0

গল্প - অভীক চৌধুরী

Posted in

গল্প


মেঘমল্লার 
অভীক চৌধুরী 


আমার কথা - এক 

ঠিক কি ভাবে আপনাকে সম্বোধন করবো ভেবে পাচ্ছি না। আপনি আমাকে আজ হয়তো আর চিনতে পারবেন না। অবশ্য চেনানোর কোনও দায়ও আমার নেই। তবুও কোনো ভাবে আপনার ঠিকানাটা জোগাড় করে ফেলেছি তাই এ চিঠিটা লিখছি। অবশ্যই সময় করে একটু পড়ে দেখবেন। আমার তো ইমেইল, হোয়াটস্যাপ, ইনস্টাগ্রাম,মেসেঞ্জার, ফেইসবুক কিছুই নেই। আজকের এই নেট সর্বস্য দুনিয়ায় আমার কোনো স্মার্ট ফোন নেই। গত রবিবার দৈনিকে রবিবাসরীয়তে আপনার গল্পটা পড়লাম, বেশ ভালো লাগলো আগাগোড়া মিথ্যার পশম দিয়ে বোনা সোয়েটার গল্পটি। 

আমারও না খুব লিখতে ইচ্ছে করে, দু চার লাইন লিখেওছি। তাই ভাবলাম একটা গল্প লেখার চেষ্টা করা যাক আর আপনিই হবেন আমার সৃষ্টির প্রথম পাঠক। গল্পটার কোনো নাম দেওয়া হয়নি। প্লিজ পড়বেন কিন্তু ......... 



আমার লেখা - এক 

কলকাতা থেকে প্রায় পাঁচশো মাইল পশ্চিমে down the memory lane ধরে হাঁটতে হাঁটতে না না ট্রেন চেপে ছোট এক আধা শহর আধা গ্রাম ছোট ছোট পাহাড় আর অসংখ্য টিলা দিয়ে ঘেরা। পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি হচ্ছে নতুন রেল লাইন, গড়ে উঠছে জনবসতি, চারিদিকে ইতস্তত ছড়ানো রেল কোয়ার্টার। কিছুটা দূরেই অভ্র খনি, ধূসর লালমাটির কার্পেট জুড়ে অভ্রমাখা অসংখ্য চুমকি। হাড় হিম করা এক শীতের ভোর নভেম্বর এর শেষ কিংবা ডিসেম্বর এর গোড়া। সেরকমই এক দিনে কুয়াশার শাল গায়ে এক মেয়ে তার বাবা আর অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে মর্নিং ওয়াক করছে। মেয়েটাকে একটা নাম দেওয়া যাক, ধরা যাক দিয়া। তখন দিয়া সদ্য কুঁড়ি থেকে ফোটা ফুল। 

রেলে চাকরি সূত্রে দিয়ার বাবা তখন ওই শহরে বেশ কয়েক বছর। কলেজের পরীক্ষা শেষ দিয়ার। ছোট ভাইবোনগুলো মত্ত অভ্র কুড়োনোর খেলায়, দিদির দিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই। দিদি তখন আকাশ জুড়ে রঙের খেলা দেখছে মন দিয়ে । কুয়াশার জাল ফালাফালা করে চিরে মাটির বুকে ছাড়িয়ে পড়েছে সোনারোদ ; কখনো চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে গলানো সোনা হয়ে। এবার খেয়াল হলো, একটু দূরে বাবা ব্যস্ত একদল অচেনা ছেলের সঙ্গে,তারপর বড়মেয়ের দিকে চোখ পড়তেই কাছে ডাকলেন, এদিকে এস মামনি, তোমার সঙ্গে এনাদের আলাপ করিয়ে দিই, কলকাতা থেকে এসেছেন রায়দার বাড়ি। সবাই পোস্ট গ্রাজুয়েট পরীক্ষা দিয়েছে। 

খুব ফর্সা ছোটোখাটো চেহারার একটি ছেলে এগিয়ে এলো, আমি প্রীতম পরীক্ষা শেষে মামাবাড়ি ঘুরতে এসেছি আর আমার সঙ্গে বন্ধুরা। তারপর অন্যরা এগিয়ে এসে পরিচয় করলো, বিবেক, সান্তনু, কুশল। দলের মধ্যে শুধু একজনই কোনো কথা না বলে শুধু হাসলো, তার সারা মুখমণ্ডলে ভোরের নরম আলোর এক অপার্থিব প্রতিচ্ছবি। ভিড়ের মধ্যে কে যেন বলে উঠলো, মেয়েদের সামনে সায়ক বোবা হয়ে যায়। হাসির কলরোলে মুখরিত হলো ভোরের আকাশ। 

তোমাদের কিন্তু আজ বিকেলে আমাদের বাড়ি আসা চাই, আমি রায়দা কে বলে দেব, প্রীতম তুমিও তোমার মামাকে বলবে ব্যানার্জী মামার সঙ্গে তোমাদের আলাপ হয়েছে। 

সেদিন সন্ধেবেলা হইহই করে দলবেঁধে ছেলেরা এলো, দিয়ার মা বাবা কি যে ব্যস্ত ওদের নিয়ে তা আর বলার নয়, দিয়া র ছোট ভাইবোনেরা ভীষণ খুশি অনেক দাদাদের পেয়ে । সকলেই খুব বকবক করছে, শুধুমাত্র সায়ক কারুর সঙ্গেই বেশি কথা না বলে ড্রয়িং রুমে এসে বইয়ের আলমারির সামনে অবাক বিস্ময়ে তাকালেন, এত বই কার? 

কার আবার? আমার বাপির, ভীষণ নেশা বাপির -- দিয়া উত্তর দিলো। 
তুমি পড়োনা এত বই? সায়ক নিজের মনেই যেন বললো। 

দিয়া যেন বিব্রত হলো, না না আমিও বই পড়তে ভালোবাসি তবে বাপির মতো নয়। 

সায়ক তারপরেই হঠাৎ বই ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ালো মুখ নিচু করে আলতো ভাবে বললো, কিছু মনে করবেন না ভুল করে তুমি বলে ফেলেছি । 

অরে না না এতে ভুল হবার কি আছে? আমাকে তুমি বলতেই পারেন। আপনার ভুলটাই হয়তো আমার কাছে ঠিক, দিয়া এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো। 

সুন্দর হাসিটা আবার ছাড়িয়ে পড়লো সায়কের মুখমণ্ডলে, বাঃ তুমি এত ভালো কথা বলতে পারো জানতাম না। 

দিয়ার দৃষ্টি বাঙময়, কিন্তু মুখে কোনো কথা নেই। অন্তরের গভীরতম অন্তঃকোন থেকে অনুচ্চারিত সব শব্দ বেরিয়ে এসে ঘিরে ফেললো সায়ককে, তীরের মতন আঘাত করতে লাগলো সর্বাঙ্গে। সায়ক হয়তো কিছু অনুভব করতেই পারলো না, কিংবা কে জানে তীর গুলো হয়তো বিদ্ধ করছিলো চুমকিকেই। এক মোহময় যন্ত্রণার আবেশে স্নায়ুতন্ত্র অবশ হয়ে যাচ্ছিলো। দিয়া ভাবছিলো মেয়েরা কি সহজে হেরে যায়, শুধুমাত্র চোখের দৃষ্টি আর হাসি দিয়ে সায়ক কি জিতে নিলো দিয়ার হৃদয়? 



আমার কথা - দুই 

আচ্ছা মিস্টার লেখক শিলাদিত্য , আপনিতো অনেকদিন ধরে গল্প লিখছেন, শুধু একটা ছাড়া কোনো গল্প আমার পড়া হয়ে ওঠেনি। আপনার গল্পের নায়িকারাও কি আমার মতন সহজেই হেরে বসে থাকে? আপনার নায়েকেরাও কি শুধু দৃষ্টিতেই জিতে নেয় হৃদয়? গল্পের এই পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহ বা তারপরের নিশ্চই মনে করতে পারবেন এখনকার লব্ধপ্রতিষ্ট লেখক। কিন্তু এটাই তো গল্পের শেষ নয়, স্মৃতির সরণি বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে এখনও অনেকদূর যেতে হবে। 

আমার লেখা -- দুই 

সেদিন সায়ক আর বন্ধুরা অনেক রাত পর্যন্ত জমিয়ে দিলো ব্যানার্জী মামার বাড়ি, অনেক গান,হাসি, মজা আর প্রচুর খাওয়া - দাওয়া সেরে একসময় ফিরে গেলো। কিন্তু কি যে রেখে গেলো দিয়ার জন্য তা সে নিজেও বুঝতে পারছিলো না, দিয়া যেন মেঘের স্তরে স্তরে ভেসে যাচ্ছে নাকি দিয়ার পিঠে কে যেন জুড়ে দিয়েছে ডানা আর সেই ডানায় বাতাস কাটাতে কাটাতে উড়ে চলেছে দূরে, আরো দূরে, বহুদূরে। 

সুন্দর বলে একটা গর্ব ছিল দিয়ার, সেটা ভেঙে যেন চুরচুর হয়ে ছড়িয়ে গেলো ওর সমস্ত সত্বাময়। মনে হলো ওই ভুবন মোহিনী হাসির কাছে কিছু নয় নিজের রূপের গর্ব। 

দিয়ার মা বাবা ভাই বোন সকলেই প্রীতম আর তার বন্ধুদের সুন্দর ব্যবহারে এত মুগ্ধ যে ওরা যেকদিন থাকবে রোজ আসার প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রচণ্ড শীতে তিনদিনদিন ধরে বৃষ্টি নামল অঝোরধারায়, বৃষ্টির কত না ছন্দ , কত না তাল আর অপূর্ব ঝংকারে দিয়ার শরীরের সমস্ত কোষে কোষে সেতারে মেঘমল্লারের অনুরণন। বৃষ্টির সেই তাল ছন্দ সুরের অপূর্ব মেলবন্ধন দিয়াকে কেমন বিহ্বল করে দিছিলো তা ভাষায় লেখা যায় না। পাহাড়ের গা বেয়ে অবিরাম বৃষ্টির জল উদ্দাম বেগে ঝর্ণার স্রোতের সঙ্গে ভেসে যাচ্ছিলো কোনো এক দুর্বার টানে - এমনি এক বৃষ্টি বাদল মাথায় করে আবার এলো বন্ধুর দল। দিয়ার বাবা ক'দিন খুব মনমরা ছিলেন ওদের সংগ না পেয়ে। দ 

তারপর ওরা রোজ আসতো যে ক'দিন ছিল। একদিন এক মনোরম শীতের সকালে সবাই মিলে জিপে করে বেরিয়ে পড়লো, অনেক পাহাড়, অনেক ঝর্ণা ঘুরে ঘুরে কারো যেন আশ মিটছিলোনা, সবাই হাসি আড্ডা গান কবিতায় জমিয়ে দিলো সেদিন। শুধু সায়ক কোনো কথা বলেনি, সুযোগ পেলেই সবার আড়ালে বা সামনেই দিয়ার সঙ্গে হাসি বিনিময় করতো। সেদিন এক দুরন্ত ঝর্ণার সামনে সামনে দাঁড়িয়ে সায়কের মুখ দিয়ে কথা ফুটল কবিগুরুরুর গানে ...আমার চলা যায়না বলা / আমার পানে প্রাণের চলা / আকাশ বোঝে আনন্দ তার / বোঝে নিশার নীরব তারা ...তারপর আলতো স্বরে দিয়াকে বললো, ঝর্ণা কেমন নির্ভয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে খিলখিল করে হাসতে হাসতে নিচে পড়ে নদী হয়ে যাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছ? শুনতে পাচ্ছ ওর মনের কথা? 

দিয়ারও সেদিন খুব ইচ্ছে করছিলো গাইতে ...উড়িয়ে দেবার মতন এসে / কাঙাল তারে করলো শেষে ...

সায়কশুধু ভালো গান করেনা দিয়া মা, ও গল্পও লিখতে পারে -- সম্বিৎ ফিরে এলে দিয়া দেখলো ওর বাবা --- ওর বন্ধুদের কাছে আমি সব জেনেছি। 


আমার কথা --তিন 

জানেন শিলাদিত্য, আমার লেখাটা এখানেই শেষ করবো ভেবেছিলাম, বাকিটা নাহয় নাইবা প্রকাশ করতাম। আপনার গল্পটা পড়ে আমি প্রথমে খুব চমকে গেলেও পরে দেখলাম আমার গল্পটাও খুবই ইন্টারেষ্টিং, আপনার অবশ্য ভালো লাখবে কিনা জানিনা। 

আমার গল্প -- তিন 

কলকাতা চলে যাবার আগে ওরা আবার এলো, দিয়ার বাবা ওদের নিয়ে মেতে উঠলেন। 

দিয়া ছিল দোতলায় নিজের ঘরে, কিভাবে সন্ধান পেয়ে সায়ক এলো সে ঘরে। ঠিক তখনি আবার বৃষ্টি নামল আকাশ জুড়ে। হিয়া এক রঙ্গীন স্বপ্নে বিভোর হয়ে গাইছিলো ---প্রেমের বাদল নামল, তুমি জানো না হয় তাও কি। / আজ মেঘের ডাকে তোমার মনের ময়ূরকে নাচাও কি ... 

দেয়ানেয়ার এক দুঃসাহসিক খেলায় মেতে উঠলো দুটি শরীর মন প্রাণ, কেউ জানতেও পারলোনা। তারপর কখন যে বৃষ্টি থেমে শেষ বিকেলের আলো ম্লান মুখে বিদায় নিলো, রাত এলো ঝলমলে তারার হাত ধরে কেউ তার খবর রাখলোনা। পরের দিন ওরা কলকাতা ফিরে গেলো। সায়ক একবার জানার চেষ্টা করলো না মেয়েটা কেমন আছে, কি ভাবে কাটে তার সারা দিনমান পথ চেয়ে আর কাল গুনে। খুব বেশিদিন ঘোরের মধ্যে কাটলোনা, একদম আচমকা দিয়ার বাবা বিয়ে ঠিক করলেন এক সুপাত্রের সঙ্গে আর অন্য এক প্রবাসী শহরে। নতুন বর, নতুন ঘর পেয়ে মেয়েটা আবার এক অনাবিল সুখের স্রোতে ভেসে গেলো। তার কি মনে পড়তো জীবনের প্রথম সুখস্মৃতি, কে জানে? 

জীবনের নদী কখন যে কোনদিকে বাঁক নেয় কে তার হিসাব রাখে, বছর ঘুরতে না ঘুরতে দিয়া এক সুস্থ সুন্দর ছেলের মা হলো। সবাই খুব খুব খুশি, দিয়ার মা বাবা ভাইবোন আর শশুর বাড়ির লোকেরা। দিয়ার হাসব্যান্ড একটু গম্ভীর, বাইরে কোনো উচ্ছাস না দেখালেও একজন পরিতৃপ্ত সুখী মানুষের আনন্দ গোপন করা যায় না। কেউ কিছু ভাবেনি, কোনোরকম সন্দেহের কথা কেউ বলেনি তবুও দিয়া আসল সত্যি কোনটা সেটা ভেবে কোনো কুলকিনারা করতে পড়লো না। কাউকে বুঝতে দিতনা কিন্তু একটা অস্বস্তির ঘুনপোকা ওর মগজে বাসা বাঁধলো। চার বছর পর যখন দ্বিতীয় সন্তান আসছিলো না অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তারের পরামর্শে দিয়ার স্বামীর কিছু পরীক্ষা হলো, রিপোর্ট পাওয়া গেলেও সেটা দিয়া জানতে পারলোনা। আর দিয়াও জানতে চায়নি কিছু, একমাত্র সন্তানের পরিচর্যায় কেটে যেত সমস্ত অনু পল্। যেতে যেতে দিন, সপ্তাহ, মাস বছর ঘুরে যায়, দিয়ার সন্তান তখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে,এমনি এক দিনে পুরানো কাগজের মধ্যে হঠাৎ হাতে এলো সেই রিপোর্ট। 

দিয়া এমনটা ভাবেনি, তবে কি? দিয়ার স্বামী দিবাকর কিন্তু একদম বিন্দাস, যখনি বাড়ি থাকে তখনি তার ছেলে রাজকে নিয়েই সময় কাটে। কোনোরকম সন্দেহ আর সংশয় দিবাকরের মধ্যে কোনোদিন দেখেনি দিয়া। একরাশ লজ্জা, গ্লানি আর অবসাদ ঘিরে ধরে দিয়াকে। রাজ্ এর হাসিটাও অবিকল সেই মোহময়ী, ঠিক সেই হাসি যা দিয়াকে পতঙ্গের মতো আগুনের কাছে টেনেছিল। 


আমার কথা -চার 

কি ভাবছেন শিলাদিত্য? সায়ককে আপনার কি খুব চেনা লাগছে?, তাহলে শুনুন স্মৃতির সরণি বেয়ে আমরা একদম এই মুহূর্তে আজকের কঠিন বাস্তবে পৌঁছে যাবো একটু পরেই, প্লিজ ততক্ষন একটু সময় দিন। 

আমার গল্প - চার 

সায়ক কিন্তু চলে যাবার পর কোনোরকম যোগাযোগ রাখেনি, চিঠি ও দেয়নি। আর তখন মোবাইল আসেনি দেশে, কাজেই স্মার্টফোনের কোনো প্রশ্ন ছিলোনা। ভয় -ভাবনার হিমেল স্রোত আজও দিয়ার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসে, যদি এক মাসের মধ্যে দিবাকরের সঙ্গে বিয়েটা না হতো? দিবাকরের জন্য খুব কষ্ট হয়, ভীষণ অপরাধী মনে হয় নিজেকে। নিজেকে শেষ করে দেবার বাসনা মাথায় ঘরে, কিন্তু রাজেরও সেই অবিকল হাসি ওকে আবার বেঁচে থাকার অক্সিজেন যোগায়। ভালো থাকার মুখোশটা পরে নেয়, সংসারের কাজে, ছেলে-স্বামী আর সকলের পরিচর্যায় মন দেয়। এভাবেই রাজ্ কালের নিয়মেই শৈশবের রূপকথার চৌকাঠ পেরিয়ে কৈশোরের দামালপনা সামলে একদিন বড় হয়ে যায়। কলকাতায় স্টাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়। ক'দিনের জন্য বাড়িতে এসেছে, মাকে জড়িয়ে ধরে সোহাগ খেতে খেতে বলে, মা, একটা কথা বলবো তোমায়, তুহিনা খুব ভালো মেয়ে, আমাদের সঙ্গেই পড়ে ই ওকে না আমি খুব ভালোবাসি। তুমি রাগ করবে না তো? দিয়া কোনো উত্তর দেয়না, রাজ্ আবার বলে - তুমি কি রাগ করেছো মা? তুহিনা কিন্তু সত্যি খুব ভালো মেয়ে, আর জানো ও কে? 

উত্তরের অপেক্ষায় অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে দিয়া। 

গত রবিবারে তোমাকে যার গল্প পড়ালাম সেই শিলাদিত্য স্যার এর মেয়ে, শিলাদিত্য স্যার আমাদের প্রফেসর। 

সেই সময় মেঘমল্লারের তান বাজতে থাকে ঝর্ণার স্রোতে । 

দিয়া এক মোমের স্ট্যাচু হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে। অনায়াসে ওকে এবার কোনো মিউজিয়ামে কাঁচের শোকেসে রাখা যায় ... 

আমার আর কিছু বলার নেই শিলাদিত্য স্যার । 

0 comments: