1

মুক্তগদ্য - পল্লববরন পাল

Posted in

মুক্তগদ্য


কীভাবে বেচবো সূর্য? 
পল্লববরন পাল 



এক 


বেচারা 
কীভাবে বেচবো সূর্য আর জন্মসূত্র? নীল দরজা আর মাতৃযোনি? 

কৃষ্ণ বলিলেন – মোবাইলে ছবি তোলো আর ওয়েলেক্স – ব্যাস – কলকাতা ডায়মণ্ডহারবার রানাঘাট তিব্বত – সিধে রাস্তা, সোয়া ঘন্টা – মনে রাখবে, আমার ভাগবৎ অনুপ্রেরণাই ট্রেডমার্ক। 


স্যরি মধুবাবু, 
আমি শৈশবে ফিরতে চাই। বিনাশর্তে। গীতাটিতা ছাড়াই। 



দুই 

ওং শান্তি 
তুমি ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙবে নাকি হাই তুলবে – সেটা ঠিক করার তুমি কে? আগে দাঁতমাজা নাকি পটি – ব্রেকফাস্টে টোস্ট নাকি ওমলেট – অফিস যাবার পথে দেখা হলে জীবনদাকে হাই নাকি ভালো আছেন তো – আদৌ মুখ তুলে হাসি বিনিময় করবে কিনা – ফেরার পথে কোন দোকান থেকে বাজার করবে – কোন ব্র্যাণ্ডের বিস্কুট – ডিনারে কাতলা না মাগুর – বউ আদরের সাপ্তাহিক ডেট ও স্টাইলের রুটিন 

- এ সবের কোনও কিছুই ঠিক করার এক্তিয়ার তোমার নেই – তুমি শুধু একটি শান্তিপ্রিয় ভোটার কার্ড, ডেমোক্র্যাসির ডেমো 

ক্র্যাস করবো 

আমি 

আর আমার সিণ্ডিকেট 


তিন 

নীল বিদ্রোহ 
কতবার তোকে বলেছি আকাশ – নীল চোখ দেখাস না – সহ্য করতে পারিনা – স্বপ্ন দেখে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে নিজেকে সত্যিই সুনীলের মতো গাণ্ডুগাণ্ডু লাগে – এমনিতেই দেশে এখন কেউ আর ওসব দেখেটেখে না – দিনরাত ড্যাঙডেঙিয়ে নীলউৎসব অনেক মানুষকে একসাথে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিলো যারা, ঠাণ্ডাঘরের এসিহাওয়ায় ঠেস দিয়ে ঘুমোচ্ছে –মানুষ আর স্বপ্ন দেখে না, ঢপের চপ খায় – হজমও করে নিমেষে – আবার খায় - চপ এখন নীল, ঢপ এখন শিল্প – 

এখন নীল আর স্বপ্নের রঙ নয় – শহর সাজছে বিষনীলে – সেতু থেকে আবাসন, সংস্কৃতি থেকে রাজনীতি জুড়ে সাড়ম্বর নীলচাষ – নারীও ঊরুসন্ধির দরজায় লাগিয়েছে নীল রঙ – স্বপ্ন না বিষ? 

আয় আকাশ, আমার পুরুষদণ্ডের ওপর প্রজাপতি হয়ে এসে বোস – আর একবার দরজা ভেঙে শুরু করি নীলবিদ্রোহ 



চার 

এসো আকাশ আঁকি ফের 
এক নক্ষত্রনির্দেশ এলো – ধর্ষণ উপভোগ করো, নয়তো চিৎকার করো। অন্য এক নক্ষত্রের নির্দেশ – ঘরে ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে ‘রেপ্‌’। চাঁদ বললেন – শরীর থাকলে জ্বর হয়, ধর্ষণও। ভারতবর্ষের আকাশের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র মদাড়ম্বরে রাজস্থানের জঙ্গলে কৃষ্ণসার আর মুম্বাইয়ের ফুটপাথে কঙ্কালসার শিকার করলেন। হাততালি দিয়ে উঠলেন সপ্তর্ষির এক ঋষিগায়ক – ফুটপাথে রাত্রিবাস করে একমাত্র চতুষ্পদী সারমেয়, মানুষ নৈব নৈব 

আমরা চুপ। নাঢেউ পুকুর। 

অথচ আকাশটা আঁকার সময়ে আমরাই গোল চাঁদ আর তারার ফুটকি দিয়ে সাজিয়েছিলাম। 

এখন এইসব অসভ্য চাঁদ তারাদের ছিঁড়ে কুটিকুটি করে নতুন আকাশ আঁকতে ক’মিনিট সময় লাগবে আমাদের? 


পাঁচ 

বি ফর্‌ বিজিনেস 
ইদানিং মোমবাতি আর গামছা শিল্পের রমরমা – যে কোনও রহস্যমৃত্যুতে অবশ্য নয় – এঙ্কাউন্টারে আভিজাত্যের নীলরক্তের গন্ধ না থাকলে যে পাব্লিক খায়না – টিআরপিও না – সম্ভ্রান্ত আততায়ীদের সঙ্গে থাকে অস্ত্র ও গামছা – মিডিয়ার সামনে গামছামুখে বুকের ছাতি রেডরোড – গামছা থাকে থানার লকারেও – কখনো এলিতেলি মুখ ঢেকে ভিআইপি গ্রেপ্তার দেখালে পদোন্নতির টুপাইস বদলির চান্স – 

মোমবাতি আবার ওসব চুনোপুটি রিটেইলে বিশ্বাসী নয় - হোলসেল – তেমন তেমন মৃত্যু হলে ঝটকায় হাজার হাজার 

ঘরে ঘরে ক্ষুদ্রশিল্প – সরকারী উৎসাহ ও সহজ কিস্তিতে ব্যাঙ্কঋণ – স্যটাস্যট আগামী পাঁচ বছরে বাঙলা থেকে বেকারি হাওয়া – হুঁ হুঁ বাওয়া, আমার সিণ্ডিকেট ব্রেন নিয়ে আর কোনো কথা হবে না 


ছয় 

কামদুনি উৎসব 
কেন রে তোরা সবাই এখনও বর্ষাকাল? কেন রে তোরা সবাই এখনও ভাঙা পাঁচিল? মুখ তুলে দ্যাখ – শারদ রোদ্দুরে ভেসে যাচ্ছে সেই এবড়ো খেবড়ো রাস্তা, পুকুরপাড়, তালসারি মাঠে কাশফুলের বাৎসরিক সমুদ্রোৎসব – চিনুকাকার দোকানে কাচের বয়ামগুলো ঝাড়পোঁছ হবে বলে তাক থেকে মাটিতে, গন্ধেশ্বরী স্টোর্সের কাঠের শাটার বছর বছর পুজোর মুখেই তো রঙ বদলায় – এবার কি আকাশনীল না ঘাসসবুজ? বুল্টিদার দোকানে শারদীয়া পত্রিকা কী কী এলো রে? 

মিস্ত্রি পরিবারে আবার কিসের মহালয়া, কিসের পুজো? কত দূরে দূরে বাবা কাজে যেতো, তিনচার মাস পরপর দুদিনের জন্য যেদিন বাড়ি আসতো – সেদিনটাই আমাদের মহালয়া। হ্যারিকেন দাওয়ায় গরমভাতের থালায় ম ম করতো আমাদের উৎসব 

শুনেছি সেকালে রাজা মহারাজাদের উৎসবে ঢাক-ঢোল-খোল-কর্তাল-কাড়া-নাকাড়া বাজিয়ে মোষ বলি – কেউ কেউ নাকি নরবলিও – সতীদাহও তো উৎসবই ছিলো এককালে 

৭ই জুন ২০১৩ – ইতিহাস পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে আমিও যে সেরকমই এক উৎসবের বলি হয়ে ইতিহাস হয়ে যাবো – কে জানতো? 

ভাঙা পাঁচিলের গায়ে এখনও লেগে আছে সে উৎসব উল্লাসের চাপ চাপ দাগ 

কেন রে তোরা সবাই এখনও ৭ই জুন? 

কেন রে তোরা সবাই এখনও বর্ষাকাল? 

কেন রে তোরা সবাই এখনও ভাঙা পাঁচিল? 

মুখ তুলে দ্যাখ, ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয় শারদরোদ্দুরের ওম – তালসারি মাঠে কাশউৎসবে গরমভাতের রঙ – 

দশ হাতে নেচে ওঠ্‌ রে টুম্পা 

শক্তিরূপে সংস্থিতা হ মৌসূমী 

অসুরনিধন ওইসব সরীসৃপ দেবদেবীদের কম্মো নয় – তাঁরা কেউ ব্যস্ত পকেট গণিতের হিসেব নিয়ে, কেউ প্রাণভয়ে ফাইলের আড়ালে গুটিশুটি – মিডিয়া ও বুদ্ধিমানদের রুটিন মোমবাতির আহাউহু ওই খবর গরম থাকা অবধিই 

এ আসুরিক শিরশ্ছেদ উৎসবের বীরেন্দ্রকৃষ্ণ মন্ত্রে গা ঝেড়ে উঠে দাঁড়াক গোটা বাঙলার কামদুনিরা 


সাত 

মুদ্রামায়া 
যুদ্ধের দুটিমাত্র পিঠ – ধাতু মুদ্রা – মাথা-লেজ, হার আর জিত – রক্তপান আর চুম্বনশৃংগার – একে ফর্টিসেভেন আর রবীন্দ্রসঙ্গীত - ত্রিসিংহমুখিস্তম্ভ চক্র – যাকে তুমি জয় বলে জানো – নিতান্তই ভুল। 

স্তম্ভ মানে স্থবিরতা, ইতিহাস - সমাপ্তি, মৃত্যু, দাড়ি। অন্যপিঠে দেখো – সংখ্যা – গণিত – মুদ্রামান – তোমার অর্জন – জয়। 

জয় তো উড়ানমুক্তি – মুঠোবন্দী মস্ত আকাশ – 

মাটি আর আকাশ – মাঝখানে অনর্থক দিকশূন্য কুয়াশার স্তর – সম্পর্কের ধুলোমেঘ মায়া – শুদুমুদু বাড়িয়ে কী লাভ? ধুয়ে জল খাবে? 

মায়া নয়, মুদ্রায় এসো। 

যুদ্ধে এসো 

1 comment: