1

প্রবন্ধ - শ্রীশুভ্র

Posted in

 

একুশের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল রাজ্যবাসীকে হিন্দু মুসলমানে ভাগ করা থেকে রক্ষা করেছে। এইটাই বহু বাঙালির কাছে স্বস্তির খবর। অনেকেই নিশ্চিন্ত হয়েছেন। যাক, ফাঁড়া কেটে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ গোবলয়ের রাজনীতির সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়নি। অনেকেরই রাতের ঘুম নষ্ট হচ্ছিল আসন্ন বিপদের কথা ভেবে। দক্ষিণপন্থী সাম্প্রদায়িক শক্তি রাজ্যের প্রশাসক রূপে অবতীর্ণ হলে, বাংলার রাজনীতিতে এক বিপুল পরিবর্তনের সূচনা হতো। মানুষের মূল পরিচয় তার ধর্মই ঠিক করে দিতো। সেই পরিচয়ের বাইরে মানুষের কোনও স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বা স্বীকৃতি পেতো না আর। এমনটাই আশংকা ছিলো অনেক মানুষের। ফলে যে অন্ধকার ভবিষ্যতের আশংকায় দিন গুনছিলেন রাজ্যবাসীর একাংশ, সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনী ফলাফল তাদের কাছে এক বিশেষ আনন্দের বার্তবহ হয়ে প্রায় এক অলিখিত যুদ্ধ জয়ের আনন্দস্বরূপ হয়ে উঠেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই জয় শুভবোধের জয়। এই জয় বাঙালির প্রাগ্রসর চিন্তাধারার জয়। এই জয় ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপক্ষে জনতার রায়। এই রাজ্যে হিন্দু মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি চলবে না। চলতে পারে না। এবারের নির্বাচনী ফলাফল মূলত এই নির্দেশের কথাই ব্যক্ত করছে। এই একটি কথাই বহু বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। এবারের নির্বাচনী ফলাফলকে উপভোগ করতে। অনেকেই এবারের বিধানসভা ভোটকে সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালনের বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মুক্তিযুদ্ধ রূপে দেখছিলেন। স্বভাবতঃই তারাই আনন্দিত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি। রাজ্যবাসী কেন্দ্রের সাম্প্রদায়িক শিবিরের বঙ্গ বিজয় সাফল্যের সঙ্গে প্রতিহত করতে পেরেছে বলে মনে করে। এদের দৃঢ় বিশ্বাস, ভবিষ্যতেও কোনও সাদম্প্রদায়িক শক্তি রাজ্য শাসনের ভার দখল করতে পারবে না। একুশের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন যেন সেই সত্যই প্রতিষ্ঠিত করে দিলো।

তাঁদের ধারণায় এবারের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল রাজ্যবাসীকে হিন্দু মুসলিমে ভাগ করতে পারেনি। এবং এই ফলাফলে স্পষ্ট রাজ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার জনমানসের সংখ্যাই বেশি। এই ধারণা গড়ে ওঠার মূল কারণ একটাই। বিজয়ী ও পরাজিত দলের ভিতরে বিজয়ী দলের ঝুলিতে প্রায় আটচল্লিশ শতাংশ ভোট জমা পড়েছে। অধিকাংশ মানুষই এই সংখ্যাটিকেই অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে জনতার রায় বলে ধরে নিচ্ছেন। কারণ, নির্বাচনী পর্বে প্রধান দুইটি দলের ভিতরে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি এবং অসাম্প্রদায়িকতার রাজনীতিই মূখ্য দুইটি বিবেচনার বিষয় ছিলো। ফলে এটা ঠিক অধিকাংশ ভোটারই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির স্বপক্ষে রায় দান করেছে। এই ফলাফলে স্বভাবতই সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যবাসী বিশেষভাবে আনন্দিত। অনেকেই এই জয়কে বাংলার সনাতন ঐতিহ্যের জয় বলেও উদযাপন করছেন। যে বাংলায় সহস্র বছর ধরে হিন্দু মুসলমান পরস্পর পাশাপশি শান্তিতে বসবাস করে এসেছে।

একথা ঠিক। কিন্তু এরই পাশাপাশি আরও একটি বাস্তব সত্য আমরা এড়িয়ে গেলে মারাত্মক ভুল করবো। সহস্র বছর ধরে হিন্দু ও মুসলমান পাশাপাশি বাস করে এলেও, এই দুই সম্প্রদায়ের ভিতর বস্তুত কোনও ক্ষেত্রেই মিলন ঘটেনি। ফলে দুই সম্প্রদায় প্রায় পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়শী দেশের মতোই পাশাপাশি জীবন কাটিয়ে গিয়েছে। এটা বাংলার ইতিহাস। আমরা চেষ্টা করলেও সেই ইতিহাস অস্বীকার করতে পারবো না। তাদের ভিতরে সহাবস্থান ছিলো। কিন্তু কোনও রকম একাত্মতা ছিলো না। যে একাত্মতা একটি জাতি গঠন করে। ফলে ঐতিহাসিকভাবেই বাঙালি কোনও দিন কোনও অখণ্ড জাতিসত্ত্বায় বিকশিত হয়ে ওঠেনি। বাঙালি, হিন্দু বাঙালি ও মুসলিম বাঙালি হিসাবে দুইটি স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বায় বিবর্তিত হয়েছে মাত্র। এই ইতিহাসটুকু সকলের আগে অনুধাবন করতে পেরেছিলো ধূর্ত ব্রিটিশরা। ঠিক সেই কারণেই তারা তাদের শাসন আমলে বাঙালিকে নিরন্তর হিন্দু মুসলমানে বিভক্ত করে রেখে হীনবল করে রেখেছিলো। এমনকি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনেও বাঙালি হিন্দু ও বাঙালি মুসলিম একাত্ম হয়ে উঠতে পারেনি। যার ফলে ভারতের অন্যান্য জাতি সমূহের মতন একটি অখণ্ড ও অভিন্ন জাতিসত্ত্বায় বাঙালির কোনও রূপ বিকাশ হয়নি কোনও দিন। যার চূড়ান্ত মূল্য দিতে হয়েছিলো ১৯৪৭ সালের বাংলা ভাগের ভিতর দিয়েই।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বে বাংলা ভাগ হলেও, বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো মুসলিম সম্প্রদায় কিন্তু এপার ওপার করেনি ততটা। কিছু মানুষ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশে চলে গেলেও অধিকাংশ বাঙালি মুসলিম, যারা কাঁটাতারের পশ্চিম পারের বাসিন্দা, তারা কিন্তু দেশত্যাগ করেনি। তার প্রধান ও একমাত্র কারণ ছিলো একটাই। ১৯৪৭ সালেই ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে একটি সেকুলার রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। সেই প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেই পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলিমরা তাদের চৌদ্দপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে নিরুদ্দেশে যাত্রা করেনি পূর্ব বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মতন। কিন্তু সম্প্রতি বিগত সাত বছরে ভারতবর্ষের রাজনীতিতে হিন্দু হিন্দী হিন্দুস্তানের প্রবক্তাদের হাত ধরে যে হিন্দুত্বের ধারণার এক জনজোয়ার উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও তার এক সম্প্রসারিত রূপ বেশ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। অনেকেই পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিকে সেকুলার চিন্তাধারার ধারক ও বাহক বলে মনে করতেই শ্লাঘাবোধ করেন বেশি। তারা একান্তভাবেই বিশ্বাস করেন, এই বাংলায় সাম্প্রদায়িক শক্তি কোনও দিনই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। প্রয়াস‌, সে তো থাকতেই পারে। কিন্তু সফল হবে না। একুশের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচন তাদেরই আশার বাস্তব প্রতিফলন বলেই মনে করছেন অনেকেই।

আসল গণ্ডগোলটা কিন্তু এইখানেই। পশ্চিমবঙ্গ তো ১৯৪৭ সালের পরের ঘটনা। তার আগে। বিশেষত, ব্রিটিশের হাতে গড়ে পিটে তোলা বাংলা কি সত্যিই সেকুলার ছিলো কোনও দিন? কিংবা ব্রিটিশ আসার আগেও? যদি থাকতো তবে মুসলমানের ছায়া মারালে হিন্দুরা অশুচি হয়ে যেতো কোন জাদুতে? একই তো ভাষা। একই তো জলবায়ু। প্রায় একই তো পোশাক আসাক। মুসলমানদের নিজের দাওয়াতেই উঠতে দিতো কি বর্ধিষ্ণু হিন্দু সম্প্রদায়? গ্রাম্য সভায় হিন্দু মুসলমানের জন্য পৃথক আসন নির্দিষ্ট করে দেওয়াই বা থাকতো কেমন করে? পরস্পরের উৎসব পার্বণে সমানে সমানে মেলামেশা ছিলো তো? গ্রামের টোল আর মক্তব আলাদা থাকতো কোন নিয়মে? সামাজিক রাজনৈতিক কোনও ক্ষেত্রেই কিন্তু হিন্দু মুসলমান একাত্ম হয়ে ওঠেনি কোনও দিন। আমি বলছি প্রাক ব্রিটিশ ও ব্রিটিশ যুগের কথা। এমন কি, বাংলায় স্বাধীনতা আন্দোলনেও বাঙালি হিন্দু বাঙালি মুসলিম ‘বাঙালি’ হয়ে উঠে একত্রে দেশ স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েনি। সামাজিক বিভাজন এতটাই তীব্র ও অমোঘ ছিলো যে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এই দুই সম্প্রদায়ের মিলন হয়নি। ঠিক সেই কারণেই ব্রিটিশ ও তার ভারতীয় দালালদের যৌথ চক্রান্তে বাংলা যখন ভাগ করা হলো। তার বিরুদ্ধেও জাতি হিসাবে আপামর বাঙালি রুখে দাঁড়াবার প্রয়োজনটুকুও বোধ করেনি। দেশ গোল্লায় যাক। তাতে কোনও বাঙালিরই কিছু এসে যায় না। কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিভেদ বিভাজন বিরুদ্ধতা বজায় রাখতেই হবে। এটা ঐতিহাসিকভাবেই বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার।

বাংলা ভাগ এই প্রেক্ষাপটেরই ঘটনা। কিন্তু তারপরেও নব গঠিত ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সেকুলার চরিত্রের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলমানদের অধিকাংশই পূর্ব পাকিস্তানে না গিয়ে পশ্চিমবঙ্গেই থেকে গেলো। আর ঠিক এই সেকুলার চরিত্রের উপরেই গড়ে ওঠা রাজনীতির কারণেই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি হিন্দু বাঙালি মুসলিম পরস্পর না মিশেও পাশাপাশি সহাবস্থানের নীতিতে একটা আপাত সামঞ্জস্য বিধান করতে পেরেছিলো। যাকে আমরা অসাম্প্রদায়িক বাঙালি ঐতিহ্য বলে চালিয়ে থাকি। কিন্তু এই ঐতিহ্য যতটা না সামাজিক, তার থেকে অনেক বেশি সাংবিধানিক। সংবিধান ও আইনের বাঁধনই এই সামঞ্জস্যের মূল ভিত্তি। সমাজ বাস্তবতা এর ভিত্তি নয়। আইনের শাসনে সমাজ তাকে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলো মাত্র। প্রথমে কংগ্রেস ও তারপর সুদীর্ঘকাল বামফ্রন্টের শাসনে সেই ধারাটিই বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের স্বরূপ হয়ে দেখা দিয়েছিলো।

কিন্তু ২০১১ সালের ঘটিয়ে তোলা পরিবর্তনের হাত ধরে, রাজ্যরাজনীতিতে বামপন্থাকে প্রান্তিক করে দেওয়ার একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেই পরিকল্পনা অনুসারেই রাজ্যব্যাপী আরএসএস এর মতো হিন্দুত্ববাদী প্রতিষ্ঠানের শিকড় বিস্তারের কাজ শুরু হয়ে যায়। এ যেন দেশজুড়ে মাটির তলায় ফাইবার অপটিক কেবল ফেলে ইনটারনেট ব্যবস্থার প্রসার ঘটানোর মতো বিষয়। ইনটারনেটের প্রাণভোমরা যেমন ফাইবার অপটিউক্যাল কেবল। ঠিক তেমনই আরএসএসও বিজেপি নামক রাজনৈতিক শক্তির প্রাণভোমরা। ফলে বিগত একদশকের সময় সীমায় রাজ্য জুড়েই হিন্দী হিন্দু হিন্দুস্তানের প্রবক্তাদের বাড়বাড়ন্তের শুরু। এর সরাসরি প্রভাবে বাঙালি হিন্দুর ভিতরে হিন্দু মুসলিম সংস্কৃতির যে বিভেদ বিভাজন ও বিরুদ্ধতা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলো, তাকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় জাগিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়ে গেলো। দীর্ঘদিনের অবরুদ্ধ চেতনা আজ যেন মুক্তির দিগন্ত খুঁজে পেলো রাজ্য রাজনীতির নতুন দিশায়। সত্যিই তো যে সাম্প্রদায়িক ভাগাভাগিতে দেশ ভাগ হয়েছে, তাতে হিন্দুদের জন্য নিজস্ব কোনও নির্দিষ্ট হিন্দুরাষ্ট্র থাকবে নাই বা কেন? মুসলমানদের জন্য যেখানে একাধিক ইসলামিক স্টেট রয়েছে। ফলে হিন্দী হিন্দু হিন্দুস্তানের প্রবক্তারা আমাদের এই বাংলাতেও পায়ের তলায় একটি শক্ত মাটি পেয়ে গেলো। সেই মাটিকেই কর্ষণ করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দৃঢ় জমি তৈরীতে তারা লেগে পড়লো আদাজল খেয়ে। যার পরিণাম দেখা দিতে লাগলো একটির পর একটি নির্বাচনের ফলাফলে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির স্বপক্ষে ভোট শতাংশের ক্রমান্বয় বৃদ্ধির ভিতর দিয়ে। উল্টো দিকে শতাব্দী প্রাচীন দুইটি রাজনৈতিক শিবির কংগ্রেস ও বামপন্থীদের ভোট শতাংশ বিপুল পরিমাণে ও দ্রুতবেগে কমতে থাকলো। অর্থাৎ বাংলার মাটি বাংলার জলে আজকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি একটি বাস্তব সত্য হয়ে দেখে দিয়েছে। নানা অছিলায় একে অস্বীকারের চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু সমাজের বেশ গভীরে ছড়িয়ে গিয়েছে এর শিকড়। কতটা গভীরে সেই শিকড় পৌঁছিয়েছে, তার দুরন্ত তথ্য আমরা পেয়ে গিয়েছি সদ্যসমাপ্ত একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ফলেই।

ঠিক এই কারণেই এবারের নির্বাচনে বিজেপির ঝুলিতে জোগাড় হওয়া ৩৮.১৩ শতাংশ ভোট পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে একটি মাইলস্টোন। রাজ্যের বাঙালি আজ পুরোপুরি হিন্দু মুসলমানে ভাগ হয়ে যায়নি ঠিকই। কিন্তু ভাগ হয়ে গিয়েছে সাম্প্রদায়িক চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানদণ্ডে। অনেকেই বলতে পারেন, এ আর নতুন কথা কি? এই ভাগ তো আগে থেকেই বর্তমান ছিলো। ঠিক কথা। কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির ভিতরে এক তৃতীয়াংশের বেশিই যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার অংশীদার, এই বিপুল পরিমাণটি কিন্তু বিগত এক দশকের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার সফল রূপায়নেই সম্ভব হয়েছে। এবং সত্যিই এই সাফল্য ঈর্ষণীয়। ঈর্ষণীয় কারণ, পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি রাজ্যেও আজ প্রায় ৩৮.১৩ শতাংশ মানুষ সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির ধারক ও বাহক হয়ে পড়েছেন। এক দশক আগেও যেটা অভাবিত ছিলো। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে চলেছে, রাজ্যের প্রায় সাতাশ শতাংশের মতো বাঙালি মুসলমানের উপরেও। এই ঘটনায় তারও ইচ্ছেয় হোক আর অনিচ্ছেয় এই সাম্প্রদায়িক সমাজ-রাজনীতির দিকেই প্রলুব্ধ হবেন। ফলে আমাদের রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ বিভাজন বিরূপতা আজ বিদ্বেষ বিরুদ্ধতা ও বিক্ষোভের জন্ম দেবে। বাঙালি আবার নতুন করে শক্তিহীন হয়ে পড়বে। এবং সেটি অবধারতি। রোগ যতক্ষণ সুপ্ত থাকে, ততক্ষণ রুগী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও মানুষটি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে। কিন্তু রোগ যখন আর সুপ্ত থাকে না, মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, ছেয়ে ফেলতে থাকে সারা শরীর, তখন কিন্তু আর সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব হয় না কোনও অবস্থাতেই। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির সামনের দিন সেই রেগের সঙ্গে লড়াই করার দিন। জয় পরাজয় নির্ভর করবে অনেক অনেক বিষয় ও শর্তের উপরে। কিন্তু পরিণতি যাই হোক, আজ আর পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসাবে আমরা বলতে পারি না, আমরা সেকুলার। সে কথা বলার অধিকার হারিয়ে ফেলেছি আমরা। সদ্যসমাপ্ত একুশের নির্বাচনী ফলাফল তার অন্যতম প্রমাণ।

1 comment:

  1. সঠিক এবং গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ।
    সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

    ReplyDelete