0

প্রবন্ধ - দেবাশিষ ভৌমিক

Posted in

অজ্ঞতার দিনরাত্রি

ছোটবেলায় আমরা জানতাম যে আমাদের মানুষ হতে হবে আর মানুষ হওয়া মানে দেশ ও দশের মুখ উজ্জল করা। উজ্জল করা কাকে বলে সেই বিষয়ে খুব একটা পরিস্কার ধারনা না থাকলেও একটা বিষয় বুঝতাম যে বিশাল বাড়ি বা দামী গাড়ি থাকলেই মানুষ হওয়া বোঝায় না।দারুন বৈভবশালী জীবন যাত্রাও খুব একটা গৌরবের বস্তু নয়।বরং হঠাৎই কিছু দামী জিনিস কেনা হয়ে গেলে সেটা জাহির করতে লজ্জাই লাগত।বস্তুত যে সব বন্ধু ও খেলার সাথিদের সাথে বড় হয়ে উঠছিলাম তাদের মধ্যে সিনেমার টিকিট ব্ল্যাক করে বা সাট্টা খেলে- হয়ত অল্প নেশাভাং ও করে- এবং পড়াশুনার সাথে কোনও রকম সম্পর্কহীন ছেলেরাও প্রচুর সংখ্যায় ছিল।অনেকেই বস্তীতে থাকত, তাদের যে ঠিকঠাক খাবার দাবার জুটত এমনও নয়।এখন স্পনসরশিপ নিয়ে নানা ছুঁতমার্গের কথা শুনি, অথচ আমাদের অনুজপ্রতীম বন্ধু ভুতো সাট্টায় আশাতিরিক্ত অর্থ রোজগার করে, অর্থাৎ তিনটি সংখা ক্রমপর্যায় সহ মিলিয়ে দিয়ে, সেই অর্থে একদিন ব্যাপি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।ভুতো মেমোরিয়াল শিল্ড নামক সেই প্রতিযোগিতায় আমরা সকলেই খেলেছিলাম, এবং সবচেয়ে বড় কথা, নিরপেক্ষতার স্বার্থে ভুতো শুধু যে খেলেনি তা নয়, বরং রেফারি হিসেবে সবকটি খেলা পরিচালনা করেছিল। অথচ আমরা কয়েক জন ইংরেজি মাধ্যম ইস্কুলে পড়তাম আর টাই পড়েই ইস্কুলে যেতাম।হেলথ ড্রিঙ্ক আর জীবাণুরোধক পাঁচিলের আড়ালে নিরাপদে থেকে কেরিয়ার তৈরির জন্য প্রস্তুত হওয়ার পরিবেশটাই ছিল না।সন্তানদের পুষ্টি বা ইমুইনিটি দূরে থাক, ছোটখাটো শরীর খারাপ বা চোট আঘাত নিয়েও বাবা মায়েরা সম্পূর্ণ নির্বিকার ছিলেন।আমাদের পেট পরিস্কার না হলে তাদের কখনও চিন্তিত মুখে বাথরুমের সামনে অপেক্ষা করতে দেখিনি।বেশী মিষ্টি বা লজেন্স খেলে যে দাঁতে পোকা (আমরা ক্যাভিটির নামই শুনিনি তখন) হবে সেই বিষয়েও তাদের উদ্বিগ্ন হতে দেখিনি। পাড়ার বন্ধুদের সাথে খেলায় অথবা ইস্কুলের স্পোর্টসে আমরা হারলাম কী জিতলাম সেটাও তাদের কাছে খুব একটা পাত্তা পায়নি।বাচ্চাদের জন্য আলাদা ঘরের কথা ভাবাই যেত না।আমাদের “ক্রাঞ্চি ব্রেকফাস্ট” ছিল না, রোজকার খাবার দাবারের মধ্যে এনারজি জোগাবার জন্য “ফ্রুট আ্যন্ড নাট” ছিল না। আমাদের মা বাবারাও ফাইবার, প্রবায়োটিক এত সব জানতেন না। ফলে আমাদের মত শয়তানদের সামলানোর জন্য তারাও সেসব খেতেন না।তা সত্বেও তাদের চড়-থাপ্পর অথবা হাতপাখার দাপট কিছুমাত্র কম ছিলনা।টিফিনে প্রায় বাঁধাধরা ছিল চিনি লাগানো বিস্কুট আর বিবর্ণ একটি সন্দেশ বা রুটি তরকারী। ফলে আমরা নির্বিচারে ফুচকা-ঘুগ্নী-কুল-ঝালমুড়ি এবং হজমি খেয়েই মোটামুটি স্বাধীন জীবন যাপন করতাম। এমনকি আমাদের পেট পরিষ্কার হলো কিনা তা জানতে বাড়ির বড়রা চিন্তিত মুখে বাথরুমের সামনে অপেক্ষা করতেন না।কঠিন নজরদারি না থাকায় আমাদের স্বাধীনতা ক্ষেত্র বাড়ির মধ্যেও অল্প বিস্তর বিস্তৃত ছিল। নিজেদের বাড়ির রেডিও বা রেকর্ড-প্লেয়ার (যে অল্প সংখ্যক বাড়িতে ছিল)তার গুনমান নিয়ে বড়াই যে করে অন্যদের পরিহাস করা যেতে পারে সে কথা মনে হয়নি কখনও। দুপুরের রান্না শেষ হলে খোলা উনুনের পড়ে যাওয়া আঁচে বড় গামলায় সোডা ও গোলা সাবানের মিশ্রনে ছাড়া জামাকাপড় সিদ্ধ হত।তারপর উঠোন জুড়ে দড়ি টাঙ্গিয়ে শুকোন।তারপরে আবার আরেকটা তরল লাগিয়ে সেগুলিকে যে সুগন্ধী ও আরামদায়ক করা দরকার সে ধারনাও ছিলনা।ইস্কুলের বই আর মাস্টারমশায়দের পড়ানো থেকেই মোটামুটি পড়াশোনা হয়ে যেত, “লারনিং অ্যাপ” ছিলও না আর তার প্রয়োজনও বোধ করিনি।বরং আগ্রহ ছিল লুকিয়ে পড়া হলদে মলাটের বইয়ের পাতায়।সকালে (ছুটির দিনে) খেলা অথবা ইস্কুল, বিকেলে খেলা ও সন্ধে্বেলা পড়তে বসে ঘুমনো। এই রকম নিরুপদ্রব ও অনুত্তেজক দিন যাপনের ফলে আমরা না হতে পেরেছি কম্পিটিটিভ না হতে পেরেছি কেরিয়ার ওরিয়েন্টেড।লেখাপড়া শেষ করে বাবা কাকাদের মতো হাতব্যগ ও টিফিনকৌটো নিয়ে দশটা পাঁচটা অফিস করবো এই ছিল সর্বোচ্চ আকাঙ্খা।জীবনের সমস্ত ক্ষেত্র যে আসলে প্রতিযোগীতা এবং সেই প্রতিযোগীতায় জিততেইই হবে, এরকম কোন তাগিদ আমাদের মধ্যে ঢোকানোই হয়নি। আমাদের মায়েরা ভোরবেলা কয়লার উনুনে আঁচ তুলে ইস্কুল-কলেজ-অফিস যাত্রীদের পাতে সময়মতো ভাত দিতে এত ব্যস্ত থাকতেন যে আমাদের সঙ্গে দৌড়ে আমাদের মনে জেতার অভ্যাস তৈরী করাটাকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেননি।।ফলে যা হওয়ার তাই হল।আমরা স্মার্ট হলাম না; অনলাইনে জিনিস কেনায় সড়গড় হতে পারলাম না। সেই বাজারে গিয়ে মাছের দোকানে-আলুর দোকানে আড্ডা মেরে রিকশা করে বাজার আনার প্রাচীন অভ্যাস রয়েই গেল।রেস্তোরায় খেতে গিয়ে খাদ্য-পানীয় পরিবেশকদের কিভাবে ডাকবো সে বিষয়ে শিক্ষা না থাকায় একবার অর্ডার দেওয়ার পরে সেটা আর পালটানো গেলনা।শর্টস পড়ে শিস দিতে দিতে আঙ্গুলের ডগায় চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে গাড়িতে স্টার্ট দেওয়া অধরাই রয়ে গেল।বিয়ে-পৈতে-অন্নপ্রাশন-জন্মদিন-শ্রাদ্ধের নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে পার্টি করার সুযোগ হলনা।বারমুডা যে এক রকমের প্যান্ট সেকথা জানতে এত দেরী হয়ে গেল যে আমরা বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলের রহস্য উদ্ধার করতে পারলাম না।ঢোলা পায়জামা পড়েই দিন কেটে গেল।ভোরবেলা কয়লার উনুনে আঁচ দেওয়ার ধোঁওয়ায় দিনের শুরু আর রাতে সদর দরজায় তালা পড়ে দিনের শেষ, এই সীমার মধ্যেই ছিল আমাদের সব গতিবিধি।আমরা জানতেই পারলাম না যে কোনটা আধুনিক গ্লোবাল উচ্চারন, ‘ডিরেক্ট’ না ‘ডাইরেক্ট’; ‘ফিনান্স’ না ‘ফাইনান্স’।‘সিওর’ কে ‘স্যুয়োর’ বলার কায়দাও রপ্ত হল না।সরস্বতী পূজো আর দোলের দিনে আমাদের চিত্ত নিশ্চিত ভাবেই একটু বেশীই চঞ্চল থাকত।আড় চোখেই যেটুকু দেখা। রোজকার চেনা হলেও, “হাই বেবী” বলে সম্বোধনের সাহস দেখাতে পারিনি।

ইস্কুল শেষ করে কলেজ এবং তারও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরেও আমাদের জীবন যে একই রকম রয়ে গেল তার প্রধান কারণ ছিলেন আমাদের শিক্ষককুল।পেপার লেখা বা বিদেশ যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্বন্ধে আমাদের বিন্দুমাত্র উৎসাহিত না করে তারা আমাদের সেই সব আকাশছোঁওয়া প্রাতিষ্ঠানিক মিনারগুলিকে প্রশ্ন করতে শেখালেন।নিতান্তই আটপৌরে দিনযাপন করা এই মানুষগুলির কাছেই জানলাম কিভাবে পাড়া-প্রতিবেশী-বন্ধু-আত্মীয়-স্বজনদের সামনে বিদেশী ডিগ্রীধারী-সুউপায়ী-প্রবাসী ভালো ছেলের উদাহরণ না হয়েও জীবন কাটানো যায়।সোজা কথায় স্যানিটাইজারের বদলে খোলা আকাশের নীচে বৃষ্টির জলেই ভিজতে হলো।“Reading Capital” পড়ে আমরা জীবনের রকমারি অর্থ খোঁজার কাজে ব্যাপ্ত হলাম।সুশীল সমাজের আজীবন-সদস্য পদ গ্রহণ করা, আলিগরী পায়জামা পড়ে পচিশে বৈশাখ নিয়ম করে রবীন্দ্রসদনে যাওয়া আর অষ্টমী পূজোয় অঞ্জলি দেওয়া সব অধরাই থেকে গেল।কন্টিনেন্টাল খাবারকে বিজাতীয় ভেবে আমরা অনাদির মোগলাই পরোটা আর কষা মাংসের আকর্ষণেই আটকে থাকলাম।

জ্ঞান ও জীবন

এখন পরিস্থিতির কারনে মশা-ছারপোকা-উই অথবা আরশোলা কিংবা ইদুর মারার ওষুধের থেকেও জনপ্রিয় হয়েছে করোনা ঠেকানোর ওষুধ। মাস্ক-সাবান-স্যানিটাইজার ছাড়িয়ে এখন বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে যে কোন কোন কোম্পানীর তৈরী দেওয়ালের রঙ মায় প্লাইউডও করোনা ঠেকাতে কার্যকর। আর ইমিউনিটির তো কথাই নেই। দুধ-হলুদ থেকে শুরু করে রান্নার তেল, এমনকি কাঁচাকলা ও তেলাকুচো পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে ইমিউনিটির জমিদারি নিয়ে বসে আছে। এখন চেনাজানা মানুষেরা, যাদের আমরা কখনও সন্দেহ করিনি, তাদের স্বাস্থের গূঢ় রহস্য প্রকাশ করছেন। আমরা এখন জানতে পারছি বুলবুলি পিসীর মাসতুতো ননদের জা ছোট থেকেই হলুদ ছাড়া দুধ খাননি। অথবা পাড়ার টাবলুদার খুড়তুতো শালা দুবেলাই ভাতের পাতে তিতপটলের পাতা পাঁচফোড়ন দিয়ে বেঁটে খান। রহস্যের কি শেষ আছে! বাচ্চার ঘ্যানঘ্যানে কান্নার আসল কারন যে ভেজা ন্যাপি, অথবা রান্নায় কোন তেল দিলে এন্তার তেলেভাজা খেলেও যে কলজে টসকে যাবেনা, অথবা ফাইবার দেওয়া বিস্কুট খেলে যে পেট পরিষ্কার হয়ে মন ভালো থাকে, ইত্যাদি নানাবিধ বিজ্ঞাপনী তথ্য রোজই আমাদের জ্ঞান বাড়াচ্ছে। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন এখন সৌন্দর্য বৄদ্ধির উপাদান অথবা স্বাস্থবর্ধক পানীয়ের সীমানা অতিক্রম করে আমাদের জীবনধারনের সচেতনতা তৈরী করতে সক্রিয় হয়েছে। বিজ্ঞাপনের পর্দায় বাবা মায়েরা যখন সন্তান কে উইনার অথবা গ্লোবাল তৈরী করার পন্থা তুলে ধরছেন, তখন এটাও বোঝা যায় যে বিজ্ঞাপন আমাদের মূল্যবোধ তৈরীর ক্ষেত্রেও হাত বাড়িয়েছে। বিজ্ঞাপন আমাদের বোঝাচ্ছে যে আধুনিক হতে গেলে প্রত্যেককে প্রত্যেকের প্রতিদ্বন্দী হতে হবে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রচন্ড গতিতে ছুটে প্রথম হতে হবে। স্মার্ট ফোন আর স্মার্ট টেলিভিশন সেটের সাথে মানানসই স্মার্ট মানুষ, যার সমস্ত দিনটাই ডিজিটাল ও দ্রুতগতি। সেই স্মার্ট পরিবারের শিশু অনলাইনে অডিও ভিসুয়াল শিক্ষা লাভ করে। তার মা পাশে বসে সেই স্টাডি মেটিরিয়ালের মান পরখ করেন। বাবা চিন্তিত সেই শিক্ষার সময়োপযোগিতা নিয়ে। শিশুরা একসাথে বসে কম্পিউটারে ব্রেন-গেমস খেলে। সন্তানদের বন্ধু বেছে দিতে অভিভাবকেরা যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন। সন্তান দ্রুত কম্পিউটার কোড লিখতে শিখলে মা-বাবা গর্বিত হন। অনলাইন জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পরা কিশোর-কিশোরীর স্বপ্ন কম্পিটিটিভ পথ ধরে লঙ ড্রাইভে মোটা মাইনের কর্পোরেট চাকরী-বিদেশী গাড়ি-বিদেশে ছুটি কাটানো-পঁচিশতলার ফ্ল্যাটে দূষণহীন প্রাকৄতিক পরিবেশে দিনযাপনের দরজায় পৌছে যায়। হঠাৎ রাস্তায় বা আপিস অঞ্চলে বন্ধুদের সাথে আর দেখা করার দরকার হয়না। সারাদিনই ফেসবুক অথবা গ্রুপ-হোয়াটস্আ্যপ পোস্টে দেখে বা পূর্ব নির্ধারিত গেট-টুগেদারে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি রেস-ট্র্যাকে প্রতিদ্বন্দীদের তুলনায় আমি কতটা এগিয়ে আছি। সেলফির জন্য গলাগলি করে পোজ দিলেও অকারনে হেসে উঠতে পারিনা। পিছিয়ে পরলেই ডিপ্রেশন জড়িয়ে ধরে। তখন বারান্দায় একলা বসে রাতের আকাশ দেখতে দেখতে মদ খাই। জড়াজড়ি করে দুজনে যৌনক্রীড়া করি, আমি আর আমার স্মার্টফোন।

সিগনাল মেনে চলুন

ছোটবেলায় জেনারেল নলেজ সিলেবাসে ট্র্যাফিক সিগনালের নিয়ম পড়তে হত। এখন মার্কেট সিগনাল বুঝতে শেখাটা আবশ্যিক, না হলে কম্পিটিশনে পিছিয়ে যেতে হবে। এই কথাটা মাইক্রোচীপ আকারে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেই সফল হয় শিক্ষা। দ্রুত সিড়ি চড়তে শুরু করি। আকাশ ছোঁওয়া উচ্চতায় সকলের আগে একলাই উঠতে চাই কেননা ওখান থেকে দুনিয়াটা যেমন দেখা যায় তেমন আর কোনখান থেকে নয়। ক্রমশঃ সুতো ছিড়ে যেতে থাকে। মেঘ ছাড়িয়ে আরও একলা হয়ে যাই। স্মার্ট মস্তিষ্ক আমাকে বিষন্ন হতে দেয়না। এবার শুরু হয় নিজের সাথে রেস। সীমাহীন একটা মাঠে চলতে থাকে নিরন্তর দৌড়। আমাকে নিয়ন্ত্রন করে যায় মার্কেট সিগনাল। রক্ত-মাংস-আবেগ-মোহ-ভালোবাসা সবই চলে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের প্রোগ্রাম মাফিক। জীবন চলতে থাকে অনলাইন। অর্থহীন হয়ে ওঠে চায়ের দোকান-পাড়ার রোয়াক-লেবুতলা বাজার।

ভার্চুয়াল কম্যুনিটি

বাড়িতে অতিথি সমাগম হলে আমরা ছোটরা বিশেষ উৎফুল্ল হতাম। প্রথমত পড়তে বসা থেকে রেহাই। তবে দ্বিতীয় কারনটা আরও অনেক বেশী আকর্ষনীয়। আগমন পূর্বনির্ধারিত হলে তো কথাই নেই, হঠাৎ এসে পড়া অতিথিদের ক্ষেত্রেও লুচির সাথে আলুর দমের (শীতকালে ফুলকপি) আর হাঁসের ডিমের কষার থেকে আমরাও বাদ যেতাম না। এখন সামাজিকতাও স্মার্ট হয়েছে। আমাদের মাস্টারমশায় কল্যান সান্যাল বলতেন ভারচুয়ালও এবং সেটা গৄহকর্তা ও অতিথি দুই পক্ষেরই জানা এবং সেই নিয়ম তারা মেনেও চলেন। বিষয়টা উনি বুঝিয়ে ছিলেন একটা অসম্ভব উদাহরন দিয়ে। এখন নাকি প্লেটে সাজিয়ে দেওয়া খাবার খাওয়ার নিয়ম নেই। খাবার পরিবেশিত হলে প্রশংসা করে ও ধন্যবাদ জানিয়ে তা প্লেটেই রেখে দিতে হয়। তারপর অতিথি বিদায় নিলে গৄহকত্রী বিধি মেনে সেগুলি আবার তুলে রাখেন পরের বার পরিবেশনের জন্য। এই ভাবে একই খাবার দিনের পর দিন চলতে থাকে। এর ফলে এখন নাকি আসল খাবার আর তৈরীই হয়না। সবই মাটির। কৄষ্ণনগরে বানানো হয়। হয়তো সব সম্পর্কও এখন এই ভাবেই তৈরী হয়। আর তৈরী হয় সেগুলি চালানোর সিগনাল বিধি।

ফুটনোট

কয়েক দিন আগে একটা সিনেমা দেখলাম, নাম Wall-E। একটা দৄশ্যে দেখলাম অনেক মানুষ পথ হাঁটছেন। সবাই একা। কেউ কারো সাথে কথা বলছেন না। আর সবাই প্রচন্ড ব্যস্ত নিজের নিজের গন্তব্যে পৌছনোর জন্য। হঠাৎই এক জন পড়ে গেলেন। অন্য কেউ এগিয়ে এসে তাঁকে তুললেন না। মানুষটিও যেন এটা জানতেন। তিনি কাউকে অনুরোধও করলেন না। পকেট থেকে একটা যন্ত্র বের করে সিগনাল পাঠালন, কয়েকটা রোবট এসে ওনাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেল।

0 comments: