সম্পাদকীয়
Posted in সম্পাদকীয়দিনকয়েক হল সূচি ঘোষণা হয়েছে। আরেকটি সাধারণ নির্বাচনের দোরগোড়ায় আমরা। বলা হয়ে থাকে গণতন্ত্রের বৃহত্তম পার্বন এই প্রক্রিয়া। ভোট কী এবং কেন? প্রায় ঋতুচক্রের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এই নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা কতদূর? আমজনতার কাছে সত্যিই কি এই প্রহসনের কোনও তাৎপর্য আছে?
'নির্বাচন' মানে যদি হয় 'বেছে নেওয়া', তাহলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কাকে বা কাদের বেছে নেব আমরা? কেনই বা নেব? স্বাধীনতার পর সাতাত্তর বছর অতিক্রান্ত প্রায়। এতগুলি দশক অতিবাহিত হওয়ার পরও কেন তবে সমাধান হয়নি বহু মৌলিক সমস্যার? একদিকে যেমন 'ডিজিটাল ভারতে'র বিজ্ঞাপন ফুলে ফেঁপে উঠেছে, অন্যদিকে অনাহার আর অশিক্ষার করুণ চিত্রটিতে আমাদের লজ্জিত হতে হয় বারংবার। যে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল আমাদের কোহিনুর, তার গরিমা এখন অপসৃয়মান!
বিপুল যে অর্থ ব্যয় করে নির্মাণ করা হয় একটি মন্দির অথবা মূর্তি, তাতে গড়ে তোলা যেত অগণন বিদ্যালয় বা হাসপাতাল। নির্বাচিত যেসব জনপ্রতিনিধি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সেইসব সৌধ স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা নিলেন, তাঁরা কি একমুহূর্তের জন্যও ভেবেছিলেন সেইসব মানুষগুলির কথা, যাঁরা নিরন্ন কিংবা বস্ত্রহীন অবস্থাতেও গণতন্ত্রের এই সুবিশাল স্তম্ভটিকে রক্ষা করে এসেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে? প্রশ্নগুলি মাথাচাড়া দেবে আবার চাপাও পরে যাবে বেআইনি কোনও নির্মাণের ধ্বংসস্তূপের তলায়।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে রাশিয়ার নির্বাচনের ফলাফল। পঞ্চমবারের জন্য প্রায় পঁচাশি শতাংশ গরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় এসে ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন বিশ্বের পরিস্থিতি এমন যে ঘটে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর আরেকটি নির্বাচনযুদ্ধের সম্মুখীন হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে রেখেছেন, তিনি জয়ী না হতে পারলে বইবে রক্তগঙ্গা।
প্রাজ্ঞ এক বন্ধু বলছিলেন, আমরা যা দেখছি, শুনছি, প্রকৃত রাজনীতির পরিধিটা নাকি তার চেয়ে অনেক বড়। আমাদের দেশে বা অন্যত্র যা ঘটমান, তার কোনও কিছুই বিচ্ছিন্ন নয়, সবকিছুই সেখানে অদৃশ্য একটিই সুতোয় গ্রন্থিত। রাম জন্মানোর আগেই যেমন রচিত হয়েছিল 'রামায়ণ', আগামী দিনে চারপাশে আমরা কী দেখবো, একটি সামগ্রিক নকশার অঙ্গ হিসাবে তা নির্ধারিত হয়ে আছে অনেক আগেই।
রঙের উৎসবও আসন্ন। আমাদের চেতনা যেন রামধনু-রঙা হয়ে ওঠে!
সুস্থ থাকুন। সৃজনে থাকুন।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।