1

অনুবাদ সাহিত্য - অংকুর সাহা

Posted in

অবিস্মরণীয় প্রেমের কবিতা -- ৪


এবারে দশক দুয়েক পেছনে ফেরা যাক -- কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ কবি বাদ পড়েছেন আমাদের প্রেমের কবিতার তালিকা থেকে।

হর্হে লুইস বর্হেস ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্যের বিশ্বামিত্র: বৃদ্ধ, প্রাজ্ঞ, কঠিন, গম্ভীর। কিন্তু তিনিও এক সময় যুবক ছিলেন এবং প্রেমের কবিতা লিখেছেন। সারা জীবন তিনি সুযোগ পেলেই রবীন্দ্রনাথকে গালাগাল দিয়েছেন। আমার মনে হয়, অল্পবয়সে তিনি বিক্তোরিয়া ওকাম্পোর প্রেমে পড়েছিলেন। তিনি বিক্তোরিয়ার নাম দিয়েছিলেন “লা মুহের মাস আর্হেন্তিনা” (“আর্হেন্তিনার নারীত্বের পরাকাষ্ঠা”)। তাঁর কথাসাহিত্যে নারীচরিত্র প্রায় নেই বললেই চলে এবং সমকামীত্বের অভিযোগ তাঁর পিছু নিয়েছে সারা জীবন। যদিও কাগজে-কলমে তিনি দুবার বিয়ে বসেছেন আটষট্টি এবং ছিয়াশি বছর বয়েসে। এখানে তাঁর কম বয়েসে লেখা নিটোল একটি প্রেমের কবিতা সংকলিত হল।

কমিউনিস্ট ভাবধারার চূড়ান্ত বিরোধী বর্হেসের অন্য মেরুতে রয়েছেন কুবার বামপন্থী, সমাজতন্ত্রী কবি নিকোলাস গিয়েন, যাঁর কবিতা আমরা প্রথম পড়ি শঙ্খ ঘোষের অনুবাদে। তাঁর প্রথম যুগের কবিতাগুলি “মোদারনিসমো” প্রভাবিত হলেও পরবর্তীকালে তা রাজনৈতিক কবিতা হয়ে দাঁড়ায়। আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কালো মানুষের জীবনযাত্রা, দারিদ্র ও সংগ্রামের মুখপাত্র তাঁর সাহিত্য। সংকলিত প্রেমের কবিতাটিতেও তারই প্রতিফলন। 

এই দুজন মহীরুহের যুক্ত হলেন নিকানোর পাররা -- যাঁকে ব্যাখ্যা করা কেবল মুশকিলই নয় প্রায় অসম্ভব। গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল চিলের শীর্ষস্থানীয় কবি -- তখনও নোবেল পুরস্কার পাননি। সান্তিয়াগো শহরে তাঁর কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান -- তিনি মঞ্চে উঠেছেন, কিন্তু কবিতাপাঠ শুরু হবার আগেই মঞ্চে লাফিয়ে উঠলেন তরুণ নিকানোর -- পাঠ করলেন তাঁর নিজের কবিতা, মিস্ত্রালকে নিবেদিত।

এর পরে কালানুক্রমে আরও আটজন কবি -- তাঁদের মধ্যে একজন সাহিত্যে নোবেলজয়ী, মাত্র কয়েকশো অসামান্য কবিতা লিখে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় নি তাঁর জীবৎকালে। মাত্র সাতান্ন বছর বয়েসে কর্কটরোগে মৃত্যুর আগে একজন এ্যাঙ্গোলার রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন -- তিনি চে এবং ফিদেলের ঘনিষ্ঠ বান্ধব এবং লেনিন শান্তি পুরষ্কার পেয়েছিলেন। তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে লুয়ান্ডা শহরে। রয়েছেন হাঙ্গেরির এক অজানা কবি। বাইবেল, তোরা আর তালমুদে নিবেদিত ইসরায়েলের এক হিব্রুভাষী কবি। দুই দীর্ঘজীবী মার্কিন নারী কবি -- যদিও কবিতা দুই মেরুর। তৃতীয় একজন অতলান্তিক মহাসাগরের দুই প্রান্তে বসে কবিতা লিখেছেন সমান দক্ষতায়। এবং জীবনের মোমবাতি দুই প্রান্তে জ্বালিয়ে সেই আগুনে পুড়ে যাওয়া অস্ট্রিয়ার এক বিষাদময় কবি।

তাঁদের মধ্যে যোগাযোগের একটাই সূত্র: প্রেমের কবিতা।

হর্হে লুইস বর্হেস: (আর্হেন্তিনা, ১৮৯৯-১৯৮৬)

প্রেমের পূর্বাভাস 

কেবল তোমার ললাটে উৎসবের স্পষ্ট অন্তরঙ্গতা নয় 
অথবা জয় করে পাওয়া তোমার এখনো রহস্যময় আর অনুগামী আর 
নিষ্পাপ শরীরও নয় 
অথবা শব্দ কিংবা নীরবতায় শোভিত তোমার জীবনের ছবির মতন 
ঘটনাগুলিও নয় 
সবচেয়ে রহস্যবহুল অনুকম্পা হতে পারে 
আমার বাহুর অক্লান্ত পাহারায় 
তোমার স্বপ্নের মুকুলগুলির পাপড়ি মেলতে দেখা।

ঘুমের আরোগ্যময় অলৌকিক প্রভাবে সরল কৌমার্য 
ফিরে পেলে তুমি,
শান্ত অথচ ঝকমকে উত্তম স্মৃতিগুলি খুঁজে নেবার তাগিদে 
তোমার জীবনের দূরতম সীমাগুলি আমার হাতে 
তুলে দেবে তুমি, যা এখনো তোমার নিজেরই নয়।

নীরবতায় নোঙ্গর ফেলে 
তোমার অস্তিত্বের মণিমুক্তা খুঁজে নেবো আমি 
আর খুব সম্ভবত একমাত্র ঈশ্বরই যেভাবে দেখেছেন তোমায় ,
সেভাবে তোমার মুখোমুখি হবো আমি,
সময়ের গালগল্প সব ঘুচবে,
না থাকবে প্রেম 
না থাকবো আমি।

[চল্লিশে পৌঁছনোর আগেই যিনি দুরারোগ্য ব্যাধির কবলে পড়েন, তিনি শেষ পর্যন্ত জীবন কাটালেন সাতাশি বছরের কাছাকাছি। জীবনের শেষ তিরিশ বছর দুই চোখেই অন্ধ, কিন্তু লেখা বন্ধ না করে দ্বিগুন উদ্যমে শুরু করলেন সাহিত্যের সাধনা। তাঁর জীবন যাত্রা তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির মতোই অলৌকিক। কেবল নোবেল পুরস্কার পেলে সম্পূর্ণ হতো তাঁর সাহিত্যরচনার বৃত্তটি, কিন্তু পেলেন না খুব সম্ভবত তাঁর গোঁড়া রক্ষণশীল রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার জন্যে। যদিও আশির দশকে তাঁর নাম থাকতো তালিকার শীর্ষে। তিনি সমকামী কি না, সেই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে প্রচুর। ছোটগল্প এবং সাহিত্যতত্ত্বের প্রবন্ধ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় রচনা; তার পরেই অনুবাদ: পো, কাফকা, হেসে, কিপলিং, মেলভিল, জিদ, হুইটম্যান, ফকনার -- গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ অনুবাদ করেছেন এস্পানিওল ভাষায়। দুটি সাহিত্যশৈলী একান্তভাবে নিজস্ব তাঁর (যদিও অনুকরণ করেছেন অনেকে) -- সাহিত্যিক জালিয়াতি, অর্থাৎ পুরানো, বিখ্যাত লেখকদের নকল করে লেখা এবং কাল্পনিক গ্রন্থ অথবা চলচিত্রের সমালোচনা। কবিতা লিখেছেন সারাজীবন, দৃষ্টিশক্তি কমে যাবার পর কবিতা লেখার সংখ্যা বাড়ে। এই কবিতাটি ১৯২৫ সালে প্রকাশিত “লুনা দে এনফ্রেনতে” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া। এস্পানিওল ভাষা কবিতাটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন আলেকজান্ডার কোলম্যান (১৯৩৫-২০০৩)।]


নিকোলাস গিয়েন: (কুবা, ১৯০২-১৯৮৯)

যা, রুটি নিয়ে আয় 

যা, রুটি নিয়ে আয়,
যা, রুটি নিয়ে আয়,
নাহ’লে এক পাও এগুচ্ছি না আমি 
সকল থেকে এক পেয়ালা চা আর বিস্কুটে 
পেট চলছে না রে আবার।

জানি রে, সময় খুব খারাপ এখন,
কিন্তু পেট যে জ্বলে যায় রে:
যা, রুটি নিয়ে আয়, জলদি,
যা, রুটি নিয়ে আয়,
নইলে এখনই কেটে পড়ছি আমি।

জানি রে, সবাই বলে আমি কোনো কম্মের না,
আমার মুখ দেখতেও চায় না একবারটি,
কিন্তু খালি পেতে শুতে পারবো না তোর সঙ্গে, সখি,
পেট ভরবে না তাতে।

দোকানে থরে থরে সাজানো নতুন জুতো,
পেট ভরবে না তাতে!
দামি দামি ঘড়ি কাচের শো-কেসে, প্রিয়ে,
পেট ভরবে না তাতে!
আমার মতন কালো ভবঘুরে 
এক-চোখ মেলে দেখে যাও সব --
পেট ভরবে না তাতে!

[পুরো নাম: নিকোলাস ক্রিস্তোবাল গিয়েন বাতিস্তা, কুবার কৃষ্ণকায় কবি, রাজনৈতিক মতবাদে বামপন্থী ও কমিউনিস্ট। স্পেনিয় গৃহযুদ্ধের সময় সেখানে যান তিরিশের দশকে, যুদ্ধের রিপোর্ট পাঠান কুবার সংবাদপত্রের জন্যে। হেনারাল ফুলহেনসিও বাতিস্তার (১৯০১-১৯৭৩) রাজত্বকালে তিনি দেশ থেকে নির্বাসিত -- বিপ্লবের পরে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনেন ফিদেল কাস্ত্রো। তিনি লাতিন আমেরিকার ‘কৃষ্ণকায় কবিতা’র (Poesia Negro) এর পুরোধা এবং কুবার জাতীয় লেখক সমিতির সভাপতি ছিলেন বহু বছর। তাঁর কবিতায় কুবার কালো মানুষের দারিদ্র্য ও জীবনসংগ্রামের ছবি। পৃথিবীজোড়া আফ্রিকা-বংশোদ্ভূত মানুষের ‘নেগ্রিচুড’ (Negritude) সাহিত্য আন্দোলনের নেতৃত্বস্থানীয় সদস্য। কবিতাটি সালে ১৯৩০ সালে প্রকাশিত “মোতিবোস দে সন“ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া; এস্পানিওল ভাষা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেছেন পেরি হিগম্যান।]

নিকানোর পাররা: (চিলে, ১৯১৪-২০১৮)

সোনাঝুরি

রাস্তার ধারে উপচে পড়ছে সোনাঝুরি ফুল
অনেক বছর আগে সেখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
আমার সবজান্তা বন্ধুর মুখে জেনেছিলাম 
সদ্য বিয়ে হয়েছে তোমার।

শুনে আমি বললাম যে সত্যিসত্যিই 
তাতে কিছু আসে যায় না আমার।
তোমায় আমি ভালোবাসিনি কোনোদিন --
-- সেকথা তুমি ভালো করেই জানো --
-- কিন্তু বললেও বিশ্বাস করবে না তুমি! --

যখনই থোকা থোকা সোনাঝুরি ফুলগুলো ফোটে 
সেই একই ভাবনা আসে আমার মনে 
সোজা এসে আঘাত করে বুকের পাঁজরে 
এক বুকফাটা মর্মান্তিক সংবাদ --
অন্য এক পুরুষকে বিয়ে করেছ তুমি।

[পুরো নাম নিকানোর সেগুন্দো পাররা সান্দোবাল -- কবি, প্রতিকবি, বর্ণময় ব্যক্তিত্ব, পদার্থবিদ ও গণিতের অধ্যাপক। পাবলো নেরুদার সঙ্গে সঙ্গে চিলের সর্বকালের সেরা কবি। শতবর্ষ পেরিয়েও নিয়মিত লিখে গেছেন প্রতিকবিতা এবং অংশ নিয়েছেন পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনে। ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত ‘পোয়েমাস ই আন্তিপোয়েমাস’ গ্রন্থ থেকে কবিতাটি নেওয়া। এস্পানিওল ভাষা থেকে ইংরেজি অনুবাদ পেরি হিগম্যান।] 

আগনেস নেমেস নেগি: (হাঙ্গেরি, ১৯২২-১৯৯১) 

কবির জন্যে 

ছেলেটি আমার সমসাময়িক। সে মরলো, আমি নয়।
তোব্রুক শহরের প্রান্তে মৃত্যু, দুর্ভাগা ছেলের।
সে ইংরেজ। আর অন্য নামগুলি আমাদের বলে,
বিভিন্ন অঞ্চলের কথা, যেখানে, পাকা বাদামের মতন, 
মানুষের মুণ্ডু মাটিতে পড়ে আর ফেটে 
দু টুকরো হয়; যত পোর্টেবল রেডিও -- 
তাদের সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি আর আওয়াজ 
আইফেল টাওয়ারের মতন সুন্দর,
তাদের মেরুদণ্ড সশব্দে ভেঙে পড়ে মাটিতে।

এভাবে আমি তোমার যৌবনের কথা ভাবি --
থুথ্থুরে বাহাত্তুরে বয়েসে এসে যখন 
আজকের সঙ্গে পঞ্চাশ বছর আগের তফাৎ দেখি না,
গোধূলিতে দেখি তোমার হৃদয়, জড়বুদ্ধি।
কিন্তু প্রেম, এক জটিল বিষয়। 

[হাঙ্গেরির এক প্রধান কবি, প্রাবন্ধিক ও শিশু সাহিত্যিক। কমিউনিস্ট আমলে সরকারের স্বীকৃতি অথবা সহযোগিতা না পেয়ে মূলত স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। শিশু সাহিত্য ছাড়া তাঁর নিজের অন্য লেখা প্রকাশের অনুমতি না পেয়ে তিনি শুরু করেন মলিয়ের, রাসিন, ব্রেখট ও ইয়োরোপের অন্যান্য সাহিত্যিকদের রচনার হাঙ্গেরিয় ভাষায় অনুবাদ। কবিতাটি ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত। হাঙ্গেরিয় ভাষা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেছেন ব্রুস বার্লিনড।]

আগস্টিনহো নেটো: (এ্যাঙ্গোলা, ১৯২২-১৯৭৯)

দু বছর পরে 

হে প্রিয় -- কালকের চিঠিতে তুমি লিখেছো 
কবে আবার দেখা হবে আমাদের 
চটজলদি অথবা বিলম্বে 
বলো আমায় প্রিয়তম?

যা হতে পারে নি নীরবতায় 
আমাদের মধুর সংলাপ 
চুম্বন বিনিময় 
সেনসার করা চিঠিপত্রে 
উহ্য থেকে গেছে যেসব জরুরি কথা

আজকের সংকটের পটভূমিতে 
হয় আনুগত্য নয় যন্ত্রণা 
তাই দিয়ে আমাদের আত্মত্যাগ 
আর সত্যকথনের দু:সাহস 
স্বাধীন মানুষের মতন 
বেঁচে থাকার আর 
চিন্তা করার অধিকার 

আমাদের স্বপ্ন আর কামনার মাঝামাঝি …….
কবে আবার দেখা হবে আমাদের 
চটজলদি অথবা বিলম্বে 
বলো আমায় প্রিয়তম!

তার থেকেও যথাযথ 
দেশের মানুষের সঙ্গে 
এক হওয়ার আকাঙ্খা 
আজ কাল এবং আরো বেশি 
স্বাধীন স্বাধীন স্বাধীন 

[কবি, বিপ্লবী, স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা এবং স্বাধীন এ্যাঙ্গোলার প্রথম রাষ্ট্রপতি (১৯৭৫-১৯৭৯)। সমসাময়িক আরো অনেক বিপ্লবী নেতার মতন, তাঁর বেশির ভাগ কবিতা জেলখানায় বসে লেখা। মাত্র বছর বয়েসে প্যানক্রিয়াসের ক্যানসারে তাঁর মৃত্যু। তাঁর কবিতায় নাজিম হিকমতের (১৯০২-১৯৬৩) ছায়া দেখা যায়। কবিতাটির রচনাকাল: ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭, পি আই ডি ই কারাগার, ওপরটো,পর্তুগাল। কবিতাটির পর্তুগিজ ভাষা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেছেন মার্গা হোলনেস।]

ভিসওয়াভা শিমবোরস্কা: (পোল্যান্ড, ১৯২৩-২০১২)

নিরাবরণ 

এখানে আমরা দুজন, নগ্ন প্রেমিক-প্রেমিকা,
একে অন্যের কাছে হয়ে উঠছি সুন্দর -- সেটাই ঢের।
চোখের পাতায় আমাদের একমাত্র আবরণ,
গভীর রাতের গহনে আমরা শয়ান।

কিন্তু আমাদের কথা তারা জানে, নিশ্চয়ই জানে,
ঘরের চারটে কোণ, আশপাশের চেয়ার।
বোঝদার ছায়ারাও নিশ্চয়ই জানে,
এমনকি চুপ করে থাকে টেবিলটাও।

আমাদের চায়ের কাপগুলো ভালো করেই জানে, 
চা কেন জুড়িয়ে জল হয়ে যাচ্ছে।
আর বুড়ো সুইফ্টও হলফ করে বলতে পারেন 
তার বইটা পড়তে পড়তে আমরা থেমে গেছি।

এমনকী পাখিরাও খবর পেয়ে গেছে:
হঠাৎ দেখি তারা আকাশে
নির্ভয়ে ও অসংকোচে লিখছে সেই নাম
যে নামে আমি তোমায় নিভৃতে ডাকি।

আর গাছেরা? আমায় বুঝিয়ে বলতে পারো
কেন তারা একনাগাড়ে ফিসফাস চালিয়ে যায়?
তুমি বললে, বাতাস পর্যন্ত সব জানে,
কিভাবে জানলো সেটা আমার কাছে রহস্য।

ঘুলঘুলি দিয়ে একটা মথকে ঢুকতে দেখে
অবাক আমরা, তার ডানার অসংলগ্ন নড়াচড়া।
একইভাবে বারবার একই একঘেয়ে কক্ষপথে
সে নীরবে অনবরত ঘুরে ঘুরে যায়।

হয়তো আমাদের দৃষ্টি যেখানে পৌঁছোয় না, তার
পতঙ্গের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখতে পায় তাকে;
আমি কখনো বুঝতে পারি নি, তুমিও না
আমাদের জোড়া হৃদয় অন্ধকারে জ্বলছে দপদপে। 

টীকা: সুইফ্ট: ব্রিটিশ সাহিত্যিক জোনাথান সুইফ্ট (১৬৬৭-১৭৪৫), “গালিভারের ভ্রমণ” এর রচয়িতা।

তর্পণ 

হেজেল ঝোপের ভেতর তাদের সঙ্গম চলে
সূর্যের তাপে গলে যাওয়া শিশির,
ঝরাপাতার মতন 
জড়িয়ে যায় তাদের মাথার চুলে।

হে চড়াই পাখির হৃদয় 
এদের দয়া করো।
তারা ঝিলের ধারে হাঁটু গেড়ে বসে,
চিরুনিতে উঠে আসে কাদামাটি, পাতা,
জলের প্রান্ত অবধি সাঁতার কেটে চলে আসে মাছ,
আকাশের তারাগুলোর মতন ঝকঝকে।

হে চড়াই পাখির হৃদয় 
এদের দয়া করো।

জলের মধ্যে গাছগুলির ছায়া 
ঢেউয়ের দোলায় ধোঁয়াটে।
হে চড়াই, এ স্মৃতিটুকু 
অক্ষত করে রাখো।

হে চড়াই, মেঘের পথের কাঁটা,
বাতাসের স্থির নোঙর,
উন্নত ইকারুস,
ফিটফাট পোশাকের বরকর্তা।

হে চড়াই, তোমার সুন্দর হস্তাক্ষর,
তুমি ঘড়ির কাঁটার মতন সজাগ,
তুমি আদিপক্ষী জটায়ু,
তোমার তির্যক চাহনি আকাশময়।

হে চড়াই, তীক্ষ্ণ নীরবতা,
আনন্দময় বিষাদ,
প্রেমিকদের মাথার চালচিত্র,
এদের ক্ষমা করো।

[পোল্যান্ডের ক্রাকুভ শহরে একসময় দুজন সাহিত্যে নোবেলজয়ী বাস করতেন: চেসোয়াভ মিউশ এবং এই কবি। তিনি নোবেল পুরস্কার পান ১৯৯৬ সালে। সব মিলিয়ে ৭০ বছর ধরে তাঁর লেখা কবিতার সংখ্যা চারশোর কিছু বেশি। “এতো কম লেখেন কেন?” এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, “সব ভালো কবির লেখার ঘরে থাকবে শক্তপোক্ত এক বাজে কাগজের ঝুড়ি এবং তিনি যেন তা ব্যবহার করেন নিয়মিত।” 

দুটি কবিতায় নেওয়া হয়েছে ২০০১ সালে প্রকাশিত “অলৌকিক মেলা” কাব্যগ্রন্থ থেকে। পোল ভাষা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেছেন জোআনা ট্রেসিয়াক।]

ডিনিস লেভেরটোভ: (ইংল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ১৯২৩-১৯৯৭)

সমাপ্তির পরে 

ভেবেছিলাম খুঁজে পেয়েছি রাজহংস 
কিন্তু পরে দেখি বিদেশি বালিহাঁস।

ভেবেছিলাম অদৃশ্য বাঁধনে তাকে জড়িয়েছি অঙ্গে অঙ্গে 
এখন দেখি আমি তার সঙ্গে থেকেও সঙ্গহীন, একা।

ভেবেছিলাম খুঁজে পেয়েছি নির্ভেজাল আগুন 
ভুল ভাঙে, দেখি উজ্জ্বল পাহাড়ে আলোর খেলা।

ভেবেছিলাম আঘাত পেয়েছি অন্তরে গভীরে 
আসলে ছড়ে গিয়েছে সামান্য।

[কবির মায়ের জন্ম উত্তর ওয়েলসের এক খনি শহরে। বাবা রুশ হাসিদিক ইহুদি। বারো বছর বয়েসে তিনি কয়েকটি কবিতা লিখে টি. এস. এলিয়টকে ডাকযোগে পাঠান। কবিতা পড়ে এলিয়ট দুপাতা জোড়া উত্তর লেখেন বালিকাকে উৎসাহ জানিয়ে। সতেরো বছর বয়েসে প্রথম কবিতা প্রকাশ, তেইশ বছর বয়েসে প্রথম কাব্যগ্রন্থ। কবির অর্ধেক জীবন কাটে ইংল্যান্ডে, বাকি অর্ধেক আমেরিকায়। সংকলিত কবিতাটি ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত “অরণ্য জীবন” কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া।]

এহুদা আমিখাই: (ইস্রায়েল, ১৯২৪-২০০০)

ব্যথা ও প্রেমের গান 

দম্পতি হিসেবে আমরা ছিলাম 
একটি কাঁচির দুই ফলা,
সুন্দর এবং ভীষণ কাজের।

এখন আলাদা হয়ে গিয়ে 
আমরা আবার আগের মতন 
দুজনে দুই ধারালো ছুরি 
পৃথিবীর মাংসে গভীর করে গাঁথা,
যে যার নিজের জায়গায়।

অবিরত জীবনযাপন 

স্বর্গ একদা ছিল প্রাচীন জলধি,
ও:, আমি উষ্ণ বাতাসে শয্যা পেতে 
তার ওপরে মাথা রেখে শুই।

যে পৃথিবী আমাদের উত্তেজনা 
কমানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে
তার কথা ভাবো 
তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের 
দু:খ কষ্ট হবে না বিশেষ।

অবিরত বেঁচে থাকা মানে 
একে অন্যকে সাক্ষাৎ না করা,
এড়িয়ে যাওয়া।

[পল সেলান এই কবির বিষয়ে লিখেছেন, “You are the poem you write, the poem you write is ... you yourself.” তাঁর কবিতা আত্মজৈবনিক এবং স্বীকৃতিমূলক। দৈনন্দিন জীবন থেকে উপাদান সংগ্রহ করে কবিতায় তিনি জুড়ে দেন দার্শনিক সচেতনতা ও গভীরতা। তাদের অস্তিত্ব জুড়ে থাকে অন্তহীন বিষাদ আর ধর্মীয় অনুষঙ্গ। চলিত হিব্রু ভাষা থেকে কবিতার ইংরেজি তর্জমা করেছেন কবি নিজে।]

জেন কুপার: (মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্র, ১৯২৪-২০০৭)

শরীরী আলোর কথোপকথন 

আমার দারিদ্র থেকে 
তোমার দারিদ্র থেকে
আমার নগ্ন শরীর থেকে
তোমার নগ্ন শরীর থেকে
জলে সন্তরণরত মানুষটির আর
আকাশ থেকে তাকিয়ে থাকা লোকটির
ফাঁক দিয়ে
কিছু একটা পাল্টে যায়

কিছু দান করা হয়
কিছু নি:শ্বাস ফেলা হয়
উজ্জ্বল শরীর
বিন্দু বিন্দু নক্ষত্রের মতন
অন্তর্দৃষ্টিকে হাতছানি দেয় 
আমার দারিদ্র:
জমে রয়েছে শরীরে 
হাস্যকর মাঝবয়সে 
নীরব, অনভ্যাসে কাতর 

আর তোমার দারিদ্র:
দুহাতে উড়িয়ে 
নিজেকে নি:স্ব করে ফেলে 
তার চকচকে বাড়িতে 
বসে থাকে ফিটফাট 

আমার নগ্ন শরীর থেকে
তোমার নগ্ন শরীর থেকে
জলে সন্তরণরত মানুষটির আর
আকাশ থেকে তাকিয়ে থাকা লোকটির
ফাঁক দিয়ে
কোথাও পৌঁছানো যায় 
এক মুহূর্তে স্বীকার করে নেওয়া 
হারানো -- না আশ্রয় পাওয়া 
হিমবাহের হৃদয় 
এখনো বিশ্বাস হয় না 

[কবিতাটি ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত “মাচান” (“Scaffolding“) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।]

অপেক্ষা 

আমার শরীর জানে সে মা হবে না কোনোদিন।
আমি এই পুরানো বেহালা, আমার দেহটাকে 
কী বলে সান্ত্বনা দিতে পারি?
প্রতি রাতে সে তার গোপন গুহায় 
তীব্র ব্যথায় কাঁদে।

পুরানো শরীর, পুরানো সখা,
এখনো আমায় ক্ষমা করতে পারলে না কেন?

কেন তুমি এমন গোঁয়ার আর অবুঝ হয়ে 
পড়ে আছো শূন্যতাকে ঘিরে?
যন্ত্রটা কিন্তু তার বাক্সে নেই।

ধরো তুমি একটা খালি ট্রাঙ্ক?
ধরো তুমি নিউ ইয়র্কের ট্রয় শহরের সেই 
বিখ্যাত কাঠের প্রেক্ষাগৃহ,
যেখানে অর্কেস্ট্রা বাজিয়ে সুখ হতো --
এবার কি পুরোটা ভেঙে ফেলা হবে?

করুণায় তুমি শ্বাস-প্রশ্বাসের মতন ওঠো নামো,
শ্বাস-প্রশ্বাসের মতন ওঠো নামো

বৃত্ত, বর্গক্ষেত্র, ত্রিভুজ এবং জলের ঢেউ 

সদ্য লেখা কবিতাটির ওপরে যৌনতা 
ভেসে বেড়ায় চাঁদের মতন। তার গৃহ
বিদ্ধ হয়েছে আগেই, অহমিকা 
পংক্তি ভেঙে বুক উঁচিয়ে দাঁড়ায় 
ছায়াময়। কিন্তু যৌনতা ভাসে 
অচেতন শূন্যে, স্বপ্নের মুহূর্তগুলিকে 
টেনে তোলে বিন্দু বিন্দু 
সমুদ্রের মতন, গড়িয়ে দেয় 
অন্তহীন, নির্ভুল, এক পূর্ণিমার চাঁদ 
অথবা দুধে আর্দ্র এক স্তন।
মেয়েটির ভ্রুক্ষেপ নেই 
জলাশয়ের কেন্দ্রে রাখা পাথরের মতন 
তাকে ধীরে জলের বৃত্তেরা 
কেঁপে কেঁপে ঘুরে যায়।

[মার্কিন কবি, সারা লরেন্স কলেজে অধ্যাপনা করেছেন প্রায় চার দশক। কবিতা লিখেছেন খুব কম -- দীর্ঘ কবিজীবনে পাঁচটি শীর্ণ কাব্যগ্রন্থ। সংকলিত কবিতাদুটি ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত “মানচিত্র ও ঝরোখা” (“Maps and Windows “) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।]

ম্যাক্সিন কিউমিন: (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ১৯২৫-২০১৪)

সঙ্গমের পরে 

সঙ্গম শেষ, বোঝাপড়া।
শরীর ছেড়ে মনকে ধরা।

এই যে দ্যাখো, আমার দু পা,
সরিয়ে নিলাম নিজের স্তূপে।

আঙ্গুল, ঠোঁট -- তফাৎ যাও।
যে যার নিজের ফিরিয়ে নাও।

ক্লান্ত তোষক, ক্লান্ত লেপ,
দরজা খুলে আসছে ঝেঁপে।

বিমান ওড়ার শব্দে কাঁপে,
পাখির গান, সে আকাশ মাপে।

আর কোনো নেই ব্যতিক্রম,
সেই মুহূর্ত এলো যখন:

নেকড়ে, লোভী নেকড়েটি 
নিজের বাইরে এলো হেঁটে 
এলিয়ে পড়লো আলগোছে।

[মার্কিন কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও শিশুসাহিত্যিক। পাঁচ দশকের বেশি প্রসারিত সাহিত্যজীবন -- গদ্য ও পদ্যের অসংখ্য গ্রন্থ। বিচিত্র পেশায় নিযুক্ত ছিলেন -- কলেজে অধ্যাপনা থেকে খামারে আরবি ঘোড়া প্রতিপালন। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত “দু:স্বপ্নের কারখানা” কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতাটি নেওয়া।]

ইংগাবর্গ বাখম্যান: (অস্ট্রিয়া, ১৯২৬-১৯৭৩)

বলো আমায়, প্রেম 

ঈষৎ নুয়ে তোমার মাথার টুপি, বাতাসে দোলে,
তোমার মাথা উঁচু হতে হতে মেঘের রাজ্য ছোঁয়,
অন্য কারুর ব্যস্ত তোমার হৃদয়,
নতুন জিভ জন্ম নিয়েছে তোমার মুখের ভেতর,
বুনো ঘাস গজায় দ্রুত,
বসন্ত বাতাসে এলোমেলো ওড়ে অ্যাসটার ফুলেরা 
তার ছোঁয়ায় চমকে উঠে মুখ তোলো তুমি,
হাসো, কাঁদো, ভেঙেচুরে যাও,
কী দশা হবে তোমার?

বলো আমায়, প্রেম!

ময়ূর পেখম তোলে উৎসবের ভঙ্গিতে,
পালক সাজানো মাথা তোলে ঘুঘু,
বাতাস ভরে সোহাগের বকবকমে,
পাতিহাঁস গলা মেলায়, বুনো মধু 
পান করে পৃথিবীর মাটি, শান্তিময় পার্কে 
প্রতিটি ফুলের শয্যায় সোনালি ধূলির পাড়।

লজ্জায় রাঙা মাছ, দল ছেড়ে এগোয় 
আর লাফ দিয়ে ঢোকে প্রবালের খুঁজে।
রুপালি বালির সঙ্গীতে লাজুক কাঁকড়াবিছে নাচে।
বোলতা দূর থেকে প্রেমিকের গন্ধ পায়;
আমার যদি সেরকম ঘ্রাণশক্তি থাকতো, আমিও 
শক্ত খোলার নীচে টের পেতাম পাখনার লজ্জিত ঝাপট
আর সামনের পথ ধরে উড়ে যেতাম সুদূর স্ট্রবেরি কুঞ্জে।

বলো আমায়, প্রেম!

জল জানে কিভাবে বাক্যালাপ করতে হয়,
ঢেউ জানে অন্য ঢেউয়ের হাত ধরে হাঁটতে 
দ্রাক্ষাকুঞ্জে রসে টুপটুপ আঙ্গুর, ফাটে, মাটিতে পড়ে।
সরল, দিশেহারা শামুক গর্ত থেকে গুঁড়ি মেরে বেরোয়।
এক পাথর নরম করে অন্যদের!

বলো আমায়, প্রেম, আমি যার কুলকিনারা পাই না:
আমি কি প্রেম না জেনে আর প্রেম না দিয়েই 
কাটাবো এই ক্ষণিক, ভয়ঙ্কর সময়,
কেবল তোমার চিন্তাভাবনার ঘূর্ণনে এবং একা?
চিন্তা কি করতেই হবে?
টের পাবো তোমার অভাব?

তুমি বলো: অন্যজন তার ওপরে নির্ভর …
আর কিছু বোলো না। আমি গোসাপকে দেখি 
একের পর এক আগুন নির্বিঘ্নে পেরোয়।
কিছুতে ভয় পায় না।
কিছুতে ব্যথা পায় না।

টীকা: গোসাপ: মূল কবিতায় “স্যালামাণ্ডার”। এক সময় ইয়োরোপের মানুষের অন্ধ বিশ্বাস ছিল যে স্যালামাণ্ডার আগুনে পোড়ে না।

[অস্ট্রিয়ার শীর্ষস্থানীয় কবি -- বিদ্রোহী ও নারীবাদী। মার্টিন হাইডেগারের দর্শন নিয়ে গবেষণা করে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি। মাত্র সাতচল্লিশ বছর বয়েসে আগুনে পুড়ে মৃত্যু। সিগারেটের আগুন থেকে আগুন ধরে তাঁর শয্যায়। তার আগেই মদ্যপান ও নিষিদ্ধ ভেষজের ব্যবহারে ভেঙে পড়েছিল তাঁর শরীর। কবির কালজয়ী আত্মজৈবনিক উপন্যাস “মলিনা” প্রকাশিত হয় ১৯৭১ সালে। কবিতাটির প্রথম প্রকাশ ১৯৫৬ সালে। জর্মন ভাষা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেছেন পিটার ফিলকিন।]

নভেম্বর ২০১৯ [ক্রমশ:]

1 comment:

  1. আহা! একগুচ্ছ স্বাদু কবিতা, নানারঙের নানাঢঙের । চমৎকার অনুবাদ। কুয়াশাঘেরা গুরুগ্রামের দুপুরে পড়তে পড়তে মনটা ভালো হয়ে গেল। আরও হোক।

    ReplyDelete