গল্প - সুদীপ ঘোষাল
Posted in গল্প১
বন্ধুদের প্রিয় অভিরাম ছোট থেকেই দলগঠনে অভিজ্ঞ। অভিরাম ছিল উল্লাসের ছদ্মনাম।
এক একজন জন্মগত প্রতিভা নিয়ে জন্মান। অবিভক্ত বাংলায় অভিরাম সিরাজ,ভোম্বল ও আরও অনেকের সঙ্গে স্কুলে ভরতি হল। শিক্ষকমশাইরা তার নব নব উদ্ভাবনী শক্তি দেখে অবাক হতেন। অভিরাম হাতের কাজ ভালো জানত। সে কাগজের ফুল, নৌকা বানাত।
সিরাজ বলত, আমাকে একটা গোলাপ ফুল তৈরি করে দে।
অভি বলত, দে তোরটা আগে করি। তারপর অন্যজনের। উল্লাসকরের জন্ম হয় তদানিন্তন অবিভক্ত বাংলার ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামে। তার পিতার নাম দ্বিজদাস ।
কালিকচ্ছ গ্রাম সবুজে ভরা। গ্রামের লোক প্রসাদ পান।
অভি বন্ধুদের বলেল আমার মামারবাড়িও মনে হচ্ছে যেন আমার জন্মস্থান। আমার গ্রাম। স্বপ্নের সুন্দর গ্রামের রাস্তা বাস থেকে নেমেই লাল মোড়াম দিয়ে শুরু ।দুদিকে বড় বড় ইউক্যালিপ্টাস রাস্তায় পরম আদরে ছায়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে । কত রকমের পাখি স্বাগত জানাচ্ছে পথিককে । রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত বেজি , শেয়াল আরও অনেক রকমের জীবজন্তু।.চেনা আত্মীয় র মতো অতিথির কাছাকাছি তাদের আনাগোনা । হাঁটতে হাঁটতে এসে যাবে কদতলার মাঠ। তারপর গোকুল পুকুরের জমি, চাঁপপুকুর, সর্দার পাড়া,বেনেপুকুর । ক্রমশ চলে আসবে নতুন পুকুর, ডেঙাপাড়া ,পুজোবাড়ি, দরজা ঘাট, কালী তলা । এখানেই আমার চোদ্দপুরুষের ভিটে । তারপর ষষ্টিতলা ,মঙ্গল চন্ডীর উঠোন , দুর্গা তলার নাটমন্দির । এদিকে গোপালের মন্দির, মহেন্দ্র বিদ্যাপীঠ, তামালের দোকান, সুব্রতর দোকান পেরিয়ে ষষ্ঠী গোরে, রাধা মাধবতলা । গোস্বামী বাড়ি পেরিয়ে মন্ডপতলা । এই মন্ডপতলায় ছোটোবেলায় গাজনের সময় রাক্ষস দেখে ভয় পেয়েছিলাম । সেইসব হারিয়ে যাওয়া রাক্ষস আর ফিরে আসবে না ।কেঁয়াপুকুর,কেষ্টপুকুরের পাড় । তারপর বাজারে পাড়া ,শিব তলা,পেরিয়ে নাপিত পাড়া । এখন নাপিত পাড়াগুলো সেলুনে চলে গেছে । সাতন জেঠু দুপায়ের ফাঁকে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরতেন মাথা ,তারপর চুল বাটি ছাঁটে ফাঁকা । কত আদর আর আব্দারে ভরা থাকতো চুল কাটার বেলা ।এখন সব কিছুই যান্ত্রিক । মাঝে মাঝে কিছু কমবয়সী ছেলেমেয়েকে রোবোট মনে হয় । মুখে হাসি নেই । বেশ জেঠু জেঠু ভাব ।সর্বশেষে বড়পুকুর পেরিয়ে পাকা রাস্তা ধরে ভুলকুড়ি । আর মন্ডপতলার পর রাস্তা চলে গেছে খাঁ পাড়া , কাঁদরের ধার ধরে রায়পাড়া । সেখানেও আছে চন্ডীমন্ডপতলা , কলা বা গান, দুর্গা তলার নাটমন্দির সব কিছুই ।
সিরাজ বলে, পুজোবাড়িতে গোলা পায়রা দেখতে গেলে হাততালি দিই ।শয়ে শয়ে দেশি পায়রার দল উড়ে এসে উৎসব লাগিয়ে দেয়। পুরোনো দিনের বাড়িগুলি এই গ্রামের প্রাণ তারপর চলে এলাম গ্রামের মন্ডপতলায়। এই গ্রামে আমার জন্ম। লেখিকা সুজাতা ব্যানার্জী এই গ্রামের কন্যা।তার দাদু ছিলেন ডাঃ বিজয় বাবু।এখনও এই বাড়িগুলো গ্রামের সম্পদ।ডানদিকের রাস্তা ধরে হাঁটলেই খাঁ পাড়া। গ্রামের মাঝে গোপাল ঠাকুরের মন্দির,কৃষ্ঞ মন্দির।
অভি ছোট থেকেই হাতে গড়া কাজ করতে সমর্থ ছিল। সে নানা রকম হাতের কাজে অভিজ্ঞ ছিল। সে যখন স্কুলে ক্লাস দশম শ্রেণীতে পরে তখন সে নানা রকম বাজি বা পটকা দোকান থেকে কিনে তার মসলা দিয়ে বড় বড় চকলেট বোমা বানাতো এবং বন্ধুদের সেটা দেখিয়ে আশ্চর্য করে দিত। পটকার এত আওয়াজ ছিলো যে, পাঁচটা গ্রামে পর্যন্ত শোনা যেত। এইভাবে ধীরে ধীরে অভি বোমা বানানো ও নানা রকম কাজ মশলাপাতি দিয়ে দোকান থেকে কিনে সে বোমা বানানোতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠলো। বোমা বানানোয় ছোট থেকেই ধীরে ধীরে অভিজ্ঞ হয়ে উঠলো।
অভির স্কুলের নাম ছিল উল্লাস। উল্লাস উল্লাসকর দত্ত। তার বাবা-মা কিন্তু তার এই বাজি পটকা বানানো নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিল। তার বাবা-মা খুব ভয় করত কারন ইংরেজদের অত্যাচারে চারদিকে হাহাকার। ইংরেজরা গ্রামের লোকদের কাছে অতিরিক্ত কর নিত। তারপর গ্রামের মানুষদের কোন কারণ ছাড়াই অত্যাচার করত মারধোর করতো। ভারতীয়দের কোন সম্মান ছিল না। ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের অত্যাচার করে অপমান করে তাদের শাসন চালাত
ধীরে ধীরে উল্লাসকর দত্ত বড় হলেন এবং যুবক হলেন উদোম না একদম প্রাণবন্ত যুবক তার সঙ্গে যে দেশে এসেই যেন হয়ে ওঠে এবং ভবিষ্যতে যে নিজের কাজ করে যায় তারপর উল্লাসকর দত্ত বড় হয়ে কলেজে ভর্তি হলেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ এর ছাত্র ছিলেন, এবং পরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃষিবিদ্যায় ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে কলেজে পড়ার সময় ইংরেজ অধ্যাপক রাসেল বাঙালিদের সম্পর্কে কটূক্তি করার দরুন উল্লাসকর তাকে আঘাত করেন, এজন্য উল্লাসকরকে কলেজ হতে বহিষ্কার করা হয়েছিল । এই সময় থেকে তার জীবনে পরিবর্তন আসে।
উল্লাসকর দত্ত এর মাথায় এখন ব্রিটিশদের তাড়ানোর পরিকল্পনা মাথায় এলো। কিভাবে ব্রিটিশদের ভারত ছাড়া করা যায় তার চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে থাকলেন। তিনি বুঝলেন একা একা আন্দোলন করা সম্ভব নয় তাই তিনি দল গঠন করতে শুরু করলেন এবং যোগ দিলেন যুগান্তর দলে।
উল্লাসকর যুগান্তর দলে যোগ দেওয়ার পর তিনি বিস্ফোরক নির্মাণে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তার ফরমূলায় তৈরী বোমা পরীক্ষা করার জন্যে একদল বিপ্লবী বেছে নেন দেওঘরের নিকট নির্জন দীঘারিয়া পাহাড়। ১ মে, ১৯০৮ সালে সেই পরীক্ষার দিন বোমা ছোড়ার সময় আহত হয়ে মারা যান বিপ্লবী প্রফুল্ল চক্রবর্তী ও উল্লাসকর মারাত্মক জখম হন। গোপনে কলকাতায় তার চিকিৎসা করেন ডাক্তার ও বিজ্ঞানী ইন্দুমাধব মল্লিক।
আহত উল্লাসকর দত্ত মনের জোরে আবার সুস্থ হয়ে ওঠেন। তিনি পুনরায় শুরু করেন বোমা নির্মাণ করা। বোমা নির্মাণ করে তিনি বিপ্লবীদের সাপ্লাই দিতে শুরু করলেন এবং তার বোমা বিভিন্ন বিপ্লবী ব্যবহার করতে শুরু করলেন।তখন কিংসফোর্ড এর অত্যাচারে ভারত বর্ষ উত্তাল। গ্রামে কিংসফোর্ডের অত্যাচার সহ্য করা যাচ্ছে না। উল্লাস সামনে দেখেন একটা লোককে একদিন কিংসফোর্ড মারধর করে মেরে ফেললেন এবং তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে বট গাছে টাঙিয়ে রাখা হলো। তার ভয়ে সাধারন জনতা কথা বলতো পর্যন্ত বলতে পারত না । ম্যাজিস্ট্রেট নামের কলঙ্ক ছিলেন এই কিংসফোর্ড।
এদিকে ক্ষুদিরাম, কিশোর ক্ষুদিরামের মতো সাহসী ছেলে দেশে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। নানা রকম খবরের কাগজ থেকে আরম্ভ করে গোপন তথ্য সরবরাহ করতেন বিপ্লবীদের। কিশোর ক্ষুদিরাম বিপ্লবীদের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন।
ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার। তার মার নাম লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী। তিন কন্যার পর তিনি তার মায়ের চতুর্থ সন্তান। তার দুই পুত্র অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অপর পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তার পুত্রকে তার বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো চালের খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে শিশুটির নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা হয়। ক্ষুদিরামের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর তখন তিনি তার মাকে হারান। এক বছর পর তার পিতার মৃত্যু হয়। তখন তার বড়ো দিদি অপরূপা তাকে দাসপুর থানার এক গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায় ক্ষুদিরামকে তমলুকের হ্যামিল্টন হাই স্কুলএ ভরতি করে দেন।কিন্তু কিশোর ক্ষুদিরাম ছোট থেকেই ইংরেজদের অত্যাচার দেখে এসেছে। তাই ব্রিটিশদের ভারতবর্ষ থেকে তাড়ানোর জন্য সেও গোপনে বিপ্লবী দলে যোগ দেয়।
মেদিনীপুরে ক্ষুদিরামের বিপ্লবী জীবনের অভিষেক। তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায় যোগ দেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন হেমচন্দ্র দাসের সহকারী। এটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্রিটিশবিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত হতো। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলীর জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। ক্ষুদিরাম সত্যেন্দ্রনাথের সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান। ক্ষুদিরাম তারই নির্দেশে 'সোনার বাংলা' শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করে গ্রেপ্তার হন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কাঁসাই নদীর বন্যার সময়ে রণপার সাহায্যে ত্রাণকাজ চালান। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে বারীন্দ্র কুমার ঘোষ তার সহযোগী হেমচন্দ্র কানুনগোকে প্যারিসে নির্বাসনে থাকা একজন রাশিয়ান নিকোলাস সাফ্রানস্কি-এর কাছ থেকে বোমা তৈরির কায়দা শেখার জন্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।বঙ্গ প্রদেশ ফেরার পর হেমচন্দ্র এবং বারীন্দ্র কুমার আবার দুজনের সহযোগিতায় ডগলাস কিংসফোর্ডকে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেন। কিংসফোর্ড আলিপুর প্রেসিডেন্সি বিচারালয়ের মুখ্য হাকিম ছিলেন, যার হাতে ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত এবং যুগান্তরএর অন্যান্য সম্পাদকদের মামলা চলছিল। যাঁদের তিনি কঠোর সাজা শুনিয়েছিলেন। যুগান্তর দ্বন্দ্বমূলক সম্পাদকীয় লিখে তার প্রতিক্রয়া জানায়, ফলে এব্যাপারে আরো পাঁচজন অভিযুক্ত হলে এই সংবাদপত্র ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এসমস্ত অভিযোগে সংবাদপত্রের প্রচার বৃদ্ধি পায় এবং এতে অনুশীলন সমিতির জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী আদর্শ প্রচারের সহায়ক হয়। শুক্লা সান্যালের মতে, বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ একটা আদর্শ হিসেবে প্রত্যক্ষ না-হলেও অঘোষিতভাবে বঙ্গ প্রদেশের জনতার সমর্থন আদায় করেছিল।যুগান্তর মামলার বিরুদ্ধে প্রচারে অংশ নেওয়ায় একজন বাঙালি ছেলে সুশীল সেনকে চাবুক মারার সাজা দেওয়ায় কিংসফোর্ড সাহেবের জাতীয়তাবাদীদের কাছে কুখ্যাতি ছিল। যেমন আলিপুর প্রেসিডেন্সি আদালতে মুখ্য হাকিম হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার সময় থেকেই নবীন রাজনৈতিক কর্মীদের কঠোর ও নিষ্ঠুর বাক্য প্রয়োগ করতেন। তিনি ওইসব কর্মীদের শারীরিক নির্যাতনের সাজা দিতেন।
উল্লাসকরের তৈরি বোমাই ক্ষুদিরাম বসু ও হেমচন্দ্র দাস ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে আক্রমণে ব্যবহার করেছিলেন। তবে এই হামলা বানচাল হয়ে যায়, এবং পুলিশ উল্লাসকর দত্ত সহ যুগান্তর দলের অনেক সদস্যকে গ্রেফউল্লাসকর দত্ত তখন ‘অভিরাম’ ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। তাঁর তৈরি বোমা ছুড়েই ক্ষুদিরাম ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে বহনকারী গাড়ি ভেবে ভুল করে দুজন ইংরেজ মহিলাকে হত্যা করেছিলেন। এ অপরাধে ২ মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ উল্লাসকরকে মুরারিপুকুর বাগান থেকে গ্রেফতার করে। পরের দিনই মোজাফফরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইংরেজ ব্যারিস্টার কেনেডি সস্ত্রীক নিহত হন। এ সকল ঘটনা ইংরেজমহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলে কয়েক দিনের মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ কলকাতার মানিকতলায় বোমা তৈরির গোপন কারখানাটি খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়।গোয়েন্দা রিপোর্টে প্রমাণিত হয় যে, ৩০ এপ্রিল ক্ষুদিরাম কর্তৃক নিক্ষিপ্ত বোমাটি ছিল উল্লাসকরের তৈরি।বিচারে ক্ষুদিরাম ও বারীন্দ্রকুমার ঘোষের সঙ্গে মানিকতলা (আলীপুর) বোমা মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে উল্লাসকরকেও মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। তবে ১১ আগস্ট ক্ষুদিরামের মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর হলে উল্লাসকর তাঁর আইনজীবী চিত্তরঞ্জন দাশ-এর বিজ্ঞতায় অব্যাহতি পান ও ১৯০৯ সালে বারীন ঘোষের সঙ্গে তিনি আন্দামানে দ্বীপান্তরিত হন। ১৯২০ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন।১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে জন্মভূমি কালীকচ্ছের বাঘবাড়িতে উল্লাসকর ফিরে আসেন। দীর্ঘ দশবছর নিঃসঙ্গ জীবন অতিবাহিত করার পর জীবনের শেষ দিনগুলি নিজেদের আখড়ায় কাটানোর বাসনায় তিনি কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ১৯৬৫ সালের ১৭ মে কলকাতায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে। উল্লাসকর ২ মে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে মুরারিপুকুর বাগানে ধরা পড়েন । ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে আলিপুর বোমা মামলা নামের এই বিখ্যাত মামলায় উল্লাসকর এবং বারীন ঘোষকে ফাঁসীর আদেশ দেয়া হয়। তবে পরবর্তীকালে এই সাজা রদ করে তাকে আন্দামানের সেলুলার জেলে যাবজ্জ্বীবন দ্বীপান্তরের সাজা দেয়া হয়।আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেলে উল্লাসকর দত্তকে শারীরিক নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়। এর ফলে তিনি সাময়িকভাবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৯২০ সালে তাকে মুক্তি দেয়া হলে তিনি কলকাতা শহরে ফেরৎ আসেন।উল্লাসকরকে পরে ১৯৩১ সালে আবারও গ্রেফতার করা হয়, ও ১৮ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়। ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের পর তিনি গ্রামের বাড়ি কালিকচ্ছ ফেরৎ যান।১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ৬৩ বছর বয়েসে বিশিষ্ট নেতা বিপিনচন্দ্র পালের বিধবা মেয়েকে বিয়ে করেন । সেখানে ১০ বছর কাটানোর পর তিনি ১৯৫৭ সালে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন। উল্লাসকর তার শেষ জীবন শিলচরে কাটান।
২
নিজের বাড়ি থেকে অশান্তির চাপে দীনেশ চলে এল শহরে। সে বিবাহিত। ঘর নেই, চাকরি নেই অথচ একটা সন্তান আছে বৌ আছে। বউকে কয়েকদিনের জন্য বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিল। নিজে একা শহরে থেকে ছাত্র পড়ানো শুরু করল। নিজেই রান্নাবান্না করে। বাসা বাড়িটা ট্রেনের কামরার মত। সেখানে একটা জলের বোতল আর একটা স্টোভ। হোটেলে খাওয়াদাওয়া করে। আর অবসরে চা খেতে মন হলে স্টোভে চা করে খায়। অন্য ভাড়াটে যারা তারা বলে, দীনেশ তুমি তো ট্রেনের যাত্রী। একটা বোতলে জল থাকে আর একটা প্যান্ট জামা পরে থাক সবসময়। দীনেশ হাসে আর মনে মনে ভাবে, আমরা সকলেই কিছু সময়ের জন্য ট্রেনের যাত্রী। স্টেশন এলেই নেমে যেতে হবে। আমরা দুদিনের সহযাত্রী। অতএব তোমার কোটি টাকা থাকলেও সব ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে স্থায়ী ঠিকানায়।
এইভাবে দীনেশের দিন যায়। এখন ছাত্র নেই। তাই ভাড়া ঘর ছেড়ে দীনেশ চলে গেল গঙ্গার ধারে একটা আশ্রমে। সাইকেলে সংসারের সমস্ত জিনিস নিয়ে চলে এল আশ্রমের ঘরে। মশারি টাঙিয়ে রাতে শোয় সে। গঙ্গার ধারে শবদেহ দাহ হয়। দীনেশ দেখে কি করে একটা মানুষ পুড়ে শেষ হয়ে যায়। আশ্রমে টাকা পয়সা লাগে না। আশ্রমের প্রধান দীনেশকে ভালবাসেন। খাওয়াদাওয়া ফ্রিতে হয়ে যায়। শুধু আশ্রমের দরজা ভোরবেলা খুলতে হয়। তারপর মন্দিরের বারেন্দা জল দিয়ে ধুতে হয়।
তারপর সারাদিন অখন্ড অবসর। আশ্রমের প্রধান বলেন, যা, মায়ের কাছে বোস। একটু জপ কর। তোর দুর্দিন কেটে যাবে। দীনেশ তাই করে। তারও বিশ্বাস আছে একদিন নিশ্চয় দুঃখের অবসান ঘটবে।
তারপর দীনেশ আশ্রম থেকে ফিরে আবার ঘর ভাড়া নিল। নতুন সেশন।ছাত্রছাত্রী জুটল অনেক। নব উদ্যমে শুরু করল পড়ানো। এক ছাত্রী একদিন বলল,দাদা, বৌদিকে কাছে নিয়ে এস। দূরে থাকলে মায়া কেটে যাবে। দীনেশ বলল,এলে কষ্ট পাবে। ছেলেটা আছে। আর একজন বড় ছাত্র বলল,আপনি কষ্ট করছেন ওরাও করবে। একসঙ্গে থাকবেন।
দীনেশ বউ বাচ্চা নিয়ে এল বাসা বাড়িতে। এখন রোজগার ভাল। কিছু টাকা জমেছে। বউ বলল,পরপর বাসা পাল্টে বিরক্ত হয়ে গেলাম দুবছরে। আমার গহনা নাও। বিক্রি করে আর কিছু টাকা লাগিয়ে একটা জায়গা কিনে বাড়ি কর নিজের। দীনেশ খোঁজ করল জায়গার।পেয়ে গেল দুকাঠা জায়গা। জায়গা কিনে একটা ঘর বারেন্দা করল। তারপর বাঁশের বেড়া দিল জায়গা জুড়ে। পরিবার নিয়ে মাঝমাঠে বসবাস শুরু করল। তবু শান্তি। নিজের বাড়ি তো। আশ্রমে থেকে মায়ের ইচ্ছায় বাড়ি হল নিজের। ছাত্র পড়ানো শুরু করল চুটিয়ে। বেশ চলতে লাগল পানসি নৌকো।
মাঝমাঠ। চারিদিকে ধানচাষ হয়েছে। বর্ষাকাল। চন্দ্রবোড়া,কেউটে, কালাচ,গোখরো কতরকমের সাপ। ঘরে ঢুকে পড়েছে একদিন গোখরো সাপ। ঘরে আছে দীনেশ। বউকে ডেকে তুলে বাইরে আসে তারা। ভেতরে সাপের দখলাতি। ঘরে ঢুকবে তার উপায় নেই। ফণা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গোখরো। দীনেশ ভাবে, প্রবাদ আছে, বাড়ি গাড়ি আর নারী, দেখেশুনে নিতে হয়। কিন্তু দেখতে গেলে টাকার এলেম চাই। গাড়ি কিনতে গিয়ে খুচরো গুণলে হবে না। নোট চাই নোট।দীনেশ পাশের গ্রাম থেকে সাপ ধরার লোক ডেকে আনল। কিন্তু সে খুব ভীতু। সাপ দেখে আর ধরতে পারছে না। শেষে দীনেশ তার হাত থেকে বড় সাঁড়াশি নিয়ে নিজেই ধরল সাপটা। তারপর জঙ্গলে ছেড়ে দিল।
আর একদিন রাতে চোর এসে কল খুলে নিয়ে চলে গেলো। দীনেশের ইনকাম কম। আবার কি করে জলের কল বসাবে চিন্তা করতে লাগল। কয়েকমাস দূর থেকে জল আনতে হত। সে কি কষ্ট। দূর থেকে জল এনে যে খেয়েছে সেই জানে।
বাঁশের বেড়া। চারদিক খোলা। কোন বাড়ি নেই।শুধু মাঠে চাষিরা এলে একটু আধটু কথা হয়। চাষিরা তাদের কথা বলে। খরচ করে, পরিশ্রম করে চাষ করেও ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় না। গরীব আরও গরীব হয়। ধনীর প্রাসাদ ভরে ওঠে প্রাচুর্যে,গরীবের রক্তের বিনিময়ে। এ কেমন নীতি চাষিরা বোঝে না। তারা মুখ বুজে আজীবন পরিশ্রম করতে করতে একদিন বুড়ো হয়ে যায়। অবস্থার পরিবর্তন হয় না। সমস্ত রক্ত জমা হয় মাথায়। দেশের সুস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে।
সতেরো বছর কেটে যায়। একই অবস্থা সেই চাষ। কোন বাড়িঘর হয়না। দু-একটা বাড়িঘর হয়তো দূরে দূরে দেখা যায়। কিন্তু রাস্তা নেই ঘাট নেই। ঘরে সাপ ঢুকে পড়ে। এই অবস্থায় দিনের পর দিন ভগবানের সুবিচারের আশায় পড়ে থাকে দীনেশ।
দীনেশের ছেলে দিনেন গ্রাজুয়েট হয়। করোনার অতিমারিতে পৃথিবী অসুস্থ হয়ে পড়ে।দীনেশের বউ ঝুমা বলে, এবার এ বাড়ি বিক্রি করে গ্রামে ফিরে যাই চলো। দীনেশ বাড়ি কেনাবেচার দালালদের বলে বাড়ি বিক্রির কথা। শেষে কুড়ি লাখ টাকায় বিক্রি হয় দীনেশের বাড়ি।
দীনেশ ভাবে, গ্রামে বসে থাকলে সে কুড়ি লাখ টাকার মালিক কোনোদিন হতে পারত না। ঈশ্বরের ইচ্ছে হয় তো তাই। তাই এত কষ্টের মধ্যে থেকে দীনেশের বাস মাঝমাঠে। আশ্রমের কথা মনে পড়ে দীনেশের। সেখানে সে মাকে মনের কথা বলেছিল বারে বারে।
দীনেশ এত কষ্টের ফাঁকে লিখে যেত নিজের জীবনকাহিনী। অনেক কথা সঞ্চিত হয়ে বুক ফেটে বেরিয়ে আসত কথামালা। কথামালাগুলো জড়ো হয়ে সৃষ্টি হয় এক বৃহৎ উপন্যাস।
এখন লকডাউনের সময় দীনেশ বাইরে বেরোতে পারে না। লেখালেখির অখন্ড অবসর।
সঠিকভাবে লকডাউন না পালনের ফলে দিন দিন বাড়াতে হচ্ছে বারবার। বিশ্বব্যাপী এই কোভিদ নাইন-টেনের আক্রমণে মানুষ এখন দিশেহারা। কি করে করো না কে রুখে দেওয়া যায় তার জন্য বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা শুরু করেছেন। কিন্তু সময় তো লাগবে মিনিমাম 12 থেকে 14 মাস সেই সময়টা অন্তত লকডাউন এর মাধ্যমে মানুষকে ঘরে বেঁচে থাকতে হবে আর যত সুন্দর ভাবে লালন পালন করা হবে ততো তাড়াতাড়ি আমরাই করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে পারবো। কিন্তু কিছু না ছাড় লোক আছে তারা কোনমতেই বারণ শোনে না কোন বিপদ এইটা গ্রাহ্য করে না পারায় হত বাবেস দিদির যাচ্ছে সিল করে দিয়েছে কিন্তু বাসের তলা দিয়ে লোকজন যাও আশা করছে। ইতালি এবং আমেরিকায় সঠিকভাবে লালন পালন না করার জন্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে থেকে প্রথমে শুরু হয় সেই করো না রোগ ছড়ানোর কারণ প্রথম থেকেই ধীরে ধীরে সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে যায় করনাটক। সঠিকভাবে লকডাউন পালন করলে এই রোগকে সহজেই আটকানো যেত কিন্তু কে শোনে কার কথা ঠিকমত পালন না করা হলে এর ব্যপ্তি চারিদিকে বেড়ে গেল। তারপর সরকার থেকে স্টেপ নেওয়া হল পুলিশি হস্তক্ষেপে হয়তো কিছুটা কমলেও কিন্তু তবুও লুকিয়ে জোরে জঙ্গলের মধ্যে মশারি টাঙিয়ে কেউ তাস খেলে কেউ আড়ালে চার-পাঁচজন গিয়ে গাঁজা টানে এইভাবে তারা সংক্রমিত হতে লাগল এবং নিজের সংক্রমিত হয়ে অন্যকে সংক্রমিত করল। এরূপ বড্ড ছোঁয়াচে একজনের হলেও সমাজের প্রত্যেকের হয়ে যাবে যে j6 আসবে তার সংস্পর্শে আসবে প্রত্যেকের হবে তাই প্রথমেই এই রোগের নিয়ম হচ্ছে হাঁচি-কাশিতে ঢেকে রাখতে হবে এবং সেই ঢেকে রাখা না একা একা ঢাকনাওয়ালা বালতিতে ফেলতে হবে এবং কোনমতেই খোলা জায়গায় হাঁচি-কাশি করা যাবে না।। বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে দু ঘন্টা অন্তর অন্তর অথবা করতে হবে নিজের হাতকে এবং সরকার থেকে স্প্রে করে যে পাড়ায় যে কাজে নেমেছে তাও খুব প্রশংসার যোগ্য। মোটকথা প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে এবং নিজে নিজে সচেতন হলেই তো প্রজ্ঞা অনেকটা প্রশমিত করা যায় কিন্তু সচেতনতা যতদিন না পারছে এই রোগ বাড়তেই থাকবে এবং মৃত্যুহারও বাড়তে থাকবে।মহারাষ্ট্র মুম্বাই কেরালা থেকে প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক বাংলায় প্রবেশ করছে বা অন্যান্য প্রদেশের প্রবেশ করছে এবং তাদের মধ্যে কিছু যৌন সংক্রমিত তাদের প্রথমে সে হাসপাতালে দেখা করতে হচ্ছে এবং হাসপাতালে টেস্ট করে তাদের পেপার দিলেই তবে তারা বাড়ি আসতে পারছে । হিরণ্য তাহলেই রোগ দেখা যাচ্ছে পাড়ায় এসে যদি ধরা পড়ছে তখন রোগ ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং গোষ্ঠী সংক্রমণের ভয় থাকে যাচ্ছে তাই বারবার সরকার থেকে ঘোষণা করা হচ্ছে পরিযায়ী যারা যারা বাইরে থেকে আসবে পরিযায়ী শ্রমিক তারা যেন প্রথমেই হাসপাতালে দেখা করে এবং হাসপাতালে নিজেদের পরীক্ষা করিয়ে তারপর বাড়িতে ঢুকে এতে কোনো বিপদ থাকবে না সুখে থাকতে পারবে তলা বাড়িতে। লকডাউন এর ফলেই পরিচয় শ্রমিকদের দুর্ভোগের সীমা নেই তারা কতদিন বাড়ি আসতে পারেনি ফুটপাতে রাস্তায় পুকুরের পাড়ে তারা সময় কাটিয়েছে এবং কেউ পায়ে হেঁটে কাউকে কাঁধে করে বাসায় চলে করে তারা মাইলের পর মাইল হেঁটে গেছে 14 15 কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে তারা এসেছে তাদের দুর্দশার সীমা নেই। কিন্তু সরকারের তো কিছু করার নেই এখন তো লকডাউন মিলনে ঘোষণা করা হয়েছে ট্রেন বাস সব বন্ধ আবার যদি ঘোষণা করা হয় তিনবার সচল হবে তাহলে দেখা যাবে গোষ্ঠী সংক্রমণের ভয় বেড়ে যাচ্ছে উভয় সংকটের মধ্যে তবু কিছু ট্রেন চালু করা হলো পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য। সব প্রদেশেই পরিচয় শ্রমিকরা নিজের বাড়ি যেতে পারছে সরকার থেকে ট্রেন চালানোর ফলে তারা বাড়ি যেতে পারছে প্রথমে গিয়ে তারা হাসপাতালে দেখা করে নিজেদের পরীক্ষা করিয়ে তারপর সঠিক সিদ্ধান্তে তারা বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে এবং বাড়িতে গিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারছে। মানুষের সভ্য সমাজে চলাফেরা এখন অন্যরকম হয়ে গেল মুখে মাক্স হাতে গ্লাভস আর জুতো পড়ে বাইরে বেরোতে হবে সেই জামা প্যান্টের মত নিয়মিত পোশাক হয়ে গেল। কিছু আজ তিন মাস পরে কিছু কিছু অফিস-আদালত খোলা হয়েছে থার্টি পার্সেন্ট লোক হয়তো কাজে যোগ দিচ্ছে এবার ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে পৃথিবী কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যথেষ্ট একটু অসাবধান হলেই কিন্তু বিপদ ওৎপেতে গাড়ি আছে কাগজ বাপুরে আয় এখনো স্কুল খোলা হয়নি স্কুলের ছোট ছোট কচিকাঁচারা যাতে রোগে আক্রান্ত না হয় সেই জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত। ডাক্তার নার্স আর পুলিশ রা নিজের জীবন বিপন্ন করে জনগনের সেবায় দিনরাত বাইরে কাজ করছে সঠিক সাবধানতা অবলম্বন করে তারা সত্তিকারের এখনকার দিনের মানুষ বাঁচার জন্য নিজেদের প্রাণ তুচ্ছ করে নিজেদের সংসার ছেড়ে বাইরে আছে দিনের-পর-দিন মাসের-পর-মাস তাদের প্রণাম জানাই।
বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ বা সংক্ষেপে বি.বা.দী.বাগ কলকাতা শহরের লালদীঘি সংলগ্ন একটি বিখ্যাত এলাকা যা পূর্বে ডালহৌসি স্কোয়ার আখ্যায়িত হতো। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য প্রশাসনিক কেন্দ্র ও কলকাতার মুখ্য বাণিজ্যিক স্থাপনাসমূহ এই এলাকায় অবস্থিত। এ এলাকাটি কলকাতার প্রাচীনতম অঞ্চলগুলির একটি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সচিবালয় মহাকরণ, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের কলকাতা কার্যালয় ও কলকাতার কেন্দ্রীয় ডাকঘর জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও)-সহ বহু দর্শনীয় স্থানের দৌলতে এটি কলকাতার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণকেন্দ্রও বটে। ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ওয়াচ বিবাদীবাগকে পৃথিবীর একশোটি বিপন্নতম ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করার [১] পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কলকাতা পৌরসংস্থা এই অঞ্চলের সৌন্দর্যায়ণ ও পুরনো ঐতিহ্যভবনগুলির রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
বিবাদী বাগ হুগলি নদীর নিকটে মধ্য কলকাতার পশ্চিমাংশে অবস্থিত। লালদিঘি নামক একটি প্রাচীন দীর্ঘিকাকে কেন্দ্র করে এই স্কোয়ার বা বাগটি গড়ে ওঠে। কলকাতা মহানগরীর পত্তনপূর্ব যুগের ডিহি কলিকাতা গ্রামের কেন্দ্রে অবস্থিত এই অঞ্চলটি ইংরেজ আমলে হোয়াইট টাউন বা কলকাতার শ্বেতাঙ্গ পল্লির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির নামে মধ্য কলকাতার লালদিঘি সংলগ্ন প্রশাসনিক কেন্দ্রটি ডালহৌসি স্কোয়ার নামে অভিহিত হয়। [৩] ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর দীনেশ গুপ্ত, বিনয় বসু ও বাদল গুপ্ত নামে তিন অসমসাহসী বাঙ্গালী বিপ্লবী ইউরোপীয় পোষাকে সজ্জিত হয়ে রাইটার্স বিল্ডিং-এ প্রবেশ করে কর্নেল সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। তারপর রাইটার্সের ঐতিহাসিক অলিন্দে ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে এই তিন বিপ্লবীর সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ অফিসার টোয়াইনাম, প্রেন্টিস ও নেলসন আহত হন। গ্রেফতারি এড়াতে বাদল বসু ঘটনাস্থলেই পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। কিন্তু বিনয় বসু ও দীনেশ গুপ্ত নিজেদের উপর গুলি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে হাসপাতালে ডাক্তারি ছাত্র বিনয় সকলের অলক্ষ্যে ক্ষতস্থানে আঙুল দিয়ে সেপটিক করে আত্মহত্যা করেন। দীনেশ অবশ্য সুস্থ হয়ে ওঠেন ও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। তার ফাঁসি হয়। স্বাধীনতা পর কুখ্যাত লর্ড ডালহৌসির নামাঙ্কিত এই অঞ্চলটি তাই এই মহান বিপ্লবীত্রয়ের সম্মানার্থে উৎসর্গিত হয়। স্কোয়ারের নতুন নাম হয় বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ বা সংক্ষেপে বিবাদীবাগ। রাইটার্স বিল্ডিঙের দ্বিতলে এই বৈপ্লবিক আক্রমনেত স্মৃতিতে একটি ফলক রয়েছে।
৩
কৈশোরে দীনেশ বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স (বিভি) নামে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হন।[৩] ১৯২৬ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি মেদিনীপুরে কর্মরত তার বড়োদাদা যতীশচন্দ্র গুপ্তের কাছে বেড়াতে আসেন। এই সময় থেকেই মেদিনীপুর শহরে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলার সুপ্ত বাসনা তার মনে জাগে। কিন্তু দলের নির্দেশে সেবার তাকে ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছিল বলে তিনি মেদিনীপুরে বিশেষ কিছুই পরে উঠতে পারেননি।[৪]
১৯২৮ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষা দেন। কিন্তু এই পরীক্ষায় তিনি কৃতকার্য হতে পারেননি। এরপর তিনি মেদিনীপুরে গিয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন। দলের তরফ থেকে দীনেশকে মেদিনীপুরে বিভির শাখা স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেদিনীপুরে এসে দল সংগঠন ও সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যান তিনি। [৫]
ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ১৯২৮ সালে দীনেশ 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস'-এর কলকাতা সেশনের প্রাক্কালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সংগঠিত 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে যোগদান করেন। শীঘ্রই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স একটি সক্রিয় বিপ্লবী সংগঠনে পরিবর্তিত হয় এবং কুখ্যাত ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারদেরকে হত্যা/ নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে। স্থানীয় বিপ্লবীদের আগ্নেয়াস্ত্র চালনা শেখানোর জন্য দিনেশ গুপ্ত কিছু সময় মেদিনীপুরেও ছিলেন।তার প্রশিক্ষিত বিপ্লবীরা ডগলাস(Douglas), বার্জ(Burge) এবং পেডি(Peddy)--এই তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রটকে পরপর হত্যা করেছিল।
৪
বাদল চে গুয়েভারা পড়তেন।চে গুয়েভারা ডাক্তার হয়ে আরামের জীবন কাটাতে পারতেন ইচ্ছে করলে।কিন্তু তিনি জানতেন আশি শতাংশ লোক আধপেটা খেয়ে থাকে।কলুর বলদের মত দিনরাত খেটেও পেটভরে খাবার জোটে না। যুবক বয়সে মেডিসিন বিষয়ে পড়ার সময় চে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন।যা তাকে অসহায় মানুষের দুঃখ কষ্ট অনুধাবন করার সুযোগ এনে দেয়। চে বুঝতে পারেন ধনী গরিবের এই ব্যবধান ধ্বংস করে দেবার জন্য বিপ্লব ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তখন থেকেই তিনি মার্কসবাদ নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন এবং সচক্ষে এর বাস্তব প্রয়োগ দেখার জন্য গুয়াতেমালা ভ্রমণ করেন।
ধনী গরীবের বিস্তর ফারাক মেটানোর জন্য তিনি সাদা পোশাক ছেড়ে খাকি পোশাক পরিধান করেন। ১৯৫৬ সালে মেক্সিকো থাকার সময় গুয়েভারা ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী সগঠন ২৬শে জুলাই আন্দোলনে যোগদান করেন।১৯৫৯ সালে এই সগঠন কর্তৃক কিউবার ক্ষমতা দখলের পর তিনি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তিনি বিভিন্ন নিবন্ধ ও বই রচনা করেন।
কিউবার মুক্তিযুদ্বে গেরিলা রনকৌশল সফল হবার পর চে ভাবেন ওই রণনীতি ছড়িয়ে দিতে পারলে কমিউনিষ্ট শাষন প্রতিষ্টা করা যাবে সমগ্র লাতিন আমেরিকায়।এই ভাবনায় তিনি বেছে নেন বলিভিয়া আর আর্জেন্টিনাকে। প্রথমে বলিভিয়া সেখানে সফল হবার পর আর্জেন্টিনা। তার এই পরিকল্পনায় সর্বোত সহযোগিতা দেন তানিয়া কিন্ত শেষ পর্যন্ত সবই বিফলে যায়।
মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল জেমস লিখছেন তানিয়াকে নিয়োগ দিয়েছেন “ষ্ট্যাসি” নামে পূর্ব জার্মানির গোয়েন্দা সংগঠন এবং কেজিবি নামে সোভিয়েত রাশিয়ার গোয়েন্দা সংগঠন। তাদের উদ্দ্যেশ্য ছিল কাস্ত্রো ও চে’র ওপর নজরদারি করা। জেমসের মতে চে’র সাথে তানিয়ার প্রেম ছিল পুরোপুরি অভিনয়। চে’র মৃত্যুর জন্য সর্বোতভাবে তানিয়া দায়ী।
তানিয়ার জন্ম আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনেস এয়ারসে ১৯৩৭ সালে ১৯শে নভেম্বর। তার পিতা ছিলেন জার্মানির রাজধানী বার্লিনের একজন অধ্যাপক, মা ছিলেন পোলিশ ইহুদি। নাৎসি দমন শুরু হলে তারা পালিয়ে চলে যান বুয়েনেস আইরিসে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন স্থায়ীভাবে। তবে ১৯৫২ সালে তারা ফিরে আসেন পূর্ব জার্মানি। ১৫ বছরের তানিয়া নিয়মিত পাঠ নেন কম্যুনিজমের ওপর। বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মার্ক্সবাদের ওপর উচ্চতর ডিগ্রী নেন। শিক্ষার্থী জীবনে তিনি “দ্যা ফ্রি জার্মান ইয়ুথ” নামে একটি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।ওই সময় লাতিন আমেরিকা সফরে যাওয়া রাজনৈতিক নেতাদের দোভাষী হিসাবে কাজ করেন। ২১ বছর বয়সে যোগ দেন MFS এ। শুরু হয় গুপ্তচর জীবন। তানিয়া নাম বদলে হন তামারা। পরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে যান মস্কো, প্রাগ, ভিয়েনায়।
ওই সময় তিনি কেজিবির নজরে পড়েন। ওই সময় লাতিন আমেরিকায় কেজিবির গুপ্তচর সংকট ছিল। MFS কেজিবির কাছে তানিয়ার নাম প্রস্তাব করে। তানিয়াও সন্মতি জানায়। ১৯৫৯ সালে কিউবার ন্যাশনাল গর্ভমেন্ট ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট হিসাবে চে আসেন পূর্ব জার্মানি। উদ্দ্যেশ্য কাস্ত্রোর জন্য বৈদেশিক ঋন সংগ্রহ করা। MFS তখন ওই সুযোগে তানিয়াকে নিয়গ করে চে’র দোভাষী হিসাবে। তানিয়া কয়দিনের মধ্যে চের সাথে জড়িয়ে পরেন ব্যক্তিগত সম্পর্কে।
১৯৬১ সালে মস্কোতে তানিয়াকে কঠোর প্রশিক্ষন দেয় কেজিবি। তারপর তাকে পাঠানো হয় হাভানায়, পূর্ব জার্মানিতে কিউবার ব্যালে নৃত্যশিল্পী দল এসেছিল তাদের সাথে একই বিমানে তানিয়া হাভানা যায় ওখানে চে’র ব্যাক্তিগত সুপারিশে চাকরি পান কিউবান শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে। শুধু তাই নয় কিউবার আধা সামরিক নারী বাহিনী গঠনেও তার ভুমিকা ছিল।
রনকৌশলের মাধ্যমে বলিভিয়ার অভ্যুন্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলের প্লান করার পর তানিয়াকে বিশেষ দায়িত্ব দেন চে। সে দায়িত্ব অনেকখানি সাংগঠনিক আর অনেক খানি গুপ্তচরের। চে’র স্পাই হিসাবে লা-পাজ পৌছান তানিয়া। এখানে তিনি ভুমিকা নেন আমেরিকান-ইন্ডিয়ান লোক সংগীতের বিশারদ ও সিরামিক শিল্পী হিসাবে। স্থানীয় কম্যুনিষ্ট পার্টির সাথে সংযোগ স্থাপন করেন তানিয়া। বনাঞ্চলে লুকিয়ে থাকা গেরিলাদের সাথে বহিবিশ্বের যোগাযোগে মূখ্য ভুমিকা নেন তানিয়া। লা-পাজ থেকে নিয়মিত খাদ্য, ওষূধ, অস্ত্র নিয়মিত পাঠাতে থাকেন বনাঞ্চলে।
এত দক্ষ স্পাই হবার পরও কিছু ভূল করে বসেন তানিয়া, নজরে পরে যান বলিভিয়ান গুপ্তচর সংস্থার।গোপনে তাকে অনুসরন করে সরকারী গোয়েন্দারা। ২৩ শে মার্চকে বিপ্লব ঘটানোর দিন হিসাবে ঠিক করেন চে। কিন্ত তার দশ দিন আগেই বলিভিয়ার সৈন্যরা আক্রমন চালায় বনে অবস্থানরত গেরিলাদের ওপর। ওই সংঘর্সে প্রান হারায় সাতজন শীর্ষ স্থানীয় গেরিলা। বিপ্লব ভেস্তে যায়। এরপর চার মাস বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান শেষে সৈন্য দের সাথে মুখোমুখি যুদ্বে বাকীরাও প্রান হারায়।
তানিয়ার শেষ দিনগুলো ছিল খুবই কষ্টকর। বিপ্লব নষ্ট হবার জন্য চে সরাসরি তানিয়াকে দায়ী করেন। শুধু চে না দলের অন্যান্য গেরিলারাও তাকে বিশ্বাসঘাতক ভাবে। এ অবস্থাতেই তাদের সাথে তাকে থাকতে হয়। গেরিলাদের শেষ দলের সাথে মুসিকেরী নদী পার হবার সময় সৈন্যদের সাথে গোলাগুলিতে মারা যান তানিয়া। নদীতে পরে যান মৃত তানিয়া। সেখান থেকে আটদিন পর যখন তার মৃতদেহ উদ্বার করা হয় তখন আর চেনার উপায় ছিল না, পরিচয়পত্র আর পাশপোর্ট দেখে তাকে সনাক্ত করা হয়। এভাবেই জীবনাবসান ঘটে এক অসামান্য রূপসী স্পাইয়ের।
চে ১৯৬৫ সালে মেক্সিকো ত্যাগ করেন।তার ইচ্ছা ছিল কঙ্গো-কিনশাসা ও বলিভিয়াতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। বলিভিয়াতে থাকার সময় তিনি সি আই এ মদদপুষ্ট বলিভিয়ান বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন।
মৃত্যুর পর তাঁর শৈল্পিক মুখচিত্রটি একটি সর্বজনীন প্রতিসাংস্কৃতিক প্রতীক এবং এক জনপ্রিয় সংস্কৃতির বিশ্বপ্রতীকে পরিণত হয়। ১৯৬৭ সালের ৯ই অক্টোবর, বলিভিয়ার শহর লা হিগুয়েরাতে বলিভিয়ার সেনাবাহিনী তার মৃত্যদন্ড কার্যকর করে।আমেরিকাই শুধু নয়,গোটা বিশ্বের শোষিত বঞ্চিত মুক্তিকামী মানুষের নেতা মহান বিপ্লবী কমরেড চে গুয়েভারা।কাপুরুষোচিতভাবে তাকে হত্যা করেছিল বলিভীয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য তার মৃতদেহ গুম করে ফেলেছিল তৎকালীন বলিভীয় সরকার।মৃত্যুর পর তিনি সমাজতন্ত্র অনুসারীদের জন্য অনুকরনীয় আদর্শে পরিণত হন।কিউবার এই আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত বিপ্লবীর মুখচ্ছবি এখন তাদের নিজেদের নেতা ক্যাস্ত্রোর মতই প্রাণবন্ত।চে’ তাই ফিরে ফিরে আসে বিপ্লবে।তবুও জেগে থাকে এই অমর প্রাণ, দেশে দেশে বিপ্লবের প্রতীক হয়ে।
মৃত্যুর আগে চে বলেন,
”আমি জানি তোমরা আমাকে গুলি করে মারবে। আমি জীবিতাবস্থায় বেরুতে পারবো না। ফিদেলকে বলো এই পরাজয় বিপ্লবের শেষ হয়ে যাওয়া নয়। বিপ্লবের বিজয় হবেই। সালেইদাকে বলো ব্যাপারটি ভুলে যেতে, সুখী হতে বলো, বাচ্চাদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত না ঘটে, আর সৈন্যদেরকে বলো, যেন আমার দিকে ঠিকভাবে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে।”
আজ লক্ষ প্রাণের আওয়াজ উঠেছে, চে তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়, তোমার মৃত্যু নেই যেমন মৃত্যু নেই বিপ্লবের। তুমি জেগে আছো অমর প্রাণ। চে গুয়েভারা এক বিপ্লবের নাম। সারা পৃথিবী তাঁকে স্মরণ করে বিপ্লবের অপর নাম হিসেবে।
৫
বিনয় বসুর জন্ম হয় ১৯০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর, মুন্সিগঞ্জ জেলার রোহিতভোগ গ্রামে। তার পিতা রেবতীমোহন বসু ছিলেন একজন প্রকৌশলী। ঢাকায় ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করার পর বিনয় মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল (বর্তমানের স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) এ ভর্তি হন। এসময় তিনি ঢাকার ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের সংস্পর্শে আসেন এবং যুগান্তর দল এর সাথে জড়িত মুক্তি সঙ্ঘে যোগ দেন। বিপ্লবী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার জন্য তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে তার পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি।
বিনয় দীন দূঃখী মানুষের সঙ্গে জীবন কাটাতেন।তিনি গ্রামের বারুইপাড়ায় বসে তাদের কাহিনী শুনতেন। জিতেন বারুই বলতেন,বারুইরা মাটির ঘরের চাল খড় দিয়ে ছাইয়ে দেয়। ঘরামি দুই থেকে তিনফুটের মাটির দেওয়াল তৈরি করে ধীরে ধীরে। তারপর বারুই বাঁশ আর খড়ের সাহায্য নিয়ে চাল তৈরি করে। বারুইরা তবু খুব গরীব ছিল।সামান্য মজুরিতে সংসার চলত না। একটা প্রবাদ আছে, বারুই এর ঘরের চাল ফুটো থাকে চিরকাল ।
কবি জসিমউদ্দিনের নকশি কাঁথার মাঠে, বারুই নায়ক ছিল রূপাই।
মাটির সহজলভ্যতা, প্রয়োজনীয় উপকরণ আর শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় আমাদের দিনে মানুষ মাটির ঘর, খড়ের ঘর বানাতে বেশ আগ্রহী ছিল। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হতো। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড়ের ছাউনি দেওয়া হতো। মাটির দেয়ালের চারপাশ ঘিরে গ্রামের সৌখিন গৃহিণীরা মাটির দেয়ালে খাটুনি দিয়ে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে তাদের নিজ বসত ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন। এটা ও এক ধরনের আনন্দ ছিল আমাদের মাঝে।
পূর্ববর্ধমান জেলার খড়ের ঘরের কারিগর উদয়চাঁদ বলেন , এসব খড়ের ঘর তৈরি করতে আমাদের সময় লাগত মাসখানেক । স্বল্প খরচে তৈরি করা হতো এসব ঘর। এই আধুনিকতার দিনে খড়ের তৈরি এসব ঘর এখন আর চোখে পড়ে না। এই ঘরগুলো গরমে থাকার জন্য বেশ আরামদায়ক গরমের দিনে শীতল থাকে খড়ের ঘরগুলো। তাই এই ঘরকে গরিবের এসিও বলা হয়ে থাকে। আমাদের নবগ্রাম অঞ্চলে ৮০ থেকে ৯০ এর দশকে প্রতিটি বাড়িতে একটি করে হলেও খড়ের ঘর চোখে পড়ত। প্রায় প্রতিটি গ্রামেরই ছোট খড়ের ঘরগুলো ও ঘরের পরিবেশ সবার নজর কাড়ত। এ যেন এক রাজ্য। ঝড়, বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি তীব্র গরম ও শীত থেকে বাঁচতেও এই ঘরের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু কালের বিবর্তনে দালানকোঠা আর অট্টালিকার কাছে হার মেনেছে চিরচেনা মাটির ঘর। এই ঘরগুলো একশো বছরের বেশি টিকত। এখন ইঁটের বাড়ি জনপ্রিয় হয়েছে। মাটির ঘর ও খড়ের চাল এখন কম দেখা যায়।
৬
বিনয়, বাদল, দীনেশ মিলিতভাবে ইংরেজদের অত্যাচারের প্রতিবাদ করেন।
মূল ঘটনাটি যেদিন ঘটে, সেদিনের তারিখ ছিল ৮ ডিসেম্বর, ১৯৩০। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতের রাজধানী কলকাতার প্রশাসনিক কেন্দ্র রাইটার্স বিল্ডিং আর সবদিনের মতো সেদিনও গমগম করছিল নিত্যকার কর্মতৎপরতায়। ব্রিটিশ কর্মকর্তা, ভদ্রলোক, বাঙালি বাবু, কেরানি সকলেই ব্যস্ত ছিলেন নিজ নিজ কাজে। কিন্তু এসব সরকারি আমলাদের ভিড়ে হঠাৎ করেই আবির্ভাব ঘটে তিন বিশেষ ব্যক্তির। তারা এক গগনবিদারী গর্জনের মাধ্যমে ছারখার করে দেন রাইটার্স বিল্ডিংয়ের দৈনন্দিন অভ্যস্ততা। সেদিন এই অকুতোভয় ত্রয়ী যা করে দেখান, প্রায় ৯০ বছর বাদেও তা বারবার ঘুরেফিরে আসে বাঙালির মুখে মুখে।
বিনয়ের গ্রামের কথা মনে পড়ে। ভাদু জেলে মাছ ধরে। তার আগে তার দাদুও মাছ ধরে সংসার চালাতেন। বাড়ির পাশেই কাঁদর। অনেকে বলেন ঈশানী নদী। ভাদু অত কিছু জানে না। কাঁদরে চান, কাঁদরে টান তার। একটা তালগাছের গোড়া ফাঁপা করে ডোঙা বানানো হয়েছে কাঁদর এপার ওপার করার জন্য। ডোঙার তলাটা মাঝে মাঝে রঙ করা হয়। ডোঙায় চেপে কাঁদরে জাল ফেলা শিখেছে তার দাদুর কাছে ভাদু। তারপর মাছ ধরে বাঁশের কঞ্চির তৈরি ঝাঁপিতে ভ'রে মাছ বিক্রি করত গ্রামে গ্রামে। ছেলে ভোলাকে গাঁয়ের স্কুলে ভরতি করেছিল সাত বছর বয়সে। এখন সে হাই স্কুলে পড়ে। কিন্তু মাষ্টারমশাইরা বলেন ভাদুকে, তোর ছেলেকে বাড়িতে পড়তে বলিস। খুব ফাঁকিবাজ। এবার নম্বর খুব কম পেয়েছে।
ভাদু রাতে ছেলের কাছে বসতে পারে না। সন্ধ্যা হলেই সে চলে যায় হরিনামের আখরায়। সেখানে হরিনাম হয়। ভাদু হারমনিয়াম বাজায়। বড় সুন্দর তার হাত, সবাই বলে। এদিকে ছেলে ভোলা বই গুটিয়ে অন্ধকারে বসে থাকে কাঁদরের ধারে। পড়াশোনা তার ভাল লাগে না। কাঁদরের ধারে অনিলের সঙ্গে বসে বাঁশি বাজায়। অনিল বলে, তোর বাবা শুনলে মারবে ভোলা, সাবধানে থাকিস।
ভোলা বলে, এই সবুজ আমাকে বড় টানে। এই জল আমাকে শান্তি দেয়। চান করার সময় এক ডুবে সে কাঁদর পেরিয়ে যায়। অনিল ভোলার খুব ভাল বন্ধু। সে সবসময় ভোলার সঙ্গে থাকে, থাকতে ভালবাসে।
ভোলা মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করল। ভাদু বলল, আর স্কুলে যেয়ে লাভ নাই রে ভোলা। রোজগারের ধান্দা কর।
ভোলা তাই চাইছিল। সে বলল,বাবা আমি জাল ফেলা শিখব। তার বাবা ভাদু বলল,তা শেখ। কিন্তু তুই তো ভালই জাল ফেলিস। আমি চাইছিলাম রামের সঙ্গে তু কেরালা যা। সোনার দোকানে কাজ শিখে লেগা। তারপর এখানে এসে একটা দোকান খুলবি। কত নাম হবে তখন তোর দেখবি। ভোলা বলল,না বাবা আমি কেরালা যাব না। বাবা ভাদু বলল,আমি সব ঠিক করে ফেলেছি। তু আর অনিল কাল কেরালা চলে যা। মেলা পয়সা হবে, নামডাক হবে। তা না হলে জলে পচে মরবি।
বাবার ভয়ে তারা কেরালায় চলে এল। দোকানে কাজ করে, কাজ শেখে। তাদের দোকান বাজার, কেনাকাটা সব কাজ করতে হয় ভোলাকে। বাঁশি বাজাতে দেয় না। তার মনে পড়ে কাঁদরের ধারে গেলেই মনটা ঘাসের গন্ধে ভুরভুর করে উঠত। একটা ঠান্ডা বাতাস গায়ে কাঁটা তুলে দিত। বাঁশির সুরে কাঁদরের জল নেচে উঠত। ভোলার বাবা, মার কথা মনে পড়ত। কিছু ভাল লাগত না। তার বন্ধু অনিল কাজ করে অনেক দূরে আর একটা দোকানে। সন্ধ্যা হলে দুজনের কথা হত। অনিল বলত, ভাল করে থাক। অনেক পয়সা নিয়ে বাড়ি যাব। কত খাতির হবে, দেখবি, অনিলের বাবা, মা নেই। সে ছোট থেকে মামার বাড়িতে মানুষ হয়েছে। তাই তার পিছুটান কম। সে পরিস্থিতি বুঝে কাজ করে।
কিন্তু ভোলার কিচ্ছু ভাল লাগে না। প্রায় দুমাস পরে সে জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হল। মালিক বেগতিক বুঝে অনিলকে সঙ্গে করে ভোলাকে গাঁয়ে পাঠিয়ে দিলেন।
বাড়িতে এসে ভোলা মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল। অনিল মামার বাড়ি গেল একটা বড় ব্যাগ নিয়ে।
ভোলা কিছুই আনতে পারে নি। সে রোগে ভুগে হাড় জিরজিরে হয়ে গেছে। মা তার বাবার ওপর রেগে গিয়ে বললেন, আবার যদি তুমি ওকে কেরালা পাঠাও তো আমার দিব্যি রইল। বাবা ভাদু আর ভোলাকে কেরালা যেতে বলেনি। শুধু বলেছিল, এখানে ও খাবে কি? আমি তো আর বেশিদিন বাঁচব না। তার মা বলেছিল, আমাদের একমুঠো জুটলে ওরও জুটবে।
তারপর অনিল আবার কেরালা চলে গেল। ভোলা দুমাস বিছানায় পড়ে রইল। তারপর মায়ের সেবাযত্নে সে সুস্থ হয়ে উঠল।
তারপর বছরের পর বছর কেটে গেল। ভাদু জেলে মরে গেল। তার হরিনামের দল তাকে উদ্ধারণপুর নিয়ে গেল ট্রাকটরে চাপিয়ে। ভোলা সেই হরিনামের দলে ভাল বাঁশি বাজিয়েছিল। সবাই বলল, সন্দেবেলায় পেত্যেকদিন হরিনামের আসরে যাবি। বাঁশি বাজাবি।
আজ অনিল এসেছে পাঁচবছর পরে। গ্রামের মোহিনী ঠাকরুণ বলল, মামার একটু জায়গা নিয়ে গ্রামে সোনারূপোর দোকান কর। আমরা তোর খদ্দের হব। অনিল এইরকম কিছু একটা করার কথা ভাবছিল। মামাকে বলে একটা ঘর করল রাস্তার ধারে। তারপর অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে দোকানের শুভ উদ্বোধন হল। খুব ধূমধাম করে দোকান শুরু হল।
এদিকে ভোলা কাঁদরে জাল ফেলে মাছ ধরছে ডোঙায় চেপে। পাশ দিয়ে কাঠগোলার বড়বাবু যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, ও জেলে ভাই মাছ পেলে? ভোলা মাথাটা উঁচু করে বলল, পেয়েছি বাবু একটা কাতলা। তা কেজি খানেক হবে। বড়বাবু একটা দুশ টাকার নোট বার করে মাছটা নিলেন। তারপর চলে গেলেন।
ভোলা টাকাটা কোঁচরে গুঁজে বাঁশি বের করে বাজাতে শুরু করল। সুরে সুরে আকাশ ভরে উঠল চিরকালের সুরে।
সেই তিন বিশেষ ব্যক্তিই হলেন বিনয় কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশচন্দ্র গুপ্ত। তারা ছিলেন বিপ্লবী। ব্রিটিশ শোষকদের প্রভুত্ব স্বীকার করে নিতে চাননি তারা। তাই প্রভাবিত হয়েছিলেন বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে, এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার।
বিনয় জন্মেছিলেন ১৯০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, মুন্সিগঞ্জ জেলার রোহিতভোগ গ্রামে। তার বাবা রেবতীমোহন বসু ছিলেন একজন প্রকৌশলী। কিন্তু বিনয় হতে চেয়েছিলেন চিকিৎসক। তাই ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করার পর তিনি ভর্তি হন মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলে, যেটি বর্তমানের স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ। এ সময়ই তিনি সংস্পর্শে আসেন ঢাকা-কেন্দ্রিক বৈপ্লবিক হেমচন্দ্র ঘোষের। এরপর ভিড়ে যান যুগান্তর পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট মুক্তি সঙ্ঘে। পরে তিনি যোগ দেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর গড়ে তোলা বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলে। এভাবে বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে ডুবে যাওয়ার ফলে চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়ন শেষ করতে পারেননি তিনি।
এদিকে দীনেশের জন্ম ১৯১১ সালের ৬ ডিসেম্বর, মুন্সিগঞ্জ জেলার যশোলঙ গ্রামে। তার বাবা সতীশচন্দ্র গুপ্ত এবং মা বিনোদিনী দেবী। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন নির্ভীক, বেপরোয়া ও বাগ্মী। ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনিও যোগ দেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলে। শুরুতে গেণ্ডারিয়ায় দাদুর বাসায় বাস করলেও, পরে তিনি চলে এসেছিলেন ওয়ারীতে, পৈত্রিক বাসভবনে।
বাদলের জন্মনাম সুধীর গুপ্ত। ১৯১২ সালে ঢাকার বিক্রমপুর অঞ্চলের পূর্ব শিমুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।ছেলেবেলায় যখন তিনি বিক্রমপুরের বানারিপাড়া স্কুলে পড়াশোনা করছিলেন, তখন থেকেই শিক্ষক নিকুঞ্জ সেনের মাধ্যমে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ফলে একপর্যায়ে তিনিও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে।তিনজনে তুমুল লড়াই করে পরাধীনতার শেকল ছিঁড়ে ভারতমাতাকে মুক্ত করেছিলেন অগ্নিযুুগের সোনার ছেলেরা।
তথ্যসূত্র - উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
উল্লাসকর দত্ত নিয়ে এতো ভুলভাল শিখেছিস কেন ? বাকিগুলো পড়িনি | তথ্য সংশোধন করে নে | নাহলে লেখাটা সরিয়ে নে | মামলা করে দেবো |
ReplyDelete