বিশেষ রচনাঃ মেরিন মুখার্জী
Posted in বিশেষ রচনা
বিশেষ রচনা
রোহিতের জন্য
মেরিন মুখার্জী
“When you are an untouchable and smart, you have no idea where you are going no matter how well you perform in class. You become a little mad. ... You are not likely to understand this. This is a country with several time zones at the same time. People like us are living in the middle of the 19th century. There are manual scavengers, also untouchables, who live in the eighth century. And then there are well-to-do urban elites who live in the future.”
রোহিত-কে নিয়ে লেখাগুলো পড়ে ফেলতে চাইছিলাম। দৃষ্টি ক্রমশই ঘোলাটে হয়ে আসছে, ঘোলা করে দেওয়া হচ্ছে। খুব সূক্ষ্ম ভাবে কিছু কথা হারিয়ে যেতে বসেছে ইতিমধ্যেই। অসাধারণ একটি মৃত্যু-পরবর্তী কাল্পনিক সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম; ভালোই লাগছিল, সুর কেটে গেল শেষে এসে... সেখানে মন্তব্যের জায়গায় কেউ একজন দিব্যি ওঁকে “র্যাবিড, অ্যান্টি-হিন্দু, অ্যান্টি-ন্যাশনাল কমি” বলে ফেলেছেন। রাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ওকে নিয়ে শিডিউল্ড্ কাস্ট না কি ওবিসি, এই ক্যাটিগরির মধ্যে লোফালুফি শুরু করে দিয়েছে। দলিত কি দলিত না এই নিয়েও তর্ক চলছে। কেউ কেউ একটা আপাত সঙ্গত প্রশ্ন তুলছেন – দলিত না হলে এই খুনের নামান্তর আত্মহনন কি লেজিটিমেট তকমা পেত? মানে দলিত বলেই কি রাষ্ট্রের এই নিষ্পেষণ অন্যায়? বর্ণ হিন্দুকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা যায় বুঝি? শুনতে ভালোই লাগছে। এবং উত্তর অবশ্যই না হতে পারে না।
কিন্তু আমি তো উত্তর দিচ্ছি না। আমি বোধহয় ঠিক মতো ভাবতেও পারছি না। আমার পিঠে হঠাৎ দুর্মুশের মতো একটা বাড়ি পড়েছে। দুই দশক আগে শোনা একটা ইতিহাসের অভিজ্ঞতা-লব্ধ বাক্য আমার বারবার মনে পড়ছে। পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরবাড়ির দান করে দেওয়া একটা বাড়ির প্রায়ান্ধকার ঘরে আমাদের দু-তিনজনকে মাস্টারমশাই অনেক বড়ো একটা আলোচনার মধ্যে বলেছিলেন “রাষ্ট্র (তোমাদের) দেগে দেবে; দেগে দিয়ে লেজিটিমাইজ করবে।” রাষ্ট্র দেগে দেয় – শব্দগুলো চেনা – উগ্রপন্থী, শ্রমিক, কমিউনিস্ট, মাইনরিটি, মেয়েমানুষ, লেসবিয়ান, অস্পৃশ্য, ছোটলোক, কুষ্ঠ বা এড্স্ আক্রান্ত, ডাইনি – যখন যেটা কাজে লাগে; লেজিটিমাইজ করার কাজে।
তাই বলছিলাম কি, নিজেদের একটু ওই পাল্টা দেগে নেওয়া দরকার। আমি দলিত। আমাকে মারা তাই একটু বেশী অন্যায়। ‘মোর ইক্যুয়াল দ্যান আদার্স’ যদি হয়, তাহলে ‘মোর আন-ইক্যুয়াল দ্যান আদার্স’ নামক আন্ডারপ্রিভিলেজ্ড্ কেন হবে না? তোমার প্রয়োজনে যদি তুমি টেক্সট-এর মিমিক্রি করো, আমিও তবে তাই করবো; ওটাই আমার কন্টেক্সট, এন্ট্রি পয়েন্ট।
একটা জানা গল্প আবার বলি। সাব-অল্টার্ন স্টাডিজ থেকে ধার নেওয়া – ১৯২৬ সালে, কলকাতায়, মাত্র ১৬-১৭ বছর বয়সে ভুবনেশ্বরী ভাদুড়ি আত্মহত্যা করেন। প্রায় দেড় দশক এই আত্মহত্যার কোনও কিনারা হয়নি। এটুকু জানা ছিল, ভুবনেশ্বরী কোনো গুপ্ত বিপ্লবী সমিতির সদস্যা। আর রটানো হয়েছিল (কে রটিয়েছিল? ব্রিটিশ পুলিশ না আত্মীয় পরিজন? জানি না; জরুরিও নয়) এ এক অবৈধ প্রেমের পরিণতি। বিবাহ বহির্ভূত গর্ভধারণের গল্প; এককথায় চরিত্রহনন। [“রাষ্ট্র (তোমাদের) দেগে দেবে”; এই রাষ্ট্র বাবা, মা, আত্মীয়-পরিজন, পুলিশ, প্রশাসন, রাজনীতি যে কেউ হতে পারে] অনেক পরে জানা যায়, ভুবনেশ্বরীকে একটি সশস্ত্র বিপ্লবীদল একটি রাজনৈতিক খুনের দায়িত্ব দেয়। মানুষ খুন করার সংস্কার আর ঔচিত্যের মানসিক টানাপোড়েনের ফলে ওই আত্মহত্যা।
কিন্তু রহস্য একটা থেকেই গেল। সন্দেহটা হয়েছিল ময়নাতদন্তের একটি সূত্র ধরে। মেডিক্যাল রিপোর্টে ছিল আত্মহত্যার সময় ভুবনেশ্বরী রজঃস্বলা ছিলেন। বিবাহ বহির্ভূত গর্ভধারণের গল্প এখানেই ধূলিসাৎ।
প্রশ্নটা ছিল “কুড দ্য স্যাভেজ [sa(va)ge] স্পিক?” আমরা শিখেছিলাম কিভাবে ডমিনান্ট ডিস্কোর্স দিয়েই (এক্ষেত্রে মেডিক্যাল রিপোর্ট, যা কি না পাশ্চাত্য বিজ্ঞান) ডমিনান্ট ডিস্কোর্সকে মারতে হয় (এক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রের কুৎসা)। মারছে কে? একজন মার্জিন অফ মার্জিন (একে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক বিপ্লবী সংগঠন, তায় আবার তার এক মহিলা সদস্যা) মৃত ভুবনেশ্বরী কথা বললেন আমাদের সাথে (ভবিষ্যতের কোনও জীবনীকারের সাথে) এমন ভাষায় যা কি না রাষ্ট্রও নেগেট করতে দুবার ভাববে। কোথাও পড়েছিলাম, so much so that she rewrote the social text (read: prestige) of Sati suicide in an interventionist way. She waited for the onset of her menstruation. In the way she not only denied but also displaced, through the physiological inscription of her body, its imprisonment within legitimate passion of a single male.
রোহিত আত্মহত্যা করে আম্বেদকার স্টুডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের পতাকা জড়িয়ে। আচ্ছা, ও কি কিছু বলতে চেয়েছিল? ওর দুর্জয় দারিদ্র, কঠিন পিতৃহীন শৈশব, আজীবন তাড়া করে আসা সমস্ত ভয়, আশঙ্কা, রাষ্ট্রের বিপুল বঞ্চনা, এবং শেষের এই দিনগুলোর বন্ধুহীন একাকীত্ব, রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ করতে করতে খাদের ধারে বাস...
রোহিতের একজন রায়ান দরকার। বোর্হেসের গল্পের রায়ান। রোহিতের জন্য নয়, আমাদের জন্য।
ফার্গাস কিল্প্যাট্রিকের নাতি রায়ান। হিরো ফার্গাস কিল্প্যাট্রিক। আইরিশ রিপাব্লিক্যান আর্মির ফার্গাস কিল্প্যাট্রিক। ১৮২৪-এ বিপ্লবের প্রাক্কালে বুর্জোয়া গুলিতে মৃত ফার্গাস কিল্প্যাট্রিক। ঘটনার একশো বছর পরে জীবনীকার রায়ান খুঁজেছিল দাদুর হত্যাকারীকে। আর অতিকষ্টে খুঁজে পেয়েছিল আশ্চর্য সব (সাজানো) ঘটনার চিহ্ন। খুঁজে পেয়েছিল সেই দলিল যা অনুসরণ করেছিল শুধু ইতিহাস নয়, একেবারে জাতশত্রু ইংরেজ নাট্যকার শেক্সপিয়ারের নাটককে। কিভাবে দাদুর মৃত্যুর চিত্রনাট্য অনুসরণ করেছিল জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুকে। এতবড় সমাপতনে আশ্চর্য হতে হতে হাতে পেয়েছিল সেই মৃত্যুর পরোয়ানা, যাতে নিজের মৃত্যুদণ্ডে সই করছেন কিল্প্যাট্রিক নিজেই। বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করতে কিভাবে বিশ্বাসঘাতক কিল্প্যাট্রিক এক বিশাল নাটকে অভিনয় করতে করতে থিয়েটারে ঢুকে অপেক্ষা করেছিলেন অজানা অন্ধকার থেকে ছুটে আসা বহু আকাঙ্ক্ষিত একটি প্রি-ডিটারমাইন্ড্ বুলেটের। কিভাবে এই সাজানো ঘটনার পরম্পরা ধার করা হয়েছিল শুধু জুলিয়াস সিজার নয়, ম্যাকবেথ থেকেও। Traces and pieces of truth। কিল্প্যাট্রিকের প্রিয় কমরেড নোলানের লেখা চিত্রনাট্য ছিল এইসব অসম্পূর্ণ, আলো-আঁধারি চিহ্নে ভরা... ভবিষ্যতের রায়ানের জন্য। খুঁজে নেবার জন্য। বাদাবনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা হিরো ফার্গাস কিল্প্যাট্রিক না কি ট্রেটর ফার্গাস কিল্প্যাট্রিক! ভবিষ্যতের বিপ্লবকে আজকের বারুদ দিতে কিভাবে নোলান তৈরী করেছিল এই সুবিশাল নাট্যমঞ্চ; বিপ্লবকে ধ্বংস করার প্রতিনায়ক কিল্প্যাট্রিক থেকে নায়ক কিল্প্যাট্রিক।
কে লিখবে আমাদের এই থিম অফ আ ট্রেটর অ্যান্ড আ হিরো?
0 comments: