0

ধারাবাহিক - অসিত কর্মকার

Posted in


অন্তিম পর্ব 
নির্বাচনের আর মাত্র কটা দিন বাকি। এতদিন ধরে বহু চেষ্টা করেও এখনও পর্যন্ত একটা মিটিংএর আয়োজন করতে পারেনি হোপনা সোরেন। মিটিং ডাকলে যে দুলকিগাঁয়ের মানুষগুলোর সাড়া পাবে সেই ভরসা সে হারিয়েছে। নিজের গুটিকয় সাঙ্গপাঙ্গ ছাড়া মিটিংএ যে আর লোক হবে না তা সে ভাল করেই বুঝেছে। তাতে করে বড় নেতাদের কাছে তার মুখটাই পুড়বে। বিরোধী পার্টির তো চেষ্টা করার প্রশ্নই আসে না। তবুও অন্য নানাভাবে প্রচারের চেষ্টার কসুর করে না কোনও পক্ষই। হোপনা সোরেনের দল হাওয়ায় কথা ভাসায়, এতবছরেও ব্রিজ না হওয়ার হাস্যকর যুক্তি দেখায়। ব্রিজ হলে ওই দিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে পুলিশ চোর, ডাকাত, খুনিদের ধরতে সরাসরি দুলকিগাঁয়ে ঢুকে যেতে পারবে। দোষীরা নিজেদের বাঁচানোর সময়টুকু পর্যন্ত পাবে না। এখন সাঁকোর ওপারে পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ায়। তারপর পায়ে হেঁটে সাঁকো পেরিয়ে পুলিশ গাঁয়ে ঢোকে। ওপারে গাড়ি দাঁড় করানো মাত্র পুলিশ আসার খবরটা মুহূর্তে গাঁময় রাষ্ট্র হয়ে যায়, পুলিশ, পুলিশ! সাঁকো পেরিয়ে পুলিশ দুলকিগাঁয়ে পা রাখতে না রাখতে দোষীরা উত্তর খাড়ি সাঁতরে পার হয়ে যাকে বলে পগার পার! উত্তর খাড়ির ওপারে জনমানবশূণ্য ধূ ধূ চর। যেদিকে খুশি পালিয়ে যাওযার সহজ ব্যবস্থা। বিরোধীরা বিদ্রুপ করে কথা ভাসায়, ক্ষমতাসীন সরকার কি তাহলে দোষীদের এভাবে পিঠ বাঁচানোটাকে সমর্থন করছে। এ কথা থেকেই তো বোঝা যাচ্ছে দলটার আদর্শ বলে কিছু নেই। ন্যায় নীতিবোধ একেবারে জলাঞ্জলি দিয়েছে। নিজেদের অক্ষমতা ঢাকতে এই নির্লজ্জ অজুহাত, ভাবা যায় না! দোষীরা ধরা পড়ুক, শাস্তি পাক। এটাই তো সুস্থ সমাজ গড়ার জন্য কাম্য। তাছাড়া চোর, ডাকাত, খুনি কোথায় না নেই? আঙুল তুলে শুধু দুলকিগাঁকে এই অপবাদ দেওয়া কেন? হোপনা সোরেনের দল ফের হাওয়ায় কথা ভাসায়, বিশেষ উপলক্ষে এক আধ বেলার জন্য গরীবগুর্বো মানুষগুলোকে একটু ভালমন্দ খাওয়ানোর ব্যবস্থা আমাদের পার্টি বরাবরই করে থাকে। এবারও ভোটের আগের রাতে সেই ব্যবস্থা থাকছে। তবে এবার আর কালো নয়, চীনা সাদা শোর, সঙ্গে বিলাইতি নেশা। বিরোধীরা হাতে যেন চাঁদ পায়। তারাও কথা ভাসায়, খাইয়ে ভুলিয়ে জনগনকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে রাখার মতো সস্তার ঘৃণ্য রাজনীতি আমরা করি না। দুদিন না যেতেই সরকার পক্ষ ফের কথা ভাসায়, ব্রিজ তৈরির মালমেটেরিয়ালস আজ কালের মধ্যেই খাড়ির পাড়ে পড়ছেই। বিরোধীদের তাতে স্পষ্ট জবাব, দুলকিগাঁয়ের লোকেরা চোখে ঠুলি পরে বসে নেই, পড়লে ঠিকই দেখতে পাবে। আর ওসব পড়া মানেই ব্রিজ হয়ে যাওয়া নয়! আরও কত যে কথা ভাসে। কথার উপর কথা চাপে। কথার চাপানউতোর চলতেই থাকে। কথার জটে এখন দমবন্ধ দুলকিগাঁ।
ভোট আসছে, ভোট। দুলকিগাঁয়েও তার ছোঁয়া। গয়ান, ঝগড়ুরা শুধু চুপ। ওরা ওদের লক্ষ্যে অবিচল। ওরা বুঝেছে, হাওয়ায় কথা ভাসলেও সেখানে কিছু গড়া যায় না। পোড়া তুষের কালো আস্তরের নীচের গনগনে আগুনের মতো জমজমাট দুলকিগাঁয়ে ভোট। সে আগুনের হল্কায় পাতার আন্দোলন, সবুজের গন্ধ!
সমাপ্ত

0 comments: