0

ধারাবাহিক - সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

Posted in


ধারাবাহিক


এক কিশোরীর রোজনামচা - ১৮
সুজিত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়




Diary Entry -16
21 September, 1942, Monday.



প্রিয় কিটী, 

এতদিন শুধু গম্ভীর কিছু কথা তোমায় বলছিলাম। কেমন আছি, কেমন কাটাচ্ছি, জায়গাটা কেমন এই সবই তোমায় জানাচ্ছিলাম। আজ অন্য কিছু বলা যাক। আজ না’হয় আমি তোমার সাথে আমাদের এখানকার দৈনন্দিন কিছু খবরাখবর শেয়ার করব। তা’ নাহলে চিঠিগুলো কেমন একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। 

অন্য খবর কি’আর বলব? শ্রীমতী ভ্যান ড্যানকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না! সত্যিই আমরা (অন্ততঃ আমি) তাঁকে আর সহ্য করতে পারছি না। অবশ্য আমার কথা তুমি ছেড়েই দিতে পার! আমি ত’ তাঁর কাছে শুধু তিরস্কার ছাড়া আর কিছুই পাই না। আর তার জন্যে যে আমার কোনও দায় বা দায়িত্ব নেই, এ’কথাও বলতে পারব না। আমাকে তাঁর চূড়ান্ত অপছন্দের কারণ হলো, আমার ক্রমাগত বকর বকর করার অভ্যাস। তাঁর মতে এ’টা বাচালতা, যা মোটেই মেয়েদের শোভা পায় না। কিন্তু তিনি যে ক্রমাগত কোনও না কোনও বিষয়ে বক বক করে আমাদের সবাইকে জ্বালাতন আর পরোক্ষে অত্যাচার করে চলেছেন, তার দিকে কে নজর দেবে? সে ব্যাপারে ত’ তাঁকে বলার মতো কেউ নেই। তিনি কি করছেন জান? ইদানীং, শ্রীমতি ড্যান কখনও ভুলেও তাঁদের খাবার তৈরী করার স্যসপ্যানটাকে ঠিক মতো পরিষ্কার করে রাখেন না। স্যসপ্যানের মধ্যে তৈরী খাবারের কিছু অংশ লেগে থাকলেও, তা’ চোখ দিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না। সেটাকে ভালভাবে না ধুয়ে তিনি দিব্যি শুতে চলে যান। যেন সব কাজ হয়ে গেছে, আর খুব ভালভাবেই হয়ে গেছে! আমরা কিন্তু আমাদের ব্যবহার করা বাসন, স্যসপ্যান ইত্যাদি সব কিছু পরিষ্কার করে ধুয়ে তারপরই শুতে যাই। ওনাকে দেখলে তোমার মনে হবে, উনিও বোধহয় সেটাই করেছেন, যা আমরা করেছি। সবকিছু সুন্দর করে পরিষ্কার করেছেন, তারপর শুতে গেছেন। কিন্তু তিনি তা’ কখনই করেন না। আর তার ফল ভোগ করতে হয় আমাদের। 

সাধারণভাবে যাতে কোনও গোলযোগ না হয়, তার জন্যে শ্রীমতী ড্যান খাবার তৈরী করে নেওয়ার পর আমরা খবার তৈরী করতে যাই। আমাদের এই বদান্যতার জন্য চূড়ান্ত ভোগান্তি হতো মারগটের। মারগটকে প্রায়শঃ খাবার তৈরী করার আগে শ্রীমতী ড্যানের ফেলে যাওয়া এই রকম ছয় সাতটা চাটু স্যসপ্যান পরিষ্কার করে নিতে হতো। আর তিনি তা’ প্রায় নির্বিকার দৃষ্টিতে দেখতেন, এবং এক নির্লিপ্ত মহিলার মতো মুচকি হেসে বলতেন, “বাঃ বাঃ, মারগট, সত্যিই তোমায় অনেক কাজ করতে হয়।

এই সব সাংসারিক কাজের মধ্যে আমার খুব একটা সংযোগ ছিল না। আমার বাবা এই সময় আমাদের পরিবারের বংশলতা তৈরী করার চেষ্টা করছিলেন। আমার কাজ ছিল, তাঁকে সাহায্য করার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। এটা আমার কাছে অনেক জরুরী বলে মনে হতো। বাবা বংশলতা তৈরী করতে করতে আমায় আমাদের পরিবারের অনেকের বিষয়ে নানা রকম গল্প, কথা বলতেন। এই সব গল্পগুলো শুনতে আমার ভীষণ ভাল লাগত। এছাড়াও আমার আরও অনেক কাজ ছিল। মিঃ কোপহৌস (Koophuis) আমাদের জন্যে, বিশেষকরে আমার জন্যে প্রায় প্রতি সপ্তাহে পড়ার জন্যে নতুন নতুন বই নিয়ে আসতেন। ঠিক সময় বুঝে তিনি ভিতরে এসে বইগুলো আমাদের হাতে পৌছে দিয়ে যেতেন। ওঁর কাছ থেকেই আমি ‘জোওপ-টার-হিউলের’ (Joop-tar-Heul) বইয়ের সিরিজগুলো পড়েছিলাম। আমি বইগুলো শুধু পড়তামই না, বলতে পার বইগুলো গিলতাম। সত্যি কথা, আমি ক্রিসী- ভ্যান- মারক্সভেল্ডের (Crissy- Van- Marxveldt) এই বইগুলোর অন্ধ ভক্ত ছিলাম। কতবার যে বইগুলো পড়েছিলাম, তার কোন হিসাব নেই। বিশেষ করে তোমায় বলব “ইয়েন যমারযথেইড” (Een Zomerzotheid) নামের বইটা। আমি ত’ বইটা প্রায় বার চারেক পড়েছি। আবার যদি পাই, তা’হলে আবার পড়ব। বইটাতে এমন সব মজার মজার বিষয় আছে, যে, তুমি পড়লে, নিজেই নিজের মনে হাসতে বাধ্য হবে। আমি ত’ এখনও বইটার কথা ভাবলেই নিজেই নিজের মনে হেসে উঠি। এই রকম বই যখন হাতে আসে, তখন বুঝতেই পারছ, আমার আর কিছুরই দরকার হয় না। 

(“ইয়েন যমারযথেইড” Een Zomerzotheid । ইংরাজিতে আনুবাদ করা বইটির নাম Summer Folly যার আক্ষরিক বাংলা করলে হয় “গ্রীষ্মকালের বোকামি” । বইটির প্রচ্ছদ ছবিটি দেওয়া হলো। বইটি অ্যানির ভীষণ প্রিয় বই ছিল।) 

সেদিন বাবার কাছে পড়তে গিয়ে, আবার মনে পড়ে গেল, আমাদের স্কুলে নতুন শিক্ষাবর্ষ নিশ্চয়ই এতদিনে শুরু হয়ে গেছে। আমরা নেই। নিশ্চয়ই আমরা বেশীদিন এখানে থাকব না। এখন হয়ত স্কুলে যেতে পারছি না, কিন্তু বাড়িতে যদি মন দিয়ে পড়াটা না করি, তাহলে সবার থেকে পিছিয়ে পরব। তাই বাড়িতে, ঠিক করলাম, আমায় মন দিয়ে ফরাসী ভাষাটাকে ভাল করে রপ্ত করে নিতে হবে। আমি নিজে থেকেই ঠিক করেছি, রোজ অন্ততঃ পাঁচটি করে ফরাসী শব্দ ও ব্যাকরণের পাঁচটি অকর্মক ক্রিয়া মুখস্ত করব। আমি একদম অভ্যাসের মতো করে মুখস্ত করতে শুরু করে দিই। শুধু মুখস্তই করতাম না, সে’গুলোকে বিভিন্ন বাক্যে ব্যবহার করে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করার চেষ্টা করতাম। বাবার অভিভাবকত্বে, কাজটা আমি নিয়মিত চালিয়ে যেতে লাগলাম। এতে আমার ফরাসী ভাষার উপর দখলও একটু একটু করে আসতে লাগল। 

আর পিটার? তার কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। সে কেবল ইংরাজীটা নিয়ে প্রায় গলদঘর্ম হয়ে পড়ত। সে তার পড়ার বইতে ইংরাজীটা দেখত, আর নিঃশব্দে আর্তনাদ করত আর দীর্ঘশ্বাস ফেলত। তার কাছে পড়াটাই ছিল বিড়ম্বনা। আমরা যখন আমাদের বাড়ি ছেড়ে, এই অ্যানেক্স ভবনে লুকিয়ে থাকার জন্যে চলে আসি, তখনই বাবা আর মায়ের নির্দেশে আমরা আমাদের বেশ কিছু নির্ধারিত স্কুলের পাঠ্যবই নিয়ে এসেছিলাম, আর তার সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম বেশ কিছু লেখার খাতা, বইয়ে মলাট লাগানোর মতো মলাটের কাগজ, নাম লেখার স্টিকার, রুল কাটার, ইরেজার, পেনসিল। এগুলোর আনার জন্যেই আমাদের পড়াটা চালিয়ে যেতে কোনও অসুবিধাই হয়নি। পিটার এগুলো এনেছিল কি’না আমার জানা নেই। ওরা যখন এখানে আসছিল, তখন ওর মা-বাবাই বা’ ওকে পড়ার বই আর অনান্য পড়ার সরঞ্জাম আনতে বলেছিলেন কি’না, তা’ই আমি জানি না। 

এছাড়াও আরও কত কাজ ছিল আমার। মারগটের মতো মায়ের সঙ্গে নয়, বাবার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রায়শঃ আমি বাবাদের সাথে একসাথে বসে রেডিওতে লন্ডনের খবর শুনতাম। খবরগুলো সাধারণতঃ ওলন্দাজী ভাষায় হতো। তাই বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হত না। একদিন (সেদিন) রেডিওতে শুনলাম, যুবরাজ বারনহারড (Prince Bernhard) না’কি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, রাণী জুলিয়ানা (Princess Juliana) বর্তমানে সন্তানসম্ভবা। আগামী জানুয়ারী মাস নাগাদ তাঁর সন্তান বা সিংহাসনের উত্তরাধিকারী জন্ম গ্রহণ করবে। খবরটা শুনে আমার খুব ভাল লাগল। ভাবলাম এই সুন্দর খবরটা সবাইকে জানাতে হবে। আমি যখন এই খবরটা সবাইকে জানাব, তখন সবাই ভাববে, ‘সত্যি রাজ পরিবারের বিষয়ে আমি কত জানি, তাদের সম্পর্কে কত খবর রাখি। আমি যে, আমাদের রোজকার খবরের বাইরেও অন্য খবর রাখি, সেটা সবাই বুঝতে পারবে।

সত্যিই ত’ আমি কি’ আগের মতো চোদ্দ বছরের বালিকা আছি? আমি যখন এই সব বাইরের খবর নিয়ে, বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলব, তাদের নতুন নতুন খবর দেব, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করব, তখন সবাই বুঝবে, আমি আর আগের মতো ছোট নেই। আমি বড় হয়ে গেছি। অনেক বিষয়ে আমার কৌতূহল আছে। ছোটদের মতো, কেবল ঘরের ব্যাপার নিয়ে থাকি না। এই সব কথাগুলো বাড়ির সকলের বোঝা উচিৎ। এইগুলো যখন বুঝতে পারবে, তখন থেকে হয়তো আমায় সংসারের আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেবে। আমিও বড়দের মতো, সবার মাঝখানে গুরুত্ব পাব। আমার কথা সবাই মন দিয়ে শুনবে। সবাই বুঝবে আর মেনেও নেবে, যে, আমি আর আগের মত ছোট নেই, অনেক বড় হয়ে গেছি। 

তবে একটা বিষয়ে এখনও আমায় বড়দের কথা মেনে চলতে হয়। আমাকে সচরাচর, বড়দের বই পড়তে দেওয়া হয় না। পড়তে গেলে লুকিয়ে-চুরিয়েই পড়তে হয়। মা যেমন, হেরেন (Heeren) বা ভ্রাউওয়েন-এন-কনেচটেন (Vrouwen-en-Knechten) প্রভৃতি ডাচ লেখকদের বই পড়েন, মাঝে মাঝে মারগটকেও কোনও কোনও বই পড়তে দেন, কিন্তু আমাকে একেবারেই দেন না। কারণ বইগুলো না’কি প্রাপ্তবয়স্কের বই,। তাই আমার পড়ার কোনও অনুমতি নেই। মারগটকে মা স্বচ্ছন্দে পড়তে দেন। তাই আমায় সবথেকে আগে মারগটের মত বড় হতে হবে। দিদির মতো বড় হলে আমাকেও মা নিশ্চয়ই অনুমতি দেবে। অবশ্য তার আগে, মেয়েদের মানসিকতা, তাদের দৈহিক চাহিদা বা সেই বিষয়ক ব্যাপারগুলো আমায় জেনে নিতে হবে। তা’না হলে মা আমায় ঐ সব বই পড়তে দেবে না। যেগুলো জানি না, সেগুলো জেনে নিলেই মনে হয় মা আর অপত্তি করবেন না। আমার মনে হয় আগামী বছর নাগাদ আমি এ’সব নিয়ে আলোচনা করার উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারব। আর তখন, এ’সব নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি যেমন পাব, তেমনি এইসব আলোচনায় আমি যোগ দিলেও কেউ আর কিছু বলবে না। (তুমি কাউকে বল না। আমি এই অজানা শক্ত বিষয়গুলো একবার লুকিয়ে কোয়েনেন-এর (Koenen) [*কোয়েনেন ডাচ ডিকশিনারী] বইতে দেখাছিলাম। কিন্তু ভাল করে বুঝতে পারিনি।) 

জান, একটি বিষয় নিয়ে আমি সম্প্রতি বেশ খানিকটা সক্রিয় হয়ে উঠেছি। আমার একটা মাত্র লম্বা ফুলহাতা জামা আর তিনটের মতো পশমের জামা আছে। বাবা আমায় আরও একটা সাদা উলের জামা বোনার অনুমতি দিয়েছেন। বুঝতেই পারছ, আমি বড় হয়ে গেছি, তাই এই অনুমতিটা দিয়েছেন। উলটা হয়তঃ খুব একটা ভাল নয়, বা, খুব একটা দামি নয়; তবে উষ্ণতার কথা যদি বল, তা’হলে বলতেই হবে, উলটা বেশ গরম, আর নরম রোঁয়ায় ভর্তি। তুমি ত’ জানই, আমাদের বেশকিছু জামাকাপড়, আমরা এখানে আসার আগে, আমাদের এক পরিচিত বন্ধুর কাছে রেখে এসেছি। বলা আছে, এখান থেকে যখন যাব, তখন তাঁর কাছ থেকে ঐগুলো নিয়ে নেব। আসলে আমাদের কপাল খারাপ যে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা হয়ত এখান থেকে বেরোতে পারব না; আর তাই সেগুলোও নিতে পারব না। আর যুদ্ধের পর যখন যাব, তখন আর জিনিষগুলো কি পাব? জানি না, আমরা যখন যাব, তখন আর আদৌ তাঁর কাছে জিনিষগুলো থাকবে কি’না! আর আমরা ফেরত পাব কি’না! 

এবার একটা মজার কথা বলি। আমি যখন তোমায়, শ্রীমতী ভ্যান ড্যানকে নিয়ে লিখছিলাম, তখন হঠাৎই পিছন থেকে শ্রীমতী ড্যান এসে আমার ঘরে ঢুকে পড়েন। তারপর আমার কাছে এসে, আমার ঘাড়ের কাছে এসে আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি লিখছি! ওঁকে দেখে আমি তাড়াতাড়ি লেখা বন্ধ করে, এক চাপড়ে খাতাটা বন্ধ করে দিয়ে, বললাম, “ব্যক্তিগত লেখা। উনি এ’কথা শুনেও এবং আমি তাঁকে দেখে খাতা বন্ধ করে দিয়েছি দেখেও, আমায় আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “অ্যানি তুমি কি লিখছ, আমায় একটু দেখাবে না? আমি একটু দেখি 

“না, আপনি কেন আমার লেখা দেখবেন? আর লেখাটা বললাম ত’ ব্যক্তিগত 

“আরে বাবা! আর কিছু না হয়, তোমার লেখার শেষ পাতাটা একবার দেখাও। তুমি কেমন লিখছ সেটা ত’ দেখতে পাব! তোমার হাতের লেখাটা ত’ দেখব!” 

“না, আমি দুঃখিত, আমি আমার লেখা কাউকে কোনওদিন দেখাই না। আর দেখাবও না। আপনাকেও দেখাব না। 

সত্যি, তুমি জান, উনি আমার লেখা দেখতে চাওয়াতে আমি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারণ আমি ত’ আমার লেখার শেষ দিকের পাতাগুলোতে ওঁর সম্পর্কেই অনেক মন্তব্য করেছি। এই মন্তব্যগুলো শ্রীমতী ড্যানের কিছুতেই পছন্দ হবে না। আর উনি যদি, ওঁর অপছন্দের মন্তব্যগুলো সত্যিই দেখে ফেলতেন, তা’হলে যা হতো, সে কথা কল্পনা করতেও ভয় হয়। 

ইতি,

তোমার অ্যানি। 



অনুবাদকের সংযোজন 

বর্তমান প্রসঙ্গে একটি আকর্ষণপূর্ণ তথ্য পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। অ্যানি ফ্রাঙ্কের প্রিয়তম লেখিকা ছিলেন, ডাচ মহিলা ঔপন্যাসিক সেটস্কি-ডি-হান (Setske de Haan)। সেটস্কি-ডি-হানের জনপ্রিয় প্রথম পাঁচটি উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র ছিল, জোওপ-টার-হিউল (Joop-tar-Heul)। চরিত্রটি অবশ্যই একটি কাল্পনিক চরিত্র ছিল। সেটস্কি, এই কাল্পনিক মহিলা চরিত্রকে নিয়ে পাঁচ সিরিজের একটি ধারাবাহিক উপন্যাস লেখেন। সেটস্কি অবশ্য স্বনামে উপন্যাসগুলি লেখন নি। তিনি তাঁর উপন্যাসে, ক্রীসী-ভ্যান-মারক্সভেল্ড (Crissy–Van–Marxveldt) এই ছদ্মনামটি ব্যবহার করেন। তিনি তাঁর সিরিজের পাঁচটি উপন্যাস ১৯১৯ থেকে ১৯২৫ সাল, এই ছয় বছরের সময়কালের মধ্যে লিখেছিলেন। পাঁচটি উপন্যাস পড়লে বোঝা যায়, সেটস্কি বা ক্রীসী, তাঁর চরিত্র জোওপের জীবনকালের পাঁচটি সময়কে নিয়ে, পাঁচটি উপন্যাস লেখেন। তাঁর লেখা পাঁচটি উপন্যাসের মধ্যে একটির প্রচ্ছদের ছবি, উপরে দেওয়া হয়েছে, যাতে পাঠককূল এই বিষয়ে আকর্ষণ অনুভব করেন। সেটস্কী বা ক্রীসীর লেখার একটি বিশিষ্টতা হলো, তাঁর সৃষ্ট চরিত্র জোওপ উপন্যাসগুলিতে তার বিভিন্ন বয়স ও সময়ের কাহিনী বা অভিজ্ঞতা চিঠির মাধ্যমে বর্ণনা করেছে। 

অ্যানির অন্যতম প্রিয় লেখিকা ছিলেন সেটস্কী। তাই এইরূপ অনুমান করার যথেষ্ট কারণ আছে, যে, চিঠির মাধ্যমে ডাইরিতে কল্পিত কিটীকে জীবনের যে কাহিনী অ্যানি শুনিয়েছে, তা’ অনেকটা বা প্রায় সবটাই সেটস্কীর লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই সে লিখেছে। সে নিজেকে হয়ত জোওপ–টার–হিউল বলে ভাবত। 

সেটস্কী–ডি–হান বা ক্রীসী-ভ্যান-মারক্সভেল্ড এর অপর একটি উপন্যাসের প্রচ্ছদ।

0 comments: