীবী ছিলেন না। কিন্তু যাপনের একটি বৃহৎ অংশ তিনি ব্যয় করতেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়ন ও শিক্ষণে। পঞ্চাশের দশকে প্রথম রেকর্ড করা দুটি গান, "তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে" বা "এই করেছ ভালো নিঠুর হে" শুনলে তাঁকে সুনীল রায় বা সমরেশ রায়ের গীতধারার তৃতীয় কোণ হিসেবেই মনে হতে পারে।


কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাঁর পরিশীলিত রুচিবোধ, আত্মবিশ্বাস, গান নির্বাচন ও স্থিতধী আবেদন তাঁকে প্রজন্মের সবার থেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। বাল্যে তাঁকে যতোটুকু ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি তাতে মনে হয়েছিলো তিনি বেশ সাহেবি মানুষ। 'সাহেবি' অর্থে নিয়মনিষ্ঠ, অনুচ্য, অচঞ্চল ও দক্ষ। এসরাজ বাদন শিখেছিলেন খুব যত্ন করে। তাঁর গানে সুর লাগানোর ধরনে এসরাজের স্বরপ্রক্ষেপণের বিশুদ্ধতা কানে বাজবে একটু মনোযোগী হলেই। বহুধরনের রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলেও তাঁর সতর্ক গান নির্বাচন তাঁর সাফল্যে অন্যতর মাত্রা যোজনা করেছিলো। শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন, "মনে হয় যে-গান তার সম্পূর্ণ উদ্ঘাটনের জন্য দাবি করে একটা স্বচ্ছতার একটা স্পষ্টতার আর একটা সর্বসমর্পণের স্বর, সে গানের উপযুক্ত গলা আছে যেন শুধু সুবিনয় রায়ের মধ্যেই। কোনো মাত্রা ছাড়ানো মাধুর্য নয়, আবেগের কোনো বহুলতা নয়, কোনো উদাত্ততা নয়, শনাক্ত করার মতো বিশেষ কোনো ব্যক্তিভঙ্গিমা নয়, সুবিনয় রায়ের গানের মধ্যে আছে প্রকট ব্যক্তিত্বকে লুকিয়ে ফেলবার মতো এক-ধরণের সজল ব্যক্তিত্ব। জলতরঙ্গের মতো যেন সুরটাই খেলতে থাকে তাঁর গলায় আর তার মধ্যে দিয়ে পৌঁছতে থাকে কথা, যিনি গাইছেন তিনি যেন লুকিয়ে থাকেন দূরে। সুরের কাছে আত্মবিলোপময় সমর্পণের জন্যই হয়তো তাঁর গলায় স্মরণীয়ভাবে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে পূজাস্পর্শী গানগুলি।"


রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষের পর যখন এই ধারার সঙ্গীত চর্চার মধ্যে হঠাৎ ব্যাপ্ত জোয়ার এসেছিলো, প্রথিতযশা শিল্পীরা ক্রমশ নিজস্ব গীতভঙ্গি তৈরি করে নিয়েছিলেন নিজস্ব ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার লক্ষণগুলি মনে রেখে। দেবব্রত যেমন বেছে নিয়েছিলেন তাঁর অভ্যস্ত 'মাঠেঘাটে' গাওয়া গণসঙ্গীতের উদাত্ত গীতশৈলীর লোকপ্রিয় পথটি। সেভাবেই হেমন্তের সাফল্য ছিলো বিভিন্ন গণমাধ্যমে,বিশেষত চলচ্চিত্রে প্রযুক্ত গানের সঙ্গে ওতপ্রোত তাঁর মোহিনী কণ্ঠশিল্পের প্রতিভার শক্তিতে। সুবিনয় রায়ের শক্তির উৎস ছিলো তাঁর দীর্ঘকাল ধরে ক্রমাগতভাবে চালিয়ে যাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুশীলন, অনুধ্যান ও অনুরাগের মধ্যে। কণ্ঠশিল্পী ও শিক্ষক হিসেবে তিনি তাঁর বিষয়কে শল্য চিকিৎসকের মতো নিপুণ নিষ্ঠায় অন্তহীন বিশ্লেষণ করে গেছেন। এই প্রক্রিয়াজাত অভিজ্ঞতা তাঁকে অসীম আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছিলো। রবীন্দ্রসঙ্গীতের গভীর, নিহিত উদ্দেশ্য ও সন্ধান বিষয়ে তাঁর ধারণাটি প্রশ্নাতীত পারফেকশন পেয়ে গিয়েছিলো।

হেমন্তের গায়ন প্রসঙ্গে সুবিনয় যেমন বলেছিলেন, স্বর দু'ভাবে লাগানো যায়। Sophisticated এবং Unsophisticated। এই Sophisticated বিশেষণটি সম্ভবত তিনি শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছিলেন, যেখানে প্রত্যেকটি স্বরকে ভিন্ন মাত্রা দিয়ে বিচার করা হয়। সুরের বারোটি স্বরকে পৃথক অস্তিত্ব হিসেবে কল্পনা করে তাদের বিভিন্নভাবে সমন্বিত করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি অনুশীলন ও সাধনসাপেক্ষ। সেখানে এক ধরণের স্ট্রাকচার্ড সুরবিন্যাস গড়ে তোলা হয়, যা শুধু শ্রুতিমধুর হওয়ার ঊর্দ্ধে জটিল, অনুশাসিত সেরিব্রাল বন্ধনে বাঁধা থাকে। সুবিনয় কথিত Unsophisticated সম্ভবতঃ ন্যাচরল গায়ন শৈলি। যেখানে শ্রুতিমধুর স্বতঃস্ফূর্ততাই প্রধান শর্ত। আমাদের লোকপ্রিয়তার তুলনামূলক বিচারে ন্যাচরল সুরশিল্পীরাই অনেক এগিয়ে থাকেন। পঙ্কজকুমার থেকে কিশোরকুমার। কিন্তু সুবিনয় প্রথম থেকেই তাঁর সুরঋদ্ধ চিকণ কণ্ঠস্বরকে শাস্ত্রীয় স্বরক্ষেপণের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করেছেন। তাঁর মূল শিক্ষাগুরু শৈলজারঞ্জন তাঁর স্টাইলটি এভাবেই তৈরি করে নিতে তাঁকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। যখন মাঠে ব্যাস, ব্যারিটোন, নিদেন টেনর কণ্ঠসম্পদ নিয়ে পঙ্কজকুমার, হেমন্ত বা দেবব্রত সৃষ্টিশীল রয়েছেন, তখন সুরেলা, মিহিন, নমনীয় স্বরক্ষেপনকে মঞ্চ করে সুবিনয় গান গেয়ে গেছেন। কণ্ঠ নয়, তাঁর প্রধান সম্পদ ছিলো নিখুঁত সুর লাগানো, নির্ভুল লয়জ্ঞান ও সামগ্রিক পরিবেশনায় গণিতের মতো ব্যবস্থিত বিন্যাসকে ধরে রাখার কৌশল। সুচিত্রা যেমন বলতেন, গাইবার সময় সমগ্র গানটি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়। সুবিনয়ের ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে গানের শরীরটিকে তিনি জাদুকরের দক্ষতায় বেঁধে রেখেছেন এবং তাঁর শিল্পীমন যা করতে চায় সেভাবেই তাকে প্রসাধিত করে যাচ্ছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের থেকে এই পর্যায়ের আদায় আমরা খুব কমই দেখেছি। অন্তত রবীন্দ্রসঙ্গীতে শাস্ত্রীয়ঘরানায় অনুরক্ত আর কারো থেকে এই স্তরের সিদ্ধি আমরা দেখিনি। আবহমান ব্রাহ্মসমাজের সম্পন্ন গীতশৈলির ঐতিহ্য তিনিই সার্থকভাবে ধরে রাখতে পেরেছিলেন।


তিনি যখন প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের চর্চা শুরু করেন, বাংলার জনমনে কবির গানের আবেদন ছিলো নিতান্ত সীমিত। সাধারণ শ্রোতাদের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত যথেষ্ট পৌরুষময় বা জেল্লাদার গান হিসেবে গ্রাহ্য হতোনা। মূলত নজরুলের গান, কিছুটা অতুলপ্রসাদের গীতধারাই ছিলো বাংলাগানের প্রধান ধারা। রাজ্যেশ্বর মিত্র জানিয়েছিলেন একবার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে স্বয়ং দিনেন্দ্রনাথকে শ্রোতারা দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবার পরে থামিয়ে দিয়ে নজরুলগীতি শুনতে চেয়েছিলেন। শেষে দিলীপকুমার রায় এসে নজরুলগীতি গেয়ে অবস্থা সামলান। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে কলকাতার মানুষ সুবিনয় যে শুধু 'প্রকৃত' রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখতে শান্তিনিকেতনেই গেলেন না, উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করে কলকাতায় ফিরে প্রথমে 'গীতবিতানে' ও পরে 'দক্ষিণী'তে দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষকতাও করলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের অন্তর্নিহিত শক্তি একসময় প্রকাশ পাবেই। তাঁর ধারণাজাত 'আশ্রম-জীবনের সঙ্গে মিশে যাওয়া'র গীতশৈলীও যে একদিন সাধারণ শ্রোতার কাছে আদৃত হবে, এ দৃঢ়মূল বিশ্বাস তাঁর শেষ পর্যন্ত অটল ছিলো। তিনি অনুভব করেছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের অন্তর্মুখী পরিবেশন আপাতভাবে প্রমোদপ্রাণ শ্রোতাসমূহের কাছে বিপুল স্বীকৃতি না পেলেও এই শৈলীটি নিমগ্ন শ্রোতাদের আনুকূল্য পাবে। কিন্তু পরবর্তীকালে আক্ষেপও বোধ করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদক জানতে চান ভবিষ্যতের কোন কোন শিল্পীর মধ্যে তিনি সম্ভাবনা লক্ষ করেছেন? উত্তরে তিনি নৈরাশ্য প্রকাশ করেন। "... সাধারণভাবে শেখবার আগেই এরা বেশি কমার্শিয়াল হয়ে পড়ছে। কিভাবে পরিচিতি এবং অর্থ দুটো'ই তাড়াতাড়ি লাভ করা যায় সেদিকেই এদের নজর বেশি। এবং আরো একটা খারাপ জিনিস হচ্ছে, ভালো করে না শিখেই এরা আবার অন্যদের শেখাতে শুরু করছে। জীবিকার উপায় আর কী।"


রবীন্দ্রসঙ্গীত বিষয়ে নিজস্ব ধারণা সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, "...আমি বরাবর বলি যে রবীন্দ্রনাথের গান শিখে জীবনে discipline আনা যায়। রবীন্দ্রসংগীতকে তাই আমি disciplined music বলি। আমি তো অন্যান্য গানও শিখেছি। আর কোনো গান এত disciplined নয়, এমনকে হিন্দুস্থানী ধ্রুপদ গানও নয়। যদিও রবীন্দ্রনাথ বলতেন ধ্রুপদ শেখা উচিত গানেdiscipline শেখবার জন্য, তিনি নিজের গানকে আরও অনেক বেশি discipline-এ বেঁধেছিলেন। এমন কতগুলো বাধ্যবাধকতা বা rigidity আছে তাঁর গানে, সেগুলো শিক্ষা করলে মানুষের জীবনের পরম উপকার হয়। আমার জীবনে যেটুকু discipline এসেছে, রবীন্দ্রনাথের গান শেখবার ফলেই এসেছে।"

পরবর্তীকালে অনুশীলনহীন, প্রস্তুতিহীন, মেধাহীন রবীন্দ্রগায়কেরা, যাঁরা শুধুমাত্র কণ্ঠস্বর সম্বল করে আসরে নেমেছিলেন বা এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য সুবিনয় ছিলেন চূড়ান্ত সচেতক। 'রবীন্দ্রসঙ্গীত' নামক শিল্পমাধ্যমটিকে পূর্ণতঃ অনুধাবন করতে গেলে গায়ক, চিন্তক, ভাবুক সুবিনয়কে ছাড়া আমাদের চলবে না। তাঁর কণ্ঠসম্পদ হয়তো 'ঈর্ষনীয়' ছিলোনা। আজকের বাজারের ভাষায় যাকে এক্স-ফ্যাক্টর বলা হয়, তা ছিলোনা ঐ স্বরে। কিন্তু স্বরসংযোগের স্থৈর্য, উচ্চারণের পবিত্রতা আর গানের ভিতর দিয়ে আত্ম-আবিষ্কারের ঐ পর্যায়ের মেধা তাঁকে এক অপরাজেয় শিল্পী করে তুলেছিলো। আজকের অস্থির, প্রস্তুতিহীন গায়ক ও শ্রোতাদের জন্য তিনি এক চির-আলোকিত বাতিঘর।

0 comments: