3
undefined undefined undefined

গল্প - অচিন্ত্য দাস

Posted in








একটা বিজ্ঞাপন কোম্পানীতে ছবি আঁকার কাজ করি। তা চাকরিটায় সুযোগ-সুবিধে আছে, মাইনেও ভালো। আমার বয়স সবে আঠাশ… সে তুলনায় ভালোই রোজকার করি। সুখেই থাকার কথা, ছিলামও। কিন্তু কয়েক দিন হলো মনটা একদম ভালো নেই। একদম না।

পরীর সঙ্গে বছরখানেক ধরে একটা সম্পর্ক চলছিল –গত সপ্তাহে সেটা আচমকা কেটে গেলো। কারণ হলো নিনা। মডেল। আমার দিকে ঝুঁকেছিল আর আমিও বাধা দিইনি। বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় এসব তো হয়েই থাকে। কিন্তু নিনা আমাদের দুজনের কিছু ছবিটবি তুলে কী করে যেন পরীকে পাঠিয়ে দিয়েছিল। ব্যাস, পরী বেঁকে বসল। বোঝাতে গিয়ে উল্টো ফল হলো। এখন ফোনও ধরছে না।

আসলে আমি আগে ঠিক বুঝতে পারিনি যে পরীর সঙ্গে তলেতলে এতটা জড়িয়ে পড়েছি। এই এখন টের পাচ্ছি। নিজেকে সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসী লাগছে আজকাল। কোনো কিছুতেই মন বসছে না। ভাবছি এখন স্রেফ ব্রহ্মচারীর মতো দিন কাটাবো। পরী বোধহয় আর কখনো আমার কাছে ফিরে আসবে না।

*****

এক ক্লায়েন্টের বিজ্ঞাপন তৈরির জন্য সমুদ্রের ধারে একটা ‘ফটো সেশন’ ছিলো। জায়গাটা গোয়ার কাছে। অনেকের সঙ্গে আমাকেও যেতে বলেছিল। গিয়েছিলাম। দিন তিনেকের ভেতর কাজ হয়ে গেল। সকলে চলে গেলেও আমি একাই সেখানে রয়ে গেলাম – কদিন ছুটি নিয়ে ‘ব্রহ্মচর্য পালন’ করতে। সমুদ্রের ধারেই হোটেল। পশ্চিম-সাগর বড় চুপচাপ, রংটাও ধূসর। তার ওপর এখন আবার ‘অফ সীজন’ চলছে। নিস্তব্ধ, মন হু হু করা জায়গা। শুনলাম বসন্তকালে মানে ফেব্রুয়ারী-মার্চে এখানে বড় মেলা বসে। তখন নাকি জায়গাটা খুব জমজমাট হয়ে যায়। সে তো এখন ঢের দেরি, নতুন বছর পড়বে তার দুমাস পরে। হোটেল তাই খালি।

হোটেলের সামনে বাগান, সেখানে যত্নে রাখা সবুজ ঘাসের জমি। সকালবেলা। ইজেল দাঁড় করিয়ে বালুতীর আর সমুদ্দুরের ছবি আঁকছি….

- “আঙ্কেল, তুমি এটা কী আঁকছো? সমুদ্র?”

একটা ছ-সাত বছরের ছেলে, বাবা-মার সঙ্গে বেড়াতে এসেছে নিশ্চয়।

-“হ্যাঁ”

-“তোমার কি এই কটা রংই আছে.. খয়েরি, নীল আর গ্রে?”

-“না তা কেন… গোটা বাক্স আছে। সামনে যা দেখা যাচ্ছে তা আঁকতে তো এর বেশি কিছু লাগছে না”

-“আমিও সমুদ্রতীর আঁকব, কাগজ দেবে”

দিলাম।

-“না, কাঠের ওটাতে লাগিয়ে দাও”

-“আরে তুমি হাত পাবে না, উঁচু হয়ে যাবে”

-“না, পাবো”

বাগানের একটা চেয়ার টেনে তার ওপর দাঁড়িয়ে পড়ল।

-“আচ্ছা আঁকো”। ইজেলে একটা কাগজ লাগিয়ে দিলাম।

-“রংএর বাক্স দাও”

-“বাক্স কী হবে, এই তো কটা বার করা আছে”

-“না, পুরো বাক্স লাগবে”

প্যাস্টেলের বাক্সটা দিলাম।

এই সময় আপিস থেকে একটা ফোন এল। ফোনটা এসে যাওয়াতে অন্যদিকে চলে গিয়েছিলাম... লম্বা ফোন ছিল। ফোন পকেটে রেখে ফিরে এসে দেখি বিচিত্র এক ছবি এঁকেছে ছেলেটা।

-“সমুদ্রের ধারে এসব কী?”

-“বাবা বলেছে, এখানে মেলা বসে। তাই এঁকেছি”

-“বাঃ, খুব সুন্দর হয়েছে…”

ছোট ছেলেদের মন জলের মত। এক জায়গায় বেশিক্ষণ থাকে না। ছবিতে তার আর মন নেই – একটা পাখি বালিতে এসে বসেছিল, দৌড়ে গিয়ে সেটাকে উড়িয়ে দিয়ে সেখানেই বসে পড়ল, ঝিনুক পেয়েছে একটা…

নাঃ, ছেলেটার ছবি আঁকার হাত আছে খানিকটা। বেশ এঁকেছে। আমার মতো ম্যাড়মেড়ে ছাইরঙা সাগর না করে, জলে ভাসিয়ে দিয়েছে নানা রঙের পালতোলা নৌকো। বালুকা বেলায় মেলা বসেছে। বেলুনওয়ালা, নাগরদোলা, আইসক্রীমওয়ালা। একটা ছেলে আবার সবুজ রঙের কাঠি-আইসক্র্রীম চুষছে। কটা লাল-হলদে-বেগুনী গ্যাস বেলুন কারুর হাত ফসকে উড়ে যাচ্ছে। একটা রংও বাকি রাখেনি ছেলেটা।

ছবিটা দেখে কি জানি কেন মনটা এতদিন পরে বেশ ফুরফুরে লাগছিল।

মাটিতে ছড়িয়ে থাকা রংগুলো তুলে রাখতে গিয়ে মনে হল – অতিক্রান্তপ্রায় সকালের এই ধুধু সমুদ্র, এই জনহীন বেলাভূমি, এমন কি ইজেলে লাগানো এই সাদা কাগজ, এসব বড় দূরের বলে মনে হচ্ছে। এরা দুঃখীও নয়, সুখীও নয়। এদের থেকে অনেক অনেক কাছের বন্ধু আমার রঙের বাক্সটা। এই ছেলে, ভাগ্যে তুই এসেছিলি! রঙের বাক্সতে যে আসছে বছরের রঙচঙে ছবিও ভরা থাকতে পারে তা তোর কাছেই আজ শিখলাম রে…

পকেট থেকে ফোন বার করে পরীর নম্বর লাগালাম। দেখিই না কী হয়…

3 comments:

  1. Very positive thought.sokal sokal mon ta besh foor foor e hoye gelo.

    ReplyDelete
  2. আমরা রঙের বাক্স খুলতে ভয় পাই। কেউ এসে ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়ে গেলে পুরানো বন্ধুকে ডেকে নতুন বছর কাটাতে হয়। এটাই নতুন করে জানলাম এই গল্প থেকে। হোলির রঙে রাঙিয়ে দিলো অচিন্ত্য।

    ReplyDelete
  3. আমরা রঙের বাক্স খুলতে ভয় পাই। কেউ এসে ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়ে গেলে পুরানো বন্ধুকে ডেকে নতুন বছর কাটাতে হয়। এটাই নতুন করে জানলাম এই গল্প থেকে। হোলির রঙে রাঙিয়ে দিলো অচিন্ত্য।

    ReplyDelete