বইঘর - গ্রন্থকীট
Posted in বইঘরবইয়ের খবর
গ্রন্থকীট
বইয়ের নাম -কলাবতী কথা
প্রকাশক - আনন্দ
লেখিকা- ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ হয় শারদীয় সানন্দাতে। আর তারপরই বই আকারে প্রকাশ পায় এই নভেলাটি। 'কলাবতী কথা'। লেখিকা ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়, নিয়মিত লেখায় আছেন। তাঁর বিভিন্ন গল্প, রম্যরচনা, ভ্রমণ সাহিত্য, এবং গবেষণাধর্মী লেখা, বাণিজ্যিক ও সবুজপত্র, দুয়েতেই দেখতে পাওয়া যায়। এই উপন্যাসটি প্রধানত একটি আদিবাসী মেয়ের পাওয়া না পাওয়ার কাহিনী হিসেবে আঁকা হলেও উপন্যাসের মূল চরিত্র হলো আদিবাসী সমাজের বহুবর্ষব্যাপী অত্যাচার ও অবিচারের শিকার হয়ে থাকা এবং তা থেকে একটি উত্তরণ। উড্ডীন হওয়া সেই স্বপ্নে, যা দেখতে চাওয়া তাদের কাছে অপরাধের সমান । অথচ, আমরা অস্বীকার করলেও সত্যিটা মিথ্যে হয়না। বাংলার প্রাচীন সভ্যতা-সংস্কৃতি-সঙ্গীত-শিল্পকলা এইসব ভূমিপুত্র ও ভূমিকন্যাদের দান।
এদের অস্পৃশ্য দলিত বলে দেগে দেয় ব্রাহ্মণ্য ধর্মের নিষ্ঠুর ক্ষমতার ব্যবহার। আমরা ভুলতে বসেছি যে, নাগরিক সভ্যতায় মুখ- ঢেকে- রাখা আমরা এক অতি সম্পন্ন সভ্যতার উত্তরাধিকার বহন করি।
গল্প শুরু হয় লতু বা লতিকা নামক প্রান্তিক মানুষটির জীবন সংগ্রাম দিয়ে। যার পুত্রবধূ কনক একজন শিল্পী। পটচিত্র আঁকায় পারদর্শী সে। আস্তে আস্তে সে শিখে নেয় পটের সঙ্গে পটকথা গাওয়া। এও যেন তার সহজাত।
"মনসা জগতে গৌরী জয় বিষহরি, পদ্মফুলে জন্ম মা তোর মনসা কুমারী"
কনক গিয়েছে কুরুম্ভেরায়। মেলায় বাংলার গ্রামীণ শিল্পের বেসাতি। সেই বেসাতিতে আদিবাসী মেয়ে কলাবতীও পণ্য হয়ে যায়। কনকের অসীম সাহস আমরা দেখতে পাই।
কলাবতীর নিজের ছোট্ট আকাশ থেকে বিশ্বময় উড়ে যাওয়ার গল্প কলাবতী কথা।
এই প্রথম যেন একটি মেয়ে সামাজিক অনুশাসনকে তুচ্ছ করে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে বিকশিত হতে দেখল। নারীর যৌনতার অধিকারও সেখানে ডানা মেলল।
এই যাপনে এক থেকে আরেক নারীর আশ্রয় শেষ পর্যন্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় মুক্তির। পুরুষের ভূমিকা অনেকটা সাইডকিকের মতো।
কলাবতী একাই এক ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের হয়ে প্রতিষ্ঠা কেড়ে আনে প্রথম বিশ্ব থেকে।
এ উপন্যাস উদযাপনের। নারীর অধিকার, শিল্পের অধিকার, অর্থনৈতিক ভারসাম্যের অধিকার, আর সর্বশেষে আপনমনে বাঁচার অধিকারের।
*******************************
বইয়ের নাম – বাজার সরকারের ডায়েরি
লেখক- বিজনকুমার ঘোষ
প্রকাশক – লালমাটি
বিনিময় মূল্য – ১০০ টাকা।
১৯৯০ এর ৩১ ডিসেম্বর থেকে প্রতি সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকা তে প্রকাশিত হতো ‘বাজার সরকারের ডায়েরি।’ এর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল মানুষ দেখা। বাজারে-হাটে বিচিত্র মানুষ দর্শন। অথবা, বাজার ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়া। আর, একই সঙ্গে বাজারের খবরও দিয়ে চলা। ঠাকুরনগরের ফুলবাজার। বনগাঁ লাইনে। সেখানকার ফুলের দামের খবর পাবেন। বেহালার ঘোলসাহাপুর বাজারের খবর দেওয়ার আগে বাজার সরকার আপনাকে জানাবেন নেশার বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের আন্দোলনের কথা। সত্যেন বোস, স্বামীজি, ঈশ্বরচন্দ্র, নকশালবাড়ি, শঙ্খচূড় ও বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পাগল... কী নেই বাজার সরকারের থলিতে? লেখক পরিষ্কার জানাচ্ছেন, ‘একটা সময় ছিল যখন খদ্দেরকে লক্ষ্মী বলা হতো। সে সব দিন চলে গেছে। ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ যখন সমাজের সর্ব স্তরে কর্পূরের মতো উবে যাবার অপেক্ষায়, তখন বিকিকিনির হাটেই বা তা কেন টিকে থাকবে?’ ১৯৯২ সালে লেখা লাইনগুলো আজও কী প্রাসঙ্গিক, তাই না? কেরানিতন্ত্রের আস্ফালন আমাদের সকলেরই খুব চেনা। বাজার সরকার এ বিষয়ে একটা গল্প বলেছেন। চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি এক সময়ের কথা। সাদামাটা চেহারার এক বৃদ্ধ রেশন কার্ডের অফিসের কাউন্টারে গিয়ে একটা ফর্ম জমা দিলেন। ছোকরা কেরানির জিভ চুলবুলিয়ে উঠল।
- বলি বয়েস তো অনেক হলো, ‘শ্রী’ বানানটাও ইংরিজিতে শুদ্ধ করে লিখতে শেখেননি?
- আজ্ঞে, ওটা ‘শ্রী’ নয়, স্যর। আমার নাম স্যর যদুনাথ সরকার।
অলমিতি বিস্তারেণ। বইটা কিনে পড়ে ফেলুন।
************************************
বইয়ের নাম – সুবর্ণরেখা
কবি- শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশক – ধানসিড়িটির তীরে
বিনিময় মূল্য – ১০০ টাকা।
কবিতায় সমাহিত এই বইয়ের কবি। কবিতার ডাকে রোজ মরার ছাইয়ের গাদা থেকে ফিনিক্স হয়ে তিনি ডানা মেলেন আকাশে।
তোমার জন্য আকাশ জমিন সব একাকার,
তোমার জন্য ডানায় অচিন ওড়ার নেশা...
তোমার জন্য কন্ঠীবদল বাউল ফকির,
তোমার জন্য হারিয়ে যাওয়া ধোঁয়ায় মেশা।
কবিতাকে কবি সব দিতে পারেন। কবিতাই প্রেম হয়ে ওঠে।
খুনসুটি আর রোজনামচার
চলতি খাতা,
আখরমালার জমাট বাঁধন
তোমায় দিলাম
এই জীবনের পুঞ্জীভূত
হাসির উজান,
ইতিহাসের হলুদ কাগজ
তোমায় দিলাম।
এই হলুদ কাগজটা দিয়েছেন বলেই কবি জানেন যে জঙ্গলমহলের টিয়ারা বড় কষ্টে আছে। লাশ হওয়া কন্যের জন্য গলা ফাটানো পৃথিবী যে আদতে বদলাবে না, সে কথা বোঝেন। বারুদের গন্ধ বুকে নেওয়া শিশুটির আঁতের কথা অনুভব করেন। তবু, শেষ পর্যন্ত কবি নতজানু অনাবিল জীবনের সখ্যের কাছে।
বন্ধু শুধু সাড়া দেয় বন্ধুত্বের মনকাড়া গানে
তখন হঠাৎ হাজার সূর্যের আলো ক্রমশ উদ্ভাস
সহসা এ পৃথিবীকে নির্দ্বিধায় বেশি করে ভালবাসা যায়।
অতি অবশ্য সংগ্রহে রাখুন এই বই।
0 comments: