Next
Previous
Showing posts with label কবিতা. Show all posts
1

কবিতা - কুমকুম বৈদ্য

Posted in





বামুন পিসির কাঁসার বাসন ছিল এক ট্রাঙ্ক

বিধবার সাদা থান অথবা সরু পাড়ের ধুতি
পাশের বাড়ির বড় বৌ দেয় মায়া করে
পিসির হাতের ছোট ছোট পুলুই
ডাক দেয় চার পাঁচ ঘর পৌষের দিন
আর সব ঝড় বাদলের দিনে
চাল থেকে টুপটুপ জল
বাড়ন্ত ভাতের হাঁড়ির টগবগ জলে
দুমুঠো চালের যোগান
তাও সেই পাশের বাড়ির বড় বৌ মায়া করে

বদলে চালান হয় কাঁসার থালা বাটি অতি গোপনে
যেটি সে কিনেছিল পুরী গিয়ে
নতুন বৌ তখন, বরের সোহাগ
কতদিন একথালে ভাত মেখে দুইজনে
ধুয়ে যায় বৃষ্টির জলে সেইসব স্মৃতি
মালিক বদলে গেলে
স্মৃতিরাও বদলে যাবে কয়েক বছরে
শুধু তারা সঙ্গ দেবে বামুন পিসিকে চিতার আগুনে
1

কবিতা - পার্থ সরকার

Posted in





এক সাইনবোর্ড
এক যারপরনাই নামকরণ
এক শব্দ ভৌতিক
তবু
নিছক হাড়কাঁপানো সম্ভাবনা নয়
বরং নিয়মমাফিক একচ্ছত্র সম্রাট হবে কে
তাতেই তোলপাড়
ঘরের ভিতর ঘর

ফিরে দেখা
কাকডাকা ভোরে
উপার্জনের অপ্রতুলতা
ছিটকে পড়া দোরগোড়া

তবু
ভয় অন্যদিকে
কথা বলে চলেই মহামারীর প্রত্যন্ত এলাকা ।
1

কবিতা - শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

Posted in





কখন যেন হারিয়ে গেছি কাজের মাঝে
চতুর্দিকে ফাইল পাহাড় কাগজ কলম
কখন যেন মানুষ ছিলাম কে জানে তা
এখন শুনি কাজের মানুষ বলছে লোকে।
‘কাজ করে যা ফল না ভেবে’ – বলছে গীতা
কাজের ফাঁকে সময় গেল বহতা নদী
তাসের ঘরে তাসের খেলা খেলতে নেমে
কখন গেছে জনান্তিকে গোলাম চুরি।
এ যেন সেই বাঁশুরীয়ার বংশী বাদন
আমরা সবাই ইঁদুরছানা ছুটছি পিছে
সবাই ভারী ব্যস্ত ভীষণ কাজের তাড়া
মনের ডাকে সাড়া দেবার সময় কোথায়!
যে মেয়েটা স্বপ্ন নিয়ে তাকিয়েছিল
যে ছেলেটার চোখের তারায় রামধনু ঢেউ
ছুটছে তারা ঘুরছে কেবল কাজের তালে
রামধনুরঙ স্বপ্নগুলো মিথ্যে হলো।
সবাই শুধু চাইছে যেতে এগিয়ে দু-পা
শিখর ছোঁবার কল্পনাতে জীবন উধাও
এ যন্ত্রণাও সইতে পারে মানব শরীর
মনের খবর কেউ রাখেনা এই জোয়ারে।
বিকিয়ে দিয়ে জীবনটাকে দাসের হাটে
আমরা যারা ভাবছি – ‘আমি কি হনু রে’
চোখ বুজে ডুব দিলেই জানি মন গহনে
যাচ্ছেতাই আমরা সবাই, আমরা যা তা।
0

কবিতা - সৌমিত বসু

Posted in





মায়া বৌ - ১

লক্ষীর মতো পা।
যদিও লক্ষীর পা আমি দেখিনি কখনো।
সোনার বর্ণ হবে।তুলতুলে।
সেই পা নিয়ে তুমি ঘুরে বেড়াও পৃথিবীর অন্য কিনারে।
আমার দৃষ্টি ততদূর পৌঁছুতে পারে না।

একদিন আলতা পোরো।
চোখের জল দিয়ে আমি ধুয়ে দেবো চণ্ডীদাস হয়ে
হাত বুলিয়ে মুছিয়ে দেবো সমস্ত অপমান।


মায়া বৌ -- ২

উরুর ওপর কাপড় তুলে
ইন্দ্রকে তুষ্ট করে স্বামীকে ঘরে ফিরিয়ে এনেছে
আমাদের ঘরের মেয়ে বেহুলা
সবাই তাকে ধন্য ধন্য করছে
তার কৃতিত্বে মনসামঙ্গল মাথায় ঠেকিয়ে
তুলসীতলায় প্রদীপ দিচ্ছে মেজবৌ।

অনেক রাতে বেহুলা ঘুমোলে
চুপিচুপি বিছানা থেকে উঠে
বারান্দায় কেঁদে চলে লখিন্দর।একা।শূন্যতায়।


মায়া বৌ - ৩

কতবার চেয়েছি দু-আঙুলে গলায় চাপ দিতে
অথবা চুল নিয়ে খেলতে খেলতে ঘন স্নেহে গলায় জড়িয়ে দিয়ে টান
কিংবা একদমে ঠোঁট থেকে শুষে নিতে যাবতীয় অক্সিজেন
যাতে আমার পরে কেউ এসে তোমায় না ছুঁতে পারে।

অথচ মৃত্যুর কথা মনেই ছিলো না
দু-আঙুলের ফাঁক গ'লে সে তোমায় ছিনিয়ে নিয়ে
কিভাবে আটকে দিলো আকাশের গায়ে।
0

কবিতা - শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

Posted in





ও কবি তোর কলম কোথায় - মরছে সখা, পুড়ছে সই
ছাই হয়ে সব উড়ছে তারা, কবি রে তোর কাব্য কই !
এখন সবই বিপ্রতীপে, প্রতীবাদের কন্ঠ খুন
ও কবি, তোর মুখোশটাতে ঘর বেঁধেছে বেবাক ঘুণ ।
খুন হচ্ছে দুধের শিশু, খুন করছে তোর জ্ঞাতি
এই কি রে ভাই গণতন্ত্র, এই কি তোদের রাজনীতি ?

ও কবি, তুই ভুললি বুঝি - সময় কিন্তু জবাব চায়
ভাইয়ের রক্তে হাত রাঙালি, মুখ লুকাবি আর কোথায় !
এই ফাগুনে যে ছেলেটা খুনখারাবি খেলল ফাগ
আসবে ফিরে নিদাঘ দিনে সঙ্গে নিয়ে দারুণ আগ ।
সেই আগুনে পুড়তে হবে, পার পাবেনা কেউ কোথা
মরবে পুড়ে তোর কবিতা, মর্চে ধরা কলমটাও।
0

কবিতা - কুমকুম বৈদ্য

Posted in





মায়েরা ঠাকুর হয়ে যায় সব
গলায় মালা, ধূপের ধোঁয়া
জল মিষ্টির সব আয়োজন
একটা ফটো দরকার হয়
ঠাকুরের পটের মত, মরে গেলে
আয়নার দিকে তাকালে কিছু আদল
কয়েকটা জিন বেঁচে থাকে আঁচল সরে গেলে
দুটো করে ছায়া পড়ে না
এই সব সত্যি কথা নয়, আসলে
মায়েরা ঠাকুর হয়ে যায়, মা হয়ে গেলে

0

কবিতা - শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

Posted in





আগে তুই টিকিট নিবি,
কোথায় যাবি, কোন সুদূরে ?
ডেকেছে বন্ধু বুঝি
সাঁঝের বেলায় বাঁশির সুরে ?

টিকিটের পয়সা লাগে
কড়ি গণ্ডা আনা টাকা
আছে কি তোর অভাগী
রাহা-খরচ, পরীর পাখা !

টিকিটে ছাপ দিয়ে দেয়
টিকিটবাবু, হিসেব করা
সীমানা ডিঙিয়ে যাওয়া
বন্ধ এবার, বন্ধ ওড়া ।

যাত্রার হিসেব মত
মেপে মেপে পদক্ষেপণ
টিকিটের দাম ফুরোলেই
সাধের শরীর অবচেতন ।

আগে তুই টিকিট কেটে
করলিটা কি বল তো মেয়ে,
সে ঘাটে ঠেকতে হবেই
যে ঘাটে হাল ছাড়বে নেয়ে ।

তবু তুই টিকিট নিলি
আগেভাগে ছুট্টে এসে
মাঝি তোর সঙ্গে থাকুক
সারাজীবন ভালবেসে ।
0

কবিতা - কুমকুম বৈদ্য

Posted in





ট্রেকিং এ নির্দিষ্ট গাইড কন্ট্রাক্টের
টাকা টুকু ছাড়া আলগা বকশিস
তবুও চোখের উপর ছিলনা বিশ্বাস
পাইনের শিকড় পহাড়ের নিচ অবধি গড়িয়েছে কিনা
কোথায় লুকিয়ে তারা অথবা বনের জীব
রেখেছি লুকিয়ে চিহ্ন সেই পথে
যদি ভাবো সময়তো অফুরান
হাঁটবে নিঃস্ব হাতে জীবনের এক্সপিডিশন
0

কবিতা - ঝানকু সেনগুপ্ত

Posted in





ভুল থেকেই তো শিক্ষা নিতে হয়
তবু, এমনই ভুল যে শোধরানোর আর কোনো উপায় নেই
আসলে চশমাটা ফেলে এসেছি!

স্নান এবং যথা নিয়মে পুজো পাঠ সেরে এখন যাচ্ছি।

স্নিগ্ধ শোভন আলোয় বুঝতে পারছি
দেশ এগোচ্ছে!

ময়লা একটাই শাড়ি পুকরে ভিজিয়ে
আঁচল শুকোচ্ছেন, একজন মা
কোলের শিশুটি রোদের দিকে মুখ ফিরিয়ে ঘুমিয়ে

মনের আনন্দে বুঝতে পারছি
দেশ এগোচ্ছে!

ভাগ্যিস চশমাটা ফেলে এসেছিলাম!!
0

কবিতা - সৌমিত বসু

Posted in





তুমি চলে যাবার পর মনে হয়
রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি কবিতা
তোমাকে নিয়েই লেখা।

ট্রেনে ফিরছি।
পেছন থেকে কে যেন বলে উঠলো
'এসেছিলে তবু আসো নাই'
আমার মনে হলো আমার ভেতরেই বেজে ওঠা তোমার গান
প্রবল বন্যায় হাত ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছ তুমি
ভেসে চলে যাচ্ছে তোমার জোড়
তোমার ভাঙাচোরা।
শূন্যের ভেতর আমি
একটি বিন্দু হয়ে যেন
দাঁড়িয়ে রয়েছি,
কোনো শব্দ নেই ,তবু হুন্ড্রুর জলপ্রপাতের মতো
কে যেন বাণী ছড়িয়ে ছড়িয়ে ভেসে আসছে
গাঁদার পাপড়ি হয়ে।
এও কি আমার ভেতর বেজে ওঠা তোমার শুশ্রূষা?

তোমাকে নিয়ে লেখা সমস্ত কবিতাই
আমার কাঁচা মনে হয়।
মানুষ হারিয়ে গেলে হৃদয় যে ভেসে ওঠে
জলের ওপর,
এও কি তোমার জানা?
0

কবিতা - শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

Posted in





কোনোকিছু বদলায় না তো
জানতাম এই সব
সূর্য ওঠা, মানুষ মিছিল
মোরগের গান কিম্বা শালিখের স্তব ।

জানতাম একদিন চলে যেতে হয়
তুমি, আমি, আগে-পরে কোন একজনে
একটু কি তাড়াহুড়ো করেছো সুজন
কি জানি কি দুঃখে, কিম্বা কোন অভিমানে !

কোন ফাঁকি ছিলোনা কখনো
কোন ফাঁকও না
তবু কেন এত তাড়া,
এত যন্ত্রণা !

বলেছিলে – ‘পৃথিবীটা বড় দ্রুত বদলে চলেছে,
ভালবাসা বোকার বিকার’
ছুঁড়ে দেয়া কথাগুলো কাকে বলেছিলে ?
আমি নয়, আমি নয়, অন্য কেউ আর ।
তবুও আমার চোখে সেদিনও শ্রাবণ

আজও দুই চোখ ছলোছলো
সেদিন আমার মনে উচ্ছল জোয়ার
আজ খেয়া ঢেউয়ে টলোমলো ।

কখনো তাকিয়ে দেখি পৃথিবীর আনাচ-কানাচ
সারাদিন বয়ে যায় কাজে-কর্মে ছুতোয়-নাতায়
দুপুরে হঠাৎ ফোনে মনে হয় হয়তো বা তুমি
পোড়া রাত চেয়ে থাকে তুমি হয়ে চোখের পাতায় ।

যা ছিল, যেমন ছিল, সব যেন হারানো পুরোনো
পৃথিবী বদলে চলে তোমার কথার রেশ ধ’রে
আমাদের ফেলে আসা দিনগুলো ঝরে পড়া স্মৃতির পালক
আমি শুধু দগ্ধ হই তোমার আগুন সঙ্গী করে ।
0

কবিতা - কাজরী বসু

Posted in






ভাসিয়েছ অচিন্ত্য সুখে প্রথমেই খর নদীস্রোতে
অথচ রেখেছ পাখিচোখ রক্তিম শুভ চিহ্নতে!
ভাসো আর ডুবেই বা গেলে,রঙ যেন থাকে পরিপাটি
ইচ্ছে আকাশচারী হোক,নখ যেন ছুঁয়ে থাকে মাটি...

সবটুকু দিতেই তো পারি,সবটাই,চেয়েছিলে যা যা
বিনিময়ে চাইতেই পারি রক্তমাংস তরতাজা!
সব রঙ ধুয়ে ফেলা যাবে,রক্তচিহ্নটুকু বাদে
সব স্বাদ আস্বাদ শেষে যথেচ্ছ থাকো না বিষাদে!

এটাই যে ভাবার্থটুকু,এটাই যে সুখের খাজানা।
রক্তের চিহ্ন ধারণে বাটিভরে দিলে পানিদানা
তাই বলো অশ্রু বা জল,তাই বলো অমৃত বা বিষ
আমারই যা দেয় ধনটুকু,অবিকল একই রেখে দিস।

বলে যাও,আজীবন বলো,একদিন কমে যায় জোর
নিয়মের বাঁধাগতে শুধু নিয়মিত ঘুরে যায় মোড়।
পাশাপাশি থেকেও কখনো শেষাবধি অপারগ ছুঁতে
বেঁচে থাকা টিকে থাকা যবে সামান্য চিহ্নটুকুতে।
0

কবিতা - ঝানকু সেনগুপ্ত

Posted in




















যতবার আমি গোলাপ ফুলের ছবি আঁকতে যাই
আমায় কেউ জেলখানার ভিতর নিয়ে যায়
আমি চিৎকার করে বলি
আরে আমি তো একটা ফুল আঁকতে চেয়েছিলাম
ওরা কিছু হাসি ছুঁড়ে দেয়
আর আমার হোয়াটস অ্যাপ নম্বরটা নিয়ে
অনবরত খেলা করতে করতে বলে
দেখ, দেখ, কত মজা!
ভোগ কর, একটাই তো জীবন, হে হে!

তারপর একদিন আমি                                     
আমার সেই প্রিয় বইটা নিয়ে পড়তে চাইলাম
ওরা একটা বন্দুক ধরিয়ে দিয়ে বলল
নাও, তাক কর ওই বইটার দিকে!
আরে আমি তো শুধু বইটাই পড়তে চেয়েছিলাম
ওরা আবারও আমার দিকে হাসি ছুঁড়ে দিয়ে বলে
ওসব স্বপ্ন দেখা ছাড়!
কথা শোন। জীবন তো একটাই !

এবার আমি আমার দেশের ছবি আঁকতে শুরু করতেই
ওরা কেমন পিছু হটতে শুরু করল
আসলে আমার ছবিতে                                               
একটা মানুষের মিছিল ছিল!
0

কবিতা - সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

Posted in





গতবছর অষ্টমীতে লক্ষ লোকের ভীড়ে
লাজুক মুখের একটা ছেলে তোমার মনে পড়ে?

নতুন জুতোর ফোস্কা পড়ে কাহিল তখন তুমি
বন্ধুরা সব এগিয়ে যাচ্ছে সামনেই শ্রীভূমি

প্রাইজ পাওয়া প্রতিমা তার সোনার অলঙ্কারে
চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে সবার চলছে লাইন করে

তুমি তখন একলা তোমার ছলছলে দু চোখ
কৌতূহলে দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছে লোক

হাওয়াই কিনে ফিরছি বাড়ি থমকে গেলাম দেখে
এক মুহূর্ত নিয়েছি ঠিক সামনে দিলাম রেখে

মোড়ক খুলে সস্তা হাওয়াই ফুটের থেকে কেনা
তখন তোমার মুক্তিদাতা না থাক চেনাশোনা

অবাকচোখে তাকিয়ে ছিলে সে চোখ আজও বুকে
আমার মতো লাজুক ছেলে আর ওখানে থাকে

এই বছরে ভ্যাটিকানের আলো দেখতে গিয়ে
হঠাৎ করেই সেই দুটো চোখ পড়লো মনে, মেয়ে

কেমন আছ মেয়ে তোমার কে জানে কি নাম
তোমার জন্য এই চিঠি আজ হাওয়ায় ভাসালাম !
0

কবিতা - শামিম আহমেদ

Posted in





নদীটি তোমার ছিল না, ছিল না গোধূলি 
ছিল শুধু চুলোচুলি নেড়াদের 
নেড়ি বসেছিল একা, কদম গাছের নীচে 
কেউ পোঁছে তাকে কেউ না 
নদীটিও ছিল না, ছিল না গোধূলি 
জটিল থেকে জটিলতর হয় কাঠচাঁপা 
রাস্তা টোটো অটো ভূতপঞ্চ 
অমলা হলে হত্যামঞ্চ 
ব্যোমকেশ বসে বসে বাদাম ছাড়ায় 
নদীটি তখন ঘটি গরম 
সেও ছিল না কারও 
প্রবহমান 
একা একা স্রোত বয়ে যায় 
ইট খসে পড়ে, ঠাকুরবাড়ি সৎসঙ্গে মেশে হায় 
নদীটির ঘৃণা ছিল না, ছিল না ভালবাসা 
অন্ধ যেন পরে আছে রঙীন চশমা 
নদীটি কারোর ছিল না, গোধূলিও না।
5

কবিতা - ঝানকু সেনগুপ্ত

Posted in





প্রতিমুহূর্তে আমি এখন
একটা অন্যরকম রাতের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করি
আমার বাগানের চারা গাছগুলো সঙ্গে থাকে
একটু জলের জন্য আমি কমন্ডলু খুঁজে বেড়াই
আমার তখন আর ভয় করে না
জানি জল পেলে রোদের দেখা পাব
আর তারপর বহুদূর হেঁটে যেতে পারি।
0

কবিতা - কুমকুম বৈদ্য

Posted in





ক্য়ালকুলেশন মেলানো সহজ
আচরণ বিধিসম্মত
সব শেষে অ্য়াকাউন্টস মেলাতে বসা
তারপর চোখে চোখ রেখে লাভ ক্ষতির হিসাব পেশ
এইসব অতি অকিঞ্চিতকর সততার কথা
আজকের শিল্পীর কাছে বিলাসিতা বড়
তবু যে রাত দিন খেটে জোগান দিয়েছে অপ্রতুল মূলধন,
আশা করে একদিন আসবে,
যেদিন বিশ্বাস শব্দটা বিশ্বাস করতে পারবে সে
2

কবিতা - কৌশিক মিত্র

Posted in





ডিসেম্বর,১৯৬২।২৩ নং ফিৎজরয় রোড(লন্ডন), একটি ফ্ল্যাট। দুটি শিশু আর তাদের মা। বিবাহবিচ্ছিন্না, নিঃসঙ্গ, নির্জন সিলভিয়া প্ল্যাথ লড়ছেন, নিজের সঙ্গে! খাতার পাতায় আঁকিবুকি, আর যে সময় নেই...১১ই ফেব্রুয়ারি,৬৩। প্ল্যাথ হেরে গেলেন। এ পরাজয়ের প্রস্তুতি তার জীবনভোর, তিনি বেঁচে থাকলেন তাঁর কবিতায়, তাঁর যন্ত্রণা মূর্ত হল অক্ষরে, হাতে এসেছে “দ্যা কালেকটেড পোয়েমস অব সিলভিয়া প্ল্যাথ ”। এ বইয়ের সম্পাদনা করছেন টেড হিউজেস(হাঘস), প্ল্যাথের প্রাক্তন স্বামী, যিনি নিজেও কবি। বইয়ের প্রকাশকাল ১৯৮১।

সেই ডিসেম্বরে লেখা কবিতা ড্যাডি, সে লেখা আলোয় আসবে ১৯৬৫ তে 'অ্যারিয়েল' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে। পিতা অটো প্ল্যাথ, ছায়া যুদ্ধ, মৃত্যুর নীল বিষ, ছায়া ঘনাইছে বনে বনে।

দীর্ঘ কবিতা "ড্যাডি", ১৬ টি স্তবকে নির্মিত এ কবিতার ছায়াশরীর। আসলে এ কবিতার উদাত্ত আহ্বান উপেক্ষা করা কঠিন। অনুবাদ করে ফেলা গেল, নাহ আক্ষরিক অনুবাদ নয়, মূলাশ্রয়ী ভাবানুবাদ! রাখা হল নীচে।।


ড্যাডি


করেননি আপনি, না করেননি
আপনি কিছুই,
তিরিশটা বছর কাটিয়ে ফেলেছি আমি।
যেন একটি কৃষ্ণ পাদুকার মধ্যে পা খানা, দারিদ্র্যে ধূসর
শুধুমাত্র শ্বাস্টুকু নেওয়ার স্পর্ধা অথবা একটা হাঁচি।

পিতা, হত্যা করতে পারতাম আপনাকে।
যথেষ্ট সময় পাওয়ার আগেই আপনি অনন্তের যাত্রী-
এক থলি ঈশ্বর, গুরু-ভার,
বীভৎস সে মূর্তি, ধূসর অঙ্গুলি
ফ্রিস্কো সীলের মত বৃহৎ।

অদ্ভূত অতলান্তিকে জেগে থাকা মাথা এক,
নীল রঙে উজাড় সবুজ
নসেট [১] এর অপূর্ব জলরাশির মধ্যে
আপনাকে উদ্ধারের চেষ্টায় আমি প্রার্থনারত আমি।
আহ! আপনি।


=২=

জর্মন জিহ্বায়, পোলিশ নগরীতে
রোলারের পেষণে বিদ্ধস্ত সমতল,
যুদ্ধ, যুদ্ধ, যুদ্ধেরা।
কিন্তু শহরের নামখানা বড় পরিচিত।
হে পোলিশ বন্ধু আমার।

বলা যায়, এক ডজন কিম্বা দুই।
কখনই বলতে পারিনি আমি,
এলেন আপনি কোথা হতে,
আপনার উৎস, আপনার অবস্থান
নাহ! শুধাতে পারিনি আপনাকে আমি।
আমার জিহ্বা চোয়ালে অবরুদ্ধ হয়েছে।

আটকে পড়া কাঁটাতারের বাঁধনে।
ইক,ইক,ইক,ইক।
সম্ভব নয় কথা কওয়া
আমার বিশ্বাস, প্রত্যেক জার্মানের প্রতিনিধিত্ব করেন আপনিই।
এবং ভাষ্য অশালীন এক।

একটি ইঞ্জিন, ইঞ্জিন এক
কোনও ইহুদির মতই মুখ থেকে উদগত ক্রোধসিক্ত অসন্তোষ
ইহুদি এক, পথ গিয়েছে বেঁকে ডাচাউ, আউজভিৎজ, বেলসেনের[২] দিকে
আমার কথা বলা সেই ইহুদির মতই
ভাবছি আমি, বিধিমত ইহুদি হয়ে ওঠাই আমার ললাটলিখন।

টাইরলের তুষার, ভিয়েনার শ্বেত ভল্লুক
নয় কোনভাবেই বিশুদ্ধ, নয় নিখাদ।
সঙ্গে আমার বাদিয়া পুর্বজের উত্তরাধিকার এবং মন্দভাগ্য
জন্মছক, জন্মছক আমার
ইহুদি খানিক ত হয়ে ওঠাই সম্ভব।

আপনাকে ঘিরেই ত শঙ্কাকুল যাপন আমার,
আপনার বিমানপোত,অকথ্য গালিগালাজ।
সুসজ্জিত গুম্ফের সারি
আর্য-চক্ষু, উজ্জ্বল নীল।
হে গোলন্দাজ-মানব, গোলন্দাজ-মানব, উফ! আপনিই------

নয় কোন ঈশ্বর,তবুও স্বস্তিক
কৃষ্ণবর্ণ ঘোর,আকাশ যায় না দেখা।
প্রত্যেক নারীই ভালোবেসে ফেলে কোন ফ্যাসিস্টকে,
পদাঘাত আপনার মুখে,বর্বর
বর্বর আপনার হৃদয়, ঠিক আপনারই সদৃশ।


=৩=

হে পিতা, ঐ যে ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আপনি,
আলোকচিত্রে দেখি আপনাকে,
আপনার চিবুকে খুর একখানা
যা থাকা উচিৎ ছিল পায়ে
শয়তানের চেয়ে কোন অংশে নয় কম,
আলকাতরার মত হৃদয় যে মানুষের তার চেয়েও নয় কম,
যে আমার তুচ্ছ ক্ষুদ্র রক্তাক্ত হৃদয়কে
বিভাজিত করেছিল দুই ভাগে।

আপনাকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল,আমি তখন দশ
মৃত্যুর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার চেষ্টা আমার,তখন আমি কুড়ি
ফিরতে চেয়েছি আমি, ফেরা, আপনার কাছেই।
ভেবেছি তবুও আমি, হয়ত অস্থিই ফেরাবে আমাকে।

ওরা আমাকে সেই থলির মধ্যে থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এল,
বাঁধলে আমায় অচ্ছেদ্য বন্ধনে।
আমার কর্তব্য স্থির।
আপনার প্রতিমূর্তি নির্মাণ করি।
মাইনক্যাম্ফ সদৃশ দৃষ্টি, ঘোর কৃষ্ণ অবয়ব।

মধ্যযুগীয় অত্যাচারের প্রতি প্রণয়।
এবং ঘোষণা আমার, পেরেছি আমি, আমি পেরেছি।
সুতরাং হে পিতঃ, আমার কাজ সম্পূর্ণ।
কালো দূরভাষ বিচ্ছিন্ন উৎস হতে,
কোন কণ্ঠস্বর আর ওকে উষ্ণ করে তুলবে না।

যদি হত্যা করে থাকি কাউকে, তাহলে সে সংখ্যা দুই
সেই শোণিতভুক, বলে গিয়েছিল আমায়,সে আপনিই
এবং একবছর ধরে আমার রুধিরে সিক্ত আপনার অধর,
সাতটি বছর, যদি জানতে চান আপনি।
পিতা, এখন সময় শয়ানে যাবার।

আপনার কৃষ্ণ হৃদয়ে প্রোথিত শক্ত খুঁটিখানা
এবং গ্রামবাসীরা, পছন্দ করেনি আপনাকে কোনোদিন
নৃত্যরত তারা এঁকে চলেছে ছাপ অবয়বে, আপনার।
তারা ত জানত, এ আপনিই।
পিতা, পিতা, বেজন্মা আপনি
তর্পণ সমাপ্ত আমার।



***

পাদটীকা- =৪=

[১] নসেট- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ম্যাসাচুয়েটসের সমুদ্রতীর।

[২] ডাচাউ, আউজভিৎজ, বেলসেনের- ডাচাউ, বেলসেন এ দুটি জার্মানির এবং আউজভিৎজ পোল্যান্ডের কুখ্যাত কনসেনট্রশন ক্যাম্প।
1

কবিতা - অঞ্জন বল

Posted in



পার্থেনন ধ্বংসের পরেও অন্ধকার ছিল পৃথিবীতে বহুকাল --
দ্রাঘিমার ব্যবচ্ছিন্ন সময়...
মানুষের যাতায়াত ...পারাপার
প্রতিটি সৌধের পাশে বসতির হাড়মাস
নিরন্তর হাত বদল শাসকের... বিধাতার।

কর্ণের রথের চাকার দৈবিক আয়োজন
দেমেত্রা খুশি হলে পৃথিবীতে বসন্ত আসে
এসবই পল্লবিত প্রাচীন উল্লাস
ইশারায় ধূলিঝড়,
অন্ধকার যবনিকা... অন্তরালে
আলোকের কারিকুরি ধ্বংসের অবশেষে।
ঠিক যেনো সোফোক্লেয়েসের 'আন্তিগোনে '
ট্র্যাজেডির মতো --
সংঘাতে , কীর্তিতে , যন্ত্রণায় ও শোকে
দীর্ঘ পথ পরিক্রমা চলে মুখোশের আড়ালে।

দেবতারা নজরে রাখে পৃথিবীর অদ্ভুত
বায়বীয় ভূগোল , নাভিশ্বাস , ভূমিক্ষয় --
বোঝে মানুষ শাসনে নেই আর
গোত্রান্তর ঘটে গেছে পাতায় শেকড়ে
পুরাকালিন নিশ্চয়তা নেই আর পৃথিবীতে
সব কিছু শিথিল নিয়মের আগলে বাঁধা
বিবর্তন ঘটে গেছে একালে।
0

কবিতা - সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

Posted in





তার জীবনে প্রেম ছিল না
যা ছিল তা প্রয়োজনই শুধু
ফলতঃ যা বানিয়েছিল তা নদী নয়
মরুভূমিই ধু ধু

ক্লান্ত জীবন যেদিকে চায় চোখ দেখে তার রাশি রাশি বালি
নেই ছায়া নেই কোনদিকেই
তেষ্টা ভীষণ
মরীচিকাই খালি

হাত পাতে সে যার কাছেতেই
সেই তো ফেরায় বেবাক খালিহাতে
প্রয়োজনের আয়োজনে দিন কেটেছে তারও
জীবনেতে

কষ্ট কত গোপন রাখে
কাকে বলে কেই বা শুনতে চায়
আজকে সবাই ব্যস্ত ভীষণ
প্রয়োজনের অনিবার্যতায়

চোখ ভরে তার জল আসে তাই
বুকের ভেতর কেবল দীর্ঘশ্বাস
দিনের পরে দিন চলে যায়
সঙ্গী যে তার কেবল হা হুতাশ


ছোট্ট একটা কুকুরছানা
কোত্থেকে যে পেছনে একদিন
চোখ ফোটেনি কুঁই কুঁইটাও শোনাই যায়না
বড্ড বেশি ক্ষীণ
কি ভেবে সে কুড়িয়ে নিল
বাড়িও নিয়ে এলো বুকে করে
তুলোয় করে দুধ খাওয়ালো ভয়ে ভয়ে
যায় না যেন মরে
মায়ার বাঁধন কাকে বলে ধীরে ধীরে বুঝলো সে এইবার
ভুলু এবং সে
দুজনের ছোট্ট সে সংসার

বয়স গেছে শরীর গেছে
বুক ভরা তার রয়েই গেছে স্নেহ
চোখের নজর কম হয়েছে অশক্ত এই দেহ
বুকের কাছে ভুলু ঘুমোয়
মরুভূমি এ তল্লাটে নেই
ভুলু নামে একটা নদী তার বুকেতে এখন তো থইথই ।