0

ধারাবাহিকঃ সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

Posted in


ধারাবাহিক


বানরায়ণ - ১৫
সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়


ভোরবেলা ঢ্যাঁঢরা পেটানোর আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। চমকে উঠে বসলাম। গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। একবার সন্দেহ হলো... সত্যিই ঘটনাগুলো ঘটেছে? নাকি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম?

না। সত্যিই ঘটেছে। কারণ ঢ্যাঁঢরার আওয়াজের মাঝে মাঝে ঘোষকের গলা শোনা যাচ্ছে... ‘‘কিষ্কিন্ধ্যার রাজকীয় বাহিণীতে নিয়মভঙ্গকারীদের স্থান নেই... তাদের কঠিন শাস্তি প্রাপ্য...’’ ইত্যাদি, ইত্যাদি।

উঠে পড়লাম। হনুমান বলেছিলেন বিচারের সময় উপস্থিত থাকতে। তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে গিয়ে হাজির হলাম শিবিরের মধ্যবর্তী খোলা আঙিনার মতন জায়গাটায়। সেখানে ততক্ষণে ভীড় জমে গেছে। আঙিনার মাঝখানে মাটিতে বসে আছে গতকাল রাত্রের পাঁচজন লোক। হাত এখনও বাঁধা। মুখ নীচু। সবাই ওদের ঘিরে গোল করে দাঁড়িয়ে আছে আর গুঞ্জন করছে। ঠিক কি ঘটেছে কাল রাতে, সেটা জানা না থাকায় সবার বিস্মিত ভাবটাই বেশি।

গুঞ্জন হঠাৎ থেমে গেলো। যেন রঙ্গমঞ্চে সমবেত দর্শকের দল আভিনয় শুরু হবার জন্য প্রস্তুত হলো। দেখলাম, অঙ্গনে প্রবেশ করছেন রামচন্দ্র, লক্ষ্মণ, সুগ্রীব, বিভীষণ আর হনুমান। ধীর পায়ে, গম্ভীর মুখে এসে ওঁরা দাঁড়ালেন পাঁচজন দোষীর সামনে। এক এক করে সবার মুখ দেখলাম। হনুমান গম্ভীর। সুগ্রীব ক্রুদ্ধ। লক্ষ্মণ বিরক্ত, বীতশ্রদ্ধ। বিভীষণ নির্লিপ্ত। শুধু রামন্দ্রের অপূর্ব মুখখানাতে দুঃখ আর করুণা মাখানো। তিনি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন মাটিতে বসা অসহায় লোকগুলোর দিকে। তাঁর কাতর দৃষ্টিতে যেন প্রশ্ন ফুটে উঠছে... এ তোমরা কি করলে! হনুমান না এসে পড়লে এই লোকগুলো গতকাল রাতে হয়তো আমাকে মেরেই ফেলতো। কিন্তু তবু এখন ওদের অবস্থা দেখে আমারও কেমন যেন খারাপ লাগছিলো।

হনুমান ধীর পদক্ষেপে মাঝখানে এসে দাঁড়ালেন। তারপর গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘‘এই পাঁচজন কাল রাতে লঙ্কাবাসিনী একটি কিশোরীর উপর বলাৎকার করার চেষ্টা করেছে। প্রভা নামের মেয়েটি নিজের ভাইয়ের মৃতদেহ খুঁজতে এসেছিলো। তাম্বলি গ্রামের ঋচিক ঘটনার সাক্ষী।’’ বলে আমার দিকে তাকালেন। এতক্ষণ একবারও চোখাচোখি হয়নি। কিন্তু আগেই যে দেখে নিয়েছেন, সেটা ভীড়ের মধ্যে সোজা একবারে আমার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম। আমি এগিয়ে গেলাম। আশপাশের লোকজন রাস্তা ছেড়ে দিলো। সবাই কেমন বিস্মিত চোখে তাকাচ্ছিলো আমার দিকে। হনুমান বলছিলেন...

‘‘ঋচিক ওদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিলো। আমি স্বকর্ণে শুনেছি। দেখেছি, ওরা ওকে মারার চেষ্টা করছিলো। আমি সময় মতন না পৌঁছলে বোধ হয় মেরেই ফেলতো।’’ হনুমান থামলেন। ভীড়ের মধ্যে গুঞ্জন উঠলো। আমি একবার চারপাশে তাকালাম। মোহককে দেখতে পেলাম। এক চোখ গর্ব নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

‘‘প্রাণদণ্ডই এদের উচিত শাস্তি!’’ সুগ্রীবের বজ্রকঠোর স্বর শুনে তাকালাম। রক্তচক্ষে তাকিয়ে আছেন দোষীদের দিকে। তাঁর মুখ দেখে মনে হচ্ছে, কাল রাতে হনুমানের বদলে তিনি থাকলে সম্ভবত ছিঁড়েই ফেলতেন লোকগুলোকে।

ভীড়ের গুঞ্জন বাড়ছে। সমবেত জনতা কি চাইছে? এদের মৃত্যুই চাইছে কি?

‘‘তুমি ওখানে কি করে পৌঁছলে?’’ রামচন্দ্রের কন্ঠস্বর। দু’চোখ ভরা প্রশ্রয় আর ভরসা নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছেন। এই প্রথম আমার সঙ্গে কথা বলছেন সরাসরি। ‘‘ঠিক কি ঘটেছিলো ওখানে বলো তো। প্রথম থেকে বলো। কোনও কথা অপ্রয়োজনীয় নয়।’’

আমি ধীরে ধীরে, থেমে থেমে সবটা বললাম। আমার ঘুম ভেঙে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়া থেকে আরম্ভ করে হনুমানের আসা অবধি। রামচন্দ্র সবটা শুনলেন মন দিয়ে। আমার শিরস্ত্রাণ ছুঁড়ে মারার কথা শুনে মনে হলো একটু যেন হাসির আভাস দেখা দিলো ঠোঁটের কোণে। একবার তাকালেন মাটিতে বসা অসহায় লোকগুলোর দিকে। তারপর আমার দিকে ফিরে ধীর, মন্থর স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তুমি কি শাস্তি চাও এদের? মৃত্যুদণ্ড?’’

আমি নির্বাক। এ পরিস্থিতি আমার কল্পনার অতীত। ত্রিভুবনের প্রভু রামচন্দ্র আমাকে জিজ্ঞেস করছেন পাঁচজন যুদ্ধাপরাধীর কি শাস্তি আমি চাই!

রামচন্দ্র আবার বললেন, এবার আরও সহৃদয়, আরও নরম স্বরে... ‘‘দ্বিধা কোরো না, ঋচিক। এ ঘটনায় তুমিই প্রধান অভিযোগকারী, কারণ মেয়েটিকে রক্ষা করতে গিয়ে এদের হাতে তোমার প্রাণ বিপন্ন হয়েছিলো। তাই তুমি কি চাও, সেটা আমাদের জানা প্রয়োজন।’’ একটু থেমে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তুমি এদের প্রাণদণ্ড চাও?’’

আমি ধীরে ধীরে মাথা নাড়লাম। প্রাণদণ্ড কি কারও কখনোই হতে পারে? মানুষের কি মানুষকে প্রাণদণ্ড দেওয়ার অধিকার আছে? যুদ্ধের কথা আলাদা। সেখানে অস্ত্র হাতে মুখোমুখি শক্তি পরীক্ষা হয়। কিন্তু বন্দী, অসহায় মানুষকে হত্যা করা তো কাপুরুষতা। সুদূর বিন্ধ্যপাহাড়ের কোলে আমাদের আরণ্যক সমাজে প্রাণদণ্ডের কোনও বিধান নেই। অপরাধ যতই গুরুতর হোক, কঠিনতম শাস্তি সমাজ থেকে বহিস্কার।

দেখলাম, রামচন্দ্রের মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো। হনুমানের দিকে তাকালাম। তিনিও কেমন মায়াবী চোখে চেয়ে আছেন আমার দিকে।

‘‘তোমরা পাঁচজন মিলে একটি একাকিনী মেয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলে।’’ মাটিতে বসা লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বললেন রামচন্দ্র, ‘‘তোমাদের অর্ধেক বয়সী এই ছেলেটি তোমাদের বাধা দিয়েছিলো বলে তোমরা একে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলে। হনুমান সেখানে সময়মতন উপস্থিত না হলে হয়তো মেরেই ফেলতে।’’

যে লোকটা গত রাতে আমাকে মারতে এসেছিলো, সে একবার সবেগে মাথা নেড়ে উঠলো। কি যেন বলতে গিয়েও পারলো না। বোধহয় বুঝলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের মতন পরিস্থিতি আর নেই। আবার পাঁচজন মাথা নীচু করে নিলো। 

‘‘তোমরা পূর্ণবয়স্ক সবল পুরুষ। শিক্ষিত যোদ্ধা। ঋচিক সদ্যকিশোর। কিন্তু ও তোমাদের থেকে অনেক বড় বীর, অনেক বেশি সাহসী।’’ একটু থেমে রামচন্দ্র বললেন, ‘‘তোমরা যে অপরাধ করেছো, সামাজিক নিয়মে তার স্বাভাবিক শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের নিয়ম পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ণিত হয়। বিশেষত, তোমাদের বিরুদ্ধে যে প্রধান অভিযোগকারী, সে তোমাদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করছে না। তাই তোমাদের হত্যা করা হবে না। কিন্তু এই সৈন্যশিবিরে তোমাদের আর স্থান হবে না। এই মুহূর্তে তোমাদের শিবির থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে। তোমরা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র ও একদিনের উপযোগী খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সেতু পার হয়ে মূল ভূখণ্ডে ফিরে যাও।’’ থামলেন রামচন্দ্র। তাঁর স্বপ্নময় বেদনাতুর চোখদু’টি আস্তে আস্তে কঠিন হয়ে উঠলো। সে কাঠিন্য সুগ্রীবের ক্রোধ বা লক্ষ্মণের বিরক্তি নয়। হনুমানের নির্লিপ্ত গাম্ভীর্যও নয়। ত্রিভুবনের প্রভু অযোধ্যার নির্বাসিত রাজপুত্রের চোখে দেখলাম এক হিমশীতল প্রতিজ্ঞা। তাঁর কন্ঠস্বরও তারপর কেমন যেন ভয়াবহ লাগলো... ‘‘আজ যু্দ্ধান্তে যদি তোমাদের এখানে দেখা যায়, তৎক্ষণাৎ তোমাদের মুণ্ডচ্ছেদ করা হবে।’’

.................................


সেদিন যুদ্ধ শুরু হতে দেরি হলো... এবং এ পক্ষের সৈন্যসমাবেশে বিলম্বের সুযোগ নিয়ে ও পক্ষ সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো এদের উপর, ছত্রভঙ্গ করে দিলো এদের প্রাথমিক আক্রমণের ধাক্কাতেই।

সেদিন লঙ্কাবাহিনীর আক্রমণের পুরোভাগে ছিলেন রাবণপুত্র মেঘনাদ। আমি সেদিন প্রথম দেখলাম তাঁকে। আসলে তার আগের দিন অবধি যুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয়নি বিশেষ। সেদিন হচ্ছিলো, কারণ মেঘনাদের আক্রমণে বারবার পর্যুদস্ত হয়ে যাচ্ছিলো কিষ্কিন্ধ্যাবাহিণী, আর সাহায্যের প্রয়োজন হচ্ছিলো এপক্ষীয় যোদ্ধাদের।

সেইরকমই একবার যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে লঙ্কার রাজপুত্রকে দেখলাম। সোনায় মোড়া এক রথে আরোহী, মেঘবর্ণ শালপ্রাংশু পুরুষ। রাম-লক্ষণের মতন তাঁরও প্রধান অস্ত্র ধনুর্বাণ। কিন্তু তাঁর ধনুকটি দৃশ্যত আলাদা। কী উপাদানে তৈরি, আমি বুঝতে পারলাম না। আকারে রাম-লক্ষণের ধনুকের চাইতে একটু ছোট, অনেক বেশি জটিল কলকব্জা ও কারুকার্যসম্পন্ন, এবং মনে হলো নমনীয়ও বেশি। রাম-লক্ষণের ধনু কাঠের তৈরি এবং তার উপর চামড়া দিয়ে মোড়া। বড়, ভারী এবং শক্তিশালী। বহুদূর পর্যন্ত শরক্ষেপ করা যায়। ইন্দ্রজিতের ধনুক দেখে মনে হচ্ছিলো না ও দিয়ে অত দূর অবধি বাণ ছোঁড়া যায়। কিন্তু দেখলাম, নিক্ষিপ্ত বাণগুলো প্রায় অবিশ্বাস্যভাবে চার-পাঁচশো হাত দূরত্ব অবধি চলে যচ্ছে, আর প্রায় নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদ করছে। আরও দেখলাম, মেঘনাদের ধনুক একসঙ্গে প্রায় পনেরোটা বাণ সংযোজন এবং ক্ষেপণে সক্ষম। ছেলেবেলা থেকে তীরন্দাজি দেখেছি। কিন্তু ধনুক যে এমন হতে পারে, ধারণা ছিলো না।

দেখলাম, কিষ্কিন্ধ্যাবাহিণীর প্রধান যোদ্ধারা প্রায় সবাই মেঘনাদের সঙ্গে যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করতে বাধ্য হলেন। তারপর এক সময় লক্ষণের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ শুরু হলো। খানিকক্ষণ সে যুদ্ধ চলার পর লক্ষণও বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন। তখন তাঁকে সুরক্ষা দিতে রাম এলেন, এবং তাঁর সঙ্গে ইন্দ্রজিতের ভয়ঙ্কর যুদ্ধ আরম্ভ হলো।

দু’জনেই সমান দক্ষ, সমান ক্ষিপ্র। তাই সমানে সমানে যুদ্ধ হচ্ছিলো। কিন্তু তারপর যখন লক্ষণ ফিরে এসে রামের সঙ্গে যোগ দিলেন, তখন মেঘনাদ একটু বিপদে পড়ে গেলেন। রাম-লক্ষণের অবিশ্রান্ত শরধারায় তাঁর সারথি আর ঘোড়াগুলো ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো... আর ঠিক এই সময়ে লঙ্কার রাজপুত্র এক অদ্ভূত কাণ্ড করলেন।

অতি মিহি গুঁড়োর মতন কি যেন মুঠো মুঠো নিয়ে চারপাশে ছড়াতে আরম্ভ করলেন মেঘনাদ, এবং কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তাঁর রথের চারপাশে ধূলোর মেঘের মতন ঘনিয়ে এলো। চোখের নিমেষে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেলো তাঁর রথ!

তারপর সেই কুঝ্বটিকার ভিতর থেকে শুরু হলো অবিরাম ধারায় বাণবর্ষণ। কিষ্কিন্ধ্যাবাহিণী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লো। রাম-লক্ষণ দিশাহারা হয়ে গেলেন। সেই ধূলোর মেঘ তখন তাঁদের চতুর্দিকে বিদ্যুদ্বেগে ঘুরছে... আর তার ভিতর থেকে বৃষ্টির মতন তাঁদের উপর এসে পড়ছে তীক্ষ্ণ তীরের রাশি।

এইভাবে বেশিক্ষণ চললে কী হতো বলা যায় না, কারণ দেখলাম রাম, লক্ষণ, দু’জনেই এই শরধারায় প্রায় আচ্ছাদিত হয়ে এক এক করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। আমরা প্রমাদ গুণলাম! যুদ্ধ কি আজই শেষ হয়ে যাবে?

হঠাৎ একটা প্রচণ্ড গর্জনের শব্দে চারদিক কেঁপে উঠলো। চমকে তাকিয়ে দেখলাম, এক হাতে গদা আর অন্য হাতে একটা বিশাল ঢাল নিয়ে হনুমান এসে দাঁড়িয়েছেন মাটিতে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা রাম-লক্ষণের পাশে। ঢালটা আকারে আমার থেকেও বড়। বিশাল একটা ধাতুর পাত। তার পিছনে থাকলে কোনও অস্ত্রের সাধ্য নেই শরীর স্পর্শ করে। কিন্তু জিনিষটাকে এক হাতে ওভাবে সঞ্চালনা করা যে মানুষের পক্ষে সম্ভব, সেটা চাক্ষুষ না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।

ধূলোর মেঘ ঘুরছে রাম-লক্ষণের চতুর্দিকে। শয়ে শয়ে বাণ ধেয়ে আসছে তাঁদের হতচেতন শরীর লক্ষ্য করে... এবং প্রতিফলিত হয়ে যাচ্ছে হনুমানের ঢালে লেগে, কারণ হনুমানও ঘুরছেন ধূলোর মেঘের গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।

আমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে এই সব অমানুষিক কাণ্ড দেখছি! কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে ধূলোর মেঘ কেটে এলো। মেঘনাদের রথও দৃশ্যমান হলো। তাঁর শরক্ষেপণের গতিও ততক্ষণে কমে এসেছে। বুঝলাম, তাঁর তীর ফুরিয়ে এসেছে। দেখলাম, তাঁর রথ ঘূর্ণনবৃত্তটি বড় করছে... অর্থাৎ, দূরত্ব বাড়াচ্ছে হনুমানের সঙ্গে।

হনুমান আরও কিছুক্ষণ ঢাল দিয়ে মেঘনাদের বাণ প্রতিরোধ করলেন। তারপর যখন বাণক্ষেপণের গতি একেবারে কমে এলো, তখন হনুমান ঢালটা ফেলে দিয়ে গদা ঘোরাতে ঘোরাতে ছুটলেন ইন্দ্রজিতের রথের দিকে।

কিন্তু ততক্ষণে সে রথ নিরাপদ দূরত্বে চলে গেছে। মেঘনাদ বুঝতে পেরেছেন, তাঁর ক্ষেপণাস্ত্র শেষ হয়ে গেলে গদাহস্ত হনুমানের মোকাবিলা করা তাঁর পক্ষে রথের উপর থেকেও সম্ভব নয়। তাই তিনি চলে গেলেন। 

সূর্যও ততক্ষণে অস্তাচলে। যুদ্ধ শেষের সময় ঘনিয়ে আসছে। হনুমান কিছুদূর অবধি ইন্দ্রজিতের রথের পশ্চাদ্ধাবন করে ফিরে এলেন। তখনই সেদিনের মতন যুদ্ধ শেষের শিঙাধ্বনি হয়ে গেলো। আর্যাবর্তের দুই রাজপুত্র, নির্বাসিত, স্বজনহারা... শত্রুভূমির মাটিতে রক্তাক্ত, ধূলিমলিন অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁদের সহায়, ভরসা আমরা, দাক্ষিণাত্যের আরণ্যক মানুষরা, তাঁদের ঘিরে দাঁড়ালাম।

0 comments: