Next
Previous
Showing posts with label কবিতা. Show all posts
0

কবিতা - মাহমুদ নজির

Posted in






ভুলে যেতে চাইলেই
ভুলে যাওয়া না যায় কখ‌নো।
কেননা, ভুলে যাওয়া মোটেই সহজ সাধ্য নয়,
বাস্তবিক পাহাড়ের মতো নিষ্ঠুর, দুরূহ, বিষাদ।

যাকে তুমি ভুলে যাবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
সেই পড়বে মনে, আঠার মতো আষ্টেপিষ্টে
লেপ্টে থাকবে প্রিয় আঙিনায়।

যতই অভিমান করে বলো
ভুলে যাবো, মুছে দেবো নাম চিরতরে।
এক এক করে ছিঁড়ে ফেলবো
জমানো জড়ানো যতো স্মৃতির পাতা।

বজ্রপাতের মতো ততই ওঠবে বেজে
হৃদয় বিদীর্ণ করে
ভেঙেচুরে খানখান গুঁড়িয়ে দেবে বুক।

এ বড় মায়ার কুহক
চাইলেই না যায় ভুলে থাকা
মুছেফেলা না যায় ক্ষত,বেদনার দাগ।
আটকে থাকে, লটকে থাকে
ভাবনার আকাশ ঘেঁষে খন্ড খন্ড মেঘ হয়ে
ঝুলে থাকে ঝুল বারান্দায়।
0

কবিতা - মেশকাতুন নাহার

Posted in






মেঘলা আকাশ জানান দিলো
নামবে বুঝি ঢল,
ঝড়ো হাওয়ায় অঝোর ধারায়
ভিজবি কে কে চল।।


শ্রাবণ মাসের এমন দিনে
পানি করে থৈথৈ,
প্রাণটা জুড়াই শীতল ফোঁটায়
সখী তোরা কই?


দিঘির জলে পদ্ম হাসে
ভাসে শাপলা ফুল,
চল না সবাই দল বেঁধে আজ
ডুবাই মাথার চুল।


ক্লান্ত দেহ ধুয়ে মুছে
সাজবে নব মুখ,
নতুন সুরের ছোঁয়ায় আবার
ভরে উঠবে সুখ।











ReplyForward
1

কবিতা - সন্তোষ ভট্টাচার্য

Posted in







অগোছালো ছায়াদের মাঝে মাঝে মনে পড়ে
তাদেরও মন গড়ে ছিলো নীড়ে, অথবা সমুদ্র গভীরে।
যক্ষের দেশে পাতালপুরীতে
সোনার পালঙ্কে রাজকন্যা নিদ্রা যায়
তেমনই জড়াজড়ি করে থাকে ওরা বনের পাতায়।
গলুইয়ে যখন মাছেরা মারছে ঘাই
ছায়ারা সমস্বরে বলে উঠে
‘মাছেদের মতো আমরাও যাব দেশান্তরে’।
পৃথিবীর হাটে, একপা দুপা হেঁটে
স্মৃতির নির্ভাজে ছায়ারা মসৃণ, ছিল শব্দহীন।
অতি দুরাশায় এক ভিতরের পথ,
ওরা ভেবেছিল হয়তো বা নিরাপদ।
বড় ভীতু ছিল ওরা,
নিঃসংকোচে দেহতে দেয় নি মন।
শারীরিক সুখভোগ,
স্ফটিকধারার মতো মায়াবী বিকেলে।
তারাদের ছায়া তাই সাধারণ উন্মোচন অপেক্ষায় থাকে
তারাদের দূরত্বের অপেক্ষায় রাখে
পুনঃপ্রস্তরীভূত অশ্লেষে, সঙ্গমরত স্থাবরে জঙ্গমে।
ছায়া হাত পেতে স্বস্তি ভিক্ষা করে,
করণিক স্ফুরিত অধরে।
অবোধ্য শেষ নির্বাচন,
কুয়াশাবৃত মূঢ় আচরণ জল ছেঁকে সোনা
অনন্ত এসে প্রাণ কেড়ে নিতে গেলে
ছায়া কেঁদে বলে দেবো না দেবো না।
10

কবিতা - শ্রুতি নাহা সেন

Posted in






আজ অনে-- ক দিন পরে ঠিক সেই রকম একটা দুপুর যেন!
যখন তুই আসতিস খড়্গপুর থেকে,
একটু পরেই ফেরার ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে ডাক দিতো তোকে।
ভদ্রতা করে বলতাম, কেন আসিস এত কষ্ট করে...
তুই বলতিস, গঙ্গার জলকে রাঙিয়ে দিয়ে কী সুন্দর সূর্য ডোবে এখানে!
কলকাতায় তখন হলুদ ট্যক্সির যুগ!
আমরা দুজনে দুপুর রোদে গড়ের মাঠে ঘোড়ায় চড়ে কতদূর চলে যেতাম!
সাদা ঘোড়ার পিঠে চড়ে কাদম্বরী দেবীর গল্প বলতে বলতে... 
আরো কতো অপ্রাসঙ্গিক গল্পের ঝুলি খুলে বসতাম।
জীবনের সব কু্ঁড়িরা সেই দিনই ফুটে উঠেছিল!
ওই দূরে আকাশবাণী দেখতে পেলেই আবেগে আপ্লুত আমি!
মনে আছে, আমার তখন প্রথম ফোন Nokia 800,
আর তোর Motorola
প্রতিবার আমার জন্মদিনে তুই Caesarian English এ মেসেজ পাঠাতিস।

আজও আমাদের সেইরকম একটা রবিবার!
এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়ার পথে সেই পুরোনো দিনের মতো কলকাতায় আসা,
boarding pass বুকের পকেটে রেখে,
হাতে মাত্র পৌনে তিন ঘন্টা!
পাহাড়ের শহর থেকে নীল ফুল তুলে এনে আমার হাতে দিয়েই
পরের গন্তব্য সমুদ্রের শহর।

পাহাড় - সমুদ্রের মাঝখানটুকু আমাদের বন্ধুত্বের সুরে ভরে উঠুক।




0

কবিতা - বিভাস মণ্ডল

Posted in






এখানে গাভী চরে সবুজ ঘাসে সাদা কালো পাটকিলে
অপরাহ্ন গড়ালে পড়ন্ত রোদ নেচে ওঠে শিংয়ের আগায় ।
আলপথে বালিকার চিকন গালে গুলাল ছড়ায় গোধূলি
মধুমাসের মিষ্টি বাতাস খেলে যায় বালিকার মুক্তবেণী পিঠে।
বেলা শেষে আমি দুরের রাখাল ডাক ছাড়ি আয় মাণিক
সবুজ ঘাস থেকে মুখ তুলে চায় কালো সাদা পাটকিলের দল
পশ্চিমে রাঙা আকাশ ফেলে সোনালী ধূলোয় গোঠে ফিরে আসে মাণিক
পুকুরের হাঁস নরম পাতায় মৃদু কলরব তুলে কুঁড়ো খেতে আসে গৃহে ।


সন্ধ্যা নামে ধূসর খড়ের চালে ,যশোদা প্রদীপ জ্বালে
ধানের গোলার পাশে । সান্ধ্যকালীন রাগে বেজে ওঠে
শঙ্খ
একটা দুটো কত নক্ষত্র ফোটে আকাশে জোনাকিরা
সংসার পাতে বৃক্ষ শাখে
হাটের ব্যপারী ঘরে ফেরে সুখটানে হুঁকায় আগুন সাজায় রমণী।
ঝিকিমিকি তারা প্রাঙ্গণে খোল মাদল জেগে ওঠে হরি ।


মৌচাকের মধুর মতো শর্বরীর গাঢ় অঙ্গসাজ শরীর মাতাল হয় গভীর থেকে শেষ ।
চাঁদ তারা জোনাকিরা ম্রিয়মান হয় সব ভোরের মণ্ডপ যেমন ।
নীল শাড়ি নীলিমার মায়াবী চোখের মতো আমি গ্ৰাম জাগতে দেখিনি বহুদিন ।
1

কবিতা - ঝানকু সেনগুপ্ত

Posted in






বাষ্প জমে না আর বিষাদের জলে
সরে যায় ভাঙ্গা পথ কাদা মাটি গ্রাম
ইটভাটা শ্রমিকের বাতিঘর ছুঁয়ে
শুকতারা নিয়ে যায় মজুরি নিলাম !

এখনও তো সুর বাজে বাউলের গায়ে
দীঘি জলে চুপিসারে রূপসী রোদ্দুর
বাতাসি কল্পনা ছেড়ে কিশোরী সে মেয়ে        নকশী কাঁথায় আঁকে দগ্ধ দুপুর !

ছিপ ছিপ দাঁড় ভাসে মেঘ মল্লার
বনবিবি দরিয়ায় ঢেউ ওঠে নামে
পাঠশালা বহুদূর সাগরে ট্রলার
বৈশাখে কালো মেঘ কিশোরের ঘামে !

বাষ্প জমে না আর বিষাদের জলে !!
0

কবিতা - শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

Posted in








অভিজাত পল্লিতে
সে আমায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
তাঁর ফ্ল্যাট দেখাচ্ছিল ... হাসছিল
বেশ একটা গর্ব গর্ব ভাব

একটা কিছু করে ফেলার গর্ব ।
আত্মবিনোদনের কতই না উপাদান
আত্মতৃপ্তির উপাদানই বা কম কি
দিগন্তচুম্বী অন্তহীন চাহিদার
কোন এক মাইলফলক ছুঁতে পারলেই
উজান ছোটে গাঙে, পলাশ ফোটে মনে ।

সে দেখাচ্ছিল, আর আমি দেখছিলাম
ব্যালকনি থেকে দেখা যায় টইটুম্বুর ঝিল
চাঁদের আলোয় পদ্ম হাসে সেখানে
দক্ষিণের খোলা জানালা দিয়ে
ফাগুনের গন্ধ এসে ম ম করে চৌখুপী ঘর
এক এক করে দেখছিলাম সব,
লিভিংরুম, কিচেন, ডাইনিং স্পেস, ইত্যাদি ইত্যাদি ।

বেডরুমে এসে চোখ আটকে গেল দেয়ালে
ছবিটাতে মালা পরানো
শুকনো, কাগজফুলের মালা
এ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে
পদ্ম হাসে না, ফাগুন আসে না
বৃদ্ধাশ্রম থেকে অনন্তাশ্রমে পাড়ি দেবার আগে
ছেলেকে দেখতে চেয়েছিলেন একবার
সময় হয়নি ।

তখনও ঠোঁটের কোণে লেগে আছে
স্নেহমাখা এক চিলতে মিষ্টি হাসি ।
0

কবিতা - কুমকুম বৈদ্য

Posted in






ভীষণ একটা এক্সপেক্টেশন মনে মনে রোজ চাষ করে চলি
মনে মনে ভেবে চলি একজন মানুষকে, যে ঠিক আমার মনের মত
ভীষণ চার্মিং হীরো, কিন্তু একাগ্রচিত্তে শুধু আমার প্রতিই মনোযোগী
কাজকর্ম তুড়ি দিয়ে মেটাবে, পারসোনালিটিতে এমন হবে
প্রচন্ড জরুরী মিটিংএ বসে ও আমার ফোন ধরে ধৈর্য্য ধরে আমার পাগলামী শুনবে
সব কাজ ফেলে, কারণ আমি হব তার ফাস্ট প্রায়োরিটি
এমন এক পুরুষ যার সুঠাম দেহ, আকৃষ্ট করবে বহু নারীকে
তবে সে কিন্তু একাগ্র আমাতে, ষে আমি যতই মুটিয়ে যাই অযথা ফাস্টফুড খেয়ে
আলমারিতে রেখে দেবে হাত খরচের টাকা অফুরান
আর আমি সকাল থেকে উঠে আলস্য ভরে ক্যানভাসে আঁকতে বসব তার ছবি
সেই ছবি থাকবে মিউজিয়ামে, মোনালিসার ঠিক পাশে
এমনটা অমি নয় শুধু , আসলে যারা আমার মত ক্রিপিং প্লান্ট
মনে মনে সব্বাই পুরুষতান্ত্রিক
0

কবিতা - উদয়ন ভট্টাচার্য

Posted in





সমস্ত দরজা খুলে শুধু
তোমার জন্য বসে থাকা।
তবুও তুমি বাড়াও নি দাক্ষিন‍্যের হাত 
আমার বিষণ্ণতা ও বয়স বেড়ে যায় 
অন্ধকার নিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে।

তুমি দরজা জানালা বন্ধ করে দিলে
আমি বৃক্ষের অভিমানে কাটিয়ে দিলাম 
সমস্ত জীবন।
যেদিন সে ধ্বংস হয়ে গেল ধীরে ধীরে 
মানুষ এসে পাশে দাঁড়িয়ে নমিত হলো 
গৃহীত হলো শোক প্রস্তাব
মাটিতে মিশে গেল স্মৃতি বিস্মৃতি

তখন তুমি হাত বাড়ালে আমার দিকে 
1

কবিতা - ঝানকু সেনগুপ্ত

Posted in






সাঁকো ভেঙে গেলে ওপারের মানুষেরা ডুবে যায়
ভুলে যেতে হয় একসাথে থাকা
ভালোবাসা
ভুলে যেতে হয় জামিন না পাওয়া ইতিহাসের পদাবলী

অপর হয়ে পড়ে থাকে, ভেসে যায়                             ভেসে যায় সময়ের স্রোতে !
0

কবিতা - শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

Posted in






তোমায় যদি হাতছানি দিই, এগিয়ে এসো তুমি
ফাগুন বিহন জীবন যাপন ঊষর মরুভূমি ।

তোমায় যদি ছুঁই কখনও, আমার হাত ধোরো
একলা আমি অন্ধকারে বড্ড জড়সড় ।

তোমার ঠোঁটে ঠোঁট ডোবালে, নাই বা বাধা দিলে
না নিয়ে যাক বোয়াল মাছে, ছিপ নিয়ে যাক চিলে ।

বিছন যদি বুনতে চাই, মাটিতে হোয়ো লীন
সবুজ হয়ে বাঁচতে চাই, অনেক অনেক দিন ।

তোমার চোখে স্বপ্ন দেখা সাঙ্গ হলে তারই
বৃষ্টি মেখে দিগ্‌বলাকায় হারিয়ে যেতে পারি ।
0

কবিতা - কুমকুম বৈদ্য

Posted in





সংগ্রহ কথাটার মানে বদলে বদলে যায়,
বয়সের সাথে , লোভের সাথে
ছোটবেলায় রেলগাড়ির লাইন থেকে খুঁজে খুঁজে
নিয়ে আসতাম পাথর, যার আকার বেশ অন্যরকম
কোনটা চন্দন পিঁড়ি, কোনটা জিরাফের মত
অথবা ফাউকলে জমানো টিকিট
তারপর চেয়ে চিন্তে কয়েন
আস্তে আস্তে বাড়ল বয়স, হাতে কিছু রোজগেরে টাকা
সন্তর্পনে লোভ ছিল ঘাড়ের কাছে
কখনো গয়না গাটি, কখনো কাঁসার বাসন
কখনো কোথাও থেকে এক্সক্লুসিভ কিছু
যা কারোর কাছে নেই,
আমার ক্ষমতা কত, করবে তার প্রদর্শন
0

কবিতা - সৌমিত বসু

Posted in






প্রায়ই তার সুতো ছিঁড়ে যায়। ঘুড়ির মতো সে উড়ে এসে পড়ে এর ওর ছাদে। মাঞ্জা দিয়ে সে ঢেকে রাখে সুতোর মসৃণতা। যাতে কেউ টের না পায় সুতোরও একটা মন আছে। কেউ অসুস্থ হলে সে কেঁদে রাত কাবার করে অথচ সকাল হলেই চোখে কাজল টাঙিয়ে নিঃশব্দে বাস এ গিয়ে বসে। তার আঙ্গুল নিশপিশ করে অথচ সে বোতামে চাপ না দিয়ে টার্কিশ ব্লু রঙের ছবিতে মত্ত থাকে, ভাবনায় থাকে এয়ারপোর্ট থেকে কতদূর তার বাড়ি, দুটো খাটের মাঝে কতখানি ফাঁক।

এক একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে সে একটা ডানা পেয়ে যায়। অতীত অগ্রাহ্য করে সে উড়তে থাকে।কতগুলো চড়াই তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়, আকাশ পেরিয়ে, হাতানিয়া দোয়ানিয়া পেরিয়ে, শিবমন্দির পেরিয়ে একটা জঙ্গলের ভেতরের দোতালার ঘরে। নতুন রং করা সেই ঘরের দেয়াল তাকে ইশারায় ডাকে, যত্নে পেতে দেয় সংসারের শতরঞ্চ। তার মন পড়ে থাকে নিচের ঘরের এক বৃদ্ধার চেয়ারে, ঠাকুরঘরে। হঠাৎ জলপাইপ চালিয়ে সে ধুয়ে দিতে থাকে ঘরের ভেতর ঝুলে থাকা সমস্ত ভাবনা,সে টের পায় সুতো ছিঁড়ে গেছে, সিঁড়িসর্বস্ব একটা ঘরে উড়ে যেতে হবে। সে তার সবটুকু দিয়ে তৈরি হয় জানালার ফাঁক গলে উড়ে যেতে নতুন আকাশে।



0

কবিতা - কুমকুম বৈদ্য

Posted in





মায়ের লেখা সেভাবে গুছিয়ে রাখা হয়নি কখনো,
অথচ মা গুছিয়ে রাখতেন
হলুদ হয়ে যাওয়া খবরের কাগজ গুলো
যেখানে বাবার লেখা ছিল অথবা বাবার খবর ছেপেছিল
ফাইল ভরে যত্ন করে রেখেছন আজীবন
ছেলে মেয়ের লেখাগুলো ও
মুক্তোর মতো হাতের লেখা ছিল
ধরে ধরে শেখাতেন দাঁড়ি কমা যতি চিহ্নের ব্যবহার
অথচ তার লেখা ধরে রাখেনি কেউ
প্রয়োজন মনে হয়নি কখনো
হয়ত মা বড্ডবেশি ছায়া দিতেন বলে
অথবা নিছকই আমাদের দীনতা
0

কবিতা - পার্থ সরকার

Posted in


সংলাপে থেকো না বেশি, মৈত্রী
নীরবেই থাকো মৌন

গৌণ অবস্থান মহীরুহের
অধিরথের লঘু

নুব্জ্য পাটাতন সমভারে
ঐকান্তিক আলো হারিয়ে

উড়িয়ে দেয় রোদ
অমৃতে সমাদৃত রোদ
আর যাকে তুমি বলো বোধ
তার বিস্ফোরণ অসংবৃত ক্রোধে
মাত্রাহীন ক্লেদ আনে অসংযত সংবাদে

পতনের বিপরীতে পতনে ।

0

কবিতা - সৌমিত বসু

Posted in





হাতানিয়া দোয়ানিয়ার ওপর জেগে থাকা একটা ঢেউ আমায় বলেছে
আমি যদি কখনো কলকাতায় আসি
তাহলে যেন ময়ূখ ভবনের দিকে মুখ করে একবার বলি
তাদের প্রতিদিনের মরে যাওয়া, কারণ ওখানেই নাকি সেচ দপ্তর |

আমি বলতে এসেছি
হাতানিয়া দোয়ানিয়ার
ছোট ছোট ঢেউ এর মৃত্যু বিষয়ে |

সুন্দরবনের খাড়িপথে
বাগদা মীন ধরা মেয়েটি আমায় বলেছে
আমি যেন নবান্নের দিকে মুখ করে বলি কুমিরের পা চেঁচে নেওয়ার কথা
পেছনে থেকে ঝাঁপ দিয়ে ঘাড় ধরে বাবাকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাবার গল্প

আমি আজ মেয়েটির কথা বলবো বলে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি

গত বুলবুলের তাণ্ডবে
তালগোল পাকিয়ে যাওয়া
ম্যান গ্রোভ এর ভেতরে থেকে
কে যেন একজন বলেছে
আমি যদি কলকাতার মানুষদের সামনে কবিতা বলার সুযোগ পাই
তাহলে যেন অরণ্য ভবনের দিকে মুখ করে
তাদের টুকরো টুকরো করে জ্বালিয়ে দেবার কথা বলি
আজ আমি সেকথাই জানাতে এসেছি

গোটা সুন্দরবনের কান্না এই আমার হাতের মুঠোয়
আমার মা ছিলেন বারো হাত লেজওয়ালা এক তীব্র কুমির
আমার বাবা
পিঠে মোষ ফেলে এক রাতে
ন মাইল ছুটে চলা রয়েল বেঙ্গল
গাছের পাতায় রক্ত দিয়ে আঁকা আছে আমার ঠিকানা
আমি আজ সেই রক্তের ইতিহাস জানাতে এসেছি

গতমাসে বাংলাদেশ থেকে ফেরার পথে
ভিসা অফিসের পাশের জঙ্গলে
আমায় ডেকে নিয়ে বলেছিলেন নির্মলেন্দু গুন
আমি যেন এই ভাষাতেই আমার কথা জানাই
হে কলকাতার নক্ষত্র যোদ্ধা
আমি আজ সেই ভাষাতেই আমাদের বেঁচে থাকার কথা বলে গেলাম |

হাতানিয়া দোয়ানিয়ার এক টুকরো ঢেউ, বাগদামীন ধরা অবুঝ কিশোরী
সভ্যতাকে বাঁচাতে বুক পেতে দেওয়া ম্যানগ্রোভ, জেনে রেখো,
তোমাদের কথাই আমি
খোদ কলকাতার বুকে বমি করে গেলাম
0

কবিতা - কৌশিক চট্টোপাধ্যায়

Posted in





পৃথিবীর যত বয়স বেড়েছে
বেড়ে গেছে অবসাদ
আমি তুমি শুধু দূরে সরে গেছি
বাতাসে বারুদ স্বাদ৷

দূরত্বটাও বেড়েই চলেছে
মুখোশ হয়েছে মুখ
চোরাবালিতেই তলিয়ে গিয়েছে
চেনা জানা সব সুখ৷

ভোকাট্টা সেই সূতোরা এখন
এলোমেলো ওড়ে ঝড়ে
অজানা ঠিকানা খুঁজে নেবে ঠিক
ইশারায় প্লুত স্বরে৷

সবুজ চোখেরা চারিদিকে ঘোরে
ঈর্ষারা আশে পাশে
প্রেমের গীতিকা ভুল করে কেউ
লিখেছিল পরবাসে
4

কবিতা - ঝানকু সেনগুপ্ত

Posted in





আজ যাকে ভালোবাসি
কাল হয়তো সে চলে যাবে অনেকদূর
পোষাবে না তার এই বায়ুমণ্ডল
বাতাসে বারুদের গন্ধ তার ভালো লাগবে না

সে চাইবে শতাব্দী প্রাচীন শিউলি ফুল
এক্কা দোক্কা বন্ধুতা
কবেকার খাদ্য আন্দোলনের স্মৃতি নিয়ে
গল্প লিখতে চাইবে
আদিগঙ্গা তীরের সেই দোয়েল পাখির গান শুনে                      সুরে সুর মেলাতে চাইবে

আমি তাকে আধুনিক হওয়ার জন্য
ঝলমলে রাস্তায় নিয়ে এসে                                                        সেলফি তুলতে চাইলাম
অভিমানী মন নিয়ে                                                                   আনমনে পথ হেঁটে সে পার হয়ে গিয়েছিল তেপান্তরের মাঠ

আজ যাকে ভালোবাসি কাল হয়তো ...
0

কবিতা - শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

Posted in





গোধূলির কনেদেখা আলো
মেয়েকে সাজিয়েছিল ভালো
তবু কাল দেখে গেলো যারা
এখনও দিলনা কেন সাড়া !

বলেছে তো, সব সে বলেছে
সয়েছে তো, অক্লেশে সয়েছে
পুরুষের লালায়িত চোখ
লেহন করেছে তাকে আপাদমস্তক
ইঞ্চি ইঞ্চি করেছে জরীপ
পায়ের অলক্ত থেকে কপালের টিপ
বুঝতে চেয়েছে চিরে চিরে
পারে কি বিকোতে মেয়ে বাঁদির বাজারে
তবু কেন তারা
দিলনাকো সাড়া !

তাহলে কি রঙ কিছু চাপা মনে হোল
নাকি এ নয়ন দুটি নয় ঠিক তত ঢলো-ঢলো
অথবা এ মুখের গঠন
হয়নি সে মনের মতন
নাকি সেই চিরন্তন পাপ
এ দেহের খাঁজে খাঁজে পায়নি সে চটুল উত্তাপ
কি জানি যে কেন
সাড়া তারা দেয়নি এখনও !

এই নিয়ে সাত হাটে বেসাতি সাজিয়ে
নিজেকে বিকিয়ে দিতে গেছে সেই মেয়ে
সাত হাতে, সাত-সাত বার
মৃত্যু হোল তার ।
এ যেন সে তিলে তিলে সঙ্গোপনে আত্মবিসর্জন
এ যেন স্বীকৃত এক সামাজিক গণধর্ষণ ।
1

কবিতা - রীনা তালুকদার

Posted in





একদিন বসন্ত বেলায়
কুচকুচে কালো কোকিলের ডাক শুনে
ছুটে যেতাম ঘর থেকে বাগানে বাগানে
খুঁজে খুঁজে বেহাল মন
নারঙ্গী বনের সবুজ লতা যেনো
তখন বসন্ত ছিলো অন্যরকম দোলে
হৃদয়ের উচ্ছৃঙ্খল আগুন দোলা
পাগলা কোকিলের কুহু ডাকে
বেভুলা সব ঘরদোর মন বন-বাদাড়
এখন বসন্ত আসে মোবাইলে
ম্যাসেজে ম্যাসেজে বাসন্তী ছবি
ফুল পাখি নদীর ছবি কথা বলে
বসন্ত চারুকলায় হাট বসায়
মানুষ আর ফাগুনের বন্ধুদের
রাস্তায় রাস্তায় যুগলের বাসন্তী
পোশাক, ফুলের ব্যান্ড মাথায়
লাল লিপস্টিকে বসন্ত হাসে নিলাজ
মনে পড়ে ভীষণ, মন বলে ওঠে
এই বসন্ত সেই বসন্ত না।