ধারাবাহিক - রঞ্জন রায়
Posted in ধারাবাহিকষষ্ঠ পর্ব
রত্নার আর টি আই এর কোচ্চেনের ঠেলায় বিজলি বিভাগের লোক গিয়ে ফ্ল্যাটের লোকজনকে আর বিল্ডারকে বলে-- তোমাদের আর কত দেখব? এবার আমার চাকরি যাবে। ওই রায়পুর থেকে আসা বাঙালী ম্যাডামটি এবার আমার চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে দেখা করে জানতে চেয়েছে-- কর্পোরেশনের মর্টগেজ ফ্ল্যাটে কি করে আপনার বিভাগ মিটার সাপ্লাই দিয়েছে? ভবিষ্যতে আপনাকেও পার্টি বানিয়ে কেস করতে পারি।
খবর আসে বিল্ডারের গ্রুপে ফাটল । মুখার্জি ও সানি স্যান্ডো সি আই ডি অফিসারের কাছে বিবৃতি দিয়েছে যে কোন গুলি চলেনি। কেউ ওদের সঙ্গে ঝগড়া করেনি!
হরিদাস পাল বাউল নাচার চেষ্টা করে।"মেনকা মাথায় দিল ঘোমটা''।
তাহলে আর্মস্ অ্যাক্ট এর এফ আই আর এমনিতেই খারিজ হবে? বাকি রইল-- হরিজন অট্রোসিটি।
হরিজন থানার থেকে জানা যায় যে ওই রিপোর্টটা জুনিয়র অফিসার রাজেন্দ্রর লেখা। বিল্ডারের মুসাবিদা অনুযায়ী। কিন্তু অফিসার বলেন-- আমি সো-কল্ড পীড়িত হরিজন ইলেক্ট্রিশিয়ান এর সঙ্গে দেখা করতে চাই। ওকে দুসপ্তাহ ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ৫০ কিমি দূরের ওর গাঁয়েও না। শেষে পাওয়া গেল বিল্ডারের পত্নীর স্কুলে, সেখানেই চাকরি দিয়ে রাখা হয়েছে।
ইতিমধ্যে আকাশে কালো মেঘ। বিদ্রোহী যুক্তফ্রন্টেও ফাটল দেখা দেয়।
একদিন রেণু এসে রত্নার বাড়ি চড়াও হয়। -- হল তো? কতদিন ধরে বলছি যে একটু চুপচাপ থাকুন ! আগে আমরা হরিজন থানার এফ আই আর ও আর্মস্ অ্যাক্টের ফাইল বন্ধ করাই, তারপর না হয় অ্যাটাক করবেন। আপনার লাগাতার বিজলী বিভাগের, কর্পোরেশনের ওপর চাপসৃষ্টিতে কোণঠাসা হয়ে বিল্ডার দুই মন্ত্রীর প্রেশার তৈরী করেছে। আজ আমাকে ডিজি ডেকে বকেছেন-- বলেছেন, "যা হবার কোর্টেই হবে, আমি আর হেল্প করতে পারবো না। আমিও চাকর। রোজ রোজ এই প্রেশার!"
এবার আমাদের সবাইকেই জামানতের চেষ্টা করতে হবে। নইলে আমরা অ্যারেস্ট হয়ে যেতে পারি। তবে উকিলকে পয়সা দেবার বদলে পুলিশকে পয়সা খাইয়ে পার্মানেন্ট খারিজ করার চেষ্টা করাই প্র্যাকটিক্যাল হবে।
হরিদাস পাল মাথা নাড়ে। পরে রত্নাকে বলে আমার উকিলের সঙ্গে কথা বলেছি। খুব খারাপ হলে একদিন বা দু'দিন জেল কাস্টডিতে তোমাকে থাকতে হতে পারে। তার মধ্যে জামিন হয়ে যাবে। দুর্বল কেস , উড়ে যাবে। তুমি মেন্টালি তৈরি আছ? মাটিতে শুতে হবে, পাখা নেই। লপসি দেবে। পায়খানা ভাল নয়।
-- হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি অ্যাডজাস্ট করে নেব। পরিস্কার আন্ডার গারমেন্ট পৌঁছে দিও, তাতেই হবে।
কিন্তু রত্না মেয়েদের জানায়। মেয়েরা রঞ্জনকে ঝাড় দেয়।
-- মায়ের বেলায় কত ক্যাজুয়ালি অ্যারেস্ট হবার কথা বল্লে! আমার মা একদিনের জন্যেও কেন জেলে যাবে? কই, তোমার নিজের বেলায়ও কি তুমি এতটা ক্যাজুয়াল ভাবে ভাব?
রঞ্জন হতভম্ব। সাফাই দেয়।-- এমনি কিছু নয়। আমি আর তোর মা সবসময় সবচেয়ে খারাপ কি হতে পারে ভেবে নেই। তখন কি করবো ঠিক করে নিয়ে প্ল্যান A, B,C ভেবে নেই। কারণ সব ফ্যাক্টর আমাদের হাতে থাকে না।প্রগ্রেস আমাদের বাঁধা ছকে হয় না। ফলে কখনও হিসেব না মিললে যেন হতাশ না হই বা রাস্তায় বসে না কাঁদি, সেই জন্যে। তাহলেই লম্বা সময় লড়াই \করা যায়।
মেয়ে মানে না।-- উঁহু, trying to get smart!
-- আরে, আমি অ্যারেস্ট হলে স্ট্র্যাটেজিক ডিব্যাকল্ হবে। অফিস আমাকে নির্দোষ জেনেও সাসপেন্ড করতে বাধ্য হবে। মাইনে আদ্দেক হবে। রিটায়ার করা অব্দি ইচ্ছে করে কেসের ফয়সালা করা হবে না। ফলে টার্মিনাল বেনিফিট সব আটকে থাকবে। তখন ডাল-ভাতের জোগাড় করব না লড়ব? সবাই পরামর্শ দেবে, ঢের হয়েছে, এবার একটা মিটমাট করে ফেল। বলতো আমরা চেষ্টা করি। বুঝলি? বিল্ডার আমাদের ঠিক এই জায়গাটায় আনতে চাইছে।
ইতিমধ্যে রঞ্জনদের তিণোমূল-মাওবাদী-পকাবু জোটে ফাটল বেড়ে গেছে।
রত্নাকে হরিয়ানী মেয়ে রেণুবালা এসে চেঁচায়।
--সব আপনার জন্যে হল। কে আপনাকে সদ্দারি করতে বলেছে? বলছিলাম কিছুদিন শান্ত হয়ে থাকুন। ধীরে ধীরে আর্মস্ অ্যাক্ট ও হরিজন অট্রোসিটি অ্যাক্টের মামলা দুটো খতম করা হবে। বিলাসপুরের পুলিশি বড়কত্তারা বদলি হয়ে যাচ্ছেন। তদ্দিন ধৈর্য্য ধরুন। তা না , আপনি গিয়ে বিজলীবিভাগ, মিউনিসিপ্যালিটি সব জায়গায় হামলা করে দিয়েছেন। বিল্ডার ভয় পেয়ে সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের জেলে পাঠাতে চেষ্টা করছে, উঠে পড়ে লেগেছে।
রত্না রেগে কাঁই।
-- ওরে, তোরা আসার আগে থেকেই আমি বিল্ডারের সঙ্গে আইনী পথে লড়ছি। কেউ আমার গায়ে হাত দিতে বা উল্টাপাল্টা বলতে সাহস করে নি। তোরা "'হামারা হরিয়ানা মেঁ অ্যায়্সা হোতা হ্যায়'' আর ""ইঁহাকে লোগ বেকার হ্যায়'' -এইসব বোলে লোকদের অ্যান্টাগোনইজ করেছিস।
আর ওদের ভয় দেখাতে টেস্ট কার্ট্রিজ দিয়ে হাওয়ায় গুলি ছুঁড়তে কে বলেছিল? বারণ করলাম , তবু তুই নীচের ড্রাইভারের পরিবারের বিছানায় নোংরা জল ফেললি, তাও আমার ব্যালকনি থেকে। আর মুখার্জির ছেলের নাগরা জুতোর মধ্যে কাঁচের গুঁড়ো ভরে দিলি। অন্যদের মানুষ মনে করিস না, না?
এবার তোদের লড়াই তোরা আলাদা লড়, আমরা আমাদের। তোদের সাহায্য না পেলেও চলবে। হ্যাঁ, ওই ডাকাতির মামলাটায় সাক্ষী দিয়ে দেব। কিন্তু আমরা তোদের কোন সাহায্য নেব না। মাথা খারাপ করে দিলি। এত যে লাফাচ্ছিলি, বলি কিসের জোরে? অ্যাঁ? তুই ডিভোর্স নিয়েছিস। প্রবীন সারদানা তো নেয় নি। কাল যদি প্রবীণের বৌ তোদের ওপর অ্যাডাল্টারির চার্জ লাগায় তো সব লড়াই ভুলে জেলে যাবি। যা, বাড়ি যা!
রাত্তিরে রঞ্জনের জুনিয়র কলিগের ( প্রাক্তন এস পির ছেলে) ফোন আসে।
-- দাদা! দিল্লি থেকে আপনার খোঁকিদের ফোন এসেছিল-- আংকল! আমার মা জেলে যাবে, বাঁচান। বাবা তো মাকে জেলে যাবার জন্যে কনভিন্সড করে ফেলেছে। আপনার কাজিন তো বিলাসপুরে মন্ত্রীর ডানহাত, প্লাস ডেপুটি অ্যাডভোকেট জেনারেল। কিছু করুন, প্লীজ।
দাদা, আমার খুব খারাপ লেগেছে। ভাই আশীষ শুক্লা কে ফোন করে বলেছি।-- রত্না রায় আমার ভাবীজি, ওঁর যেন কিছু নাহয়।
--- তোর ভাবীজি আমারও ভাবীজি! খালি ওনাকে বল যেন ওই হরিয়ানী দম্পতির থেকে দূরে থাকে। ওরা ফ্রড। ওদের অনেক দুর্গতি হবে, তোর ভাবীর কিস্যু হবে না।
রঞ্জনের বিশেষ অঙ্গ জ্বলে যায়। রত্নার ওপর চ্যাঁচ্যায়।
-- কে তোমাকে বলেছে মেয়েদের দিল্লিতে ফোন করে এইসব বলে খামোকা ভয় দেখাতে? যতঅণ ফাইলগুলো রায়পুরে আছে ততক্ষণ আমাদের ওপর কোন অ্যাকশন হতে পারে না। কানে হাত না দিয়েই চিলের পেছনে দৌড়চ্ছ?
রঞ্জনের কাছে খবর আসে যে ওই হরিয়ানা পরিবারটি ছত্তিশগড়ে ক্ষেতিতে লাভজনক বিনিয়োগ করবে বলে হরিয়ানার ক্যয়্থাল ( যেখানে আজকাল খপ্ পঞ্চায়েতের সম্মানহত্যার ফতোয়া নিয়ে খুব হৈচৈ হচ্ছে) থেকে অনেকের পয়সা নিয়ে এসেছে। পয়সা ফেঁসে গেছে। ফলে হরিয়ানা থেকেই যাঁরা পয়সা ফেরৎ চাইছেন তাদের চাপ বাড়ছে।
ইতিমধ্যে বিলাসপুরের ট্রান্সপোর্ট মার্চেন্ট জৈনসাহেবের সঙ্গে রেণুদের ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। ওনার রায়পুরের পুলিশ হাই কম্যান্ডের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ।
রেণু ওনাকে নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা বলে।
লাভ হয় গৃহমন্ত্রী ননকীরাম কঁওরের সঙ্গে কথা বলে। উনি ফাইল পত্তর দেখে সোজা ফোন উঠিয়ে বিলাসপুরের এস পি কে ধমকে দিলেন। ঠিক হল আগে সি আইডি দিয়ে আর্মস্ অ্যাকট ও হরিজন অ্যাক্টের তদন্ত পুরো হোক। ফলে রেণুরা খবর পাঠায় যে আপাতত: গ্রেফতারের সম্ভাবনা নেই। ডি এস পি রত্না ও অন্য সবার আলাদা করে স্টেটমেন্ট নেবেন।
এক বিকেলে রঞ্জন ফোন পেল।
-- আপনার স্ত্রী রত্না রায়কে বলুন হেড কোয়ার্টারে আধঘন্টার মধ্যে পৌঁছে স্টেটমেন্ট দিতে।
রত্না পড়িমরি করে হরিজন থানার ডি এস পি'র অফিস-কাম-কোয়ার্টারে পৌঁছয়। উৎসাহের সঙ্গে বয়ান দেয়।
কিন্তু এ কোন ডি এস পি! লোকটা তো সেই--- নামেও। চেহারাতেও।
তবে কথাবার্তা অমন কেন? বেশ ত্যাড়াত্যাড়া?
রত্না যতই বলে--হরিজন অট্রোসিটি অ্যাক্ট শুধু হরিজনের গায়ে হাত তুললে বা হরিজন /আদিবাসীকে গালাগাল দিলেই অ্যাপ্লিকেবল্ হয় না, এর জন্যে পাব্লিক প্লেসে ঘটনাটি ঘটা এবং জাত তুলে অপমান করা মোটিভ হওয়ার প্রাইমা ফেসি প্রমাণ হওয়া চাই; উনি বলেন -ওসব আর্গুমেন্ট। আপনি খালি ফ্যাক্ট বলুন।
বিল্ডারের বউ তো বলেছে আপনিই নষ্টের গোড়া। আপনি সবাইকে বিল্ডারের বিরুদ্ধে বুদ্ধি দেন, খুব কানুন ঝাড়েন আর ইংরেজি বলে অফিসারদের ইম্প্রেস করার চেষ্টা করেন।
আপনার আসল উদ্দেশ্য কি?
রত্না হতভম্ব! তবু চেষ্টা করে ঘটনাটির পৃষ্ঠভূমি, সিকোয়েন্স, ডকুমেন্ট গুছিয়ে প্রেজেন্ট করতে।
একটু পরে বুঝতে পারে উনি মন দিয়ে শুনছেন না। আঁকিবুকি কাটছেন।
চলে আসার আগে রত্না শুনতে পায়--- রিপোর্ট জমা করতে একটু সময় লাগবে। আমার দুর্গ-ভিলাই বর্ডারে বাড়ি তৈরি হচ্ছে, ছুটি নিয়ে কাজের তদারক করতে যাচ্ছি। টাকা কম পড়ছে, একটু জোগাড় করতে হবে।
রঞ্জন সবটা শুনে গম্ভীর হয়। বিলাসপুর গিয়ে উকিল রাজেশের সঙ্গে কয়েকঘন্টা কাটায়।
রাজেশ জানায়-- ভাবীর ওপর এই কেস প্রাইমা ফেসি দাঁড়ায় না। ওদের বানানো গল্পকে সত্যি ধরলেও না,। তবে ওরা বদমাইসিটা করবে ছুটির আগের দিন চালান পুট আপ করে অন্দর করাতে যাতে বেইলের আর্গুমেন্ট অন্তত: আটচল্লিশ ঘন্টার আগে না হতে পারে।
আর আর্মস্ অ্যাক্ট তো সবচেয়ে দুর্বল কেস।
তথাকথিত গুলি চালানোর গল্পকে মেনে নিলেও মোদ্দা ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়? না, গুলি চালানোর সময় বৌদি ওখানে ছিলেন না। বৌদির হাতে কোন বন্দুক ছিল না।
গুলি চালিয়ে পালানোর সময় একজন সিঁড়িতে পা হড়কে পড়ে যায়। আর বৌদি তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে নেমে এসে তাকে হাত ধরে টেনে তোলেন।
কিন্তু বন্দুক থানায় জমা পড়ে তথাকথিত ""আক্রান্ত'' পার্টির লীডার মি: মূর্তির হাত থেকে ঘটনার পরের দিন!
তাহলে আন-অথরাইজড্ ভাবে অন্যের লাইসেন্সওলা ওই বন্দুক পুরো একদিন শিকায়তকর্তার কাছেই ছিল? বলিহারি! বল্লিহারি!
এরপর একদিন রায়পুরের একই অফিস থেকে ধমকানো সুরে একটি ফোন পেয়ে রত্না ওখানে হাজির হলে ওকে একটি নোটিস ধরিয়ে দেয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে আগামী অমুক তারিখে রত্না যেন বিলাসপুরে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির হয়। হরিজন অত্যাচার নিবারণ অধিনিয়ম অনুসারে বিল্ডারের হরিজন ইলেক্ট্রিসিয়ানকে গালিগালাজ-মারপিটের ঘটনায় রত্না রায়ের সক্রিয় ভূমিকা ডি এস পি(হরিজন থানা)র প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত।
তাই পুলিশ সেদিন কোর্টে ওদের তদন্ত রিপোর্ট ও চালান পেশ করবে। রত্না যেন হাজির থাকেন।
রঞ্জন যেন নিজেকে সান্ত্বনা দেয়।
-- এটাই ওদের হাতে শেষ অস্ত্র। তুমি একবার জামিন পেয়ে বাইরে এলে আর কি করতে পারবে? কেস তো ধোপে টিঁকবে না। আমি জামিন এইসব দেখছি। তুমি ওইদিন সকাল সকাল বিলাসপুরে উকিল রাজেশের বাড়ি যাও। আমি কথা বলে রেখেছি।
সেই হিসেবে নির্দিষ্ট দিনে রত্না তৈরি হয় বিলাসপুর যাবে বলে; ব্যাগে গুছিয়ে নেয় দু'দিনের মত জামাকাপড়।-- কী জানি, যদি দু'দিন জেল কাস্টডিতে থাকতে হয়।
রঞ্জন যাবে বিকেলে, উকিলের ফোন পাবার পর। ব্যাংকে রিলিভার নেই, ও ছুটি পাচ্ছে না।
সকাল সাতটায় ভারী মনে রত্নাকে ও স্টেশনে পৌঁছে দেয়।
বেলা দশটা নাগাদ ট্রেন বিলাসপুর পৌঁছলে রত্না নেমে হুইলারের দোকান থেকে একটি ম্যাগাজিন কেনে আর একটা ধোসা ও কফি খেয়ে নেয়। পরেরটা কখন জুটবে বলা মুশকিল।
বাইরে বেরিয়ে ও একটি অটো রিকশায় দরদাম করে উঠতে যাবে হটাৎ শোনে কে যেন ডাকছে-- দিদি, ও দিদি! ইধার আইয়ে, ইধার।
পেছন ফিরে দেখে একটি কালো হুন্ডাই থেকে ওকে হাত নেড়ে ডাকছে প্রবীণ সরদানা।
-- অটো ছেড়ে দিন দিদি। আমার গাড়িতে চলুন।
-- না, আমি অটো ঠিক করে ফেলেছি, ওতেই যাবো।
-- শুনুন দিদি, রাগ করবেন না। আমি জানি আপনি কোর্টে যাচ্ছেন হরিজন কেসে জামিন করাতে। প্লীজ, ওটা করবেন না। তাহলে ক্ষতি হবে। আপনার কোর্টে যাওয়ার দরকার নেই। জামিন লাগবে না।
রত্না ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।
-- দিদি, আমি আপনার-আমার সবার ভালোর জন্যে বলছি। আরে, আমিও তো হরিয়ানার উকিল। আমি বলছি কোন ভয় নেই। আপনি আমার কথা বিশ্বাস না করেন কোন ক্ষতি নেই। নিজের উকিলের কথাই শুনুন। আমার সঙ্গে আপনার উকিলের বাড়ি চলুন। আমি ওনাকেই সব বুঝিয়ে বলবো। তারপর উনি যা বলেন তাই করবেন। কি, রাজি তো?
রত্না প্রবীণ সরদানার কালো গাড়িতে চড়ে বসে। বন্ধুস্থানীয় উকিল রাজেশের বাড়িতে গিয়ে দুজনে কথা বলে।
-- ভাবীজি, উনি ঠিকই বলছেন। ওনারা রায়পুর পুলিশের বড়কত্তার অফিসে নিজের ব্যক্তিগত পহচানের প্রভাব খাটিয়ে আর্মস্ অ্যাক্ট ও হরিজন অট্রোসিটি অ্যাক্টের দুটো মিথ্যে কেসেরই রফা-দফা করতে চান। এখন আপনি যদি কোর্টে গিয়ে অগ্রিম জামিনের আবেদন লাগান তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট থানা থেকে চালান চেয়েপাঠাবে, তা নইলে জামিনের আবেদনের বিচার করা যায় না। ফলে ওটাকে আর চাপা দেয়া যাবে না, এনাদের সব চেষ্টা কাঁচ্চি হয়ে যাবে।
রত্না মোবাইলে ভাটাপাড়ায় ডিউটিরত রঞ্জনের কনসেন্ট নিয়ে উকিলকে জানিয়ে ফেরত আসে।
দেখা গেল, আর আদালতে ও দুটো মামলা আর উঠলো না।
এ দিকে পুলিশ হরিয়ানার পরিবারের ওপর ১৯শে সেপ্টেমবর মাঝরাত্তিরে বিল্ডারের পত্নীর নেতৃত্বে জনা আঠেরো লোকের হামলার জন্যে ওদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করেছে।
কিন্তু দফা ৩৯৫এর বদলে লাগিয়েছে ৪৫২।
অর্থাৎ, ডাকাতির বদলে মাঝরাত্তিরে পাঁচজনের বেশি লোক মিলে সুপরিকল্পিত হামলা, মারধোর, ইত্যাদি।
হরিয়ানা পরিবার নাক ফোলায়।
৩৬গড়ে সবাই পয়সা খায়। জুডিসিয়ারি পর্য্যন্ত।
রঞ্জনের ছত্তিশগড় প্রেম আহত হয়। বিনা বাক্যব্যয়ে ও সেদিনের “স্থানীয় ভাস্কর” পত্রিকা থেকে আজ কী তাজা খবর শীর্ষক হরিয়ানার কৈথাল এলাকায় জুডিসিয়ারি সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ খাওয়ার খবর দেখিয়ে দেয়।
চলবে
0 comments: