ধারাবাহিক - নন্দিনী সেনগুপ্ত
Posted in ধারাবাহিক১৯
-‘খুব প্রয়োজন’ ইলোনা বলে… ‘যেতেই হবে আমায়। জরুরি প্রয়োজন।’
-‘তাহলে আমাকে সঙ্গে যেতে দাও।’
-‘না, না!’ সে উত্তেজিত হয়ে ওঠে… ‘সর্বনাশ! আমার বাবার সামনে? অসম্ভব! বুঝতে পারছ না তুমি…’
-‘বুঝলাম’… ফাইনহালস তার গলার কাছে চুম্বন করে… ‘সব বুঝতে পারছি আমি। একটু বেশি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি আর ভীষণভাবে চাই যে তুমি আমার সঙ্গে থাকো। আমার কাছে থাকো।’
ইলোনা নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয় আলিঙ্গন থেকে। তার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে… ‘না, এভাবে বোল না। দয়া করে বোল না।‘
‘নাহ… ‘ সে শান্তভাবে বলে ওঠে… ‘যাও। আমি কোথায় অপেক্ষা করব?’
‘আরেকটু চলো আমার সঙ্গে। আমি তোমাকে ছোট একটা সরাইখানা দেখিয়ে দিচ্ছি, যেখানে তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে।’
ফাইনহালস ধীরে ধীরে চলবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ইলোনা তাকে একরকম টেনেহিঁচড়ে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সে হঠাৎ চমকে উঠল, কারণ একটা ব্যস্ত রাজপথ মাঝে পেরোতে হল তাদের।
ইলোনা একটা ছোট ঘিঞ্জি বাড়ির দিকে আঙুল তুলে দেখাল… ‘ওখানে অপেক্ষা কর আমার জন্য।’
-‘তুমি ফিরে আসবে?’
-‘অবশ্যই’… সে মুচকি হেসে বলে… ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ভালবাসি…’ বলে সে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে তার গলা। তড়িৎগতিতে চুম্বন করে তার ঠোঁটে। তারপর দৌড়ে চলে যায়। ফাইনহালস ওই ছোট সরাইখানার ভিতরে যায়।
কিন্তু ভিতরে যাওয়ামাত্র সে এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করে। চারিদিক অন্ধকার মনে হয়। মনে হয় যেন কী হারিয়ে গেছে তার। সে বুঝতে পারছে যে এরকম অপেক্ষা একেবারে অর্থহীন। আবার অপেক্ষা না করে চলে যেতেও পারছে না। সম্পূর্ণ বিষয়টা ঈশ্বরের উপরে ছেড়ে দিতে চায় সে এখন। হতেও তো পারে যে অলৌকিক কোনো ঘটনা ঘটল এখনই। হয়তো অনেক কাল আগে হলে ব্যাপারটা অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু এখন?
নাহ… সে ফিরে আসবে না। এমন কিছু একটা ঘটবে যে সে আটকে যাবে কোথাও। তাছাড়া একজন সৈনিক হয়ে এক ইহুদী কন্যার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া সম্পূর্ণ অসমীচীন। তার জন্যে অপেক্ষা করা অর্থহীন। তাছাড়া তার ঠিকানাও সে জানে না। আশা রাখতে হবে যে সে ফিরে আসবে। যদিও একেবারেই আশা নেই।
যদি সে দৌড়ে তার পেছন পেছন যেত, তাকে আটকে রাখত। সঙ্গে থাকতে বাধ্য করত। নাহ, ওইভাবে কাউকে কিছু করতে বাধ্য করা যায় না। তাছাড়া সে জোর করে কিছু করতেও পারে না। জোর করে মানুষকে হত্যা করা সম্ভব। প্রেমে বাঁধা যায় না। একসঙ্গে থাকতে বাধ্য করা যায় না। জীবন, ভালবাসা- এসবের উপর জোর খাটে না। অর্থহীন ব্যাপার। শুধুমাত্র মৃত্যুর উপর জোর খাটে। হ্যাঁ, শুধুমাত্র মৃত্যুর উপরে জোর খাটানোর মত শক্তি আছে তোমার।
সে জানে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হতে পারে। এক রাতেরও বেশি হতে পারে অপেক্ষা। এখন, এই অপেক্ষাটাই একমাত্র সুতো, যা তাদের দু’জনকে বেঁধে রেখেছে।
এই সরাইখানাটার দিকে আঙুল তুলে সে দেখিয়ে দিয়ে গেল। না, সে মিথ্যা বলেনি। সে আসবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে আসবে, যদি তার ভেতরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত শক্তি থাকে…
কাউন্টারের ঘড়িতে সময় দেখল সে। আটটা বাজতে কুড়ি মিনিট বাকি। কিছু খাদ্য পানীয় নেওয়ার মত ইচ্ছেটাই নেই তার। সে একটা সোডা ওয়াটার অর্ডার করল। সরাইখানার মালকিনের অসন্তুষ্ট মুখ দেখে সে আবার তাড়াতাড়ি একটা ছোট বোতল ওয়াইন অর্ডার দিল। বারের সামনের দিকে এক হাঙ্গেরিয়ান সৈনিক বসে আছে তার বান্ধবীকে নিয়ে। মাঝামাঝি জায়গায় একটা মোটা লোক বসে আছে। হলদেটে মুখ, ঠোঁটে কালো সিগার। সে সরাইখানার মালকিনকে খুশি করবার জন্য ওয়াইনটা দ্রুত শেষ করে আরেকটা অর্ডার দিল। মালকিন তার দিকে তাকিয়ে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি হাসল। বয়স্ক মহিলা, ছিপছিপে গড়ন, ব্লন্ড।
হঠাৎ অল্পক্ষণের জন্য তার মনে হল যে সে আসবে। সে ভাবতে লাগল যে তাকে নিয়ে কোথায় যাবে! কোথাও একটা ঘর নেবে আপাতত, আর তাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেবে। ঘরটা আলো আঁধারি। খাটটা পুরনো আমলের, চওড়া, বাদামী কাঠের। দেওয়ালে একটা ধর্মীয় ছবি ঝুলছে। খাটের পাশে ড্রয়ার, ওয়ার্ডরোব, নীল চীনেমাটির পাত্রে হাত মুখ ধোবার গরম জল। জানালা দিয়ে বাইরে একটা ফলের বাগানের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। হ্যাঁ, ঘরটা এরকম দেখতে হবে। সে জানে, শহরে গেলে এরকম একটা ঘর সে পেয়ে যাবে। সস্তা হোটেল অথবা সরাইখানায় এরকম ঘর পাওয়া যায় ভাড়া। কিন্তু এরকম ঘরে কোনোদিন থাকা হবে না তাদের। পরিষ্কার বুঝতে পারছে যে। বুঝতে পেরে কষ্ট হচ্ছে তার। ওইরকম একটা ঘরে যেন যে একা বসে আছে এখন। বিছানার ময়লা কম্বলটা দেখতে পাচ্ছে সে। যে জানালাটা দিয়ে ফলের বাগান দেখা যাচ্ছে, সেই জানালার রঙ চটে গিয়ে জানালার ফ্রেমে গুঁড়ো গুঁড়ো আটকে আছে। ঘরটা বেশ সুন্দর ছিল। তার কল্পনার ঘরের মধ্যে বাদামী রঙের কাঠের খাটটা খুব সুন্দর। বেশ চওড়া, তারা দুজনেই একসঙ্গে ঘুমাতে পারবে। কিন্তু ওইরকম একটা ঘর খালিই থেকে যাবে।
হ্যাঁ, এখনও সময় আছে। তার মনে হল যে সে আসবে। যদি সে ইহুদী না হত… এখন এরকম একটা যুদ্ধের সময় এক ইহুদী মেয়ের সঙ্গে প্রেম কী ভাবে সম্ভব! শত হলেও মেয়েটা ইহুদী যে… এদিকে আবার সে মেয়েটাকে ভালবেসে ফেলেছে। এতটাই ভালবেসে ফেলেছে যে মেয়েটার সঙ্গে শুতে পারে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে যেতে পারে। হ্যাঁ, সে বার বার এগুলো করতে পারবে মেয়েটার সঙ্গে… সে জানে যে খুব বেশি মেয়ে এই জগতে নেই যাদের সঙ্গে কথা বলা, শোয়াবসা এসব করা সম্ভব তার পক্ষে।
ওই মেয়েটার সঙ্গে সম্ভব হত… আরও অনেক কিছু করতে পারত সে ওই মেয়েটা সঙ্গে থাকলে। সে আরেক পাত্র ওয়াইন অর্ডার দিল। সোডার বোতলটা সে এখনও খোলেনি। কালো সিগার মুখে নিয়ে যে লোকটা বসেছিল, সে বেরিয়ে গেল। বারে এখন শুধু সে, লম্বা গলা রোগাটে ব্লন্ড বয়স্কা সরাইখানার মালকিন, হাঙ্গেরিয়ান সৈনিক আর তার বান্ধবী। সে ওয়াইন খেতে খেতে মনটা অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগল। বাড়ির কথা মনে পড়তে লাগল তার। বাড়ি? কদ্দিন বাড়ি যায়নি সে। পড়াশুনা শেষ করবার পর থেকে আর বাড়ি যাওয়া হয়ে ওঠেনি তার।
যখন সে বাড়িতে ছিল, সেখানে কেমন যেন ভয় ভয় করত তার। একদিকে রেললাইন, আরেকদিকে নদী। মাঝে গোল ফাঁসের মত তাদের ছোট শহর। অ্যাসফাল্টের বড় রাস্তার দুধারে কোনো গাছ নেই। অবশ্য গ্রীষ্মে ফলের গাছ বেড়ে উঠত, শান্ত ছায়া দিত। সন্ধেবেলাতেও গরম খুব একটা কমত না।
হেমন্তে সে ঘরে ফিরত। হেমন্তের ফলের চাষের ফসল ঘরে তোলা হত। তার ভালো লাগত ফলের চাষের কাজে হাত লাগাতে। বিশাল বাগান ভর্তি ফল, বড় বড় ট্রাক ভর্তি ফল। রাইন পেরিয়ে অনেক অনেক ট্রাক ভর্তি নাশপাতি, আপেল আর প্লাম চলে যেত বড় শহরের দিকে। হেমন্তের সময় ঘরে ফিরতে ভালো লাগত তার। বাবার সঙ্গে, মায়ের সঙ্গে সময় কাটানো। বোনের বিয়ে হয়ে গেল এক বাগানমালিকের সঙ্গে। সেসব নিয়ে তার বিশেষ কোনো মাথাব্যথা ছিলনা। হেমন্তে বাড়িতে থাকতে কী ভালই না লাগত। শীতে আবার চারদিক ফাঁকা। গাছপালার পাতা ঝরে গিয়ে রেললাইন আর নদীর মাঝখানে ছোট শহরটা কেমন ধূধূ করত। জ্যাম কারখানার ভারি মিষ্টি গন্ধটা নিচু নিচু মেঘগুলোতে মিশে যেত। মনে হত নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। শীতে বরঞ্চ বাইরে কাজ করতে ভালো লাগত তার। একটা বড় কোম্পানির আর্কিটেক্ট হয়ে বাড়ি, স্কুল, কারখানা, এপার্টমেন্ট এসব বানিয়েছিল সে। এখন এসব ভাবনা একেবারে অর্থহীন।
এখন তার মনে পড়েছে যে সে ইলোনার ঠিকানা নিতে ভুলে গিয়েছে। যদি দরকার পড়ে, তাহলে ওই স্কুলের কেয়ারটেকার বা প্রিন্সিপালের কাছ থেকেও নেওয়া যাবে পরে। এমন তো নয় যে তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। খুঁজে ঠিক বের করবে তাকে, তাকে দেখতে পাবে, তার সঙ্গে কথা বলবে, তার সঙ্গে দেখা করবে। কিন্তু এই সম্পূর্ণ অর্থহীন ভাবনাটা বাস্তবায়িত হতে গেলে ঈশ্বরের কৃপা প্রয়োজন। হ্যাঁ, অলৌকিক কিছু যদি ঘটে। হ্যাঁ, ঈশ্বরের নামে ছেড়ে দিতে হবে বিষয়টা। খুঁজতে থাকা এবং অপেক্ষা করা, একটা আশা নিয়ে বেঁচে থাকা… উফফ অসহনীয়। তাছাড়া যদি বাস্তবে ইলোনাকে সে আবার খুঁজেও পায়, স্বপ্ন সফল হওয়া সত্যিই কি সম্ভব! সে জানে না হাঙ্গেরির ইহুদীদের সঙ্গে কী করা হচ্ছে। একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল বিষয়টা নিয়ে। জার্মান এবং হাঙ্গেরির সরকারের মাঝে কথাবার্তা চলছিল; তবে তুমি তো আর জান না যে জার্মানরা কী করবে তাদের নিয়ে! এবং সে ইলোনার ঠিকানা নিতে ভুলে গেছে। যুদ্ধের মাঝে সবচেয়ে জরুরি কাজটা করতে ভুলে গেছে তারা। পরস্পরের ঠিকানা বিনিময় করেনি তারা। তবে সবকিছু সম্পূর্ণ অর্থহীন এখন। যত বাজে কথা ভাবছে সে। মেয়েটি আর ফিরে আসবে না।
যেরকম ঘরে সে ইলোনার সঙ্গে থাকবে ভেবেছিল, সে নাহয় এখন আপাতত সেরকম একটা ঘরের কথা ভাববে। সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল প্রায় নটা বাজে। এক ঘণ্টার বেশি সময় চলে গেছে। যখনই তুমি ঘড়ির দিকে তাকাবে, দেখবে যে ঘড়ির কাঁটাগুলো বড় ধীরে চলছে। আবার যখন ঘড়ি থেকে চোখ সরিয়ে নেবে, দেখবে সময়টা লাফিয়ে লাফিয়ে কেটে যাচ্ছে। নটা বেজে গেছে। তার মানে সে প্রায় দেড় ঘণ্টা এখানে বসে আছে। আরেকটু বসবে, নাকি স্কুলে গিয়ে কেয়ারটেকারের কাছ থেকে ইলোনার ঠিকানা নিয়ে সেখানে একবার ঢুঁ মারবে? ফাইনহালস আরেক পাত্র ওয়াইন অর্ডার দিল এবং লক্ষ্য করলো যে সরাইখানার মালকিন খুব তৃপ্ত।
নটা বেজে পাঁচ মিনিটে পাহারাদারের দল এসে ঢুকল বারে। একজন অফিসার, সঙ্গে আরেক সৈনিক। একঝলক দেখে তারা বেরিয়ে যাচ্ছিল। সে তাদের পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল, কারণ সে দরজার দিকে মুখ করে বসেছিল। আসলে দরজার দিকে মুখ করে বসে থাকা একটা বিশেষ আশ্চর্য ব্যাপার। দরজা মানেই আশা, এরকম মনে হয়েছিল তার। কিন্তু দরজা দিয়ে সে ফিরে আসেনি তার সব অপেক্ষা ধন্য করে। বরঞ্চ পরিষ্কার সে দরজায় দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেল স্টিলের হেলমেট পরা অফিসার, আর তার সঙ্গে এক সৈনিক, নাকি ভাড়াটে খুনিকে। ওরা একঝলক দেখে বেরিয়ে যাচ্ছিল বার থেকে। কিন্তু অফিসার হঠাৎ দেখে ফেলেছে তাকে, ডাকছে তাকে এবং এখন তার দিকেই এগিয়ে আসছে।
ব্যস, সব শেষ। এদের কাছে একটাই ওষুধ। মৃত্যু। এরা শুধু মারতে জানে। যদি এদের কথা কেউ না শোনে, এরা মেরে দেয়। কিন্তু ফাইনহালস এখন মরতে চায় না। মৃত্যু মানে সব শেষ। মৃত্যু মানে সে পৃথিবীতে আর কিছুই করতে পারবে না। সে ইলোনার জন্য অপেক্ষা করতে চায়, কিম্বা ওকে খুঁজে বের করতে চায়, ওকে ভালোবাসতে চায়… সে জানে এই প্রেম অর্থহীন, তবুও পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মানেই একটা ক্ষীণ আশা বুকের মধ্যে বয়ে নিয়ে যাওয়া। কে বলতে পারে যে তার স্বপ্ন একদিন সত্যি হবে না?
ইস্পাতের হেলমেট পরা এই মানুষগুলোর হাতে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু নেই। এরা আর কিছুই দিতে জানে না। এদের গম্ভীর মুখে, কঠিন চোয়ালে, এদের হাতের অস্ত্রে শুধু মৃত্যুর কথা। এরা, এদের পিছনে, এদের মত হাজার হাজার মানুষ শুধু মৃত্যুর জয়গান গায়। ফাঁসিকাঠে, সাবমেশিনগানে এরা শুধু মৃত্যুকে প্রাধান্য দেয়।
অফিসার তার দিকে নিরুত্তাপভাবে তাকায়, যান্ত্রিকভাবে নিজের কর্তব্য পালন করে। ফাইলহালস নিজের পে বুক আর মার্চিং অর্ডার তাকে দেখায়। ভাড়াটে খুনিটা, নাহ, সৈনিকটি ফাইনহালসকে উঠে পড়ার জন্য ইশারা করে।
ফাইনহালস কাঁধ ঝাঁকায়, উঠে দাঁড়ায়। সে লক্ষ্য করে যে সরাইখানার মালকিন থরথর করে কাঁপছে এবং হাঙ্গেরিয়ান সৈনিকটির চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।
‘সঙ্গে আসুন।’ নিচু স্বরে বলে ওঠে অফিসার।
‘আমার এখনও ওয়াইনের দামটা দেওয়া হয়নি।’ বলে ওঠে ফাইনহালস।
‘এখনই দিয়ে দিন।’
ফাইনহালস বেল্ট বাঁধে আঁটসাঁট করে। পিঠের বোঝাটা তুলে নেয়। দুজনের মাঝখান দিয়ে হাঁটে। মালকিন টাকাটা নেয়। সৈনিকটি দরজা খুলে ধরে। ফাইনহালস বাইরে আসে। সে জানে যে এরা তাকে কিচ্ছু করতে পারবে না। হয়তো তার ভয় পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তার ভয় করছে না। বাইরে অন্ধকার হয়ে গেছে। দোকানপাটে আলো জ্বলে উঠেছে। গ্রীষ্মের খুশিতে ঝলমল করছে সবকিছু। সরাইখানার সামনে একটা লাল রঙের ফার্নিচার ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। পেছনের দরজাটা খুলে দিয়ে ঢালু পাটাতনের মত নামিয়ে রাখা আছে ফুটপাথে। চারপাশে লোকজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্নমুখে দেখছে। ভ্যানের খোলা মুখের সামনে আরেকজন পাহারাদার সৈনিক দাঁড়িয়ে আছে, হাতে সাবমেশিনগান।
‘উঠে পড়ুন!’ অফিসার বলে।
ফাইনহালস পাটাতন বেয়ে ভিতরে ঢোকে। ভেতরে অন্ধকারে অনেক মাথা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, অনেক অস্ত্র। কিন্তু কেউ একটাও শব্দ উচ্চারণ করে না। বেশ কিছুটা ভেতরে ঢুকে সে লক্ষ্য করে যে ভ্যানটা পুরো ভর্তি।
(চলবে)