গল্প - আবু দায়েন
Posted in গল্পসকাল ৬:০০টা। একমগ গরম ব্ল্যাক কফি ডানহাতে নিয়ে বামহাতটা রক্তিমের কপালে রাখলো মেলিসা। আলতো স্বরে ডাকলো, এই আমার কাকাতুয়া! উঠবি না? এই দ্যাখ তোর শালিকপাখি হাজির। চোখ মেলে ধড়ফর করে উঠে বসলো রক্তিম। তুই? তুই কোত্থেকে? এ কী করে সম্ভব? আমি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছি! অদিতি! অদিতি!! মৃগাঙ্ক! মৃগাঙ্ক!! তমিস্র!
চিৎকার করিস না। তোর বৌ-বাচ্চা এখানে নেই। ঠান্ডা হয়ে কফি খা। সব আস্তে আস্তে জানবি। এটা স্বপ্ন না ময়নাপাখি। বাস্তব। রক্তিমকে জোর করে আলিঙ্গন করলো মেলিসা। তারপর তার হাতে ধরিয়ে দিলো কফির মগটা। বললো,
কফি খেয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যা। আগের মতো সহজ আচরণ কর আমার লক্ষ্মী সোনাপাখি।
রক্তিমকে জোর করে বিছানা থেকে নামিয়ে দিয়ে লেপ টেনে শুয়ে পড়লো মেলিসা। এর মধ্যে বাইরে একটা শোরগোল শোনা যাচ্ছে। প্রশস্ত জানালার পর্দা সরিয়ে নিচে উঁকি দিলো রক্তিম। মেলিসা বললো, নিচে ওসব দেখতে হবে না ময়না। সব আমার কাছে জানবি। তুই ওয়াশরুমে যা, আই ফিল ক্রেভিং।
রক্তিম তখন কাঁপছে। বাইরে প্রচুর মানুষ। সবাই ঠায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে ওদের ভবনটার দিকে। ওদের ডাবল ইউনিটের চারতলা বাড়িটা পূর্ব-পশ্চিম আয়তাকারে বানানো। দোতলার ফ্লাটের ভেতর থেকে রক্তিম স্পষ্ট বুঝতে পারছে ভবনটা পূর্ব-পশ্চিম থেকে উত্তর-দক্ষিণে ঘুরে গেছে। কিন্তু কোথাও কোনো পরিবর্তনের ছাপ নেই। চিহ্ন নেই। সব স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক শুধু এই, ভোরের আলো ফুটতেই এককান-দুকান করে খবরটা ছড়িয়ে পড়েছে; আর করোনার লকডডাউন ভেঙে বিপুল মানুষ জড়ো হয়েছে একটা কংক্রিটনির্মিত ভবনের স্থানান্তর দেখতে।
আজ রক্তিমের একটা বিশেষ দিন। বলা যেতে পারে বিশেষ রাতও। একটা সময় রক্তিম পার করে এসেছে, এপ্রিল-মে মাসের সময়গুলো তার বিশেষ হয়ে উঠেছিল। অবশ্য শুরুটা আরো আগে। সেটা ছিল অত্যন্ত জোরালো ও আবেগঘন শুরু। বেশকিছু কালের, হতে পারে দু'বছর, টানটান উত্তেজনা-বিরক্তি আর লুকোচুরি খেলার এক পর্ব পার করে কোনো এক শীতের সন্ধ্যায় মেলিসার কৌশলের কাছে ধরা খায় রক্তিম। তারপর একেকটা তারিখ ধরে ঘটতে থাকে কত ঘটনা। এমনি করে বেশকিছু তারিখের ঘেরটোঁপে বন্দি হয়ে যায় রক্তিমের চেতনাপ্রবাহ। মেলিসাকে বলতে গেলে ঘৃণা করতে করতে তার অন্তর্গত সৌন্দর্য আর চৈতন্যের গভীরে লুকিয়ে থাকা প্রেমময় এক ভুবন, সুশোভন ব্যক্তিত্ব এবং টক-ঝাল-মিষ্টির দুষ্টুমি ভরা অপরিহার্য মায়াকাননে হারিয়ে যায় রক্তিম। কবিরা যেমন বলেন: সকল গর্ব হায় নিমেষেই টুটে যায়--এ ধরনের কিছু। এরই মধ্যে এই ঘটনার ঘনঘটা। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে তখন। বাড়িতে স্রেফ একা বলে আলোটালো কিছু জ্বালানোর প্রয়োজন বোধ করেনি রক্তিম। কফির মগ হাতে বারান্দায় বসে বসে একটা আলোময় দিনের ক্রমশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবার মর্মন্তুদ বাস্তব অনুধাবনে সচেষ্ট ছিলো। কম বয়স আর বেহুদা রোমান্টিক এগোনির বশে অধিকাংশ অগ্রসর তরুণরাই যে কাজটা করে। তখন এই কফির মগ আর বারান্দায় অন্ধকার দেখা স্রেফ ফ্যাশনের পর্যায় থাকে না। কেমন যেন আর দশটা বেসিক নিডের মতোই তার ব্যক্তিত্বে মিশে যায়। দেখতে দেখতে মানিয়েও যায়। গোবেচারা রক্তিম এমনি নানান কিছুতে মানাতে মানাতে মেলিসার উপর্যুপরি জাদুতে কুপোকাত হয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ সদর দরজায় কেমন একটা শব্দ পেয়ে তার কান খাড়া হয়ে ওঠে। এদিকে চোরের উপদ্রব কম না। তার আশপাশের বাড়িগুলোতে অনেক বড়োবড়ো চুরির ঘটনা জাতীয় দৈনিকে খবর হয়ে আলোড়ন তুলেছিলো। একলা বাসায় তেমন কিছু ঘটলে অদিতি তার খবর করে ছাড়বে। রক্তিম উঠে দাঁড়ালো। সদর দরজাটা বেশ ক'খানা ঘর পার হয়ে যেতে হয়। টেবিলের ওপর মগ রেখে অন্ধকারের মধ্যেই ছিটকিনি পরখ করলো। ওর খটকা লাগে। দরজাটা ভালোমতোই বন্ধ। বলা যায়, কঠিন করে বন্ধ। কিন্তু এমন করে তো ও বন্ধ করে না। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে সাবধানী গৃহবাসী যেমন কঠিন করে দরজা বন্ধ করে তেমনটাই পেলো এখন। অথচ যতদূর মনে পড়ছে, বাইরে যাবার তার প্রয়োজন আছে। তাই কেবল ছিটকিনিটাই বোধহয় তুলে দিয়েছিল রক্তিম। মনের ভুলে তাও তোলে না কখনো কখনো। ও কি-হোল দিয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলো সিঁড়ি ঘরে অন্ধকার। লাইট জ্বালার প্রয়োজনে সে দরজা খুলতে গেলো। দরজার দিকে হাত বাড়াতেই অন্ধকারে পেছন থেকে তাকে আঁকড়ে ধরলো কেউ। এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো ওর। যেন শব্দ না করে। বেশ খানিকক্ষণ এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলো রক্তিম। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া। কে এলো? চোর? ডাকাত? কোনো রক্তপিয়াসী ড্রাকুলা? মানুষ কখনো কখনো কর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বিনা বাধায় নিজেকে সঁপে দেয় খুনির ছুরির নিচে। তার জাগতিক বা পারমার্থিক মূল্য কী দাঁড়ায় তা যারটা সেই জানে। অন্যের তাতে বোঝার কিছু নেই। বুঝে কাজও নেই।
এভাবে কতক্ষণ কেটে গেলো রক্তিম হিসেব করেনি। করার দায়ও অনুভব করেনি। এই স্পর্শটা তার চেনা। এই চেনাতে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যেতেও কেউ কেউ আপত্তি করে না। অন্ধকারের মধ্যেই ভেতরের ঘরের দিকে টান অনুভব করলো রক্তিম। আলতো স্বরে বললো, ভেতরে ঢুকলি কী করে?
--তোর যা চেতনার বাহার, তোকে চুরি করে নিয়ে যাওয়া কত সোজা। দরজা বন্ধ না করে কী করছিলি?
ধীরে ধীরে জ্বলে উঠলো আলো। ভেতরে এবং বাইরে। ছবি হয়ে রইলো তাদের একরাতের সংসার।
আজ সেই দিনের আরেক বর্ষপূর্তি। রক্তিমের আলোকিত দিনরাতের একটা সময়পর্ব। এমন বিশেষ দিনগুলোতে রক্তিম কোথায় থাকে, তার নিত্য পার্শ্বচরও বুঝতে পারে না। আমরা যারা চক্ষুষ্মাণ, তাদের চেয়ে কি কোনো অংশে কম দেখতেন টাইরেসিয়াস? করোনার দিনে কত সতেজ মানুষগুলো চোখের দৃষ্টির আড়ালে চিরবিদায় নিচ্ছেন প্লাটিকের ব্যাগে করে। তাদের কান্না কি কারোর চোখে পড়ে? না পৌঁছায় কর্ণকুহরে? যে রাজা আড়াল থেকে কখনো হাসেন কখনো গুলতি ছুড়ে মারেন একেকটা নরমুণ্ডু লক্ষ করে, তিনি কি কাঁদেনও? তার কান্না কি কেউ শুনতে পায়? প্রেমের কারণে যার চোখ গেলো সে নাকি ওই রাজার যাবতীয় কার্যক্রম দেখতে পায়! কান পাতলেই শুনতে পায় রাজার কান্না। রাজার কান্না! বড্ড বাহারি ব্যাপার। রক্তিম কান পাতে। একটু, আধটু, তারপর ধ্যানের মতো। ওই তো একটা জোরালো কান্নার শব্দ দূর থেকে ভেসে আসে। রক্তিম ঘর ছেড়ে বেরোয়। এখন লকডডাউন। কোথাও কেউ নেই। জায়গায় জায়গায় দুয়েকজন প্রহরী দাঁড়ানো। কাউকে দেখলেই বাঁশিতে ফুঁ দেয়। নীরবতার বুক চিঁড়ে উড়ে যায় নানানরকম পাখি। এদিক-ওদিক দৌঁড় দেয় বিচিত্র বুনোজীব, যারা অন্তর্হিত হয়ে ছিলো বহুকাল: মানুষের সাথে তার হয়নিকো দেখা। কান্নার শব্দটা তীব্র হতে থাকে রক্তিমের কানে। আধকানা রক্তিম বেশ কবার হোঁচট খায়। পড়েও যায় দুয়েকবার। এখানে-ওখানে ছিঁড়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। রক্তিম তোয়াক্কা করে না। তার রক্তক্ষরণের আরেকটি জায়গা আছে, ওটাই তার স্থায়ী। তাই এসব ক্ষুদ্র ঘা উপেক্ষা করে হাঁটতে থাকে ও। কান্নার শব্দটা ক্রমশ নিকটবর্তী হতে থাকে। প্রবল পুরুষালি কান্না। সেই কান্নার টানে রক্তিম এসে দাঁড়ায় একটি ছোটনদীর তীরে। পরিপার্শ্ব তার কেমন চেনা চেনা লাগে। নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠছে এক আধুনিক নগর। রক্তিমের মনে হতে থাকে জায়গাটা তার কত চেনা! এটা কি রবীন্দ্রনাথের কল্পনার শিপ্রা নদী? যার তীরের এক প্রাসাদে পূর্বজনমের প্রথমা প্রিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে এসে গ্রামীণ বখাটেদের তোপে পড়েছিলেন তিনি। তারপর বুদ্ধিতে তাদের কুপোকাত করে প্রেয়সীর কী শংসাবাণী! রক্তিমের মনে পড়ে যায়, এই নদীতীরে বেড়াতে এসে একটি ডাব কিনে দুটো স্ট্রতে একসঙ্গে পান করার মধুর স্মৃতি। রক্তিম দেখতে পায় টাল-টাল ডাবের মালা স্তুপ হয়ে পড়ে রয়েছে বিস্তৃত জায়গা জুড়ে। তবে কি এটা কোনো পর্যটন কেন্দ্র? কী মনে করে এগিয়ে যায় রক্তিম। তার মাথাটা হঠাৎ ঝিমঝিম করে ওঠে। এখানেই এক আলোকিত চাঁদরাতে একজন বুকে টেনে নিয়ে কানে কানে বলেছিলো ওর আস্তটা জীবন রক্তিমের কাঁধে সঁপে দেবার স্বপ্ন। সেখানেই রক্তিম দেখতে পায় প্রবল পুরুষালি কান্না দিগন্তবিস্তারী হয়ে উঠছে। দম বন্ধ হয়ে আসতে চায় ওর। জোসনার বুক চিঁড়ে মহাক্যানভাসে দৃশ্যমান ছবির মতো প্রবল পুরুষালি অসহায় রাজার আকাশকাঁপানো কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে নিখিল বিশ্ব। সামনেই পড়ে রয়েছে অসংখ্য অগণন নরমুণ্ডু!
পরের দির। ঘুম ভাঙতে রক্তিম দেখে পাশে মেলিসা নেই। একটা জব্বর রাত গেলো। না ঘুম না জাগরণ। না স্বপ্ন না বাস্তব। একটা ঘোর। সে ঘোর কাটতে চায় না। জীবন ও সংসারের সঙ্গে মানুষ যে প্রতিশ্রুতির বন্ধনে গেঁথে থাকে, তা কেউই ভাঙতে চায় না। কিন্তু একবার ভাঙনের মোহে পড়ে গেলে বারবার ভাঙার প্রেরণা লাভ করে। অর্জিত বিশ্বাস আর মূল্যবোধ নিত্য নতুন খামে আর নামে পরিশোধিত হয়। একেকটা বিশ্বাস আর মূল্যবোধ জীবনকে একেকভাবে চেনায়। অভিজ্ঞতার নতুন এলাকায় প্রবেশ না করলে তার সম্পর্কে ব্যক্তির সম্যক উপলব্ধি ঘটে না। তার জন্য কেউ খুন করে খুনির মনস্ততত্ত্ব রপ্ত করার চেষ্টা করে না। বরং জীবনের অপরিমেয় রহস্য তাকে কখন কোন অভিজ্ঞতার দ্বীপে নোঙর করাবে, আগে থেকে সে আন্দাজ করতে পারে না। খুনের প্রসঙ্গটা মাথায় চাপতেই লাফ দিয়ে উঠে পড়লো রক্তিম। ও আর বেশি ভাবতে চায় না। গলা ছেড়ে ডাকলো, মেলিসা! মেলিসা!! সাড়া না পেয়ে ওয়াশরুমের দরজায় হাত বোলালো। ভেতরে কেউ নেই। এ ঘর ও ঘর খুঁজে বাইরের দিকে এসে দেখে ড্রয়িংরুমের সব জানালার পর্দা টানানো। একটা কৃত্রিম অন্ধকার ঘরে ডিভানের ওপর শুয়ে আছে মেলিসা। নিঃশব্দ। ঘুমাচ্ছে মনে করে সরে আসতে চাইলো রক্তিম। সঙ্গে সঙ্গে নজরে এলো মেলিসার সেলফোনে আলো জ্বলছে। দুহাতে চোখের সামনে ধরা। রক্তিম ডাকলো, আসতে পারি কাছে?
-- আয়, উত্তর দিলো মেলিসা।
-- ঘুম হয়নি একদম? উত্তর দিলো না মেলিসা। মেলিসার চোখে মুখে রাজ্যের ক্লান্তি। তা সত্ত্বেও অদ্ভুত মোহময় লাগছে ওকে। রক্তিম খেয়াল করলো কোথা থেকে খুঁজে ওর একটা পুরনো টিশার্ট, আর জানুলম্বিত প্যান্ট পরে আছে মেলিসা। এসব পোশাক সাধারণত রক্তিম পরে না, কোনো দূরের ভ্রমণ-ট্রমনে না গেলে। ওর ব্যবহার্য এই শর্টকাট মেলড্রেসে লম্বা-ফর্সা সচেতন সৌন্দর্যের এই নারীকে অন্যরকম লাগছে। রক্তিম বললো, তোকে অদিতির পোশাক-আশাক সব দেখিয়ে দিলাম। ওসব না পরে কী পরেছিস এসব?
কোনো উত্তর দিলো না মেলিসা। কী রে কথা বলছিস না যে? খারাপ লাগছে? একটু বিরতি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো রক্তিম।
কিছুটা ধরা গলায় মেলিসা বললো, উত্তরটা খুব জরুরি?
রক্তিম বললো, না। এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
--জিজ্ঞেস যখন করেছিস তবে শোন। অদিতির পোশাকে তোর গন্ধ স্পর্শ কিছু আছে?
রক্তিম আর কথা বাড়াতে চাইলো না। বরং আবেগকম্পিত হয়ে ডিভানের দিকে এগিয়ে গেলো। বাধা দিয়ে মেলিসা বললো, কাছে আসিস না ময়নাপাখি। আমায় একটু একা থাকতে দে।
আচ্ছা বলে বেডরুমে ফিরে এলো রক্তিম। বিছানায় সটান শুয়ে পড়ে চোখ বুজলো। খাটের কার্নিশ থেকে রিমোট কন্ট্রোল হাতে নিয়ে ঘরের টেম্পারেচার খানিকটা কমালো। চোখ বুজে থাকলো দীর্ঘক্ষণ। আজ রবিবার। বাইরে বেরোবার তেমন তাড়া নেই। মৃগাঙ্ক আর তমিস্রের কথা মনে পড়লো ওর। চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দু'ফোটা অশ্রু। হঠাৎ মন চাইলো একটা সিগারেট খায়। কিন্তু ও সিগারেট সঙ্গে রাখে না। মেলিসার কাছে থাকতে পারে। বেনসন সুইচে ওর টান দেবার ভঙ্গিটা সুন্দর। এই বিশেষ ব্র্যান্ডটা হয়তো মেলিসার জন্যই তৈরি। ওর ভ্যানিটি ব্যাগটা হাতের কাছেই দেখা যাচ্ছে। স্পর্শ করার দূরত্বে। কিন্তু ওর ব্যাগ ধরা সমীচীন মনে হলো না রক্তিমের। গড়াগড়ি খেতে খেতে উঠে শাওয়ার নিতে গেলো। অনেকক্ষণ শাওয়ার নিয়ে বাইরে এসে ঘরে চলার মতো পোশাক পরে নিলো। ড্রয়িংরুমে যেতে দেখে মেলিসা দু'হাতে সেলফোন ধরে একইভাবে শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ। ইয়ারফোন লাগানো। বাইরের কিছুই শুনবে না। তাও নিঃশব্দে কাছে যেতে হঠাৎ চোখ পড়লো ওর সেলফোনের বড়োসড়ো স্ক্রিনে। তাকিয়েই তার মনের ভেতর বেজে উঠলো: আমারে তুমি অশেষ করেছ এমনি লীলা তব/ফুরাইয়া ফেলে আবার ভরিছ জীবন নব নব!
কী করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না রক্তিম। সোফায় বসে পড়লো অগত্যা। তাকিয়ে রইলো মেলিসার দিকে। কী নির্ভার ও চনমনে লাগছে হঠাৎ ওকে। দেখতে দেখতে চোখ মেললো মেলিসা। চোখে পড়লো রক্তিমের কুণ্ঠিত মুখ। মেলিসা ডাকলো, আয়! কাছে আয়! ডিভানের সামান্য একটু জায়গায় চেপে বসতে বললো ওকে। অনুরাগের পুরোটা ঢেলে মেলিসাকে ঘেঁষে বসলো রক্তিম। ঝুঁকে তাকালো মেলিসার মুখের ওপর। হঠাৎ দু'হাত খিচে মুখে ড্রাকুলার ভঙ্গি এনে নাটকীয় ভঙ্গিতে মেলিসা বললো, ও ও ও! খেয়ে ফেলবো তোকে!
বলে দু'হাতে রক্তিমের গলা চেপে ধরলো। রক্তিম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো শুধু। মেলিসা বললো, আমাকে একলা রেখে সারারাত পাগলের মতো ঘুমাইলি কেন? তোকে ছাড়বো না। কুম্ভকর্ণ একটা! পাঁচ হাজার বছর বেঁচে থেকে খোঁটা দিয়ে যাবো।
কৃত্রিম কোঁপে বলে, আরে, হাসে আবার!
দশ সেকেন্ড ঝিম মেরে থেকে দুজনেই হেসে লুটিয়ে পড়লো ডিভানের ওপর।
চমৎকার মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ একটি গল্প।
ReplyDelete