0

প্রবন্ধ - দিলীপ মজুমদার

Posted in






জন্মশতবর্ষের (১৯২০—১৯৪২) শ্রদ্ধার্ঘ

সোমেন চন্দ নিহত হয়েছেন ১৯৪২ সালের ৮মার্চ। এমন কিছু বেশিদিনের কথা নয়। তবু তিনি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর লেখা নতুন করে ছাপা হয়নি। এপার বাংলার কমিউনিস্ট দলের নেতারা তাঁর নাম জানলেও তাঁর লেখা বা কাজকর্ম সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানতেন না। ওপার বাংলা থেকে তাঁর যেসব বন্ধু বা আত্মীয় এপার বাংলায় চলে এলেন, তাঁরাও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার বিশেষ কোনও উদ্যোগ দেখাননি।

১৯৭২ সালে, যখন জরুরি অবস্থা চলছে, জাতীয় গ্রন্থাগারে ‘পরিচয়’ আর ‘অরণি’ পত্রিকায় আমি সোমেনের গল্প পড়ে কৌতূহলী হই। আমি এই লেখকের সম্বন্ধে কিছুই জানতাম না। কিছুটা পথ দেখালেন প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা মুজফফর আহমদ। বহু কষ্টে সোমেনের ২০টি গল্প সংগ্রহ করলাম। সেগুলি নিয়েই ১৯৭৩ সালে নবজাতক প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হলো ‘সোমেন চন্দ ও তাঁর রচনা সংগ্রহ’। সেই বইয়ের সমালোচনা ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় প্রকাশিত হবার পরে হাওড়ার দাশনগরের নির্মলকুমার ঘোষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর কাছ থেকে সোমেনের একটি অসমাপ্ত উপন্যাস ও ৪টি গল্প পেলাম। এসব নিয়ে ‘সোমেন চন্দ ও তাঁর রচনা সংগ্রহে’র ২য় খণ্ড প্রকাশিত হয়।

আজ সোমেন চন্দ সাহিত্য জগতে পরিচিত হয়েছেন। তাঁর সম্পর্কে নানা জন প্রবন্ধ লিখছেন। এসব দেখে আমি তৃপ্তি লাভ করি। পঞ্চাশ বছর আগে যে চেষ্টা আমি শুরু করেছিলাম, তা সফল হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্থান পেয়েছেন সোমেন চন্দ। তিনি কমিউনিস্ট দলের সদস্য ছিলেন, সেটা তাঁর একটা পরিচয়। কিন্তু তার চেয়ে বড় পরিচয়, তিনি একজন লেখক। আবার শুধু নিছক লেখক নন, সত্যিকারের মানুষের কথাকার। তাই অতি বড় শত্রুও বলতে পারবে না যে সোমেনের লেখা রাজনৈতিক প্রচারের যন্ত্র। এত অল্প বয়সে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার সারনির্যাস কীভাবে তাঁর অন্তরে গেঁথে গেল, তা ভাবলে অবাক লাগে। জীবনে জীবন যোগ করতে পেরেছিলেন এই তরুণ কথাকোবিদ। সেজন্য তিনি আজও স্মরণীয়। ‘ঋতবাক’এর পাঠকরা আমার এই লেখাটি পড়ে সোমেন চন্দ সম্পর্কে জানতে, বুঝতে আগ্রহী হলে কৃতার্থ বোধ করব।

0 comments: