প্রবন্ধ - নিলয় কুমার সরকার
Posted in প্রবন্ধ
প্রবন্ধ
আউল বাউলের গানে ভাসে বেদান্তের অন্তর্নাদ?
নিলয় কুমার সরকার
মানুষের তিনটে প্রধান মৌলিক বৃত্তি আছেl এরা হলো বুদ্ধিবৃত্তি, কর্মবৃত্তি, আর হৃদয়বৃত্তিl তাদের মিলিত প্রভাবে মানুষের ঈশ্বর সম্পর্কিত চিন্তা আর ধর্মীয় আচরণ গড়ে ওঠেl সকল ধর্ম সাধনার মূলেই রয়েছে মানুষের সেই শাশ্বত সত্ত্বার আপন মূল্যবোধl এই ধর্মবোধ মানুষের মনের মধ্যে একটা মৌলিকবোধ.হিসেবেই গাঁথা হয়ে আছেl শিল্পবোধের মতই তা হলো মানুষের মনের এক স্বতস্ফুর্ত উপাদানl এই বোধই পৃথিবীর নানা দেশে নানান প্রচলিত লোকধর্মের উতপত্তির মূলেl এই ধর্ম বোধই হয় সাধকের নিজের সাধনপথে চলবার একান্ত প্রেরণা সুতরাং লোকবৃত্তের অন্তরালে ধর্ম সম্পর্কিত ভাবনার প্রবাহকে খুঁজে পেতে মন কে প্রস্তুত করতে হবেl এই ধর্মবোধ কিভাবে গড়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে ঈশ্বর চেতনয় পরিণত হয় --তা বুঝে নিতে, সেইসব ব্রাত্যজন, আউল বাউলের গানে কোথায় যেন খুঁজে পাই বেদান্তের চির-শাশ্বত আভাসl যদিও এ আমার ব্যক্তিগত ধারণা, তবুও যেন ভেসে চলি সেই ব্রাত্য-র দিগন্তে ফকির লালন-শা'র গানে গানেl
" ...... ...... ......
আইন কল্লেন জগত-জোড়া
সেজদা হারাম খোদা ছাড়া
মুরশিদ বরজোক সামনে খাড়া
সেজদার কালে থুই কোথা "
সত্যিই তো মুরশিদ , বরজোক যদি সামনে অপেক্ষমান হন, আর সেই সময় যদি পৃথিবী জোড়া আইন বলে ভগবান ছাড়া অন্য কারো কে 'সেজদা' বা প্রণাম করা পাপ, তবে প্রণতির সময় তাঁদের রাখি কোথায় ? এবার মীর কালা শাহ-র গানে দেখি
" কাম সাগরে জ্বলছে এক সোনার-পুরী
সেই পুরীতে যাবে যারা
জীয়ন্তে মড়া হবে তারা
মড়ামুখে কিসের বাহাদুরী
ও মন ব্যাপারী
কল্পতরু খড়ির গড়ে
মুরশিদে বরজোক ধরে
কাম সাগরে যাওরে ডঙ্কা মারি "
স্বভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে বরজোক কি ! কেনই বা মুরশিদ-কেও বরজোক-এর স্মরণ নিতে হয় ? চলুন গানের চলনে ভাসতে ভাসতে এবার শুনে নিই 'পাগল কানাই'--এর গান
" আরও বরজোক ধরে সেজদা করো ভাই
---নইলে নামাজ হবে না
ও ইশকে-সাদেকে বান্ধ হে ইমান
বরজোকে রাখ তোর নয়ান "
"ইশকে-সাদেকে" অর্থাত ভালবাসায় ও পবিত্র প্রেমে 'ইমান' বা বিশ্বাস কে বাঁধোl আর বরজোকে তোমার দৃষ্টি স্থির রাখোl প্রশ্নজাগে "বরজোক" এই শব্দের বন্ধনে তবে কোন নিবিড় কথা বলা হয়েছে? হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে এই বাংলার সুফি বা মরমিয়া কবিগণ এই শব্দটি বারবার তাঁদের লোকায়ত গানে কেন ব্যবহার করেছেন ? যতদূর মনেহয় গুরু অথবা পীর বা মুরশিদ গুরুর প্রতীকি অর্থে ব্যবহার হলেও "বরজোক" শব্দটির বস্তুতঃ কোনো এক বিশেষ তাত্পর্য আছে, অথবা অন্য কোনও যেন তৃতীয় সংকেতবাহীl অন্বেষণে দেখি আভিধানিক অর্থে "বরজোক" একটি আরবী শব্দl আরবীতে এই শব্দটি বাঁধ, ব্যবধান, মধ্যবর্তী বা অন্তর্বর্তী অবস্থা , এই সব অর্থেই ব্যবহার হয়ে থাকেl শুনেছি কোরানে ও এই শব্দটির ব্যবহার হয়েছে তিনবারl সেখানে বলাহয় স্বর্গ আর মর্ত্য-র মাঝখানে এক টুকরো জায়গায় মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা যেখানে শেষ বিচারের জন্য অপেক্ষা করে l কিন্তু এই সব সাধারণ অর্থের মধ্যেই আবার এর গূঢ় তাত্পর্যপূর্ণ আধ্যাত্মিক অর্থ ও যেন নিহিত রয়েছে l আর সেই মত অনুসারে মানুষের জীবনের তিনটি ভাগ -
১> যা পার্থিব জীবন
২> শেষ বিচারের জন্য 'বরজোক'-এ অবস্থানকালীন এক অন্তর্বর্তী জীবন
৩> বিচারের পর মুক্ত বা দণ্ডিত অবস্থা
সুফি সাধকগণ মনে করেন এই 'বরজোক' শব্দে মনের তিনটে ক্রমের উর্দ্ধ ধাবমান অবস্থার কথাই এখানে বলা হয়েছেl সুফিদের বিশ্বাসে বস্তুতঃ পরমপুরুষ ছাড়া কোনও কিছুরই অস্তিত্ব নেইl যা দৃষ্ট হয় তা কেবল তাঁরই সংকেত এবং প্রতীক l সূর্য্য ও তার ছায়া, দিন এবং রাত, জল এবং বায়ু, এছাড়াও প্রকৃতি নিবদ্ধ সমস্ত বিষয় তারই সংকেত মাত্রl প্রতিমুহূর্তে তিনি কেবল সেই পরম দিব্যভাবে ও মানব মনের পাপপূণ্যের অন্তর্নিহিত সত্ত্বারই নির্দেশ দিচ্ছেন কিন্তু আশ্চর্য এই যে জীব আত্মা সেই পরম সত্ত্বাকে সঠিক ভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে নাl প্রকৃত ভগবত প্রেমীই পারেন জ্যোতিঃস্বরূপে, সেই পরম স্বত্ত্বার দর্শন করতেl তাঁর সৃষ্ট সব কিছুই যুগল রূপে প্রকাশিত হয় এই বিশ্ব-চরাচরেl তারা আপত বিরোধী আবার সুসামঞ্জস্য ভাবে বিরাজিতl একজন আর একজনকে ছাড়া কখনো নিজেকে সম্পূর্ণ করতে পারে নাl এই পারস্পরিক ভোগের পূর্ণতা ক্ষণিক মোহেরl এই ভোগ পূর্ণ হয় তিনটি সত্ত্বার আবর্তনে ও নির্যাসেl যা হলো মূলতঃ তিন প্রকার -
১> প্রাকৃত বা শারীরিক
২> মন সম্পর্কিত বা মানসিক
৩> আত্মা সম্পর্কিত বা আত্মিক
সুফিরা মনে করেন এই তিন প্রকার ভোগের শেষ না হলে তাঁকে বা নিজের পরম সত্ত্বা কে কখনই সম্পূর্ণ ভাবে উপলব্ধি করা যায় নাl বস্তুতঃ এই বিশ্বের যিনি ভালো মন্দের সঠিক বিচার করতে পারেন, তিনিই কেবল আত্ম গুরুর সন্ধানে ধাবিত হনl এই ভাবধারা কে কেন্দ্র করেই আউল-বাউলের গানে গুরু কে মুর্শিদ; এবং মরমিয়া সুফি ভাবনায় এক অন্তর্বর্তী স্থানকে "বরজোক" বলা হয়েছে বারবারl গুরু সান্নিধ্যে এসে আউল বাউল যখন পার্থিব সব চিন্তা থেকে মুক্তি লাভ করেন এবং মুরশিদ বা গুরুর সান্নিধ্যে এসে তাঁর প্রকৃত সত্ত্বাটি যখন সে সঠিক হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন ---তখন সেই স্বরূপটি তার নিজের কাছেই বর্ণনার অতীতl তিনটে মনের অবস্থা বা দরজা পেড়িয়ে আসতে পারলেই যা লাভ হয় তা হল 'তুড়ীয়'- সুখl কিন্তু বলা যতো সহজ তা বাস্তবে সহজ নয় মোটেইl কারণ মনের তিনটে দরজার প্রত্যেকটি অন্তর্দেশেই কার্যতঃ একটি করে "বরজোক" বা খিল আটকে আছে l অর্থাত 'সুসুপ্তি' কার্যতঃ যাকে সরিয়ে বা অতিক্রম করে পরবর্তী অবস্থায় পৌঁছতে হবেl
" আপনে সে মুরশিদ হইয়া
জীবকে শিক্ষা দিতেছে
আপনা ভজন করে বিতরণ
জীব তারাইবার ফাঁদ পাইতাছে l
মানুষ গুরু কল্পতরু মনে যারো খিল পইড়াছে
ফকির লালন বলে কিসের অভাব তার
দোজখ তার তরে হারাম হইয়াছে ll "
তাহলে জিজ্ঞাস্য হলো দোজখ কার কাছে হারাম হয় l মৃত্যু কার কাছে মৃত্যুহীন হয় ? যে মৃত্যুঞ্জয় তার কাছে আবার কিসের অভাব ? লালন ফকিরের গান লোকায়ত জীবন কে সেই শিক্ষাই দিয়েছে l আত্মোপলব্ধির পথের এই প্রধান কাঁটা থেকে যে অব্যহতি লাভ করতে পারে সেই তো 'অজড়' আর অমর l সেই অমরত্ব লাভের জন্যই তো সঙ্কটমোচন কে আনতে হয়েছিল 'বিশল্যকরণী' l বিশল্যকরণী সম্ভবত বাস্তবে কোনও ভেষজ ওষুধ নয় , এ হলো আত্মভেদের ভাবনা হতে অব্যহতি লাভের উপায় l
আউল বাউলের গানে ত্রিবেণী বা ত্রিপানি শব্দটি বারবার এসেছে l আরবী শব্দ 'বরজোক' আর লোকবৃত্তের 'ত্রিবেণী-সঙ্গম' বস্তুতঃ একই ভাবনার হয়তো ভিন্নরূপ l মনের তিনটে ভাবধারার সেখানে একত্রে সন্মেলন হয়েছে l চলুন আবার তবে ডুব দেয়া যাক অন্য এক গানের অতলে l
" শ্রীরূপ নদীটি অতি চমৎকার l
তোরে বলি সার , হৃদে কর বিচার ,
দেখে ভব-গর্ত হলি মত্ত
আস্বাদনে কি বুঝলি তার ll
বিষম সে ত্রিপানি নদী --
ত্রিকোন যন্ত্র পাতালভেদী
মধ্যে আছে মহা ঔষধি l
..... ....... ......
ওঠে খুরনো জল ,যদি না থাকে গুরুবল
তবেই খুলবে মণিকোঠা , বাধবে ল্যাঠা
সেখানে খুব খবরদার Il
শ্রীরূপ নদীটি অতি চমৎকার ....
নদীর ভিতর তলায় গরল-সুধা
এক পাত্রেতে রহে সদা ,
সুধা খেলে যায় ভব-ক্ষুধা
গরল পান করে প্রাণেতে মরে ,
ছুটে সেই উল্টো কল নেমেছে ঢল
শিখতে হবে আপ্তসার Il
শ্রীরূপ নদীটি অতি চমৎকার ....
ত্রিপানি-তে তিনটে ধারা
নি-ধারা'তে আছে ধরা, ঠিক রেখো নয়নের তারা l
পলকে প্রলয় , হয়ে যাবি ক্ষয় ,
স্থূলে মূলে সকল ভুলে , করতে হবে হাহাকার ll
শ্রীরূপ নদীটি অতি চমৎকার
বাঁকা নদীর পিছল ঘাটে
যেতে হবে নিষ্কপটে , সাধু বাক্য ধরে এঁটে
তিন দিন বারূণী , তাইতে নাইতে শুনি
নাইলে সে মহাযোগে সম অনুরাগে
কাম-কুম্ভীর কি করবে তার ll
শ্রীরূপ নদীটি অতি চমৎকার ....
রসিক ডুবুরী হলে , ডুব দিয়ে সেই গভীর জলে
সুফি মতে সে অনায়াসে রত্ন-ধন তোলে
গোঁসাই গোবিন কয় , কুবীর চাঁদের জয়
ভেবে গোপাল মূর্খ , পায়রে দুঃখ ,
দিনে দেখে আঁধার Il
মনের তিনটে অবস্থাকে বেদান্তে বলা হয়েছে ' ভূ -ভূর্ব-স্ব ' l সুফী মতে এদের রূপান্তর হলো 'আলমেনাছুৎ'--'আলমে-মালকুৎ'--ও 'আলমে-লাহুৎ' এই ত্রিলোক বা ত্রিধারায় প্রাণের বর্ণনা পাওয়া যায় আরও একটি বাউল গানে লোককবি রশীদ-শা'র গানে চলুন এবার তবে সাঁতার দিয়ে নিই
" স্বরূপ সাগরে ডুবারু যে হয় ,
করিয়াছে সে রূপের নির্ণয় ;
আধ্যাত্মিক জগতে রূপের উত্পত্তি
স্বরূপ সাগর সে দেশ --'লাহুতি'
আধ্যাত্মিক জগত 'আলমে--মালকুৎ'
এ জড় জগত 'আল--মেনাছুৎ' ll "
অন্য দিকে নরহরি গোঁসাই এর গান শুনবেন ? তিনি গাইছেন এইভাবে
" রূপ-সায়রে তিন ধারা ,
বুঝতে পারে রসিক যারা
সদাই রূপে দেয় পাহারা ,
নিরিখ দিয়ে সেই লহর l
প্রথমে গুণেরই মানুষ
ভক্তি করে রাখ ধরে হুঁশ ;
দ্বিতীয়াতে হোস না বেহুঁশ ,
নির্বিকারে তাঁরে স্মর l
পূর্ণ-ঈশ্বর উদয় তিনে
নিষ্কাম যাজন সেই দিনে ,
নিরিখ-দিয়ে সেইখানে
জোয়ার এলে সন্ধান করো ll "
ভাগবত মতে মনের এই তিনটে ধারাকে , আধ্যাত্মপ্রেমের তিনটে শ্রেণীতে বিভাগ করা হয়েছে --সেগুলি হলো 'সাধারণী,'-'সামঞ্জসা'--ও 'সমর্থা'...অর্থাত লোকায়ত দর্শনে যা পশুসুলভ ও স্বার্থপর কামনা বাসনার জগত তাই হলো 'সাধারণী' l অন্যদিকে মানবতাধর্মী পারস্পরিক আকর্ষণ ও ভালবাসা হলো --'সামঞ্জসা' l এবং দেব-দুর্লভ নিঃস্বার্থ প্রেম হলো --'সমর্থা'র লৌকিক স্বরূপ l বাউল কবি রামলাল গোস্বামী এই ত্রিধারা প্রেমের বিশ্লেষণে গেয়েছেন ,আরও এক তত্ত্বগান l আসুন শুনে নিই l
" বিরজার প্রেম নদীতে , যে জলে ডুবেছে
ও সে অটল মানুষ রতন পেয়েছে I
'সাধারণী' আর 'সামঞ্জসা' আর 'সমর্থা' প্রেম কুটিল বড়
নাই তার ভরসা ,
ইহার তিন মানুষের করিলে আশা
হবে তার নিরাশা l
জেনে লও এক মানুষ বসে আছে ll "
তারই অন্য গানে আবার ভাসে যেন বেদান্তের অনুনাদ----
" তিন মানুষের খেলা রে মন
কারে বা করো অন্বেষণ
তিন মানুষের তিন রূপ--করণ
সদগুরু মন আগে ধরো l
জন্ম-দ্বার আর মৃত্যু-দ্বারে
আর এক দ্বার আর কইবো কারে ;
মৃত্যুর-দ্বারে যে জন্মাইতে পারে
তার সাধন হবে অমর ll "
মৃত্যুর দ্বারে যে জন্মায় তার আবার মরণ হয় নাকি ? সেই তো মৃত্যুঞ্জয় যা হলো বেদান্তের মর্মবাণীl মরমিয়া ভাবনায় এই ভব-সাগরে গুরুরুপী মীন আপন আনন্দে খেলা করে যায়l সেই গুরুকে কান্ডারী করে 'ভবসাগর' কে পারি দিতে হবে 'অচিন-রতন' পাবার আশায়l এখানেও যেন সেই বেদান্তের প্রতিচ্ছায়াl ভবসাগর / ভবসিন্ধু / রূপসাগর ...এই সব শব্দের অন্তরালে সুফী কবিদের ভাবনায় যে শব্দটি উঠে আসে তাকে বলে 'আবে--হায়াৎ'---অর্থাত জীবন নদী , লালন গাইছেন এইভাবে :..
" আব--হায়াৎ নাম গঙ্গা সে যে
সংক্ষেপে কেউ দেখো বুঝে ,
জগতজোড়া মীন সেই গাঙ্গে
খেলছে খেলা পরম রঙ্গে
লালন বলে জল শুকালে
মীন মীশিবে হাওয়ায় ---"
এবার হীরুচাঁদের গানে শুনুন গুরুরুপী মীনের আপন কথাl এবারেও স্মরণে রাখুন 'বরজোক' হলো অন্তর্বর্তী স্থান ---'কালামোল্লা' অর্থাত ভগবানের কথা l 'ত্রিপিন' অর্থাত্ তিনের সঙ্গম বা ত্রিবেনী l 'পাঞ্জ' --অর্থাত পঞ্চ-রিপুর সমাবেশ l
" মূল--সাধন করো মালেক চিনে l
মীনরুপী সাঁই গভীরজলে
যোগ-সাধন করো বরজোক ধ্যানে l
মীন আল্লা নিজ নাম ধরে ,
কালামোল্লায় দেখো জেনে ,
আছে নির্মল মহল মনিপুরে
খেলেছে খেলা ঘাট ত্রিপিণে I
সে দরিয়ার মাঝে তরী ,
হাওয়া বারি আতশ পুরী ,
কৃপানন্দ আদরিনী ,
বসে তথা মধুপানে l
মীনের খবর জীব কি জানে ,
মীন ধরে অনেক সন্ধানে ,
হীরুচাঁদ কয় ভাব না জেনে ,
পাঞ্জ মলি শেউলি টেনে ll "
যেমন ভবসাগর পারি দেবার জন্য আবশ্যিক হয় কান্ডারীর সহায়তা ,তেমনি ভবনদী পার হওয়ার জন্য চাই মনকে কঠোর সংযমে আবদ্ধ করা l এই সাধনকথার নির্দেশ রয়েছে গোস্বামী রামলালের গানে l এবারে সেই কথা শুনুন ...
" ভবসিন্ধু সেতুবন্ধ করে হওরে পার
গুরু--উপাসনা ছাড়া পার হওয়া
সত্যিই হবে ভার Il
'রেচক', 'পুরক', 'স্তম্ভন', দিয়ে নদী করো বন্ধন
প্রেমভক্তি খুঁটি তার কর হে স্থাপন ,
সে নদী অত্যন্ত গভীর , আছে কামরুপী কুম্ভীর
বাঁধলে সাঁকো সে হবে ভেক , গুপ্ত হবে নীর ,...
সেথায় আছে লোভ-রুপী রায় , ক্রোধ-রূপ কাঁটা আর l
গুরু উপাসনা ছাড়া পার হওয়া হবে ভার ...."
জীবনপথে অথবা সাধন অনুশীলনে আসে নানান প্রসঙ্গl এই প্রসঙ্গ অনুষঙ্গের মাধ্যমেই হয় পরমের সঙ্গলাভl অসীমের সন্ধানে সাধক তার সীমার মাধ্যমেই সেই অচিন-এর পরিচয় লাভ করতে করতে এগিয়ে চলেl এই ভাবেই যুগল সঙ্গের ধরাবাহিকতা এগিয়ে চলে নানা অনুষঙ্গ চর্চার মাধ্যমে সেই অসীম নিঃসঙ্গ অথবা একক সঙ্গের আশায়l
" ভব পারে যদি রে অবুঝ মন
আমার মন-রে রসনা
দিন থাকিতে মুরশিদ ধরে
সাধন ভজন কেন করলে না ...
দেহের বাদী রিপু ছয়জন
আগে মন বস করো তারে ,
ঐ নাম ভুললে পরে পড়বি ফেরে
প্রাণ যাবে কাম হীরার ধার-এ
ও দারমালি চোর ; ওরে গাঁজা খোর
আর কত বুঝাবো তোরে
তাই পাগল কানাই কয় ---ওরে আমার অবুঝ মন
---ও রে রসনা "
0 comments: