0

ধারাবাহিক - সুবল দত্ত

Posted in


ধারাবাহিক


প্রতিস্রোত
সুবল দত্ত


।।২৫।।
নাগিন উই খাদান ভুঁই শস্ত্র মারণ ফাঁদ


সৌমজিত

গোরাচাঁদ যে তার বাবা, সে যে গোরাচাঁদের ঔরস পুত্র ভাবতেই কেমন ধোঁয়াশা লাগে। বুড়োটা তার উন্নতির পথে চিরকাল বাধা হয়ে ছিলো, এখনও তাই। ছোটো থেকেই সৌমজিত সস্তা কম্যুনিস্ট মানসিকতা ঘৃণা করে এসেছে। আর শুরু থেকেই গোরাচাঁদকে দেখে আসছে কমিউনিস্ট দলের পিছনে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে সময় নষ্ট করেছে। সৌমজিত নিজের খ্যাতি প্রতিপত্তি তো নিজেই অর্জন করেছে। এতে বাপের এক ফোঁটাও অবদান নেই। বরং সোসাইটিতে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। অনেকজন আঙুল তুলেছেন, বাপটা একটা জংলি কেপ্টের সাথে থাকে। হ্যাঁ, তবে সৌমজিত স্বীকার করে ওই আদিবাসী মহিলা তাকে কোলেপিঠে বড়ো করেছে। মা মরা ছেলেকে নিজের ছেলে ছেড়ে ওকেই বেশি যত্ন করেছে। কিন্ত এমনি এমনি নিশ্চয়ই নয়। খুব চালাক আর লীডার গোছের মহিলা। যে কোনও আন্দোলনের মাষ্টার পিস। পরপর দুবার বড়ো ডিল ম্যাসাকার হয়ে গেছে ওর আর ওর কেলে কুত্তা ছেলের জন্যে। কিন্ত এবার কোনও মতেই হাতছাড়া করা যাবে না। স্টেটসে একটা বিশাল বাংলো, মালয়েশিয়াতে বিশাল এস্টেট, কাশ্মীরে একটা ডিল ইকবালকে দিয়ে প্রসেসিং চলছে। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো সম্পত্তি তো এই শিমুলিয়া অঞ্চলে। একে কোনমতেই হাতছাড়া করা যাবে না। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে সৌমজিত যখন এখানে সেনা মহড়াতে এসেছিলো, তখন ইসরাইল ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে খনিজ অনুসন্ধান চলছিলো। জঙ্গলে যেখানে আদিবাসী জনজাতির বসতি সেই বিশাল অঞ্চলে ওরা ওদের সবচেয়ে প্রিয় অমূল্য দুষ্প্রাপ্য ভেষজ ফুল গাছ, ইনুলা ভিসকোসা, যার ভারতীয় নাম পূষ্কর মূল, সেগুলো অঢেল পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছিল। ওরা নিশ্চিত ছিল এই ধরণের ভেষজের তলায় খনিজ তামার ভাণ্ডার আছে। এবং এই তথ্য বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ভিত্তিক। কিন্ত ওই ভেষজের মহিমায় ইসরাইল খনিজ বিশেষজ্ঞ সেটাকে প্রাথমিকতা দেয়নি। সংযোগবশতঃ দুয়েক দিন পর একটা পাগলা জিওলজিক্যাল সারভেয়ার এসে হাজির। সে সেখানের রক্ত লাল হলুদ পাথর মাটি সৌমজিতকে চিনিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দিল মাটির তলায় রয়েছে তামার আকর চ্যালকোলাইটের অফুরন্ত ভাণ্ডার। ওপরে জংলি জনজাতির বসতি। এই কথা গোরাচাঁদকে লুকিয়ে সৌমজিত দুটো কাজ গোপনে করতে লাগল। এক, বসতি উচ্ছেদ করতে এলাকা উগ্রবাদী ঘোষনা করা। দুই, খনিজ মন্ত্রণালয় থেকে দুতিনজন কমজোর মাইনস ওনারের নামে গন্ধক বা সালফার নিষ্কাষনের জন্য ওই জঙ্গল এরিয়া পঞ্চাশ বছরের লিজ নেওয়া। যেহেতু তামার আকরের সাথে সালফার মিশ্রিত থাকে তাই সারভেয়ারকে ম্যানেজ করতেবেশি ঝামেলা পোহাতে হয় নি। তার ওপর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত টাকা ছড়িয়ে দিলে কি না হয়।

সৌমজিত তার স্পেশ্যাল সুরক্ষিত জীপ গাড়িতে। এই গাড়ি জঙ্গলে পাহাড়ে পথ তৈরি করে চলে। কোনও বাধা মানে না। জীপে বসে চারজন সিকিউরিটি অফিসার। ওদের গন্তব্য জঙ্গল ঘেরা বিস্তীর্ণ ময়দানে যেখানে আদিবাসী জনজাতিরা নিজেদের বসতি ছেড়ে ওদের ঢাকের সংকেত অনুযায়ী নিশ্চয়ই জমায়েত হয়েছে। তাছাড়া ওরা আর যাবেই বা কোথায়। সৌমজিত ভাবল। ওখানে জেরেকা আর পেরো থাকলে সৌমজিত আর কিছু চায় না। ওদের সাথে দু দশ জনকে একাউন্টার করে বাকিদের সরকারী খরচে রিহ্যাবিলিয়শন ক্যাম্প বসিয়ে দেওয়া দেওয়া যাবে। অবশ্য সেখানে যদি না রাশিয়ান রক্ষাবাহিনী মজুদ থাকে তো। ওরা ছিনে জোঁকের মতো পিছনে পড়ে আছে। সৌমজিত অতোটা ভাবতেই পারেনি ওই সারগেই এতো ওর বিরুদ্ধে যাবে। নিশ্চয়ই সব গোরাচাঁদের জন্যে।গাড়ি ময়দানের দিকে এগোচ্ছে। পুরো মিলিটারি ফৌজ সেখানে তার অপেক্ষায়।এখন পুরো ব্যাটেলিয়ানের কাছ থেকে গার্ড অফ অনার নেওয়ার সময় সৌমজিতের এতো ভালো লাগে নিজেকে গর্বিত বোধ হয়। কিন্ত তার চেয়েও বড় ব্যাপার ওই বিশাল কপার ফিল্ড আদিবাসীদের কবজা থেকে মুক্ত করা গেছে। ওই খনি এলাকা তাকে কোটি কোটি টাকা দেবে। এবার খুব সাবধানে ভাবতে হবে খনিজ আকর চ্যালকোলাইটের নিষ্কাষন ও এক্সপোরট কিভাবে হবে। খুব ইচ্ছে হল বসতি উচ্ছেদ হওয়ার পর অধিকৃত জমিটা দেখার। সৌমজিত গাড়ি সেদিকে ঘুরিয়ে নিতে আদেশ দিল। গাড়িটা বেশ কিছুদূর এগোনোর পর দেখা গেল তার বিশ্বস্ত চার পাঁচ জন ল্যান্সনায়েক রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে। গাড়ি থামতে ওরা এগিয়ে এল। - যাবেন না স্যার। যেখানে যাচ্ছেন সেখানেও ওরা ঘিরে ফেলেছে। আর ভাগ্যিস ময়দানে প্রসিড করেননি। সেখানে ওরা ছেয়ে আছে। আমরা শখানেক জন পালিয়ে বেঁচেছি। সম্ভবত মিলিটারি ক্যুপ।

0 comments: