4

গল্প - অরুণ কর

Posted in

গল্প


ভাঙা কাচ
অরুণ কর




বিশ্বাস করুন, আমি আসলে একটা ভ্রমণ কাহিনী লিখতে চেয়েছিলাম। এখানে এলে হয়ত আপনারও এমনটাই ইচ্ছে হত। কিংবা যাঁরা এসেছেন কখনো, হয়ত লিখেই ফেলেছেন এ পথের কথা।

অথচ আমার এমন মহান ইচ্ছায় বাদ সাধলেন যিনি, তাঁর নাম হল ‘রক্সি’। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। ‘রক্সি’ হল গুরাস পাপড়ির নির্যাস থেকে তৈরি পাহাড়ের নিজস্ব মদিরা। কিন্তু জ্বলজ্যান্ত একটা মানুষের নাম যে ‘রক্সি’ হতে পারে, তা ছিল আমার কল্পনার অতীত। নামটা শুনে তাই আপনাদের মতন আমিও প্রথমটায় অবাক হয়েছিলাম।

সময়টা মার্চের শেষাশেষি। সপরিবারে বেরিয়েছি। গন্তব্য, সান্দাকফু। অনেক দিন থেকে এই যাত্রাপথের অনুপম সৌন্দর্যের কথা শুনে আসছি। বিশেষ করে বসন্তে মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু পর্যন্ত অজস্র বিরল প্রজাতির রডোডেন্ড্রন আর ম্যাগনোলিয়ায় সেজে পাহাড় নাকি সত্যি সত্যি হাসে। আর আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে কাঞ্চঞ্জঙ্ঘাও নাকি সোনালি আলোর অলঙ্কারে সেজে মোহময়ী নারীর মত দু’হাত বাড়িয়ে সকলকে ডাকতে থাকে।

আগের দিন দার্জিলিংয়ের একটা মধ্যমকুচ্ছিত গোছের হোটেলে রডোডেন্ড্রন আর লাল পান্ডার স্বপ্ন দেখতে দেখতে রাত কাটিয়েছি। ভোর না হতেই বিবি-বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। সুখিয়াপোখরি হয়ে মানেভঞ্জন যখন পৌঁছলাম, তখন সকাল প্রায় আটটা। গাড়ি থেকে নেমে চারদিকটা একনজর তাকিয়েই মোহিত হয়ে গেলাম। পাহাড়ের ঢালে সুন্দর বাড়িঘর, অল্প কিছু পাহাড়ি মানুষের অলস-মন্থর ঘর গেরস্থালি আর গুটিকয়েক নিতান্ত অনিচ্ছায় খুলে রাখা দোকানপাট। সব মিলিয়ে বড় শান্ত সমাহিত নিরুদ্বেগ স্বপ্নের দেশ যেন।

মনে হচ্ছিল, মানেভঞ্জন তো পাহাড়ের গায়ে সেঁটে থাকা নিছক এক ছোট্ট জনপদ নয়, এটা আসলে ড্রয়িং রুমে টাঙিয়ে রাখবার মত একটা নিখুঁত নিসর্গচিত্র! পশ্চিম দিকে উত্তুঙ্গ হিমালয়ের গায়ে হেলান দিয়ে সারিবদ্ধ পাইনের সারি। এমন নিবিড় ঠাস বুনট সে বনানীর, যে হঠাৎ দেখে মনে হয় বুঝি পুরো পাহাড়টাই গাঢ় সবুজ গালিচায় মোড়া। পূর্বাকাশে সূর্য সবে একটু ডাগর হতে শুরু করেছে, তারই নরম রোদ্দুরে শীতার্ত গাছগুলো ওম পেয়ে যেন সদ্য দাঁত-ওঠা শিশুর মতন হাসছে। তুলতুলে, নিষ্কলঙ্ক, নির্মল,একনজর দেখলেই জড়িয়ে ধরে আদর করতে ইচ্ছে করে।

আপনারা হয়ত ভাবছেন, কথা হচ্ছিল রক্সিকে নিয়ে, তার মধ্যে আবার এ শিবের গীত কেন! আসলে মানেভঞ্জন বাদ দিলে রক্সির কথা কীই বা বলার থাকে? মাটিকে বাদ দিয়ে বৃক্ষের কথা ভাবা যায়?

ভোরবেলা দার্জিলিং থেকে যখন বেরিয়েছিলাম, তখন থেকেই মাথার মধ্যে একরাশ দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খচ্ছিল। ঝোঁকের বশে আণ্ডা-বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি বটে, কিন্তু এমন চড়াই ভেঙে পৌঁছতে পারব কিনা, তা নিয়ে তো সংশয় ছিলই, তার উপরে গাইড যোগাড় করা, পারমিট করানো, যাত্রাপথে হোটেল ঠিক করা, হাজারো ঝক্কি! পারমিট এবং গাইড ছাড়া এপথে প্রবেশ নিষেধ।

কাছাকাছি কোথাও হয়ত সিঙ্গাড়া ভাজা হচ্ছিল, নাকে তার সুগন্ধ এসে ঝাপট মারতেই মন সেঁধিয়ে গেল পেটের মধ্যে। সকাল থেকে যে পেটে দানাপানি পড়েনি, এতক্ষণ সে হুঁশই ছিল না। গন্ধে গন্ধে এগিয়ে গিয়ে দেখি, পথের পাশে উন্মুক্ত আকাশের নিচে একজন নেপালি ভদ্রলোক সত্যি সত্যি গরম তেলের কড়াই থেকে ঝাঁঝরি হাতা দিয়ে সিঙ্গাড়া তুলছেন।

আর আমাকে পায় কে! জ্বলন্ত জঠরের সঙ্গে ফুটন্ত সিঙ্গাড়ার যুগলবন্দীতে চরাচর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার যোগাড়। একটু ধাতস্থ হয়ে হাতে গরম চায়ের গেলাস নিয়ে সিঙ্গাড়া-শিল্পীকে এ পথে আমার আগমনের হেতু নিবেদন করতেই কেমন সন্দিগ্ধ চোখে আমার দিকে তাকালেন ভদ্রলোক। ভাবখানা এমন, নিজে জাহান্নামে যেতে হয় যাও না বাপু, খামোখা অবোধ শিশু আর অসহায়া স্ত্রীলোকটাকে সঙ্গে নেওয়া কেন!

পথের চড়াই-উৎরাই, হোটেলে স্থান সঙ্কুলানের অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে ছোট বাচ্চা এবং স্ত্রীলোক সঙ্গে নিয়ে চলার অন্যান্য ‘অসুবিস্তা’ নিয়ে আমাকে অনেক বোঝালেন তিনি। পরামর্শ দিলেন, নিতান্তই যদি যেতে চাই, ল্যান্ডরোভারে করে যাওয়াই ভালো। হুস করে যাওয়া এবং ভুস করে ফিরে আসা, একদিনেই গপ্পো শেষ!

কী করে বোঝাই, দেখতে এসেছি পথের ফুল-পাখি-পাহাড় অরণ্য, হুস করে সান্দাকফু বিজয়ে আমার বিন্দুমাত্র স্পৃহা নেই! অবশেষে আমার নাছোড় মনোভাব দেখে বললেন, এ সময়ে এপথে যত বিদেশি ট্রেকার আসেন, সেই তুলনায় গাইড কম। খরচের ব্যাপারে যেহেতু বিদেশিরা দেশি কাপ্তানদের চাইতে ঢের বেশি উদারহস্ত এবং ডলারে পেমেন্ট, তাই ‘সিজিনে’ গাইড এবং পোর্টার পাওয়া নাকি খুব শক্ত।

মনে মনে ভাবছি, যতই ‘সিজিন’ হোক না কেন, ঝড়তিপড়তি এক-আধ জন গাইড কিংবা পোর্টার কি পড়ে নেই? তবে কি এতটা পথ এসে শেষমেশ ফিরেই যেতে হবে?

সামনে দিয়ে একটা অদ্ভুত দর্শন কুকুর নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন একজন নেপালি ভদ্রলোক। সিঙ্গাড়াওয়ালা তাকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠলেন, রক্সিদাজু, সুন্নুহোস!

তারপর স্থানীয় ভাষায় ওদের মধ্যে যে আলাপচারিতা শুরু হল, তার বিন্দুবিসর্গ আমার বোধগম্য হল না বটে, তবে কথাবার্তা যে আমাদের নিয়েই হচ্ছে, তা ওদের হাবেভাবে স্পষ্ট।

বাদামী রঙের কুকুরটির সারা শরীর জুড়ে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মত ডোরা কাটা দাগ। এক নজর দেখলেই বোঝা যায়, সেটা নিতান্তই অকুলীন, স্থানীয় বংশোদ্ভুত সরমা-তনয়। তবে গলায় বাঁধা চেনটা যে মহার্ঘ্য, তা এক নজর দেখলেই মালুম হয়।

রক্সিদাজু বলে যাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তাঁর মুখে দাড়ি-গোঁফের বালাই নেই, চুলে অল্প অল্প পাক ধরেছে। মুখের বাঁদিক থেকে গলা পর্যন্ত একটা বড়সড় পোড়া দাগ। এমন কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যেও ওর পরনে একটা হাফ প্যান্ট আর হাতকাটা টি-শার্ট।

কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর কুকুরের মালিক নির্ভুল ইংরেজিতে আমাদের বললেন, তিনি একজন পেশাদার গাইড সত্যি, তবে এসব ছোটখাট ট্রেক উনি করেন না। কাঞ্চনজঙ্ঘা বেস ক্যাম্পসহ অন্যান্য দীর্ঘ এবং কঠিনতর পথের ট্রেকারদের সঙ্গেই তাঁর যাতায়াত।

চলেই যাচ্ছিলেন ভদ্রলোক। আমার সারমেয়-প্রেমী পুত্র ততক্ষণে বিচিত্রবর্ণ কুকুরটির সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করে দিয়েছে। কুকুরটি স্থানীয় হলেও ভাষা যে বন্ধুত্বের অন্তরায় হয় না, তা ওদের আচরণ থেকে পরিস্কার। আমার পুত্রের কথার উত্তরে সেও কুঁই কুঁই করে লেজ নেড়ে কত কী বলে চলেছে!

ওদের দেখে আবার দাঁড়িয়ে পড়লেন ভদ্রলোক। তার পর খুব বিস্ময়ের সঙ্গে বললেন, আপকা লেড়কা? ও ভি যায়েগা আপকে সাথ?

একটুখানি চুপ করে কী যেন ভাবলেন ভদ্রলোক। তারপর বললেন, প্লিজ ওয়েট হিয়ার টিল আই কাম ব্যাক। আই শুড টেক পারমিশন ফ্রম মাই হাই কম্যান্ড।

মনে মনে ভাবছি, এ কেমন আজব জায়গা যে ট্রেক করতে হলেও গাইডকে হাই কম্যান্ডের পারমিশন নিতে হয়!

আমার মনের কথা হয়ত আঁচ করে থাকবেন ভদ্রলোক। হাসতে হাসতে মজার গলায় বললেন, আপলোগ হাই কম্যান্ড নেহি সমঝতে হ্যাঁয়? আরে, শি ইজ মাই ওয়াইফ। আই নীড টু টেক হার পারমিশন বিফোর আই অ্যাগ্রি।

ওঁর কথা শুনে মুচকি হেসে সিঙ্গাড়াওয়ালা গরম তেলের কড়াইতে আরেকপ্রস্থ সিঙ্গাড়া ছাড়তে শুরু করলেন।

আমি একটু অবাক হলাম। আমার স্ত্রীও আমার দিকে একবার কৌতুকভরা চোখে তাকালেন। ভাবখানা এমন যে, পত্নীনিষ্ঠা কাকে বলে তা এই লোকটার কাছে আমার শেখা উচিৎ।

চলে গেলেন রক্সিদাজু। সিঙ্গাড়াওয়ালা বললেন, রক্সি শুধু একজন ভালো গাইডই নন, একজন ভালো সঙ্গীতশিল্পীও বটে। মুড ভালো থাকলে গানে গানে সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখেন ট্রেকারদের।

--কিন্তু নিজেই যদি সারাক্ষণ মাতাল হয়ে থাকেন, তাহলে-?

আবার হাসলেন ভদ্রলোক। আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, একসময়ে ও সারাদিন আকন্ঠ মদ গিলে বেহুঁশ হয়ে থাকত ঠিকই, কিন্তু ঐ ঘটনার পর থেকে ও আর মদ ছোঁয় না।

ভদ্রলোকের কথার মধ্যে কেমন যেন রহস্যের গন্ধ। কিন্তু ‘ঐ ঘটনা’র রহস্য ভেদ হওয়ার আগেই হাস্যমুখে রক্সিবাবু ফিরে এলেন। সঙ্গে বছর পনেরো-ষোলোর এক রোগা-পাতলা ছোকরা। সে নাকি পোর্টার!

হাই কম্যান্ডের পারমিশান মিলেছে। তবে শর্ত আছে। তিন দিনের মধ্যে যে করেই হোক আমাদের সান্দাকফু পৌঁছতেই হবে, মাঝপথে পারছি না বলে বাড়তি বিশ্রাম চাইলে আমাদের ছেড়েই ওঁকে ফিরে আসতে হবে। কারণ, তার পরের দিনই এক আমেরিকান ট্রেকার টিমের সঙ্গে ওঁর গোচালা ট্রেকিংয়ে যাওয়ার চুক্তি হয়ে আছে।

শর্ত কঠিন বটে, তবে রাজি না হয়ে উপায়ই বা কী?




সিঙ্গালিলা সংরক্ষিত অরণ্যের মধ্য দিয়ে পথ। রক্সিবাবু ছোটাছুটি করে মানেভঞ্জন থেকে আমাদের জন্যে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের অনুমতিপত্র যোগাড় করে আনলেন। পথে যেসব জিনিস দরকার হলেও পাওয়া যাবে না, সেসবের তালিকা তৈরি করে কেনাকাটার ব্যবস্থা করে দিলেন।

অবশেষে যাত্রা শুরুর আগে পথে কী করব আর কী করব না, সে সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ ক্লাস নিয়ে প্রত্যেকের হাতে ধরিয়ে দিলেন একটা করে ছোট লাঠি। ওঁর কাণ্ড দেখে কালিকানন্দ অবধূতের ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’-এর ছড়িদারের কথা মনে পড়ে গেল।

মানেভঞ্জন বাজারটুকু শেষ হতেই শুরু হল প্রাণান্তকর চড়াই। লাগেজ বলতে সাকুল্যে খান দুয়েক ব্যাগ, সে দু’টো কাঁধে ঝুলিয়ে তর তর করে এগিয়ে চলেছে আমাদের পোর্টার প্রকাশ। আমার বালক পুত্র তার সঙ্গে দিব্যি গল্প জুড়ে দিয়েছে। কেউ কারো ভাষা বোঝে না বটে, তবে তাতে কথার খামতি নেই।

শীতের সময়ে এ পথ নাকি বরফে ঢাকা থাকে। এখন বরফ গলে গিয়ে কচি ঘাস বেরিয়েছে। সঙ্গে ঘাসের মত ছোট অজস্র বুনো স্ট্রবেরির জঙ্গল। লাল লাল ফল ধরেছে তাতে। মাঝে মাঝে মাটিতে ব্যাগ নামিয়ে রেখে সেই বুনো স্ট্রবেরি টপাটপ মুখে পুরছে প্রকাশ,সঙ্গে সঙ্গে আমার পুত্রটিও।

আমি বললাম, পেট খারাপ হবে নাতো?

হাসলেন রক্সিবাবু। বললেন, লেট হিম এনজয় দি নেচার। প্রকৃতিকে শুধু চোখ দিয়ে অনুভব করা যায় না। তার রূপ-রস-গন্ধ-সৌন্দর্য অনুভব করতে হলে পাঁচটি ইন্দ্রিয়কেই কাজে লাগাতে হবে।

চমকে উঠলাম ওঁর দার্শনিক কথায়। অনেকদিন আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। সেবার দার্জিলিং বেড়াতে গেছি। স্থানীয় দ্রষ্টব্যগুলো দেখার জন্যে এককভাবে গাড়ি ভাড়া করলে খরচ বেশি, তাই চলেছি শেয়ারের গাড়িতে। সহদর্শনার্থীদের মধ্যে ছিলেন চরম বীতস্পৃহ এক মাঝ বয়েসি ভদ্রলোক। গাড়ি থামলেই তিনি নেমে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলছেন, পাহাড়, দ্যাকপার কী আচে? চা-বাগান, দ্যাকপার কী আচে? ঝর্ণা, দ্যাকপার কী আচে? টয় ট্রেন? দ্যাকপার কী আচে?

রক্সিবাবুর কথা শুনতে শুনতে আমার মনে হচ্ছিল, এই যাত্রায় সেই অনিচ্ছুক ভ্রমণার্থীকে পেলে বেশ হত, আরো অনেক কথার মণিমুক্তো জমা হত আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে।

শুরু হল হাড়ভাঙ্গা চড়াই। সঙ্গে রক্সিবাবুর নিরবচ্ছিন্ন ধারাবিবরণী। তবে মুশকিল হল, ওর মুখে কানু বিনে গীত নাই! যা-ই বলেন, তার মধ্যেই ওঁর বৌ ঢুকে পড়েন! সেই অদেখা মহিলার গুণকীর্তন শুনতে শুনতে আমাদের কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম।

মাঝে মাঝে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে কোন গানটি তাঁর বৌয়ের পছন্দ, কোন গাছটি উঁচু পাহাড় থেকে এনে পথের ধারে তাঁর বৌ বসিয়েছে, তাঁর বৌ কেমন রান্না করে, কেমন সুন্দরী সে, কেমনভাবে সাজে, সারাটা পথ রক্সিবাবুর বৌ-কেন্দ্রিক সেই ধারাভাষ্যের কল্যাণে আমার স্ত্রীর কটাক্ষ-বাণে আমারও জেরবার হওয়ার দশা!

অবশেষে একসময় চড়াই শেষ হল। গগণচুম্বী পাহাড়ের কোলে সবুজ ঘাসের গালিচামোড়া সুনসান বৃক্ষবর্জিত উপত্যকা। প্রকৃতির সেই উন্মুক্ত অনুপম সৌন্দর্যে আমরা বিস্ময়ে বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। হাড় হিম করা ঝড়ের মতন ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। ঘড়ির কাঁটায় সবে দুপুর দু’টো, কিন্তু এর মধ্যেই সুয্যিঠাকুর যাই যাই করছেন। রক্সিবাবুর কাঁধে চড়ে আমার পুত্র আগেই পৌঁছে গিয়েছিল।

আশপাশে বাড়িঘর কিংবা জনবসতির চিহ্নমাত্র নেই। কিছু দূরে এক বৌদ্ধ গুম্ফার চূড়া দেখা যাচ্ছে। একটামাত্র থাকার জায়গা, ট্রেকার’স নেস্ট। ‘নেস্ট’ই বটে, সাকুল্যে ছোট ছোট খান তিনেক কটেজ। তারই একটাতে ঠাঁই পাওয়া গেল।

রক্সিবাবুর সৌজন্যে কিনা জানি না, সেখানে পৌঁছেই একেবারে ভি আই পি আতিথেয়তা। গরম জল, গরম পকৌড়া এবং ধোঁয়া-ওঠা কফির মগ রেডি। এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা দেখে আমরা তো অবাক। অজানা পথে ট্রেকিং নয়, এ যেন কোনও নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি আমরা।

আরও অবাক হলাম সেই পান্থশালার মালকিনকে দেখে। বেশ লম্বা ছিপছিপে চেহারা। টকটকে ফর্সা গায়ের রঙ, তীক্ষ্ণ নাক, পাতলা ঠোঁট, প্রশস্ত গভীর চোখ, সব মিলিয়ে অসাধারণ সুন্দর মুখশ্রী। ভদ্রমহিলা ইচ্ছে করলে অনায়াসে হিন্দি সিনেমার নায়িকা হতে পারতেন।

আমাকে হাঁ করে চেয়ে থাকতে দেখে আমার স্ত্রী স্বগতোক্তি করলেন, মরণ!

আমি লজ্জা পেয়ে প্রকৃতির দিকে মুখ ফেরালাম। জায়গাটার নাম চিত্রে। এমন সার্থকনামা জায়গা আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হয় না। সত্যিই যেন এ জায়গাটা প্রকৃতির আপন হাতে রচিত চিত্রকল্প। যতদূর চোখ যায়, দিগন্ত-বিস্তৃত নীল আকাশের নিচে গাঢ় সবুজ মখমলের মত নরম ঘাসের গালিচা।

সন্ধ্যে না হতেই খাওয়াদাওয়া চুকিয়ে খান তিনেক মোটা কম্বলের নিচে সেঁধিয়ে স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছিলাম বটে, কিন্তু শীতের এমনই দাপট যে, হাড় পর্যন্ত কাঁপন টের পাচ্ছিলাম। হয়ত একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ অদ্ভুত শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেল। কিছুক্ষণ চুপচাপ কান খাড়া করে রইলাম। মনে হল, কোন মেয়ে কাছে-পিঠে বসে যেন বিনবিন করে কেঁদে চলেছে।

খুব সন্তর্পণে দরজা খুলে বাইরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। আকাশে ত্রয়োদশীর চাঁদ, স্নিগ্ধ দুধ-সাদা আলোয় যেন চরাচর ভেসে যাচ্ছে। সেই মায়াবী আলোর নিচে কনকনে ঠাণ্ডায় মাঠের মধ্যে একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। নিচু হয়ে তাঁর পা জড়িয়ে ধরে সমানে কেঁদে চলেছেন এক নারী। পুরুষটি পাথরের মূর্তির মত নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আমাকে দরজা খুলতে দেখেই ত্রস্ত পায়ে হাঁটতে শুরু করলেন। তার হাঁটার ভঙ্গি দেখে মনে হল, তিনি আর কেউ নন, আমাদের গাইড রক্সিবাবু।

মেয়েটি হয়ত তখনো আমার অস্তিত্ব টের পায়নি, সে উঠে দাঁড়িয়ে দু’হাত দিয়ে তাঁর পথ আগলাবার চেষ্টা করল বটে, কিন্তু রক্সিবাবু তাকে নিষ্ঠুরভাবে ঠেলে সরিয়ে দ্রুত পায়ে গুম্ফার দিকে হাঁটা দিলেন। আর মেয়েটি সেই মায়াবী জ্যোৎস্নায় গা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইনিয়েবিনিয়ে কেঁদে চলল।

ঝড়ের মতন হিমেল হাওয়া সূঁচের মতন এমন গায়ে বিঁধতে লাগল যে আর দাঁড়ানো গেল না। আমি নিঃশব্দে দরজা বন্ধ করে আবার কম্বলের নিচে সেঁধিয়ে গেলাম। নিদ্রাদেবী কিন্তু আমার আহ্বানে সাড়া দিলেন না। আমার কানে সেই নিঃসঙ্গ নারীর কান্নার শব্দ যেন অবিরত ধ্বনিত হতে থাকল।




দ্বিতীয় রাত টুমলিং এবং তৃতীয় রাত কালিপোখরিতে কাটিয়ে অবশেষে আমাদের রাজ্যের উচ্চতম বিন্দু সান্দাকফুতে পোঁছনো গেল। আসতে আসতে পরিচয় হল অজস্র ফুল-পাখি-লতাপাতার সঙ্গে।

পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে, পাকদণ্ডী পথের বাঁকে বাঁকে প্রকৃতির এমন অকৃপণ সৌন্দর্যসুধা পান করতে করতে এসেছি যা ‘জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না’। পুরো যাত্রাপথের দু’ধার আলো করে ফুটে আছে রাশি রাশি রডোডেনড্রন। বেশিরভাগই টকটকে লাল। তবে এ পথে যে হলুদ, সাদা, এবং কমলা রঙের রডোডেনড্রনও ফোটে, রক্সিবাবু না থাকলে তা জানাই হত না। রাস্তার প্রতিটি গাছ যেন ওঁর চেনা। আর আছে ইতিউতি সাদা ফুলের ডালি নিয়ে তালঢ্যাঙা নিঃসঙ্গ ম্যাগনোলিয়া। মেঘমুক্ত নীল আকাশের গায়ে যেন সলমা জরির ঝলকানি।

তিনটে দিন যেন স্বপ্নের মধ্যে কেটে গেল। একদিকে অকৃপণ প্রকৃতি, অন্যদিকে প্রাণবন্ত রক্সিবাবুর গল্প এবং গান। হোক না তার সিংহভাগ ওঁর স্ত্রীর গুণগান! শুধু চিত্রের সেই রাতের পর থেকে ওঁর মুখে স্ত্রীর কথা শুনলেই আমার পাপী মনে একটা সন্দেহের কাঁটা খচ খচ করে।

শ্রীখোলা এবং রিম্বিক হয়ে শিলিগুড়ি ফেরার পরিকল্পনা ছিল। অথচ সময় সংক্ষিপ্ত। শর্ত অনুযায়ী ঐদিনই রক্সিবাবুকে ছেড়ে দেওয়ার কথা। তাঁকে ছেড়ে অজানা পথে পায়ে হেঁটে ফেরার সাহস হল না। একপ্রকার বাধ্য হয়েই মানেভঞ্জনের জিপে চেপে বসতে হল।

কলকাতায় ফেরার ট্রেন পরের দিন। ভাবলাম, শিলিগুড়ির ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলের মধ্যে ফিরে যাওয়ার চাইতে রাতটা মানেভঞ্জনেই কাটিয়ে দেওয়াই ভাল। কথাটা রক্সিবাবুকে বলতে তিনি অত্যন্ত সঙ্কোচের সঙ্গে বললেন, য়্যু কুড স্টে অ্যাট মাই হাউস, বাট-

আমি হেসে বললাম, ফার্স্ট য়্যু নীড ইয়োর হাইকম্যান্ড’স পারমিশন! ইজন’ট ইট?

আমার রসিকতায় হোহো করে হেসে উঠলেন রক্সিবাবু।

মানেভঞ্জনে থাকবার আস্তানাটা উনিই ঠিক করে দিলেন। এ’কদিনের ধকলে আমার স্ত্রী রীতিমত কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে পুত্রকে নিয়ে কম্বলের তলায় ঢুকে পড়লেন। লগে লগে আম্মোও।

আমার কিন্তু ঘুম এল না। কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে এক সময়ে উঠে বাইরে এলাম। বিকেলের মরা রোদ পড়েছে পাহাড়ের গায়ে। দীর্ঘ পাইনের সারির ছায়ায় ঘনায়মান আঁধারে যেন বিদায়ের বিষণ্ণতা। অন্যমনস্কভাবে হাঁটতে হাঁটতে ঘোড়ার আস্তাবল পেরিয়ে নেপালের ভিতরে ঢুকে বেশ খানিকটা ঘুরে এলাম। পাইন বনের ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট কাঠের বাড়ি-ঘর, স্থানীয় মানুষদের গেরস্থালি, ঘরের বারান্দায় প্লাস্টিকের টবে নানা মরসুমি ফুল, বেশ লাগছিল দেখতে। ছবির মত সুন্দর যেন পুরো উপত্যকাভূমি।

ঘুরতে ঘুরতে বার বার রক্সিবাবুর কথা মনে হচ্ছিল। বিশেষ করে সেদিনের সেই রাতের দৃশ্যপটের কুহেলি আমাকে যেন চুম্বকের মতন টানছিল। ভাবলাম, কাল সকালে তো আর দেখা করার সুযোগ হবে না, তাই ফেরবার পথে একবার ওঁর সঙ্গে দেখা করে যাই।

লোকজনকে জিজ্ঞেস করে খুব সহজে পোঁছে গেলাম ওঁর বাড়ি। বন্ধ দরজায় টোকা দিতে ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করলেন, কৌন?

দরজা খুলে আমাকে দেখে ভূত দেখবার মত চমকে উঠলেন রক্সিবাবু। কিন্তু সে ক্ষণিকমাত্র। তারপর অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে সাদরে ভেতরে নিয়ে বসতে বললেন আমাকে।

ঘরের সর্বত্র অযত্ন-অবহেলার চিহ্ন স্পষ্ট। একটা গদিছেঁড়া সোফা ছিল একপাশে, সেটাতেই বসে পড়লাম। চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে জামাকাপড় থেকে গেরস্থালির যাবতীয় সরঞ্জাম। আমার কেমন যেন খটকা লাগল। যার ঘরে অমন সর্ব গুণে গুণান্বিতা স্ত্রী, তাঁর ঘরের এমন হতশ্রী দশা কেন, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছিলাম না।

হঠাৎ দেয়ালে ঝোলানো ছবিটাতে আমার চোখ আটকে গেল। চিত্রেতে যে সুন্দরী মহিলা আমাদের আপ্যায়ন করেছিলেন, তাঁর ছবি। একটা ফুলেভরা রডোডেন্ড্রন গাছের নিচে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন, পরনে হালকা নীল রঙের শার্ট, নেভি ব্লু ট্রাউজার, গলায় এয়ার হোস্টেসদের মত মেরুন স্কার্ফ বাঁধা, পা-ঢাকা হাই হীল জুতো। হঠাৎ দেখলে যেন প্রিন্সেস ডায়ানা বলে ভ্রম হয়।

জিজ্ঞেস করলাম, উনি আপনার স্ত্রী?

--হ্যাঁ।

--কিছু মনে করবেন না, ওঁকেই কি প্রথম দিন চিত্রের ট্রেকার’স নেস্টে দেখেছিলাম?

--নো!

‘নো’ শব্দটা এমন জোরের সঙ্গে উচ্চারণ করলেন যে আমি চমকে উঠলাম।

আমার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে ওঁর বুঝি মায়া হল। গলার স্বর নামিয়ে বললেন, শী ইজ অ্যা ডিফারেন্ট পার্সন।

একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন রক্সিবাবু। আমি বললাম, কী বলছেন আপনি? দু’জন মানুষের মধ্যে এমন আশ্চর্য মিল হয় কখনো?

শুনেই আবার ক্ষেপে গেলেন তিনি। চেঁচিয়ে উঠলেন শান্ত ভদ্র মানুষটি, হোয়াই আর য়্যু প্লেয়িং উইথ মাই পেশেন্স? ঐ ফোটোতে যাকে দেখছেন, শি ইজ মাই ওয়াইফ! স্টিল আই অ্যাম ম্যাড ইন লাভ উইথ হার। কিন্তু চিত্রেতে যাঁকে দেখেছেন, শী ইজ অ্যান আনফেথফুল ফলেন উম্যান! অ্যা উইচ, চুঢ়েল!

তারপর নিজের ব্যবহারে নিজেই লজ্জা পেলেন। বললেন, জানেন, একসময়ে আমি প্রচুর মদ খেতাম, দিনরাত শুধু মদ আর মদ! সংসার এবং আমাকে সে যে কী করে সামলাত, সেকথা কখনো ভেবে দেখিনি। বিকজ, আই লাভড, আই ট্রাস্টেড, আই ডিভোটেড মাইসেলফ অ্যান্ড আই টুক এভরিথিং অ্যাজ গ্রান্টেড।

একজন অস্ট্রেলিয় সাহেব পর পর কয়েক বছর এখানে ট্রেকিংয়ে এসেছিলেন। আমি ছিলাম তার রেগুলার গাইড। আস্তে আস্তে আমার বৌয়ের সঙ্গেও আলাপ হল তার।

ওয়ান ডে, শি ডেজারটেড মি উইথ অল মাই লাভ, প্যাশান অ্যান্ড হোয়াটএভার আই হ্যাড। য়্যু নো, আই অ্যাটেম্পটেড টু কিল মাইসেলফ, বাট আই কুড নট। এই যে স্কার দেখছেন--- গলার পোড়া দাগটা দেখালেন রক্সিবাবু। বিড় বিড় করে বললেন --স্টিল আই লাভ হার, উইথ এভরি ব্রেথ আই টেক ইন মাই সুইট হার্ট’স মেমরি।

আর চিত্রের উনি?

আবার মেজাজ হারালেন ভদ্রলোক। বললেন, হোয়াই ডোন্ট য়্যু আন্ডারস্ট্যান্ড, শি ইজ নট মাই ইনোসেন্ট সুইটহার্ট!

একটু থামলেন রক্সিবাবু। এমন শীতের মধ্যেও ওঁর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। একটা বোতল থেকে ঢক ঢক করে খানিকটা জল খেলেন। তারপর মুখ বিকৃত করে অত্যন্ত ঘৃণার সঙ্গে বললেন, ঐ মহিলা অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে ফিরেছে, টিবেটানদের কাছ থেকে চিত্রের হোটেলটা কিনে নিয়েছে। দার্জিলিংয়ে ভিলা বানিয়েছে। সেদিন রাতে চিত্রেতে হয়ত ওর সঙ্গে আমাকে দেখে থাকবেন আপনি। আপনিই বলুন, শুড আই লিভ টুগেদার অ্যাজ হার কেপ্ট?

--তাহলে যে বারে বারে আপনার হাই কম্যান্ডের পারমিশান নেওয়ার কথা বলছিলেন?

--শিয়োর! শী ইজ দেয়ার ইন মাই হার্ট।

রক্সিবাবু দেয়ালের ছবির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন।

--এই যে দেখছেন, দিস ইজ অ্যান অ্যান্টিক সিলভার কয়েন। আমার বার্থডে-তে আমার ওয়াইফের দেওয়া গিফট। এক সময়ে আমার এসব কালেকশানের হবি ছিল। ঐ যে ছবিটা, ওর সামনে দাঁড়িয়ে আমি টস করি, নিজেই হেড বলি, নিজেই টেল বলি, আর প্রতিবারই ওঁকে হারিয়ে দি। তবু ওকে আমি ছাড়তে পারি না। ও যে আমার শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মিশে আছে!

কান্নায় রক্সিবাবুর গলা বুজে এল।

আমি নিঃশব্দে বাইরে বেরিয়ে এলাম। দিনের আলো প্রায় মরে এসেছিল। শন শন করে বয়ে চলা হিমশীতল ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে আমার ভেতরটাও যেন কেঁপে উঠল।

4 comments:

  1. Fantastic
    Sandakphu r smriti uske dilo

    ReplyDelete
  2. মানবজীবনের এমন ঘটনা আমাদের হতবাক করে। নিছক ভ্রমণকাহিনীর এই বাঁকবদল সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন লেখক।

    ReplyDelete
  3. The vivid depiction of the hilly- nature instantly takes the readers into the deep solitude of the unclad hillsides and makes the readers feel the breath of nature.
    The perfect diction in the 'Shingara episode' will certainly excite the salivary gland of the readers.
    And above all, the cocktail of psychotropic love for 'High Command' and lovelorn broken heart of Roxi... make the eyelids heavy and fills the heart with agony...Unique. We are eagerly looking for more such Stories.

    ReplyDelete
  4. Premer ak poribortito rup...Ak advut anubhuti...Khub onnorokom golpo...

    ReplyDelete