গল্প - বোধিসত্ত্ব চ্যাটার্জী
Posted in গল্প
সোনালী বুদবুদগুলো, গ্লাসের ভেতর, তরল পদার্থটির বুক চিরে হাউইয়ে’র মত ওপরে উঠে কানায় জমে থাকা ফেনায় অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
মনীন্দ্র, দৃশ্যটি দেখতে দেখতে হাতে ধরে থাকা গ্লাসটায় চুমুক দিয়ে, সামনে সুবর্ণর রেখে যাওয়া গ্লাসের দিকে তাকালো। ওর গ্লাসের পানীয় শান্ত, স্থির, বুদবুদের চিহ্ন মাত্র নেই, কানায় জমে থাকা ফেনাও মৃতপ্রায়।
সুবর্ণ তখন কিছুটা দূরে নদীর ধারে চুপ করে দাঁড়িয়ে, নৌকো থেকে জেলেদের জাল ফেলা
দেখছে।
মনীন্দ্র এবার বাকি দুই বন্ধু, অরিন্দম আর পিনাকির দিকে মুখ ঘোরালো। গাছের তলায় পাতা, লম্বা শতরঞ্জির অন্যদিকে মুখোমুখি বসে, বিয়ার খেতে খেতে ওরা আড্ডায় মশগুল। দুজনের হাতেই, আঙ্গুলের ফাঁকে দামী সিগারেট পুড়ে ছাই হচ্ছে।
এক চুমু্কে, বাকী তরলটুকু গলার নীচে ঠেলে দিয়ে আধশোয়া মনীন্দ্র, গ্লাসটাকে ঠক করে নামিয়ে রেখে, টানটান হয়ে বসে আবার সুবর্ণর দিকে চোখ ফেরাল। ও দেখল নদীর ধারে, নীচু হয়ে সুবর্ণ কিছু খুঁজছে।
—কি রে সুবু… কিছু খুঁজছিস?
মনীন্দ্রর ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে সুবর্ণ, মাটি থেকে কিছু একটা তুলে মনীন্দ্রকে দেখিয়ে হাসল। তার হাতে, চ্যাপ্টা কালো একটা পাথরের টুকরো! পাথরটাকে তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুলির মাঝখানে ভালভাবে চেপে ধরে নদীর দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই, মনীন্দ্র, সুবর্ণর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে চেঁচিয়ে উঠল,
—সুবু... ব্যাং পাথর?
সুবর্ণ আবার মনীন্দ্রর দিকে তাকিয়ে হেসে পাথরটাকে কাত করে সর্বশক্তি দিয়ে জলের ওপর ছুঁড়ে দিল! উত্তেজনার আতিশয্যে মনীন্দ্র নিজের জায়গায় উঠে দাঁড়াল। কিন্তু সুবর্ণ সামনে থাকায় সে ব্যাং পাথরের লাফগুলো দেখতে পেল না।
—কী রে... ক’বার লাফালো তোর ব্যাং?
সুবর্ণ কোন উত্তর দিল না। হাল্কা চালে ফিরে এসে বসে, নিজের গ্লাসটা টেনে নিয়ে পানীয়ে লম্বা চুমুক দিয়ে, পা দুটো নদীর দিকে টান করে, দুই কনুইতে ভর দিয়ে, বয়ে যাওয়া জলের স্রোতের দিকে তাকিয়ে রইল। মনীন্দ্রর মনে হল সুবর্ণ যেন খেলাটা খেলে একটু ক্লান্ত! সে বলল,
—কি রে, বললি না?
সুবর্ণ, মনীন্দ্রর দিকে না তাকিয়ে পালটা প্রশ্ন করল,
—কি বললাম না রে?
—ওই যে,তোর ব্যাং ক’বার লাফাল?
সুবর্ণ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একটু ম্লান হেসে বলল,
—চারের লাফটা দিতে গিয়েই ভরাডুবি।"
মনীন্দ্র অবাক, বলিস কি! ব্যাং লাফানোয় তুই আমাদের চ্যাম্পিয়ন ছিলি। অবশ্য পড়াশোনাতেও ছিলি! তুই ছিলি আমাদের মুশকিল আসান! এখনো বিপদে-আপদে তোর কথা মনে পড়ে!
সুবর্ণ আস্তে করে বলে, মনে পড়ে! ...সে অনেক বছর আগেকার কথা রে, মণি! প্রায়... রূপকথা হয়ে গেছে! বয়স তো কম হল না।
মনীন্দ্র হেসে ওঠে, তাই বুঝি? তা কত বয়স হল?
—ভুলে গেলি! আজ চল্লিশে পা দিলাম!
—হুম্, বুড়ো হয়ে গেছিস তুই!
কথাটা বলে মনীন্দ্র, অরিন্দমদের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলল, অরি, সুবু কি বলছে শোন!
—কি... কি বলছে রে... সুবু?
অরিন্দমের কথায় কৌতুক মিশ্রিত বিস্ময়ের সুর!
—বলছে, অনেক বয়স হয়েছে ওর... আজ চল্লিশে পা দিয়ে নাকি...ও বুড়ো হয়ে গেছে!
অরিন্দম আর পিনাকী জোরে হেসে উঠলো।
—তাই তো... তাহলে কী হবে... মণি!
পিনাকী হাসতে হাসতেই বলল,
—একটাই কাজ করা যেতে পারে...। কেকও কাটলাম না আর হ্যাপী বার্থডেও বললাম না, সুবুর বয়সটাও বাড়ল না, ওই উনচল্লিশেই আটকে থাকল!
অরিন্দম বলল, ঠিক বলেছিস! থাক, তাহলে কেক কাটা থাক, হ্যাপি বার্থডেও থাক।
মনীন্দ্র বেশ জোর দিয়ে বলল, ‘না... কেক কাটাও হবে, হ্যাপি বার্থডেও হবে। আজ সুবুর জন্মদিন বলে কথা!
সুবর্ণ এতক্ষণ চুপ করে ছিল। এবার সে বলে উঠল, ‘কেক! আবার কেক কেন?
অরিন্দম অবাক হয়ে বলল, ‘কি বলছিস সুবু? এমন আদরের বন্ধুর জন্মদিনে আমরা আনন্দ করব না, ভালবাসা উজাড় করে দেবো না?
সুবর্ণ একটু যেন অপ্রস্তুত, ক্ষীণ কন্ঠে বলল, ‘না, আমি, তা... বলিনি। শুধু বলছি, আজকের সমস্ত খরচা আমি দেবো বলেছিলাম।
পিনাকী হাসলো, ‘আরে ঠিক আছে? পান-ভোজনের ব্যবস্থা তো তুই করেইছিস। ধরে নে, কেক কাটার আনন্দটা... আমরা তোকে উপহার দিলাম!’
কথার ফাঁকে মনীন্দ্র কখন জানি একটি প্লেটের ওপর সুদৃশ্য কেকটা নিয়ে চলে এসেছে! দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ দামী! মনীন্দ্র পিনাকীকে বলল, সুবুকে ছুরিটা দে।
প্লেটের একধার থেকে প্লাস্টিকের ছুরিটা তুলে পিনাকী, সুবর্ণর হাতে দিল! সুবর্ণ ছুরিটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বলল, বাঃ! বেশ সুন্দর তো! তবে কেক ছাড়া অন্য কিছু কাটা যাবে না।
—যায় রে যায়... মাখন কাটা যায়! কেন, তুই কি অন্য কিছু কাটবার কথা ভাবছিস?
বলতে বলতে মনীন্দ্র কেক শুদ্ধু প্লেটটা শতরঞ্জির মাঝামাঝি জায়গায় নামিয়ে রাখে।
—হ্যাঁ... ভাবছিলাম... আমার জীবনের, নিষ্কর্মা আঠারোটা বছর... যদি কেটে বাদ দিতে পারতাম…!
অরিন্দম বলল, ‘নাঃ, সুবুটা সত্যিই বুড়ো হয়ে গেল! কেমন দার্শনিকের মত কথা বলছে, দেখ!’
যাকে উদ্দেশ্য করে বলা, পিনাকী বলল, তা... এই রকম নদীর ধার, নীল আকাশ, ফুরফুরে হাওয়া তার ওপর গাছের শীতল ছায়ায় বসে সুধা পান; অনেকেই গৌতম বুদ্ধ হয়ে যায় রে, বুঝলি।
অরিন্দম হেসে উঠতেই মনীন্দ্র ঝাঁঝিয়ে ওঠৈ, ‘এই সব আজে বাজে কথা না বলে, তোরা দয়া করে এসে বোস তো! কেকটা কাটা হোক! সুবু, আয়।’
সুবর্ণ প্লেটটার সামনে বসে,বাকি তিন বন্ধু উল্টোদিকে অর্ধচন্দ্রাকারে বসে পড়ে। মনীন্দ্র বলে, ‘নে সুবু, এবার কাট! এরপর খাওয়া-দাওয়াও তো করতে হবে।’
সুবর্ণ একটু মুচকি হেসে বলে, ‘মোমবাতি জ্বালানো হবে না?’
পিনাকীও হেসে জবাব দেয়, ‘শোনো... ছেলের বায়না শোনো। মোমবাতি জ্বলবে... এত হাওয়ায়…!’
সুবর্ণ প্রায় ফিসফিস করে বলে, ‘যুগের হাওয়া…!’
পিনাকী বলে, ‘কিছু বললি?’
—নাঃ... ঠিকই বলেছিস, এই হাওয়ায়... নিভে যাবে।
মনীন্দ্র অধৈর্য হয়ে ওঠে, ‘তুই কাট তো! কাট, কাট…!’
সুবর্ণ, কেকের ওপর ছুরি বসাতেই তিন বন্ধু হাততালি দিয়ে গেয়ে উঠলো, ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ... হ্যাপি বার্থডে টু... সুবু... হ্যাপি বার্থডে টু ইউ…’
সুবর্ণ কেক থেকে একটা টুকরো কেটে নিয়ে, প্রথমে মনীন্দ্র তারপর অরিন্দম আর পিনাকীকে খাওয়ায়। টুকরোর শেষটা পিনাকী সুবর্ণর হাত থেকে নিয়ে ওকে খাইয়ে দেয়। সবাই আরও একবার হাততালি দিয়ে ওঠে।
অরিন্দম বলে, ‘মণি, এবার খাবার-দাবারগুলো বার করি! এই বেলা খেয়ে নিয়ে, বিকেলের দিকে ফ্লাস্কের কফি আর কেক, কি বলিস?
পিনাকী বলে ওঠে, ‘ব্যাপক, একেবারে জমে যাবে! চ, আমরা খাবারগুলো বার করে সাজাই। তার আগে একটু হাল্কা হতে হবে বুঝলি!’
অরিন্দম বলে, ‘বীয়ারের ওই এক মুশকিল। চল, আমিও যাব!’
ওরা কিছুটা দূরে ঝোপের দিকে এগিয়ে যায়। সুবর্ণ আর মনীন্দ্র বসে থাকে চুপ করে। কিছুক্ষণ পর মনীন্দ্র খুব নরম স্বরে বলে, ‘এই যে তুই... এতগুলো খরচা করলি... অসুবিধে হয় নি?’
—অসুবিধে... কী যে বলিস! ...আমার টিউশানি আছে না!
—টিউশানির টাকায় চলে যায়... তোর…?
—চলে না...! তবে পেনশনের টাকা থেকে বাবা কিছু দেয়, ...দাদাও কিছুটা দেয়... তার থেকেই...! ও... কিছু না! ঠিক আছে!
—তুই... একটা কিছু... করলে পারতি!
—কিছু! কী কিছু... বল?
মনীন্দ্র জবাব দেয় না। সুবর্ণ নিজেই জবাব দেয়, ‘কিছু বলতে... যেমন...মাস্টারি... সেলসম্যান... কেরানী... ইত্যাদি... ইত্যাদি, তাই তো? পারতাম... কিন্তু এত কষ্ট... এত খরচা... কত স্বপ্ন... তার কি হত? ইচ্ছে, স্বপ্ন, মেধা সবগুলোর গলা টিপে মেরে...! ...তার চাইতে নিজেকে মারা অনেক সহজ!
মনীন্দ্র অপ্রস্তুত, ‘না,মানে... একটা ব্যাবসা-ট্যাবসা…’
—নাঃ... হত না! তোর কি মনে হয়, আমি... মানুষ ঠকাতে পারি?
মনীন্দ্র চুপ করে থাকে। এর মধ্যে পিনাকী আর অরিন্দমকে ফিরে আসতে দেখা যায়। সুবর্ণ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
‘চল মণি, জেলেদের মাছ ধরা দেখি, আয়…!’
দুজনেই উঠে, নদীর ধারে গিয়ে দাঁড়ায়়। নদীতে জেলেরা তখন জাল তুলতে ব্যস্ত। তাদের প্রতিটা টানের সাথে জালটায় যেন রূপোলী বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে।
নদীর জলও রোদে ঝলমলে করছে আয়নার মত। নদীর দিক থেকে আসা দমকা বাতাসে ওদের মাথার চুল এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে। এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে, গাছের ডালপালা নড়ার ঝমঝম শব্দ... এ যেন এক আশ্চর্য সিম্ফনি!
মনীন্দ্রর মনে হয় সে এক অপার্থিব জগতে এসে পড়েছে! ঘোর লাগা গলায় সে বলে ওঠে, ‘বাঃ...অপূর্ব! কী সুন্দর…!’
তারপর জোরে নিঃশ্বাস টেনে আবার সেই ভাবেই বলে, ‘আ...হ, এই জন্যই বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে রে... সুবু...! দেখ, জালে মাছগুলো, মনে হচ্ছে যেন রূপো... আর নদীটা... আয়না! ...আয়না নদী!’
সুবর্ণ, মনে হয় আত্মস্থ, তার বলা কথাগুলো যেন বহু দূর থেকে ভেসে আসে, ‘রূপো...তাই না? ঠিকই বলেছিস... রূপোর বদলে... রূপো!’
তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আর... সোনার বদলে... সোনা…!’
মণি যেন ধাঁধাঁয় পড়ে যায়, ‘মানে?’
সুবর্ণ খুব আস্তে আস্তে কেটে কেটে বলে, ‘জানিস মণি, জীবনের প্রতিটা সৌধ... তৈরী হয়... অযাচিত মৃত্যুর পটভূমিতে…!’
মনীন্দ্র না বুঝে প্রশ্ন করে, ‘তাই?’
—হ্যাঁ... একটি মৃত্যুর বদলে, অগুনতি... জীবন! বল তো মণি, কে মহান... মৃত্যু... না জীবন?
—হুঁ…! আজ তোর জন্মদিন! আর তুই, এই সব মৃত্যু-টৃত্যুর কথা বলে চলেছিস!
—দুটো একে অপরের সাথে, যমজ ভাইয়ের মত জড়াজড়ি করে আছে যে! আচ্ছা থাক... তুই আমার একটা কাজ করে দিবি... ভাই মণি!
সুবর্ণর গলার এই স্বর, এইরকম আকুতি, মনীন্দ্রর কাছে একেবারে অপ্রত্যাশিত! তাই অবাক হয়ে সে বলে, ‘হ্যাঁ... বল না! সুবু... কী করতে হবে বল!’
সুবর্ণ এবার তার বুক পকেট থেকে একটা সাদা, ছোট খাম বার করে মনীন্দ্রর হাতে দিয়ে, আবার প্রায় মিনতি ভরা গলায় বলে, ‘মণি, এই খামটা তুই... স্বাতী কে দিয়ে দিস!’
মনীন্দ্র একবার খামটা দেখে কিছুটা ভুরু কুঁচকে সুবর্ণকে বলে, ‘তুই নিজে দিলে বেশী ভালো হত না?’
—আমি... নাঃ, তুই দিয়ে দিস!
—ঠিক আছে! ...মেয়েটা কিন্তু আজও তোর অপেক্ষা করে আছে!
—সেটাই তো আমার সব চাইতে বড়ো সমস্যা!
—সমস্যা... কিসের সমস্যা?
সুবর্ণ একবার মনীন্দ্রকে দেখে নিয়ে, প্রায় স্বগতোক্তির মত করে বলে, ‘ও এমন একজনের অপেক্ষায় আছে... যার কোন অস্তিত্বই নেই!
—অস্তিত্ব নেই মানে? আমার সামনে দাঁড়িয়ে... এই কথাটা তুই বললি?
—আর যদি তোর সামনে না থাকতাম?
—তুই আজ একটা খেলায় মেতেছিস, বুঝতে পারছি!
সুবর্ণ হাসে, ‘তা... বলতে পারিস! তবে আজ এই মুহূর্তে, আমিই পক্ষ আবার আমিই প্রতিপক্ষ... বুঝলি…?
মনীন্দ্র মাথা নাড়িয়ে বোঝায় সে বোঝেনি। সুবর্ণ হাসে, ‘তোকে বুঝতে হবে না। তুই চিঠিটা দিয়ে দিস…
সুবর্ণ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, এরমধ্যে পিনাকী ডাক দেয়, ‘খাবার রেডি… তোরা চলে আয়…!’
মনীন্দ্র ইশারা করে জানান দেয় তারা আসছে। তারপর খামটা পকেটে ঢুকিয়ে, ঘড়ি দেখে বলে, ‘চল রে সুবু, তিনটে বাজে!’
সুবর্ণ বলে, ‘মণি, এক মিনিট... একটু দাঁড়া…!’
মনীন্দ্র দাঁড়িয়ে জিঞ্জাসু চোখে সুবর্ণকে দেখে।
—তুই তখন কি যেন বলছিলি না... ওই যে... নদীর জল আয়নার মত…?
—বলছিলাম...? কেন কী হয়েছে তাতে?
—না, না... কিছু হয় নি! আমি বলছিলাম কি, একবার কাছে গিয়ে, ওই আয়নায় মুখটা দেখা যায় না? —মানে, চল না, খাওয়া হয়ে গেলে... এই নদীতে একটু ঘুরে আসি!
—সে না হয় হল, যাবি কি করে? পায়ে হেঁটে?
—কেন, ওই তো বেশ নৌকো আছে!
মনীন্দ্র একটু চিন্তিত স্বরে বলে, ‘ওরা কি ঘোরাতে রাজি হবে?’
—ঠিক আছে কিছু টাকা-পয়সা দেওয়া যাবে! আর ওরা যদি ঘোরাতে রাজি না হয়, আমরা তো নৌকো চালাতে জানি!
মনীন্দ্র একটু ভেবে নিয়ে বলে, ‘ঠিক আছে! আমরা খাওয়া দাওয়াটা সেরে নিই! ততক্ষণে ওরা ফিরে আসবে! ওই দেখ, ওদের ঝাঁকাগুলো কিনারে রাখা আছে, তখন বলে দেখা যাবে!
ওরা দুজন ফিরে গিয়ে দেখে, অরিন্দম আর পিনাকী সব গুছিয়ে একদম রেডি করে রেখেছে। পিনাকী বলে, ‘তোরা হাত-মুখ ধুয়ে আয়! খিদে পেয়ে গেছে!’
মনীন্দ্র আর সুবর্ণ একে অন্যের হাত ধুইয়ে দিয়ে এসে বসে পড়ে। অরিন্দম সবার পাতে খাবার বেড়ে দেয়। সবার আগে দেয় সুবর্ণকে। সুবর্ণ আপত্তি করে, ‘তোরা আমাকে একেবারে খোকা বানিয়ে তবে ছাড়বি!’
—ঠিক বলেছিস! আজ তুই হলি আমাদের বার্থডে বয়! তোর অনারেই তো এত সব আয়োজন!
মনীন্দ্র তড়কার বাটিতে পরোটার টুকরোটা ডুবিয়ে বলে। অরিন্দম বলে ওঠে, ‘ঠিক বলেছিস মণি, সুবু আজ আমাদের কাছে ডবল বি! আজ সমস্ত ব্যাপারে, ফার্স্ট প্রেফারেন্স ওর! ও যা চাইবে তাই হবে!’
এর মধ্যে পিনাকী বলে ওঠে, ‘আহা...আহা! কষা মাংসটা যা করেছে না, ব্যাপক! প্রথমে ঠান্ডা বীয়ার তারপর পরোটার সাথে গরম গরম তড়কা আর কষা মাংস, আহা!’
মনীন্দ্র বলে, ‘শোন রে... খাওয়া দাওয়া করে, আমরা একটু নৌকা নিয়ে নদীতে ঘুরব, বুঝলি! সুবুর ইচ্ছে হয়েছে!’
পিনাকী, খাবার চিবোতে চিবোতে বলে, ‘তা...সুবু বাবুর যখন ইচ্ছে হয়েছে, তখন সেটা রাখতে হবে বইকি! খাওয়া হয়ে যাওয়ার পর আমি আর অরিন্দম ফিরে গিয়ে, গাড়িতে করে নৌকো নিয়ে আসবো!’
সবাই হেসে ওঠে! সুবর্ণ বলে, ‘কেউ যাবে না তোর সাথে! তুই একা গিয়ে মাথায় করে নিয়ে আসবি!’
অরিন্দম জিজ্ঞাসা করে, ‘ভালো কথা, নৌকো আসবে কোথা থেকে?’
মনীন্দ্র বলে, ‘ওই… দেখছিস... জেলেরা মাছ ধরছে! ওরা ফিরে এইখানেই আসবে। তখন ওদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করতে হবে!’
পিনাকী বলে, ‘ওরা রাজী হবে?’
—দেখা যাক, কথা বলে দেখা যেতেই পারে! ওরা ঘোরাতে রাজী না হলে, আমরা নিজেরাই নৌকো নিয়ে ঘুরে আসব, কি বল পিনাকী?
হাড় চুষতে চুষতে পিনাকি জবাব দেয়, ‘হ্যাঁ,হ্যাঁ... নো প্রবলেম! আমি আর অরিন্দম... যথেষ্ট!’
সুবর্ণর খাওয়া শেষ। সে তার শালপাতার থালায় প্লাস্টিকের বাটিগুলো মুড়িয়ে নিয়ে বলে, ‘আজ, আমি তোদের নৌকো বেয়ে ঘুরিয়ে আনব!’
—সে না হয় ঘোরালে, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ময়দান ছেড়ে দিলে আমরা যে অনাথ হয়ে যাব গুরু!
পিনাকীর কথায় সুবর্ণ খুব জোরে হেসে ওঠে! বলে, ‘এক সময়কার মাস্টার অফ অল ট্রেড্স এখন হেরো কার্তিক, কি বলিস!’
তিন জনের কেউ কিছু বলে না। ওরা খেতে থাকে। সুবর্ণ উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘এই,তোরা শুনে রাখ, সব... শেষ করতে হবে কিন্তু!’
কথাটা বলে সুবর্ণ থালা-বাটি নিয়ে হাসতে হাসতে চলে যায়! ওর হাত মুখ ধুয়ে ফিরে আসতে আসতে বাকি তিন জনের খাওয়াও শেষ হয়ে যাওয়ায় তিন জনই নিজেদের থালা-বাটি নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই সুবর্ণ বলে উঠে,
‘চল, তোদের হাতে জল ঢেলে দিই!’
—থাক না, তুই বোস! আমরা এগুলো ফেলে, হাত মুখ ধুয়ে আসছি!
সুবর্ণ মনীন্দ্রর কথা শোনে না। ওদের সাথে জলের বোতল হাতে গিয়ে, প্রত্যেকের হাতে জল ঢেলে দেয় আর ওরাও হাত মুখ ধুয়ে, রুমাল দিয়ে হাত-মুখ মুছতে মুছতে নিজেদের জায়গায় ফিরে এসে বসে। অরিন্দম মুখটা ভালো করে মুছে নিয়ে রুমালটায় একটা ঝাড়া দিয়ে বলে, ‘শুনেছি বিবেকানন্দ নাকি এই ভাবেই দরিদ্র নারায়ণকে খাইয়ে হাত-মুখ ধুইয়ে দিয়েছিলেন!’
সুবর্ণ জোরে হেসে নিয়ে বলে, ‘আমার বিবেকানন্দ হওয়ার কোন শখ কোনও দিন ছিল না, আজও নেই!’
পিনাকি হেসে বলে, ‘সে... তুই না হয় বিবেকানন্দ নাই হলি, কিন্তু আমরা আগে দরিদ্র ছিলাম, আজ থেকে নারায়ণ হয়ে গেলাম! কি রে,অরিন্দম!’
—তা, যা বলেছিস! মাইরি, শালা... নারায়ণ শীলা হয়ে যেতে পারলে, আরও ভালো হত!
পিনাকী অবাক হয়ে বলে, ‘কেন রে, নারায়ণই তো ভালো আবার শীলা কেন?’
—আরে, অন্যের কাঁধে চেপে এইরকম ভোগ খেয়ে বেড়াতাম! শালা, সংসারের কোন ঝুট ঝামেলা নেই!
পিনাকী দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা মাংসের কুচি বার করবার চেষ্টা করতে করতে বলে, ‘ঠিক বলেছিস তো! এই দিকটা তো আমি ভেবেই দেখিনি! অন্যের কাঁধে চড়ে ভোগ খাও আর ভোগ খেতে খেতে, যারা খাওয়াচ্ছে তাদের ভোগে পাঠিয়ে দাও!’
সবাই পিনাকীর বলার ভঙ্গী দেখে জোরে হেসে ওঠে! অরিন্দম, সুবর্ণকে জিজ্ঞেস করে, ‘ঝোপের কাছে দাঁড়িয়ে তুই কী দেখছিলি রে, সুবু?’
—ঝোপের কাছে?... ও... হ্যাঁ! কী সুন্দর একটা প্রজাপতি!
পিনাকী বলল, ‘ওর সেই পুরনো অভ্যেসটা এখনো যায় নি!’
—যাওয়া উচিতও না! তোরাও সুযোগ পেলে প্রাণ ভরে দেখে নে! এরপর প্রজাপতি তো শুধু বিবাহ-পত্রিকাতেই দেখা যাবে!
অরিন্দম বলে, ‘ওই প্রজাপতির পেছনে না ঘুরে, নিজের জীবনের প্রজাপতিটার দিকে একটু নজর দাও, বুঝলে?
সুবর্ণ জবাব দেয়, ‘বুঝলাম!’
এই সব কথাবার্তার মধ্যে মনীন্দ্র বলে ওঠে, ‘দেখ, জেলেদের নৌকো ফিরে আসছে!’
অরিন্দম বলে, ‘চল, যাওয়া যাক!’
চারজনেই দেখে, জেলেরা নদীর কিনারায় নৌকো ভিড়িয়ে, পাড়ে নামার তোড়জোড় করছে। ওরাও উঠে সেই দিকে রওনা দেয়।
কাছে গিয়ে ওরা দেখে, জেলেরা নৌকো থেকে নেমে তাদের চুপড়িগুলোতে মাছ নামাতে ব্যস্ত। মনীন্দ্র আর সুবর্ণ এগিয়ে গিয়ে জেলেদের মধ্যেই একজন বয়স্ক মানুষকে জিজ্ঞাসা করল, ‘এই যে কর্তা, কি মাছ ধরলেন আজকে?’
জেলে উত্তর দিল, ‘সে... অনেক রকম! ছোটো-বড় মিলাইয়া রকমারী! তা আপনেরা কি এইখানে বেরাইতে আইছেন?’
মনীন্দ্র বলে, ‘হ্যাঁ... আমাদের এই বন্ধুর জন্মদিনে একটু খাওয়া দাওয়া এই আর কি! তা...বলছিলাম, আমাদের একটু নৌকা করে, বেশী না এক চক্কর ঘুরিয়ে দেবেন?’
জেলে মাথা নাড়ে, ‘সে আগে কইলে ভাবা যাইত! এখন তো আর ফিরত যাওয়া যাইব না!’
সুবর্ণ বলে ওঠে, ‘দেখুন কাকা, আমরাও গ্রামের ছেলেই বলতে পারেন! আপনাদের মাছ ধরা দেখে ইচ্ছে হল এক পাক আমরাও ঘুরে আসি! আমরা পয়সা দেব!’
—কথাটা পয়সার না, বোঝলেন! কিছুক্ষণের মধ্যেই আড়তদারের লোক আইস্যা পরবো! আমরা নৌকা পারে তুইল্যা, জাল-জুল গুটাইয়া নিয়া চইল্যা যামু! আপনেগো ঘুরাইতে গেলে অনেক দেরী হইয়া যাইবো! তারপর এই জাইল্যা নৌকায় আপনেরা বসতেও পারবেন না!
প্রবীন জেলে ওদের বোঝাবার চেষ্টা করে, কিন্তু মনীন্দ্র হাল ছাড়তে নারাজ, ‘দেখুন, আমরা নৌকো চালাতে পারি! ওই ওরা দু’জন... ওস্তাদ! আপনারা আপনাদের কাজ করুন, আমরা এক চক্কর ঘুরে আসি! আপনাদের কাউকে যেতে হবে না!’
কিন্তু জেলেরা রাজি হয় না। ওরা হতাশ হয়ে ওখান থেকে সরে কিছুটা দূরে নদীর ধারে গিয়ে দাঁড়ায়। সুবর্ণই প্রথম কথা বলে, ‘হল না তাহলে!’
মনীন্দ্র কিছু বলল না কিন্তু পিনাকী বলল, ‘দেখা যাক!’
সুবর্ণ বলল, ‘দেখার আর কিছুই নেই!’
এর মধ্যেই ঘড় ঘড় করে একটা ছোট হাতি এসে হাজির! সেটা থেকে একটি ছোকরা লাফ দিয়ে নেমে জেলেদের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে কিছু বলতেই জেলেরা মাছের ঝাঁকাগুলো ছোট ট্রাকটা-তে তুলতে লাগল। তোলা শেষ হলে ওরা জালটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে গিয়ে ট্রাক টায় ছুঁড়ে দিয়ে, নিজেরা লাফ দিয়ে উঠে বসে।
ট্রাকটা ঘুরে চলে যেতেই পিনাকী প্রায় দৌড়ে, পাড়ে শোয়ানো নৌকোটার কাছে গিয়ে বাকিদের ডাক দেয়, ‘তোরা চলে আয়, এসে হাত লাগা!’
মনীন্দ্র এতক্ষণ চুপ করে ছিল, এবার বলল, ‘কি ব্যাপার..., ওখানে এসে হবে টা কি?’
—আরে গুরু... হবে, হবে... নৌকা ভ্রমণ হবে! তাড়াতাড়ি আয়!
পিনাকীর উৎসাহ দেখে ওরা নৌকোটার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। পিনাকী বলে, ‘আয়... হাত লাগা, এটাকে জলে নামাতে হবে!’
এবার ওরা যেন আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। নৌকোটাকে জলের দিকে ঠেলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নৌকোটা জলে ভাসে। পিনাকী বলে, ‘তোরা উঠে পড়! আমি শেষ ঠেলাটা দিয়ে উঠছি!’
ওরা তিনজনেই খুব সন্তর্পণে নৌকোটায় উঠে পড়ে। সুবর্ণ আগেই বৈঠাটা নিয়ে সামনের দিকে গিয়ে বসে পড়ে। মনীন্দ্র আর অরিন্দম বসতেই পিনাকী নৌকোটায় একটা জোর ঠেলা লাগিয়ে লাফিয়ে উঠে পড়ে! নৌকোটা জোরে দুলে ওঠে! নৌকা জলে ভাসাতে গিয়ে ওরা চারজনই ঘেমে, নেয়ে একসা হয়ে গিয়েছিল। এখন সবাই রুমালে হাত মুখ মুছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে একমাত্র সুবর্ণ ছাড়া! সুবর্ণ বৈঠা দিয়ে নৌকাটাকে আরও দূরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। অরিন্দম বলে, ‘সত্যি... পিনু, তু একদম কামাল কর দিয়া!’
পিনাকী সুবর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘কিরে সুবু, হালটা কি আজ তুই ধরবি... পারবি তো?’
—হ্যাঁ... তোদের নৌকা ভ্রমণ করানোটাই হোক আজ তোদের জন্য আমার রিটার্ন গিফ্ট!
আর তখনই দমকা বাতাস এসে নৌকোটাকে কিনারা থেকে বেশ খানিকটা দূরে নিয়ে যায়! সুবর্ণ হেসে উঠে বলে, ‘দেখছিস প্রকৃতিও আমাকে কেমন সাহায্য করছে! চল নাও চল, এইবার মাঝ দরিয়ায় চল...!’
হাওয়ার টানে নৌকা আরো দূরে যেতে থাকে। ওরা হই হই করে ওঠে। এই সব কিছুর মধ্যে সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ে। মনীন্দ্র ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সাড়ে পাঁচটা বাজে রে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার নেমে যাবে! সুবু, এক পাক দিয়ে আমরা ফিরে যাবো বুঝলি!’
বাকিরা কিছু বলে না। সুবু বৈঠা চালাতে থাকে। পড়ন্ত বিকেলের আলো ঝলমলে নদী, উজ্জ্বল গোলাপি ওড়নায় মোড়া নীল আকাশ আর হৃদয় জুড়ানো শীতল হাওয়া! প্রকৃতির এই আশ্চর্য সৌন্দর্যের অভিঘাতে, মনীন্দ্র, অরিন্দম আর পিনাকী অভিভূত হয়ে পড়ে! মনীন্দ্র প্রায় সম্মোহিতের মত বলে, ‘আমরা, কেকটা কেটে... যখন হাততালি দিচ্ছিলাম... আমার... মাধ্যমিকের ফল বেরোবার দিনটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল! সুবুর বাড়ির সেই... এলাহী খাওয়া! সেই দিনও আমরা... খাওয়ার আগে হাততালি দিয়ে চেঁচিয়েছিলাম... থ্রি চিয়ার্স ফর সুবর্ণ... হিপ হিপ হুর্রা, হিপ হিপ...।
পিনাকী আর অরিন্দম চেঁচিয়ে গলা মেলায়, ‘...হুর্রা!’
কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটার পর যখন নৌকো প্রায় নদীর মাঝামাঝি পৌঁছেছে হঠাৎ সুবর্ণ বলে ওঠে, ‘মণি... দেখ...ওই যে... ওইখানে... আমার কোলা ব্যাংটা ডুব দিয়ে ছিল!’
মনীন্দ্র বলে, ‘তাই...কোথায় রে সুবু?’
—আরে ওই যে... ওইখানটায়! চল... কাছে গিয়ে দেখাচ্ছি!
সুবর্ণ নৌকা ঘুরিয়ে একটা জায়গায় নিয়ে গিয়ে বলে,
—এই দেখ... এইখানটায়!
পিনাকী আর অরিন্দম কিছু বুঝতে না পেরে মনীন্দ্রকে শুধোয়, ‘কি ব্যাপার রে মণি...?’
—আরে সকালবেলায়... সুবু... একটা ব্যাং পাথর ছুঁড়েছিল, সেই বলছে... এইখানটায় নাকি ডুবেছে”!
—তাই নাকি! তা কবার লাফিয়েছিল... ওর ব্যাং?
সুবর্ণ ততক্ষণে নৌকোর ওপর দাঁড়িয়ে পড়েছে! পিনাকির প্রশ্নের উত্তরটা সেই দেয়, ‘তিন বার লাফানোর পর... চতুর্থ লাফটা দিতে গিয়ে... ডুবে গেল... এই দেখ... ঠিক এই ভাবে...
বলেই সুবর্ণ নদীতে ঝাঁপ দেয় আর জলে পড়েই ডুবে যায়, নৌকো ভীষন ভাবে দুলে ওঠে, বাকি তিনজন ভয়ে, আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে, কিন্তু সুবর্ণর কোনও চিহ্ন দেখতে পায় না! ওরা চিৎকার করে ওকে ডাকতে থাকে, কিন্তু সুবর্ণ...
সময় কাটতে থাকে...
হঠাৎ সুবর্ণ জলের ওপর ভেসে ওঠে, ওদের দিকে দুহাত তুলে হেসে বলে, ‘চলি রে... আমার ব্যাং পাথর খুঁজতে... নীচে... অনেক... অনেক মাছ আছে রে... অসংখ্য... অগুনতি মাছ...’
বলেই সুবর্ণ আবার ডুবে যায়...
ওরা হতভম্বের মত সুবর্ণর ডুব দেওয়া জায়গাটার দিকে তাকিয়ে থাকে...
মণি হঠাৎ বলে, ‘তোরা ভয় পাস না... সুবু... খুব ভালো সাঁতার কাটতে পারে!’
বেশ কিছুক্ষণ পর দেখা যায়...
ডুবন্ত সূর্যের আলোয় মাখামাখি তিন বন্ধু, মাঝ দরিয়ায়, নৌকোর ওপর বসে আছে সুবর্ণ ওঠবার প্রতিক্ষায়...
ভালো লাগা গল্প!
ReplyDeleteঅসাধারণ ।মাত্র কয়েকটি ঘন্টায় এক সমগ্ৰ জীবন ফুটে ওঠার গল্প ।
ReplyDelete